চৌদ্দতম পত্র
২৪ জিলক্বদ ১৩২৯ হিঃ
১। যুক্তির বিরুদ্ধে উত্থাপিত আপত্তিটি সঠিক নয়।
২। আপত্তি উত্থাপনকারী শিয়া সম্পর্কিত প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অনবগত।
৩। মিথ্যা হাদীস বর্ণনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিয়ারা অন্যদের অপেক্ষা অধিকতর কঠোর।
১। জবাব হলো আপত্তি উত্থাপনকারী যুক্তি উপস্থাপনের প্রতিজ্ঞাসমূহে
ভুল করেছেন।
যুক্তির প্রথম প্রস্তাব অর্থাৎ ক্ষুদ্র প্রতিজ্ঞাটিতে যেখানে বলা হয়েছে‘
এই আয়াতসমূহের শানে নুযূল বর্ণনাকারীগণ সকলে শিয়া তা স্পষ্টতই ভুল। কারণ আমরা যেভাবে বর্ণনা করেছি আহলে সুন্নাহর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ ঘটনাসমূহ সেভাবেই বর্ণনা করেছেন। এক্ষেত্রে আহলে সুন্নাহর হাদীসগ্রন্থ,মুসনাদ ও রেওয়ায়েতসমূহে এ বিষয়ের বর্ণনা শিয়াদের হতে অধিক যা আমরা আমাদের‘
তানযিলুল আয়াতিল বাহিরাহ্ ফি ফাযলিল ইতরাতিত ত্বাহিরাহ’
গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। এজন্য আল্লামাহ্ বাহরাইনীর‘
গায়াতুল মারাম’
গ্রন্থটি দেখতে পারেন যা সর্বত্রই পাওয়া যায়।
আর দ্বিতীয় প্রস্তাব বা বৃহৎ প্রতিজ্ঞাটিতে বলেছেন,‘
আহলে সুন্নাহ্ শিয়া রাবীদের রেওয়ায়েতকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না এবং তাদের বর্ণিত হাদীস যুক্তি প্রমাণের ক্ষেত্রে আনেন না’
এ কথাটি অধিকতর অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত।
আমার কথার সপক্ষে প্রমাণ হলো আহলে সুন্নাহর গ্রন্থসমূহ এবং রেওয়ায়েতগুলো প্রসিদ্ধ ও সর্বপরিচিত শিয়া রাবীদের দ্বারা পূর্ণ। তাঁরা খোদ সিহাহ সিত্তাহ্সহ অন্যান্য গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হাদীসগুলোর সত্যতার প্রমাণ হিসেবে শিয়া রাবীদের হতে হাদীসসমূহ উপস্থাপন করেন যদিও তাঁদেরকে শিয়া,বিচ্যুত,রাফেযী,সুন্নী বিরোধী,ইমামদের বিষয়ে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনকারী হিসেবে অভিহিত করেন।
অন্যদিকে স্বয়ং বুখারীর কয়েকজন শিক্ষক শিয়া বলে পরিচিত,যাঁদেরকে তিনি রাফেযী ও সুন্নীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী বলে মনে করেছেন তদুপরি এ ত্রুটিসমূহ বুখারী ও অন্যান্যদের দৃষ্টিতে তাঁদের ন্যায়পরায়ণতা ও সততার বিষয়ে কোন ক্ষতিসাধন করে নি। এ কারণেই সিহাহ হাদীসগ্রন্থসমূহে তাঁদের রেওয়ায়েত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
এতদ্সত্ত্বেও কি আমরা আপত্তি উত্থাপনকারীর কথায় কর্ণপাত করে বলব,“
আহলে সুন্নাহ্ শিয়া রাবীদের রেওয়ায়েত বিশ্বাস করেন না বা তা থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করেন না?”
না কখনোই নয়।
২। প্রতিবাদকারী ব্যক্তিবর্গ যদি সত্যকে জানতেন এবং বুঝতেন,শিয়ারা মহানবী (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁদের অনুরূপ হওয়া ব্যতীত কিছু চায় না,তাঁদের পথ ব্যতীত ভিন্ন কারো পথে চলতে চায় না,তবে এটি স্বীকার করতেন যে,তাদের (শিয়া) রাবীদের মত সত্যবাদী,আমানতদার এবং বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারী পাওয়া দুরূহ বৈ কিছু নয়। শিয়া হাদীস বর্ণনাকারীদের জ্ঞানগত যোগ্যতা ও হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অনুসৃত সতর্কতার জুড়ি মেলা ভার। দুনিয়া বিমুখতা,ইবাদত,সুন্দর চরিত্র,আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের ক্ষেত্রে তাঁদের মত ব্যক্তিবর্গের সন্ধান লাভ দুষ্কর। তাঁরা তাঁদের দিবা-রাত্রির সমগ্র কর্ম প্রচেষ্টাকে যত্ন সহকারে ও যথার্থভাবে হাদীস মুখস্থকরণ,লিখন ও সংরক্ষণের কাজে কঠিনভাবে নিয়োজিত করেছেন। এক্ষেত্রে কেউ তাঁদের অগ্রগামী হতে পারে নি। সঠিক ও সত্যকে যাচাই-বাছাই ও হাদীসের বিশুদ্ধতার মান রক্ষায় তাঁদের সমপর্যায়ে কেউ নেই।
যদি আপত্তি উত্থাপনকারীর নিকট তাঁদের (শিয়া রাবীদের) প্রকৃতরূপ স্পষ্ট হত,তবে নির্দ্বিধায় তিনি তাঁর বিশ্বাস ও নির্ভরতার বাহনকে তাঁদের হাতে অর্পণ করতেন এবং সেই সাথে তাঁর জ্ঞানভাণ্ডারের চাবিটিও তাঁদের হাতে দিয়ে নিরাপত্তা বোধ করতেন। কিন্তু তাঁদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞানতা তাঁকে অপরিচিত কোন শহরের অন্ধকার গলিতে নিক্ষেপ করেছে নতুবা তাঁকে এক অন্ধকার রাত্রিতে অন্ধ এক বাহনে বসিয়ে রেখেছে যে,কোন দিকেই তাঁর যাবার সুযোগ নেই।
এ কারণেই সিকাতুল ইসলাম কুলাইনী তৎকালীন মুসলমানদের মধ্যে সত্যবাদী বলে কথিত মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে বাবভেই কুমী ও উম্মতের নেতা বলে পরিচিত মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে আলী তুসীর মত ব্যক্তিবর্গকে দোষারোপ করেছেন ও তাঁদের মূল্যবান ও পবিত্র গ্রন্থগুলোকে হালকা মনে করেছেন অথচ এ গ্রন্থগুলো আহলে বাইতের পক্ষ হতে তাঁদের নিকট আমানতস্বরূপ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাঁদের গ্রন্থগুলোর প্রতি উপেক্ষার অর্থ তাঁদের শিক্ষক যাঁরা জ্ঞান ও কর্মের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ওপর আদর্শ ও নমুনাস্বরূপ সেই ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি। আমাদের মনে রাখতে হবে এই ব্যক্তিবর্গ (শিয়া আলেম ও হাদীস বর্ণনাকারীগণ) তাঁদের সমগ্র জীবনকে মানুষের মাঝে দীন প্রচার এবং আল্লাহ্,তাঁর রাসূল (সা.) ও মুসলমানদের নেতা ও ইমামদের বাণী প্রচার ও প্রসারের জন্য নিয়োজিত করেছেন।
৩। ভালমন্দ সকল মানুষই স্বীকৃতি দিয়েছেন যে,এ ব্যক্তিবর্গ মিথ্যা হতে দূরে ছিলেন। এই ব্যক্তিবর্গের লিখিত সহস্র গ্রন্থ যা সবখানেই পাওয়া যায় সেগুলো অধ্যয়নে দেখা যায় তাঁরা মিথ্যাবাদীদের প্রতি লানত বর্ষণ করেছেন এবং নিজেরাই এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে,মিথ্যা হাদীস বর্ণনা বড় গুনাহ ও তার পরিণাম জাহান্নাম। তাঁরা এরূপ হাদীস বর্ণনার গুণে গুণান্বিত যেগুলোতে বর্ণিত হয়েছে যে,ইচ্ছাকৃত মিথ্যা রোযাকে বাতিল করে দেয় এবং তা যদি রমযান মাসে হয় তবে সে কারণে কাযা ও কাফফারাহ্ দু’
টিই দিতে হবে (অন্যান্য ইচ্ছাকৃত রোযা ভঙ্গের কারণসমূহের মত)। তাঁদের বর্ণিত হাদীস ও ফিকাহ্ গ্রন্থসমূহে সুস্পষ্টরূপে তাঁরা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। সুতরাং কিরূপে তাঁদের হাদীস বর্ণনার বিষয়ে দোষারোপ করা হয় যখন তাঁদের জীবনী থেকে জানা যায় তাঁরা অধিকাংশ সময় রোযা রাখতেন এবং তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন। এটি কিরূপ যে,খারেজী,মুর্জিয়া,কাদরিয়াদের এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় না অথচ শিয়া ও আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা পোষণকারীদের প্রতি এরূপ অভিযোগ আরোপ করা হয়। এটাকে কি প্রকাশ্য অনাচার বা অজ্ঞতা ভিন্ন অন্য কিছু বলা যায়? অজ্ঞতা ও অপমান হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই্। সেই সাথে আল্লাহর নিকট কামনা,তিনি যেন তাঁর প্রতি অনাচার ও শত্রুতা হতে আমাদের আশ্রয় দান করেন।
ولا حول ولا قوة إلا بالله العليّ العظيم
ওয়াসসালাম
শ