আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 66900
ডাউনলোড: 8915

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 66900 / ডাউনলোড: 8915
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

ষোলতম পত্র

২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

আহলে সুন্নাহর হাদীসসমূহের রাবীদের মধ্যে ১০০ জন শিয়া রাবী রয়েছেন!!

এ সুযোগে আপনার নির্দেশের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছি। এ পত্রে যে সকল ব্যক্তিবর্গ তাঁদের বোঝা বেঁধে প্রস্তুত হয়েছেন এবং ঘাড় লম্বা করে কৌতুহলের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন তাঁদের জন্য সুন্নী সূত্রে শিয়া রাবীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আরবী বর্ণমালার পর্যায়ক্রমে তাঁদের পিতাদের নামসহ উল্লেখ করছি।

الف

১। আবান ইবনে তাগলিব ইবনে রিবাহ (কুফী ক্বারী)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর নাম উল্লেখ করে বলেছেন, আবান ইবনে তাগলিব কুফার অধিবাসী,প্রতিষ্ঠিত শিয়া কিন্তু সত্যবাদী,তাঁর সত্যবাদিতার কারণে তাঁর হাদীস আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তাঁর বিচ্যুত ধারণা তাঁর দায়িত্বেই। আরো বলেছেন, আহমাদ ইবনে হাম্বল,ইবনে মুঈন,আবু হাতেম তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইবনে আদী তাঁর নাম উল্লেখ করে বলেছেন, শিয়া বিশ্বাসে সে অটল ছিল। এবং সা দী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, সত্য হতে বিচ্যুত এবং প্রকাশ্যে বিচ্যুতি প্রদর্শন করত। এ ছাড়াও যাহাবী তাঁর সম্পর্কে যা বলেছেন তা লক্ষ্য করুন,যাহাবী তাঁকে সেসব ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন যাঁদের থেকে মুসলিম,সুনানে আবু দাউদ,তিরমিযী,নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ্ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর নামের পার্শ্বে তাঁর হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। হাকাম,আ মাশ ও ফুযাইল ইবনে আমর হতে আবান যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিম ও সুনানে আরবাআহতে১০০ রয়েছে।

তদুপরি মুসলিম,সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ,শো বা এবং ইদরিস আউদী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ১৪১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।

২। ইবরাহীম ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আমর ইবনে আসওয়াদ ইবনে আমর নাখয়ী

তাঁর মাতা মালিকা ইয়াযীদ ইবনে কাইস নাখায়ীর কন্যা ও আসওয়াদের বোন। ইয়াযীদ ইবনে কাইসের দুই পুত্র ইবরাহীম ও আবদুর রহমান তাদের চাচা এবং কাইসের ভ্রাতা আলকামা ও উবাইয়ের ন্যায় কাইসের পুত্রগণ মুসলমানদের নিকট সিকাহ ও নির্ভরযোগ্য বলে পরিচিত। সিহাহ সিত্তাহ্সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের লেখকগণ তাঁদের বর্ণিত হাদীস রেওয়ায়েত করে তাঁর থেকে বিভিন্ন বিষয় প্রমাণ করেছেন যদিও তাঁরা জানতেন এরা সকলেই শিয়া মতাবলম্বী। (*১৬)

ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থের ২০৬ পৃষ্ঠায় ইবরাহীম ইবনে ইয়াযীদকে শিয়া (হাদীস বর্ণনাকারী) বলে উল্লেখ করে নিম্নোক্ত বিষয়কে অকাট্য বলেছেন-

তিনি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাঁর মায়ের চাচা আলকামা ইবনে কাইস,হাম্মাম ইবনে হারিস,আবু উবাইদা ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ,আবু উবাইদা ও তাঁর মামা আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এজন্য আপনি সহীহ মুসলিমে তিনি তাঁর মামা আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ,সাহম ইবনে মিনজাব,আবু মুয়াম্মার,উবাইদ ইবনে নাজলা ও আব্বাস হতে যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন সেগুলো দেখতে পারেন।

তেমনি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মনসুর,আ মাশ,জুবাইদ,হাকাম ও ইবনে আউন তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

এছাড়া সহীহ মুসলিমে ফুজাইল ইবনে আমর,মুগীরাহ্,যিয়াদ ইবনে কালিব,ওয়াসিল,হাসান ইবনে উবাইদুল্লাহ্,হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান ও সাম্মাক তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইবরাহীম ৫০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯৫ বা ৯৬ হিজরীতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের শাসনামলে মৃত্যুবরণ করেন।

৩। আহমাদ ইবনে মুফাদ্দাল ইবনে কুফী বাদরী

আবু জারআ এবং আবু হাকীম তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর হাদীসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা দু জনই আহমাদের শিয়া হবার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ ছিলেন। মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে আহমাদ সম্পর্কে আবু হাতেম বলেছেন, আহমাদ ইবনে মুফাদ্দাল শিয়া হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে প্রথম সারির এবং একজন সত্যবাদী ব্যক্তি।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর নাম এনেছেন এবং সাংকেতিকভাবে তৎপার্শ্বে আবু দাউদ ও নাসায়ী লিখেছেন যার অর্থ আবু দাউদ ও নাসায়ী তাঁকে নির্ভরযোগ্য মনে করেছেন। (*১৭)

সহীহ আবু দাউদ ও নাসায়ীতে সুফিয়ান সাওরী,আসবাত ইবনে নাসর এবং ইসরাঈল হতে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪। ইসমাঈল ইবনে আবান (আজদী কুফী)

তিনি বুখারীর শিক্ষক ছিলেন। যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর নাম এনেছেন এবং তাঁর বিষয়ে বলেছেন, বুখারী ও তিরমিযী তাঁদের সহীহতে তাঁকে নির্ভরযোগ্য মনে করেছেন ও তাঁর হাদীস থেকে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি আরো বলেন, ইয়াহিয়া ও আহমাদ তাঁর থেকে হাদীস শিক্ষা করেছেন এবং বুখারী তাঁকে সত্যবাদী বলেছেন। অন্যরাও তাঁকে শিয়া মতাবলম্বী বলে জানতেন। তিনি ২৮৬ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। অবশ্য কাইসারনী তাঁর মৃত্যুকাল ২১৬ হিজরী বলে মনে করেন।

বুখারী সরাসরি তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যেমনটি কাইসারনী বলেছেন ও অন্যরা তা সত্যায়ন করেছেন।

৫। ইসমাঈল ইবনে খালীফা মাল্লাঈ কুফী (আবু ইসরাঈল বলে প্রসিদ্ধ)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থেالكنى (কুনিয়াসমূহ) অধ্যায়ে তাঁর পরিচিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, সে একজন কট্টর শিয়া এবং সেই অংশের অন্তর্ভুক্ত যারা উসমানকে কাফির মনে করতো ,তাঁর সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে যা এখানে বর্ণনা করা অপ্রয়োজনীয় মনে করছি। এতদ্সত্ত্বেও তিরমিযী ও সুনান বর্ণনাকারী অনেকেই তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু হাতেম তাঁর হাদীসকে উত্তম বলেছেন এবং প্রশংসা করেছেন। আবু জারআ বলেছেন, সে সত্যবাদী,বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আলীর বিষয়ে বাড়াবাড়ি রকমের বিশ্বাস পোষণকারী। আহমাদ বলেছেন, তাঁর বর্ণিত হাদীস সংরক্ষণ করা উচিত। ইবনে মুঈন তাঁর সম্পর্কে একস্থানে বলেছেন, তিনি সিকাহ ও বিশ্বাসযোগ্য। তাঁর বিষয়ে ফালাস মনে করেন তিনি মিথ্যাবাদী নন। সহীহ তিরমিযী ও অন্যরা হাকাম ইবনে উতাইবা এবং আতিয়া আউফী হতে তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তদুপরি ইসমাঈল ইবনে উমার বাজালী তাঁর সমপর্যায়ের অনেক হাদীস বর্ণনাকারী তাঁর হাদীস নকল করেছেন।

ইবনে কুতাইবা তাঁর আল মা আরিফ গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রাবী ও হাদীস বর্ণনাকারী বলে উল্লেখ করেছেন।

৬। ইসমাঈল ইবনে যাকারিয়া আসাদী (খালকানী,কুফী)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন, ইসমাঈল ইবনে যাকারিয়া খালকানী কুফী একজন শিয়া ও সত্যবাদী। সিহাহ সিত্তাহর হাদীস লেখকগণ যাঁদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন তিনি তাঁদের অন্যতম। তাঁর নামের পাশে তিনি যে সাংকেতিক চি‎‎ হ্ন ব্যবহার করেছেন তার অর্থ হলো সিহাহ সিত্তাহর লেখকগণ তাঁকে নির্ভরযোগ্য রাবী মনে করেন। সহীহ বুখারীর বর্ণনামতে তিনি মুহাম্মদ ইবনে সাওকা,উবায়দুল্লাহ্ ইবনে উমর হতে এবং সহীহ মুসলিমে তিনি সুহাইল,মালিক ইবনে মুগুল ও অন্যান্যদের হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহাইন তাঁর সূত্রে আছেম হতে কয়েকটি হাদীস নকল করেছেন।

মুহাম্মদ ইবনে সাবাহ্ ও আবু রাবিই হতে তাঁর সূত্রে সহীহাইন (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এবং মুসলিম,মুহাম্মদ ইবনে বাক্কার হতে তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ১৭৪ হিজরীতে বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শিয়া হবার বিষয়টি সর্বজনবিদিত। তাঁর সম্পর্কে এমনও বলা হয়েছে যে,তিনি বিশ্বাস করতেন,হযরত মূসা (আ.)-কে যিনি তুর পর্বতে আহবান করেছিলেন তিনি আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন এবং প্রথমও আলী,শেষও আলী,প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যও আলী। অবশ্যই এ বিষয়গুলো মিথ্যাবাদীরা অন্যায় ও ভিত্তিহীনভাবে তাঁর নামে প্রচার করেছে এজন্য যে,তিনি হযরত আলীর অনুসারী ও অন্যদের থেকে এ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে বলেছেন,যে বিষয়গুলো খালকানীর নামে প্রচার করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন কারণ একথাগুলো ধর্মহীন ব্যক্তিদের কথা।

৭। ইসমাঈল ইবনে ইবাদ ইবনে আব্বাস তালেকানী,আবুল কাসেম (সাহেব ইবনে আব্বাদ বলে পরিচিত)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে সাংকেতিক চি হ্ন(دت) লিখেছেন যার অর্থ আবু দাউদ ও তিরমিযী তাঁর হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। অতঃপর তাঁর পরিচয় সম্পর্কে বলেছেন, তিনি একজন শিয়া কিন্তু আরবী ভাষায় দক্ষ এবং হাদীসশাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী।

আমি বলতে চাই তাঁর শিয়া হবার বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এ কারণেই তিনি ও তাঁর পিতা উভয়েই এত মর্যাদা ও সম্মান থাকা সত্ত্বেও আলে বুওয়াইহদের শাসনকার্যে রাষ্ট্রীয় পদ গ্রহণ করেন। তাদের মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম সাহেব পদবী লাভ করেন। তারপর হতে যে কেউ মন্ত্রী পদ লাভ করলে তাকে ঐ নামে ডাকা হত।

তিনি মুয়াইয়েদুদ্দৌলা আবু মানসুর ইবনে রোকনুদ্দৌলা ইবনে বুওয়াইহ-এর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ও ৩৭৩ হিজরী সনের শা বান মাসে মুয়াইয়েদুদ্দৌলা গোরগানে মৃত্যুবরণ করলে মুয়াইয়েদুদ্দৌলার ভ্রাতা আবুল হাসান আলী ফখরুদ্দৌলাও ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁকে উক্ত পদে বহাল রাখেন। তাঁর দরবারে সাহেবের বিশেষ মর্যাদা ছিল এবং নিজ পিতা আব্বাদ ইবনে আব্বাস যেরূপ বুওয়াইহদের শাসনকার্যে বিশেষ প্রভাব রাখতেন তদ্রুপ তিনিও প্রভাবশালী ছিলেন।

৩৮৫ হিজরীর ২৪ সফর যখন তিনি ৫৯ বছর বয়সে রেই শহরে ইন্তেকাল করেন,শহরের সকল দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল,শহরের সকল মানুষ তাঁর বাড়ির সামনে সমবেত হয়ে তাঁর জানাযার জন্য অপেক্ষা করছিল,স্বয়ং ফখরুদ্দৌলা,তাঁর মন্ত্রীরা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানগণ শোকের পোষাক পরিধান করেন;যখন তাঁর জানাযা বাড়ী হতে বের করা হয় সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ফখরুদ্দৌলা সাধারণ মানুষের সাথে হেঁটে জানাযায় অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকদিন শোক পালনের নির্দেশ দেন। কবিগণ তাঁর মৃত্যুতে শোকগাঁথা রচনা করেন। পরবর্তী সকলেই তাঁর প্রশংসা করেছেন।

আবু বকর খাওয়ারেজমী বলেন,সাহেব ইবনে আব্বাদ মন্ত্রণা পরিষদের কোলে প্রশিক্ষিত হয়েছেন (যেহেতু তাঁর পিতা মন্ত্রী ছিলেন),রাজকুটীরে তাঁর যাতায়াত সব সময় ছিল ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মন্ত্রীত্বের স্তন হতে দুগ্ধ তিনিই পান করেছেন। যেমনটি আবু মাইদ বুসতামী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,

ورث الوزارة كابراً عن كابر

موصولة الإسناد بالإسناد

يروى عن العباس عبادوزا

رته و إسماعيل عن عباد

যেরূপ সহীহ হাদীসের রেওয়ায়েতের সনদগুলো পরস্পর সম্পর্কিত থাকে ও কোন সনদই বাদ যায় না সেরূপ তিনি মন্ত্রীত্বরূপ উত্তরাধিকার সম্মানিত হতে সম্মানিতের মাধ্যমে লাভ করেছেন,ইবাদ আব্বাস হতে এবং আব্বাস ইসমাঈল হতে উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেছিলেন।

সায়ালেবী তাঁর ইয়াতীমাহ্ গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তাঁর জ্ঞান,চরিত্র ও মর্যাদা বর্ণনা করতে পারে এরূপ কোন বিশেষণ আমার সম্মুখে নেই। এমন একটি বাক্য যা তাঁর দানশীলতা,অনুগ্রহ,তাঁর লক্ষ্য ও সৎ কর্মের বর্ণনা দানে সক্ষম এবং যাতে তাঁর সকল সুন্দর বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটেছে এরূপ বাক্য আমি প্রস্তুত করতে পারি নি। কারণ আমার বাণীর দীর্ঘতা তাঁর মর্যাদার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছার ক্ষমতা রাখে না,আমার সকল প্রচেষ্টা তাঁর সরলতম বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় অক্ষম। অতঃপর তাঁর কলমকে সাহেবের বৈশিষ্ট্য ও গুণ বর্ণনায় মুক্ত করে দিয়েছেন।

সাহেব অনেক মূল্যবান গ্রন্থ লিখেছেন তার মধ্যে আরবী বর্ণমালার পর্যায়ক্রমে একটি অভিধান লিখেছেন যার নাম আল মুহিত

তাঁর একটি বিরল গ্রন্থাগার ছিল। এর পক্ষে প্রমাণ হলো সামানী সুলতান নূহ ইবনে মানসুরের পত্রের প্রতি তাঁর জবাব। ঐ পত্রে নূহ তাঁকে তাঁর রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ গ্রহণের আহবান জানান। জবাব পত্রে তিনি নূহকে জানান তাঁর পক্ষে স্থান পরিবর্তন করা সম্ভব নয় কারণ তাঁর প্রয়োজনীয় বইয়ের পরিমাণ এত অধিক যে,চারশ উটের প্রয়োজন সেগুলো বহন করার জন্য এবং এগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে,তা ত্যাগ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এথেকে তাঁর গ্রন্থশালার বিশালতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তাঁর সম্পর্কে এটুকু বর্ণনাই এখানে পর্যাপ্ত মনে করছি।

৮। ইসমাঈল ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবি কারিমা কুফী (মুফাসসির,যিনি সিদ্দী নামে পরিচিতি ও প্রসিদ্ধ)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁকে শিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর হুসাইন ইবনে ওয়াকেদ মারওয়াজী হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি সিদ্দীকে হযরত আবু বকর ও উমরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছেন। এতদ্সত্ত্বেও সুফিয়ান সাওরী,আবু বকর ইবনে আয়াশ ও তাঁদের সমপর্যায়ের অন্যান্য রাবীরা তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসলিম ও সুনানে আরবাআহর লেখকগণ তাঁর হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন এবং তাঁর হাদীসকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁকে সত্যবাদী বলেছেন। ইবনে আদী বলেছেন, তিনি সত্যবাদী ও নির্ভরযোগ্য। ইয়াহিয়া কাত্তান বলেছেন, তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনায় কোন অসুবিধা নেই। ইয়াহিয়া ইবনে সায়ীদ বলেছেন, আমি সিদ্দী সম্পর্কে কারো নিকট ভাল বৈ মন্দ শুনি নি। সকলেই তাঁর হাদীস নকল করেছেন।

ইবরাহীম নাখায়ী সিদ্দীর পাশ দিয়ে যাবার সময় তাঁকে কোরআন তাফসীর করতে দেখে বললেন, তাফসীরকারকদের পন্থায় সে তাফসীর করছে অর্থাৎ শিয়া মাজহাব অনুযায়ী তাফসীর করছে। এ বিষয়ে মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর অবস্থা বর্ণনা করে যাহাবী যা বলেছেন তা অধ্যয়ন করুন।

সহীহ মুসলিমে তিনি আনাস ইবনে মালিক,সা দ বিন উবাদা ও ইয়াহিয়া ইবনে আব্বাদ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসলিম ও সুনানে আরবাআহতে আবু ইবাদ,সুফিয়ান সাওরী,হাসান ইবনে সালিহ,জায়িদা এবং ইসরাঈল তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তিনি এ সকল ব্যক্তিত্বের শিক্ষক ছিলেন। ১২৭ হিজরীতে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।

৯। ইসমাঈল ইবনে মূসা ফাজারী কুফী

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে ইবনে আদীর বরাত দিয়ে বলেছেন- শিয়া মতবাদের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক ও বাড়াবাড়ির দোষে দুষ্ট ছিলেন ইসমাঈল। আবদান (যাহাবীর বর্ণনানুসারে) বলেছেন, হান্নাদ ও ইবনে আবি শাইবা আমার ইসমাঈলের নিকট গমনকে অপরাধ বলে মনে করতেন এবং বলতেন : কেন ঐ ফাসেক যে পূর্ববর্তী লোকদের নিন্দা করে তার নিকট যাওয়া-আসা কর? এতদ্সত্ত্বেও খুজাইমা ও আবু উরুবা তাঁর থেকে চরিত্র ও গুণাবলী অর্জন করেছেন। তিনি তাঁদের এবং আবু দাউদ ও তিরমিযীরও শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা ইসমাঈল হতে হাদীস শিক্ষা দান করেছেন এবং তাঁদের হাদীসগ্রন্থে তাঁর হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণ ও দলিল উপস্থাপন করেছেন। আবু হাতেম বলেছেন, তিনি সত্যবাদী ও নির্ভরযোগ্য। নাসায়ী বলেছেন, তাঁর হাদীস অনুযায়ী আমল করতে কোন অসুবিধা নেই। একথাগুলো সবই যাহাবীর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে রয়েছে। সহীহ তিরমিযী ও সুনানে আবু দাউদ শরীফে তিনি মালিক,শারিক,উমর ইবনে শাকির ও আনাসসহ অনেকের হতেই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ২৪৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকেই তাঁকে সিদ্দীর দৌহিত্র মনে করতেন,তবে তিনি তা অস্বীকার করেন।