ফকিহ শাসকের এখতিয়ার কি মা‘
ছূমগণের (আঃ) অনুরূপ?
মুজতাহিদ শাসকের এখতিয়ার সমূহ কি সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত,নাকি মা‘
ছূমগণের (আ.) হুকুমাতের অভিন্ন এখতিয়ার?
জবাবঃ ওয়ালীয়ে ফকীহ্ বা মুজতাহিদ শাসক সমাজ ও রাষ্ট্রের কার্যাবলী পরিচালনার ক্ষেত্রে মা‘
ছূমগণের (আ.) সমস্ত এখতিয়ারের অধিকারী এবং তার অনমতি ব্যতিরেকে কোনো আইনই বৈধতা ও কার্যকরিতা লাভ করে না। তেমনি তার অনুমতি ব্যতীত কেউই কোনো আইন বাস্তবায়নের অধিকার রাখে না। রাষ্ট্রের সমস্ত কাজকর্মই তার অনুমতিক্রমে সম্পাদিত হয়।
বস্তুতঃ বেলায়াতে ফকীহ্ বা মুজতাহিদের নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্ব হচ্ছে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা‘
ছূম ইমামগণের (আ.) নেতৃত্ব ও শাসন-কর্র্তত্বের ধারাবাহিকতা মাত্র। এ কারণে,তারা যে সব এখতিয়ারের অধিকারী ছিলেন তিনিও তার সব কিছুরই অধিকারী। মুজতাহিদের নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের কোনোরূপ সীমাবদ্ধতা নেই এবং কতক সুনির্দিষ্ট কাজ নয়,বরং জনজীবনের সকল কাজই তার নিয়ন্ত্রণাধীন; তার এখতিয়ার নিরঙ্কুশ।
আল্লাহর ওলীগণের অর্থাৎ নবী-রাসূলগণ ও মা‘
ছূম ইমামগণের (আ.) হুকুমাতের দর্শন হচ্ছে সমাজের ও গণমানুষের কল্যাণ সাধন। মুজতাহিদ শাসকের এখতিয়ার সমূহেরও উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের ও গণমানুষের কল্যাণ সাধন; এ কারণে তা রাষ্ট্রীয় সংবিধানের উর্ধে।
ছাহেবে জাওয়াহের (রহ্ঃ) তার“
জাওয়াহেরুল কালাম”
গ্রন্থে (২১তম খণ্ড,পৃঃ ৩৯৪) ফকীহর এখতিয়ার সমূহের বিরোধীদেরকে তিরস্কার করেছেন। তিনি বলেনঃ“
বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে,ফকীহর এখতিয়ারের ব্যাপারে কতক লোকের মধ্যে খুঁতখুঁতে ভাব আছে। এ থেকে মনে হচ্ছে যেন তারা আদৌ ফিকাহর স্বাদ আস্বাদন করে নি এবং ফকীহ্গণের কথার ধরন ও রহস্য অনুধাবন করতে পারে নি। এর চেয়েও অধিকতর বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে,কতক লোক এ ব্যাপারে এতই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছে যে,তারা উপরোক্ত কাজকর্মের ক্ষেত্রে (দেশের সীমান্ত প্রতিরক্ষা,দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার হেফাযত,জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ,কোরআন মজীদ নির্ধারিত দণ্ডবিধি ও রাষ্ট্রীয় দণ্ডবিধি কার্যকর করণ এবং কাফের ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ) ফকীহর দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে বুযুর্গানে দ্বীনের রায় ও ফতোয়া সত্ত্বেও‘
কর্তৃত্ব কামনার বৈধতাহীনতার মূলনীতি’
র এবং ইবনে যোহরাহ ও ইবনে ইদরীসের মতের আশ্রয় গ্রহণ করেছে।”
সমকালীন ফকীহ্গণের মধ্যে আয়াতুল্লাহ্ বোরুজার্দী ফকীহর জন্য ব্যাপক ভিত্তিক এখতিয়ারের প্রবক্তা। আল্লামা শহীদ মোতাহ্হারী তার‘
ইসলাম ভা মোক্বতাযিয়াতে যামান’
(ইসলাম ও যুগের দাবী) গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে এ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন এবং মুজতাহিদ শাসকের ব্যাপক-বিস্তৃত এখতিয়ারের সমর্থন করেছেন। তিনি উক্ত গ্রন্থের ৯১ নং পৃষ্ঠায় বলেনঃ“
এ এখতিয়ার সমূহ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) থেকে ইমামের (আ.) নিকট স্থানান্তরিত হয় এবং ইমাম (আ.) থেকে মুসলমানদের শরয়ী শাসক ও বিচারকের নিকট স্থানান্তরিত হয়। মুজতাহিদগণ যে সব বিষয়কে হারাম বা হালাল বলে ঘোষণা করেছেন - যা সকলেই গ্রহণ করে নিয়েছে,তার অনেক কিছুই তারা [রাসূল (সা.) ও ইমাম (আ.) থেকে প্রাপ্ত] উক্ত এখতিয়ারের ভিত্তিতেই করেছেন। মীর্যায়ে শীরাযী কোন্ শরয়ী অনুমতির ভিত্তিতে তামাক বর্জনের হুকুম জারী করেছিলেন? তিনি এটা এ কারণে করেছিলেন যে,তিনি জানতেন,শরয়ী শাসক কতগুলো এখতিয়ারের অধিকারী যা তিনি প্রয়োজনবোধে যথাসময়ে ব্যবহার করতে পারেন; মূলগতভাবে শরীয়ত যা হারাম করে নি বা অন্ততঃ যা হারাম হওয়ার সপক্ষে দলীল-প্রমাণ বিদ্যমান নেই,বিশেষ ক্ষেত্রে তিনি তা নিষিদ্ধ করতে ও বর্জনের আদেশ দিতে পারেন।”
মরহূম নারাক্বী তার‘
আওয়ায়েদুল আইয়াম গ্রন্থের ১৮৭ নং পৃষ্ঠায় বলেন যে,জনগণের ওপর শাসন-কর্তৃত্ব পরিচালনার অধিকার ও ইসলামের হেফাযতের জন্যে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও ইমামগণ (আ.) যে সব এখতিয়ারের অধিকারী ছিলেন হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আত্মগোপনরত থাকার যুগে ফকীহ্গণ হুবহু সে সব এখতিয়ারের অধিকারী,কেবল অকাট্য পঠনীয় দলীল ও ইজমার দ্বারা কোনো বিষয় এ এখতিয়ারের বহির্ভূত বলে প্রমাণিত হয়ে থাকলে তা ব্যতীত। অনুরূপভাবে জনগণের দ্বীন ও দুনিয়ার এবং সমাজ সংস্থার হেফাযতের জন্য যে সব কাজ সম্পাদন অপরিহার্য,তেমনি শরীয়ত যে সব কাজের সম্পাদিত হওয়া দাবী করে,কিন্তু সে কাজের দায়িত্ব বিশেষ কারো ওপর অর্পণ করে নি,সে সব কাজের সবগুলো সম্পাদনের দায়িত্বই ফকীহর ওপরে অর্পিত হয়েছে। তিনি এ সমস্ত কাজেরই দায়িত্ব গ্রহণের অধিকার রাখেন এবং এ ব্যাপারে কারো বাধা দেয়ার বা বিরোধিতা করার অধিকার নেই।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) ইসলামী সমাজ ও ইসলামী হুকুমাত পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজতাহিদ শাসকের এ শাসন-কর্তৃত্ব ও সর্বোচ্চ এখতিয়ারের কথা বলেছেন। তিনি তার‘
বেলায়াতে ফকীহ্’
গ্রন্থের ৪০ নং পৃষ্ঠায় বলেনঃ“
যারা ধারণা করে যে,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর হুকুমাতী এখতিয়ার সমূহ আমীরুল মু’
মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর চেয়ে বেশী ছিলো অথবা আমীরুল মু’
মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর হুকুমাতী এখতিয়ার সমূহ মুজতাহিদের চেয়ে বেশী ছিলো,তাদের এ ধারণা পুরোপুরি ভ্রান্ত ও বাতিল।”
‘
ছাহীফায়ে নূর’
গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডের ৫১৯ নং পৃষ্ঠায় হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর যে উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে তাতে তিনি অধিকতর সুস্পষ্ট ভাষায় উপরোক্ত সংশয়ের জবাব দিয়েছেন। হযরত ইমাম বলেনঃ“
সংবিধানে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা বেলায়াতে ফকীহর ক্ষমতা ও এখতিয়ারের অংশবিশেষ মাত্র,সকল এখতিয়ার নয়।”
হযরত ইমাম (রহ্ঃ) তার‘
বেলায়াতে ফকীহ্’
গ্রন্থের ৬৫ নং পৃষ্ঠায় বলেনঃ“
ফকীহ্গণ হচ্ছেন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর দ্বিতীয় স্তরের অছি (প্রতিনিধি) এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পক্ষ থেকে ইমামগণের (আ.) ওপর যে সব দায়িত্ব অর্পিত হয় ফকীহ্গণ তার সবগুলোরই অধিকারী। তাই তাদের জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সকল কাজই আঞ্জাম দেয়া অপরিহার্য।
“
মুজতাহিদ শাসকের দায়িত্ব হচ্ছে বিচারবুদ্ধিজাত কল্যাণচিন্তার ভিত্তিতে ও সকল রাষ্ট্রে প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্যাবলীর সমাধান ও অচলাবস্থা দূরীকরণের লক্ষ্যে স্বীয় রাষ্ট্রীয় এখতিয়ার কাজে লাগানো এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সমস্যাবলীর সমাধান করা।”
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) ৬ই মে ১৯৮৭ তারিখে হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীকে লেখা এক পত্রে বলেনঃ“
হুকুমাতের এখতিয়ার সমূহ যদি গৌণ ঐশী বিধান সমূহের কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয় তাহলে খোদায়ী হুকুমাতের লক্ষ্য ও হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ওপর অর্পিত নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তত্বের বিষয়টি একটি অর্থহীন ও সুরক্ষা বিহীন প্রপঞ্চে পর্যবসিত হয়। আমি এর পরিণামের দিকে ইঙ্গিত করতে চাই,তা হচ্ছে,এমতাবস্থায় কেউই কোনো কিছু মেনে নিতে বাধ্য থাকবে না। উদাহরণ স্বরূপ,যখন কোনো রাস্তা নির্মাণের জন্য কোনো বাড়ীঘর বা তার আওতাধীন জায়গার অংশবিশেষ হুকুম দখল করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে তখন তা গৌণ আহকামের কাঠামোর আওতাভুক্ত থাকে না। বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা আদায়,রণাঙ্গনে প্রেরণ,দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবেশ ও দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বহির্গমন প্রতিহতকরণ,যে কোনো ধরনের পণ্য প্রবেশ ও বহির্গমন প্রতিহতকরণ,দু’
তিন ধরনের পণ্যের ব্যতিক্রম বাদে মজুদদারী নিষিদ্ধকরণ,শুল্ক ও কর আরোপ,অস্বাভাবিক বেশী দামে মাল বিক্রি তথা মুনাফাখোরী প্রতিহতকরণ,দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বেঁধে দেয়া,মাদক দ্রব্যের বিস্তার রোধ,এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বহির্ভূত হলেও যে কোন ধরনের নেশাখোরী নিষিদ্ধকরণ,যে কোনো ধরনের অস্ত্র বহন নিষিদ্ধকরণ এবং এ ধরনের শত শত কাজ সরকারী দায়িত্ব ও এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত ।”
হযরত ইমাম উক্ত পত্রের ধারাবাহিকতায় আরো লিখেন ঃ“
আমি নিবেদন করতে চাই যে,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের অন্যতম শাখা হুকুমাত হচ্ছে ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ের আহকাম সমূহের অন্যতম এবং তা সমস্ত গৌণ ও শাখাগত বিধানের ওপর,এমনকি নামায,রোযা ও হজ্বের ওপর অগ্রাধিকারের অধিকারী। যে বাড়ী বা মসজিদ রাস্তার মুখে পড়েছে ইসলামী শাসক তা ভেঙ্গে ফেলতে ও এর মূল্য এর মালিককে প্রদান করতে পারেন। ইসলামী শাসক প্রয়োজনের মুহূর্তে মসজিদ বন্ধ করে দিতে পারেন এবং কোনো মসজিদ যদি ক্ষতিকারক (মসজিদে যেরার) হয় এবং তা ধ্বংস করে না ফেলে তার ক্ষতিকারকতা দূর করা সম্ভব না হয় তাহলে তিনি তা ধ্বংস করে ফেলবেন। সরকার জনগণের সাথে যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তা কার্যকর করা বা রাখা যদি দেশের ও ইসলামের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হয় তাহলে সরকার একতরফাভাবে সে চুক্তি বাতিল করতে পারে। তেমনি ইবাদত বহির্ভূত ও ইবাদত মূলক যে কোনো কাজ অব্যাহত থাকা যদি ইসলামের স্বার্থের পরিপন্থী প্রমাণিত হয় তাহলে যতক্ষণ তা ইসলামের স্বার্থের পরিপন্থী থাকবে ততক্ষণ ইসলামী শাসক তা প্রতিহত করতে পারবেন। যদিও হজ্ব আল্লাহ্ তা‘
আলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত,তথাপি তা যদি কখনো ইসলামী হুকুমাতের স্বার্থ ও কল্যাণের পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে সাময়িকভাবে তিনি তা সম্পাদন থেকে লোকদেরকে বিরত রাখতে পারেন।”
এ থেকে সুস্পষ্ট যে,ইসলামী সমাজের কল্যাণের জন্য যখনি প্রয়োজন হয়ে পড়ে তখনি মুজতাহিদ শাসক শরীয়ত ও ইসলামী মানদণ্ডের কাঠোমোর ভিত্তিতে স্বীয় কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন। কতক লোক শরীয়তকে কেবল ইবাদত-বন্দেগী ও লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে করে,কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো,শরীয়ত মানে ইসলামের ও ইসলামী হুকুমাতের সকল আইন।
‘
ছাহীফায়ে নূর’
গ্রন্থের নবম খণ্ডে (পৃঃ ২৫১) হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর উক্তি ঃ“
হুকুমাত যদি ওয়ালীয়ে ফকীহর অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে তা হচ্ছে তাগূত।”
আমাদের এ আলোচনা থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট; তা হচ্ছে,আমাদের সামনে দুই ধরনের হুকুমাত রয়েছে,এর বাইরে তৃতীয় ধরনের কোনো হুকুমাত নেই। এর মধ্যে এক ধরনের হুকুমাত হচ্ছে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হুকুমাত এবং অপরটি হচ্ছে তাগূতী হুকুমাত। সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হুকুমাত হচ্ছে সেই হুকুমাত,যার শীর্ষে রয়েছেন মুজতাহিদ শাসক। আর তার অবস্থান হচ্ছে সকল হুকুমাতী কাজকর্ম ও বিষয়াদির উর্ধে এবং সকল কাজই তার অঅনুমতির ভিত্তিতে বৈধতা লাভ করে। এর অন্যথা হলে তা হবে বাতিল ও তাগূতী হুকুমাত।
বস্তুতঃ দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন ও তাগূতী হুকুমাতের সমর্থক লোকেরা মুজতাহিদের নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের বিরোধিতা করার লক্ষ্যে এ ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা তাদের নিজেদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই একই ক্ষমতা ও এখতিয়ার প্রয়োগ করে থাকে,কিন্তু ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠিত হলে এবং সে হুকুমাত একই ক্ষমতা ও এখতিয়ার ব্যবহার করলে তারা এই বলে হৈচৈ করে যে,ক্ষমতা ও এখতিয়ারের সম্প্রসারণ স্বৈরতন্ত্র সৃষ্টি করে।
আমেরিকা,জার্মানী,ফ্রান্স,বৃটেন ও রাশিয়ায় সরকার প্রধানকে অনেক বেশী ক্ষমতা ও এখতিয়ার দেয়া হয়েছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সকল প্রকার নির্বাহী ক্ষমতা ছাড়াও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বিরাট ক্ষমতার অধিকারী। তিনি চাইলে কংগ্রেসে গৃহীত বিলে ভেটো প্রদান করতে পারেন এবং জরুরী প্রয়োজনে এমন সব অধ্যাদেশ জারী করতে পারেন যা কার্যকর করতে কংগ্রেস,রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয় সমূহ বাধ্য।
ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট প্রধান মন্ত্রীর সম্মতিক্রমে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিতে পারেন। প্রেসিডেন্টই মন্ত্রীদের নিয়োগদান করেন এবং তিনি রাষ্ট্রের অপর দুই বিভাগ অর্থাৎ আইন সভা ও বিচার বিভাগের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য নন।
বৃটেনে সাংবিধানিকভাবে রাজা বা রাণী মন্ত্রীদের,এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ ও বরখাস্তের এখতিয়ারের অধিকারী। যদিও ঐতিহ্যিকভাবে তিনি সংখ্যাগুরু দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগদান করেন,কিন্তু তিনি এর অন্যথা করলেও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা বৈধ। এছাড়া সেখানে রাজা বা রাণীর পদটি উত্তরাধিকার ভিত্তিক ও আজীবন পদ। তিনি কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন এবং সংবিধানে তার অপসারণের কোনো বিধান নেই।
জার্মানীর প্রেসিডেন্ট দেশের চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী)কে বরখাস্ত করতে পারেন এবং পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিতে পারেন।
রাশিয়ায়ও প্রেসিডেন্ট চাইলে ডুমা (পার্লামেন্ট)কে ভেঙ্গে দিতে পারেন।
বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ই বাদশাহ,সম্রাট,রাজা বা প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা এবং ক্ষমতা ও এখতিয়ার রাখা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে,এ পদটি দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উর্ধস্থ পদ এবং তিনি আইনের উৎসও বটে। অতএব,তাদের জন্য আইনের অধীন হওয়া জরুরী গণ্য করা হয় নি। উদাহরণ স্বরূপ,ডেনমার্ক ও স্পেনের সংবিধানে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত আছে। বেলজিয়ামের সংবিধানে বলা হয়েছে যে,সম্রাটের কাজে কোনো ভুল থাকতে পারে না। ফ্রান্সের সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রেসিডেন্টকে কেবল তখনি জবাবদিহি করতে হবে যদি তিনি জনগণের সাথে বড় ধরনের বিশ্বসঘাতকতা করে থাকেন।
কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় মুজতাহিদ ফকীহর এখতিয়ার সমূহ শরয়ী মানদণ্ড ও ইসলামী মূলনীতির কাঠামোর আওতাধীন।
ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ২০০৭ সালের ৪ঠা জুন তারিখে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর মাযারে আগত যিয়ারতকারীদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় সকল রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে সম্পাদনীয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেনঃ“
আল্লাহ্ তা‘
আলার যে শাসন-কর্তৃত্ব মুজতাহিদ শাসকের কাছে স্থানান্তরিত হয় তা খোদায়ী আহকামের অনুসরণের শর্তাধীন।”
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী একই তারিখে প্রদত্ত অপর এক ভাষণে বলেনঃ“
যে ব্যক্তি নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি যদি চৈন্তিক ও আচরণগত দিক থেকে ইসলামী আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ইসলামী আইন-কানুনের অনুবর্তী না হন তাহলে তিনি বৈধতা থেকে পতিত হন এবং কারো জন্য যে তার আনুগত্য ফরয নয় শুধু তা-ই নয়,বরং জায়েয নয়।”
ইসলাম এমন একজন ব্যক্তিকে হুকুমাতী দায়িত্ব প্রদান করে যিনি মুজতাহিদ,চিন্তা ও কর্মে ভারসাম্যের অধিকারী,ন্যায়পরায়ণ,দ্বীনী‘
ইলমের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রগণ্য এবং দ্বীনী আহকাম অনুসরণ করে চলেন। অন্যদিকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তা দেশ সমূহের সরকারগুলো মানবতার ওপর যুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিরাট এখতিয়ারের অধিকারী,অথচ এদেরই অনেকে মুজতাহিদ শাসকের এখতিয়ার সমূহ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অথচ এ এখতিয়ার সমূহ জনগণের আস্থাভাজন ঐ সব বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি মুজতাহিদ শাসককে প্রদান করেছেন,মুসলিম জনগণের দ্বারা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত ও অনুসৃত অকাট্য ইসলামী সূত্রের উক্তি অনুযায়ী যারা নিজেরা নবী-রাসূলগণের (আ.) উত্তরাধিকারী ও আল্লাহ্ তা‘
আলার পক্ষ থেকে জনগণের ওপর মনোনীত নেতা ও শাসক। আমরাও উক্ত বিশেষজ্ঞগণের অনুসরণে মুজতাহিদ শাসকের আনুগত্য ও অনুসরণ করছি। আর ওলামায়ে দ্বীন মা‘
ছূমগণের (আ.) মতের ভিত্তিতেই মুজতাহিদ শাসকের জন্য এসব এখতিয়ার চিহ্নিত করেছেন।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)ও এরই ভিত্তিতে বলেনঃ“
সংবিধানে যা বর্ণিত হয়েছে তা মুজতাহিদ শাসকের ক্ষমতা ও এখতিয়ার সমূহের অংশবিশেষ মাত্র,সব নয়।”
হযরত ইমামের এ কথা বলার ভিত্তি হচ্ছে এই যে,মুজতাহিদ শাসকের এখতিয়ার সমূহ হচ্ছে হুবহু মা‘
ছূমগণের (আ.) রাষ্ট্রীয় এখতিয়ার সমূহ। আর দ্বীন ও তার মূল্যবোধ সমূহের হেফাযতের লক্ষ্যে এ এখতিয়ার সমূহ ব্যবহার করা তার শুধু অধিকারই নয়,বরং কর্তব্যও বটে।
মুজতাহিদ শাসক দ্বীন ও শরীয়তের মানদণ্ডে কোনোরূপ সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ করবেন না তথা অন্যায় বা অপরাধের আশ্রয় নেবেন না,অন্য কথায় তিনি স্বেচ্ছাচারী হবেন না যে,আমরা তার ক্ষমতা ও এখতিয়ার সমূহের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হবো। আর তার দিক থেকে সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ না করা তথা অন্যায় বা অপরাধের আশ্রয় না নেয়া এবং স্বেচ্ছাচারী না হওয়ার রক্ষাকবচ এই যে,তিনি সীমালঙ্ঘন করলে বা স্বেচ্ছাচারী হলে নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের অধিকার হারিয়ে ফেলবেন; অতঃপর আর তিনি আনুগত্য লাভের অধিকারী থাকবেন না,বরং কারো জন্যই তার আনুগত্য অব্যাহত রাখা জায়েয হবে না।
বস্তুতঃ কোনো ব্যক্তি যখন শরয়ী ও ইসলামী মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করেন ও দায়িত্ব পালন করেন তখন তার পক্ষে স্বৈরাচারী বা তাগূতে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের ব্যক্তি যদি পরিপূর্ণ এখতিয়ারের অধিকারী না হন তাহলে তার পক্ষে জনগণের সামাজিক ও সামষ্টিক জীবনের সমস্যাবলীর সমাধান করা সম্ভব হয় না। বিচারবুদ্ধির দাবী অনুযায়ী আমরা যদি মেনে নেই যে,শাসককে এ ধরনের সমস্যাবলী ও জটিলতার সমাধানকারী হতে হবে তাহলে মানতে হবে যে,অবশ্যই তাকে পরিপূর্ণ এখতিয়ারের অধিকারী হতে হবে। অন্যদিকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা স্বীকার করি যে,মুজতাহিদের হুকুমাত হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা‘
ছূমগণের (আ.) হুকুমাতের ধারাবাহিকতা মাত্র,তাহলে এটা সম্ভব নয় যে,তাদের কারো জন্যে ব্যাপক ভিত্তিক হুকুমাতী এখতিয়ারের প্রবক্তা হবো এবং কারো জন্য সীমিত এখতিয়ারের প্রবক্তা হবো। অতএব,আমাদের স্বীকার করতে হবে যে,মুজতাহিদের হুকুমাত হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা‘
ছূম ইমামগণের (আ.) হুকুমাতের ধারাবাহিকতা বিধায় হুবহু হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা‘
ছূমগণের (আ.) হুকুমাতের এখতিয়ারের অধিকারী।
মুজতাহিদ শাসক হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আত্মগোপনরত থাকার যুগে দ্বীনের অভিভাবক। অতএব,তার দায়িত্ব হচ্ছে সামাজিক ও সামষ্টিক ক্ষেত্রে ইসলামের সকল দিকের ও সকল আহকামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন। ইসলামী শাসক যাতে ইসলামের সকল আহকামের বাস্তবায়ন করতে পারেন সে লক্ষ্যে অবশ্যই তাকে হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর ইসলামী আহকাম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি যদি দেখতে পান যে,কোনো ক্ষেত্রে দু’
টি হুকুমের মধ্যে সাংঘর্ষিকতা দেখা যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারযোগ্য হুকুমটি বাস্তবায়ন করবেন। পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী মুজতাহিদ শাসকের অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে ইসলামের দণ্ডবিধি,অর্থনৈতিক আইন ও অন্যান্য বিধি-বিধান বাস্তবায়ন এবং সমাজে বিকৃতি,অনৈতিকতা ও পাপাচারের বিস্তার রোধ। এ সবের বাস্তবায়নের জন্য সকল জনগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন,সমন্বিত পরিচালনা ব্যবস্থা বা প্রশাসন এবং সুবিচারের লক্ষ্যাভিসারী ও শক্তিশালী একটি হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।
ইসলামের সকল ধরনের আহকামের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসলামী শাসকের জন্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োগ করা এবং দেশের সার্বিক কাজকর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে ইসলামের স্থায়ী আইন-কানুনের আওতায় ও শর্তাধীনে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম-রীতি ও বিধি-বিধান প্রণয়ন ও প্রবর্তন অপরিহার্য। তিনি সশস্ত্র বাহিনী সমূহের অধিনায়কদের নিয়োগদান করবেন এবং জনগণের জান,মাল ও ইজ্জত-সম্ভ্রম এবং দ্বীনী সমাজের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হেফাযতের লক্ষ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন ও প্রয়োজন বোধে শান্তি বা সন্ধির সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশের অভ্যন্তরস্থ গোষ্ঠী সমূহের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক নির্ধারণ,বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন ও বিদেশের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ,দেশের সীমান্ত সংরক্ষণের জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়োজিত করণ,জুম‘
আ ও পাঞ্জেগানা জামা‘
আত সমূহের জন্য ইমাম নিয়োগ,যাকাত ও কর আদায়ের জন্য দায়িত্বশীল নিয়োগ,অন্যান্য অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ ও কর্ম সম্পাদনের জন্য বিশেষজ্ঞ ও দায়িত্বশীল নিয়োগ এবং শত শত প্রশাসনিক কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন,সাংস্কৃতিক,আইন বিষয়ক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন ইত্যাদি অসংখ্য কাজ মুজতাহিদ শাসকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের আওতাভুক্ত। এসব দায়িত্ব-কর্তব্য আঞ্জাম দেয়া ছাড়া এবং এজন্য প্রয়োজনীয় এখতিয়ার ব্যতীত ইসলামের সকল দিকের আদেশ-নিষেধের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং বাঞ্ছিতভাবে ইসলামী সমাজের পরিচালনা সম্ভব নয়।
এসব এখতিয়ার ইসলামী হুকুমাতের মূলনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট যা হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আত্মগোপনরত থাকার যুগে মুজতাহিদ শাসকের নিকট স্থানান্তরিত হয়েছে। এসব এখতিয়ার প্রাথমিকভাবে স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর হুকুমাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলো এবং পরে তার নিকট থেকে তা মা‘
ছূম ইমামের (আ.) হুকুমাতে স্থানান্তরিত হয়। অতঃপর তা ইমামের (আ.) নিকট থেকে প্রতিটি শরয়ী হুকুমাতে স্থানান্তরিত হয়।
বস্তুতঃ একটি রাষ্ট্রের এখতিয়ার অত্যন্ত ব্যাপক। অতীতে ছিলো না এমন নতুন নতুন পরিস্থিতির উদ্ভবের ফলে ইসলামী হুকুমাতের সামনে নতুন নতুন প্রয়োজন দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। নবোদ্ভূত এসব পরিস্থিতির দাবী মিটাবার জন্য ইসলামের মূলনীতি ও মৌলিক বিধিবিধানের আলোকে ইসলামী রাষ্ট্রকে নতুন নতুন আইন-কানুন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে হবে। আসমানী বিধি-বিধানের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও তার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে নব নব পরিস্থিতির দাবী মিটাবার জন্য নতুন নতুন আইন-কানুন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন এবং প্রতিটি যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ইসলামী শাসককে অবশ্যই ব্যাপক ভিত্তিক এখতিয়ারের অধিকারী হতে হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে,সুবিচার ও বিশেষজ্ঞত্বের অধিকারী দ্বীনী শাসকের ক্ষমতা ও এখতিয়ার এমনভাবে শর্তাধীন হওয়া উচিৎ নয় যার ফলে দ্বীনী হুকুমাত সমস্যার সম্মুখীন হবে এবং সামাজিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে।