ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব0%

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

লেখক: আলী শীরাযী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 15406
ডাউনলোড: 4105

পাঠকের মতামত:

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 20 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15406 / ডাউনলোড: 4105
সাইজ সাইজ সাইজ
ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্ব কি ইমাম খোমেইনীর (রহ্ঃ) উদ্ভাবন

বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্ব কি ইমাম খোমেইনীর (রহ্ঃ) উদ্ভাবন,নাকি অন্য মুজতাহিদগণেরও একই মত?

জবাবঃ শিয়া মাযহাবের রাজনৈতিক আদর্শে বেলায়াতে ফকীহ্ তথা পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী ফকিহ শাসকের শাসনের তত্ত্ব অত্যন্ত সুপ্রাচীন। আয়াতুল্লাহ্ মোল্লা আহমাদ নারাক্বী বলেনঃ বেলায়াতে ফকীহ্ প্রশ্নে শিয়া মাযহাবে মোটামুটিভাবে মতৈক্য (ইজমা) রয়েছে এবং মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে যে,ফকিহগণের মধ্যে কেউই বেলায়াতে ফকীহ্ প্রশ্নে আপত্তি তোলেন নি।

ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেনঃ বেলায়াতে ফকীহর বিষয়টি শিয়া মাযহাবের অকাট্য ও বিতর্কাতীত বিষয় সমূহের অন্যতম। যারা বলে যে,হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম এটা মানতেন না তাদের এ ধারণা এ সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত।

বস্তুতঃ ইসলামী বিপ্লবের পথিকৃৎ হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) যে কাজটি আঞ্জাম দেন তা হচ্ছে,তিনি বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্বকে ফিক্বহী আলোচ্য বিষয়ের বাইরে নিয়ে আসেন এবং ইলমে কালামের দৃষ্টিতে এর যথার্থ স্থানে একে অধিষ্ঠিত করেন। এরপর তিনি বিচারবুদ্ধিজাত ও কালাম শাস্ত্রীয় অকাট্য দলীল-প্রমাণের দ্বারা এ তত্ত্বকে বিকশিত করেন এবং ফিকাহ্ শাস্ত্রের সকল বিভাগে এর ছায়া বিস্তার করে দেন। এরপর তিনি এ আলোচ্য বিষয়টিকে বাস্তবে রূপায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সমাজের বুকে মুজতাহিদ শাসকের নেতৃত্বাধীন দ্বীনী হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করেন।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) তার বেলায়াতে ফকীহ্ গ্রন্থের ১৪৯ নং পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে বলেনঃ বেলায়াতে ফকীহর বিষয়টি আমাদের উদ্ভাবিত কোনো নতুন বিষয় নয়,বরং এ বিষয়টি শুরু থেকেই একটি আলোচ্য বিষয় ছিলো।

হযরত ইমাম তার কাশফুল আসরার গ্রন্থের ১৮৫ নং পৃষ্ঠায় বলেনঃ ফকিহের শাসন-কর্তৃত্বের যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে,তা সেই প্রথম দিন থেকেই স্বয়ং ফকিহগণের মধ্যে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিলো। বেলায়াতের বিষয়টি কি কোনো মৌলিক বিষয় অথবা নয় তথা এটির কি কোনো ভিত্তি আছে নাকি নেই এবং সেই সাথে ফকিহের শাসন-কর্তৃত্বের সীমারেখা এবং তার হুকুমাতের আওতা কতখানি - এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা হচ্ছে ফিক্বাহর একটি বিস্তারিত আলোচনার শাখা যে সম্পর্কে দুই পক্ষই দলীল উপস্থাপন করেছেন,আর এসব দলীলের বেশীর ভাগই হচ্ছে এমন সব হাদীছ যা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও ইমামগণের (আ.) পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে।

হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা ছূম ইমামগণের (আ.) যুগেও বেলায়াতে ফকীহ্ অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিলো। হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেনঃجعلته عليکم حاکماً - আমি তাকে (ফকীহকে) তোমাদের ওপর শাসক ও বিচারক নিয়োগ করলাম। এখানে ইমাম (আ.) হাকেম্ শব্দ ব্যবহার করেছেন,আর এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই যে, হাকেম শব্দ দ্বারা বিচারকার্য সহ সামগ্রিকভাবে একজন শাসকের সকল ধরনের দায়িত্ব বুঝানো হয় তথা হুকুমাত ও শাসন-কর্তৃত্বের সকল দিকই হাকেম -এর দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের আওতাভুক্ত।

আর হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর দীর্ঘ আত্মগোপনরত থাকার যুগে বেলায়াতে ফকীহর বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয়। ইমাম মাহ্দী (আ.) তার সংক্ষিপ্ত ও সীমিত আত্মগোপনের যুগে১৩   ইসহাক বিন ইয়াকুবের প্রশ্নের যে লিখিত জবাব দেন তা বেলায়াতে ফকীহ্ একটি সুপ্রাচীন আলোচ্য বিষয় হওয়ার সপক্ষে সর্বোত্তম দলীল। এতদসংক্রান্ত রেওয়ায়েতটি সনদ হিসেবে ও ফতোয়া হিসেবে খুবই বিখ্যাত। শিয়া মাযহাবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাচীন আলেম শেখ ছাদূক্ব (রহ্ঃ)১৪ তার লেখা কামালুদ্দীন (দ্বীনের পূর্ণত্ব) গ্রন্থের ৪৮৩ নং পৃষ্ঠায় হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর এ লিপিটি উদ্ধৃত করেছেন।

ইসহাক বিন ইয়াকুব্ কয়েকটি বিষয় জানতে চেয়ে ইমাম (আ.)-এর বরাবরে লিখিত প্রশ্ন পাঠালে ইমাম (আ.) উক্ত লিখিত জবাব প্রেরণ করেন। ইসহাক বিন ইয়াকুব্ তার পত্রে যে সব বিষয় জানতে চান তার মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন ছিলো এই যে,আপনার (দীর্ঘ) আত্মগোপন যুগে আমাদের সামনে যে সব নতুন ঘটনা সংঘটিত হবে সে ব্যাপারে আমাদের করণীয় কী?

এ প্রশ্নের জবাবে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) বলেনঃ আর যে সব ঘটনা সংঘটিত হবে সে সব ব্যাপারে তোমরা আমাদের হাদীছ বর্ণনাকারীদের কাছে জিজ্ঞেস করবে। কারণ,তারা হচ্ছেন তোমাদের জন্য আমার হুজ্জাত,আর আমি তাদের জন্য আল্লাহর হুজ্জাত।

ইসহাক বিন ইয়াকুব্ হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বরাবরে যে প্রশ্ন করেন তার উদ্দেশ্য ছিলো তার দীর্ঘ আত্মগোপনের যুগে ইসলামী সমাজের সামষ্টিক সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা লাভ। সাধারণভাবে শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ ও বিশেষভাবে শিয়া ওলামায়ে কেরাম হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পক্ষ থেকে উক্ত লিখিত লিপিটি প্রেরণের ঘটনা ও তার প্রাচীনত্বের বিষয়টি বিশ্বাস করে থাকেন।

মরহূম আল্লামা কাশেফুল্ গ্বেত্বা ১৫ তার কাশ্ফুল্ গ্বেত্বা গ্রন্থে,মরহূম মোল্লা আহমদ নারাক্বী তার আওয়ায়েদুল আইয়াম্ গ্রন্থে,মরহূম মীর ফাত্তাহ্ হোসেনী মুরাগ্বী তার আল- আনাভীন্ গ্রন্থে,মরহূম ইমামুল মোহাক্কেক্বীন তার জাওয়াহেরুল কালাম গ্রন্থে,মরহূম শেখ আ যাম্ আনছারী তার মাকাসেবে মোহাররামাহ্ গ্রন্থে,মরহূম বাহরুল উলূম্১৬ তার বালাগ্বাতুল্ ফাক্বীয়্যাহ্ গ্রন্থে,মরহূম মোদাররেস১৭ তার উছূলে তাশকীলাতে আদ্লীয়্যাহ্ গ্রন্থে,তেমনি আয়াতুল্লাহ্ আল- উয্মা বোরূজার্দী১৮ তার আল-হেদায়াতু ইলা মান্ লাহুল্ ভিলাইয়্যাহ্ গ্রন্থে বেলায়াতে ফকীহ্ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

মরহূম আল্লামা নায়ীনী তার বিখ্যাত গ্রন্থ তাম্বিহুল্ উম্মাহ্ ওয়া তান্যীহুল্ মিল্লাহ্ য় এ বিষয়ে অত্যন্ত গভীর ও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) তার বেলায়াতে ফকীহ্ গ্রন্থের ১৫০ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ ইতিপূর্বে যেমন উদ্ধৃত করেছি,মরহূম কাশেফুল গ্বেত্বা ও এ বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। ওলামায়ে মোতাআখখেরীনের১৯ মধ্য থেকে মরহূম নারাক্বী মনে করেন যে,মুজতাহিদগণ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সকল মর্যাদার অধিকারী। আর মরহূম নায়ীনীও বলেন যে,ওমর বিন হানযালাহ্ সংক্রান্ত রেওয়ায়েত থেকে এ বিষয়টি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়।

ওমর বিন হানযালাহ্ যে রেওয়ায়েত উপস্থাপন করেছেন তা হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত এবং তা হযরত ইমাম (আ.)-এর যুগেই বর্ণিত হয়। হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-এর পরবর্তী কালের প্রায় সর্বসম্মত সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম এ রেওয়ায়েতটি গ্রহণ করেছেন। উক্ত রেওয়ায়েতে হযরত ইমাম (আ.) ফকীহকে প্রত্যাখ্যান করা এবং তার শাসন-কর্তৃত্ব ও বিচারের অধিকারকে গ্রহণ না করার বিষয়টিকে মা ছূম ইমামগণের (আ.) শাসন-কর্তৃত্ব ও বিচারের অধিকারকে গ্রহণ না করার ও তাদের হুকুম প্রত্যাখ্যান করার সমতুল্য বলে গণ্য করেছেন এবং এ কাজকে তিনি গুনাহে কবিরাহ্ ও আল্লাহ্ তা আলার অসন্তুষ্টির কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ,মা ছূম ইমামগণের (আ.) হুকুম কবুল না করা হুবহু আল্লাহ্ তা আলার শরয়ী ও আইনগত কর্তৃত্ব গ্রহণ না করার,বরং তাকে প্রত্যাখ্যান করার সমতুল্য। আর ইমাম (আ.) এর গুনাহকে শিরকের পর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য করেন।

গোটা ইসলামের ইতিহাসে মুজতাহিদগণ এ সত্যটিকে স্বীকার করেছেন। অনেকে এ বিষয়টি ফিকাহ্ শাস্ত্রে এবং অনেকে এটিকে কালাম শাস্ত্রে আলোচনা করেছেন। পরবর্তী কালেও,হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের অনেকে এ বিষয়টি নিয়ে কালাম শাস্ত্রে আলোচনা করেছেন। অন্য অনেকে বিষয়টি আমল সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে আলোচনা করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান জারীর মাধ্যমে বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্বে তাদের আক্বিদাহকে বাস্তবে প্রমাণ করেছেন।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী মুজতাহিদের পক্ষ থেকে জারীকৃত রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় আদেশকে ফকীহর এখতিয়ারের কার্যকরিতার বিশাল ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মরহূম মীর্যায়ে শীরাযী২০ ও মরহূম মীর্যা মোহাম্মাদ তাক্বী শীরাযীর বাস্তব কর্মনীতিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেনঃ তামাক বর্জনের জন্যে মীর্যায়ে শীরাযী যে আদেশ জারী করেছিলেন প্রকৃত পক্ষে তা ছিলো একটি রাষ্ট্রীয় আদেশেরই অনুরূপ এবং তার অনুসরণ অন্যান্য ফকীহ্গণের জন্যও ওয়াজেব বা অবশ্য কর্তব্য ছিলো। তৎকালে অল্প কয়েক জন বাদে ইরানের ওলামায়ে কেরামের সকলেই এ আদেশের অনুসরণ করেন।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) আরো বলেনঃ মরহূম মীর্যা মোহাম্মাদ তাকী শীরাযী যখন জিহাদের আদেশ দেন - যদিও তার নাম দেয়া হয় প্রতিরক্ষা,তখন ওলামায়ে কেরামের সকলেই তার অনুসরণ করেন। কারণ,এটি ছিলো একটি হুকুমাত সংশ্লিষ্ট আদেশ।

বস্তুতঃ হুকুমাত সংশ্লিষ্ট বা রাষ্ট্রীয় আদেশ মুজতাহিদ শাসকের পক্ষ থেকে জারী করা হয়। যিনি এ ধরনের আদেশ জারী করেন নিঃসন্দেহে তিনি মুজতাহিদের শাসন-কর্তৃত্বের ধারণায় বিশ্বাস পোষণ করেন। আর যিনি পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী মুজতাহিদের আদেশ পালন করেন কার্যতঃ তিনিও বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্বকে স্বীকার করেন। এভাবে মুজতাহিদ কর্তৃক হুকুম জারী এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক তা মেনে নেয়া ও তদনুযায়ী আচরণ করা থেকে এ বিষয়টিই সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে,বেলায়াতে ফকীহ্ একটি অত্যন্ত সুপ্রাচীন তত্ত্ব। এ বিষয়টির সপক্ষে আরো প্রমাণ এই যে,অন্যান্য ফকীহ্গণও বেলায়াতে ফকীহ্ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

অতীতের ফকীহ্গণের কেউ কেউ কার্যতঃও বেলায়াতে ফকীহর এখতিয়ার সমূহকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর ভূমিকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে,তিনি বেলায়াতে ফকীহকে ইমামতের পিছনে জুড়ে দিয়েছেন এবং এভাবে বেলায়াতের বৃক্ষকে পত্রপল্লব ও ফুলেফলে সুশোভিত করেছেন। বর্তমানেও ইসলামী বিপ্লবের রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর পথনির্দেশনায় এ বৃক্ষের গোড়ায় পানি সিঞ্চন করা হচ্ছে এবং দিনের পর দিন ক্রমান্বয়ে তা অধিকতর মনোরম ও অধিকতর সুস্বাদু ফল প্রদান করে চলেছে। বর্তমান যুগের ওলামায়ে কেরামও বেলায়াতে ফকীহর মহান মর্যাদাকে বাস্তবতার ময়দানে দেখতে পেয়ে এর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন এবং প্রায় সকলেই অপরিহার্য গণ্য করে কার্যতঃ এর অনুসরণ করছেন।

বেলায়াতে ফকীহ্ কি অনুসন্ধানীয়,নাকি অন্ধভাবে অনুসরণীয়?

জবাবঃ বেলায়াতে ফকীহ্ বিষয়টি ইমামতের ধারাবাহিকতায় উপস্থাপিত হয়। আর ইমামত হচ্ছে ইলমে কালামের একটি আলোচ্য বিষয়। ইলমে কালামে দ্বীনের মৌলিক নীতিমালা তথা আল্লাহ্ তা আলার পরিচয়,নবুওয়াত,ইমামত ও পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মা ছূম ইমামগণের (আ.) ইমামত প্রমাণিত হওয়ার পর পরই জনগণের করণীয় এবং পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী দ্বীনী নেতৃত্বের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। আর এর ফলেই বেলায়াতে ফকীহর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

অতীতের ওলামায়ে কেরাম ফিকাহ্ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তাতে বেলায়াতে ফকীহ্ সম্পর্কে আলোচনা ও পর্যালোচনা করেছেন। হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) এ বিষয়টিকে ফিকাহ্ শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্র থেকে বাইরে নিয়ে আসেন এবং একে এর স্বকীয় স্থানে অর্থাৎ কালাম শাস্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর তিনি বিচারবুদ্ধির অকাট্য দলীল ও উদ্ধৃতিযোগ্য দলীল সমূহ দ্বারা এ বিষয়টিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচ্য বিষয়রূপে বিকশিত করেন।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) বেলায়াতে ফকীহ্ বিষয়টিকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন এবং যেভাবে এ বিষয়টিকে ইমামতের পর পরই ও এর ধারাবাহিকতা হিসেবে আলোচনা করেছেন তার মাধ্যমে তিনি এমন এক দৃষ্টিকোণ তৈরী করেছেন যা থেকে এটাই প্রতিভাত হয় যে,বেলায়াতে ফকীহ্ হচ্ছে দ্বীনের মৌল নীতিমালা সমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর যেহেতু দ্বীনের মৌলিক নীতিমালার ক্ষেত্রে অন্ধ বিশ্বাস পোষণ বৈধ নয়,সেহেতু এ বিষয়টি প্রমাণের জন্যে আমাদেরকে অবশ্যই অনুসন্ধান,গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এ বিষয়ে অন্ধ বিশ্বাস পোষণ বৈধ হবে না।

এ সংশয়ের জবাবে বলতে হয়ঃ

১) এমন নয় যে, ইলমে কালামের আওতাভুক্ত বিষয় সমূহের মধ্যে কোনো বিষয়েই অন্ধ বিশ্বাস পোষণ করা বৈধ হবে না। ইলমে কালামের এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে যে বিষয়ে সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষজ্ঞদের অনুসরণ করা জরুরী।

২) যেহেতু বেলায়াতে ফকীহ্ বিষয়টি ইমামত সংক্রান্ত আলোচনার ধারাবাহিকতায় উপস্থাপিত হয়,সেহেতু এটি একটি কালাম শাস্ত্রীয় বিষয়। কিন্তু মুজতাহিদ শাসকের হুকুম মেনে চলা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরয) - এ দৃষ্টিকোণ থেকে এবং সেই সাথে মুজতাহিদ শাসকের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং তার ক্ষমতা ও এখতিয়ার ফিকাহ্ শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় সমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হয়।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)ও এ বিষয়টি নিয়ে ইলমে কালামের আলোচ্য বিষয় হিসেবে আলোচনা করেছেন। তিনি বিচারবুদ্ধির অকাট্য দলীলের সাহায্যে ও কালাম শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে বেলায়াতে ফকীহ্ সংক্রান্ত আলোচনাকে বিকশিত করার পর এ বিষয়ের আলোচনাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যার ফলে তা ফিকাহ্ শাস্ত্রের সকল বিভাগের ওপর ছায়া বিস্তার করেছে। ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে,পূর্ববর্তী ও সমকালীন ওলামায়ে ইসলামের সকলেই তাদের ফিকাহর গ্রন্থ সমূহে বেলায়াতে ফকীহ্ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আর আমরা জানি যে,সাধারণ লোকদের জন্য ফিক্বহী ব্যাপারে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের তথা মুজতাহিদগণের তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুসরণ শুধু জায়েযই নয়,বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরযও বটে।

৩) উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে,এক দৃষ্টিকোণ থেকে বেলায়াতে ফকীহ্ একটি কালাম শাস্ত্রীয় বিষয় তথা উছূলে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। কিন্তু প্রকৃতিগত দিক থেকে এটি হচ্ছে ঐসব বিষয়ের অন্যতম যে সব বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে অনুসন্ধান ও গবেষণা করা প্রতিটি লোকের পক্ষে সম্ভবপর নয়। কারণ,এ বিষয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধানের জন্য যে ধরনের বিশেষজ্ঞত্বের প্রয়োজন তারা সে ধরনের বিশেষজ্ঞত্বের অধিকারী নয়। অতএব,এ ব্যাপারে তাদের জন্য অন্য ব্যক্তিদের অনুসরণ অপরিহার্য; তাদেরকে এমন ব্যক্তির অনুসরণ করতে হবে যিনি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ - যার ওপরে তারা আস্থা রাখতে পারে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে যে নেতা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ পরিষদের বিধান রাখা হয়েছে তার কারণও এখানেই নিহিত। জনগণ মুজতাহিদ ফকীহকে চেনার ব্যাপারে এ বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভর করে থাকে। তাই আমরা এ উপসংহারে উপনীত হতে পারি যে,মুজতাহিদ ফকীহকে চেনা ও তার আনুগত্যের বিষয়টি একটি অনুসরণীয় বিষয়। কারণ,কালাম শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী,এ বিষয়টি হচ্ছে সেই সব বিষয়ের অন্যতম যে সব বিষয়ে জনগণকে দেখতে হবে যে,যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে তারা কী বলেন। উদাহরণ স্বরূপ,যেহেতু হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সেহেতু তাদেরকে এ বিষয়ে তার কথাকে মেনে নিতে হবে। আর যেহেতু মুজতাহিদ শাসকের হুকুম মান্য করা জনগণের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য,এ কারণে অথবা মুজতাহিদ শাসকের দায়িত্ব-কর্তব্য কী এবং তার এখতিয়ারের সীমারেখা কতখানি - এগুলো হচ্ছে ফিক্বহী বিষয়,অতএব,এ ব্যাপারে জনগণকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের অনুসরণ করতে হবে।

হ্যা,আমরা মনে করি যে,বেলায়াতে ফকীহ্ দ্বীনের মৌল নীতিমালার (اصول دين ) অন্তর্ভুক্ত,তবে তা কোনো স্বতন্ত্র মূলনীতি নয়,বরং তা ইমামতের মূলনীতি থেকে উৎসারিত হয়েছে এবং তা ইমামতের আওতাধীনেই অবস্থান করছে। মুজতাহিদ শাসক হচ্ছেন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর দ্বিতীয় স্তরের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি যার অবস্থান মা ছূম ইমামগণের (আ.) পরে। বেলায়াতে ফকীহ্ বা মুজতাহিদের শাসন ইমামতের ছায়াতলে অবস্থান করছে এবং মুজতাহিদ শাসকের আনুগত্য করার জন্যে কোরআন মজীদেও আদেশ দেয়া হয়েছে; একটি আয়াতে যে, উলিল্ আমর -এর আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে,মুজতাহিদ শাসকই হচ্ছেন সেই উলিল্ আমর।

কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও এটা প্রমাণিত হয় না যে,বেলায়াতে ফকীহর বিষয়টি একটি অনুসন্ধানীয় ও গবেষণা করে গ্রহণ করার বিষয়। এসব আলোচনা থেকে যা প্রমাণিত হয় তার ফলে এ বিষয়টি কালাম শাস্ত্রে আলোচ্য বলে প্রতিভাত হয়। কিন্তু কোনো বিষয় ইলমে কালামের আলোচ্য বিষয় হওয়ার মানেই এ নয় যে,তা অনিবার্যভাবেই গায়রে তাক্বলীদী২১ হবে। বস্তুতঃ এ বিষয়টিকে ফিকাহ্ শাস্ত্রের কতক বিষয়ের সমপর্যায়ভুক্ত গণ্য করা হলে তার ফলে বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্ট হবে এবং এর ফলে,উপস্থাপিত প্রশ্নাবলীর উত্তর ও সমস্যাবলীর সমাধানও অধিকতর সুস্পষ্ট হবে।