৮ম পাঠ
আল্লাহর গুণসমূহ
ভূমিকা :
পূর্ববর্তী পাঠসমূহে বলা হয়েছে যে,অধিকাংশ দার্শনিক যুক্তির সারবত্তা হল‘
অনিবার্য অস্তিত্ব’নামক এক অস্তিত্বশীলকে প্রতিপাদন করা। আর অপর এক শ্রেণীর যুক্তির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তা‘হ্যাঁ-বোধক’ও‘
না-বোধক’গুণগুলো প্রমাণিত হয়ে থাকে। এরূপে মহান আল্লাহকে তাঁর বিশেষগুণসমূহ অর্থাৎ যেগুলো তাঁকে সকল সৃষ্টি থেকে স্বতন্ত্র করে সেগুলোসহ শনাক্ত করা হয়ে থাকে। অন্যথায় শুধুমাত্র‘
অনিবার্য অস্তিত্ব’হওয়াই তাঁর (আল্লাহর) পরিচিতির জন্যে যথেষ্ট নয়। কারণ কেউ হয়ত মনে করতে পারেন যে,পদার্থ অথবা শক্তির মত বিষয়গুলোও অনিবার্য অস্তিত্বের দৃষ্টান্ত হতেপারে। আর এ কারণে একদিকে যেমনি,প্রভুর‘
না-বোধক’গুণগুলোকে প্রমাণ করতে হবে যাতে বোধগম্য হয় যে‘
অনিবার্য অস্তিত্ব’বস্তুর জন্যে নিদিষ্ট গুণে গুণান্বিত হওয়া থেকে পবিত্র এবং কোন সৃষ্টির সদৃশ হতে পারে না;তেমনি অপর দিকে তাঁর‘
হ্যাঁ- বোধক’গুণগুলোকে ও প্রমাণ করতে হবে,যাতে উপাসনার জন্যে তাঁর উপযুক্ততা প্রতিভাত হয় এবং অন্যান্য বিশ্বাস যেমন : নবুওয়াত,কিয়ামত ও এদের শাখাসমূহকে প্রমাণ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
পূর্ববর্তী যুক্তিগুলো থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে,‘
অনিবার্য অস্তিত্ব’কারণের উপর নির্ভরশীল নয় এবং সম্ভাব্য অস্তিত্বসমূহের জন্যই‘
কারণ’প্রয়োজন। অর্থাৎ অনিবার্য অস্তিত্বের দু‘
টি গুণ প্রতিষ্ঠিত হল : একটি হল,অপর যে কোন অস্তিত্বশীলের উপর তাঁর অনির্ভরশীলতা। কেননা যদি অপর কোন অস্তিত্বশীলের উপর ন্যূনমত নির্ভরশীলতাও থাকে,তবে ঐ অস্তিত্বশীল তাঁর কারণ রূপে পরিগণিত হবে। যেহেতু আমরা জেনেছি যে,কারণের অর্থই (দর্শনের পরিভাষায়) হল,অপর কোন অস্তিত্বশীল তার উপর নির্ভরশীল হবে। আর অপর প্রতিষ্ঠিত গুণটি হল,সকল সম্ভাব্য অস্তিত্বই,তার (অনিবার্য অস্তিত্ব) কার্য (معلول
)এবং তার উপর নির্ভরশীল এবং তিনিই হলেন তাদের সৃষ্টির জন্যে সর্বপথম কারণ ।
এখন,উপরোল্লিখিত দু‘
উপসংহার থেকে তাদের প্রত্যেকের অবিয়োজ্য বিষয়সমূহকে বর্ণনা করব এবং‘
অনিবার্য অস্তিত্বের’‘
হ্যাঁ-বোধক’ও‘
না-বোধক’গুণসমূহকে প্রতিপাদন করব। তবে তাদের (হ্যাঁ-বোধক ও না-বোধক গুণ) প্রতিটির জন্যে দর্শন ও কালামশাস্ত্রে একাধিক প্রমাণের উল্লেখ রয়েছে। কিন্ত আমরা সহজে আয়ত্তকরণের নিয়মাধীন ও পূর্ববর্তী বিষয়বস্তুসমূহের সাথে পারস্পরিক সস্পর্ক বজায় রাখার জন্যে ঐ সকল যুক্তিকেই নির্বাচন করব যেগুলো পূর্বোল্লিখিত যুক্তিসমূহের সাথে তাদের সস্পর্ককে সংরক্ষণ করবে।
আল্লাহর
অনাদি
ও
অনন্ত
হওয়া
:
যদি কোন অস্তিত্বশীল অপর কোন অস্তিত্বশীলের (কারণ ) কার্য (معلول
) ও ঐ অস্তিত্বশীলের উপর র্নিভরশীল হয় তবে তার অস্তিত্ব ঐ অস্তিত্বশীলাধীন হবে এবং ঐ কারণের অনুপস্থিতিতে তা অস্তিত্বে আসতে পারবে না । অর্থাৎ কোন এক সময় কোন এক অস্তিত্বশীলের অস্তিত্বহীনতা তার¡নির্ভরশীলতা ও সম্ভাব্য অস্তিত্ব হওয়ারই প্রমাণবহ। যেহেতু অনিবার্য অস্তিত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিদ্যমান এবং কোন অস্তিত্বের উপরই নির্ভরশীল নয় সেহেতু সর্বদাই বিরাজমান থাকবে।
এ প্রক্রিয়ায় অনিবার্য অস্তিত্বের জন্যে অপর দু‘
টি গুণ প্রমাণিত হল। একটি হল‘
অনাদি’অর্থাৎ ইতিপূর্বে কখনোই অস্তিত্বহীন ছিল না এবং অপরটি হল‘
অনন্ত'অর্থাৎ ভবিষ্যতেও কখনো বিলুপ্ত হবেনা। কখনো কখনো এ দু‘
টি গুণকে সম্মিলিত ভাবে‘
চিরন্তনত্ব’(سرمدی
) বলা হয়ে থাকে।
অতএব,যে অস্তিত্বশীলের অস্তিত্বহীনতার পূর্বদৃষ্টান্ত অথবা বিলুপ্তির সম্ভাবনা থাকবে,সে অস্তিত্বশীল‘
অনিবার্য অস্তিত্ব’হবে না। সুতরাং বস্তুগত বিষয়ের‘
অনিবার্য অস্তিত্ব’হওয়ার ধারণার অসারতা প্রতিপন্ন হল।
না-
বোধক
গুণ :
অনিবার্য অস্তিত্বের অপর একটি অবিয়োজ্য বিষয় হল অবিভাজ্যতা (بساطة
) অর্থাৎ যৌগিক বা অংশসমূহের সমন্বয় না হওয়া। কারণ,সকল যৌগই এর অংশগুলির উপর নির্ভরশীল। আর অনিবার্য অস্তিত্ব সকল প্রকার নির্ভরশীলতা থেকে পবিত্র ও মুক্ত ।
যদি মনে করা হয় যে,‘
অনিবার্য অস্তিত্বের’অংশগুলো তাৎক্ষণিকভাবে অস্তিত্বশীল নয়,যেন একটি কল্পিত সরলরেখার দু‘
টি অংশ,তবে এ ধরনের ধারণাও পরিত্যাজ্য। কারণ যদি কোন কিছু অংশে বিভক্ত হওয়ার সামর্থ্য রাখে,তবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে তা বিভাজ্য হবে,যদিও বাস্তবে তার প্রকাশনা-ও ঘটে থাকে। আর বিভাজ্যতার সম্ভাবনা মানে হল বিলুপ্তির সম্ভাবনা। যেমন : যদি এক মিটার রেখা,দুটি অর্ধমিটারে বিভক্ত হয়,তবে আর‘
এক মিটার রেখার’অস্তিত্ব থাকবে না। অপর দিকে আমরা ইতিপূর্বে জানতে পেরেছি যে,অনিবার্য অস্তিত্বের বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই ।
আবার যেহেতু তাৎক্ষণিক (بالفعل
) ও সামর্থ্যগতভাবে (بالقوة
) এশাধিক অংশের সমন্বয় হল বস্তুর বিশেষত্ব,সেহেতু প্রমাণিত হয় যে,কোন বস্তুগত অস্তিত্বই অনিবার্য অস্তিত্ব হতে পারে না। অর্থাৎ খোদার অবস্তুগত হওয়া (تجرد
) প্রমাণিত হল। অনুরূপ স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে,মহান আল্লাহ (বাহ্যিক) চোখের মাধ্যমে দর্শনযোগ্য নন এবং অপর কোন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেও অনুধাবনযোগ্য নন। কারণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা হল বস্তু ও বস্তুগত বিশেষত্ব।
অপরদিকে বস্তুগত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করার সাথে সাথে বস্তু ও অন্যান্য বস্তুগত বিশেষত্ব যেমন : নিদিষ্ট স্থান ও কালও অনিবার্য অস্তিত্ব’থেকে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কারণ স্থান এমন কিছুর¡জন্যেই ভাবা যায় যা আয়তন ও বিস্তার বিশিষ্ট হয়। অনুরূপ নির্দিষ্ট কালবিশিষ্ট সকল কিছুই আয়ুষ্কালের বস্তারের দৃষ্টিতে বিভাজনযোগ্য। আর এটাও এক ধরনের সীমাবদ্ধতা এবং সামর্থ্যগতভাবে (بالقوة
) অংশের সমন্বয়রূপে পরিগণিত। অতএব মহান আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট স্থান ও কালকে কল্পনা করা যায় না এবং নির্দিষ্ট স্থান ও কালবিশিষ্ট কোন অস্তিত্বই অনিবার্য অস্তিত্ব হতে পারে না। সর্বশেষে,অনিবার্য অস্তিত্ব থেকে নির্দিষ্ট কালের অস্বীকৃতির মাধ্যমে গতি,বিবর্তন এবং বিকাশও তাঁর থেকে নিষিদ্ধ হয়। কারণ কোন গতি ও পরিবর্তনই কালাতিক্রম ব্যতীত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ।
অতএব যারা আল্লাহর জন্যে‘
আরশ’নামক নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলে থাকেন অথবা আসমান থেকে অধঃগমন ও স্থানান্তরিত হন বলে মনে করেন অথবা চর্মচক্ষুর মাধ্যমে দর্শনযোগ্য বলে বিশ্বাস করে থাকেন;অথবা তাঁকে বিবর্তন ও বিকাশমান বলে গণনা করে থাকেন,তারা প্রকৃতপক্ষেৃ মহান আল্লাহকে সঠিকরূপে চিনতে পারেননি ।
সর্বোপরি যে কোন প্রকারের ভাবার্থ যা এক ধরনের ঘাটতি,সীমাবদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার প্রমাণবহ,তা মহান আল্লাহর জন্যে নিষিদ্ধ হয়ে থাকে এবং আল্লাহর‘
না-বোধক’গুণ বলতে এটাই বুঝানো হয়েছে ।
অস্তিতদানকারী
কারণ :
পূবর্বতী যুক্তিসমূহ থেকে আমরা এ উপসংহারে উপনীত হতে পারি যে,‘
অনিবার্য অস্তিত্বই’হল সকল‘
সম্ভাব্য অস্তিত্বের’কারণ। এখন আমরা এ উপসংহারের অবিচ্ছেদ্য বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করব। তবে প্রথমেই কারণের প্রকরণগুলো সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করব। অতঃপর প্রভুর কারণত্বের বিশেষত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।
কারণের সাধারণ অর্থ,সকল অস্তিত্বশীল অর্থাৎ যেগুলোর উপর অপর কোন অস্তিত্ব নির্ভরশীল,সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। এমনকি শর্তসমূহ এবং সহায়কসমূহকেও সমন্বিত করে থাকে। সুতরাং মহান আল্লাহর জন্যে কারণ না থাকার অর্থ হল,অন্য কোন অস্তিত্বের উপর কোন প্রকারের নির্ভরশীলতা না থাকা। এমনকি কোন প্রকারের শর্ত ও সহায়কও তাঁর জন্যে কল্পনা করা যায় না।
কিন্ত সৃষ্টির জন্যে আল্লাহর কারণ হওয়ার অর্থ হল,অস্তিত্বদাতা অর্থে,যা কতৃকারণের
(
علت فعلی )
এক বিশেষ শাখা। এর ব্যাখ্যা প্রদানের জন্যে বিভিন্ন প্রকার কারণের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করব এবং এদের বিস্তারিত ব্যাখ্যার দায়িত্ব দর্শনশাস্ত্রের উপর প্রদান করব।
আমরা জানি যে,বৃক্ষ উদ্গত হওয়ার জন্যে বীজ,উপযুক্ত মাটি এবং আবহাওয়ার প্রয়োজন। অনুরূপ একটি প্রাকৃতিক বা মানবীয় কার্যনির্বাহীরও প্রয়োজন,যে বীজটিকে মাটিতে বপন করবে এবং তাতে পানি সরবরাহ করবে। এদের প্রত্যেকেই উল্লেখিত কারণের সংজ্ঞানুসারে বৃক্ষের উদ্গতির কারণ।
এ বিভিন্ন প্রকারের কারণসমূহকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভক্ত করা যেতে পারে। যেমন : যে সকল কারণ কার্যের বিদ্যমানতার জন্যে সর্বদাই অপরিহার্য সেগুলোকে প্রকৃত কারণ (علل الحقیقیة
) বলা হয়ে থাকে এবং যে সকল কারণ কার্যের বিদ্যমানতার জন্যে অপরিহার্য নয় ( যেমন : কৃষক ফসলের জন্যে) সেগুলোকে সহায়ক কারণ (علل الاعدادی
অথবাمعدات
) বলা হয়ে থাকে। অনুরূপ
প্রতিস্থাপনযোগ্য কারণকে প্রতিস্থাপিত কারণ (علل البدلی
) এবং অন্যান্য কারণসমূহকে স্বতন্ত্র কারণ(علل الانحصاری
) বলা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া অপর একশ্রেণীর কারণ আছে,যেগুলো উপরোক্ত বৃক্ষের উদ্গতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা থেকে স্বতন্ত্র এবং এদের দৃষ্টান্তকে আত্মা (النفس
) বিষয়ক ক্ষেত্রে বা কোন কোন আত্মিক বিষয়ে পরিলক্ষণ করা যেতে পারে। উদাহরণতঃ যখন মানুষ তার মস্তিষ্কে একটি চিত্র গঠন করে অথবা কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন,মস্তিষ্ক পসূত চিত্র ও ইচ্ছা নামক এমন একধরনের আত্মিক ও মানস সৃষ্টি রূপ পরিগ্রহ করে,যাদের অস্তিত্ব আত্মার উপর নির্ভরশীল এবং দৃষ্টিকোণ থেকে ঐগুলো আত্মার কার্য (معلول
) বলে পরিগণিত। কিন্ত এ ধরনের কার্য (معلول
) এমন যে,কখনই তাদের কারণ থেকে স্বাধীনরূপে বিরাজ করে না এবং উক্ত কারণ ব্যতীত স্বতন্ত্ররূপে অস্তিত্ব লাভ করতে পারেনা। এছাড়া মস্তিষ্কে অংকিত ছবি অথবা ইচ্ছার ক্ষেত্রে আত্মার ভূমিকা এমন সকল শর্তের অধীন যে,তার ঘাটতি,সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ।
অতএব,এ বিশ্বজগতের সৃষ্টিতে অনিবার্য অস্তিত্বের ভূমিকা আত্মিক বিষয়ের ক্ষেত্রে আত্মার ভূমিকা অপেক্ষাও বৃহত্তর ও পূর্ণতর এবং অতুলনীয়। কারণ,তিনি কোন প্রকারের সাহায্য ব্যতিরেকেই তাঁর সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করে থাকেন এবং ঐ সৃষ্টি সমস্ত সত্তা নিয়েই তাঁর উপর নির্ভরশীল ।
অস্তিত্বদানকারী
কারণের
বিশেষত্ব :
পূর্ববর্তী আলোচনার উপর ভিত্তি করে অস্তিত্বদানকারী কারণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্বের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যেতে পারে :
১। অস্তিত্বদাতা কারণকে চূড়ান্ত পর্যায়ে সকল কার্যের (معلول
) পূর্ণতার (کملات
) অধিকারী হতে হবে যাতে প্রত্যেক সৃষ্টিকে (موجود
) তার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী দান করতে পারে -যা সহায়কও অন্যান্য বস্তুগত কারণের ব্যতিক্রম । কারণ ঐ কারণগুলো শুধুমাত্র কার্যের (معلول
) পরিবর্ধন ও বিবর্তনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে এবং ঐগুলোর (বিবর্তন ও পরিবর্ধন) চূড়ান্তরূপের অধিকারী হওয়া তাদের জন্যে অপরিহার্য নয়। যেমন : মাটিকে উদ্ভিজ্জ পূর্ণতার অধিকারী হওয়া অপরিহার্য নয় অথবা পিতার-মাতাকে সন্তানের পূর্ণতা বা উৎকর্ষের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু অস্তিত্বদানকারী স্রষ্টাকে তাঁর অবিভাজ্যতা ও অবিশ্লিষ্টতা গুণের পাশাপাশি অস্তিত্বগত সকল পূর্ণতার অধিকারী হতে হবে।
২। অস্তিত্বদানকারী কারণ স্বীয় কার্যকে (معلول
) অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করে থাকে। এক কথায় তাকে সৃষ্টি করে থাকে এবং এ সৃষ্টির ফলে তার অস্তিত্ব থেকে কিছুই হ্রাস পায়না। অথচ প্রাকৃতিক নিয়ামকসমূহের ভূমিকা শুধুমাত্র কার্যের (معلول
) রূপান্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ,যার জন্যে শক্তি ও সামর্থ্য ব্যয় করতে হয়। অনিবার্য অস্তিত্বের সত্তা থেকে কোন কিছুর বিয়োজনের অর্থ হল,সৃষ্টিকর্তার সত্তাগত বিভাজ্যতা ও পরিবর্তনশীলতা -যার অসারতা ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে ।
৩। অস্তিত্বদানকারী কারণ হল একটি প্রকৃত কারণ (علت الحقیقیة
) । ফলে কার্যের (معلول
)বিদ্যমানতার জন্যেও তার অস্তিত্ব অনিবার্য। কিন্ত সহায়ক কারণের (علة الاعدادی
) অস্তিত্ব,কার্যের (معلول
) জন্যে অপরিহার্য নয়।
অতএব,আহলে সুন্নতের কোন কোন কালামশাস্ত্রবিদগণ থেকে যে বর্ণিত হয়েছে‘
এ বিশ্ব,তার বিদ্যমানতার জন্যে স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল নয়’তা সঠিক নয়। অনুরূপ পাশ্চাত্যের কোন কোন দার্শনিক যে বলে থাকেন,‘
প্রকৃতি জগৎ ঘড়ির মত সর্বকালের জন্যে একবার দমকৃত হয়েছে এবং গতিময়তার জন্যে আর খোদার উপর তার কোন নির্ভরতা নেই’তাও সত্যবহির্ভূত। বরং এ অস্তিত্ব জগৎ সর্বদা সর্বাবস্থায় মহান স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল এবং তিনি যদি এক মুহূর্তের জন্যেও অস্তিত্বপ্রদান থেকে বিরত হন,তবে আর কোন কিছুই বাকী থাকবে না ।
যদি হবেন বিস্মৃত
ধ্বংস হবে সমস্ত।