আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)0%

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 15554
ডাউনলোড: 4610

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15554 / ডাউনলোড: 4610
সাইজ সাইজ সাইজ
আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

১১তম পাঠ

অন্যান্য ক্রিয়াগত গুণাবলী

ভূমিকা

কালামশাস্ত্রের একটি জটিলতম বিষয় হল প্রভুর ইচ্ছা বা প্রত্যয় (اراده )। বিভিন্ন দিক থেকে এ বিষয়টি আলোচনা ও মতবিরোধপূর্ণ বিষয় রূপে পরিগণিত। যেমন : ইচ্ছা বা প্রত্যয় কি সত্তাগত গুণ,না ক্রিয়াগত গুণ? প্রাচীন (قدیم ) ,না সৃষ্ট (حادث ) ? একত্ব,না বহুত্ব ? ইত্যাদি।

এতদসত্বেও দর্শনশাস্ত্রে চূড়ান্ত প্রত্যয় বা ইচ্ছা’শিরোনামে একটি বিষয়ের অবতারণা হয়েছে,বিশেষ করে প্রভুর ইচ্ছা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।

এটা অনস্বীকার্য যে,এ বইয়ের ক্ষুদ্র কলেবরে এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যুক্তিযুক্ত হবে না । সুতরাং প্রারম্ভেই ইচ্ছা বা প্রত্যয়ের তাৎপর্য তুলে ধরব । অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মনোনিবেশ করব ।

ইচ্ছা বা প্রত্যয়

ইচ্ছা বা প্রত্যয় (اراده ) শব্দটি প্রচলিত ভাষায় কমপক্ষে দু টি অর্থে ব্যবহৃত হয় : একটি হল পছন্দ করা’আর অপরটি হল কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া’।

প্রথম অর্থটি বিষয়ের ভিত্তিতে অত্যন্ত ব্যাপক এবং বাস্তব বস্তসমূহকে পছন্দকরণ১৩ ,ব্যক্তিগত কার্যকলাপ এবং অপরের কার্যকলাপকেও সমন্বিত করে। দ্বিতীয় অর্থটি হল এর ব্যতিক্রম,যা শুধুমাত্র স্বয়ং ব্যক্তিসংশ্লিষ্ট কার্যকলাপের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ।

ইরাদা শব্দটি প্রথম অর্থে পছন্দ (محبت ) যদিও মানুষের ক্ষেত্রে নফসের কামনারূপে পরিগণিত হয় তবু বুদ্ধিবৃত্তি এর ঘাটতিপূর্ণ দিকগুলোকে নিষ্কাশন করে একটি সাধারণ অর্থকে হস্তগত করতে পারে,যার পরিসীমা বস্তগত সত্তা থেকে শুরু করে মহান আল্লাহ পর্যন্ত বিস্তত হতে পারে। যেমনটি জ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে পছন্দ (حب ),যা স্বীয় সত্তা সম্পর্কে প্রভুর পছন্দকেও সমন্বিত করে,তাকে সত্তাগত গুণরূপে গণনা করা যেতে পারে।

অতএব,যদি প্রভুর ইরাদা’বা (ইচ্ছা) বলতে পূর্ণতাকে পছন্দ করা বুঝায়,যা প্রথম পর্যায়ে প্রভুর অসীম পূর্ণতা সংশ্লিষ্ট হয় এবং পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য অস্তিত্বময়,যারা প্রকারান্তুরে প্রভুর পূর্ণতারই নিদর্শন,তাদেরকে সমন্বিত করে তবে তা (ইরাদা) সত্তাগত গুণ রূপে পরিগণিত হতে পারে। আর তখন অন্যান্য সত্তাগত গুণের মতই ইরাদাকেও প্রাচীন (قدیم ) একক এবং প্রভুর পবিত্র সত্তার অভিন্ন রূপ বলে মনে করা যেতে পারে ।

কিন্ত ইরাদা’(দ্বিতীয় অর্থে) কর্মসম্পাদনে সিদ্ধান্ত নেয়া অর্থে নিঃসন্দেহে ক্রিয়াগত গুণের অন্তর্ভুক্ত হবে,যা সৃষ্ট বিষয় সংশ্লিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে কালের শর্তে আবদ্ধ হয় -যেমনটি পবিত্র কোরানে এসেছে ।

) إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ(

তার ব্যাপার শুধু এই,তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন,তিনি তাকে বলেন হও’ফলে তা

হয়ে যায় (সুরা ইয়াসিন -৮২)।

তবে মনে রাখতে হবে যে,মহান আল্লাহ ক্রিয়াগত গুণাবলী গুণান্বিত,তা এ অর্থে নয় যে,তার সত্তায় কোন পরিবর্তন সাধিত হয়েছে অথবা কোন উপজাত (عوارض ) তার জাত বা সত্তায় সংযোজিত হয়েছে । বরং এ অর্থে যে,নির্দিষ্ট শর্তে ও বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রভুসত্তা ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি সস্পর্ককে বিবেচনা করা হয় এবং বিশেষ এক সম্পর্কের ভাবার্থকে প্রভুর ক্রিয়াগত গুণ হিসাবে গণনা করা হয় ।

ইরাদার’ক্ষেত্রে এ সস্পর্ককে বিবেচনা করা হয় যে,সকল সৃষ্ট বিষয়ই যে দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্ণতা,স্বাচ্ছন্দ্য ও কল্যাণের অধিকারী সে দৃষ্টিকোণ থেকেই সৃষ্ট হয়েছে। অতএব,তার অস্তিত্ব বিশেষ স্থান ও কাল অথবা বিশেষ অবস্থা,প্রভুর পছন্দ ও জ্ঞানের অধীনে হয়েছে এবং মহান আল্লাহ স্বেচ্ছায় তাকে সৃষ্টি করেছেন -অন্য কারো কর্তৃক বাধ্য হয়ে নয়। এ সস্পর্ক বিবেচনার ফলে ইরাদা নামক এক সম্বন্ধযুক্ত ভাবার্থ প্রকাশ লাভ করে,যা সীমাবদ্ধ ও শর্তাধীন কোন বস্তুর সংশ্লিষ্ট হলে সীমাবদ্ধও শর্তাধীন হয়ে থাকে এবং এ সম্বন্ধযুক্ত ভাবার্থই তখন সৃজিত (حدوث ) ও বহুত্ব (کثرت ) বলে গুণান্বিত হয়ে থাকে। কারণ সম্বন্ধ (اضافه ),দু পক্ষের (طرفین ) অধীন হয়ে থাকে এবং সৃজিত(حدوث ) ও বহুত্ব (کثرت ) হল দু পক্ষের মধ্যে একপক্ষ। এদিক থেকে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ(সীমাবদ্ধ ও শর্তাধীন ) সম্বন্ধের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়াই যুক্তিসংগত ।

প্রজ্ঞা :

ইরাদার’উপরোক্ত ব্যাখ্যা থেকে ইতিমধ্যেই সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়েছে যে,প্রভুর এ ইরাদা বা ইচ্ছা অর্থহীন ও পরিকল্পনাবিহীন কোন কর্মকে অন্তর্ভুক্ত করে না। বরং যা কিছু মূলতঃ প্রভুর ইরাদার অন্তর্ভুক্ত হয় তাই বস্তুর পূর্ণতা ও কল্যাণের কারণ হয়ে থাকে। যেহেতু বস্তুসমষ্টির এক অংশ অপর অংশের ক্ষতির কারণ হয় সেহেতু প্রভুর পূর্ণতাপ্রীতির দাবী হল সৃষ্টিকুল এমনভাবে অস্তিত্বমান হবে যে,সমষ্টিগত কল্যাণ ও পূর্ণতার লদ্ধি সর্বাধিক হবে। এ ধরনের সস্পর্কসমূহকে বিবেচনা করলে কল্যাণ নামক ভাবার্থের সন্ধান মেলে। নতুবা কল্যাণ (مصلحت ) সৃষ্টিকুলের অস্তিত্ব থেকে এমন কোন স্বাধীন বিষয় নয় যে তাদের বিদ্যমানতায় কোন প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এটা কিছুতেই সম্ভব নয় যে,তা প্রভুর ইরাদায় প্রভাব ফেলবে ।

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই,যেহেতু প্রভুর ক্রিয়া তাঁর সত্তাগুণ(যেমন : জ্ঞান,ক্ষমতা,পূর্ণতা ও কল্যাণপ্রীতি) থেকে উৎসারিত,সেহেতু সর্বদা এরূপে বাস্তবায়িত হয় যখন তা কল্যাণকর হয়। অর্থাৎ সৃষ্ট বিষয় সর্বাধিক কল্যাণ ও পূর্ণতার অধিকারী হবে। আর এ ধরনের ইরাদা বা ইচ্ছাকেই প্রজ্ঞাপূর্ণ ইরাদা বলা হয়ে থাকে। এখানে মহান আল্লাহর জন্যে কার্যক্ষেত্রে প্রজ্ঞা নামক অপর একটি গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে,যা অন্যান্য ক্রিয়াগত গুণের মতই প্রভুর সত্তাগত গুণের দিকে প্রত্যাবর্তন করে ।

তবে মনে রাখতে হবে যে,কল্যাণের জন্যে কর্মসম্পাদনের অর্থ এ নয় যে,কল্যাণই হল প্রভুর জন্যে চূড়ান্ত কারণ। বরং তা এক ধরনের গৌণ ও অধঃস্তন উদ্দেশ্য বলে পরিগণিত হয় । অপরদিকে কর্ম সম্পাদনের জন্যে চূড়ান্ত কারণ হল,সে অনন্ত সত্তাগত পূর্ণতার অনুরাগ,যা আনুসঙ্গিকভাবে তার ফলশ্রুতি অর্থাৎ অস্তিত্বময় বিষয়সমূহের পূর্ণতাকেও সমন্বিত করে। আর এ জন্যেই বলা হয়,প্রভুর কর্মকাণ্ডের জন্যে সে কর্তৃকারণই হল চূড়ান্ত কারণ এবং মহান আল্লাহ তাঁর সত্তা বহিঃভূত কোন উদ্দেশ্যও আকাঙ্খা পোষণ করেন না। তবে সৃষ্ট বিষয়ের পূর্ণতা,স্বাচ্ছন্দ্য ও কল্যাণ,গৌণ উদ্দেশ্য বা অধঃস্তন উদ্দেশ্য বলে পরিগণিত হলেও তা উল্লেখিত বিষয়টির সাথে কোন বিরোধ রাখেনা। আর এ জন্যেই প্রভুর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পবিত্র কোরানে এমন সকল বিষয়কে কারণরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে,যাদের প্রত্যেকেরই মূলে রয়েছে সৃষ্ট বিষয়ের পূর্ণতা ও কল্যাণ১৪ । যেমন : পরীক্ষীত কর্মসমূহকে নির্বাচন,আল্লাহর দাসত্ব করা এবং প্রভুর বিশেষ ও অপরিসীম অনুগ্রহের অধিকারী হওয়া ইত্যাদিকে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যরূপে বর্ণনা করা হয়েছে,যাদের প্রত্যেকেই যথাক্রমে অপরের প্রারম্ভিকা(مقدمه )।

প্রভুর ভাষা

মহান আল্লাহর উপর আরোপিত ভাবার্থসমূহের মধ্যে একটি হল কথোপকথন বা কালাম(كلام )। প্রভুর কথোপকথন সম্পর্কে,প্রাচীনকাল থেকেই কালামশাস্ত্রবিদগণের মধ্যে আলোচনা প্রচলিত ছিল। কথিত আছে কালামশাস্ত্র’নামকরণের কারণও হল এটাই যে,এ শাস্ত্রের পণ্ডিতগণ প্রভুর ভাষা বা কালাম সম্পর্কে আলোচনা করতেন। আশায়েরীরা এটাকে সত্তাগত গুণ এবং মুতাযেলীরা ক্রিয়াগত গুণ বলে মনে করতেন। এ দু দলের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহের মধ্যে একটি হল উল্লেখিত বিষয়টি । বলা হয় কোরান যে,আল্লাহর কালাম বা ভাষা,তা কি সৃষ্ট,না সৃষ্ট নয় ? আর এ বিষয়টির জন্যে এমনকি পরস্পর পরস্পরকে কাফের পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন!

সত্তাগত ও ক্রিয়াগত গুণাবলীর সংজ্ঞার আলোকে সহজেই বুঝতে পারা যায় যে,কথোপকথন হল ক্রিয়াগত গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত,যাকে অনুধাবনের জন্যে এমন এক শ্রোতাকেও বিবেচনা করতে হবে,যিনি বক্তার উদ্দেশ্যকে শব্দ শ্রবণের মাধ্যমে বা লিখিত অবস্থায় দেখার মাধ্যমে অথবা স্বীয় মস্তিষ্কে কোন ভাবার্থ অনুধাবনের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন ভাবে বুঝতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এ ভাবার্থটি প্রভু (যিনি এক সত্যকে কারো কাছে প্রকাশ করতে চান) এবং শ্রোতার (যিনি ঐ সত্যকে অনুধাবন করেন) সস্পর্ক থেকে প্রকাশ লাভ করে (যা ক্রিয়াগত গুণের প্রমাণবহ)। কিন্তু যদি কথোপকথনের জন্যে অন্যকোন অর্থকে বিবেচনা করা হয়;যথা : কথনক্ষমতা,বক্তব্যের সারবত্তা সম্পর্কে জ্ঞান,এধরনের অর্থের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়,তবে এ অবস্থায় এ গুণটি (কথোপকথন ) পূর্বোল্লেখিত কোন কোন ক্রিয়াগতগুণের মতই সত্তাগত গুণের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে ।

কিন্তু কোরান বলতে আক্ষরিক লিপি বা শব্দসমষ্টি বা মস্তিষ্কে বিদ্যমান ভাবার্থসমূহ অথবা তার (কোরানের) জ্যোতির্ময় ও নির্বস্তুক বাস্তবরূপকে বুঝানো হলে,তা সৃষ্ট বিষয় বলে পরিগণিত হবে।‘তবে যদি কেউ আল্লাহর সত্তাগত জ্ঞানকে কোরানের বাস্তবরূপ বলে মূল্যায়ন করে থাকেন,তাহলে তার প্রত্যাবর্তন প্রভুর সত্তাগত গুণ জ্ঞানের দিকে ঘটবে । কিন্তু এ ধরনের ব্যাখ্যা সর্বজন স্বীকৃত নয় বলে পরিত্যাজ্য ।

সত্যবাদিতা

প্রভুর কথন যদি আদেশ,নিষেধ ও প্রশ্নবোধক হয়,তবে তা বান্দাগণের কর্তব্যকে নির্দেশ করে থাকে এবং তখন তার উপর সত্য বা মিথ্যা আরোপিত হয় না। কিন্তু যদি প্রভুর কথন বিবৃতিমূলক হয়,যা বাস্তব অস্তিত্বসমূহ অথবা পরবর্তী ও পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সংবাদ বহন করে তবে তা সত্য বলে অভিষিক্ত হয়। যেমন পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে :

) وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا(

কে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী (সুরা নিসা- ৮৭) ?

সুতরাং কেউই ঐগুলোকে কোন অজুহাতেই অগ্রাহ্য করতে পারবে না।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে,আলোচ্য গুণ,বিশ্বদৃষ্টির গৌণ বিষয়গুলোকে এবং অধিকাংশ মতাদর্শগত বিষয়কে প্রতিপাদন করার জন্যে অপর এক শ্রেণীর যুক্তির (বিশ্বাস ও বিবৃতিমূলক) বৈধতা দান করে। উল্লেখিত গুণটির প্রমাণের জন্যে,বিশেষ করে যে বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিটির অবতারণা করা যায় তাহল :

প্রভুর কথা বলা,প্রতিপালকত্বের মর্যাদায় এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে,মানুষ ও বিশ্বজগতের পরিচালনার ক্ষেত্রে,সৃষ্ট বিষয়ের জন্যে পথনির্দেশনার ও সঠিক পরিচিতির ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্যে—অপরিহার্য। যদি এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে বর্ণিত বিষয়গুলোর কোন বিশ্বস্ততা থাকবে—না । কারণ তা উদ্দেশ্যের ব্যতিক্রম ও প্রজ্ঞার পরিপন্থী।

১২তম পাঠ

বিচ্যুতির কারণসমূহের পর্যলোচনা

ভূমিকা

প্রথম পাঠে পরিদৃষ্ট হয়েছে যে,বিশ্বদৃষ্টিসমূহকে দু টি সার্বিক শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়-ঐশ্বরিক ও বস্তবাদী। এতদ্ভয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভেদ হল,সর্বজ্ঞ ও মহাপরাক্রমশালী সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে । প্রকৃতপক্ষে ঐশ্বরিক বিশ্বদৃষ্টি এক মৌলিক ভিত্তিরূপে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিশ্বাস থেকে রূপ পরিগ্রহ করে । অপরদিকে বস্তুগত বিশ্বদৃষ্টি এ বিশ্বাসকে অস্বীকার করে ।

পূর্ববর্তী পাঠসমূহে,এ বইয়ের আওতায় যতটুকু সম্ভব সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রতিপাদন করা ও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গুণসমূহ অর্থাৎ হ্যাঁ-বোধক ও না- বোধক এবং সত্তাগত ও ক্রিয়াগত গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।

এখন এ মৌলিক ভিত্তির উপর বিশ্বাসের দৃঢ়তা বর্ধনের নিমিত্তে বস্তুবাদী বিশ্বদৃষ্টির কিঞ্চিৎ সমালোচনায় মনোনিবেশ করব,যাতে ঐশ্বরিক বিশ্বদৃষ্টির অবস্থান সুস্থিতকরণের পাশাপাশি বস্তুগত বিশ্বদৃষ্টির অসারতা ও অক্ষমতা প্রত্যক্ষরূপে প্রতিপন্ন হয় ।

এ উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথমে ঐশী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্যুতি ও নাস্তিক্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ঝোঁকের কারণ ও নির্বাহক সম্পর্কে আলোকপাত করব। অতঃপর বস্তুবাদী বিশ্বদৃষ্টির দুর্বলতম দিকগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করব ।

বিচ্যুতির কারণসমূহ

মানবজাতির ইতিহাসে নাস্তিকতা ও বস্তুবাদিতার এক সুপ্রাচীন ভিত্তি রয়েছে। ইতিহাস ও পুরাতত্বের সাক্ষ্য থেকে যতটুকু জানা যায়,তাতে দেখা যায়,মানব সমাজে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস যেমন বজায় ছিল,তেমনি অতি প্রাচীনকাল থেকেই নাস্তিক্য ধারণার অনুসারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীরও সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু ধর্মহীনতার প্রচলন অষ্টাদশ খ্রীষ্টাব্দ থেকেই ইউরোপে আরম্ভ হয়েছিল এবং উত্তর উত্তরতা বিশ্বের অন্যত্র বিস্তার লাভ করেছিল । সৃষ্টিকর্তার প্রতি এ আস্থাহীনতা গীর্জাপতিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া থেকে উৎপত্তি লাভ করলেও অন্যান্য ধর্ম ও মাযহাবেও এ তরঙ্গের ছোঁয়া লেগেছিল । ধর্মবিবর্জন প্রবণতা,পাশ্চাত্য শিল্প,প্রকৌশল ও প্রযুক্তি নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল অন্যত্র। গত শতাব্দীতে এ ধর্মহীনতা মার্কসবাদের সামাজিকও অর্থনৈতিক ধারণা নিয়ে অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে,যা বিশ্বমানবতার জন্যে এক মহাবিপদ।

এ বিচ্যুতির উৎপত্তি,বর্ধন ও বিস্তৃতির কারণ অনেক এবং এদের সবগুলোর পর্যালোচনার জন্যে একটি স্বতন্ত্র বইয়ের প্রয়োজন। তবে সার্বিকভাবে তৃবিধ কারণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে :

১। মানসিক কারণ : ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতার জন্যে দায়ী এমন সকল প্রবণতা মানুষের মধ্যে থাকতে পারে,যার প্রভাব সম্পর্কে স্বয়ং ব্যক্তিও অবগত নয়। এগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য হল আরামপ্রিয়তা,উদাসীনতা,দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। অর্থাৎ একদিকে যেমন গবেষণা ও অনুসন্ধানের মত শ্রমসাধ্য কর্ম,বিশেষ করে সে সকল বিষয়ের জন্যে যেগুলোতে বস্তুগত কোন স্বাদ-আনন্দ নেই,তা অলস,আরামপ্রিয়,অক্ষম ব্যক্তির জন্যে কঠিন;তেমনি অপরদিকে পাশবিক স্বাধীনতার প্রতি আকর্ষণ,উচ্ছৃঙ্খলতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা অবাধ্যতা তাদেরকে ঐশ্বরিক বিশ্বদৃষ্টি থেকে বিরত রাখে। কারণ ঐশীমতবাদকে গ্রহণ এবং মহান প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের ফলে অন্য এক শ্রেণীর বিশ্বাস রূপ পরিগ্রহ করে,যার অবিচ্ছেদ্যতা হল সকল স্বাধীন কর্মকাণ্ডের ব্যপারে মানুষের দায়িত্ব পরায়ণতা । আর এ ধরনের দায়িত্বপরায়ণতার দাবি হল,স্বীয় কামনার অধিকাংশ বিষয়কে পরিত্যাগ করা এবং এক প্রকার সীমাবদ্ধতাকে গ্রহণ করা। অপরপক্ষে এ ধরনের সীমাবদ্ধতাকে গ্রহণ করা উচ্ছৃঙ্খল প্রবণতার সাথে সমঞ্চস্যপূর্ণ নয় । ফলে এ ধরনের পাশবিক ইচ্ছা অবচেতনভাবে হলেও দায়িত্বপরায়ণতার মূলে আঘাতের কারণ এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকারের মূল । এ ছাড়াও কিছু মানসিক কারণ রয়েছে যা ধর্মহীনত প্রবণতাকে প্রভাবিত করে এবং অন্যান্য কারণের পশ্চাতে আত্মপ্রকাশ করে ।

২। সামাজিক কারণ : কোন কোন সমাজে অনাকাঙ্খিত সামাজিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এর উৎপত্তি ও বিস্তারে ভূমিকা রাখেন। এ অবস্থায় অধিকাংশ মানুষ,যারা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার ক্ষেত্রে দুর্বল এবং কোন বিষয়ের প্রকৃত বিচার-বিশ্লেষণে মাধ্যমে সংঘঠিত ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে অপারগ,তারা মনে করেন যে,এ বিশৃঙ্খল অবস্থা ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের অনুপবেশের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারা এর দায়িত্বভার দ্বীন ও ধর্মের উপর অর্পণ করেন এবং বলেন যে,ধর্মবিশ্বাসসমূহই এ ধরনের অনাকাঙ্খিত পারিস্থিতি সৃষ্টির কারণ। এ কারণে তারা ধর্ম ও মাযহাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

এ শ্রেণীর কারণের স্পষ্ট দৃষ্টান্তরূপে রেনেসাঁ যুগের ইউরোপের সামাজিক অবস্থার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ধর্মীয়,রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে তদানীন্তন গীর্জাপতিদের অযোগ্য কর্মকাণ্ডই খ্রীষ্টবাদ এবং সামগ্রিকভাবে ধর্ম ও ধর্মীয় বিষয়ের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তষ্টির গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

এ ধরনের কারণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা সকল ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের জন্যে অতীব প্রয়োজন,যাতে স্বীয় দায়িত্বের গুরুত্ব ও স্পর্শকাতর পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিক সচেতন হতে পারেন। অনুরূপ স্মরণ রাখতে হবে যে,তাদের সামান্য ভুল-ত্রুটিই একটি সমাজের বিপথগামিতা ও দুর্দশার কারণ হতে পারে।

৩। চিন্তাগত কারণ : সন্দেহ ও দ্বিধা,যা ব্যত্তির মস্তিষ্কে আসে,তা হয়তো অন্য কারো মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং যুক্তি ও চিন্তাশক্তির দুর্বলতার ফলে,সে ঐ গুলোকে খণ্ডন করতে পারে না । ফলে ন্যূনতম পক্ষে হলেও সে ঐ সন্দেহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে এবং তার মস্তিষ্ককে দোদুল্যমান ও অস্থিতিশীল করে থাকে,যা সন্দেহাতীত ও সুস্থিত বিশ্বাস সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে ।

এ শ্রেণীর কারণসমূহও স্বয়ং একাধিক শাখায় বিভক্ত। যেমন : ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা ভিত্তিক সনহ,কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাসপ্রসূত সন্দেহ,অপব্যাখ্যা ও দুর্বল যুক্তি-ফলপ্রসূত সন্দেহ,অপ্রীতিকর ঘটনা সংশ্লিষ্ট সন্দেহ -যাকে প্রভুর প্রজ্ঞা ও ন্যায়ের পরিপন্থী বলে মনে করা হয়,বৈজ্ঞানিক ধারণাপ্রসতূ সন্দেহ-যা ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী বলে পরিচিত এবং ধর্মীয় কোন কোন বিধি-বিধান সম্পর্কে সন্দেহ,বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সমাজিক বিধি-নিষেধ সম্পর্কে সন্দেহ।

কখনো কখনো দুই বা ততোধিক কারণ সমষ্টিগতভাবে সন্দেহ ও দ্বিধা -দ্বন্দ অথবা অস্বীকৃতিও নাস্তিকতার কারণ হয়ে থাকে । যেমন : কখনো কখনো একাধিক মানসিক জটিলতা ও অসংগতি সন্দেহ সৃষ্টির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে এবং সন্দিগ্ধ’নামক মানসিক রোগের সৃষ্টি—করে,যার ফলশ্রুতিতে কোন প্রকার যুক্তি-প্রমাণেই সে তুষ্ট হয় না । যেমন : সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি,তার কৃতকর্মের সঠিকতা সম্পর্কে কখনই নিশ্চিত হতে পারে না। উদাহরণতঃ দশ দশকবারও যদি পানিতে হাত ধৌত করে তারপরও সে নিশ্চিত হতে পারে না যে,পবিত্র হয়েছে কিনা -যদিও একবার ধৌত করাই পবিত্রতার জন্যে যথেষ্ট ছিল এবং ততোধিকবার অপরিহার্য ছিলনা ।

বিচ্যুতির নির্বাহকসমূহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

বিচ্যুতির নির্বাহক ও কারণসমূহের বিভিন্নতাকে বিবেচনা করলে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,এদের প্রতিটির প্রতিকারের জন্যে স্বতন্ত্র পদ্ধতি ও শর্তের প্রয়োজন। যেমন : মানসিক ও আচরণগত কারণকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এবং আসন্ন ক্ষতির দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিকার করতে হবে;যেমনটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাঠে দ্বীনের অনুসন্ধানের গুরুত্ব ও এ ব্যাপারে উদাসীনতার ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।

অনুরূপ সামাজিক অপকর্মের প্রভাবকে প্রতিরোধ ( এ ধরনের ঘটনার উৎপত্তির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ) করতে হলে ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের ত্রুটিসমূহকে ধর্ম থেকে পৃথক করতে হবে। মানসিক ও সামাজিক কারণের প্রভাবের প্রতি লক্ষ্য রাখার ফলে ন্যূনতম এ লাভটুকু হবে যে,ব্যক্তি অবচেতনভাবে হলেও এ নির্বাহক দ্বারা স্বল্পমাত্রায় প্রভাবিত হবে ।

তদনুরূপ চিন্তাগত কারণের অপপ্রভাবকে প্রতিরোধ করার জন্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষকরে কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস থেকে সঠিক বিশ্বাসকে পৃথক করতে হবে এবং দ্বীনের বিশ্বাসসমূহকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে অযৌক্তিক ও দুর্বল প্রমাণের অবতারণা থেকে বিরত থাকতে হবে। একইভাবে সুস্পষ্টরূপে দেখাতে হবে যে,প্রমাণের দুর্বলতা,দাবিকৃত বিষয়ের দুর্বলতা নয়।

এটা স্পষ্ট যে,বিচ্যুতির সকল কারণ এবং তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উপযুক্ত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা (এ বইয়ের ক্ষুদ্র কলেবরে) যথোপযুক্ত নয়। ফলে শুধুমাত্র নাস্তিক্যপ্রবণতার চিন্তাগত কারণ ও এতদ সংশ্লিষ্ট অনুপপত্তিগুলোর উত্তর দানেই তুষ্ট থাকব ।

১৩তম পাঠ

কয়েকটি ভুল ধারণার অপনোদন

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন অস্তিত্বে বিশ্বাস

খোদা পরিচিতির ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হল যে,ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুধাবনযোগ্য নয় এমন অস্তিত্বময়ের অস্তিত্বে কিরূপে বিশ্বাস করা যায়?

এ ধরনের ভুল ধারণা সরল চিন্তার ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে পরিলক্ষিত হয়। তাদের মতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন বস্তুর অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব। তবে এমন সকল চিন্তাবিদও খুজে পাওয়া যায়,যারা তাদের চিন্তার ভিতকে ইন্দ্রিয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছেন এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন অথবা অন্ততঃপক্ষে সন্দেহাতীতরূপে শনাক্তকরণের উপযুক্ত নয় বলে মনে করেছেন।

এ ক্ষেত্রে বলা যায় যে,ইন্দ্রিয়ানুভূতি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে অর্জিত হয় এবং আমাদের প্রতিটি ইন্দ্রিয়ই স্বীয় কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্তুগত বিষয়কে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে অনুভব করে থাকে। ফলে যেমনি করে আশা করা যায় না যে,চোখ শব্দ শুনবে ও কর্ণ রং সমূহকে দেখবে,তেমনি এটাও আশা করা উচিৎ নয় যে,আমাদের সমষ্টিগত ইন্দ্রিয়সমূহও সকল প্রকার অস্তিত্বকেই অনুভব করতে পারবে।

কারণ প্রথমত : বস্তগত অস্তিত্বসমূহের মধ্যেও এমন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে যেগুলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। যেমন : আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহ অতি বেগুনী রশ্মি,রঞ্জন-রশ্মি,ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গকে দেখতে অক্ষম ।

দ্বিতীয়ত : এমন অনেক বাস্তবতা বিদ্যমান যেগুলোকে আমরা ইন্দ্রিয় বহির্ভূত উপায়ে অনুভব করে থাকি এবং সন্দেহাতীত ভাবেই এগুলোকে আমরা বিশ্বাস করি -যদিও ঐগুলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় নয়। যেমন : আমরা ভয়,ভালবাসা অথবা স্বীয় ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত আছি এবং সন্দেহাতীতভাবে ঐগুলোর অস্তিত্বকে স্বীকার করি -যদিও এ আত্মিক বিষয়গুলো আত্মার মতই ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভবযোগ্য নয়। এমন কি স্বয়ং অনুভুতিও অবস্তগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যু বহির্ভূত বিষয়।

অতএব ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কোন বিষয় অনুভত না হওয়ার অর্থই এটা নয় যে,এর অস্তিত্ব নেই। বরং এ ধরনের কোন বিষয়ের (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন অস্তিত্ব)অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব কিছু নয়।