আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)0%

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 15555
ডাউনলোড: 4610

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15555 / ডাউনলোড: 4610
সাইজ সাইজ সাইজ
আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ভীতি ও অজ্ঞতার ভূমিকা

অপর একটি ভুল ধারণা,যা কোন কোন সমাজতান্ত্রিকের পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে,তা হল এই যে,খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসসমূহ বিপদের প্রভাব বিশেষকরে,ভূমিকস্প,বজ্রপাত ইত্যাদি থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ স্বীয় মানসিক শান্তির জন্যে খোদা নামক এক কাল্পনিক অস্তিত্বকে (العیاذ بالله ) সৃষ্টি করেছে এবং তার উপাসনায় আত্মনিয়োগ করেছে। সুতরাং এ ধারণামতে প্রাকৃতিক ঘটনাসমূহের উৎপত্তির কারণ এবং ঐগুলো থেকে নিরাপদে থাকতে পারার পদ্ধতি যতবেশী আবিস্কৃত হবে খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসও ততটা দুর্বলতর হতে থাকবে ।

মার্কসবাদিরা আরও বাগাড়ম্বরপূর্ণতা সহকারে স্বীয় পুস্তকসমূহে এ বিষয়টিকে সমাজতন্ত্র বিজ্ঞানের অর্জিত বিষয় বলে উল্লেখ করে থাকেন এবং মূর্খ ব্যক্তিদেরকে প্রতারণা করার জন্যে এটি একটি কৌশলমাত্র বলে মনে করে থাকেন ।

উত্তরে বলা উচিৎ

প্রথমতঃ এ ভুলধারণার উৎস হল কোন কোন সমাজতত্ত্ববিদের অনুমান এবং এর সপক্ষে যথোপযুক্ত কোন তাত্বিক যুক্তি নেই ।

দ্বিতীয়তঃ অধুনা অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিই,যারা প্রাকৃতিক ঘটনার কারণ সম্পর্কে অন্য সকলের চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ ছিলেন ও আছেন এবং এমতাবস্থায় খোদার অস্তিত্ব সম্পর্কেও তারা সন্দেহাতীত ও দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতেন এবং করছেন।১৫ অতএব খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস যে,ভীতি ও অজ্ঞতারই ফল,এমনটি হতে পারে না ।

তৃতীয়তঃ কোন কোন প্রাকৃতিক ঘটনা থেকে উৎসারিত ভীতি ও তাদের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতাই যদি খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসের কারণ হয়েও থাকে,তথাপি তার অর্থ এ নয় যে,খোদাভীতি ও অজ্ঞতার সৃষ্টি।

এমন অনেক মানসিক প্রবণতা আছে,যেমন : সৌন্দর্যপ্রিয়তা,খ্যাতি লাভেচ্ছা ইত্যাদি,যা তাত্ত্বিক,প্রকৌশলিক ও দার্শনিক গবেষণার কারণ হয়ে থাকে । অথচ তা ঐ গুলোর বিশ্বস্ততাকে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না।

চতুর্থতঃ যদি কেউ খোদাকে অজ্ঞাত কারণবিশিষ্ট বিষয়সমূহের অস্তিত্বদাতা হিসেবে শনাক্ত করে থাকেন এবং ঐগুলোর প্রাকৃতিক কারণ আবিস্কৃত হওয়ার পর যদি তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে তবে এটাকে তাদের বিশ্বাসেরই দুর্বলতা বলে মনে করতে হবে,যা খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসের অবৈধতার প্রমাণ নয় । কারণ প্রকৃতপক্ষে জাগতিক বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে খোদার কারণত্ব,প্রাকৃতিক কারণের মত নয় ও তাদের সামন্তরিক কোন কারণও নয় । বরং এ কারণত্ব সকল কারণের উর্ধ্বে ও সমুদ্বয় বস্তুগত এবং অবস্তুগত কারণের উলম্বে অবস্থান করে । সুতরাং প্রাকৃতিক কারণের শনাক্তকরণ বা না করণ,একে গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রভাব ফেলে না ।

কার্যকারণবিধি কি একটি সার্বিক বিধি ?

অপর একটি ভুলধারণা,যা কোন কোন পাশ্চত্য চিন্তাবিদ উল্লেখ করেছেন তা হল : যদি কার্যকারণ বিধির সার্বিকতা থেকে থাকে তবে খোদার জন্যেও কোন কারণকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। অথচ মহান আল্লাহ হলেন প্রারম্ভিক কারণ,যার অস্তিত্ব কোন কারণের উপর নির্ভরশীল নয়। অতএব কারণবিহীন খোদাকে স্বীকার করার অর্থ হল কার্যকারণ বিধির পরিপন্থি এবং এ বিধির সার্বজনীনতার ব্যতিক্রম কোন বিষয়ের স্বীকৃতি প্রদান । অপরপক্ষে যদি এ বিধির সার্বজনীনতাকে অস্বীকার করি,তবে অনিবার্য অস্তিত্বকে প্রমাণের জন্যে এ বিধিকে প্রয়োগ করতে পারব না । কারণ,হয়ত কেউ বলতে পারেন যে,বস্তুমূল অথবা শক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং কোন কারণের সাহায্য ব্যতিরেকেই অস্তিত্বে এসেছে। অতঃপর এর পরিবর্তন ও বিবর্তনের মাধ্যমেই অন্য সকল বিষয়বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে ।

এ ভুলধারণাটি (যেমনটি ৭ম পাঠে বর্ণিত হয়েছে) কার্যকারণ বিধির অপব্যাখ্যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ এরূপ চিন্তা করেছেন যে,উল্লেখিত বিধিটির প্রকৃত ভাবার্থ হল সকল কিছুই কারণের উপর নির্ভরশীল’। অথচ এর সঠিক ব্যাখ্যা হল প্রতিটি সম্ভাব্য অস্তিত্ব বা নির্ভরশীল অস্তিত্বই কারণের উপর নির্ভরশীল’। এ বিধিটি এমন এক বিধি,যা সার্বজনীন ও ব্যতিক্রমতা বর্জিত।

আবার যদি মনে করা হয় যে,বস্তুমূল ও শক্তি কোন কারণ ব্যতীতই অস্তিত্বে এসেছে এবং তার বিবর্তনেই অন্য সকল কিছু সৃষ্টি হয়েছে;তাহলে তার জন্যে অনেক প্রশ্ন ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরবর্তীতে আমরা এ সম্পর্কে আলোচনা করব বলে আশা রাখি ।

অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সংগ্রহ

অপর একটি ভুলধারণা হল এই যে,বিশ্ব ও মানুষের জন্যে কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস,আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন কোন বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । যেমন : রসায়নে প্রমাণিত হয়েছে যে,বস্তু ও শক্তির মোট পরিমাণ সর্বদা ধ্রুব এবং কোন কিছুই অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসেনা। অনুরূপ কোন অস্তিত্বই সম্পূর্ণরূপে বিনাশিত হয়ে যায় না। অথচ খোদার উপাসকগণ বিশ্বাস করেন যে,খোদা সৃষ্ট বিষয়সমূহকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন ।

অনুরূপ জীববিজ্ঞানে প্রতিপাদিত হয়েছে যে,জীবন্ত অস্তিত্ব নির্জীব অস্তিত্ব থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে বিবর্তন ও বিকাশের মাধ্যমে মানবীয় রূপ লাভ করেছে । অথচ খোদার উপাসকগণ বিশ্বাস করেন যে,খোদা তাদের প্রত্যেকটিকে স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন ।

উত্তরে বলতে হবে

প্রথমতঃ বস্তু ও শক্তির নিত্যতাসূত্র হল,একটি তাত্ত্বিক ও অভিজ্ঞতালব্ধ পদ্ধতি যা শুধুমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপযোগী বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সুতরাং উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় নিম্নলিখিত দার্শনিক বিষয়টির সমাধান করা সম্ভব নয়। যথা : পাদার্থ এবং শক্তি কি অনাদি ও অনন্ত হতে পারে ?

দ্বিতীয়তঃ মোট পদার্থ ও শক্তির পরিমাণ ধ্রুব ও চিরন্তন হওয়ার অর্থ,সৃষ্টিকর্তার উপর অনির্ভরশীলতা (সৃষ্টির জন্যে) নয়। বরং পৃথিবীর বয়ঃসীমা যত দীর্ঘতর হবে,সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার নির্ভরশীলতাও ততবেশী হবে। কারণ কার্যের (Effect) কারণের (Cause) উপর নির্ভরশীলতার মানদণ্ড হল তার (কার্যের) সম্ভাব্যতা ও সত্তাগত নির্ভরশীলতা -সৃষ্টি ও কালের সীমাবদ্ধতায় নয়। অন্য কথায় : পদার্থ ও শক্তি হল বিশ্বের বস্তুগত কারণ,কর্তকারণ নয় এবং তারাও স্বয়ং কর্তকারণের উপর নির্ভরশীল।

তৃতীয়ত : পদার্থ ও শক্তির পরিমাণ ধ্রুব হওয়ার অর্থ,নতুন কোন সৃষ্টির আবির্ভাব ও হ্রাস-বৃদ্ধির ব্যতিক্রম নয়। অপরপক্ষে আত্মা (روح ) ,জীবন (حیات ) চেতনা (شعور ) ও প্রত্যয় ইত্যাদি বিষয়গুলো পদার্থ ও শক্তির মত কোন বিষয় নয় যে,তাদের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে পদার্থ ওশক্তির নিত্যতা সূত্রের পরিপন্থী কোন ঘটনা ঘটবে।

চতূর্থত : বিবর্তনের ধারণাটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এখনো যথেষ্ট স্বীকৃতি পায়নি। বরং অধিকাংশ বিজ্ঞ -মনীষী কর্তৃক পরিত্যাজ্যও হয়েছে। এ ধারণাটির সাথে খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসের কোন বিরোধ নেই । সর্বোচ্চ হলেও তা শুধুমাত্র জীবন্ত অস্তিত্বসমূহের মধ্যে একপ্রকার সহায়ক কারণত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে -অস্তিত্বদাতা প্রভুর সাথে অস্তিত্বময়ের সস্পর্ককে নিষেধ করে না । আর এর প্রমাণ হল এই যে,এ ধারণারই অনেক সমর্থক,বিশ্ব ও মানুষের জন্যে এক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্বাস করতেন এবং করেন ।

১৪তম পাঠ

বস্তুগত বিশ্বদৃষ্টি এবং এর ত্রুটি নির্দেশ

বস্তুগত বিশ্বদৃষ্টির মূলনীতিসমূহ

বস্তগত বিশ্বদৃষ্টির মূলনীতিগুলোকে নিম্নলিখিতরূপে বর্ণনা করা যেতে পারে :

প্রথমতঃ অস্তিত্ব হল বস্তু ও বস্তসম্বন্ধীয় বিষয়ের সমান । ঐগুলোকেই অস্তিত্বশীল বলা যাবে,যেগুলো হল বস্তু এবং যারা ত্রিমাত্রিক (দৈর্ঘ্য,প্রস্থ ও উচ্চতা বিশিষ্ট) ও যাদের আয়তন আছে;অথবা যারা বস্তগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে পরিগণিত। স্বভাবতঃই বস্তু স্বয়ং নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিকারী যা বিভাজনযোগ্য। এ মূলনীতির ভিত্তিতে অবস্তগত ও অতিপ্রাকৃতিক অস্তিত্ব হিসেবে খোদার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয় ।

দ্বিতীয়তঃ বস্তু হল অনদি ও অনন্ত এবং অসৃষ্ট অস্তিত্ব যা কোন কারণের উপর নির্ভরশীল নয় । অর্থাৎ দার্শনিক পরিভাষায় আমরা যাকে বলি অনিবার্য অস্তিত্ব ।

তৃতীয়তঃ বিশ্বের জন্যে কোন চূড়ান্ত কারণ বা উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা যায় না। কারণ এমন কোন সচেতন ও প্রত্যয়ী কর্তা নেই,যার প্রতি কোন উদ্দেশ্যকে আরোপ করা যাবে ।

চতূর্থতঃ বিশ্বে বিদ্যমান সৃষ্টিকুল (বস্তমল নয়) বস্তকণার গতির ফলে এবং তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রবর্তী সৃষ্টিসমূহকে উত্তরবর্তী সৃষ্টিসমূহের জন্যে একপ্রকার শর্ত ও সহায়ক কারণরূপে মনে করা যেতে পারে এবং বস্তগত বিষয়ের মধ্যে অন্ততঃপক্ষে একপ্রকার প্রাকৃতিক কর্তৃত্বকে মেনে নেয়া যায়। যেমন : বৃক্ষকে ফলের জন্যে প্রাকৃতিক কর্তা বলা যায়। অনুরূপ বস্তুগত ও রাসায়নিক বিষয়সমূহও নিজ নিজ নির্বাহকসমূহের সাথে সস্পর্ক যুক্ত । কিন্তু কোন সৃষ্ট বিষয়ই সৃষ্টিকর্তা বা অস্তিত্বদাতা কর্তার উপর নির্ভরশীল নয় ।

উপরোক্ত মূলনীতিসমূহের সাথে অপর একটি মূলনীতিকে পঞ্চম মূলনীতি রূপে উল্লেখ করা যেতে পারে,যা পরিচিতি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং যা এক দৃষ্টিকোণ থেকে অপর সকল মূলনীতির শীর্ষে অবস্থান করে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল :

একমাত্র সে সকল পরিচিতিই গ্রহণযোগ্য,যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এবং যেহেতু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা শুধুমাত্র বস্তু ও বস্তগত বিষয়কেই প্রতিপাদন করে সেহেতু অন্য কোন কিছুরই গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারেনা।

কিন্তু এ মূলনীতির অসারতা পূর্ববর্তী পাঠে প্রতিভাত হয়েছে। সুতরাং নতুন করে একে খণ্ডনের প্রয়োজন নেই। ফলে এখানে আমরা অন্যান্য মূলনীতিসমূহের সমালোচনায় মনোনিবেশ করব ।

প্রথম মূলনীতির পর্যালোচনা

এ মূলনীতিটি,যা বস্তগত বিশ্বদৃষ্টির মৌলিকতম মূলনীতি হিসেবে পরিগণিত তা প্রকৃতপক্ষে নিরর্থক ও অযৌক্তিক দাবি ব্যতীত আর কিছুই নয়। বিশেষ করে বস্তবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার মৌলিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত,তা অতিপ্রাকৃতিক বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করার মত কোন প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারবে না। কারণ এটা স্পষ্ট যে,কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানই স্বীয় বস্তু ও বস্তগত পরিসীমাকে অতিক্রম করে,কোন কিছুর ব্যাপারে মন্তব্য অথবা কোন কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করতে পারবে না। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার যুক্তিতে সর্বোচ্চ যা বলা যাবে,তা হল এই যে,এর (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার) ভিত্তিতে অতিপ্রাকৃতিক বিষয়কে প্রমাণ করা যাবে না। অতএব কমপক্ষে তার (অতিপ্রকৃতিকে) অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে মেনে নেয়া উচিৎ।

ইতিপূর্বে আমরা দেখিয়েছি যে,মানুষ এমন অনেক অবস্তগত বিষয়কে প্রত্যক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে উপলব্ধি করে থাকে,যেগুলো বস্তু বা বস্তগত কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারি নয় । যেমন : আত্মাকে

(روح ) মানুষ প্রত্যক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে উপলব্ধি করে । অনুরূপ নির্বস্তুক বিষয়ের (امور مجرد ) স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে,যা দর্শনের বিভিন্ন পুস্তকে সংরক্ষিত আছে। নির্বস্তুক আত্মার অস্তিত্বের সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ হিসেবে সত্য স্বপ্নসমূহ,যোগীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড,১৬ নবী-রাসুল ও ওলীগণের (আলাইহিমু ছালাম) বিভিন্ন মো’জেযা ও কিয়ামতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সর্বোপরি মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর বস্তগত না হওয়ার স্বপক্ষে,যে সকল দলিল,প্রমাণের অবতারণা হয়েছে তা-ই এ মূলনীতিটির অসারতা প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট।

দ্বিতীয় মূলনীতির পর্যালোচনা

এ মূলনীতিতে বস্তর অনাদি ও অনন্ত হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে,বস্তু হল অসৃষ্ট। কিন্তু,

প্রথমতঃ বস্তুর অনাদি ও অনন্ত হওয়া,বৈজ্ঞানিক ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রতিপাদনযোগ্য নয়। কারণ ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ এবং কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই স্থান ও কালের দৃষ্টিতে বিশ্বের অনন্ত হওয়ার কথা প্রমাণ করতে পারবে না ।

দ্বিতীয়তঃ বস্তকে অনাদি মনে করলেও,তার পারস্পরিক অর্থ এ নয় যে,তা সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল নয়। যেমন : কোন যান্ত্রিক গতির অনাদি হওয়ার কথা কল্পনা করার পারস্পরিক অর্থ হল,এক অনাদি উদ্দীপক শক্তিকে কল্পনা করা -উদ্দীপক শক্তির উপর এর অনির্ভরশীলতা নয়।

এ ছাড়া বস্তর অসৃষ্ট হওয়ার অর্থ হল,এর অনিবার্য অস্তিত্ব হওয়া । কিন্তু অষ্টম পাঠে আমরা প্রমাণ করেছি যে,বস্তর পক্ষে অনিবার্য অস্তিত্ব হওয়া অসম্ভব।

তৃতীয় মূলনীতির পর্যালোচনা

তৃতীয় মূলনীতিটি অস্বীকার করে যে,কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তা হতে স্বভাবতঃই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের অস্বীকৃতির প্রকাশ পায়। তাই প্রজ্ঞাবান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার মাধ্যমে যুগপৎ এ নীতিটির অসারতাও প্রমাণিত হয়।

এ ছাড়া প্রশ্ন আসে যে,কিরূপে বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারি কোন মানুষ মানব তৈরীকৃত কোন কিছুর পর্যবেক্ষণে তৈরীকারকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে,অথচ এক বিস্ময়কর সুবিন্যস্ত বিশ্বব্রম্মাণ্ড ও তাতে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়বস্তর পারস্পরিক বন্ধন ও অগণিত কল্যাণময় সৃষ্টিকে অবলোকন করেও এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনবগত থাকবে ?

চতুর্থ মূলনীতির পর্যালোচনা

বস্তগত বিশ্বদৃষ্টির চতুর্থ মূলনীতিটি হল কারণত্বকে শুধুমাত্র বস্তগত সৃষ্টিসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা,যা প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ সমস্যাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ হল :

প্রথমতঃ এ মূলনীতি অনুসারে কখনোই কোন নব অস্তিত্বের আবির্ভাব ঘটা উচিৎ না। অথচ প্রতিনিয়ত আমরা বিশেষ করে মানব ও প্রাণীজগতে নব নব অস্তিত্বের সংযোজন লক্ষ্য করছি । এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল জীবন,চেতনা,অনুভূতি,আবেগ,সৃজনশীলতা ও প্রত্যয়।

বস্তবাদীরা বলেন,উল্লেখিত বিষয়গুলোও বস্তগত বৈশিষ্ট্য ছাড়া আর কিছুই নয়।

উত্তরে বলব :

প্রথমতঃ উল্লেখিত বিষয়গুলো খণ্ডনযোগ্য নয়। অথচ বস্তু ও বস্তগত বিষয়গুলো হল খণ্ডন ও বিভাজনযোগ্য এবং আকৃতি বিশিষ্ট। কিন্তু উপরোক্ত বিষয়গুলো এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়।

দ্বিতীয়তঃ এ বিষয়গুলো যেগুলোকে বস্তগত বৈশিষ্ট্য’বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিঃসন্দেহে এগুলো কোন নির্জীব বস্ততে বিদ্যমান ছিলনা । অন্য কথায় : কোন এক সময় বস্তু এগুলোর অভাবে ছিল এবং পরবর্তীতে এ গুলোর অধিকারী হয়েছে । অতএব বস্তগত বৈশিষ্ট্য বলে পরিচিত এ বিষয়গুলোকে অস্তিত্বে আসার জন্যে এমন এক অস্তিত্বদানকারীর উপর নির্ভর করতে হয়,যে এগুলোকে অস্তিত্বদান করে। আর তা-ই হল সৃষ্টিকারী বা অস্তিত্বদাতা কারণ ।

এ মতবাদটির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল যে,এ নীতি অনুসারে বিশ্বের সকল কিছু বাধ্যতামূলক হতে হবে । কারণ বস্তুর আভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে স্বীয় নির্বাচন ও—স্বাধীনতার কোন স্থান নেই।

স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা বুদ্ধিবৃত্তির ব্যতিক্রম,যার পারস্পরিক অর্থ হল,যে কোন প্রকার দায়িত্ব-পরায়ণতা এবং চারিত্রিক ও আত্মিক মূল্যবোধকে অস্বীকার করা। আর দায়িত্ব পরায়ণতা ও মূল্যবোধসমূহকে অস্বীকার করা যে,মানবিক জীবন ব্যবস্থার জন্যে কতটা হুমকিস্বরূপ তা বলাই বাহুল্য ।

সর্বোপরি বস্তু অনিবার্য অস্তিত্ব হতে পারে না,(ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে) এ যুক্তির আলোকে বলতে হয়,কোন এক কারণকে জাগতিক বিষয়সমূহের জন্যে বিবেচনা করতে হবে এবং এ ধরনের কোন কারণ প্রাকৃতিক বা সহায়ক কারণের মত হবে না। কারণ এ ধরনের শৃঙ্খলা বা পারস্পরিক সস্পর্ক শুধুমাত্র বস্তগত বিষয়সমূহের পরস্পরের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় বটে,কিন্তু সমগ্রবস্তু স্বীয় কারণের সাথে এ ধরনের সস্পর্ক ( অর্থাৎ একটি অপরটির কারণ) বজায় রাখতে পারবে না। অতএব যে কারণ বস্তকে অস্তিত্বে এনেছে তা হল সৃষ্টিকারী কারণ -যা অতি বস্তগত বিষয়।