ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল 7%

ইনসানে কামেল লেখক:
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

ইনসানে কামেল
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 83 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 42385 / ডাউনলোড: 7058
সাইজ সাইজ সাইজ
ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

1

2

এরফানী মতবাদের ব্যাখ্যা

আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে,দার্শনিকের দৃষ্টিতে পূর্ণ মানবের প্রতিকৃতি এক রকম আর এরফানের দৃষ্টিতে অন্য রকম। নব্য দার্শনিকদের দৃষ্টিতে আবার ভিন্ন রকম। পূর্ণ মানব সম্পর্কিত আলোচনায় যে মতবাদগুলোকে সংক্ষিপ্তভাবে আমরা তুলে ধরেছি সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা আমরা পরবর্তীতে দান করব। যে মতবাদগুলো আমরা আলোচনা করেছি তা হলো বুদ্ধিবৃত্তিক মতবাদ,আত্মিক মতবাদ বা আরেফদের মতাদর্শ,ভালোবাসা বা প্রেমের মতবাদ,ক্ষমতার মতবাদ এবং সেবার মতবাদ। আজকের আলোচনায় আমরা এগুলোর একটিকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং এ মতবাদের বিভিন্ন অংশ নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরব যেমনভাবে গত আলোচনায় বুদ্ধিবৃত্তিক মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো এরফানী ও তাসাউফী মতবাদের দৃষ্টিতে ইনসানে কামেল বা পূর্ণ মানব। এরফান ও তাসাউফের দৃষ্টিতে পূর্ণ মানবের আলোচনাটি আমাদের নিকট বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এ্যারিস্টটল বা ইবনে সিনার মত দার্শনিকরা পূর্ণ মানবের প্রতিকৃতিকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে সেটা পরিচিত নয়,বরং তত্ত্ব হিসেবে দর্শনের গ্রন্থগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে- তার থেকে বের হয়ে আসেনি। কিন্তু এরফানী ও তাসাউফী মতাদর্শ পূর্ণ মানব সম্পর্কিত তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে কবিতা ও প্রবন্ধের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এরফানী গ্রন্থসমূহ যেহেতু এ ষিয়টিকে লেখনী ও কবিতাতে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছে তাই তা সাধারণ মানুষের অন্তরে অধিক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এ মতাদর্শেও দর্শন ও বুদ্ধিবৃত্তির মতবাদের মতো কিছু বিষয় রয়েছে যা ইসলাম গ্রহণ করে। তদুপরি এ মতবাদও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। ইসলামের পূর্ণ মানব এরফানের পূর্ণ মানবের সঙ্গে একশ ভাগ খাপ খায় না।

আরেফদের দৃষ্টি প্রেম

পূর্ববর্তী আলোচনায় আমরা বলেছি দর্শন আকল বা বুদ্ধিবৃত্তিকে মানুষের সত্তা ও মূল বলে জানে। আকল ব্যতীত অন্য সকল কিছুকে মানুষের সত্তা বহিভূত বলে জানে এবং মাধ্যম বলে মনে করে। মানুষের অহমকে (আমিত্ব) তার চিন্তাশক্তি বলে বিশ্বাস করে। আরেফগণ মানুষের আকল বা চিন্তাকে অহম বলে মনে করেন না। বরং চিন্তাশক্তিকে মাধ্যম বলে মনে করেন। তবে মাধ্যম হিসেবেও একে খুব নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করেন না। এরফানের দৃষ্টিতে মানুষের প্রকৃত সত্তা বা আমিত্ব হলো তার কালব বা হৃদয়। দার্শনিকের বুদ্ধিবৃত্তি কেন্দ্রিক আমিত্বের বিপরীতে আরেফ আমিত্বকে কালব বলে ব্যাখ্যা করেন। অবশ্য সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়,আরেফ কালব বলতে মানব দেহের বাম পার্শ্বস্থিত ত্রিকোণাকার মাংসপিণ্ডকে বোঝান না যা সার্জন প্রফেসর বার্নার্ড অস্ত্রোপাচার করে পুনঃস্থাপন করেছেন। যেমনভাবে আকল চিন্তা ও বিশ্লেষণের কেন্দ্র তেমনি হৃদয় মানুষের আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র। আকল ও হৃদয় মানবদেহের ভিন্ন দু টি কেন্দ্র।

আরেফ অনুভূতিকে,সার্বিকভাবে বললে প্রেমকে (যা অনুভূতির কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী) বিশেষভাবে গুরুত্ব ও মূল্য দান করেন। একজন বিজ্ঞ দার্শনিকের নিকট চিন্তা,যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপনের গুরুত্ব যেরূপ,একজন আরেফের নিকট প্রেম ও ভালবাসার গুরুত্বও তদ্রূপ। অবশ্য আরেফগণ ইশক বা প্রেম বলতে যা বোঝান তার সঙ্গে আমাদের পত্র-পত্রিকার প্রেমের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের প্রেম দৈহিক। অপরপক্ষে প্রথমত আরেফগণের প্রেম মানুষের আত্মায় উদ্ভূত হয়ে খোদায় পৌছায় এবং আরেফের প্রকৃত প্রেমিক ও একমাত্র প্রেমাস্পদ শুধুই আল্লাহ্।

দ্বিতীয়ত আরেফগণের প্রেম মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আরেফ বিশ্বাস করেন সমগ্র সৃষ্টিজগতে প্রেম বিস্তৃত। কোন কোন এরফানী ও এরফানমুখী দর্শনের গ্রন্থে,যেমন আসফার -এ একটি অধ্যায় রয়েছে যার নাম ফি সিরইয়ানিল ইশক ফি জামিয়িল মাওজুদাত অর্থাৎ সমগ্র অস্তিত্বজগতে প্রেমের বিচরণ। তারা বিশ্বাস করেন প্রেম এক বাস্তবতা যা অস্তিত্ব জগতের অণু-পরমাণুতে ছড়িয়ে রয়েছে। এই বায়ু,পাথর,এমনকি বস্তুর ক্ষুদ্রতম এককের মধ্যেও প্রেম বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে যা আসল ও মৌলিক তা প্রেম,প্রেম ব্যতীত অন্য সকল কিছুই এর উপমা ও অলংকার বিশেষ। মাওলানা রুমীর ভাষায়-

প্রেম দরিয়া যেন,আসমান তার ফেনা

জুলাইখার চোখে যেন ইউসুফের নেশা।

আসমান-জমিনসহ সমগ্র প্রকৃতি জগৎ আরেফদের চোখে প্রেমরূপ সমুদ্রের উপর ফেনা বৈ কিছু নয়।

হাফেজ শিরাজী বলেন,

আসিনি এ জগতে সম্মান ও মর্যাদা পেতে,

আশ্রয় নিয়েছি হেথায় দুর্ঘটনার ফলশ্রুতিতে।*

প্রেমের পথেই করেছেন সৃষ্টি অনস্তিত্ব হতে আমায়,

প্রেমের এ পথ পেরিয়েই চাই পৌছতে সেথায়।

(*হযরত আদম (আ.)-এর বেহেশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার ঘটনা।)

অত্যন্ত সুন্দর বলেছেন হাফেজ। বলা হয়ে থাকে এ পঙ্ক্তি দু টি সহীফায়ে সাজ্জাদিয়ায় বর্ণিত ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর প্রথম দোয়াটির অনুবাদ। মহান আল্লাহর প্রশংসার পর তিনি বলছেন,

إبتدع بقدرته الخلق إبتدعا و اخترعهم علی مشیّته اخترعا ثمّ سلک بهم طریق عبادته و بعثهم فی سبیل محبته

(সেই আল্লাহর প্রশংসা) যিনি তার ক্ষমতার মাধ্যমে অনস্তিত্ব থেকে (সৃষ্টি জগতকে) অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন যার পূর্বে কোন উদাহরণ ছিল না। তার ইচ্ছার মাধ্যমেই অনস্তিত্বের অন্ধকার থেকে তাকে অস্তিত্বের আলোয় আনয়ন করেছেন। অতঃপর তাকে পরিচালিত করেছেন তার বন্দেগীর দিকে এবং তার ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের জন্য তাকে নির্বাচিত করেছেন।

হাফেজও তা-ই বলছেন।

পূর্ণতায় পৌছার পথ

যখন আরেফ বিশ্বজগতের জন্য কেবল একটি সত্যের অস্তিত্বে বিশ্বসী যার নাম প্রেম তখন তার দৃষ্টিতে চিন্তা মানুষের জন্য কোন বাস্তব গুরুত্ব রাখে না। বরং মানুষের প্রকৃত সত্তা তার হৃদয় যা ঐশী ভালোবাসার কেন্দ্র। সুতরাং বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রেমের মতবাদের মধ্যে মানুষের অহম বা আমিত্বের বিষয়ে বিভেদ রয়েছে। মানুষের অহম কি- সেটা যা চিন্তা করে,নাকি যা ভালবাসে। আরেফ বলেন,তোমার আমিত্ব তোমার যে সত্তা ভালোবাসে- সে সত্তা নয় যা চিন্তা করে।

যদি মানুষ দার্শনিকের দৃষ্টিতে পূর্ণ মানুষের মর্যাদায় পৌছতে চায় তা কোন মাধ্যমের সাহায্যে? দার্শনিকের উত্তর হলো চিন্তা,যুক্তি,দলিল ও তর্কশাস্ত্রের নিজস্ব ছাঁচের মাধ্যমে। কিন্তু আরেফ বলেন, না। জ্ঞান,শিক্ষা,শ্রবণ,কথন,যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের কোন ভূমিকাই নেই।

সুফীর খাতায় নেই কোন বর্ণমালার উপস্থিতি

শুভ্র অন্তর সেথা,শ্বেত বরফের সেথা আত্মগীতি।

এত সকল কাজ বাদ দিয়ে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ কর। দার্শনিক বলেন, চিন্তা কর,শিক্ষকের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ কর । কিন্তু আরেফ বলেন, পবিত্র হও,আত্মাকে পরিশুদ্ধ কর,অসৎ চরিত্রকে নিজের থেকে দূর কর,সত্য ব্যতীত যা কিছু আছে তা নিজের থেকে বিতাড়িত কর,আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ বৃদ্ধি কর,নিজের চিন্তার উপর প্রাধান্য লাভ কর। আল্লাহ্ ব্যতীত যা কিছু তোমার অন্তরে আসবে তা শয়তান। যদি শয়তানকে অন্তর থেকে দূর না কর তাহলে আল্লাহর নূরের ফেরেশতা তোমার অন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না।

সচেষ্ট আমি এ ধরায় সে মতি,পাই যেন এ শক্তি

দূর হয়ে যায় যত গ্লানি-ক্লিষ্ট,লভি যাতে মুক্তি

দূর কর অসুরে,দাও স্থান ফেরেশতায়।

জালেম শাসকের সহাবস্থান অমানিশার অন্ধকার এনেছে

যদি পেতে চাও আলো,চাও তা সূর্যের কাছে।

দুনিয়া প্রেমিক প্রভুর দরবারে আর কত ধরনা দেবে?

জালেমের দুয়ারে প্রতীক্ষা করে আর কত ভিক্ষা নেবে?

ভিক্ষার পথ কর না ত্যাগ যেথায় পাবে রতন

প্রতীক্ষা কর সেই পথে যে পথে মহাজন করে গমন।

এ কবিতায় কবি ক্ষমতাবানদের দুয়ারে ধরনা দিতে নিষেধ করেছেন। আবার বলছেন,ভিক্ষার পথত্যাগ কর না,কিন্তু কার নিকট ভিক্ষুক হবে? বলছেন,একজন পূর্ণ মানবের নিকট।

যা হোক,এ মতবাদ মানুষের পূর্ণতায় পৌছার যে পথ উপস্থাপন করে তা আত্মিক পরিশুদ্ধির পথ,স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসার পথ। মানুষ যত বেশি খোদার প্রতি অনুরক্ত হবে,খোদা ভিন্ন অন্য সকল কিছুকে মন থেকে বিদূরিত করবে,নিজের অস্তিত্বের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে অন্য সকল বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে তত বেশি পূর্ণ মানবের মর্যাদার নিকটবর্তী হবে।

স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়,এরা যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন এবং তর্ক-বিতকের কোন মূল্য দেয় না। মাওলানা রুমী বলেন,

যুক্তির পা কাষ্ঠ নির্মিত

কাষ্ঠ পদের নেই কোন স্থায়িত্ব।

অন্যস্থানে বলছেন,

যুক্তি যদি হয় মুক্তা ও পরশমনি

প্রেম তবে প্রাণের খনি

প্রাণের মর্যাদা রয়েছে ভিন্ন স্থানে

প্রাণের শরাব পানে পৌছে স্থায়ী আসনে।

শেষ গন্তব্য কোথায়? দার্শনিকের দৃষ্টিতে মানুষের লক্ষ্য সে এক বিশ্বে পরিণত হবে- যে বিশ্ব চিন্তার বিশ্ব। দার্শনিকের ভাষায়-

صیرورة الإنسان عالما عقلیا مضاهبه للعالم العینیّ

মানুষ চিন্তাগতভাবে বাস্তব বিশ্বের অনুরূপ বিশ্বে রূপান্তরিত হওয়া অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব সার্বিকভাবে তার বুদ্ধিবৃত্তির আয়নায় প্রতিফলিত হওয়া এমনভাবে যে,সমগ্র বিশ্বকে তার অভ্যন্তরে অনুভব ও পর্যবেক্ষণ করবে। দার্শনিকের পথের সমাপ্তি বিশ্বকে দেখা ও জানার মাধ্যমে কিন্তু আরেফের পথের সমাপ্তি কোথায়? আরেফের শেষ লক্ষ্য জানা বা দেখা নয়,বরং পৌছতে চান সত্যের মূলে অর্থাৎআল্লাহ্য়। তিনি বিশ্বাস করেন যদি মানুষ তার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং প্রেমের পথে যাত্রা করে (তবে এ যাত্রা অবশ্যই একজন ইনসানে কামেলের তত্ত্বাবধানে হতে হবে) তাহলে এ পথের শেষে স্রষ্টাও তার মধ্যে কোন পর্দা থাকবে না এবং সে আল্লাহ্য় পৌছে যাবে।

কোরআনে আল্লাহ্পাক তার দীদার বা সাক্ষাতের কথা বলেছেন। আরেফগণ আল্লাহর নৈকট্য ও দীদারের বিষয়ে প্রচুর আলোচনা করেছেন। বিষয়টি ব্যাপক বিধায় এ বিষয়ে প্রবেশ করতে চাচ্ছি না যে,এর অর্থ কি। যা হোক,আরেফ এটা বলেন না যে,আমি এমন স্থানে পৌছব যেখানে নিজেই চিন্তার এক বিশ্ব হব বা আয়না হব যাতে বিশ্ব প্রতিফলিত হবে,বরং বলেন আমি বিশ্বের কেন্দ্রে পৌছতে চাই।

) يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَ‌بِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ(

হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌছানো পর্যন্ত যে কঠোর সাধনা করছ অবশ্যই তুমিতার সাক্ষাৎ লাভ করবে। (সূরা ইনশিকাক : ৬)

যখন সেখানে পৌছেছ অর্থাৎ তার সাক্ষাৎ লাভ করেছ তখন তুমি সব কিছুর অধিকারী

العبودیّة جوهرة کنهها الربوبیّة অর্থাৎ বন্দেগীই মূল যার মাধ্যমে সব কিছুর অধিকারী হওয়া যায়। কিন্তু তখন এ সব কিছুই তোমার নিকট মূল্যহীন,এটাই আশ্চর্যের বিষয়। এমন স্থানে পৌছেও তুমি কিছুই চাইবে না স্বয়ং তাকে ব্যতীত। আবু সাঈদ আবিল খাইর কত সুন্দর বলেছেন!

যে চিনেছে তোমায় কি হবে তার জীবন দিয়ে

কি হবে তার সন্তান,পরিবার আর ঘর নিয়ে মশগুল হয়ে?

স্বপ্রেমে আসক্ত করে যদি তারে কর দু জাহানের অধিপতি

এ জাহানকে উপেক্ষা করে সে ফিরে যাবেই তোমার প্রতি।

প্রথমে নিজের প্রতি আসক্ত করে তাকে দু জাহানই উপহার দাও। কিন্তু এমতাবস্থায় তাকে দু জাহান দান কর যখন সে তা চায় না। যতদিন সে তোমাকে চিনতে পারেনি ততদিন সব কিছুই চায় কিন্তু তখন তাকে তা দাও না। যখন তোমাকে চেনে তখন তাকে সব কিছু দান কর কিন্তু সে সেগুলোর প্রতি ভ্রূক্ষেপ করে না। কারণ তোমাকে পেয়েছে,ফলে দুনিয়া ও আখেরাত কোনটিই চায় না,বরং ও দু টির চেয়েও মূল্যবান তোমাকে চায়।

এখন আমরা ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করে দেখব আরেফের দৃষ্টিতে যে ইনসানে কামেল তা ইসলামের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ পর্যায়ে আমরা বুঝতে পেরেছি আরেফের দৃষ্টিতে ইনসানে কামেল তিনিই যিনি আল্লাহ্য় পৌছেছেন। যখন তিনি আল্লাহতে পৌছেন তখন আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রকাশস্থলে পরিণত হন। আল্লাহর সত্তা তার মধ্যে প্রকাশিত ও বিচ্ছুরিত হওয়ার জন্য নিজে আয়নাস্বরূপ হন।

দার্শনিক মতবাদের আলোচনায় আমরা বলেছি যাকে দর্শন পূর্ণ মানব মনে করে ইসলামের দৃষ্টিতে তা পূর্ণ নয় বরং অপূর্ণ মানব। সে সাথে দর্শনের বিভিন্ন অংশ আলোচনা করে কোন্ অংশকে ইসলাম সমর্থন করে এবং কোন্ অংশকে ইসলাম সমর্থন করে না তা তুলে ধরেছি। এখানেও আমরা সেভাবেই আলোচনা পেশ করব। ইসলামে কি আত্মিক প্রশিক্ষণ ও পবিত্রতার বিষয উল্লিখিত হয়েছে? নিঃসন্দেহে বলা যায় অবশ্যই। যেহেতু কোরআনে এসেছে-

) قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا(

(সূরা শামছ : ৯ ও ১০)

উপর্যুপরি সাত বার কসম করার পর কোরআন বলছে, তারাই সফলতা লাভ করেছে যারা নাফ্সকে পবিত্র করেছে এবং দুর্ভাগ্যগ্রস্ত তারাই যারা নাফ্সকে (আত্মা ও অন্তঃকরণ) ধ্বংস করেছে।

আরোপিত জ্ঞান

ইসলামে কি আত্মিক পবিত্রতা অর্জনকে পরিচিতি ও জ্ঞান লাভের অন্যতম পথ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে? কোরআন যে বলছে, যে ব্যক্তি আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করল সে সফলকাম হলো তাতে আত্মিক পবিত্রতা অর্জনকে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের একটি মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়েছে কি? নাকি পরিচিতি ও জ্ঞান অর্জনের একমাত্র পদ্ধতি হলো যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন যা দর্শন বলছে।

এটা যে (আত্মিক পবিত্রতা অর্জন) ইসলাম কতৃক সমর্থিত তা নিঃসন্দেহে সত্য। রাসূল (সা.) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা শিয়া-সুন্নী সবাই নকল করেছে এবং একটি প্রতিষ্ঠিত হাদীস তা হলো:

من أخلص لله اربعین صباحا جرت ینابیع الحکمة من قلبه علی لسانه

যে কেউ চল্লিশ দিবা-রাত্রি আল্লাহর জন্য খালেস করবে অর্থাৎ চল্লিশ দিন তার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছুই না থাকে (আল্লাহর জন্য কথা বলে,আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নীরবতা পালন করে,আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তাকায়,চোখ বন্ধ করে,খাদ্য গ্রহণ করে,ঘুমায়,জেগে থাকে এবংএমন সুশৃঙ্খলভাবে পরিকল্পনা করে ও আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য চেষ্টা চালায় যে,প্রকৃতই আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো জন্য কাজ না হয়) তবে আল্লাহ্পাক সে ব্যক্তির অন্তঃকরণ হতে হেকমত ও জ্ঞানের এক ফল্গুধারা তার জিহ্বায় প্রবাহিত করেন। অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম খলীল (আ.)-এর ভাষায়-

 ( إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّـهِ رَ‌بِّ الْعَالَمِين)

আমার নামায,আমার কোরবানী,আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর জন্য । (সূরা আনআম : ১৬২)

এরূপ যদি কেউ হতে পারে (চল্লিশ দিন তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ দমন করে এবং আল্লাহর ব্যতীত আর কারো জন্য কাজ না করে ও আল্লাহর জন্যই বেঁচে আছে এমনভাবে কাজ করে) রাসুল (সা.)বলেছেন,আল্লাহ্ তার অন্তঃকরণ হতে জ্ঞানের ধারা সৃষ্টি করবেন।

সুতরাং বোঝা যায়,এরফান যে জ্ঞানকে অরোপিত জ্ঞান বলছে যা মানুষের অন্তঃকরণ হতে উৎসারিত হয়- ইসলাম তা গ্রহণ করে। যেমনভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানকেও সে মেনে নেয়। যেমন হযরত মূসা (আ.)-কে আল্লাহ্পাক বলেছেন,عَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا   (সূরা কাহাফ ৬৫) আমরা সেই বান্দাকে আমাদের নিকট হতে ইলম দান করেছি অর্থাৎ এই ইলম বা জ্ঞানকে সে মানুষের নিকট থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেনি বরং তার অন্তঃকরণ হতে এ জ্ঞানের ধারা আমরা প্রবাহিত করেছি। (কালামশাস্ত্রে ইলমে লাদুন্নি শব্দের ব্যবহার কোরআনের এ আয়াত থেকেই এসেছে।)

কবি হাফেজ শিরাজী তার কবিতায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে এ হাদীসের বাণীর দিকেই ইশারা করেছেন,

ভোরের যাত্রী এ পথে যেতে

বলেছে এক ধাঁধাঁয় ইশারা ও ইঙ্গিতে

হে সুফী! শরাব তখনই হয় পানের উপযুক্ত

যখন থাকে চল্লিশ দিবা-রাত্রি শিশিতে আবদ্ধ।

রাসূল (সা.) বলেছেন,

لو لا أنّ الشیاطین یحومون حول قلوب بنی آدم لنظروا إلی ملکوت السّموات

যদি শয়তান আদমের সন্তানদের হৃদয়ের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ না করত (যে কারণে অন্তরে কালিমাও আবরণের সৃষ্টি হয়) তবে হৃদয়ের চক্ষু দিয়ে সে অকাশমণ্ডলীর পরিচালন ব্যবস্থা (অর্থাৎ ফেরেশতামণ্ডলীর তত্ত্বাবধানে যে বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে) দেখতে পেত। (মোহাজ্জাবাতুল বাইদা,২য়খণ্ড,পৃ. ১২৫)

এ হাদীসটি আমাদের কোন কোন গ্রন্থে,যেমন জামেয়াস্ সায়াদাতে এসেছে। অন্য স্থানে নবী(সা.) বলেছেন,

لو لا تکثیر فی کلامکم و تمریج فی قلوبکم لرأیتم ما أری و لسمعتم ما اسمع

যদি তোমাদের কথায় বাচালতা ও অন্তর তৃণ ও আগাছা দ্বারা আবৃত না থাকত (যার ফলে যেকোন প্রাণীই সেখানে চরে বেড়ায়) তাহলে যা আমি দেখতে ও শুনতে পাই তোমরাও তা দেখতে ও শুনতে পেতে। (জামেয়াস্ সায়াদাত)

রাসূল (সা.) বলতে চাচ্ছেন এ বস্তু দেখার জন্য নবী বা রাসূল হওয়ার প্রয়োজন নেই। কখনো কখনো অন্যরাও তা দেখতে পায়। যেমন হযরত মরিয়ম (আ.)।

রাসূল (সা.) যখন হেরা পর্বতের গুহায় ছিলেন তখন আলী (আ.)ও তার সাথে ছিলেন। কিন্তু তার বয়স তখন ১০ বছরের বেশি ছিল না। প্রথম বার যখন রাসূলের উপর ওহী অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলের নিকট বিশ্ব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। সে মুহর্তে রাসূল অদৃশ্য (গায়েব) ও মালাকুত থেকে যা শুনতে পাচ্ছিলেন আলীও তা শুনতে পেয়েছিলেন। স্বয়ং আলী (আ.) নাহজুল বালাগাতে বলেছেন,

ولقد سمعت رنّة الشیطان حین نزول الوحی علیه

প্রথম বার যখন তার (রাসূলের) উপর ওহী অবতীর্ণ হয় তখন শয়তানের আর্তনাদ শুনতে পাই। রাসূলকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন :

إنّک تسمع ما اسمع و تری ما اری انّک لست بنبیِ

হ্যাঁ,আমি যা শুনছি তুমিও তা শুনতে পাচ্ছ,আমি যা দেখছি তুমিও তা দেখতে পাচ্ছ,তবে তুমি নবী নও। (খুতবা নং ১৯০)

অতএব,আত্মিক পরিশুদ্ধি,নিষ্ঠা এবং প্রবৃত্তিকে দমন শুধু মানুষের হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতাই দান করেনা বরং এর প্রভাবে মানুষের হৃদয় হতে জ্ঞান ও হেকমতের ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়।

হযরত আলী (আ.)-এর গুণাবলী

যদি হযরত আলীকে আমাদের আদর্শ ও নেতা হিসেবে গ্রহণ করি,তবে একজন পূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ মানুষকে যার মধ্যে সকল মানবিক মূল্যবোধ সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করেছে আমাদের অগ্রগামী হিসেবে গ্রহণ করেছি।

যখন রাত্রি নেমে আসে,রাত্রির নিস্তব্ধতা চারিদিক আচ্ছন্ন করে ফেলে তখন কোন সাধক বা আরেফই আলী (আ.)-এর পদমর্যাদায় পৌছতে পারে না। এমন প্রাণবন্ত ইবাদত যেন স্রষ্টার সাধনায় নিমগ্ন ও পরমাকৃষ্ট,তার দিকে ধাবমান প্রবলভাবে। আবার যখন তিনি অন্য কোন বিষয়ে মশগুল,উদাহরণস্বরূপ যখন তিনি যুদ্ধ ও সংগ্রামে লিপ্ত (যুদ্ধক্ষেত্রে) তরবারীর আঘাতে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত,শরীর থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন হয়ে এক দিকে পড়ে গেছে,কিন্তু এতটা নিমগ্ন যে,অনুভব করেন নি একটুকরা মাংস তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গভীর মনসংযোগের কারণে সে দিকে লক্ষ্যই নেই। আলী ইবাদতের সময় এতটা উষ্ণ হয়ে উঠেন যে,আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসায় তার অস্তিত্ব যেন এক প্রজ্বলিত শিখা যার অবস্থান এ পৃথিবীতে নয়। নিজেই এক দল ব্যক্তিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন,

هَجَمَ بِهِمُ الْعِلْمُ عَلَى حَقِيقَةِ الْبَصِيرَةِ، وَ بَاشَرُوا رُوحَ الْيَقِينِ، وَ اسْتَلاَنُوا مَا اسْتَوْعَرَهُ الْمُتْرَفُونَ، وَ اءَنِسُوا بِمَا اسْتَوْحَشَ مِنْهُ الْجَاهِلُونَ، وَ صَحِبُوا الدُّنْيَا بِاءَبْدَانٍ اءَرْوَاحُهَا مُعَلَّقَةٌ بِالْمَحَلِّ الْاءَعْلَى ،

জ্ঞান তাদের দিকে তার দিব্যতাসহ প্রকৃতরূপে ধাবিত হয়েছে,ইয়াকীনের প্রাণকে তারা কর্মে নিয়োজিত করেছে,যা দুনিয়াদারদের জন্য কঠিন ও অসহ্য তা তাদের নিকট সহজ হয়ে গেছে,জাহেলরা যা থেকে ভীত তারা তার প্রতি আকৃষ্ট,যদিও তারা মানুষের মাঝে শারীরিকভাবে অবস্থান করছে তদুপরি তাদের আত্মা উচ্চতর এক স্থানে সংযুক্ত। (নাহজুল বালাগাহ্,হেকমত ১৩৯)

ইবাদতরত অবস্থায় তার দেহ থেকে তীর খুলে ফেলা হয়েছে,অথচ তিনি এমনভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট ও ইবাদতে নিমগ্ন যে অনুভবও করেননি। ইবাদতের মেহরাবে তিনি এতটা ক্রন্দনশীল যার নজীর কেউ দেখেনি। আবার দিনের বেলায় আলী যেন ভিন্ন কোন মানুষ। সঙ্গীদের সাথে যখন বসেন তখন হাসি মুখ,খোলা-মেলা তার আচরণ। তার চেহারা সব সময় হাস্যোজ্জ্বল। আলী (আ.) এত বেশি মুক্ত মনের ছিলেন যে,আমর ইবনে আস আলীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতো যে,আলী খেলাফতের উপযুক্ত নয়। কারণ হাসিমুখ ও মনখোলা মানুষ খেলাফতের জন্য অনুপযোগী।

খেলাফতের জন্য কঠিন মুখাবয়বের প্রয়োজন যাতে মানুষ তাকে ভয় পায়। এটা নাহজুল বালাগায় আলী নিজেই বর্ণনা করেছেন-

عجبا لابن النابغة یزعم لاهل الشام أنّ فی دعابة و انّی امر تلعبة

নাবেগার সন্তানের কথায় আশ্চর্যান্বিত হই যে বলে,আলী মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলে,খুবহাসি-ঠাট্টা করে,মজাদার লোক।

যখন আলী শত্রুর সাথে যুদ্ধের ময়দানে একজন যোদ্ধার বেশে আবির্ভূত তখনও তিনি মন খোলা ও হাসি মুখ। কবি বলছেন,

هو البکّاء فی المحرب لیلا

هو الضحّاک اذا اشدّ الضرب

তিনি ইবাদতের মেহরাবে যেমন অত্যন্ত ক্রন্দনশীল তেমনি যুদ্ধের ময়দানে হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।

তিনি কেমন মানুষ? এটাই কোরআনী মানুষ। কোরআন এমন মানুষই চায়।

انّ ناشیة اللیل هی اشدّ وطا وّاقوم قیلا انّ لک فی النّهار سبحا طویل

  নিশ্চয় (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) রাত্রিকালের উত্থান আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বাধিক কঠিন পন্থা এবং বাক্যালাপে সর্বাধিক দৃঢ়তা দানকারী। নিশ্চয় দিবসে তুমি দীর্ঘ কর্ম ব্যস্ততায় নিমগ্ন থাক। অর্থাৎ রাতকে ইবাদতের জন্য রাখ আর দিনকে সামাজিক কাজকর্মের জন্য। আলী যেন রাত্রিতে এক ব্যক্তিত্ব,আর দিনে অন্য এক ব্যক্তিত্ব।

হাফেজ শিরাজী যেহেতু একজন মুফাস্সির ছিলেন সেহেতু কোরআনের রহস্যকে বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতেন। নিজস্ব ভঙ্গিতে ভাষার গাঁথুনীতে এ বিষয়টি তিনি কবিতায় এনেছেন-

দিনে রত হও অর্জনের চেষ্টায়

রাত তো সময় মাতাল হওয়ার শরাবের নেশায়।

হৃদয়রূপ আয়নায় মরিচা তো পড়বেই

মরিচা সরানোর সময় তো রাতের আঁধারেই।

 আলী (আ.)-এর দিবারাত্রি এমনই ছিল। বিপরীত চরিত্রের সমন্বয়-যা পূর্ণ মানবের জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য তা হাজার বছর পূর্বের আলীর মধ্যে দেখা যায়। সাইয়্যেদ রাজী নাহজুল বালাগার ভূমিকায় বলছেন, যে বিষয়টি সব সময় বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করি এবং যাতে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যান্বিত হই তা হলো আলী (আ.)-এর বক্তব্যগুলোর যে কোন একটিতে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন এক বিশ্বে প্রবেশ করেছি। কখনো কোন আবেদের জগতে,কখনো বা যাহেদের জগতে,কখনো দর্শনের জগতে,কখনো আধ্যাত্মিকতার জগতে,কখনো সৈনিক বা সামরিক কর্মকর্তার জগতে,কখনো ন্যায়পরায়ণ বিচারক বা শাসকের বা ধর্মীয় নেতার জগতে। সকল বিশ্বেই আলীর উপস্থিত। মানব বিশ্বের কোন স্থানেই আলী অনুপস্থিত নন।

সাফিউদ্দিন হিল্লী যিনি অষ্টম হিজরী শতাব্দীর একজন কবি ছিলেন তিনি বলেছেন,

جمعت فی صفاتک الاضداد

فلهذا عزّت لک الانداد

 “ বিপরীত বৈশিষ্ট্য হয়েছে তোমায় সমন্বিত

তাই তুমি হয়েছ মহিমান্বিত।

زاهد حاکم حلیم شجاع

ناسک فاتک فقیر جواد

 “ আত্মসংযমী শাসক তুমি,সহনশীল বীর

ফকির তুমি,দুনিয়াত্যাগী পীর।

যেমন সহনশীলতা ও ধৈর্যের ক্ষেত্রে তুমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে তেমনি সাহসিকতার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে। রক্তপাতের ক্ষেত্রে যেখানে কোন নিকৃষ্ট ব্যক্তির রক্ত ঝরাতে হবে সেখানে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা,আবার ইবাদতের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। নিঃস্ব ও সম্পদহীন তিনি,অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। দানশীল ছিলেন বলেই সম্পদ তার হাতে গচ্ছিত থাকত না।

দাতা কভু পারে না সম্পদ সঞ্চয় করতে

প্রেমিক অন্তর পারে না কভু ধৈর্য ধরতে,

পানিরে পারা যায় না কভু ছাকনিতে আটকাতে।

তেমনি আলী (আ.)-কে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-

خلق یخجل النسیم من العطف

و بأس یذوب منه الجماد

কোথাও তোমার চরিত্র এমন যে,তোমার কোমলতা দেখে মৃদুমন্দ বাতাসও লজ্জা পায় কখনো তোমার দৃঢ়তা পাথরকেও হার মানায়  

অর্থাৎ সাহসিকতা,শৌর্য আর সংগ্রামী তার আত্মার মোকাবিলায় পাথর,শীলা বা ধাতুও গলে যায়। আবার তার চারিত্রিক কোমলতাই মৃদমন্দ বাতাসকেও লজ্জা দেয়। একই ব্যক্তির মধ্যে কোমলতা ও কঠোরতার এক অপূর্ব সমন্বয়। তুমি কেমন আশ্চর্য সৃষ্টি?

অতএব,পূর্ণ মানব অর্থ সেই মানুষ যিনি সকল মানবিক মূল্যবোধে বলীয়ান। মানবতার সকল ময়দানে তিনি শ্রেষ্ঠ। এখান থেকে আমরা কি শিক্ষাগ্রহণ করব? এ শিক্ষাগ্রহণ করব যে,ভুল করে শুধু একটি মূল্যবোধকে গ্রহণ করে অন্যান্য মূল্যবোধকে যেন আমরা ভুলে না যাই। যদিও আমরা সকল মূল্যবোধের ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারব না,কিন্তু নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত সকল মূল্যবোধই একত্রে ধারণ তো করতে পারি। যদি পূর্ণ মানুষ নাও হই অন্তত ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ তো হতে পারি। আর তখনই একজন প্রকৃত মুসলমান হিসেবে সকল ময়দানে আমরা উপস্থিত হতে পারব। সুতরাং এটাই পূর্ণ মানুষের রূপ। ইনশাল্লাহ্ আমরা পরবর্তী বৈঠকে বাকী অংশ আলোচনা করব।

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো

আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ রমযান মাস অন্য এক রকম রমযান যা ভিন্ন এক পবিত্রতা নিয়ে বিরাজ করছিল। আলীর পরিবারের জন্যও এ রমযান প্রথম দিক থেকেই অন্য রকম ছিল। ভয় ও শঙ্কার একটি মিশ্রিত অবস্থা বিরাজমান ছিল। (খাওয়ারেজ আলী (আ.)-কে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল) সেহেতু আলীর জীবনধারা এ রমযানে অন্য রমযানের থেকে অন্য রকম ছিল।

হযরত আলীর শক্তিমত্তার একটি বর্ণনা নাহজুল বালাগা থেকে এখানে বর্ণনা করব। আলী (আ.) বলেছেন,

لما انزل الله سحانه قوله ( الم أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ ) علمت انّ الفتنة لا بنا و رسل الله (ص) بین اظهرنا 

যখন এ আয়াত মানুষ কি ভেবে নিয়েছে আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না (আনকাবুত ১-২) নাযিল হলো তখন বুঝতে পারলাম রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মৃত্যুর পর এ উম্মতের জন্য ফেতনা ও কঠিন পরীক্ষা আসবে।

فقلت: یارسول الله (ص) ما هذه الفتنة التی اخبرک الله تعالی بها

তখন রাসূলকে প্রশ্ন করলাম : হে রাসূলাল্লাহ্! এ আয়াতে আল্লাহ্ যে ফেতনার কথা বলছেন সেটা কি? তিনি বললেন :

یا علی إنّ امتی سیفتون من بعدی

হে আলী! আমার পর আমার উম্মত পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যখন আলী শুনলেন রাসূল মৃত্যুবরণ করবেন এবং তার পরে কঠিন পরীক্ষা আসবে তখন ওহুদের যুদ্ধের কথা স্মরণ করে বললেন,

یا رسول الله او لیس قد قلت لی یوم احد حیث استشهد من استشهد من المسلمین و خیّزت عنّی الشهادة

ইয়া রসুলাল্লাহ্! ওহুদের দিনে যারা শহীদ হওয়ার তারা শহীদ হলেন (মুসলমানদের মধ্যে সত্তরজন শহীদ হয়েছিলেন যাদের নেতা ছিলেন হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এবং আলী ওহুদের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের একজন ছিলেন) অর্থাৎ তারা শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করলেন এবং শাহাদাত আমার থেকে দূরে চলে গেল,আমি এর থেকে বঞ্চিত হলাম এবং খুবই দুঃখ পেয়ে আপনাকে প্রশ্ন করলাম,কেন এ মর্যাদা আমার ভাগ্যে ঘটল না। (আলী এ সময় পঁচিশ বছরের যুবক ছিলেন এবং এক বছর হলো হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-কে বিবাহ করেছেন এবং এক সন্তানের জনক। এ বয়সের যুবক যখন জীবনকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন দেখে তখন আলী শাহাদাতের প্রত্যাশী।) আপনি বললেন,ابشر فإنّ الشهادة من ورائک যদিও এখানে শহীদ হওনি কিন্তু অবশেষে শাহাদাত তোমার ভাগ্যে ঘটবে। তারপর মহানবী বললেন,

إنّ ذلک لکذلک فکیف صبرک اذن

অবশ্যই এমনটি হবে তখন তুমি কিরূপে ধৈর্যধারণ করবে। এখানে ধৈর্যের স্থান নয়,বরং শোকরকরার স্থান। (নাহজুল বালাগাহ্,খুতবা নং ১৫৪)

রাসূল (সা.)-এর নিকট থেকে নিজের শাহাদাত সম্পর্কে যে খবর তিনি শুনেছিলেন সে সাথে বিভিন্ন আলামত যা তিনি দেখতেন,কখনো কখনো তা বলতেন যা তার পরিবারের সদস্য এবং নিকটবর্তী শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাহাবীদের মধ্যে শঙ্কা ও কষ্ট বৃদ্ধি করত। তিনি আশ্চর্যজনক কিছু কথা বলতেন। এ রমযান মাসে নিজের ছেলে-মেয়েদের ঘরে ইফতার করতেন। প্রতি রাতে যে কোন এক ছেলে বা মেয়ের ঘরে মেহমান হতেন- কোন রাতে ইমাম হাসানের ঘরে,কোন রাতে ইমাম হুসাইনের ঘরে,কোন রাতে হযরত যয়নাবের ঘরে (যিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে জা ফরের স্ত্রী ছিলেন)। এ মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম খাবার খেতেন। সন্তানরা এতে খুবই কষ্ট পেতেন। তারা কখনো প্রশ্ন করতেন, বাবা,কেন এত কম খান? তিনি বলতেন, আল্লাহর সাথে এমনাবস্থায় মিলিত হতে চাই যে উদর ক্ষুধার্ত থাকে। সন্তানরা বুঝতেন তাদের পিতা কিছুর জন্য যেন অপেক্ষমান। কখনো কখনো তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, আমার ভাই ও বন্ধু রাসূল (সা.) আমাকে যে খবর দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য। তার কথা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। খুব নিকটেই তা সত্যে পরিণত হবে।

তের রমযান এমন কিছু বললেন যা অন্য সব দিনের চেয়ে পরিবেশকে বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলল। সম্ভবত জুমআর দিন খুতবা পড়লেন। ইমাম হুসাইন (আ.)-কে প্রশ্ন করলেন, বাবা এ মাসের কত দিন বাকি রয়েছে? উত্তর দিলেন, পিতা,১৭ দিন। তিনি বললেন, তাহলে আর দেরি নেই। এ মাথা আর দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হবে। এ শ্মশ্রু রঙ্গিন হওয়ার সময় নিকটেই।

ঊনিশে রমযান আলী (আ.)-এর সন্তানরা রাতের একটি অংশ আলীর সঙ্গে কাটালেন। ইমাম হাসান নিজের ঘরে চলে গেলেন। আলী জায়নামাজে বসলেন। শেষ রাতে উদ্বিগ্নতার কারণে (অথবা প্রতি রাতই হয়তো এ রকম করতেন) ইমাম হাসান আলীর নামাযের স্থানে গিয়ে বসলেন। (ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন হযরত ফাতেমা যাহরার সন্তান বলে ইমাম আলী এঁদের প্রতি আলাদা রকম স্নেহ দেখাতেন। কারণ এঁদের প্রতি স্নেহ রাসূলুল্লাহ্ ও ফাতেমা যাহরার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলে মনে করতেন) যখন ইমাম হাসান তার কাছে আসলেন তখন তিনি বললেন,

ملکتنی عینی و انا جالس فسنح لی رسول الله (ص) فقلت یا رسول الله ماذا لقیت من امّتک من الاود و اللدد فقال ادع علیهم فقلت ابدلنی الله بهم خبرا منهم و ابدلهم بی شرّ لهم منّی

পুত্র,হঠাৎ স্বপ্নের মধ্যে রাসূলকে আবির্ভূত হতে দেখলাম। যখন রাসূলকে দেখলাম তখন বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার এ উম্মতের হাতে আমার অন্তর রক্তাক্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তার সঙ্গে মানুষের অসহযোগিতা এবং তার নির্দেশিত পথে চলার ক্ষেত্রে তাদের অনীহা আলী (আ.)-কে তীব্র যন্ত্রণা দিয়েছে। উষ্ট্রের যুদ্ধের বায়আত ভঙ্গকারীরা,সিফফিনে মুয়াবিয়ার প্রতারণা (মুয়াবিয়া অত্যন্ত ধুর্ত ছিল,ভালোভাবেই জানত কি করলে আলীর হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করা যাবে। আর সে তা-ই করত),সবশেষে খারেজীদের রূহবিহীন আকীদা-বিশ্বাস যারা ঈমান ও এখলাছ মনে করে আলী(আ.)-কে কাফের ও ফাসেক বলত। আমরা জানি না আলীর সঙ্গে এরা কি আচরণ করেছে! প্রকৃতই যখন কেউ আলীর উপর আপতিত মুসিবতগুলো দেখে,আশ্চর্যান্বিত বোধ করে। একটি পাহাড়ও এ পরিমাণ মুসিবত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। এমন অবস্থা যে,আলী তার এই মুসিবতের কথা কাউকে বলতেও পারেন না। এখন যখন রাসূলে আকরাম (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলেন তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার এ উম্মত আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। এদের নিয়ে আমি কি করব? তারপর ইমাম হাসানকে বললেন, পুত্র,তোমার নানা আমাকে নির্দেশ দিলেন এদের প্রতি অভিশাপ দিতে। আমিও স্বপ্নের মধ্যেই অভিশাপ দিয়ে বললাম : হে আল্লাহ্! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে মৃত্যুদান কর এবং এদের উপর এমন ব্যক্তিকে প্রভাব ও প্রতিপত্তি দান কর এরা যার উপযুক্ত।

বোঝা যায়,এ বাক্যের সাথে কতটা হৃদয়ের বেদনা ও দুঃখ জড়িয়ে রয়েছে! আলী (আ.) সুবহে সাদিকের সময় ঘর থেকে যখন বের হচ্ছিলেন বাড়ির হাঁসগুলো অসময়ে ডেকে উঠল। আলী বললেন,

دعو هنّ فانّهنّ صوائح تتبعها نوائح

  এখন পাখির কান্না শোনা যাচ্ছে,বেশি দেরি নয় এরপর এখান থেকেই মানুষের কান্না শোনা যাবে। উম্মে কুলসুম আমিরুল মুমিনীনের সামনে এসে বাঁধা দিলেন। তিনি বললেন, বাবা,আপনাকে মসজিদে যেতে দেব না। অন্য কাউকে আজ নামায পড়াতে বলুন। প্রথমে বললেন, জুদাহ ইবনে হুবাইরাকে বলুন জামাআত পড়াতে। পরক্ষণেই আলী বললেন, না আমি নিজেই যাব। বলা হলো,অনুমতি দিন আপনার সঙ্গে কেউ যাক। তিনি বললেন, না,আমি চাই না কেউ আমার সঙ্গে যাক।

হযরত আলীর জন্য রাতটি অত্যন্ত পবিত্র ছিল। আল্লাহ্ জানেন আলীর মধ্যে সে রাত্রে কেমন উত্তেজনা ছিল! তিনি বলছেন, আমি অনেক চেষ্টা করেছি এ আকস্মিক শিহরণের রহস্য উদ্ঘাটন করব। যদিও ধারণা ছিল কোন বড় ঘটনা ঘটবে যা অপেক্ষায় আছে। যেমন নাহজুল বালাগায় আলী(আ.) নিজেই বলছেন,

کم اطردت الایام عن مکنون هذا الامر فابی الله الا اخفاءه

অনেক চেষ্টা করেছি এ রহস্যের গোপনীয়তা উদ্ঘাটন করব,কিন্তু আল্লাহ্ চাননি,বরং তিনি এটা গোপন রেখেছেন।

নিজেই ফজরের আজান দিতেন। সুবহে সাদিকের সময় নিজেই মুয়াজ্জিনের স্থানে দাঁড়িয়ে (আল্লাহু আকবার বলে) উচ্চৈঃস্বরে আজান দিলেন। সেখান থেকে নামার সময় সুবহে সাদেকের সাদা আভাকে বিদায় জানালেন। তিনি বললেন, হে সাদা আভা! এ ফজরে একদিন আলী এ পৃথিবীতে চোখ খুলেছিল। এমন কোন ফজর কি আসবে যে,তুমি থাকবে আর আলী ঘুমিয়ে থাকবে। নাকি এবার আলীর চোখ চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বে। যখন তিনি নেমে এলেন তখন বললেন,

خلو سبیل المومن المجاهد

فی الله ذی الکتب وذی المشاهد

فی الله لا یعبد غیر الواحد

و یوقظ الناس الی المساجد

  এই মুমিন ও মুজাহিদের জন্য রাস্তা খুলে দাও (নিজেকে মুমিন ও মুজাহিদ বলে উল্লেখ করেছেন) যে গ্রন্থ ও শাহাদাতের অধিকারী,একক খোদা ব্যতীত কারো ইবাদত করেনি এবং মানুষকে মসজিদে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠাতো।

পরিবারের কাউকে অনুমতি দেননি বাইরে যাওয়ার। আলী বলেছিলেন, পাখিদের কান্নার পর মানুষের আহাজারি শুনতে পাবে। স্বাভাবিকভাবেই হযরত যয়নাব কোবরা,উম্মে কুলসুম ও পরিবারের বাকী সদস্যরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় ছিলেন। হঠাৎ করে এক প্রচণ্ড চীৎকারে সবাই বুঝতে পারলেন। একটি আওয়াজ চারিদিকে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল-

تهدّمت و الله ارکان الهدی و انطمست اعلام التّقی و انفصمت العروة قتل ابن عمّ المصطفی قتل الوصیّ المجتبی قتل علیّ المرتضی قتله اشقی الشقیا

দীনের স্তম্ভ ধ্বসে পড়েছে,তাকওয়ার ধ্বজা ভূলুন্ঠিত হয়েছে,মজবুত বন্ধন ছিন্ন হয়ে পড়েছে,আলী মোর্তজাকে হত্যা করা হয়েছে,তাকে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হত্যা করেছে।

لا حول و لا قوّة الا بالله العلی العظیم

বিবিধ দৃষ্টিকোণে মানুষের বেদনার অনুভূতি

) وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ(

মানব সত্তা ও তার স্বরূপ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। সর্বোপরি দু টি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিই একটি অপরটির বিপরীতে অবস্থান করছে : রূহবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। রূহবাদীদের দৃষ্টিতে মানুষ হলো প্রকৃতপক্ষে দেহ ও আত্মার সমষ্টি এবং মানুষের আত্মা চিরন্তন অমর-যা তার মৃত্যুর ফলে নিঃশেষ হয়ে যায় না। একইভাবে ধর্মীয় যুক্তিতে বিশেষ করে ইসলামের অকাট্যভাষ্যে এরই যৌক্তিকতা নির্দেশিত হয়েছে। অপর মতবাদটি হলো মানুষ আসলে যান্ত্রিক দেহ ছাড়া আর কিছুই নয় এবং মৃত্যুর ফলে সম্পূর্ণ বিলীন ও নিঃশেষ হয়ে যায়। আর দৈহিক বিনাশের অর্থই হলো মানবসত্তার বিনাশ।


5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27