ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল 0%

ইনসানে কামেল লেখক:
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

ইনসানে কামেল

লেখক: শহীদ অধ্যাপক মুর্তাজা মুতাহ্হারী
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 41070
ডাউনলোড: 6659

পাঠকের মতামত:

ইনসানে কামেল
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 83 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 41070 / ডাউনলোড: 6659
সাইজ সাইজ সাইজ
ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

আত্মার ঊর্ধ্বগতি ও নিম্নগতি

আল্লামা মাজলিসী বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,রাসূল (সা.)-এর সাহাবীরা মুমিন ছিলেন বলে যখনই তাদের মধ্যে অন্যরকম অবস্থার সৃষ্টি হতো তখন ভয় পেতেন যে,নিফাক তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কিনা? কখনো রাসূলকে বলতেন, আমরা ভয় পাই মুনাফিক হয়ে পড়ি কিনা? রাসূল বলতেন, কেন? তারা বলতেন, যখন আমরা আপনার সম্মুখে উপস্থিত থাকি এবং আপনি উপদেশ দেন ও নসিহত করেন,আল্লাহ্,কিয়ামত,গুনাহ,তওবা ও ইস্তিগফারের কথা বলেন,নিজেদের মধ্যে উন্নত এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুভব করি। কিন্তু যখন আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি,নিজের পরিবার,সন্তান ও স্বজনদের মাঝে ফিরে যাই,و شممنا الاولاد و راینا العیال و الاهل নিজেদের সন্তানদের গন্ধ অনুভব করি তখন লক্ষ্য করি আমাদের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়েছি। হে রাসূলাল্লাহ্! এটা মুনাফেকী নয়? এমন যেন না হয় আমাদের মধ্যে নেফাকের সৃষ্টি হয় এবং আমরা মুনাফিক হয়ে পড়ি। রাসূল বলেন, না,এটা নিফাক নয়। নিফাক অর্থ দু চেহারা কিন্তু এটা দু অবস্থা (দু চেহারা নয়)। কখনো মানুষের রূহ বা আত্মার আরোহণ হয় এবং ঊর্ধ্বে যাত্রা করে,কখনো তার রূহের অধঃপতন ঘটে ও নিম্নে যাত্রা করে। অবশ্য যখন আমার নিকট থাক ও আমার কথা শোন,তোমাদের মধ্যে ঊর্ধ্বগতির অবস্থা সৃষ্টি হয়। তারপর বলেন,

لو تدومون علی الحالة التی وصفتم أنفسکم بها لصافحتکم الملائکة و مشیتم علی الماء

আমার সঙ্গে থাকাকালীন অবস্থাটি (যা তোমরা বর্ণনা করলে) যদি তোমরা ধরে রাখতে পারতে তাহলে ফেরেশতারা এসে তোমাদের সঙ্গে হাত মিলাত এবং তোমরা পানির উপর দিয়ে হেঁটে চলতে সক্ষম হতে। কিন্তু এ অবস্থা এমন নয় যে,তা সকল সময় তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। যদি তেমন অবস্থায় থাকা তোমাদের অভ্যাসে পরিণত হতো তাহলে আমি যা বললাম সে পর্যায়ে পৌছতে পারতে। (উসূলে কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৪২৪)

আমার দৃষ্টিতে সা দীর কবিতার নিম্নবর্ণিত অংশটি রাসূলের এ হাদীসেরই অনুবাদ। কিন্তু অন্য একভাবে হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর ভাষায় বলছেন,

প্রশ্ন করলেন নিখোঁজ সন্তানের পিতাকে তিনি

এই উজ্জ্বল রত্ন বৃদ্ধ জ্ঞানী

অনুভব করেছ মিশর থেকে তার জামার গন্ধখানি

কেন ঘরের কোণে কেনানের গর্তে তাকে দেখনি?

হযরত ইউসুফ (আ.) মিশরে তার ভ্রাতাদের নিকট নিজের পরিচয় দিয়ে তার জামাটি তাদের হাতে দিয়ে বললেন, এটা নিয়ে যাও। তারা তখনও পিতার নিকট পৌছেনি কিন্তু হযরত ইয়াকুব বলছেন,إنّی لا أجد ریح یوسف لولا أن تفنّدون যদি তোমরা আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে না কর,আমি অবশ্যই ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি। কবিতার ভাষায় তাই তিনি ইয়াকুবকে বলছেন,আপনি কিরূপে মিশর থেকে ইউসুফের গন্ধ অনুভব করেন,অথচ পূর্বে তিনি আপনার গ্রাম কেনানের একটি গর্তে পড়ে ছিলেন,আপনি তা বোঝেননি বা তাকে দেখতে পাননি। পরে হযরত ইয়াকুবের ভাষায় জবাব দিচ্ছেন-

বললেন,আমাদের অবস্থা বিদ্যুতের ন্যায়

কখনো থাকে গোপন,কখনো তারে দেখা যায়

কখনো আমরা থাকি আসমানের উপর

কখনো দেখি না তা,যা রয়েছে পায়ের উপর।

আমাদের অবস্থা বিদ্যুত চমকানোর মতো,কখনো সম্পূর্ণ আলোকিত,কখনো অন্ধকারাচ্ছন্ন।

হাফেজ শিরাজীর ভাষায়-

ভোরে চমকায় বিদ্যুত ঘর হতে লাইলীর

করে তা ভস্মিভূত খড়ের ঘর মজনুর।

(সা দীর ভাষায়) পৃষ্ঠের কবিতার শেষে ইয়াকুব বলছেন,

দরবেশ যদি সর্বদা সে অবস্থায় থাকে

দু বিশ্ব ভেদ করে শির উঁচু করে রাখে।

যে অবস্থা আরেফের জন্য কখনো কখনো আসে তা যদি বর্তমান থাকে,তবে দু বিশ্ব থেকেও সে ঊর্ধ্বে আরোহণ করতে পারে।

পূর্ণ মানবের ঊর্ধ্বগমন

এতক্ষণ আমরা যা বলেছি তার সমর্থনে নাহজুল বালাগার কিছু অংশ আপনাদের জন্য পড়ব। আমাদের পূর্ববর্তী বৈঠকগুলোতে আমরা পুনঃপুন বলেছি,নাহজুল বালাগা আলী (আ.)-এর মতোই। মানুষের বাণী সে মানুষের মতোই। যেহেতু বাণী আত্মার প্রতিফলন। নিকৃষ্ট আত্মার বাণীও নিকৃষ্ট এবং উত্তম আত্মার বাণীও উত্তম। এককেন্দ্রিক আত্মার বাণীও এককেন্দ্রিক। সর্বব্যাপী আত্মার বাণীও সর্বব্যাপী। আলী যেহেতু বহুমুখী ও বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্যসমূহের সমন্বয় সেহেতু তার বাণীও বহুমুখী ও বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়। তার বাণীতে এরফান সর্বোচ্চ পর্যায়ে,দর্শন,স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা,বিপ্লব এবং নৈতিকতা ও তার চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করছে। আলীর বাণীও আলীর মতো সর্বব্যাপী ও সর্বজনীন। তিনি একটি বাণীতে

 قد أحیی عقله و أمات نفسه একজন আরেফের ঊর্ধ্ব গমনকে বর্ণনা করে বলছেন,সে তার আকলকে জীবিত করেছে এবং প্রবৃত্তির মৃত্যু ঘটিয়েছে। শরীয়ত সম্মত আধ্যাত্মিক চর্চা তার শরীরকে এতটা শীর্ণ করেছে যে,তার মাংস হাড়ের সঙ্গে মিশে গেছে। আত্মার স্থুলতা পরিবর্তিত হয়ে সূক্ষ্মতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং সে অবস্থায় বিদ্যুতের এক ঝলকানি তার অন্তরকে আলোকিত করে তাকে পথ দেখিয়ে দেয়و سلک به السبیل و تدافعته الابواب إلی باب السّلامة  

এর মাধ্যমে সে পথ চলতে থাকে এবং একটির পর একটি দরজা উন্মোচিত করে প্রকৃত লক্ষ্য ও সফলতায় পৌছায় যা তার শেষ লক্ষ্য। (নাহজুল বালাগাহ্,খুতবা নং ২১৮)

সুতরাং ইনসানে কামেল বা পূর্ণ মানবের জন্য ঊর্ধ্বগামী হিসেবে আত্মিক পরিশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের পথ অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে এবং ইসলাম তা-ই বলে।

ইসলামের পূর্ণ মানব কি ঊর্ধ্বগামী যে ধাপে ধাপে এগিয়ে যায় এবং একের পর এক লক্ষ্য অতিক্রম করে? অবশ্যই এজন্য আলী (আ.) বলছেন,الابواب إلی باب السّلامة و تدافعته একের পর এক দ্বার তার নিকট উন্মোচিত হয় এবং একটির পর একটি লক্ষ্য পেছনে ফেলে এ পথের শেষ লক্ষ্য বাবুসসালামাত বা নিরাপত্তার দ্বারে পৌছায়।

আল্লাহ্পাকের নৈকট্য কি সত্য? সন্দেহাতীতভাবে সত্য। বাস্তবিকই যদি কেউ সেখানে পৌছায় তবে তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা নেই। তখন সে অন্তর চক্ষু দিয়ে তাকে দেখে। তখন সে আর আমাদের মতো নয় যে,আসমান,জমীন,বৃক্ষরাজী দেখে খোদাকে উদ্ঘাটন করবে। বরং আকাশ,পৃথিবী,বৃক্ষ হতে আল্লাহ্ তার নিকট অধিক স্পষ্ট।

ইমাম হুসাইন (আ.) দোয়ায়ে আরাফায় কি এটাই বলছেন না যে,

أیکون لغیره من الظهور ما لیس لک

আপনি ব্যতীত কোন প্রকাশই নেই,যেখানে আপনি নেই।

এক ব্যক্তি ইমাম আলীকে প্রশ্ন করল, আপনি কি আল্লাহকে দেখেছেন? আলী (আ.) বলেন, যে আল্লাহকে দেখা যায় না এমন কোন আল্লাহর আমি ইবাদত করিনি।

অতঃপর সে হয়তো মনে করবে চোখ দিয়ে খোদাকে দেখা যায় এবং তিনি কোন বিশেষ স্থানে আছেন,তাই তার ভুল ভাঙ্গানোর জন্য তিনি বললেন,

لا تراه العیون بمشاهدة العیان و لکنّ تدرکه القلوب بحقائق الإیمان

এ চোখ দিয়ে তাকে দেখিনি,কিন্তু তাকে অন্তর দিয়ে দেখেছি। ঈমানের বাস্তবতা দিয়ে। (নাহজুল বালাগাহ্,খুতবা নং ১৭৭)

এরফানী মতবাদের ত্রুটিসমূহ

১. বুদ্ধিবৃত্তির অবমূল্যায়ন : এ পর্যন্ত যা আলোচনা হয়েছে তাতে এরফানের পূর্ণ মানবকে ইসলাম এতটুকু সমর্থন করে। কিন্তু এ মতবাদে কিছু কিছু বিষয়কে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে এবং ইসলাম এ অবমূল্যায়নকে সমর্থন করে না। এ কারণেই এরফানের পূর্ণ মানব ইসলামের দৃষ্টিতে অপূর্ণ। এরফানে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে,অথচ ইসলাম অন্তরকে গ্রহণ করলেও বুদ্ধিবৃত্তির অবমূল্যায়ন করে না। ইসলাম প্রেম ও ভালবাসার মাধ্যমে ঊর্ধ্ব গমনকে গ্রহণ করে,কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তি,চিন্তাশক্তি,দলিল উপস্থাপনের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে। এ কারণে ইসলামের বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষত বিগত কয়েক শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে অনেকেই অন্তর ও আকল দু টিকেই যথেষ্ট গুরুত্ব দান করেন। শেইখ শাহাবুদ্দিন সোহরাওয়ার্দীর (শেইখ এশরাক) চিন্তাও এর নিকটবর্তী। সা দীর মুতাআল্লেহীন শিরাজী (মোল্লা সাদরা) আকল ও অন্তরকে তার থেকে আরো অধিক (কোরআনের অনুসরণে) সম্মান দান করেছেন। তারা ইবনে সিনার মতো এরফানী পথকে (অন্তরকে) যেমন অবমূল্যায়ন করেননি * তেমনি অনেক সুফী ও আরেফদের মত চাননি বুদ্ধিবৃত্তিকে অবমূল্যায়ন করতে। বরং চেয়েছেন দু টি পথকেই সম্মান দেখাতে।

সুতরাং জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির যে বিষয়গুলোকে এরফান বা কোন কোন আরেফ তাদের বক্তব্যে অবমূল্যায়ন করেছেন তা ইসলাম সমর্থন করে না। কোরআনের ইনসানে কামেল সেই মানুষ যার বুদ্ধিবৃত্তিও পূর্ণতা লাভ করেছে অর্থাৎ তার আকল তার পূর্ণতার অংশ।

২. সম্পূর্ণ অন্তর্মুখী : অন্য যে বিষয়টি এরফানের ইনসানে কামেলের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় এবং ইসলাম যা সমর্থন করে না তা হলো এরফানে শুধু অন্তর্মুখীতা রয়েছে,কিন্তু বহির্মুখীতার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে চাপা পড়ে গেছে। ব্যক্তিগত দিক প্রচুর আসলেও সামাজিক দিক সেখানে উপেক্ষিত হয়েছে বা কম এসেছে। এরফানের পূর্ণ মানব সামাজিক মানব নয়,সে শুধু নিজেকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। কিন্তু ইসলাম অন্তর,প্রেম,আধ্যাত্মিকতার পথে স্রষ্টার দিকে যাত্রা,আরোপিত জ্ঞান,আত্মিক পরিশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণ এ সব কিছুকে গ্রহণ করার পরেও এর পূর্ণ মানব সর্বজনীন। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি সেবহির্মুখী এবং সমাজমুখী অর্থাৎ সে নিজের মধ্যে নিমজ্জিত নয়। যদিও রাত্রিতে সে দুনিয়া ও এর মধ্যকার সব কিছু ভুলে গিয়ে নিজের অস্তিত্বের মধ্যে নিমজ্জিত হয়,কিন্তু দিবসে সমাজের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করে। হযরত মাহ্দী (আ.)-এর (আল্লাহ্ তার আগমন ত্বরান্বিত করুন) সহযোগীদের (যারা পূর্ণ মুসলমানের নমুনা) বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যেমন বলেছি,অসংখ্য রেওয়ায়েতে পুনঃপুন বলা হয়েছে,رهبان باللیل لیوث بالنّهار ,যদি রাত্রিতে তাদের অনুসন্ধানে যাও দেখবে যেন একদল দুনিয়াত্যাগী সন্ন্যাসী যারা পর্বতের গুহায় বাস করে এবং ইবাদত ব্যতীত অন্য কিছুর কথা তারা চিন্তাই করে না। কিন্তু দিবসে তারা পুরুষ সিংহ। তারা রাত্রিতে সন্ন্যাসী,দিবসে সাহসী যোদ্ধা। কোরআন নিজেও এ দু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটিয়েছে। যেমন:

) التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ(

তওবাকারী,ইবাদতকারী,আল্লাহর প্রশংসাকারী,রোযা পালনকারী,রুকুকারী,সিজদাকারী ইত্যাদি অন্তর্মুখী বৈশিষ্ট্যের স্মরণের পরই বলছে,

) الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنْكَرِ(

(সূরা তাওবাহ্ : ১১২) সৎ কাজের আদেশকারী ও অসৎ কাজের নিষেধকারী অর্থাৎ তারা সমাজ সংস্কারী- এ বৈশিষ্ট্যটি মানুষের বহির্মুখী বৈশিষ্ট্য। অন্য এক আয়াতে

) مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ(

কোন কোন তাফসীর মতে রাসূল (সা.) ও তার বিশেষ সাহাবীদের,আবার কারো মতে শুধু সাহাবীদের বৈশিষ্ট্য এখানে আলোচনা করা হয়েছে,যেখানে প্রথমে সামাজিক দিক এসেছে

) أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ(

অর্থাৎ তারা কাফের ও সত্য আচ্ছাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন ও অটল(প্রাচীরের ন্যায়) এবং ঈমানদারদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল; অতঃপর বলা হয়েছে,এ সমাজমুখী ব্যক্তিদের আবার  রুকু ও সিজদারত অবস্থায় দেখবে যখন তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে অর্থাৎ তারা এমন নয় যে,দুনিয়া ও আখেরাত চায়,বরং এর চেয়েও উত্তম বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি তাদের কামনা। এই সিজদার চিহ্ন তাদের মুখমণ্ডলে দর্শনীয়- এগুলো তাদের অন্তর্মুখী বৈশিষ্ট্য।

যা হোক তাসাউফ বা এরফানের পূর্ণ মানবের এ দুর্বলতাটি লক্ষণীয়। অবশ্য অনেক আরেফই যেহেতু ইসলামের শিক্ষার দ্বারা প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত ছিলেন সেহেতু এ বিষয়টির প্রতি তারা নির্দেশ করেছেন। তদুপরি কখনো কখনো কমবেশি বাড়াবাড়ি করেছেন এবং অন্তর্মুখীতা এত অধিক প্রাধান্য পেয়েছে যাতে বহির্মুখীতা সম্পূর্ণ বর্জিত হয়েছে।  ৯৩

৩. অহমকে নির্মূল করা : অন্য যে বিষয়টি এ মতবাদে এসেছে তা হলো অহমকে নির্মূল করা। ইসলামী পরিভাষায় অহম নির্মূলকরণ বলে কিছু নেই। দু এক জায়গায় যেমনامات نفسه সে তার অহমকে নির্মূল করেছে বা অহমের মৃত্যু ঘটিয়েছে যা নাহজুল বালাগায় এসেছে এবং অন্য স্থানেموتوا قبل أن تموتوا মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুকে বরণ কর বলা হয়েছে। সাধারণতঃ ইসলামী পরিভাষায় আত্মগঠন,আত্মশুদ্ধি এ বিষয়গুলো রয়েছে।

কবিদের ভাষায় প্রবৃত্তিকে হত্যা বা অহম নির্মূলকরণ প্রচুর এসেছে (এ ধরনের পরিভাষা ব্যবহারের প্রতি আমাদের আপত্তি নেই) কিন্তু প্রবৃত্তি হত্যা অন্যভাবে বললে আত্মদমন অর্থাৎ আত্মকেন্দ্রিকতা,স্বার্থপরতা ও আত্মতুষ্টির বিরুদ্ধে এরফান এমনভাবে বক্তব্য রেখেছে যে,আত্মসম্মানবোধ যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তা উপেক্ষিত হয়েছে। এ আলোচনাটি একটু বিস্তারিত।

আমাদের আলোচনার প্রথমে আমরা বলেছি যেহেতু এরফান অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং আরেফ ও সুফিগণ কবিতা,ছন্দ ও বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেহেতু আমাদের সমাজে এরফানের ইনসানে কামেলের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। এ কারণেই আমরা মহামানব ও পূর্ণ মানব বলতে তাকেই বুঝি এরফান যাকে আমাদের নিকট পরিচিত করিয়েছে। তাই এরফানের উপস্থাপিত মানুষ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। তৃতীয় যে দুর্বলতাটি উল্লেখ করেছি তা আজকে শুধু ইশারা করা হলো। পরবর্তী সভায় এর পাশাপাশি অন্য কিছু দিক নিয়েও আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্।

এরফানী মতবাদের পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন

) هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ(

আমাদের এ আলোচনা সভার উদ্দেশ্য মূলত ইসলামের দৃষ্টিতে পূর্ণ মানবকে জানার জন্য চেষ্টা করা। আমরা বলেছি মানুষ একমাত্র অস্তিত্ব যার নিজ থেকে নিজকে পৃথক করা যায়। অর্থাৎ আমরা কোথাও এমন কোন পাথর খুজে পাব না যার মধ্যে পাথরের বৈশিষ্ট্য নেই বা বিড়াল খুজে পাব না যার মধ্যে বিড়ালের স্বভাব নেই। এরূপ কোন কুকরের বৈশিষ্ট্যহীন কুকুর,নেকড়ের স্বভাবহীন নেকড়ে খঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ পৃথিবীর সব নেকড়েই যে স্বভাবগুলোর কারণে তাকে আমরা নেকড়ে বলি প্রকৃতিগতভাবেই সেগুলোর অধিকারী। শুধু মানুষ এরূপ যে,মনুষ্যত্ব তার মধ্যে নেই এবং তা অর্জন করতে হয়। এ ছাড়াও আমরা আলোচনা করেছি মনুষ্যত্ব তার জৈব বা বায়োলজিক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত নয়। যে বস্তুটি মনুষ্যত্ব বা মানুষ হওয়ার সঙ্গে জড়িত তা তার জৈবিক বৈশিষ্ট্য থেকে পৃথক।

মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্যেই হয় মানুষ সম্মানিত

মানুষ সে নয় যে বাহ্যিক সাজে সজ্জিত।

মোটামুটি সবাই এটা জানেন যে,শুধু অস্তিত্বগত বা জৈবিক কারণে অর্থাৎ জীব বিজ্ঞান বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কাউকে মানুষ বলাটা কোন ব্যক্তির মানুষ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। মানুষ হওয়াটা এ থেকে স্বতন্ত্র কোন বিষয়। যে কেউ মানবী থেকে জন্মগ্রহণ করার অর্থ তার মানুষ হওয়া নয়। এজন্যই বলা হয়েছে,

জ্ঞানী হওয়া কত সহজ মানুষ হওয়া কত কঠিন!

অর্থাৎ মানুষ যখন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে তখন আলেম বা জ্ঞানী হওয়ার যোগ্যতা তার মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে; কার্যকর অবস্থায় নয়। তেমনি মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে সুপ্তাবস্থায় নিহিত রয়েছে;কার্যকরভাবে নয়। তাই এ অবস্থায় প্রশ্ন আসে মানুষ হওয়া বা মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষে পরিণত হওয়ার অর্থ কি? একজন জীববিজ্ঞানী যেমনি এ মানুষ হওয়াকে আমাদের প্রদর্শন করতে পারেন না তেমনি এক চিকিৎসা বিজ্ঞানীও সেটাকে আমাদের পরিচিত করাতে সক্ষম নন। মনুষ্যত্ব এমন একটি বিষয় যা চরম বস্তুবাদী মতাদর্শও অস্বীকার করতে পারে না। তদুপরি বস্তুগত মানদণ্ড দিয়েও এর বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। এজন্যই বলেছি মানুষ নিজেই নিজের জন্য নৈতিকতা.ও আধ্যাত্মিকতায় প্রবেশের পথ। মানুষ তার অস্তিত্বের অভ্যন্তর থেকে অন্য যে পথে অধ্যাত্মিকতায় প্রবেশ করতে পারে এবং বুঝতে পারে যে,বস্তুজগতের বাইরেও এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব যোগ্য নয় বা ল্যাবরেটরীতেও তার পরীক্ষা সম্ভব নয় (কিন্তু সকল মানুষই তা বিশ্বাস করে) তা হলো তার মনুষ্যত্ব-যা জীববিজ্ঞানের বহির্ভূত বিষয়। চরম বস্তুবাদী ব্যক্তিবর্গ ও একটি বিষয় মানেন,যাকে মানবিক মূল্যবোধ বলা হয়। যখন বলা হয় মানবিক মূল্যবোধ তখন এর অর্থ মানুষের বস্তুসত্তার বাইরের একটি বিষয়।

আমরা চাই মানুষের মৌলিক মূল্যবোধগুলোকে ইসলামের ভিত্তিতে চিনতে অর্থাৎ আমরা বুঝতে চাই কোন্ বিষয়গুলোকে ইসলাম মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ বলে জানে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যান্য মতবাদকে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যালোচনা না করব ততক্ষণ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিকে জানতে পারবনা। পর্যালোচনা এখানে প্রকৃত অর্থেই পর্যালোচনা,শুধু ত্রুটিসমূহ সনাক্ত করা নয়। পর্যালোচনার কাজ ঠিক একজন মুদ্রা বিশেষজ্ঞের কাজের ন্যায় অর্থাৎ একজন মুদ্রা বিশেষজ্ঞ যা করেন তা হলো কষ্টি পাথরের মাধ্যমে একটি মুদ্রার বিশুদ্ধতা যাচাই; তিনি বিশ্লেষণ করে দেখেন মুদ্রাটিতে কত ভাগ নিখাঁদ স্বর্ণ বা রৌপ্য এবং কত ভাগ মিশ্রণ রয়েছে। সুতরাং পর্যালোচনার অর্থ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করা নয়,বরং এটা দেখা যে,ইসলামের মানদণ্ড বা কষ্টি পাথরে যাচাই করলে বিষয়টির কত ভাগ গ্রহণযোগ্য। দর্শন,এরফান বা অন্যান্য মতবাদ যে মুদ্রা গুলো ছেড়েছে যদি সেগুলোকে যথার্থ ভাবে যাচাই না করি তবে ইসলামের মুদ্রা কে আমরা চিনতে পারব না। তাই এ মতবাদগুলো উপস্থাপন না করে আমি নিজে নিজেই যদি বলি,ইসলামের মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ অমুক অমুক বিষয় তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস কেউই তার প্রতিবাদ করে বলবে না যে,এ ব্যতীত অন্য একটি বিষয়ও রয়েছে বা বলবে না যে,কেন এটি মূল্যবোধ অন্যটি নয়? কিন্তু যখন অন্যান্য মতবাদকে উপস্থাপন করে প্রকৃত অর্থেই পর্যালোচনা করব অর্থাৎ ইসলামের মাপকাঠিতে যাচাই করব তখন যুক্তিসম্মত ভাবেই বলতে পারব মানবিক বিষয়ে ইসলামের মূল্যবোধ কি বা কোন্ বিষয়গুলোকে প্রকৃতপক্ষে ইসলাম মানবিক মূল্যবোধ বলে বিশ্বাস করে। এমনকি প্রত্যেকটি মূল্যবোধের শতকরা পরিমাণও নির্ধারণ করতে পারি অর্থাৎ সমগ্র মূল্যবোধকে একশ ধরলে বিষয়গুলোর প্রতি ইসলামের বিশেষ দৃষ্টি ও সংবেদনশীলতা অনুযায়ী বলতে পারব এ মূল্যবোধকে ইসলাম উদাহরণ স্বরূপ পঞ্চাশ ভাগ এবং অন্যটিকে ত্রিশ ভাগ বা অন্য একটি মূল্যবোধকে দশ ভাগ গুরুত্ব দিয়েছে।

কোন কোন আরেফ কর্তৃক বুদ্ধিবৃত্তির অবমূল্যায়ন

আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনায় পূর্ণ মানবকে এরফানের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেছি। এরফানের পূর্ণমানব,এমনকি ইসলামী এরফান যা অন্যান্য এরফান থেকে অনেকটাই স্বতন্ত্র ও ইসলামের প্রভাব যাতে অনেক বেশি এবং অনেক এরফানী ব্যক্তির উপস্থাপিত পূর্ণ মানব ইসলামের পূর্ণ মানবের খুবই নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দৃষ্টিতে তা পর্যালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আমি এটা স্বীকার করি যে,এরফানী মতবাদ প্রাচীন এবং নব্য মতবাদগুলোর মধ্যে পূর্ণ মানবের বিষয়ে সর্বাধিক সমৃদ্ধ। প্রাচীন ও নতুন মতবাদগুলোর কোনটিই এর সঙ্গে তুলনীয় নয়। তদুপরি এমন নয় যে,সমালোচনার ঊর্ধ্বে। বিগত আলোচনায় (ইসলামের মানদণ্ডের ভিত্তিতে) এরফানী মতবাদের ইনসানে কামেলকে আমরা পর্যালোচনা করেছি। তার মধ্যে একটি বিষয আমরা উল্লেখ করেছি যে,আরেফগণ অতিরঞ্জিত ভাবে বুদ্ধিবৃত্তির অবমূল্যায়ন করেছেন। কখনো কখনো বুদ্ধিবৃত্তিকে সম্পূর্ণরূপে অনির্ভরযোগ্য বলে অস্বীকার করেছেন।

ইশক বা প্রেমকে যে তারা আকলের উপর প্রাধান্য দান করেছেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। হাফেজ শিরাজীর ভাষায় প্রেমের মর্যাদা আকল হতে অনেক ঊর্ধ্বে । কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তির সমালোচনা করতে গিয়ে তারা কখনো অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছেন এবং চিন্তা,বুদ্ধিবৃত্তি,যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিকেই অনির্ভরযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। এমনকি কখনো একে হিজাবে আকবার বা বড় প্রতিবন্ধক বলেছেন। আবার কখনো কোন দার্শনিককে সৌভাগ্যের সোপানে আরোহণ করতে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে একটি প্রসিদ্ধ কাহিনী বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আবু আলী সিনা যিনি বুদ্ধিবৃত্তিক মাশশায়ী মতবাদের একজন প্রখ্যাত দার্শনিক তিনি প্রসিদ্ধ আরেফ আবু সাঈদ আবুল খাইরের সমসাময়িক ছিলেন। আবু আলীর জন্মস্থান বালখ ও বোখারার নিকটবর্তী স্থানে কিন্তু পরবর্তীতে সুলতান মাহমুদের ভয়ে বাধ্য হয়ে (যেহেতু সুলতান মাহমুদ তাকে দরবারের সদস্য করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু বু আলী রাজী ছিলেন না।) নিশাবুরে আসেন এবং সেখানে আবু সাঈদ আবুল খাইরের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। কথিত আছে তারা তিন দিবা-রাত্রি এক সঙ্গে ছিলেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় করেন এবং নামাযের সময় ব্যতীত বের হতেন না। এরপর যখন তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলেন আবু আলীকে প্রশ্ন করা হলো, আবু সাঈদকে কেমন দেখলেন? উত্তর দিলেন, যা আমরা জানি ও বুঝি উনি তা দেখেন। আবু সাঈদকে প্রশ্ন করা হলো, আবু আলীকে কেমন দেখলেন? তিনি বললেন, যেখানেই আমরা পৌছেছি,এ অন্ধ লাঠি নিয়ে আমাদের পেছনে পেছনে আসছে।

আরেফগণ বাড়াবাড়ি রকম আকলকে অবমূল্যায়ন করেছেন। যদি আমরা কোরআনের যুক্তিকে একদিকে এবং এরফানী বা সুফীদের যুক্তিকে অন্যদিকে রাখি তাহলে দেখব আকলের ক্ষেত্রে এরা পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। কোরআন এরফানী মতবাদ অপেক্ষা অনেক অনেক বেশি আকলকে মর্যাদা,সম্মান ও মূল্য দিয়েছে এবং বুদ্ধিবৃত্তি,চিন্তা ও যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আকলের উপরনির্ভর করেছে।

নির্বিশেষে শিয়া ও সুন্নী সকল আরেফই তাদের সিলসিলাকে আলী (আ.)-এ সমাপ্ত করেছেন। এমনকি সুন্নীদের যে অংশটির আহলে বাইতের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক নেই তাদেরও সিলসিলা আলীতে সমাপ্ত হয়েছে। কথিত আছে,সাতষট্টি সিলসিলার মধ্যে মাত্র একটি সিলসিলা হযরত আবু বকরে পৌছে,বাকী সব সিলসিলার শুরু আলী থেকে। আলীকে সুফী ও আরেফগণ আরেফকুলের শিরোমণি (কুতবুল আরেফীন) মনে করেন। নাহজুল বালাগাহ্ যা এরফানের প্রাণকেন্দ্র- ইবনে আবিল হাদীদের ভাষায়- এ গ্রন্থে আলী চারটি বাক্যের মাধ্যমে আরেফদের সমগ্র চিন্তা ও চেতনাকে বর্ণনা করেছেন। এই একই আলী অন্য স্থানে এতটা দার্শনিক হয়ে যান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন যে,কোন দার্শনিকও সেখানে পৌছতে সক্ষম নন। সুতরাং আলী (আ.) কখনই আকলকে তিরস্কার করেননি।

তাই এখানে দেখা যায়,ইসলামের ইনসানে কামেল এবং এরফানের ইনসানে কামেলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইসলামের পূর্ণ মানবের মধ্যে আকল বিকশিত হয়েছে,পূর্ণতা লাভ করেছে এবং   একে বিশেষ সম্মান দান করা হয়েছে। অপরদিকে এরফানের ইনসানে কামেলের মধ্যে আকলের অবমূল্যায়ন হয়েছে। অন্য যে বিষয়টি এরফানের ইনসানে কামেলে উপেক্ষিত হয়েছে তা হলো সমাজমুখিতা যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।