সম্মেলন কমিটির বক্তব্য
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন,ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলিহী আত-তাহেরীন।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম উম্মাহর ভাগ্যাকাশে ছিল দুর্যোগের ঘনঘটা। যার পরিণতিতে বিচ্যুত,অবনতি আর জড়তার আধার উম্মাকে ছেয়ে ফেলেছিল। অবশেষে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে মুসলিম উম্মার পুনর্জাগরণ শুরু হয়। ইমাম খোমেইনীর (রহ.)নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে তা পরিপুর্ণতা অর্জন করে,ইসলামী শক্তি পুনরায় আবির্ভূত হয়।দীর্ঘদিন সাম্রাজ্যবাদী ও অত্যাচারীদের হাতে শোষিত হওয়ার পর উম্মার ভাগ্যে যে বিপর্যয় ঘটেছিল তা থেকে মুক্ত হয়ে আবার সে শক্তি সঞ্চয় করেছে,মাথা উচু করে দাড়িয়েছে। মুসলিম উম্মার এ পুনর্জাগরণ সাম্রাজ্যবাদীদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে,উপনিবেশবাদী লোলুপ দৃষ্টি পোষণকারীদের আশা আকাঙ্ক্ষার কবর রচনা করেছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মার মধ্যে আজ যে নব জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে সে ক্ষেত্রে ইমাম খোমেইনী(রহ.)মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। পাশাপাশি চিন্তাগত ও তত্ত্বগত দিক থেকে উম্মার মধ্যে যে জোয়ার এসেছে সেক্ষেত্রে শহীদ আল্লামা বাকের সাদর নিঃসন্দেহে মৌলিক অবদান রেখেছেন। ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন নজিরবিহীন। তার চিন্তাধারা ও লেখনি একদিকে যেমন চিন্তার জগতে নব-দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছে অপরদিকে গভীরতা ও ব্যপকতার দিক থেকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাত্ত্বিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভের উদ্দেশ্যে সমসাময়িক মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন চিন্তাধারার পারস্পরিক সংঘাতময় পরিবেশেও তিনি বুদ্ধিজীবি ও চিন্তাবিদদের মহলে ব্যাপকভাবে ইসলামী চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়েছিলেন।
শহীদ আয়াতুল্লাহ বাকের সাদর তার নজিরবিহীন ব্যক্তিত্ব,অসাধারণ যোগ্যতা ও গতিশীল ইসলামী চিন্তাধারার মাধ্যমে আধুনিক বস্তুবাদী দার্শনিক ও চিন্তাবিদদেরকে অত্যন্ত সফলতার সাথে মোকাবিলা করেছেন। বস্তুবাদী সভ্যতার তত্ত্বগত ভিত্তিহীনতা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে তিনি সবাইকে চিন্তাগত দাসত্বের শৃঙ্খল,(প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের)অন্ধ অনুকরণ ও খোদাবিমুখতা থেকে ফিরিয়ে রাখেন। বাস্তব জীবনে মানব সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ইসলামের যে নজিরবিহীন ক্ষমতা রয়েছে তা তিনি ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। তিনি আরো প্রমাণ করেছেন আধুনিক বিশ্ব যদি ইসলামী বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাহলে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবকুলের সৌভাগ্য রচিত হবে,মানব সমাজ কল্যাণ লাভ করবে।
শহীদ আল্লামা বাকের সাদর অত্যন্ত গতিশীল চিন্তাধারার অধিকারী ছিলেন। তার চিন্তাধারা কোন বিশেষ গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিলনা,বরং জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন। ইসলামী অর্থনীতি,তুলনামূলক দর্শন (ইসলামী ও পশ্চাত্য দর্শন),আধুনিক যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি সাম্প্রতিককালে উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অনায়াসে প্রবেশ করেছেন এবং নতুন নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন। উসূল ও ফেকাহশাস্ত্র,দর্শনশাস্ত্র,যুক্তিবিদ্যা,কালামশাস্ত্র,তাফসীর,ইতিহাস ইত্যাদি ক্লাসিক বিষয়েও পদ্ধতিগত ও বিষয়-বস্তুগত উভয় দিক থেকে নতুন নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং চিন্তাগত বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
আল্লামা বাকের সাদরের শাহাদতের পর দু’
দশকেরও বেশী সময় অতিবাহিত হয়েছে,কিন্তু আজও পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণামূলক কার্যক্রমে তার চিন্তাধারার প্রভাব অটুট রয়েছে। যে কোন বিষয় ভিত্তিক পর্যালোচনা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে তার রেখে যাওয়া রচনাবলী,বিশেষ করে চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি যে নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন তা সবার জন্য মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
এ দৃষ্টিকোণ থেকেই শহীদ আল্লামা বাকের সাদর বিশ্ব সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান দায়িত্ব হবে চিন্তাগত ও জ্ঞানগত বিভিন্ন বিষয়ে তার রেখে যাওয়া মূল্যবান রচনাবলীর পুনরুজ্জীবন ও উপযুক্ত সংরক্ষণ। যেহেতু তার রচনাবলী অত্যন্ত ব্যাপক তাই এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালনের ক্ষেত্রে দু’
টি দিকের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবেঃ
প্রথমতঃ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতা ও সূক্ষ্ণ দৃষ্টিসহকারে পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় এগুলোর অনুবাদ এবং প্রকাশ।
দ্বিতীয়তঃ অত্যধিকবার প্রকাশিত হওয়া এবং উপযুক্ত পর্যবেক্ষণের অভাবে তার প্রকাশিত অনেক বই যেগুলো আংশিকভাবে বিকৃত হযেছে সেগুলোকে মূল পাণ্ডুলিপির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা এবং সংশোধন করা।
সবশেষে আমরা আল্লামা বাকের সাদরের বর্তমান উত্তরাধিকারীদের,বিশেষ করে তার স্বনামধন্য পুত্র জনাব সাইয়্যেদ জাফর সাদর(আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন)-এর অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এ বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লামা বাকের সাদরের বিভিন্ন রচনাবলী প্রকাশ ও পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে তিনি যে বিশেষ সম্মতি প্রদান করেছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পরিচালনা কমিটি
শহীদ আল্লামা বাকের সাদর বিশ্ব সম্মেলেন