ভবিষ্যতের দাওয়াতের বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান
প্রথম পথ
: খেলাফত বা মহানবীর উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করার ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয়া এবং অবহেলা প্রদর্শন করা ।
আর এর অর্থ হল ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর নেতিবাচক পদক্ষেপ এবং কেবলমাত্র তাঁর নিজ জীবদ্দশায় ইসলামী প্রচার কার্যক্রমের নেতৃত্বদান ও পথ-প্রদর্শনই যথেষ্ট মনে করা এবং ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কর্মকান্ডের ভবিষ্যৎকে অজ্ঞাত, অজানা পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং আকস্মিকতার হাতে ছেড়ে দেয়া ।
এ ধরনের নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ মহানবী (সা.)-এর ক্ষেত্রে মোটেও ভাবা যায় না । কারণ দু’
টি বিষয় থেকে এ ধরনের নেতিবাচকতার উৎপত্তি । আর এ দু’
টি বিষয় মহানবীর ক্ষেত্রে কস্মিনকালেও চিন্তা করা যায় না (অর্থাৎ এ দু’
টি বিষয় মহানবী (সা.)-এর কর্মপদ্ধতির সঙ্গে মোটেও খাপ খায় না) ।
প্রথম বিষয়
: এ ধরনের বিশ্বাস করা যে,খেলাফত বা মহানবীর উত্তরাধিকার ও স্থলাভিষিক্ত নিযুক্তিকরণ সংক্রান্ত নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন ভবিষ্যতে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের উপর মোটেও প্রভাব ফেলবে না এবং ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের আশু দায়িত্বভার গ্রহণকারী মুসলিম উম্মাহ্ নিজেই প্রচার কাজের সহায়ক যে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিচ্যুতির হাত থেকে তা রক্ষা করতেও সক্ষম ।
আসলে এ ধরনের বিশ্বাসের বাস্তব কোন ভিত্তি নেই । বরং প্রকৃত বাস্তবতা এর বিপক্ষে । কারণ তিনি ইসলাম প্রচার কার্যক্রমকে সূচনালগ্ন থেকেই এক বৈপ্লবিক সংস্কারমূলক কর্মকান্ড হিসেবে একটি জাতি গঠন এবং সব ধরনের জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার মূলোৎপাটন করার ব্রত ও লক্ষ্য নিয়ে গ্রহণ করেছিলেন । আর এ প্রচার কার্যক্রম চরম বিপদের সম্মুখীন হবে যখন তা নেতা ও নেতৃত্ববিহীন হয়ে যাবে এবং তা কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও রূপরেখা ছাড়াই চলতে থাকবে । তাই এক্ষেত্রে বহু বিপদ রয়েছে । আর এসব বিপদ হচ্ছে :
প্রথমতঃ (ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কার্যের) কোন পূর্ব-পরিকল্পনা ও রূপরেখা না থাকার কারণে সৃষ্ট শূন্যতা মোকাবেলা করার গতি-প্রকৃতি এবং মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের কারণে উদ্ভূত ব্যাপক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পূর্ব-প্রস্তুতি ছাড়াই পদক্ষেপ গ্রহণের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা থেকে সৃষ্ট বিপদসমূহ । কারণ মহানবী (সা.) ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রণয়ন না করেই যদি ময়দান ত্যাগ করেন তাহলে প্রথম বারের মত এবং শীঘ্রই নেতাবিহীন অবস্থায় প্রচার কাজের সবচেয়ে বিপজ্জনক সমস্যা মোকাবেলা করার গুরুদায়িত্ব উম্মাহর উপরই বর্তাবে ।
আর এ ব্যাপারে উম্মাহর কোন পূর্ব-ধারণা ও অভিজ্ঞতাই নেই । সমস্যার ভয়াবহতা যতই তীব্র হোক না কেন এক্ষেত্রে উম্মাহর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক ও অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যাশা করতে হবে । কেননা এ ধরনের শূন্যাবস্থা চলতে দেয়া যায় না । উম্মাহর প্রাণহানিকর এ ক্ষতির মুহূর্তে উম্মাহকে দ্রুত এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে । কারণ এমতাবস্থায় উম্মাহ্ অনুভব করতে পারে যে,তারা তাদের মহান নেতাকে হারিয়েছে । আর সেই সাথে মহান নেতাকে হারানোর প্রচন্ড আঘাত ও ক্ষতিটাও উম্মাহ্ উপলব্ধি করতে পারে যা মানুষের চিন্তাশক্তিকে প্রচন্ডভাবে স্থবির ও লন্ড-ভন্ড করে দেয়,এমনকি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রচন্ড আঘাত জনিত কারণেই ঘোষণা করতে থাকেন যে,“
মহানবী (সা.) মৃত্যুবরণ করেননি এবং কখনো মৃত্যুবরণ করবেনও না।”
সুতরাং উম্মাহ্ কর্তৃক গৃহীত এ ধরনের পদক্ষেপ ও আচরণ হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক । আর এর পরিণতি কখনো শুভ হবে না ।
দ্বিতীয়তঃ
রিসালতের দায়িত্ব পালনে মুসলমানদের যোগ্যতার অভাব এবং অপরিপক্কতা জনিত কারণে সৃষ্ট বিপদ ও সংকটসমূহ । আর এ রিসালতী যোগ্যতা ও পরিপক্কতা যে মাত্রায় আগেই মহানবী (সা.)-এর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের রিসালতী কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করার নিশ্চয়তা বিধান করেছিল এবং যার ফলে তিনি (সা.) মুহাজির-আনসার,কুরাইশ-অকুরাইশ অথবা মক্কা-মদীনা কেন্দ্রিক শ্রেণী-বিভক্তির কারণে মুসলমানদের অন্তরে লুক্কায়িত বৈষম্য ও চাপা ক্ষোভ মিটিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন ঠিক সেই মাত্রায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিদ্যমান ছিল না ।
তৃতীয়তঃ
বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণকারী একটি গোষ্ঠী যারা সর্বদা মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত তাদের থেকে উদ্ভূত বিপদাপদ ও সংকটসমূহ । আর এ গোষ্ঠীটিকে পবিত্র কোরানে মুনাফিক নামে অভিহিত করা হয়েছে।
আর এদের সাথে যদি আরো বিরাট সংখ্যক জনগণকে যোগ করি যারা মক্কা বিজয়ের পর বিদ্যমান বাস্তব পরিস্থিতির কাছে নতিস্বীকার করে কিন্তু সত্য গ্রহণের মানসিকতা না নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল,তাহলে আমরা এ সকল দল ও গোষ্ঠী কর্তৃক সৃষ্ট বিপদাপদ ও আশঙ্কার ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারব । আর এ সকল চক্র নিশ্চয়ই ময়দানে নেতার অনুপস্থিতিতে সৃষ্ট বিরাট শূন্যাবস্থায় ব্যাপক অপতৎপরতা চালানোর এক মোক্ষম সুযোগও লাভ করে থাকবে ।
তাই মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর তাঁর খলীফা বা উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণের সীমাহীন গুরুত্ব শুধুমাত্র সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নয়,আদর্শিক কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এমন যে কোন নেতার কাছেই গোপন থাকা একেবারে অসম্ভব ।
আর হযরত আবু বকর যদি খেলাফত ও শাসন সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বনের অজুহাতে প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা বিধান করতে গিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ময়দান ত্যাগ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন
এবং যখন ঘাতকের হাতে আহত হওয়ার পর জনসাধারণ হযরত উমরের কাছে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগল,“
হে আমীরুল মুমেনীন,আপনি যদি কাউকে আপনার পরে খলিফা মনোনীত করতেন ?”
আর মহানবী(সা.)-এর ওফাতের পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রম যে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সৃষ্টি করেছিল তা সত্ত্বেও এসব কিছুই ছিল খলীফার অবর্তমানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তার আশঙ্কায় । আর জনসাধারণ খলীফা বিহীন অবস্থায় যে বিপদাপদের আশঙ্কা করেছিল খলীফা উমর সে আশঙ্কা ও অনুভূতির প্রতি সাড়া দিয়ে যখন পরবর্তী খলীফা নির্বাচন করার জন্য ছয় জনের ব্যাপারে অসিয়ত করেছিলেন,
আর হযরত উমর যখন সকীফা দিবসে প্রথম খলিফা নির্বাচনের অপরিসীম গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করেছিলেন এবং কোন পূর্ব-প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছাড়াই হযরত আবু বকরের খেলাফত ও শাসন-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত যাবতীয় জটিলতা ও প্রতিক্রিয়ার কথা উপলব্ধি করে বলেছিলেন,“
হযরত আবু বকরের বাইআত ছিল আকস্মিক ঘটনা তবে মহান আল্লাহ এ ঘটনার অনিষ্টতা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন ।”
আর যখন হযরত আবু বকর ত্বরা করে শাসনভার গ্রহণ করার পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ দর্শাতে গিয়ে বলেছিলেন যে,তিনি খলীফা নিযুক্তির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপক গুরুত্ব এবং যে কোন উপায়ে (মহানবীর ওফাতের পরে নেতাবিহীন অবস্থায় সৃষ্ট সংকট ও সমস্যা) সমাধান করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন,(আর তিনি শাসন-কর্তৃত্ব গ্রহণের জন্য মৃদু নিন্দা ও ভৎসনারও শিকার হয়েছিলেন)“
মহানবী (সা.) যখন ইন্তেকাল করেন তখন জনগণ জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার যুগ থেকে সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে (অর্থাৎ তারা নব্য মুসলমান) । তাই আমি ভয় পেলাম যে,তারা (নব্য মুসলমানরা) মহানবীর অবর্তমানে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে । আর বন্ধুরাও আমার উপর জোর করেই খেলাফতের দায়িত্ব চাপিয়ে দিল ।”
আর এসব কিছুই যদি সত্য হয় তাহলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে,ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের কর্ণধার এবং নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিঃসন্দেহে নেতিবাচক পদক্ষেপের (অর্থাৎ মহানবীর ওফাতের পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের পরিচালনা ও নেতৃত্ব দানের জন্য একজন খলীফা বা স্থলাভিষিক্ত মনোনীত না করা) কুফল ও বিপদ ইতিবাচক পদক্ষেপের বাস্তবতার আলোকে এবং স্বয়ং হযরত আবু বকরেরও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার যুগ থেকে সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী উম্মাহর আমূল সংস্কার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়ের নিরিখে সবচেয়ে বেশী উপলব্ধি করেছিলেন এবং সবার চেয়ে বেশী অনুধাবন করেছিলেন ।
দ্বিতীয় বিষয় (স্বার্থকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি): দ্বিতীয় বিষয়টি যা সম্ভবতঃ নেতার মৃত্যুর পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতার নেতিবাচক পদক্ষেপের একটি ব্যাখ্যা দিতে পারে তা হল যে,এ ধরণের নেতিবাচক পদক্ষেপের কুফল ও বিপদ উপলব্ধি করা সত্ত্বেও নেতা ঐ বিপদের মোকাবেলায় প্রচার কাজের সঠিক সংরক্ষণের জন্য কোন চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাননি । কেননা তিনি প্রচার কার্যক্রমকে ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির উপায় হিসেবে দেখেন ও বিবেচনা করেন । তাই যে পর্যন্ত তিনি জীবিত আছেন কেবলমাত্র সে পর্যন্ত এ প্রচার কার্যক্রম থেকে লাভবান হওয়ার জন্যই উক্ত প্রচার কার্যক্রমটিকে টিকিয়ে রাখা বা সংরক্ষণ করাই হচ্ছে তার (নেতার) একমাত্র ব্রত ও উদ্দেশ্য । আর তার মৃত্যুর পরে দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ করার ব্যাপারে তার কোন চিন্তা-ভাবনাই নেই ।
এ ধরনের ব্যাখ্যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্ষেত্রে মোটেও প্রযোজ্য নয়,এমনকি যদি আমরা নবুওয়াত ও রিসালত সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয়ে তাঁকে মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে নাও করি এবং তাঁকে অন্যান্য মিশনারী নেতার মত নিছক একজন মিশনারী নেতা হিসেবে বিবেচনা করি । কারণ জীবনের সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইসলাম-ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে যে নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের পরাকাষ্ঠা মহানবী (সা.) প্রদর্শন করেছেন তার কোন নজীর মিশনারী নেতাদের জীবনেতিহাসে বিদ্যমান নেই । তাঁর (সা.) পুরো জীবন থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত । তাই মহানবী (সা.) মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে এবং তীব্র অসুস্থতার মাঝেও এমন এক যুদ্ধের কথা চিন্তা করেছিলেন যার পরিকল্পনা তিনি নিজেই প্রণয়ন করেছিলেন এবং রণাঙ্গনে প্রেরণের জন্য তিনি নিজেই হযরত উসামা বিন যায়েদের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত ও সজ্জিত করেছিলেন । এ কারণেই তিনি (সা.) অসুস্থতা সত্ত্বেও বলেছিলেন,“
উসামার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কর- উসামার সেনাবাহিনীকে রণাঙ্গনে প্রেরণ কর ।”
আর তিনি এ কথাটি বারবার বলছিলেন আর কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর মূর্ছা ও যাচ্ছিলেন
। অতএব,কোন এক সামরিক বিষয়ে মহানবী (সা.) মৃত্যু শয্যায় শায়িতাবস্থায়ও যদি এতবেশী উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত থাকেন এবং উক্ত যুদ্ধের ফলাফল হাতে আসার আগেই যে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন তা তাঁর জানা থাকা সত্ত্বেও তিনি এ বিষয়টি (অর্থাৎ উসামার নেতৃত্বে উক্ত সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে প্রেরণ করা) থেকে মোটেও বিরত না হন,আর আমরা এটাও দেখতে পাই যে,শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার মুহূর্তেও মহানবী (সা.) ঐ যুদ্ধ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করছেন,তাহলে আমরা কিভাবে ভাবতে পারি যে,মহানবী (সা.) ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে মোটেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না বা কোন চিন্তা-ভাবনাও করবেন না এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার যাতে করে তাঁর ওফাতের পরে নানা প্রকার কাঙ্খিত-অনাকাঙ্খিত সংকট,সমস্যা ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য তিনি কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রূপরেখাও দিয়ে যাবেন না ?!!
আর সবশেষে মহানবী (সা.)-এর সর্বশেষ অসুস্থতায়ও তাঁর আচরণের মধ্যে এমন এক তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যা প্রথম পদক্ষেপটিকে (নেতিবাচক পদক্ষেপ) সর্বৈব মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য যথেষ্ট । আর এ থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে,বিপদাশঙ্কা না করা বা বিপদ সম্পর্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও ভীত না হওয়ার কারণে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে মহানবী (সা.) অনেক দূরে ছিলেন ।
শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে মুসলমানদের সকল সহীহ হাদীস গ্রন্থে মৃত্যু শয্যায় শায়িতাবস্থায় মহানবীর যে আচরণের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে তা হল যখন মহানবী (সা.)-এর ওফাত নিকটবর্তী হল এবং ঘরে অনেক লোক ছিল আর তাদের মধ্যে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবও ছিলেন তখন তিনি (সা.) বললেন,“
কাগজ ও কলম নিয়ে এসো । আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে যাব যার পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না ।”
মহান নেতার পক্ষ থেকে আন্তরিক এ প্রচেষ্টা যার বর্ণনা ও সত্যতা সম্পর্কে সকলেরই ঐকমত্য (ইজমা) রয়েছে তা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে,মহানবী (সা.) প্রচার কার্যের ভবিষ্যৎ বিপদের কথা চিন্তা করতেন । আর বিকৃতি,বিচ্যুতি ও বিলুপ্তির হাত থেকে মুসলিম উম্মাহ্ এবং ইসলাম প্রচার কার্যক্রম সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা ও রূপরেখা প্রণয়ন করা যে একান্ত প্রয়োজন তা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন । তাই যে কোন অবস্থায় মহানবী (সা.)-এর পক্ষে নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ধারণা সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব এবং মোটেও যুক্তিসংগত নয় ।