প্রত্যক্ষ মনোনয়নের মাধ্যমে মহানবীর খলীফা নিযুক্তকরণের ইতিবাচক পদক্ষেপ
তৃতীয় পথ
:
এ পদ্ধতিই প্রকৃত ইতিবাচক পদক্ষেপ । এ পদ্ধতিতে যে ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহকে পথ-প্রদর্শন ও পরিচালনা করবেন তাকে প্রস্তুত ও নিযুক্ত করা হয় । একমাত্র এ পদ্ধতিটিই প্রকৃত বাস্তবতার সাথে সম্পূর্ণ সংগতিশীল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রমের প্রচারকদের অবস্থা এবং মহানবী (সা.)-এর অনুসৃত রীতি-নীতি ও পন্থার আলোকেও অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ । আর এ পদক্ষেপটি হচ্ছে এই যে,মহানবী (সা.) তাঁর ওফাতের পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবশ্যই কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকবেন । তাই তিনি মহান আল্লাহর আদেশে এমন এক ব্যক্তিকে মনোনীত করবেন যাঁর অস্তিত্ব ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রমের মাঝে আকন্ঠ নিমজ্জিত । আর তাঁর অস্তিত্বের এ সুগভীরতা তাঁকে বিশেষভাবে উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত করে তুলবে । সুতরাং মহানবী (সা.) এই ব্যক্তিকেই মিশনারী (রিসালতী) ভাবধারায় এবং বিশেষভাবে নেতৃত্বদানের উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, তাঁর (অর্থাৎ মহানবীর মনোনীত ব্যক্তিটির) মধ্যে ইসলাম প্রচার কাজের আদর্শিক প্রামাণ্য উৎস ও তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার যোগ্যতা এবং এ প্রচার কার্যক্রমের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণ পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হবে । আর এটা হতেই হবে এ কারণে যে,উক্ত ব্যক্তিটিই মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর আনসার-মুহাজির প্রজন্মের সচেতন জনপ্রিয় প্লাটফর্মের সাহায্য নিয়ে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বধারা এবং তাদেরকে আদর্শিকভাবে সুগঠিত করার প্রক্রিয়াকে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে দেবে যা উম্মাহকে নেতৃত্বের গুরু-দায়িত্ব বহন করার জন্য উপযুক্ত করবে ।
আর এভাবে আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় যে,এটাই (সরাসরি মনোনীতকরণ) হচ্ছে একমাত্র (সঠিক) পদ্ধতি যা ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রমের প্রকৃত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান এবং প্রগতির পথে এ কার্যক্রমের নব অভিজ্ঞতাকে সুষ্ঠভাবে সংরক্ষণ করতে সক্ষম । মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে মুতাওয়াতির বর্ণনাসূত্রে প্রমাণিত যে,তিনি (সা.) একজন প্রচারককে মিশনারী এবং আদর্শিকভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেছেন এবং তাঁর ওফাতের পর ইসলাম ধর্ম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ তত্ত্বাবধান এবং মুসলিম উম্মাহকে নেতৃত্বদানের দায়িত্ব ঐ ব্যক্তির হাতে অর্পণ করেছেন । আর এটাই হচ্ছে তৃতীয় পদ্ধতি সংক্রান্ত মহানবী (সা.)-এর অনুসৃত রীতি-নীতিরই প্রমাণস্বরূপ যা বাস্তবতার আলোকে অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ কার্যকারণের গতি-প্রকৃতির নিরিখেও সমর্থিত হয়ে যায় । ইতোমধ্যে আমরা এ ব্যাপারে অবগত হয়েছি ।
আর এ সুমহান নবুওয়াতী মিশনের নেতৃত্বদানের যোগ্য ও ন্যায্য দাবিদার এবং ভবিষ্যৎ ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি স্বয়ং আলী ইবনে আবু তালেব ছাড়া আর কেউ নন । ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের সাথে তাঁর অস্তিত্বের সু-গভীর একাত্মতা তাঁকে এ কার্যক্রমের নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করে। শুধু তাই নয়,তিনি ছিলেন প্রথম মুসলিম-ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রথম মুজাহিদ । আর একইভাবে তাঁর অস্তিত্ব মহানবীর জীবনের সাথে গভীরভাবে মিশে গিয়েছিল । এই আলী ছিলেন মহানবীর হাতে লালিত-পালিত,তাঁর শিয়রেই তিনি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম চোখ খোলেন এবং পৃথিবীর আলো প্রত্যক্ষ করেন । তিনি মহানবীর হাতেই বড় হয়েছেন । আর এ কারণেই হযরত আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর সাথে ঘনিষ্টভাবে মেলামেশা করেছেন । তাঁর জীবনে পড়েছে মহানবীর পূর্ণ প্রভাব । তিনি মহানবীর নীতি,আদর্শ এবং পথে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে দেয়ার পূর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন । এসব কিছু অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে কখনো সম্ভব হয়নি ।
হযরত মুহম্মদ (সা.) যে হযরত আলীকে রিসালতী মিশনের দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত ও যোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন তার অগণিত দলীল ও সাক্ষ্য-প্রমাণ স্বয়ং তাঁর (সা.) ও ইমাম আলীর জীবনে বিদ্যমান রয়েছে । তাই ইমাম আলী (আ.) যখন মহানবীকে প্রশ্ন শুরু করতেন তখনই মহানবী (সা.) ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রম এবং এর নিগুঢ় তাৎপর্য বর্ণনা করতেন এবং ইমাম আলীর প্রশ্ন করার কারণেই মহানবী (সা.) আদর্শিক-চিন্তামূলক বিষয়াদি এবং সভ্যতা ও কৃষ্টি সম্পর্কিত সঠিক ইসলামী ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি জনসমক্ষে পেশ করতেন।
তিনি (সা.) ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে দিবা-রাত্রি ঘন্টার পর ঘন্টা একান্ত নিভৃতে কাটাতেন এবং রিসালত সংক্রান্ত সঠিক ও গভীর জ্ঞান,এ পথে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ এবং তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সমুদয় কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে ইমাম আলী (আ.)-এর অন্তঃদৃষ্টির উন্মেষ ঘটিয়েছেন ।
আবু ইসহাক থেকে সনদ সহকারে“
আল-মুস্তাদরাক”
গ্রন্থে আল-হাকেম বর্ণনা করেছেন,আবু ইসহাক বলেন,“
আমি কাসেম বিন আব্বাসকে জিজ্ঞাসা করলাম : হযরত আলী কিভাবে মহানবী (সা.)-এর উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন?”
তিনি বললেন,“
কারণ তিনি (আলী) আমাদের সবার আগে মহানবীর খেদমতে উপস্থিত হতেন এবং আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মহানবীর সাথে থাকতেন অর্থাৎ তাঁকে সঙ্গ দিতেন।”
হুলইয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত : তিনি বলতেন,“
মহানবী (সা.) হযরত আলীর কাছে ৭০টি প্রতিজ্ঞা (আহ্দ) করেছিলেন যা তিনি আলী ব্যতীত অন্য কারো কাছে করেননি।”
(দ্র: হুলইয়াতুল আউলিয়া আবু নাঈম প্রণীত ১ম খণ্ড, পৃ: ৬৮; দারুল কিতাব আল আরাবী কতৃর্ক মুদ্রিত ১৪০৫ হি:) ।
ইমাম নাসাঈ আল-খাসায়েস গ্রন্থে ইমাম আলী থেকে বর্ণনা করেছেন,ইমাম আলী (আ.) বলতেন,“
মহানবীর কাছে আমার এমন এক মর্যাদা ছিল যা সৃষ্টিকুলের আর কারো ছিল না । আমি প্রতি রাতেই মহানবীর কাছে যেতাম । যদি তিনি নামাযরত থাকতেন,তাহলে নামাযান্তে তসবীহ পাঠের সময় আমি তাঁর কাছে যেতাম । আর যখন তিনি নামায পড়তেন না তখন তিনি অনুমতি দিলে আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হতাম ।”
ইমাম নাসাঈ ইমাম আলী (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন : ইমাম আলী (আ.)বলেছেন,“
মহানবী (সা.)-এর খেদমতে আমার উপস্থিত হওয়ার দু’
টি সময় ছিল । একটি রাতে অন্যটি দিনে । (দ্র: আস-সুনান আল-কুবরা আল-খাসায়েস ৫ম খণ্ড,পৃ: ১৪০,হাদীস নং ১/৮৪৯৯ এবং পৃ: ১৪১)
ইমাম আলী (আ.) থেকে ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন : ইমাম আলী (আ.) বলতেন,‘‘
আমি যখনই মহানবীকে প্রশ্ন করতাম তখনই আমি সে প্রশ্নের জবাব পেতাম । আমি যদি চুপচাপ থাকতাম তিনিই কথা বলা শুরু করতেন ।”
(প্রাগুক্ত ৫ম খণ্ড পৃ: ১৪২) আল-হাকেম তাঁর আল-মুস্তাদরাক গ্রন্থে এই একই হাদীস বর্ণনা করে বলেছেন,“
হাদীসটি শায়খাইনের শর্ত মোতাবেক সহীহ ।”
[শায়খাইনঃ ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম-এ দুই হাদীসবেত্তা] (দ্র: আল-মুস্তাদরাক ৩য় খণ্ড,পৃ: ১৫৩,হাদীস ৪৬৩০,মুস্তাফা আব্দুল কাদের আতা কর্তৃক গবেষণাকৃত,দারুল কুতব আল-ইলমিয়াহ,বৈরুত থেকে ১৪১১ হিজরীতে মুদ্রিত)
হযরত উম্মে সালামাহ্ (রা.) থেকে ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন : তিনি (উম্মে সালামাহ্) বলেছেন,“
নিশ্চয় মহানবীর কাছে প্রতিশ্রুতি ও বন্ধুত্বের দিক থেকে সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তিই ছিলেন আলী ইবনে আবু তালিব (আ.) ।”
উম্মে সালামাহ্ বলেছেন,“
মহানবী (সা.) যে দিন ইন্তেকাল করলেন সেদিন প্রভাতে হযরত আলী (আ.)-কে ডেকে পাঠালেন । আমার মনে হয় যে,তিনি আলীকে কোন প্রয়োজনে বাইরে পাঠিয়েছিলেন । এরপর তিনি (সা.) বলতে থাকেন : আলী এসেছে কি? এ কথা তিনি তিনবার বললেন । আলী (আ.) সূর্যোদয়ের আগেই ফিরে আসলেন । তিনি ফিরে আসলে আমরা বুঝতে পারলাম যে,আলীর সাথে মহানবী (সা.)-এর বিশেষ প্রয়োজন আছে । তাই আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম । সেদিন আমরা হযরত আয়েশার হুজরায় মহানবীর সান্নিধ্যে ছিলাম । আমি সবার শেষে হুজরা থেকে বের হলাম এবং দরজার পিছনে বসে পড়লাম । আমি অন্য সকলের চেয়ে দরজার খুব নিকটেই বসে ছিলাম । আলী (আ.) মহানবীর পবিত্র বুকে ঝুঁকে রয়েছিলেন । তিনি ছিলেন মহানবীর কাছে প্রতিশ্রুতির দিক থেকে সর্বশেষ ব্যক্তি । এ সময় মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-এর সাথে গোপনে কথা বলতে থাকেন।”
(দ্র: ইমাম নাসাঈর আস-সুনান আল-কুবরা ৫ম খণ্ড,পৃ:-১৫৪, অধ্যায়:৫৪ । এই একই হাদীস ইবনে আসাকির প্রণীত মুখতাসারাত তারীখে বর্ণিত হয়েছে ১৮তম খণ্ড, পৃ: ২১) ।
ইমাম আলী (আ.) তাঁর প্রসিদ্ধ ভাষণ আল-খুতবাহ্ আল-কাসেআহ্’
য় মহানবী (সা.)-এর সাথে তাঁর অসাধারণ সম্পর্ক এবং তাঁর প্রতিপালন ও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে মহানবীর বিশেষ মনোযোগ ও দৃষ্টির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,
“
ঘনিষ্ঠ আত্মিয়তার দিক থেকে ও বিশেষ অবস্থানের কারণে মহানবীর কাছে আমার যে মর্যাদা রয়েছে সে সম্পর্কে তোমরা সবাই অবগত আছ
।
তিনি আমাকে আমার শৈশব-কালে তাঁর কোলে বসাতেন,
বুকে জড়িয়ে ধরতেন,
তিনি আমাকে তাঁর নিজ বিছানায় শোয়াতেন
।
তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত
।
তিনি আমার ঘ্রাণ নিতেন
।
তিনি খাদ্য চিবিয়ে তা আমাকে খাওয়াতেন
।
তিনি আমাকে কখনো কোন কথায় মিথ্যা বলতে দেখেননি
।
উষ্ট্রশাবক যেমনভাবে তার মাকে অনুসরণ করে ঠিক তেমনিভাবে আমি তাঁকে (সা.) অনুসরণ করতাম । তিনি আমাকে প্রতিদিন তাঁর উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী থেকে কিছু কিছু শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন । তিনি প্রতি বছর হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন । একমাত্র আমি তাঁকে সেখানে দেখতে যেতাম । আমি ছাড়া আর কেউ তাঁকে সেখানে দেখতে যেত না । মহানবী (সা.) ও হযরত খাদীজা (রা.)-এর গৃহ ব্যতীত ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী আর কোন গৃহ বা পরিবার সেদিন পৃথিবীর বুকে ছিল না । আর আমি ছিলাম উক্ত পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি । আমি ওয়াহী ও রিসালতের জ্যোতি (নূর) প্রত্যক্ষ করতাম এবং নবুওয়াতের সুঘ্রান পেতাম । (দ্র: ডঃ সুবহী সালেহ কর্তৃক সম্পাদিত নাহজুল বালাগাহ্,ভাষণ নং- ১৯২)
এসব সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আরো অগণিত সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের নেতৃত্বের পর্যায় সম্পর্কে ইমাম আলী (আ.)-কে সচেতন করে গড়ে তোলার জন্য মহানবী (সা.)- এর যে বিশেষ মিশনারী (রিসালতী) প্রস্তুতিও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তার একটি চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠে । মহানবীর ওফাতের পর ইমাম আলী (আ.)-এর জীবনে এত প্রচুর ও অগণিত তথ্য প্রমাণ রয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে,মহানবী (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় ইমাম আলীর জন্য বিশেষ আদর্শিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন যার ফলাফল ও প্রভাবসমূহ পরবর্তীকালে মহানবীর ওফাতের পর প্রত্যক্ষ করা গেছে । মহানবীর ওফাতের পর ক্ষমতাসীন নেতৃবর্গের কাছে যেসব সমস্যার সমাধান অত্যন্ত দূরূহ বা অসাধ্য ছিল তা সমাধান করার একমাত্র যোগ্য উৎস ছিলেন ইমাম আলী (আ.) । (আস-সুয়তী প্রণীত তারীখুল খুলাফা পৃ: ১৭০-১৭২,হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব বলতেন,“
এমন কোন সমস্যায় আল্লাহ্পাক যেন আমাকে জীবিত না রাখেন যেখানে আবুল হাসান আলী নেই ।”
ইবনে হাজর প্রণীত আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা,পৃ: ১২৭)
ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে খুলাফা-ই রাশেদার যুগে এমন কোন ঘটনা আমাদের জানা নেই যেক্ষেত্রে সঠিক ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমস্যার সমাধান পদ্ধতি জানার জন্য ইমাম আলী (আ.) অন্য কোন ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়েছিলেন । অথচ আমাদের জানামতে এমন অনেক অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে যার সমাধানের জন্য তদানীন্তন ক্ষমতাসীন শাসকবর্গ এ বিষয়ে রক্ষণশীল হওয়া সত্ত্বেও ইমাম আলী (আ.)-এর শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন ।
মহানবী (সা.) ইমাম আলী (আ.)-কে তাঁর তিরোধানের পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের নেতৃত্বদান ও পরিচালনা করার জন্য যে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছিলেন সে সংক্রান্ত্ দলীল-প্রমাণাদি যখন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে তখন মহানবী (সা.) কর্তৃক এ মহা-পরিকল্পনা ঘোষণা করা এবং ইমাম আলীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের আদর্শিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব অর্পণ করা সংক্রান্ত দলীল-প্রমাণাদিও নিঃসন্দেহে ওগুলো থেকে কম হবে না । উদাহরণস্বরূপঃ হাদীসু-ইয়াওমুদ্দার
(দ্র: তাফসীরুল খাযেন ৩য় খণ্ড,পৃ: ৩৭১,দারুল মারেফাহ,বৈরুত কর্তৃক মুদ্রিত) হাদীসে সাকালাইন,
হাদীসে মানযিলাহ,
হাদীসে গাদীর
এবং মহানবীর (সা.) অগণিত হাদীসে এ বিষয়টি আমরা প্রত্যক্ষ করি ।
আর এভাবেই ইসলামী দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রমের অবকাঠামোর মধ্যেই তাশাইয়ু বা হযরত আলীর অনুসারী হওয়ার প্রবণতার উন্মেষ ঘটে যা মহানবীর নবুওয়াতী পরিকল্পনার সীমার মধ্যেই বিকশিত হতে থাকে। আর স্বয়ং মহানবী (সা.) নিজেই এ পরিকল্পনার ভিত মহান আল্লাহর নির্দেশে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সংরক্ষণের জন্য প্রণয়ন করেছিলেন ।
আর এভাবেই,ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে,তাশাইয়ু দ্বীন-বহির্ভুত কোন অবস্থা বা ঘটনা ছিল না;বরং তা ছিল প্রচার কার্যক্রমের গঠন প্রকৃতি,এর মৌলিক প্রয়োজনাদি এবং অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। অর্থাৎ ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের গঠন-প্রকৃতি,মৌলিক প্রয়োজনাদি এবং অবস্থাসমূহ ইসলামের সীমারেখার মধ্যে হযরত আলীর অনুসারী হওয়ার প্রবণতার উদ্ভবের বিষয়টিকে অবধারিত ও অবশ্যম্ভাবী করেছে । অন্য অর্থে বলা যায়,ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের গঠন-প্রকৃতি,মৌলিক চাহিদা এবং পরিবেশ পরিস্থিতিই ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের প্রথম নেতার উপর এ কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও পরিচালনার জন্য দ্বিতীয় নেতাকে প্রস্তুত করার বিষয়টিকে অবধারিত ও অবশ্যম্ভাবী করে দেয় । আর এ দ্বিতীয় নেতা ও তাঁর উত্তরসুরীদের হাতেই ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের বৈপ্লবিক বিকাশ অব্যাহত গতিতে চলতে থাকবে । এর ফলে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা অতীত জাহেলীয়াতের সকল প্রকার বিদ্যমান প্রভাব,চিহ্ন ও নিদর্শনের পূর্ণ মূলোৎপাটন করবে এবং দাওয়াত বা প্রচার কার্যক্রমের যাবতীয় চাহিদা,প্রয়োজন এবং দায়িত্বশীল পর্যায়ে একটি নতুন উম্মাহ্ গঠনের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব সংস্কারমূলক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে থাকবে ।