শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম0%

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: আমার দেশ বাংলাদেশ সোসাইটি
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ বাকের সাদর (রহঃ)
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: আমার দেশ বাংলাদেশ সোসাইটি
বিভাগ:

ভিজিট: 13364
ডাউনলোড: 5435

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13364 / ডাউনলোড: 5435
সাইজ সাইজ সাইজ
শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

লেখক:
প্রকাশক: আমার দেশ বাংলাদেশ সোসাইটি
বাংলা

 

নবীর
(
সা
.)
আহলে বাইতই আদর্শিক ও
নেতৃত্বদানকারী কর্তপক্ষ
:

আহলে বাইত এবং ইমাম আলীর ইমামত যা উক্ত স্বাভাবিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে তা আসলে দু ধরনের নেতৃত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়:

 একটি হচ্ছে চিন্তামূলক (আদর্শিক) নেতৃত্ব এবং অন্যটি হচ্ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আর এ উভয় প্রকার নেতৃত্বই মহানবী (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের মধ্যে পূর্ণরূপে পরিস্ফুটিত হয়েছিল । আমরা ইতোমধ্যে যে সব পরিস্থিতি ও অবস্থা সম্পর্কে অধ্যয়ন করেছি তদনুসারে মহানবী (সা.) তাঁর ওফাতের পরে তাঁর এমন এক যোগ্য ও উপযুক্ত নেতৃত্বধারার অস্তিত্বের ব্যাপারে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকবেন যা উভয় প্রকার নেতৃত্বের অধিকারী হবে । এর ফলে আদর্শিক নেতৃত্ব ঐ সকল আদর্শিক শূন্যতা পূরণ করতে সক্ষম হবে যা কখনো কখনো মুসলমানদের মন-মানসিকতা ও ধ্যান-ধারণার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । এছাড়াও তা (চিন্তামূলক নেতৃত্ব) জীবন ও মন-মানসিকতার ক্ষেত্রে নবোদ্ভূত সমস্যা ও বিষয়াদি সংক্রান্ত সঠিক ব্যাখ্যা দিতেও সক্ষম হবে । আর রাজনৈতিক,সামাজিক নেতৃত্ব ও ইসলাম প্রচার কার্যক্রম এবং ইসলমী উম্মাহর পথ-পরিক্রমাকে সঠিক সামাজিক খাতে পরিচালিত করবে ।

আমরা যে সব পরিবেশ-পরিস্থিতি আলোচনা করেছি সেগুলোর কারণেই মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের মাঝে উপরোক্ত নেতৃত্বদ্বয়ের সুসমাবেশ ঘটেছিল । আর এ বিষয়টির উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপকারী অগণিত হাদীস মহানবী (সা.) থেকে সবসময়ই বর্ণিত হয়েছে । মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত চিন্তামূলক (আদর্শিক) নেতৃত্বের হাদীস-ভিত্তিক দলিল-প্রমাণের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে হাদীসুস্ সাকালাইন (حدیث الثقلین ) । মহানবী (সা.) উক্ত হাদীসে বলেছেন:

‘‘ মহান প্রভূ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে অচিরেই আহবান (তলব) করা হবে । আর আমাকে সেই আহবানে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে । আর আমি তোমাদের মধ্যে রেখে যাচ্ছি দু টি ভারী বস্তু:একটি আল্লাহর গ্রন্থ আল-কোরান যা আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত বিস্তৃত রজ্জু (রশি) এবং অন্যটি আমার রক্তজ বংশধর (ইতরাত) আমার আহলে বাইত । সর্বজ্ঞানী সর্বসুন্দর মহান আল্লাহু আমাকে জানিয়েছেন যে,এ দুই ভারী বস্তু আমার কাছে হাউযে কাওসারে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না । অতএব,সাবধান! সাবধান! আমার পর এ দুই ভারী বস্তু বা সাকালাইনের ক্ষেত্রে তোমরা কেমন আচরণ কর! ৫৫

সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংক্রান্ত হাদীসভিত্তিক দলীল-প্রমাণের সবচেয়ে বড় আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে গাদীরে খুমের হাদীস । আল্লামা তাব্রানী হযরত যায়েদ বিন আরকাম থেকে এমন এক সনদসহ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যার সত্যতা সম্পর্কে ইজমাবা সবার ঐকমত্য রয়েছে তিনি (যায়দ ইবনে আরকাম) বলেছেন, মহানবী (সা.) খুমের জলাশয়ের কাছে গাছের নীচে ভাষণ দানকালে বলেছিলেন, ‘‘ হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমাকে মহাপ্রভূ আল্লাহর তরফ থেকে ডাকা হবে এবং আমাকে সে আহবানে সাড়া দিতে হবে নিশ্চয় আমাকে যেমনিভাবে আমার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে ঠিক তেমনি তোমাদেরকেও তোমাদের নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে অতএব, তখন তোমরা কি বলবে? তখন উপস্থিত জনতা বলল, ‘‘ আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি ইসলাম প্রচার করেছেন, জিহাদ করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন অতএব, মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন এরপর মহানবী (সা.) বললেন, ‘‘ তোমরা কি সাক্ষ্য দেবে না যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা এবং তাঁর প্রেরিত পুরুষ (রসুল) বেহেশত সত্য নরক (জাহান্নাম) সত্য মৃত্যু সত্য মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য কিয়ামত যে অবশ্যই সংঘটিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই মহান আল্লাহ সেদিন কবরে শায়িতদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন ? ৫৬ তখন তারা সবাই বলল, ‘‘ হ্যাঁ, আমরা সবাই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দেব মহানবী (সা.) তখন বললেন, ‘‘ হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো এরপর তিনি বললেন, ‘‘ হে জনতা, নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমার প্রভূ (মওলা) আর আমি প্রতিটি মুমিনদের মওলা (অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক কতৃপক্ষ) আমি তাদের (মুমিনদের) চেয়েও তাদের জীবনের উপর অধিকতর কর্তৃত্বশীল অতএব আমি যার তত্ত্বাবধায়ক, কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ ( مولی ) এই আলীও তার তত্ত্বাবধায়ক, কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ হে আল্লাহ! যে তাকে (আলীকে) ভালোবাসবে তাকে তুমিও ভালবাসো, আর যে তার সাথে শত্রুতা করবে তুমিও তার সাথে শত্রুতাকরো ৫৭

আর এভাবে মহানবী (সা.) এ দু টি হাদীস (হাদীসে সাকালাইন এবং গাদীরে খুমের হাদীস) এবং উক্ত হাদীসদ্বয়ের মত অগণিত হাদীসে তাঁর আহলে বাইতের ক্ষেত্রে উভয় প্রকার নেতৃত্বের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন । পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে মহানবীর বর্ণিত হাদীস ও রিওয়ায়েতসমূহ অনুসরণ করার ব্যাপারে বিদ্যমান ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিটি হাদীসে সাকালাইন এবং গাদীরে খুমের হাদীসকে গ্রহণ করেছে এবং আহলে বাইতের উভয় প্রকার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বেও বিশ্বাস স্থাপন করেছে । আর এটাই হচ্ছে আহলে বাইতের অনুসারী মুসলমানদের অভিমত ও দৃষ্টিভঙ্গি ।

আর প্রত্যেক ইমামের সামাজিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অর্থ যদি ঐ ইমামের জীবদ্দশায় তাঁর শাসন-কার্য পরিচালনা করাই হয়ে থাকে,তাহলে আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব (المرجعیة الفکریة ) হবে এমনই এক স্থায়ী,অপরিবর্তিত বাস্তবতা যা কোন শর্তাধীন হবে না এবং ইমামের আয়ুষ্কালের গন্ডির মধ্যেও সীমাবদ্ধ করা যাবে না । সুতরাং যতদিন পর্যন্ত মুসলমানগণ ইসলাম এবং ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান,হারাম-হালাল বিধান এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে ততদিন পর্যন্ত তারা সর্বদা মহান আল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত আদর্শিক নেতৃত্বের মুখাপেক্ষী থাকবে । আর এই আদর্শিক নেতৃত্ব প্রথমতঃ মহান আল্লাহর গ্রন্থ পবিত্র কোরানে বিধৃত এবং দ্বিতীয়ঃ মহানবীর পবিত্র সুন্নাহ্ এবং তাঁর নিষ্পাপ রক্তজ বংশধর তাঁরই আহলে বাইতের মাঝে প্রতিফলিত এবং বাস্তবায়িত হয়েছে । মহানবী (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন যে,তাঁর আহলে বাইত (আ.) কখনোই পবিত্র কোরান থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না । কিন্তু পবিত্র কোরান ও হাদীস একনিষ্ঠতার সাথে অনুসরণ করার পরিবর্তে ইজতিহাদের উপর নির্ভরশীল যে দৃষ্টিভঙ্গি মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল তা মহানবী (সা.)-এর ওফাতের সময় থেকেই শাসনকার্য পরিচালনাকারী নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কতকগুলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল নীতিমালার আলোকে মুহাজিরদের কিছু গণ্য-মান্য ব্যক্তির কাছে অর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল । আর এ দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই মহানবীর ওফাতের পর সকীফা বনী সায়েদার চত্বরে  সীমিত পরিসরে যে পরামর্শ করা হয়েছিল তদনুযায়ী হযরত আবু বকর সরাসরি শাসন-কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন ।৫৮ অতঃপর হযরত আবু বকরের পক্ষ থেকে এক প্রত্যক্ষ অসিয়তের ভিত্তিতে হযরত ওমর (হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর) খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।৫৯ এরপর হযরত ওমরের পক্ষ থেকে পরোক্ষ অসিয়তের ভিত্তিতে হযরত ওসমান তাঁদের উত্তরাধিকারী হন ।৬০ আর খলীফা নিযুক্ত করার এ ধরনের অনুশীলন ও পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ফলশ্রুতিতে মহানবী (সা.)-এর ওফাতের ৩০ বছরের মধ্যেই তালিক বা মহানবী (সা.) কর্তৃক মক্কা বিজয় দিবসে সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্ত কুরাইশদের সন্তানরা প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রসমূহে অধিষ্ঠিত হয়ে যায় । অথচ এরাই মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত ইসলাম,মহানবী (সা.) এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছে । যা কিছু এতক্ষণ বর্ণনা করা হল আসলে তা শাসনকার্য পরিচালনাকারী (রাজনৈতিক) নেতৃত্বের সাথেই সংশিষ্ট । তবে আদর্শিক (আধ্যাত্মিক ও চিন্তামূলক) নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বলতে হয় যে,আহলে বাইতের কাছ থেকে রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার পর ইজতিহাদ কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে মহান আহলে বাইতের আদর্শিক (আধ্যাত্মিক ও চিন্তামূলক) নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকার করা এবং মেনে নেয়া সুকঠিন ব্যাপার । কারণ মহান আহলে বাইতের (আ.) আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকার করার অর্থই হচ্ছে এমন বস্তুনিষ্ঠ পরিবেশ-পরিস্থিতির উদ্ভব করা যার ফলে তাঁরা (আহলে বাইত) শাসন-কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন এবং প্রাগুক্ত দু ধরনের নেতৃত্বকে নিজের মুঠোয় ফিরিয়ে আনতে পারবেন । ঠিক তেমনিভাবে শাসনকার্য পরিচালনাকারী খলিফার আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকার করা এবং মেনে নেয়াও বেশ কঠিন । কেননা আদর্শিক নেতৃত্বের জন্য যে সব শর্ত থাকা অপরিহার্য তা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের জন্য যা প্রয়োজনীয় তা থেকে ভিন্ন । অতএব,শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য কোন ব্যক্তিকে যোগ্য বলে মনে করার অর্থ কখনোই এটা নয় যে,ঐ ব্যক্তিকে আদর্শিক ইমাম বা নেতা হিসেবে এবং পবিত্র কোরান ও সুন্নাহর পর তত্ত্বজ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রামাণিক উৎস হিসেবে নিযুক্ত করা সম্ভব । কারণ এ ধরণের আদর্শিক নেতৃত্বের জন্য অতি উচ্চ পর্যায়ের সংস্কৃতি,কৃষ্টি এবং তত্ত্বজ্ঞান সংক্রান্ত চূড়ান্ত পারদর্শিতা এবং পারঙ্গমতা অপরিহার্য । আর এটাও দিব্য পরিষ্কার এবং প্রমাণিত সত্য যে,এ ধরণের যোগ্যতা একমাত্র আহলে বাইত (আ.) ব্যতীত এককভাবে আর কোন সাহাবার মাঝে বিদ্যমান ছিল না ।

এ কারণেই আদর্শিক নেতৃত্বের মাপকাঠি বেশ কিছুকাল দোদুল্যমান থেকে যায় । তাই বহুক্ষেত্রে খলিফাগণ ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে তাঁরই আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের ভিত্তিতে অথবা তাঁর আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অতি নিকটবর্তী অন্য কোন নীতি-মালার ভিত্তিতে আচরণ করেছে । এমনকি দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরও বহুবার বলেছেন,‘‘ আলী যদি না থাকত তাহলে উমর ধ্বংসই হয়ে যেত । আমাকে আল্লাহ এমন কোন সমস্যায় জীবিত না রাখেন যেখানে (অর্থাৎ যা সমাধান করার জন্য) আবুল হাসান (আলী) উপস্থিত নেই। ৬১ তবে কালক্রমে,মহানবীর ওফাতের পর মুসলমানগণ ধীরে ধীরে আহলে বাইত (আ.) এবং ইমাম আলী (আ.)-কে দোষগুণ সম্পন্ন সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । আর এর ফলে আহলে বাইতের আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের কোন প্রয়োজনীয়তা একেবারে অনুভব না করা এবং এই আদর্শিক প্রামাণিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বকে আহলে বাইত (আ.) ছাড়াও অন্য কোন যথার্থ ও উপযুক্ত বিকল্পের উপর আরোপ করাও নিতান্ত সহজ ও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় । আর এই বিকল্প স্বয়ং খলিফা নিজেও নন বরং সাহাবা-ই কেরাম । এভাবেই আহলে বাইতের ধর্মীয় প্রামাণিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বদলে সামগ্রিকভাবে সাহাবা-ই কেরামের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের তত্ত্বকে ধীরে ধীরে দাঁড় করানো হয় । আর সাহাবা-ই কেরামের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এবং প্রামাণিকতা এমনই এক মোক্ষম বিকল্প যা পবিত্র কোরান ও সুন্নাহ বিধৃত প্রামাণিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব উপেক্ষিত হওয়ার পর সাধারণ মুসলিম উম্মাহর দৃষ্টিতে অত্যন্ত উপযোগী ও যথার্থ বলে বিবেচিত হয় । কেননা এরাই (সাহাবাগণ) হচ্ছে ঐ প্রজন্ম যারা মহানবী (সা.)-এর সাহচর্য লাভ করেছে,মহানবীর জীবনাদর্শ ও অভিজ্ঞতার আলোকে জীবন যাপন করেছে এবং তাঁর সুন্নাহ ও হাদীসকে অনুধাবন করেছে ।

আর এভাবেই,আহলুল বাইত (আ.) কার্যতঃ মহান আল্লাহ প্রদত্ত তাঁদের বিশেষত্বটি হারিয়ে সাহাবা হিসেবে আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বধারার একটি মাত্র অংশ হিসেবে পরিগণিত হন । সাহাবা-ই কেরামের মধ্যকার তীব্র মতবিরোধ ও পারস্পরিক বৈপরিত্যসমূহ অনেক সময় বহু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও যুদ্ধের সূত্রপাত করেছে এবং এর ফলে একদল মুসলমান অন্যদলের রক্ত ঝরানো এবং মানসম্ভ্রমহানি করাকে বৈধ বলে মনে করেছে । একদল অন্যদলকে বিচ্যুত ও বিশ্বাসঘাতক বলে অপবাদও দিয়েছে ।৬২ আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বধারার বিভিন্ন গ্রুপ ও শ্রেণীর মধ্যকার এসব মতপার্থক্য এবং পারস্পরিক দোষারোপের কারণে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভিন্ন প্রকার আদর্শিক এবং আকীদাগত মতপার্থক্য ও পারস্পরিক বৈপরীত্যের উদ্ভব হয় । আসলে এসব মতপার্থক্য এবং পারস্পরিক দোষারোপ প্রকৃতপক্ষে ইজতিহাদ কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কর্তৃক উদ্ভাবিত আদর্শিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বধারার অন্তর্নিহিত বৈপরীত্যের বাস্তব প্রতিফলন ।