শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম0%

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: আমার দেশ বাংলাদেশ সোসাইটি
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ বাকের সাদর (রহঃ)
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: আমার দেশ বাংলাদেশ সোসাইটি
বিভাগ:

ভিজিট: 13360
ডাউনলোড: 5435

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13360 / ডাউনলোড: 5435
সাইজ সাইজ সাইজ
শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

শিয়া প্রবণতা ও ইসলাম

লেখক:
প্রকাশক: আমার দেশ বাংলাদেশ সোসাইটি
বাংলা

শিয়া মাযহাবে আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক দিকসমূহ:

   আমি এখানে এমন একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই আমার বিবেচনায় যার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে । আর তা হল যে কতিপয় গবেষক দু ধরনের তাশাইয়ু অর্থাৎ আধ্যাত্মিক তাশাইয়ু এবং রাজনৈতিক তাশাইয়ু-এর মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করে থাকেন এবং তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, আধ্যাত্মিক তাশাইয়ু রাজনৈতিক তাশাইয়ু অপেক্ষা প্রাচীনতর । ইমামীয়া শিয়া মাজহাবের ইমামগণ যাঁরা ইমাম হুসাইনের বংশধর ছিলেন তাঁরা কারবালায় লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের পর নিজেদেরকে রাজনীতি ও পার্থিব কর্মকান্ড থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং ইবাদত ও ধর্মীয় উপদেশ দানে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতেন ।

আর এটাও সত্য যে,জন্মলগ্ন থেকেই তাশাইয়ু কখনো নিছক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতারই অধিকারী ছিল না বরং মহানবীর ওফাতের পর আদর্শিক,সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সমানভাবে উম্মাহকে ইমাম আলী (আ.) কর্তৃক নেতৃত্ব দানের পরিকল্পনাস্বরূপ ইসলামের ক্রোড়েই তাশাইয়ুর উৎপত্তি হয়েছে । আর আমরা ইতোমধ্যে তাশাইয়ুর উৎপত্তি ও বিকাশের পরিস্থিতি বর্ণনা করার সময় এ বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি । ঠিক যেমনভাবে ইসলামের রাজনৈতিক দিক থেকে এর আধ্যাত্মিক দিককে পৃথক করা সম্ভব নয় ঠিক তেমনভাবে তাশাইয়ুর উৎপত্তির কারণ হিসেবে যে সব পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং অবস্থা উল্লেখ করেছি সেগুলোর আলোকে রাজনৈতিক তাশাইয়ূ থেকে আধ্যাত্মিক তাশাইয়ুকেও পৃথক করা সম্ভব নয়।

সুতরাং তাশাইয়ুকে কোনক্রমেই বিভাজিত করা যাবে না । তবে যদি মহানবীর ওফাতের পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার পরিকল্পনাস্বরূপ তাশাইয়ু তার নিজস্ব অর্থ ও তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে তাহলে তখন তা হবে অন্য কথা (অর্থাৎ সেক্ষেত্রেই কেবল তাশাইয়ুকে আধ্যাত্মিক তাশাইয়ু ও রাজনৈতিক তাশাইয়ু এবং আরো নানা শ্রেণীতে বিভক্ত করা যাবে) আর মহানবীর তিরোধানের পর দাওয়াত বা ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের আদর্শিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি যে ঠিক সমভাবেই মুখাপেক্ষী হবে এতে কোন সন্দেহ নেই । শাসনকার্য বা খেলাফত পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী তিন খলীফার ভূমিকা অব্যাহতভাবে চালিয়ে নেয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে সর্বসাধারণ মুসলমানদের মাঝে ইমাম আলী (আ.)-এর প্রতি ব্যাপক গণসমর্থন ও জনপ্রিয়তা বিদ্যমান ছিল । আর এই ব্যাপক গণসমর্থনই তাঁকে (আলীকে) খলীফা উসমানের নিহত হওয়ার ঠিক পরপরই শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল ।৬৩ তবে এই জনসমর্থন না ছিল আধ্যাত্মিক,না ছিল রাজনৈতিক । কারণ তাশাইয়ু ইমাম আলীকে তিন খলীফার বিকল্প এবং মহানবীর প্রত্যক্ষ খলীফা হিসেবেই বিশ্বাস করে । তাই ইমাম আলীর প্রতি মুসলমানদের বিভিন্ন গ্রুপের ব্যাপক সমর্থনটা ছিল প্রকৃত পূর্ণাঙ্গ তাশাইয়ু অপেক্ষাও ব্যাপকতর । আর আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক তাশাইয়ুও এই ব্যাপক জনসমর্থনের অবকাঠামোর মাঝেই যদি বিকাশ লাভ করে থাকে তাহলেও এটাকে বিভাজিত তাশাইয়ুর উদাহরণ বলে বিবেচনা করা সম্ভব হবে না । যেহেতু ইমাম আলী (আ.) খলীফা আবু বকর ও খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাবের শাসনামলে হযরত সালমান,হযরত আবু যার এবং হযরত আম্মারের মত বড় বড় প্রবীণ সাহাবীর আত্মিক ও নৈতিক (মনস্তাত্বিক) সমর্থন পেয়েছিলেন সেহেতু এ থেকেও বোঝা যায় না যে,আধ্যাত্মিক তাশাইয়ু রাজনৈতিক দিক বিবর্জিত। বরং এটা ছিল মহানবীর ওফাতের পর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমে ইমাম আলীর আদর্শিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি ঐ সব সাহাবার আস্থা ও ঈমানেরই পরিচায়ক । ইমাম আলীর নেতৃত্বের আদর্শিক দিকের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস যেমনভাবে তাদের প্রাগুক্ত আত্মিক ভক্তি ও ভালবাসার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে ঠিক তদ্রুপ খলীফা আবু বকরের খেলাফত এবং যে দৃষ্টিভঙ্গিটি ইমাম আলীর হাত থেকে শাসনকর্তৃত্ব অন্যের হাতে অর্পণ করার জন্য দায়ী সেটার বিরোধিতা  করার মাধ্যমে ইমাম আলীর নেতৃত্বের রাজনৈতিক দিকের প্রতিও তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে ।৬৪

আসলে রাজনৈতিক তাশাইয়ু থেকে বিচ্ছিন্ন করে আধ্যাত্মিক তাশাইয়ুকে উপস্থাপন সংক্রান্ত বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিটি একদল শিয়া মুসলমানের মন-মানসিকতায় এমনিতেই অর্থাৎ বিনা কারণে উৎপন্ন হয়নি । বরং রূঢ় বাস্তবতার কাছে তার আত্মসমর্পণ ও নতিস্বীকার,মুসলিম উম্মাহকে সুষ্ঠভাবে গড়ে তোলার জন্য ইসলামী নেতৃত্বকে প্রস্তুতকরণ এবং মহানবীর হাতে গড়ে উঠা ব্যাপক সংস্কারমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা হিসেবে তাশাইয়ুর জ্বলন্ত স্ফুলিঙ্গ তার অন্তরে নিভে যাওয়া এবং কিছু নিছক প্রাণহীন আকীদা-বিশ্বাসে তাশাইয়ুর রূপান্তরিত হওয়ার পরপরই এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব হয়েছে । উল্লেখ্য যে,এ নিছক আকীদা-বিশ্বাস এমনই যে,মানুষ তার নিজ হৃদয়কে এর সাথে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে ফেলে এবং এ থেকে সে তার নিজ জীবনের সুখ-স্বচ্ছন্দ এবং আশা-আকাঙ্খা পেতে চায় ।

এখন ঐ কথা প্রসঙ্গে আসা যাক যা ব্যক্ত করে যে,আহলুল বাইতের ইমামগণ যাঁরা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বংশধর ছিলেন তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন এবং পার্থিব কর্মকান্ড থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন । কিন্তু ইসলামের নেতৃত্বধারাকে অব্যাহতভাবে গতিশীল ও সচল রাখার ফর্মুলা স্বরূপ তাশাইয়ুকে অনুধাবন করার পর ইসলামী নেতৃত্ব বলতে ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর গঠন পরিপূর্ণ করার জন্য মহানবী (সা.) যে সংস্কার কর্মকান্ড চালিয়েছিলেন ঠিক সেটাই যদি আমরা বুঝে থাকি তাহলে তাশাইয়ু মতাদর্শ বর্জন না করা ব্যতীত রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে ইমামদের সরে আসা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় । তবে যে বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃত্বদান করা থেকে ইমামদের নির্লিপ্ত ও দূরে থাকার ধারণাটিকে শক্তিশালী করেছে তা হল প্রতিষ্ঠিত অবস্থার বিরুদ্ধে ইমামগণের সশস্ত্র সংগ্রামের উদ্যোগ না নেয়া। অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকীর্ণ সীমাবদ্ধ অর্থ কেবলমাত্র এ ধরনের সশস্ত্র সংগ্রাম ও পদক্ষেপ গ্রহণের সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ ।

ইমামদের থেকে বেশ কিছু দলীল রয়েছে যা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে,যুগের ইমাম সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করতে সর্বদাই প্রস্তুত থাকেন যদি তিনি সাহায্যকারীদের অস্তিত্ব এবং ঐ সংগ্রামের ইসলামী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও সামর্থ সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন ।৬৫

আমরা যদি শিয়া আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা দেখতে পাব যে,আহলুল বাইতের ইমামগণ কেবলমাত্র শাসনক্ষমতা গ্রহণ করাকেই যথেষ্ট বলে বিশ্বাস করতেন না । ইসলামের নির্দেশিত পথে সংস্কার-কার্যক্রমের বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব হবে না যে পর্যন্ত না এই প্রশাসন (অর্থাৎ ইমাম-প্রশাসন ও সরকার) জনপ্রিয় সচেতন গণভিত্তি দ্বারা সমর্থিত হবে । আর এ ধরনের সচেতন জনপ্রিয় গণভিত্তিসমূহই ইমামদের প্রশাসনের সার্বিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথার্থভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে এবং শাসনকার্য সংক্রান্ত ইমাম-প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে পূর্ণ আস্থাবান ও বিশ্বাসী হবে । এসব গণভিত্তি ইমাম-প্রশাসনকে সর্বদা সমর্থন করে যাবে। ইমাম জনগণের কাছে প্রশাসনের যাবতীয় পদক্ষেপ ও নীতি অবস্থান সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করবেন এবং সব ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে স্থির,অবিচল ও অটল থাকবেন ।

মহানবীর ওফাতের পর অর্ধশতাব্দী ধরে শিয়া নেতৃত্বধারা শাসন ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরও যেসব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া বিশ্বাস করত সেসব প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে সরকার ও প্রশাসনকে নিজের আয়ত্বে ফিরিয়ে আনার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়েছে। কারণ শিয়া নেতৃত্বধারা ঐ সময় সচেতন জনপ্রিয় গণভিত্তিসমূহের অস্তিত্বে অথবা মুহাজির-আনসার এবং তাবেয়ীদেরকে বদান্যতার সাথে সচেতন করার মাধ্যমে শাসন-কর্তৃত্ব নিজের আয়ত্বে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও বিশ্বাস করত । তবে অর্ধশতাব্দী পরে এবং উক্ত জনপ্রিয় গণভিত্তির আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকার পর এবং বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির বেড়াজালে তরলমনা প্রজন্মসমূহের বিকাশের কারণে শিয়া-আন্দোলন কর্তৃক নিছক প্রশাসনিক ক্ষমতা গ্রহণ করাটাই সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়নি । কারণ সচেতনতাবোধ ও আত্মত্যাগের স্পৃহাসম্পন্ন সেই জনপ্রিয় গণভিত্তিসমূহ তখন আর বিদ্যমান ছিল না। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেবলমাত্র দু'টি কাজ করারই সুযোগ রয়েছে । আর তা হল ঃ

প্রথমতঃ ভবিষ্যতে শাসন-কর্তৃত্ব গ্রহণ করার উপযুক্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ঐ সচেতন জনপ্রিয় গণভিত্তিকে পুনরায় গড়ে তোলার কাজ আরম্ভ করা ।

দ্বিতীয়তঃ মুসলিম উম্মাহর বিবেক ও ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করা এবং উম্মাহর জাগ্রত ইসলামী বিবেক ও ইচ্ছাকে এমনভাবে প্রাণবন্ত ও উদ্দীপ্ত রাখা যার ফলে উম্মাহ্ বিচ্যুত ও পথভ্রষ্ট শাসকদের সামনে নিজ ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্ভ্রমবোধ সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলা থেকে রক্ষা পাবে । আর প্রথম কাজটিই স্বয়ং ইমামগণ (আ.) নিজেরাই আঞ্জাম দিয়েছেন । আর দ্বিতীয় কাজটি হযরত আলীর বিপ্লবী বংশধরদের হাতে সম্পন্ন হয়েছে । তাঁরা (আলী বংশীয় বিপ্লবীগণ) তাঁদের বীরত্বব্যাঞ্জক আত্মত্যাগ ও কোরবানীর মাধ্যমে ইসলামী বিবেকবোধ ও সংকল্প চিরঞ্জীব রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন । আর তাঁদের মধ্যে যারা নিষ্ঠাবান (মুখলেস) ছিলেন তাঁদেরকে আহলে বাইতের ইমামগণ সমর্থন করেছেন ।

ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রেযা (আ.) শহীদ যায়েদ ইবনে আলী সম্পর্কে আব্বাসীয় খলীফা মামুনকে একবার বলেছিলেন, তিনি (হযরত যায়েদ) ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর আলেমদের মধ্যে অন্যতম । তিনি মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে (প্রচলিত পরিস্থিতি ও অবস্থার ব্যাপারে) ক্ষুব্ধ ও ক্রোধান্বিত হয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ করা পর্যন্ত জিহাদ করে গিয়েছেন । আমার পিতা মুসা ইবনে জাফর আমাকে বলেছেন,আমি আমার পিতা জাফর বিন মুহাম্মদকে বলতে শুনেছি,মহান আল্লাহ আমার চাচা যায়েদের প্রতি করুণা করুন । কারণ তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রিয় (ইমামের) প্রতি (জনগণকে) আহবান করেছিলেন । যদি তিনি বিজয়ী ও সফল হতেন তাহলে তিনি যে বিষয়ে দাওয়াত দিয়েছিলেন সে ব্যাপারে অবশ্যই পূর্ণ নিষ্ঠার পরিচয় দিতেন ।

যায়েদ বিন আলী নিঃসন্দেহে যা সত্য নয় সে দিকে দাওয়াত দেননি । তিনি এ ব্যাপারে মহান আল্লাহকে অন্য সকলের চেয়ে বেশী ভয় করতেন । তিনি বলতেন,আমি তোমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের সন্তুষ্টির প্রতি আহবান জানাচ্ছি  । ৬৬

অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,ইমাম জাফর আস্-সাদেক (আ.)-এর সমীপে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে যাঁরা (তদানীন্তন স্বৈরাচারী জালিম প্রশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র) সংগ্রাম করেছিলেন তাঁদের কথা স্মরণ করা হলে তিনি (আ.) বলেছিলেন, আমি এবং আমার শিয়ারা এখনও উত্তম অবস্থায় রয়েছি । মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে কেউ বিদ্রোহ করেনি । আর তাহলে আমি পছন্দ করতাম যে,মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে কেউ বিদ্রোহ করুক এবং তার পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার হোক । ৬৭ সুতরাং বিচ্যুত শাসকদের বিরুদ্ধে ইমামদের প্রত্যক্ষ সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা না করার অর্থ এটা নয় যে,ইমামগণ তাঁদের নেতৃত্বের রাজনৈতিক দিকটি পরিহার করে কেবলমাত্র ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন । অথচ ইমামদের সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ না হওয়াটাই সমাজ সংস্কার প্রক্রিয়ার অবয়বগত যে পার্থক্য ও ভিন্নতা আছে তারই পরিচায়ক । আর বিভিন্ন ধরনের বস্তুনিষ্ঠ অবস্থায় সমাজ-সংস্কার প্রক্রিয়ার অবয়ব ও ধরনকে সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত করে থাকে । এ ছাড়াও ইমামদের এ ধরনের আচরণ (প্রত্যক্ষ শসস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত না হওয়া) সমাজ সংস্কারমূলক প্রক্রিয়ার গতি-প্রকৃতি এবং তা বাস্তবায়নের স্বরূপ সংক্রান্ত তাঁদের সুগভীর জ্ঞান ও অনুভূতিরই পরিচায়ক ।

তথ্যসূত্রঃ

১. তন্মধ্যে মুহাম্মদ রশিদ রেজা তার (আসসুন্নাহ ওয়াশ শিয়া) গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ৪৭ পৃষ্ঠায় আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার আলোচনায় এটি উল্লেখ করেছেন।

২. তারিখুল ইমামিয়া ওয়া আসলাফিহীম মিনাশ শিয়া গ্রন্থের ৩৫ পৃষ্ঠা পরবর্তী আলোচনা দ্রষ্টব্য।

৩.প্রাগুক্ত।

৪.সহীহ মুসলিম,৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা:-১৮৭৪ এবং মুখতাসারে তারিখে ইবনে আসাকির, ১৮ তম খণ্ড,পৃষ্ঠা:-৩২।

৫. তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:-২০১-২০২।

৬.সূরা নিসা,আয়াত নং-১৩৮-১৪৬;সূরা তওবা,আয়াত নং-৬৪-৬৮;সূরা আহযাব,আয়াত নং-১২-১৫;সূরা মুনাফেকুন,আয়াত নং-১-৪ ও আরো অনেক আয়াত।

৭.তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৪২৮,মুখতাসারে ইবনে আসাকির,১৮তম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৩০৮-৩০৯।

৮. তারিখে তাবারী,৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা-২২৮।

৯.  প্রাগুক্ত।

১০. তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২০৫।

১১. শারহে নাহ্জুল বালাগ্বা,ইবনে আবিল হাদীদ,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৪২।

১২. আল কামিল ফিততারিখ ইবনুল আসির,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৩১৮;তাবাকাতে ইবনে সা দ,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৪৯ ।

১৩. মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৩৫৫;সহী মুসলিম,৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৭৬; আত-তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৪২;সহী বুখারী,১ম খণ্ড,কিতাবুল ওয়াসিয়া অধ্যায়,পৃষ্ঠা-৩৭ ও ৮ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৬১ ।

১৪. তাবাকাতে ইবনে সা দ,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৩৪৩ ।

১৫. তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৪৩১ ।

১৬. তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২১৮-২১৯ ।

১৭. শারহে নাহজুল বালাগ্বা,ইবনে আবিদ হাদীদ,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃষ্ঠা-৭ ।

১৮. প্রাগুক্ত।

১৯. প্রাগুক্ত,পৃষ্ঠা-৯ ।

২০.তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৪৩৩ ।

২১.তারিখে তাবারী,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৫৬৯ । (খন্দক খননের সময় রাসূলের হাদীস)।

২২.ইবনে হাজার তার আল ইছাবাহ্ ফি তাময়িযিস সাহাবাহ গ্রন্থে নবীর (সা.) সাহাবা সংখ্যা ১২২৬৭ জন বলেছেন।

২৩.ডঃ সুবহি সালিহ্ নাহাজুল বালাগ্বার উপর গবেষণা গ্রন্থের ৩২৭ পৃষ্ঠাষ্ঠায় হযরত আলীর (আ.) ২১০ নং খূৎবার আলোচনায় এটি উল্লেখ করেছেন ।

২৪.সূনানে দারেমী,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৬৩,হাদীস নং-১২৪ ।

২৫.আল গাদীর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৯৩ ।

২৬.প্রাগুক্ত।

২৭.সূনানে দারেমী,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৬৭-৬৮,হাদীস নং-১৪৯ ।

২৮.সূরা আবাসা,আয়াত নং-২৭-৩১ ।

২৯. আল ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন,আল্লামা সূয়ূতি,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৪ ।

৩০.সুনানে দারেমী,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৩০ ।

৩১.আত তাবাকাতুল কুবরা,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৮৭ ।

৩২.উসূলুল কাফী,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৪১-২৪২ ।

৩৩.কানযুল উম্মাল,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৭২ । (কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরার নির্দেশ)।

৩৪.কানযুল উম্মাল,১৩তম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১১৪,হাদীস নং-৩৬৩৭২।আত্ তাফসীরুল কবির,৮ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-২১  ان الله اصطفی آدم  এই আয়াতের তাফসীরে দ্রষ্টব্য ।

৩৫.আহকামুল কুরআন,৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৭৭৮,সুরা হাশর দ্রষ্টব্য ।

৩৬.শারহে মায়ানিয়েল আসার,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৪৯৫-৪৯৬,জানাযার তাকবিরের সংখ্যা অধ্যায় দ্রষ্টব্য ।

৩৭.ডঃ মুহাম্মদ হুসাইন যাহাবীর আল ইসরাঈলিয়াত ফিত্ তাফসীর ওয়াল হাদীস গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।

 ৩৮.দেখুন সূরা মায়েদা,আয়াত নং-১৫-১৯ এবং সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং-৬০ ও পরবর্তী আয়াত সমূহ ।

৩৯.সুরা নাসরের তাফসীর দেখুন।

৪০.সুরা তওবা,আযাত নং-৬০ দ্রষ্টব্য।

৪১.সুরা মুনাফেকুনের তাফসীর দেখুন।

৪২.আন্-নেযা ওয়াত্তাখাছুম বাইনা বানি হাশিম ওয়া বানি উমাইয়া গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।

৪৩.সুনানুল কুবরা,আনসারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৪২,হাদীস নং-৮৫০৪,৮৫০৫, ৮৫০৬। আস-সাওয়ায়েকুল মুহরাকাহ,পৃষ্ঠা-১২৮,হাদীস নং-১১।

৪৪.আল-মুস্তাদরাক আল সহীহাইন ৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-১২৫।

৪৫.মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা. ১৭৮,হাদীস নং-৮৮৫।

৪৬.হাদীসে সাকালাইন: সিহাহ,সুনান এবং মাসানীদ রচয়িাতগণ কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ।(দ্র:-সহীহ মুসলিম ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা:১৮৭৩,সহীহ আত  তিরমিযী, ৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৫৯৬ কামাল আল  হুত কর্তৃক গবেষণাকৃত,দারুল ফিকর থেকে মুদ্রিত)

৪৭.হাদীসুল মানযিলাহ: মুসার কাছে হারূনের যেরূপ মর্যাদা সেরূপ তুমি আমার কাছে……( দ্র: সহীহ আল বুখারী,তাবুকের যুদ্ধ,৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৮১,অধ্যায় ৩৯,সুনানে তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৫৯৯,হাদীস নং-৩৭৩১)।

৪৮.হাদীসে গাদীর : (দ্র:সুনানে ইবনে মাজাহ ভূমিকা:অধ্যায় ১১,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৪৩,হাদীস নং-১১৬)মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা: ২৮১,দারুস সাদির বৈরুত থেকে মুদ্রিত।

৪৯.আত্ তাজুল জাম লিল উসুল,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:৩৩০-৩৩৭।

৫০.সিরাতুননাবাবী,ইবনে হিশাম,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:৩১৬-৩১৭।

৫১.মুসনাদে আহমাদ,৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৫৯০,হাদীস নং-১৯৩৪০;আত্ তাজুল জামে লিল উসুল,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:১২৪।

৫২.মুস্তাদরাক আলাস-সাহীহাইন,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:১৬৯;সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:২৫২;আননাছ ওয়াল ইজতিহাদ-আল্লামা শরাফুদ্দিন,২০৮ পৃষ্ঠার পর দেখুন।

৫৩.সহীহ বুখারী,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৩৭,কিতাবুল ইলম অধ্যায় এবং ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা:১৩৭-১৩৮। 

৫৪.আত-তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৪৯-২৫০।

৫৫.কানযুল উম্মাল,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:১৮৬,হাদীস নং-৯৪৪,সুনানুত্ তিরমিযি,৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৬২২,হাদীস নং-৩৭৮৮।

৫৬.আল-মুস্তাদরাকুস সহীহাইন (আল-হাকেম আন নিসাবুরী প্রণীত) ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা:১১৯;আল-হাকেম বলেছেন: শায়খাইন অর্থাৎ ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিমের শর্তে হাদীসে সাকালাইন সহীহ হাদীস। সহীহ মুসলিম ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা:১৮৭৪;সহীহ তিরমিযী,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:১৩০;আস-সুনান আল-কুবরা(ইমাম নাসাঈ প্রণীত)৫ম খণ্ড,পৃষ্ঠা:৬২২;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা:২১৭,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:১৪-১৭;সুনানে আদ-দারেমী ২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা: ৪৩২, পবিত্র কোরানের ফযীলত বা মর্যাদা অধ্যায়,দার ইহয়া ইসসুন্নাহ আন-নাবাবীয়াহ কর্তৃক মুদ্রিত।

৫৭.আল্লামা আমিনী প্রণীত আল-গাদীর গ্রন্থ,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা: ৩১-৩৬;সুনানে ইবনে মাজাহ,১ম খণ্ড,ভূমিকা,১১তম অধ্যায়;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা:২৮১ এবং ৩৬৮ দারুস সাদর কর্তৃক মুদ্রিত।হাদীসে গাদীর শিয়া ও সুন্নি উভয় সূত্রে মুস্তাফিজ হাদীস হিসেবে পরিগণিত। কোন কোন হাদীস বিশেষজ্ঞ গাদীরের হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবার সংখ্যা শতাধিক,তাবেয়ীনের সংখ্যা আশির অধিক এবং দ্বিতীয় শতাব্দির হাদীস বর্ণনাকারী ও রেজালশাস্ত্রবিদগণের মধ্যে ষাটের মত বলে উল্লেখ করেছেন । আল্লামা আমিনীর আল গাদীর গ্রন্থ দ্রষ্টব্য ।

৫৮.তারিখুত তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা: ২০৩ হতে পরবর্তী অংশ।

৫৯.তারিখুত তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা: ৪২৮ হতে পরবর্তী অংশ।

৬০.তারিখুত তাবারী,৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা: ২২৭-২২৮।

৬১.যাখায়েরুল উকবাহ,পৃষ্ঠা.৮২,মানাকিবুল খাওয়ারেজমী,পৃষ্ঠা:৮১,আত্ তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা:৩৩৯।

৬২.তারিখে তাবারী,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৮০।

৬৩.নাহজুল বালাগ্বা,পৃষ্ঠা-৪৯,খুতবা নং-৩,(খুতবায়ে শিক শিকিয়া),তারিখে তাবারী,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-৬৯৬।

৬৪.আল ইহতিজায,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৮৬।

৬৫.উসুলে কফি,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-২৪২,মুমিনদের সংখ্যা স্বল্পতার অধ্যায়।

৬৬.ওয়াসায়েলুশ শিয়া,১৫তম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৫৩,বাব-১৩,হাদীস নং-১১।

৬৭.ইবনে ইদ্রিস প্রণীত আস-সারায়ের,৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা ৫৬৯ এবং ওয়াসায়েলুশ শিয়া,১৫তম খণ্ড,পৃষ্ঠা-৫৪,হাদীস নং-১২।