১৯তম পাঠ
ইমামের ইসমাত ও জ্ঞান
ভূমিকা :
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৬ নং পাঠে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে,শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের কেন্দবিন্দু হল তিনটি। যথা : ইমামকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হতে হবে,সুদৃঢ় ইসমাত বা পবিত্রতার অধিকারী হতে হবে এবং ঐশী জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। দ্বিতীয় খণ্ডের ১৭ নং পাঠে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলাম। ৩৮নং পাঠে পবিত্র ইমামগণের (আ.) মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার স্বপক্ষে কিছু কিছু উদ্ধৃতিগত দলিলের উল্লেখ করা হয়েছিল। আলোচ্য পাঠে এখন আমরা তাদের ইসমাত ও আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করব।
ইমামের ইসমাত :
‘
ইমামত হল আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদা যা মহান আল্লাহ আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ও তার সন্তানদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন’
,তা প্রমাণের পর,তাদের ইসমাতকে নিম্নলিখিত আয়াত থেকে উদ্ভাবন করা যায় :
)
لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ(
আমার প্রতিশ্রুতি সীমালংঘনকারীদের জন্যে প্রযোজ্য নয়। (সূরা বাকারা-১২৪)
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যে,আল্লাহ প্রদত্ত এ মর্যাদা তাদের জন্যেই যারা গুনাহ দ্বারা কলুষিত নন।
অনুরূপ সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে উল্লেখিত‘
ঊলূল আমর’
প্রাসঙ্গিক আয়াতটি যাতে তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য অপরিহার্য বলা হয়েছে এবং এ আনুগত্যকে রাসূল (সা.)-এর আনুগত্যের শামিল করা হয়েছে সে আয়াতটি থেকে আমরা দেখতে পাই যে,তাদের আনুগত্য মহান আল্লাহর আনুগত্যের সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না। অতএব তাদের নিঃশর্ত আনুগত্যের নির্দেশ তাদের ইসমাতের নিশ্চয়তারই অর্থ বহন করে।
একইভাবে আহলে বাইত (আ.)-এর ইসমাতকে আয়াতে তাতহিরের মাধ্যমেও প্রমাণ করা যায়। পবিত্র কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে :
)
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا(
হে নবীর আহলে বাইত! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের হতে সকল অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব-৩৩)
বান্দাগণের পবিত্রতার ব্যাপারে আল্লাহর বিধিগত ইরাদা কারো জন্যে নির্ধারিত নয়। সুতরাং আল্লাহর যে ইরাদা আহলে বাইতগণের (আ.) জন্যে নির্ধারিত হয়েছে,প্রকৃতপক্ষে তা হল প্রভুর সুনির্ধারিত ইরাদা,যা অপরিবর্তনীয়;যেমনটি বলা হয় :
)
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ(
তার ব্যাপার শুধু এই,তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন,তিনি তাকে বলেন হও,ফলে তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন-৮২)
আর চূড়ান্তরূপে পবিত্রকরণ ও সকল প্রকার কদর্য কলুষতা থেকে মুক্ত করণের অর্থই হল পবিত্রতা। অপরদিকে আমরা জানি যে,শিয়া সম্প্রদায় ব্যতীত মুসলমানদের কোন সম্প্রদায়ই রাসূল (সা.)-এর কোন নিকটাত্মীয়ের পবিত্রতার দাবি তুলে না। শিয়া সম্প্রদায় নবী কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) এবং দ্বাদশ ইমামের পবিত্রতায় বা ইসমাতে বিশ্বাস করে।
উল্লেখ্য যে,সত্তরাধিক রেওয়ায়েত (যে গুলোর অধিকাংশই আহলে সুন্নাতের আলেমগণ বর্ণনা করেছেন) প্রমাণ করে যে,এ আয়াতটি‘
পাক পাঞ্জাতনের’
মর্যাদায় নাযিল হয়েছে।
শেখ সাদুক,আমীরুল মু’
মিনিন (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : হে আলী! এ আয়াতটি তোমার,হাসান,হুসাইন এবং তার বংশের ইমামদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলাম : আপনার পর কয়জন ইমাম রয়েছেন ? জবাবে তিনি বললেন : হে আলী! তুমি অতঃপর হাসান,অতঃপর হুসাইন,অতঃপর তার সন্তান আলী,অতঃপর তার সন্তান মুহাম্মদ,অতঃপর তার সন্তান জা’
ফর,অতঃপর তার সন্তান মুসা,অতঃপর তার সন্তান আলী,অতঃপর তার সন্তান মুহাম্মদ,অতঃপর তার সন্তান আলী,অতপর তার সন্তান হাসান এবং তৎপর তার সন্তান আল্লাহর হুজ্জাত (আলাইহিমুস সালাম আজমাইন)।
অতঃপর মহানবী (সা.) বললেন : এ রূপেই তাদের নাম আল্লাহর আরশের পাতায় লিখা আছে এবং আমি মহান আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে,এগুলো কাদের নাম ? তিনি বললেন : হে মুহাম্মদ তোমার পর তারা হলেন ইমাম,তারা মাসুম ও পবিত্র হয়েছেন এবং তাদের শত্রুরা আমা কর্তৃক অভিশম্পাত প্রাপ্ত হবে।
অনুরূপ‘
হাদীসে সাকালাইন’
যাতে মহানবী (সা.) তার আহলে বাইত ও ইতরাতকে কোরানের সমকক্ষরূপে স্থান দিয়েছেন এবং এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে,কখনোই তারা (অর্থাৎ কোরান ও ইতরাত) পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না,সেটিও তাদের ইসমাতের স্বপক্ষে একটি সুস্পষ্ট দলিল। কারণ ক্ষুদ্রতম কোন পাপে লিপ্ত হওয়ার মানে (এমনকি ভুলক্রমেও যদি হয়ে থাকে) কার্যক্ষেত্রে কোরান থেকে তাদের পৃথক হওয়া।
ইমামের জ্ঞান :
নিঃসন্দেহে নবী (সা.)-এর আহলে বাইত (আ.) তার জ্ঞান থেকে অন্য সকলের চেয়ে অধিকতর লাভবান হয়েছিলেন। তাই তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন,
لا تعلموهم فانّهم اعلم منکم
তাদেরকে অনুধাবন করা যায় না সুতরাং নিশ্চয়ই তারা তোমাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী ।
বিশেষকরে স্বয়ং আলী (আ.) যিনি শৈশব থেকেই রাসূল (সা.)-এর আশ্রয়ে পরিচর্যিত হয়েছেন এবং হযরত (সা.) এর জীবনের অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত তার সংস্পর্শে থেকে সর্বদা জ্ঞান অর্জনে নিয়োজিত ছিলেন। মহানী (সা.) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেন :
انا مدینة العلم و علیّ بابها
আমি জ্ঞানের শহর আর আলী হল তার দ্বার ।
অপরদিকে স্বয়ং আমীরুল মু’
মিনিন (আ.) থেকেই বর্ণিত হয়েছে :
ان رسول الله صلی الله علیه و اله-علمنی الف باب و کلّ باب یفتح الف باب فذالک الف الف باب حتی علمت ما کان و ما یکون الی یوم القیامة و علمت علم المنایا و البلایا وفصل الخطب
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (সা.) জ্ঞানের সহস্রটি দ্বার আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যাদের প্রতিটি আবার সহস্র দ্বারে উন্মুক্ত হয়,ঐগুলোর প্রতিটি এভাবে সহস্র সহস্র দ্বারে উন্মুক্ত হয়,এমনকি আমি জানি,যা ছিল এবং ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত যা হবে তাও এবং আমি শিখেছি মৃত্যুসমূহ (منایا
) এবং বিপদ-আপদসমূহ (بلایا
) এবং প্রকৃত বিচারের (فصل الخطب
) জ্ঞান।
কিন্তু ইমামগণের (আ.) জ্ঞান,নবী (সা.)-এর নিকট থেকে (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে) শ্রুত জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। বরং তারা এক প্রকার অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন যা,ইলহাম ও তাহদীসরূপে তাদেরকে প্রদান করা হয়েছিল।
এ ধরনের ইলহামা হযরত খিজর ও যুলকারনাইন
এবং হযরত মারিয়াম ও মূসা (আ.) এর মায়ের প্রতি
করা হয়েছিল। এগুলোর কিছু কিছু পবিত্র কোরানে ওহী নামে উল্লেখিত হয়েছে। তবে এর অর্থ নবুয়্যতের ওহী নয়। আর এ ধরনের জ্ঞানের ফলেই পবিত্র ইমামগণের কেউ কেউ শৈশবেই ইমামতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন ও সকল কিছু জ্ঞাত ছিলেন এবং অন্য কারও নিকট জ্ঞানার্জন ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তাদের ছিল না।
এ বিষয়টি স্বয়ং পবিত্র ইমামগণ (আ.) থেকে বর্ণিত অসংখ্য রেওয়ায়েত থেকে (এবং তাদের প্রমাণিত ইসমাত ও হুজ্জিয়াতের কথা বিবেচনা করে) প্রমাণিত হয়। এগুলোর কোন কোনটির উপর আলোকপাত করার পূর্বে পবিত্র কোরানের এমন একটি আয়াতের উল্লেখ করব যাতে মহানবী (সা.) এর সত্যবাদিতার সাক্ষ্যস্বরূপ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকেمن عنده علم الکتاب
( যার নিকট রয়েছে কিতাবের জ্ঞান) বলে পরিচয় দেয়া হয়েছে । আয়াতটি হল :
(
قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ)
বলুন,আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে,তারা আমার এবং তোমাদের মধ্যে সাক্ষি হিসাবে যথেষ্ট। (সূরা রা’
দ-৪৩)
নিঃসন্দেহে এমন কেউ যার সাক্ষী মহান আল্লাহর সাক্ষীর নিকটবর্তী বলে পরিগণিত হয়েছে এবং কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী হওয়া,যাকে এরূপ সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা দিয়েছে তিনি মহা মর্যাদাপূর্ণ স্থানের অধিকারী।
অপর একটি আয়াতেও এ সাক্ষীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে রাসূল (সা.) এর পদাংকানুসারীরূপে গণনা করা হয়েছে :
)
أَفَمَنْ كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّهِ وَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ مِنْهُ(
তারা কি তাদের সমতুল্য যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর,যার অনুসরণ করে তার প্রেরিত সাক্ষি । (সূরা হুদ-১৭)
আরمنه
(মিনহু) শব্দটি প্রমাণ করে যে,এ সাক্ষী হলেন নবী (সা.) এর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং তারই আহলে বাইত। শিয়া ও সুন্নী উৎসের একাধিক রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণিত হয় যে,এ সাক্ষী হলেন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)।
উদাহরণস্বরূপ উল্লেখযোগ্য,ইবনে মু’
যিল শাফিয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন : একদা ইমাম বাক্বির (আ.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম,যখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের (আহলে কিতাবের আলেমদের মধ্যে এক ব্যক্তি,যিনি রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন) পুত্র অতিক্রম করছিল। হযরত বাক্বির (আ.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম :
من عنده علم الکتاب
(অর্থাৎ যার নিকট কিতাবের জ্ঞান রয়েছে) কি ঐ ব্যক্তির পিতাকে বুঝানো হয়েছে ? জবাবে তিনি বললেনঃ না,বরং আলী ইবনে আবি তালিবকে (আ.) বুঝানো হয়েছে। তেমনিوَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ
مِنْهُ
(অর্থাৎ যার অনুসরণ করে তার প্রেরিত সাক্ষী) এবংانما ولیکم
(অর্থাৎ নিশ্চয় তোমাদের ওয়ালী) (সূরা মায়িদাহ -৫৫) আয়াতদ্বয়ও তার সম্মানে নাযিল হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎস থেকে বর্ণিত একাধিক রেওয়ায়েত থেকে পাওয়া যায় যে,সূরা হুদে উল্লেখিতشاهد
(শাহিদ) হলেন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)।
তদুপরিمنه
(মিনহু) এর উল্লেখিত বিশেষত্বের আলোকে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,এর দৃষ্টান্ত আলী (আ.) ব্যতীত আর কেউ নন।
কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার গুরুত্ব তখনই সুস্পষ্ট হয়,যখন হযরত সোলাইমান (আ.)-এর সময় বিলক্বিসের সিংহাসন আনয়নের ঘটনা পবিত্র কোরানে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে,তার প্রতি মনোযোগ দেয়া হয় :
)
قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ(
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল,সে বলল,‘
আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দিব। (সূরা নামল-৪০)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে,কিতাবের কিছু অংশের জ্ঞান থাকার ফলেই এ ধরনের বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এথেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে,সমগ্র কিতাবের জ্ঞান কি ধরনের গুরুতর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে ! আর এটি হল তা-ই যা ইমাম সাদিকে (আ.) থেকে সুদাইর বর্ণনা করেছিলেন।
সুদাইর বলেন : আমি আবু বাসির,ইয়াহ্ইয়া বায্যায এবং দাউদ ইবনে কাছির,ইমাম সাদিক (আ.)-এর সভায় উপস্থিত ছিলাম;হযরত ক্রোধপূর্ণ অবস্থায় সভাস্থলে প্রবেশ করলেন এবং আসন গ্রহণান্তে বললেন : আশ্চর্য হই ঐ সকল লোকদের জন্যে,যারা মনে করে যে,আমরা অদৃশ্য-জ্ঞানের অধিকারী অথচ মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন। আমি চেয়েছিলাম আমরা দাসীকে ভর্ৎসনা করব কিন্তু সে পলায়ন করেছে এবং আমি জানিনা কোন কক্ষে গিয়েছে।
সুদাইর বলেন : যখন হযরত গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশে উদ্যত হলেন,আমি আবু বাসীর এবং মাইসার,তার সাথে গেলাম এবং সবিনয়ে নিবেদন করলাম : আমরা আপনার জন্যে উৎসর্গ হব,দাসী সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি আমরা অনুধাবন করেছি;আমরা বিশ্বাস করি যে,আপনি অপরিসীম জ্ঞানের অধিকারী । কিন্তু কখনোই আপনার অদৃশ্য জ্ঞানের ব্যাপারে দাবি করি না।
হযরত বললেন : ওহে সুদাইর তুমি কি কোরান পড়নি ? বললাম : পড়েছি। তিনি বললেন : এ আয়তটি পড়নি ?
(
قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ)
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল,সে বলল,‘
আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দিব। ।
জবাবে বললাম : অপনার জন্যে আমার জীবন উৎসর্গ হোক,পড়েছি।
তিনি বললেন : তুমি জান,ঐ ব্যক্তি কিতাবের জ্ঞানের কতটুকু অবহিত ছিল ? জবাবে নিবেদন করলামঃ অনুগ্রহপূর্বক আপনিই বলুন। তিনি বললেন : প্রশস্ত সমুদ্রের এক বিন্দু পরিমাণ! অতঃপর বললেন : এ আয়াতটি কি পড়েছ ?
)
كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ(
বলুন,আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে,তারা আমার এবং তোমাদের মধ্যে সাক্ষি হিসাবে যথেষ্ট। বললাম : জী হ্যাঁ। পুনরায় তিনি বললেন : যিনি সমস্ত কিতাবের জ্ঞান রাখেন তিনি অধিক জ্ঞানী,না যিনি কিতাবের স্বল্প কিছু জ্ঞানের অধিকারী। বললাম,যিনি সমস্ত কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী!
অতঃপর স্বীয় বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে ইমাম (আ.) বললেন : আল্লাহর শপথ সমস্ত কিতাবের জ্ঞান আমাদের কাছে বিদ্যমান আল্লাহর শপথ সমস্ত কিতাবের জ্ঞান আমাদের নিকট বিদ্যমান।
এখন আহলে বাইতের (আ.) জ্ঞান প্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েত থেকে আর একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করব।
হযরত ইমাম রেজা (আ.) ইমামতের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলেছিলেন : যখন মহান আল্লাহ কাউকে (ইমামরূপে) মানুষের জন্যে নির্বাচন করেন,তখন তাকে হৃদয়ের প্রশস্ততা প্রদান করেন প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারা তার হৃদয়ে স্থাপন করেন এবং তার প্রতি জ্ঞান ইলহাম করেন যাতে কোন প্রশ্নের উত্তর প্রদানেই অক্ষমতা প্রকাশ না করেন এবং সত্যকে শনাক্তকরণে বিব্রত না হন। অতএব তিনি পবিত্র এবং আল্লাহর অনুগ্রহ,অনুমোদন ও রক্ষণাবেক্ষণে সকল প্রকার ভুল-ত্রুটি থেকে নিরাপদে থাকবেন। মহান আল্লাহ তাকে এ বৈশিষ্ট্যগুলো দান করেন,যাতে তার বান্দাদের জন্যে চূড়ান্ত প্রমাণ ও সাক্ষি হতে পারেন। আর এটি হল মহান আল্লাহরই অনুগ্রহ,যা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন।
অতঃপর তিনি বললেন : মানুষ কি এমন কাউকে শনাক্ত ও নির্বাচন করতে সক্ষম ? তাদের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তি কি এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ?
এছাড়া হাসান ইবনে ইয়াহ্ইয়া মাদায়েনী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট সবিনয়ে নিবেদন করেছিলাম : যখন ইমামের (আ.) নিকট কোন প্রশ্ন করা হয়,তখন তিনি কিরূপে (কোন জ্ঞানের মাধ্যমে) এর জবাব প্রদান করেন ? জবাবে বললেন : কখনো কখনো তার প্রতি ইলহাম হয়,কখনো কখনো তিনি ফেরেস্তা হতে শুনে থাকেন আবার কখনোবা উভয় প্রক্রিয়ায়।
অপর এক রেওয়ায়েতে ইমাম সাদিক (আ.) বলেন : যদি কোন ইমাম না জানেন যে,তার উপর কী সংকট আপতিত হবে,তার কর্ম কোথায় সম্পন্ন হবে,তবে সে ইমাম মানুষের জন্যে আল্লাহর হুজ্জাত হতে পারে না।
অনুরূপ ইমাম সাদিক (আ.) কর্তৃক আরও বর্ণিত হয়েছে : যখন ইমাম কোন কিছুকে অনুধাবন করতে চান ,তখন মহান আল্লাহ তাকে তা অবহিত করেন।
এছাড়া একাধিক রেওয়ায়েতে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,তিনি বলেন : রূহ এমন এক সৃষ্টি,যা জিব্রাঈল ও মিকাঈল (আ.) অপেক্ষা সমুন্নত। আর তা মহানবী (সা.)-এর নিকট ছিল এবং তার পরে ইমামগণের (আ.) নিকট বিদ্যমান থেকে তাদেরকে সংরক্ষণ করে।