আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)0%

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: কিয়ামত

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 12783
ডাউনলোড: 3251

পাঠকের মতামত:

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 33 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 12783 / ডাউনলোড: 3251
সাইজ সাইজ সাইজ
আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

২০তম পাঠ

কয়েকটি সমস্যার সমাধান

শাফায়াত সম্পর্কে একাধিক সমস্যা ও প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। আমরা আলোচ্য পাঠে এ অনুপপত্তিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটির উপস্থাপন ও জবাব দেয়ার চেষ্টা করব।

অনুপপত্তি ১ : পবিত্র কোরানের বেশ কিছু আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে,ক্বিয়ামতের দিবসে কারও সম্পর্কেই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। যেমন :

) وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(

তোমরা সেইদিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারও কোন কাজে আসবে না এবং কারও সুপারিশ স্বীকৃত হবে না এবং কারও নিকট হতে ক্ষতিপুরণ গৃহিত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্য পাবে না । (বাকারা-৪৮ )

জবাব : প্রাগুক্ত ধরনের আয়াতসমূহ স্বাধীন ও শর্তহীন শাফায়াতকে অস্বীকার করণার্থে অবতীর্ণ হয়েছিল,যাতে কেউ কেউ বিশ্বাসী ছিল। এ ছাড়া উল্লেখিত আয়াতটি হল সর্ব সাধারণ অর্থের অধিকারী,যা আল্লাহর অনুমতিক্রমে ও নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে,শাফায়াতের স্বপক্ষে বর্ণিত আয়াতসমূহ কর্তৃক সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে;যেমনটি পূর্ববর্তী পাঠে ইঙ্গিত করা হয়েছে ।

অনুপপত্তি-২ : শাফায়াতের বৈধতার অপরিহার্য অর্থ হল,মহান আল্লাহ শাফায়াতকারীগণ কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে থাকেন। অর্থাৎ তাদের শাফায়াতই ক্ষমা লাভের (যা একমাত্র মহান আল্লাহরই অধিকার) কারণ হয়ে থাকবে।

জবাব : শাফায়াত বা সুপারিশ গ্রহণ করার অর্থ প্রভাবিত হওয়া নয়। যেমন : তওবাহ্ ও দোয়া কবুলকরণের সাথে এ ধরনের আবশ্যকতা বিবেচনা করা সঠিক নয়। কারণ এ বিষয়গুলোর মধ্যে সবকটি ক্ষেত্রেই বান্দাদের কর্মই আল্লাহর করুণা বা রহমত বর্ষণের ক্ষেত্র প্রস্তত করে। অর্থাৎ— পারিভাষিক অর্থে বলা হয় : যোগ্যের যোগ্যতার শর্তাধীন,কর্তার কর্তৃতের শর্তাধীন নয়।”

অনুপপত্তি-৩ : শাফায়াতের অপরিহার্য অর্থ হল এই যে,শাফায়াতকারীগণ মহান আল্লাহ অপেক্ষা বেশী দয়ালু ! কারণ ধারণা করা হয় যে,যদি তাদের শাফায়াত না থাকত,তবে পাপীরা আযাবে পতিত হত কিংবা তাদের প্রতি আযাব অব্যাহত থাকত ।

জবাব : শাফায়াতকারীগণের দয়া বা করুণা হল মহান আল্লাহরই অসীম রহমতের আলোকচ্ছটা অর্থাৎ শাফায়াত হল,এমন এক মাধ্যম,যা মহান আল্লাহ স্বয়ং তার পাপিষ্ঠ বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্যে নির্ধারণ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে শাফায়াতের অবস্থান হল প্রভুর করুণাময় জ্যোতির শীর্ষতম পর্যায়ে,যা তার নির্বাচিত ও যোগ্য বান্দাগণের মাধ্যমে প্রকাশ লাভ করে। যেমন : দোয়া,তাওবাহ্ ও চাহিদার যোগানও ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্য এক মাধ্যম,যা মহান আল্লাহই মানুষের জন্যে উম্মুক্ত রেখেছেন ।

অনুপপত্তি-৪ : অপর একটি সমস্যা হল এই যে,যদি পাপিষ্ঠদের শাস্তির ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ প্রভুর ন্যায়পরায়ণতার দাবী হয়ে থাকে,তবে তাদের (পাপিষ্ঠদের) সুপারিশ গ্রহণ করা হল ন্যায়পরায়ণতার ব্যতিক্রম। যদি শাস্তি থেকে অব্যাহতি দান (যা শাফায়াত গ্রহনের ফল) ন্যায়ভিত্তিক হয়ে থাকে,তবে শাস্তির আদেশ (যা শাফায়াতের পূর্বে ছিল) হবে অন্যায় কর্ম।

জবাব : প্রভুর প্রত্যেকটি আদেশই (হোক সে শাস্তি শাফায়াতের পূর্বে কিংবা হোক সে শাফায়াতের পর শাস্তি থেকে মুক্তি দান) ন্যায় ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী হয়ে থাকে এবং উভয় ক্ষেত্রেই প্রজ্ঞা ও ন্যায়ভিত্তিক হওয়ার অর্থ পরস্পর বিপরীতের সমম্বয় নয়। কারণ ঐগুলোর উদ্দেশ্য (موضوع ) বা ক্ষেত্র স্বতন্ত্র। অর্থাৎ শাস্তির আদেশ হল,গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ফল,যা গুণাহগারদের ক্ষেত্রে শাফায়াত ও এর গ্রহণযোগ্যতার কারণের দাবীকে অগ্রাহ্য বা বিবেচনা না করে প্রদান করা হয়। আর শাস্তি থেকে অব্যাহতি প্রদান হল উল্লেখিত কারণের দাবীর বহিঃপ্রকাশ। তা ছাড়া উদ্দেশ্যের (موضوع ) পরিবর্তনে বিধেয়ের (حکم ) পরিবর্তনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমরা প্রকৃতি জগতে সৃষ্টির নিয়মে ও বিধিগত নিয়মে লক্ষ্য করে থাকি। অনুরূপ যথাসময়ে রহিত আদেশের ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারটি রহিতকরণের পর রহিতকারী আদেশের ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার সাথে কোন বিরোধ রাখে না। তদনুরূপ দোয়া বা সদকার পূর্বে বালা বা দুর্যোগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাময়তা,দোয়া বা সাদকার পর তা অপসৃত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাময়তার সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না।

সুতরাং শাফায়াতের পর পাপের ক্ষমাকরণও,শাফায়াতের পূর্বে শাস্তির আদেশের সাথে কোন বিরোধ রাখে না।

অনুপপত্তি-৫ : মহান আল্লাহ শয়তানের অনুসরণকেই অপ্রত্যাশিত নরকযন্ত্রণা ভোগের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন । যেমন :

) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ(

বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা থাকবে না;অবশ্যই তোমার অনুসারীদের সকলেরই নির্ধারিত স্থান হবে জাহান্নাম। ( হিজর- ৪২,৪৩ )

প্রকৃতপক্ষে পরকালে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান,প্রভুর নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত এবং প্রভুর নিয়মের কোন পরিবর্তন নেই। যেমন : পবিত্র কোরানে বলা হয় :

) فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَحْوِيلًا(

কিন্তু তুমি আল্লাহর বিধানের কখনো কোন পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহর বিধানের কোন ব্যতিক্রমও দেখবে না। (ফাতির- ৪৩)

অতএব শাফায়াতের মাধ্যমে কিরূপে প্রভুর এ নিয়ম ভঙ্গ করা সম্ভব ?

জবাব : পাপীদের জন্যে শাফায়াতগ্রহণ করা মহান আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মেরই অন্তর্ভূক্ত। এর ব্যাখ্যা হল : প্রভুর নিয়ম বাস্তব মানদণ্ড ও মাপকাঠির অনুগামী এবং কোন নিয়মই এর বিদ্যমানতা ও অবিদ্যমানতার শর্ত ও কারণের উপস্থিতিতে পরিবর্তন যোগ্য নয়। কিন্তু যে সকল বক্তব্য এ সকল নিয়মের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে,সে গুলো সাধারণতঃ উদ্দেশ্যের (موضوع ) বিভিন্ন শর্তের অবতারণা সর্বদা করে না। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে এমনটি দেখতে পাওয়া যায় যে,সংশ্লিষ্ট আয়াতের অর্থে একাধিক নিয়মের কথা উল্লেখ থাকে,যদিও প্রকৃতপক্ষে আয়াতের দৃষ্টান্ত হল স্বতন্ত্রতম কোন বিষয়,যা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী মানদণ্ডের অনুগামী। অতএব সকল নিয়মই এর উদ্দেশ্যের বাস্তব শর্তের ভিত্তিতে (কেবলমাত্র ঐ সকল শর্তসাপেক্ষেই নয় যা বক্তব্য বা বিবৃতিতে এসেছে) অপরিবর্তনশীল ও অনঢ় । যেমন : শাফায়াত,যা বিশেষ ধরনের পাপীদের ক্ষেত্রে অপরিবর্তনীয় ও অলংঘনীয় নিয়ম,যারা নির্দিষ্ট শর্তের অধিকারী ও নির্দিষ্ট মানদণ্ডের আওতাধীন ।

অনুপপত্তি -৬ : শাফায়াতের প্রতিশ্রুতি,বিচ্যুতি ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের ঔদ্ধত্য ও সাহস বৃদ্ধি করে ।

জবাব : এ সমস্যাটি,তাওবা গ্রহণ ও পাপ মোচনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর জবাব হল : শাফায়াত ও ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত হওয়া এমন কিছু শর্তের শর্তাধীন যে,পাপাচারী ঐগুলো অর্জনের ব্যাপারে নিশ্চিত আস্থা জ্ঞাপন করতে পারে না। যেমন : শাফায়াতের শর্তসমূহের মধ্যে একটি হল এই যে,ব্যক্তি জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত স্বীয় বিশ্বাস বা ঈমানের সংরক্ষণ করবে। আর কারো পক্ষেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। অপর দিকে যে ব্যক্তি কোন পাপাচারে লিপ্ত হল,যদি সে তার জন্যে ক্ষমা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রত্যাশাই না করতে পারে,তবে সে হতাশা ও নিরাশার জালে ধরা পড়বে। আর এ হতাশাই তার পাপকর্ম পরিত্যাগের প্রবণতাকে দুর্বল করে,তাকে বিচ্যুতি ও ভ্রান্তির পথে পরিচালিত করবে। এ কারণেই আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত শিক্ষকগণের পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণের নিয়ম হল,মানুষকে সর্বদা আশা ও ভয়ের মাঝে রাখা - কেবলমাত্র রহমত ও করুণার ব্যাপারে আশস্ত না করা,যার ফলে সে প্রভুর রোষানল থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে কিংবা কেবলমাত্র আযাবের ভয় প্রদর্শন না করা,যা প্রভুর করুণা থেকে তাদেরকে নিরাশ করে ফেলবে। আর আমরা জানি যে,প্রভুর রহমত থেকে নিরাশ ও হতাশ হওয়া মহাপাপ বলে পরিগণিত হয় ।

অনুপপত্তি-৭ : শাস্তি থেকে মুক্তিদানের ক্ষেত্রে শাফায়াতের ভূমিকার অর্থ হল সৌভাগ্য ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তির ব্যাপারে অপরের (শাফায়াতকারী) কর্মের প্রভাব। অথচ নিম্নল্লিখিত আয়াত থেকে আমরা দেখতে পাই যে,একমাত্র স্বীয় চেষ্টা ও শ্রমই,ব্যক্তিকে সৌভাগ্যশালী করে।

( وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى)

এবং নিশ্চয়ই মানুষের জন্যে তার শ্রম ব্যতীত কিছুই নেই।

জবাব : লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে ব্যক্তির প্রচেষ্টা ও শ্রম কখনো কখনো প্রত্যক্ষভাবে সম্পন্ন হয় এবং পথের প্রান্তরেখা পর্যন্ত চলতে থাকে। আবার কখনো কখনো পরোক্ষভাবে সম্পন্ন হয় এবং শর্ত ও মাধ্যমের যোগান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যে ব্যক্তি শাফায়াত লাভের অন্তর্ভুক্ত হয়,সে-ও সৌভাগ্যের সোপানে উন্নীত হওয়ার জন্যে প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে থাকে। কারণ ঈমান আনা ও শাফায়াতলাভের শর্তাধীন যোগ্যতা অর্জন করা,সৌভাগ্যের পথে পৌঁছার জন্যে প্রচেষ্টা বলে পরিগণিত হয়,যদিও হোক সে প্রচেষ্টা আংশিক ও অপ্রতুল। আর এ কারণেই (কোন কোন শাফয়াতলাভকারী) বারযাখ ও পুনরুত্থানের ময়দানে কিছুটা কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করবে। কিন্তু যে কোন ভাবেই হোক না কেন,স্বয়ং ব্যক্তিই সৌভাগ্যের মূল,স্বীয় হৃদয়পটে বপন করেছে এবং কখনো কখনো স্বীয় সুকর্মের মাধ্যমে তাতে পানি সরবরাহ করেছে,যাতে পার্থিব জীবনের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত তা শুকিয়ে না যায়। অতএব চূড়ান্ত সৌভাগ্য,তার শ্রম ও প্রচেষ্টার সাথেই সম্পর্কিত,যদিও শাফায়তকীরগণও ঐ বৃক্ষকে ফলপ্রসূকরণের ক্ষেত্রে এক প্রকার ভূমিকা রেখে থাকেন। যেমন : এ পৃথিবীতেও কেউ কেউ অপরের হিদায়াত ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে থাকেন। কিন্তু তাই বলে তাদের ভূমিকা ব্যক্তির প্রচেষ্টা ও শ্রমকে অগ্রাহ্য করে না।

সমাপ্ত