পুনরুত্থানকে অস্বীকার করা অযৌক্তিক
:
কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোরানের যুক্তি প্রদর্শনের একটি পদ্ধতি হল,তাদেরকে তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শনের আহ্বান জানানো। যাতে প্রমাণিত হয় যে,তাদের বিশ্বাসের কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। যেমন : কয়েকটি আয়াতে এসেছে :
)
قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ(
(হে নবী) বল,তোমাদের দলিল উপস্থাপন কর। (সূরা বাকারা-১১১,সূরা আম্বিয়া-২৪,নামল-৬৪)
এ ধরনেরই অপর কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে এ ভাবে বলা হয়েছে যে,এ ভ্রান্ত ধারণা পোষণকারীদের কোন বাস্তব জ্ঞান ও বিশ্বাস বা যুক্তি নেই। বরং তারা অযৌক্তিক ও অবাস্তব ধারণা ও কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে পবিত্র কোরানের বক্তব্য :
)
وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ(
তারা বলে,‘
একমাত্র পার্থিব জীবন ব্যতীত আমাদেরকে এমন কোন জীবন নেই যে,আমরা মৃত্যুবরণ করব ও জীবিত হব এবং কাল ব্যতীত কিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করে না। বস্তুতঃ এই ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই,তারা তো কেবলমাত্র মনগড়া কথা বলে। (জাসিয়া-২৪)
অনুরূপ অপর কিছু আয়াতে এ বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে,পুনরুত্থানের অস্বীকৃতি অযৌক্তিক ও অনর্থক ধারণা বৈ কিছুই নয়।
তবে অযৌক্তিক ধারণাসমূহ যখন কুমন্ত্রণার অনুগামী হয়,তখন সম্ভবতঃ কুপ্রবৃত্তিরর অনুসারীদের নিকট তা সমাদৃত হয়ে থাকে
এবং এর ফলশ্রুতিতে পাপাচারে লিপ্ত হওয়া তাদের জন্যে নিশ্চিত রূপ লাভ করে।
এমনকি তখন ব্যক্তি এ ধরনের বিশ্বাসের উপর দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।
পবিত্র কোরানে,পুনরুত্থানকে প্রত্যাখ্যানকারীদের বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। এ গুলোর অধিকাংশেরই মূলবক্তব্য,পুনরুত্থানকে অসম্ভব বলে মনেকরণ ব্যতীত কিছুই নেই। কিছু কিছু আবার তাদের দূর্বল ধারণার প্রতি ইঙ্গিত করেছে,যেগুলো পুনরুত্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কে সন্দেহ ও এর অসম্ভাব্যতার ধারণার উৎস ।
ফলে একদিকে যেমন পুনরুত্থানের সদৃশ ঘটনাসমূহকে স্মরণ করা হয়েছে,যাতে অসম্ভাব্যতার ধারণা বিদূরিত হয়।
অপরদিকে তেমনি ভ্রান্ত ধারণাগুলোর জবাব দেয়া হয়েছে,যাতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ না থাকে এবং পুনরুত্থান সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা পরিপূর্ণরূপে প্রতিপাদিত হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বরং‘
প্রভুর এ প্রতিশ্রুতি অবশ্যম্ভাবী’
এ কথা প্রমাণের পাশাপাশি,মানুষের জন্যে চূড়ান্ত দলিল উপস্থাপনের জন্যে ওহীর মাধ্যমে পুনরুত্থানের আবশ্যকতার উপর বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে। পরবর্তী পাঠে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ।
পুনরুত্থানের সদৃশ ঘটনাবলী :
ক) উদ্ভিদের উদগতিঃ
মৃত্যুর পর মানুষের জীবন লাভের ঘটনা,মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীতে শুষ্ক ও মৃত উদ্ভিদের উদগতির মত। ফলে মৃত্যুর পরে নিজেদের জীবন লাভের সম্ভাবনা অনুধাবনের জন্যে এ ঘটনার উপর চিন্তা করাই যথেষ্ট,যা সকল মানুষের চোখের সম্মুখে অহরহ ঘটে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনাটিকে একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করা এবং এর গুরুত্বকে বিস্মৃত হওয়ার যে কারণ তা হল,এ ঘটনাগুলোর পর্যবেক্ষণে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। নতুবা নতুন জীবন লাভের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের সাথে মৃত্যুর পরে মানুষের জীবনলাভের কোন পার্থক্য নেই।
পবিত্র কোরানে এ নিত্য ঘটমান ঘটনাটির পর্যবেক্ষণের জন্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ও মানুষের পুনরুত্থানকে এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
যেমন বলা হয়েছে :
)
فَانظُرْ إِلَىٰ آثَارِ رَحْمَتِ اللَّـهِ كَيْفَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
إِنَّ ذَٰلِكَ لَمُحْيِي الْمَوْتَىٰ
وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(
আল্লাহর অনুগ্রহের ফলশ্রুতি সম্পর্কে চিন্তা কর,কিভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর এটাকে
পূনর্জীবিত করেন;এ ভাবেই আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন,কারণ তিনি সর্ববিষয়ে
সর্বশক্তিমান। (রূম-৫০)
খ) আসহাবে কাহফের নিদ্রা :
পবিত্র কোরান অসংখ্য শিক্ষণীয় বিষয়সম্বলিত আসহাবে কাহফের বিস্ময়কর কাহিনী বর্ণনা করার পর বলে :
)
وَكَذَٰلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّـهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا
(
এবং এভাবে আমি মানুষকে তাদের (আসহাবে কাহ্ফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে,আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামত যে সংঘটিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। (কাহ্ফ-২১)
এ ধরনের বিস্ময়কর সংবাদ যে,মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি কয়েকশতাব্দী (তিনশত সৌর বর্ষ বা তিনশত চন্দ্র বর্ষ) ধরে নিদ্রিত ছিলেন;অতঃপর জাগ্রত হয়েছেন,নিঃসন্দেহে তা পুনরুত্থানের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও এর অসম্ভাব্যতাকে দূরীভূত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কারণ প্রতিটি নিদ্রায়ই মৃত্যুসম (নিদ্রা মৃত্যুর ভাই) প্রতিটি জাগরনই মৃত্যু পরবর্তী জীবন সমতুল্য হলেও সাধারণ নিদ্রায় শরীরের জৈবিক (Biologic
) প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহত থাকে;ফলে রূহের প্রত্যাবর্তন কোন আকস্মিক ঘটনা বলে মনে হয় না। কিন্তু যে শরীর তিনশত বছর ধরে কোন প্রকার খাদ্যোপাদান গ্রহণ করেনি প্রকৃতির প্রচলিত নিয়মানুসারে সে শরীর মৃত্যু বরণ করতঃ বিনষ্ট হতে বাধ্য এবং রূহের প্রত্যাবর্তনের জন্যে স্বীয় যোগ্যতা ও প্রস্তুতি হারাতে বাধ্য। অতএব এ ধরনের অলৌকিক ঘটনাই এ স্বাভাবিক নিয়মের উর্ধ্বে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। ফলে মানুষ অনুধাবন করতে পারবে যে,দেহে রূহের প্রত্যাবর্তন সর্বদা এ সাধারণ ও প্রাকৃতিক নিয়মাধীন কারণ ও শর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
অতএব মানুষের নব জীবনও যতই এ পৃথিবীর জীবন-মৃত্যুর ব্যতিক্রম হোক না কেন,তা কোন ভাবেই পরিত্যাজ্য নয়। বরং প্রভুর প্রতিশ্রুতি অনুসারে তা সংঘটিত হবেই।
গ) প্রাণীদের জীবন লাভ :
পবিত্র কোরানে একইভাবে কয়েকটি প্রাণীর অসাধারণ ভাবে জীবন লাভের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে কয়েকটি পাখীর জীবন লাভ
এবং কোন এক নবীকে বহনকারী পশুর কাহিনী,(যার সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হবে) ইত্যাদির কথা উল্লেখযোগ্য। অতএব কোন প্রাণীর জীবিত হওয়া যদি সম্ভব হয় তবে মানুষের পক্ষেও জীবিত হওয়া অসম্ভব নয়।
ঘ) এ পৃথিবীতেই কোন কোন মানুষের পুনর্জীবন লাভ :
এ প্রসঙ্গে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল,এ পৃথিবীতেই কোন কোন মানুষের পুনর্জীবন লাভ করা। পবিত্র কোরানে এ ধরনের কিছু উদাহরণ উল্লেখ হয়েছে। যেমন : বনী ইসরাঈলের একজন নবীর ঘটনা যে,তার যাত্রাপথে কিছু মৃত মানুষের গলিত লাশ তার চোখে পড়ে। হঠাৎ তার ধারণা হল যে,কিরূপে এ মানুষগুলো পুনরায় জীবিত হবে। মহান আল্লাহ তার আত্মা ফিরিয়ে নিলেন এবং একশত বছর পর তাকে জীবিত করলেন। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : এ স্থানে তুমি কত সময় যাবৎ অবস্থান করছো ? তিনি যেন নিদ্রা থেকে জেগে উঠে ছিলেন ও বললেন : একদিন অথবা একদিনের কোন এক অংশ। প্রতি উত্তরে বলা হল : বরং তুমি একশত বছর এখানে অবস্থান করছো। অতএব লক্ষ্য কর একদিকে তোমার রুটি ও পানি সঠিকভাবে রক্ষিত,অপরদিকে তোমাকে বহনকারী পশু পঁচে গলে গিয়েছে! এখন দেখ যে,আমরা কিরূপে এ পশুর হাড়গুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করছি;পুনরায় এগুলোকে মাংস দ্বারা আবৃত করছি এবং একে জীবিত করছি।
অপর একটি কাহিনী হল এই যে,বনী ইসরাঈলের একদল লোক হযরত মূসাকে (আ.) বললঃ আমরা খোদাকে প্রকাশ্যে না দর্শন করা ব্যতীত কখনোই বিশ্বাস স্থাপন করব না। ফলে মহান আল্লাহ তাদেরকে বজ্রপাত দ্বারা ধ্বংস করলেন। অতঃপর হযরত মূসা (আ.)-এর অনুরোধে পুনরায় তাদেরকে জীবন দিলেন।
অনুরূপ বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির (যে মূসা (আ.)-এর সময় নিহত হয়েছিল) একটি জবাইকৃত গরুর দেহের কোন এক অংশের আঘাতে জীবিত হওয়ার কাহিনী উল্লেখযোগ্য,যা সূরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে এবং এর উপর ভিত্তি করেই সূরা বাকারার নামকরণ করা হয়েছে। এ কাহিনীর বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে :
)
كَذَٰلِكَ يُحْيِي اللَّـهُ الْمَوْتَىٰ وَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
(
এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তার নিদর্শন তোমাদেরকে দেখিয়ে থাকেন,যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (বাকারা-৭৩)
এছাড়া ঈসা (আ.)
এর মু’
জিযাহর ফলে কিছু মৃত ব্যক্তির জীবিত হওয়ার ঘটনাকেও পুনরুত্থানের সম্ভাবনার নিদর্শন বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।