মৃত্যুকালে তওবাহ ও বিশ্বাস স্থাপণের কোন মূল্য নেই :
যখন কাফের ও পাপিষ্ঠদের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকার কোন আশা থাকে না তখন পূর্বে সম্পাদিত স্বীয় কর্ম সম্পর্কে অনুতপ্ত হয় এবং বিশ্বাস স্থাপন করে ও নিজের পাপের জন্যে তওবাহ করে। কিন্তু মহান আল্লাহর নিকট এ ধরনের বিশ্বাস ও তওবার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। পবিত্র কোরান এ সম্পর্কে বলে :
)
يَوْمَ
يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ
تَكُنْ آمَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا
(
যে দিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না,যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি। (আনআম -১৫৮)
)
وَلَيْسَتِ
التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ
أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ
(…
তওবাহ তাদের জন্যে নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে এবং তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে,‘
আমি এখন তওবাহ্ করছি,......। ( নিসা -১৮)
ফেরাউনের বক্তব্যে উল্লেখিত হয়েছে যে,যখন (নীল নদের পানিতে) নিমজ্জিত হচ্ছিল,তখন বলছিল :
)
آمَنتُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
(
আমি বিশ্বাস করলাম যে,বনী ইসরাঈল যাতে বিশ্বাস করে -তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ( ইউনূস-৯০)
এবং তার উত্তরে বলা হয় :
)
آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ(
এখন! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছি এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস-৯১)
পৃথিবীতে ফিরে আসার ইচ্ছা :
অনুরূপ পবিত্র কোরান কাফের ও দুস্কৃতিকারীদের সম্পর্কে বর্ণনা করে যে,যখন তাদের মৃত্যু উপস্থিত হয় অথবা বিধ্বংসী আযাব তাদের উপর অবর্তীণ হয়,এই ইচ্ছা পোষণ করে :‘
হায়! যদি পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারতাম এবং বিশ্বাসী ও সৎকর্মকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতাম!’
অথবা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যে,আমাদেরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিন,যাতে আমাদের পূর্ববর্তী কর্মসমূহের ক্ষতিপূরণ করতে পারি। কিন্তু এ ধরনের আকাংখা ও প্রার্থনার কোন কার্যকারিতা নেই ।
কোন কোন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে,যদি তাদেরকে (পৃথিবীতে)ফিরিয়েও দেয়া হত তবে তারা পূর্বের প্রক্রিয়াই চালিয়ে যেত।
অনুরূপ ক্বিয়ামতের দিনেও এ ধরনের ইচ্ছা ও প্রার্থনা করবে,যার জবাব প্রাথমিকভাবেই নেতিবাচক হবে।
)
حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا(
যখন তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন সে বলে,হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় প্রেরণ কর,যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি,যা আমি পূর্বে করিনি। না,তা হওয়ার নয়। এটা তো তার একটি উক্তি মাত্র। (এবং এটা এমন এক আকাংখা,যা কখনোই কার্যকরী হবে না)। (মু’
মিনুন ৯৯-১০০)
)
أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
(
অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলে যেন কাকেও বলতে না হয়,‘
আহা,যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত,তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হতাম। ( যুমার-৫৮)
)
وَلَوْ
تَرَىٰ إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ
وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
(
যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করান হবে এবং তারা বলবে হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু’
মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (আনআম -২৭
)
إِذِ
الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُءُوسِهِمْ عِندَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا
أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا
مُوقِنُونَ
(
যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে অধোবদন হয়ে বলবে,হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম;এখন তুমি আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ কর,আমরা সৎকর্ম করব,আমরা তো দৃঢ়বিশ্বাসী। (সেজদা-১২)
উল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে সুস্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে,পরকাল নির্বাচন ও কার্য সম্পন্ন করার স্থান নয়। এমনকি যে দৃঢ়বিশ্বাস মৃত্যুর সময় অথবা পরজগতে অর্জিত হয়,মানুষের উৎকর্ষের পথে তারও কোন গুরুত্ব নেই এবং তা তাকে পুরস্কারের যোগ্যও করে তুলে না।
এভাবেই কাফের ও পাপিষ্ঠরা পৃথিবীতে ফিরে আসার ইচ্ছা পোষণ করে,যাতে স্বেচ্ছায় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে ও যথোপযুক্ত কার্য সম্পন্ন করতে পারে।