১৪তম পাঠ
অনন্ত সুখ ও দুঃখের ক্ষেত্রে ঈমান ও কুফরের ভূমিকা
ভূমিকা :
অপর প্রশ্নগুলো হল এই যে,ঈমান ও সৎকর্ম উভয়েই কি অনন্ত সুখ-সমৃদ্ধির পথে পরস্পর স্বতন্ত্র কোন নির্বাহী না কি সম্মিলিতভাবে অনন্তসৌভাগ্য ও সুখ-সম্মৃদ্ধির কারণ? অনুরূপ কুফর ও পাপাচারের প্রত্যেকটিই কি স্বতন্ত্রভাবে চিরন্তন শাস্তির কারণ না কি সম্মিলিতভাবে এ ধরনের প্রভাব ফেলে ? দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যদি কেউ কেবলমাত্র ঈমানের অধিকারী হয় অথবা সৎকর্ম সম্পন্ন করে থাকে,তবে তার বিচার কিরূপ হবে? তদনুরূপ যদি কেউ শুধুমাত্র কুফরি করে থাকে অথবা পাপাচারে লিপ্ত হয় তবে তার ভাগ্যে কি ঘটবে ? যদি কোন বিশ্বাসী ব্যক্তি একাধিক পাপাচারে লিপ্ত হয় অথবা কোন অবিশ্বাসী ব্যক্তি একাধিক সুকর্ম সম্পাদন করে থাকে,তবে সে কি সৌভাগ্য বা সুখ-সমৃদ্ধির অধিকারী হবে,না কি দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হবে ? উভয়ক্ষেত্রেই যদি কেউ স্বীয় জীবনের কিছু অংশ বিশ্বাস ও সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে এবং অপর কিছু অংশ কুফর ও পাপাচারের মাধ্যমে অতিবাহিত করে,তবে তার বিচার কি হবে ?
উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম শতাদ্বীতে আলোচ্য বিষয়ভুক্ত ছিল। খাওয়ারেজের মত কেউ কেউ বিশ্বাস করত যে,পাপাচারে লিপ্ত হওয়া অনন্ত দুঃখ-দুর্দশার জন্যে স্বাধীন নির্বাহী,যা অধিকিন্তু কুফর ও ধর্ম ত্যাগের কারণও বটে। মুরজিয়াহদের মত অপর একদল বিশ্বাস করেছিলেন যে,অনন্ত সুখ-সমৃদ্ধির জন্যে ঈমান থাকাই যথেষ্ট এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া বিশ্বাসীদের অনন্ত সৌভাগ্যের পথে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করে না।
কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল : সকল পাপই কুফর ও অনন্ত দুঃখ-দুর্দশার কারণ নয়,যদিও পুঞ্জীভূত পাপ,ঈমান হরণের কারণ হতে পারে। অপরদিকে এমনটি নয় যে,ঈমানের উপস্থিতিতে সকল পাপ ক্ষমা এবং কোন প্রকার অপপ্রভাব তাতে থাকবে না।
আমরা আলোচ্য পাঠে প্রথমেই ঈমান ও কুফরের স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করব। অতঃপর অনন্ত সুখ ও দুঃখের পথে এগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করব এবং অপরাপর বিষয়গুলো সম্পর্কে পরবর্তী পাঠসমূহে বর্ণনা করব।
ঈমান ও কুফরের স্বরূপ :
ঈমান হল অন্তর ও আত্মার এক বিশেষ অবস্থা,যা এক ভাবার্থ বা প্রবৃত্তি সম্পর্কে অবগত হওয়ার ফলে অর্জিত হয় এবং এতদ্ভয়ের প্রত্যেকটির তীব্রতা ও ক্ষীণতার কারণে আত্মা যথাক্রমে উৎকর্ষ বা বিকাশ ও অপূর্ণতা পরিগ্রহ করে। যদি মানুষ কোন কিছুর অস্তিত্ব ( যদিও তা হয় আনুমানিক রূপে) সম্পর্কে অবগত না হয়ে থাকে,তবে সে এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না। তবে ঐ বিষয় সম্পর্কে কেবলমাত্র জ্ঞান ও অবগতিই যথেষ্ট নয়। কারণ এমনও হতে পারে যে ঐ বিষয় ও এর অবিয়োজ্য বিষয়সমূহ তার হৃদয়গ্রাহী হবে না বরং তা তার প্রবনতার বিপরীত হবে;ফলে ঐ বিষয় সংশ্লিষ্ট বিষয় কার্যকর করণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না এবং এমনকি এর পরিবর্তে বিপরীতধর্মী সিদ্ধান্ত ও গ্রহণ করতে পারে। যেমনঃ পবিত্র কোরান ফেরাউনিদের সম্পর্কে বলে :
)
وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا(
তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলি প্রত্যাখ্যান করল,যদিও তাদের অন্তর এইগুলিকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল। (নামল-১৪)
এবং হযরত মূসা (আ.) ফেরাউনকে উদ্দেশ্য করে বললেন :
)
لَقَدْ عَلِمْتَ مَا أَنْزَلَ هَؤُلَاءِ إِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ بَصَائِرَ(
তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে এইসমস্ত স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ। (ইসরা- ১০২)
যদিও ফেরাউন বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং সে মানুষকে বলত :
)
مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرِي(
আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ আছে বলে জানিনা।(কাসাস-৩৮)
কেবলমাত্র যখন গভীর জলে নিমজ্জিত হচ্ছিল তখন বলেছিল :
)
آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ(
আমি বিশ্বাস করলাম যে বনী ইসরাঈল যাতে বিশ্বাস করে,তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। (ইউনুস- ৯০)
আমরা জানি যে,এ ধরনের জরুরী অবস্থার ঈমান গ্রহণযোগ্য নয় যদিও একে ঈমান নামকরণ করা যেতে পারে।
অতএব ঈমানের ভিত্তি বা আস্থা হল আন্তরিকতা ও স্বেচ্ছাপ্রবণতা,যা জ্ঞান ও অবগতির ব্যতিক্রম,যা অনিচ্ছাকৃতভাবেও অর্জিত হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ঈমানকে এক স্বেচ্ছাধীন আন্তরিক কর্ম,বলে গণনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ‘
কর্মকাণ্ডের’অর্থকে বিস্তৃত করতঃ ঈমানকেও কর্মকাণ্ডের,অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
অপরদিকে কুফর (کفر
) শব্দটি কখনো কখনো বিশ্বাসের অস্থিতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং আস্থা বা বিশ্বাস না থাকার অর্থই হল কুফর,হোক তা দিধা-দ্বন্দ্ব ও নিরেট অজ্ঞতার ফলে কিংবা হোক তা যৌগিক অজ্ঞতার (مرکب ئجهل
) ফলে অথবা হোক তা নেতিবাচক প্রবণতার ফলে কিংবা হোক তা ইচ্ছাকৃতভাবে ও বৈরীতাবশতঃ অস্বীকারকরণের ফলে। এছাড়া কখনো কখনো শেষোক্ত প্রকারের কুফর অর্থাৎ হিংসা বিদ্বেষের মত বিদ্যমান বিষয় (امری وجودی
) এবং ঈমান বা বিশ্বাসের বিপরীতার্থ বলে পরিগণিত হয়।
ঈমান ও কুফরের পরিমাণ :
পবিত্র আয়াতসমষ্টি থেকে যা আমরা পাই,তার ভিত্তিতে বলা যায় পরকালীন অনন্ত সুখ- সমৃদ্ধির জন্যে ন্যূনতম যতটুকু ঈমান থাকা প্রয়োজন তা হল : মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস,পরকালীন পুরস্কার ও শাস্তির প্রতি বিশ্বাস এবং যা কিছু মহান নবীগণের (আ.) উপর নাযিল হয়েছে তাতে বিশ্বাস। আর এ বিশ্বাসসমূহের অপরিহার্য শর্ত হল মহান আল্লাহর আদেশানুসারে কর্ম সম্পাদনের সারসংক্ষিপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ,যার সর্বোচ্চ পর্যায় হল,মহান আল্লাহর আম্বিয়া ও আউলিয়ার (সালামুল্লাহ আলাইহীম আজমাইন) জন্যে নির্দিষ্টি।
অপরদিকে ন্যূনতম পর্যায়ের কুফর হল : তাওহীদ নবুয়্যত ও মায়াদকে অস্বীকার করা বা এগুলো সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া অথবা এমন কিছুকে অস্বীকার করা,যার সম্পর্কে জানে যে,মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর কুফরের নিকৃষ্টতম পর্যায় হল প্রতিহিংসাপরায়ণ বা অবাধ্য হয়ে এ সকল সত্যকে অস্বীকার করা,যদিও এগুলোর সত্যতা সম্পর্কে সে অবগত এবং সত্যদ্বীনের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
এভাবে শিরক (বা তাওহীদের অস্বীকৃতি) কুফরেরই একটি দৃষ্টান্ত। আর নেফাক বা কপটতা হল অব্যক্ত কুফর,যা বাহ্যিক ইসলামের আড়ালে প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়। আর মুনাফিকদের (অপ্রকাশিত কাফের) পরিণতি অন্যান্য কাফের অপেক্ষা ভয়ংকর হবে। যেমনটি পবিত্র কোরানে বিবৃত হয়েছে :
)
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
(
মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্ন স্তরে থাকবে। (নিসা- ১৪৫)
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি যে,ফিকাহশাস্ত্রে যে কুফর ও ইসলামের কথা বর্ণনা করা হয় এবং যা তাহারাত (طهارت
),কুরবানীর বৈধতা,বিবাহ ও সম্পদের উত্তরাধিকারের বৈধতা বা অবৈধতার মত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আহকামের উদ্দেশ্য (موضوع
) রূপে পরিগণিত হয়,তার সাথে দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের আলোচ্য ঈমান ও কুফরের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ কেউ হয়ত শাহাদাতাইন (আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) প্রতি সাক্ষ্য প্রদান করে ) বলতে পারে এবং ইসলামের হুকুম-আহকাম তার জন্যে প্রযোজ্য হতে পারে,যদিও আন্তরিক ভাবে তাওহীদ ও নবুয়্যত সংক্রান্ত বিষয়গুলোর প্রতি সে কোন আস্থাই স্থাপন করেনি।
অপর বিষয়টি হল,যদি কেউ দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোকে শনাক্তকরণে অক্ষম,যেমন : উন্মাদ,নির্বোধ অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সত্য দ্বীনকে চিনতে পারেনি,তবে সে তার অপরাধের পরিমাণে ক্ষমা পাবে। কিন্তু যদি কেউ পারঙ্গমতা সত্বেও অবহেলা করতঃ দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায়ই থাকে,অথবা কোন প্রকার যুক্তি ব্যতীতই দ্বীনের জরুরী বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে থাকে,তবে সে ক্ষমা পাবে না এবং অনন্ত শাস্তিতে পতিত হবে।
অনন্ত সুখ ও দুঃখের ক্ষেত্রে ঈমান ও কুফরের প্রভাব :
‘
মানুষের প্রকৃত উৎকর্ষ বা কামাল,প্রভুর সান্নিধ্য লাভের মাধ্যমে বাস্তবরূপ লাভ করে এবং বিপরীতক্রমে মানুষের অধঃপতন,মহান আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয় -এর আলোকে মহান আল্লাহ ও তার সুনির্ধারিত ও বিধিগত প্রতিপালণত্বের উপর আস্থাপ্রকাশ,যা পুনরুত্থান ও নবুয়্যতের প্রতি বিশ্বাসের জন্যে জরুরী,তাকে মানুষের প্রকৃত উৎকর্ষ সাধনের জন্যে বৃক্ষস্বরূপ মনে করা যেতে পারে,যার পত্র-পল্লব হল মহান আল্লাহর পছন্দনীয় কর্মসমূহ;আর চিরন্তন সুখ-সমৃদ্ধি হল ফলস্বরূপ,যা পরকালে বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করবে। অতএব যদি কেউ ঈমানের বীজ স্বীয় অন্তরাত্মায় বপন না করে কিংবা এ কল্যাণময় বৃক্ষকে রোপণ না করে এবং এর পরিবর্তে কুফর ও পাপাচারের বিষবৃক্ষ স্বীয় অন্তরাত্মায় বপন করে থাকে,তবে সে প্রভু প্রদত্ত যোগ্যতাকে বিনষ্ট করেছে এবং এমন এক বৃক্ষের সেবা সে করেছে,যার ফল হল নারকীয় যাক্কুম। আর এ ধরনের ব্যক্তি অনন্ত সুখ-সমৃদ্ধির পথে বিন্দুমাত্রও অগ্রসর হয়নি এবং তার সুকর্মের প্রভাব পৃথিবীর সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
আর এর গুঢ় রহস্য হল : সকল স্বাধীন নির্বাচনাধীন কর্মই চূড়ান্ত লক্ষ্যের পথে বা ঈপ্সিত লক্ষ্যের পথে,যা কর্তা নিজের জন্যে নির্ধারণ করেছে,তার জন্যে মানুষের গতিস্বরূপ। যদি কেউ অনন্ত জীবন ও আল্লাহর নৈকট্যের প্রতি আস্থা না রাখে,তবে এ ধরনের কোন ব্যক্তি কিরূপে বর্ণিত লক্ষ্যকে নিজের জন্যে স্থির করতে পারবে ? স্বভাবতঃই এরূপ ব্যক্তিরা মহান আল্লাহর নিকট পুরস্কারের আশা করতে পারে না। তবে কাফেরদের সুকর্মের সর্বোচ্চ প্রভাব শুধু এতটুকই যে,তাদের শাস্তি কিছুটা হ্রাস করা হবে। কারণ এ ধরনের কর্মের মাধ্যমে আত্মপূজা ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার মাত্রা কিছুটা দুবর্ল হয়ে থাকে।
পবিত্র কোরানের বক্তব্য :
পবিত্র কোরান একদিকে মানুষের অনন্ত সৌভাগ্যের পথে ঈমানের মূল ভূমিকার কথা বর্ণনা করে। কয়েকদশক আয়াতে সৎকর্মকে ঈমানের পরপরই উদ্ধৃতকরণ ব্যতীত ও একাধিক আয়াতে অনন্ত সুখ-সমৃদ্ধির পথে সৎকর্মসমূহের প্রভাবের জন্যে ঈমানকে পূর্ব শর্তরূপে গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করেছে । যেমন :
)
وَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَـٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ
(
পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎকাজ করলে ও মু’
মিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে (নিসা-১২৪) [এ ছাড়া নাহল-৯৭,ইসরা-১৯,তোহা-১১২,আম্বিয়া-৯৪,গাফির-৪০ দ্রষ্টব্য ]
অপরদিকে দোযখ ও অনন্তশাস্তিকে কাফেরদের জন্যে নির্ধারণ করেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে অহেতুক,অনর্থক ও নিষ্ফল বলে গণনা করেছে। অন্য এক স্থানে তাদেরকে এমন ছাই-ভস্মের সাথে তুলনা করা হয়েছে যে,তীব্র বাতাস ঐগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং কোথাও এগুলোর উপস্থিতি খুজে পাওয়া যায় না । কোরানের ভাষায় :
)
مَّثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ
أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيحُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ
لَّا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا عَلَىٰ شَيْءٍ
ذَٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيدُ
(
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে,তাদের উপমা হল,তাদের কর্মসমূহ ভস্ম সদৃশ যা ঝড়ের দিনে প্রচণ্ড বাতাসের বেগে উড়ে চলে যায়। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি। (ইব্রাহীম-১৮)
অপর এক স্থানে বলা হয় : কাফেরদের কর্মকাণ্ডকে ঘূর্ণবাতের মত ছড়িয়ে দিব।
)
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا(
আমি তাদের কৃতকর্মগুলি বিবেচনা করব,অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব। (ফুরকান-২৩)
অপর এক আয়াতে কাফেরদের কর্মকাণ্ডকে সেই মরীচিকার সাথে তুলনা করা হয়েছে যে,তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি তার দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু সেখানে যখন পৌঁছে কোন পানিরই অস্তিত্ব খুজে পায় না।
)
وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّى إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِنْدَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ(
যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ,পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে,কিন্তু সে তার নিকট উপস্থিত হলে দেখবে তা কিছু নয় এবং সে পাবে সেথায় আল্লাহকে,অতঃপর তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দিবেন। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর। (নূর-৩৯)
এর পরপরই বলা হয় :
)
أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ(
অথবা গভীর সমুদ্রতলের অন্ধকার সদৃশ,যাকে আচ্ছন্ন করে তরংগের উপর তরংগ,যার উর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ,অন্ধকারপুঞ্জ স্তরের উপর স্তর,এমনকি সে হাত বের করলে,তা আদৌ দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না,তার জন্যে কোন জ্যোতিই নেই। ( নূর- ৪০) [রূপকার্থে বলা হয়েছে যে,কাফেরদের চলাফেরা হল অন্ধকারে এবং কোথাও পৌঁছতে পারে না] অপর এক আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে যে,দুনিয়াপূজারীদের প্রচেষ্টার ফল এ পৃথিবীতেই প্রদান করা হবে এবং পরকালে তারা সকল কিছু থেকে বঞ্চিত হবে। যেমনঃ নিম্নোল্লিখিত আয়াতে বলা হয় :
)
مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ(
যদি কেউ পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে তবে দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেথায় তাদেরকে কম দেওয়া হবে না। (সূরা হুদ -১৫ )