42। মুসলমানের উপর মুসলমানের অধিকার সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
সকল প্রকার শ্রেণী বৈষম্য
,মর্যাদা ও স্তরের পার্থক্য সত্ত্বেও পবিত্র ধর্ম ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দরতম আহবান হলো মুসলমানদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব রক্ষা। ফলে আজকের এবং পূর্বেকার সময়ের মুসলমানদের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যাপার ছিল দ্বীনী ভ্রাতৃত্বের দাবীর প্রতি দৃষ্টি না দেয়া এবং এ ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা। কারণ এ ভ্রাতৃত্বের ন্যূনতম দাবী হলো ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) সেই বক্তব্য যে প্রত্যেক মুসলমানরাই যা নিজের জন্য পছন্দ করবে সে তার ভাইয়ের জন্যও যেন তা পছন্দ করে। আর যা নিজের জন্য পছন্দ করে না তা যেন তার অন্যান্য মুসলমান ভাইয়ের জন্যও পছন্দ না করে।
আমাদেরকে এ সরল আদেশ যা আহলে বাইতের (আ.) নির্দেশ তার উপর চিন্তা করা আবশ্যক। তখন আমরা অনুধাবন করব যে
,প্রকৃতই এ আদেশ পালন করা আজকের যুগের মুসলমানদের জন্য কতটা কঠিন ও সমস্যাসংকুল
;আর মুসলমানরা সত্যিই এ আদেশ থেকে কতটা দূরে! যদি এমন একটি আদেশের আনুগত্যই মুসলমানরা করত তবে কখনোই পরস্পরের উপর জুলুম করত না এবং কখনোই সীমালংঘন
,চুরি
,মিথ্যা
,পরনিন্দা
,ইত্যাদি করত না
,অপবাদ দিত না বা অধিকার লংঘন করত না।
হ্যাঁ
,যদি মুসলমানরা প্রকৃতপক্ষেই ভ্রাতৃত্ব রক্ষার এমন একটি আদেশ পালন করত তবে নিশ্চিতই জুলুম ও শত্রুতার অবসান ঘটত। আর তখন মুসলমানরাও স্বাধীন ও প্রাধান্য সহকারে সমাজে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সৌহার্দ্য বজায় রেখে জীবন যাপন করতে পারত। ফলে বিশ্ব সমাজে যে কল্যাণময় সভ্যতা
,যা প্রাক্তন দার্শনিকদের কাম্য ছিল তা বাস্তব রূপ লাভ করত। আর তখন কোন হুকুমত
,বিচারালয়
,কারাগার
,শাস্তির বিধান কিংবা শাস্তির প্রয়োজন হত না
,অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারীর সম্মুখে মস্তকাবনত করতে হত না। কারণ কেউই তাগুতের হাতের ক্রীড়ানক হত না। ফলে আজকের এ পৃথিবী অন্য এক পৃথিবীতে রূপ নিত যেখানে থাকত ন্যায়পরায়ণতা
,সাম্য ও সততা। স্বর্গের মত পৃথিবী শান্তির নীড়ে পরিণত হত।
এখানে আরেকটি বিষয় আমরা সংযুক্ত করব তা হলো যদি ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের নিয়ম যা ইসলাম মানুষের কাছে কামনা করেছে তা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করত তবে আমাদের জীবনের অভিধানে
‘
আদালত
’
কথাটির কোন অস্তিত্ব থাকত না। কারণ তখন আদালত এবং ন্যায়পরায়ণতা বিধানের কোন প্রয়োজনীয়তাই থাকত না যার ফলে আদালত অভিধানটি ব্যবহারের কোন প্রয়োজন থাকবে। বরং সেই ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের নীতিই কল্যাণ
,নিরাপত্তা ও সুখের জন্য যথেষ্ট হত।
কারণ কোন ব্যক্তি তখনই আদালত বা আইনের আশ্রয় নেয় যখন সমাজে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য না থাকে। কারণ আমরা দেখতে পাই যে
,যেখানে পিতা
,পুত্র ও ভাইয়ের মধ্যে ভালবাসা হুকুমত করে সেখানে মানুষ নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়াকে ত্যাগ করে এবং সানন্দে ভালবাসার মর্যাদা রক্ষা করে। স্পষ্টতঃই এমতাবস্থায় জীবনের সমস্ত সমস্যা-সংকট ভালবাসার আলোকে সমাধান হয়। ফলে আদালত ও ন্যায়নীতি কার্যকর করার কোন আবশ্যকতা থাকে না।
মানুষের সামাজিক জীবনে ভালবাসার প্রভাবের কারণ হলো প্রত্যেক মানুষই ফেতরাতগতভাবে (সৃষ্টিগত) কেবলমাত্র নিজেকে ভালবাসে। ফলে যা নিজের জন্য যা হৃদয়গ্রাহী সে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। অতএব যা কিছু তার নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সে তা পছন্দ করে না। পুনরায় আমরা দেখতে পাই যে
,কোন মানুষ যদি কোন কিছুকে পছন্দ না করে কিংবা তার দিকে কোন ঝোঁক তার না থাকে
,তার জন্য সে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে না কিংবা এর জন্য তার নিজের চাওয়া পাওয়াকে উৎসর্গ করতে পারে না কেবলমাত্র ঐ ক্ষেত্র ব্যতীত যদি ঐ বস্তুতে সে বিশ্বাসী হয়
,আর তার বিশ্বাস শক্তি তার ইচ্ছা ও ঝোঁকের উপর প্রাধান্য রাখে। যেমন- ভাল
,ন্যায়পরায়ণতা ও দয়ার প্রতি বিশ্বাস। এমতাবস্থায় অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রবণতার (ন্যায়
,অন্যের প্রতি দয়া) কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রবণতাকে অগ্রাহ্য করে।
এ বিশ্বাস যখন মানুষের মধ্যে দৃঢ়তর ও প্রভাবশালী হয় অর্থাৎ মানুষ সে সমুন্নত আত্মার অধিকারী হয় যে আত্মা অতিবস্তুগত কারণে বস্তুগত বিষয়কে অগ্রাহ্য করতে পারে
,কেবলমাত্র তখনই সে আদালত ও অপরের প্রতি দয়ার শ্রেষ্ঠকে উপলব্ধি করতে পারে।
মানুষকে কেবল তখনই এ আত্মিক সমঝোতার মুখাপেক্ষী হতে হয়
,যখন নিজের এবং অপরাপর মানুষের মধ্যে প্রকৃত ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালবাসা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। নতুবা যেমনটি উপরে আমরা আলোচনা করেছি যে
‘
ভালবাসা
’
ন্যায়পরায়ণতার স্থান দখল করে। আর ভালবাসার শাসনতন্ত্রে ন্যায়পরায়ণতার কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে না।
উপরোক্ত বিষয়বস্তু থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে
,প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরী। সুতরাং তার জন্য সর্বপ্রথমেই আবশ্যক হলো অপরের জন্য নিজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ শক্তিশালী করা। যখন ব্যক্তিগত চাহিদা ও কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী হওয়ার কারণে নিজের অভ্যন্তরে এ ভ্রাতৃত্ববোধ দুর্বল হয়ে পড়বে তখন ইসলামের আদেশসমূহ অনুসরণ করে
,আদালত ও অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ়করণ করে প্রকৃত ইসলামী মূল্যবোধ অর্জন করতে হবে। যদি এক্ষেত্রে সে ব্যর্থ হয় তবে তার জন্য কেবল মুসলমান নামটিই অবশিষ্ট থাকবে। বরং প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বেলায়াতের পতাকাতল থেকে সে নিজেকে বহিষ্কার করেছে। ফলে ইমামের (আ.) বক্তব্য অনুসারে (যা পরবর্তীতে আলোচনা করব) মহান আল্লাহ এ ধরনের মুসলমানকে কোন প্রকার দয়া প্রদর্শন করেন না।
অধিকাংশ সময়ই মানুষের নফসের চাহিদা
,কামনা তার মনুষত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে ন্যায় কামনার বিশ্বাসকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে না। আর তাই ন্যায়-নীতির প্রতি বিশ্বাসকে স্বীয় অস্তিত্বে কেন্দ্রীভূত ও সুসজ্জিত করতে পারে না। ফলে নফসের চাহিদা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
এ দৃষ্টিকোণ থেকেই যদি মানুষের মধ্যে সঠিক ভ্রাতৃত্ববোধ বিকাশ লাভ না করে তবে তার জন্য কোন ভাইয়ের অধিকার সংরক্ষণ করা হবে দ্বীনের শিক্ষার মধ্যে সর্বাধিক কঠিন কাজ।
এ বিষয়টির উপর লক্ষ্য রেখেই ইমাম সাদিক (আ.) তার কোন এক সাহাবী মোয়াল্লা বিন খুনাইসের প্রশ্নের জবাবে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মোয়াল্লাবিন খুনাইস ইমামকে (আ.) ভ্রাতৃত্বের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। ইমাম (আ.) তার অবস্থা বুঝে তাকে তার সহ্য ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দেন নি। কারণ তার ভয় ছিল এ ব্যক্তি এ অধিকার সম্পর্কে জানবে কিন্তু তদানুসারে আমল করতে পারবে না।
মোয়াল্লা বিন খুনাইস বলেন : ইমাম সাদিকের (আ.) নিকট জিজ্ঞাসা করলাম- এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের অধিকার কী
?
ইমাম সাদিক (আ.) : প্রত্যেক মুসলমানই অপর মুসলমানের উপর 7টি আবশ্যকীয় অধিকার রাখে। এ অধিকারগুলোর প্রত্যেকটিই অপর মুসলমানের জন্যও আবশ্যক। যদি তাদের কেউ এ অধিকার হরণ করে তবে সে আল্লাহর আনুগত্য ও বেলায়াত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য কোন কল্যাণ ও দয়াই থাকবে না।
মোয়াল্লা : আপনার জন্য উৎসর্গ হব
,ঐ অধিকারগুলো কী কী
?
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন : হে মোয়াল্লা আমি তোমাকে ভালবাসি। আমার ভয় হয় তুমি এ অধিকারগুলোর কথা জানবে কিন্তু আমল করবে না। ফলে তখন এগুলোকে অসার করে দিবে।
মোয়াল্লা : আশাকরি আল্লাহর সাহায্যে সফল হব।
ফলে হযরত (আ.) তখন ঐ সাতটি অধিকারের কথা বর্ণনা করলেন। বললেন-
“
এদের মধ্যে প্রথমটি অন্য সবগুলোর চেয়ে সহজ। আর তা হলো অন্য সকলের জন্য তা পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ কর। আবার অন্য সকলের জন্য তাই অপছন্দ কর যা নিজের জন্য অপছন্দ কর।
”
ধিক মুসলমানদেরকে! যদি এটি সহজতম অধিকারের কথা হয়। তবে তার মুসলমানিত্বের উপর কালিমা পড়ুক যে নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করে অথচ এ সহজ হুকুমটিই পালন করে না। অবাক ব্যাপার হলো যে
,মুসলমানদের এ পশ্চাৎপদতার জন্য ইসলামকেই দায়ী করা হয়। অথচ তাদের আমলই এ পশ্চাৎপদতার কারণ।
হ্যাঁ সমস্ত পাপের দায়ভার তাদের উপরই যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে অথচ দ্বীনের সরলতম আদেশ পালন করতে রাজি না।
আমাদের ঐতিহাসিক অবস্থানকে ব্যাখ্যা করতে
,নিজেদেরকে আবিষ্কার করতে এবং নিজের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করতে আমরা ইমাম সাদিক (আ.) কর্তৃক বর্ণিত এ সাতটি অধিকারের
কথা
এ
পুস্তিকায়
উল্লেখ
করা
প্রয়োজন
মনে
করছি।
1) তোমার মুসলমান ভাইয়ের জন্য এমন কিছুকে পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ কর এবং তার জন্য এমন কিছুকে অপছন্দ কর যা নিজের জন্য অপছন্দ কর।
2) তোমার মুসলমান ভাইকে ক্রোধান্বিত করা থেকে দূরে থাক এবং যাতে সে তুষ্ট হয় তা কর এবং তার হুকুমের আনুগত্য কর (অবশ্য যদি অনৈসলামিক না হয়)
।
3) তোমার জান
,মাল
,কথা ও হস্তপদ দ্বারা তার সাহায্য কর।
4) দেখার জন্য তার চোখ হও
,চলার জন্য পথনির্দেশক হও এবং তার আয়না হও।
5) সে যদি অভূক্ত থাকে তবে তুমি উদরপূর্তি করো না
,যদি তৃষ্ণার্ত থাকে তুমি তৃষ্ণা নিবারণ করো না
,যদি উলঙ্গ থাকে তবে তুমি পোশাকে সজ্জিত হয়ো না।
6) যদি তোমার খাদেম থাকে এবং তার কোন খাদেম না থাকে
,তবে তোমার জন্য ওয়াজীব হলো তার কাছে তোমার খাদেমকে তার পোষাক ধুতে
,খাবার রান্না করতে এবং দস্তর মেলতে প্রেরণ করো।
7) যদি তোমার নিকট কোন শপথ করে থাকে তবে তাকে শপথের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত কর
,তার নিমন্ত্রণ গ্রহণ কর
,তার অসুস্থতার সময় তার সাথে সাক্ষাৎ কর
,তার জানাযায় অংশগ্রহণ কর। যদি জান যে তার কোন অভাব আছে তবে তার বলার আগেই তা সমাধানে উদ্যোগী হও এবং দ্রুত তার অভাব পূরণে সচেষ্ট হও।
অতঃপর ইমাম সাদিক (আ.) এ কথার মাধ্যমে তার বক্তব্য শেষ করেন-
“
যদি এ অধিকারগুলোকে রক্ষা কর তবে তার ভালবাসার রজ্জুকে তোমার ভালবাসার রজ্জুর সাথে বন্ধন দিলে।
”
এ বিষয়ের উপর পবিত্র ইমামগণের (আ.) পক্ষ থেকে অনেক বর্ণনা এসেছে। অনেকে ধারণা করেন যে
,ইমামগণের (আ.) হাদীস সমূহে ভ্রাতৃত্ব বলতে শীয়াদের মধ্যকার ভ্রাতৃত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ হাদীসগুলোর বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করলে এ ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটে।
তবে ইমামগণ (আ.) অন্য এক দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে বিরোধীদের পথের সমালোচনা করেছেন। ইমানগণ (আ.) তাদের বিশ্বাসকে সঠিক বলে মনে করেন না। তথাপি ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে তারা সমস্ত মুসলমানদেরকে সমন্বিত করেছেন। আর এ কথার স্বপক্ষে প্রমাণস্বরূপ মোয়াবিয়াহ ইবনে ওহাবের হাদীসটি পাঠকের সম্মুখে তুলে ধরাই যথেষ্ট মনে করছি।
তিনি বলেন : ইমাম সাদিকের (আ.) নিকট সবিনয়ে বললাম
,অন্যান্য মুসলমান যাদের সাথে আমরা জীবনযাপন করি
,কিন্তু তারা শীয়া নয়। তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করব
?
ইমাম (আ.) বলেন : তোমাদের ইমামগণ (আ.) তাদের অসুস্থজনকে দেখতে যায়
,তাদের জানাযায় অংশগ্রহণ করে তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষী দেয়। আর তাদের আমানতের খিয়ানত করে না।
তবে শীয়াদের নিকট ইমামগণ (আ.) যে ভ্রাতৃত্ব কামনা করেছেন
,তা এই ভ্রাতৃত্বের চেয়েও উর্ধে। যেমন-
‘
শীয়ার সংজ্ঞা অধ্যায়ে
’
এ সম্পর্কে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা এ বক্তব্যে সত্যতা প্রমাণ করে। উদাহরণ স্বরূপ
,আবান বিন তুগলাব নামে ইমাম সাদিকের (আ.) এক সাহাবীর সাথে তার কথোপকথন উল্লেখ করাই এখানে যথেষ্ট।
আবান বলেন ইমাম সাদিকের (আ.) সাথে আল্লাহর গৃহের তাওয়াফরত অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় নিজের একজন শীয়া আমার কাছে আসলেন যাতে আমি একটি কাজে তার সাথে যাই। এমতাবস্থায় আমাদেরকে ইমাম সাদিক (আ.) একত্রে দেখলেন এবং বললেন :
তোমার নিকট এ ব্যক্তির কি কোন প্রয়োজন আছে।
আবান : জী - হ্যাঁ।
ইমাম (আ.) : তাওয়াফ রেখে তার সাথে যেয়ে তার প্রয়োজন মিটিয়ে এস।
আবান : তাওয়াফ আমার জন্য ওয়াজীব হলেও কি তা ত্যাগ করব
?
ইমাম (আ.) : হ্যাঁ।
আবান : তার সাথে গেলাম এবং তার কাজ সমাধা করে ইমামের (আ.)নিকট ফিরে এলাম। তার নিকট মূমিনের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম।
ইমাম (আ.) : এ প্রশ্ন ত্যাগ কর
,পুনরাবৃত্তি করো না।
কিন্তু আমি প্রশ্নটি দ্বিতীয়বার করলাম।
তখন ইমাম (আ.) বললেন : হে আবান স্বীয় ধন-সম্পদ কি তার সাথে ভাগাভাগি করবে
?অতঃপর তিনি (আ.) আমার দিকে তাকালেন এবং ইমামের কথা শুনার পর আমার যে অবস্থা হয়েছিল তা আমার চেহারায় লক্ষ্য করে বললেন : হে আবান
,জান কি মহান আল্লাহ ত্যাগকারীদেরকে স্মরণ করেন
?
আবান : জী-হ্যাঁ জানি।
ইমাম (আ.) : তোমার ধন সম্পদ তার সাথে আধাআধি ভাগ করলেও ত্যাগকারীর স্থানে পৌঁছতে পারনি। কারণ তুমি তাকে তোমার উপরে স্থান দাও নি। তুমি তখনই ত্যাগীর মর্যাদা পাবে যখন তোমার ধন-সম্পদের বাকী অর্ধেকটাও দিবে।
অতএব আমি এখানে বলব যে সত্যিই আমাদের জীবন কতটা লজ্জাকর
;প্রকৃতপক্ষে আমাদেরকে মুমিন বলাও সমীচীন নয়। কারণ আমরা কোথায় আর আমাদের ইমামগণ (আ.) কোথায়। হ্যাঁ
,মালামাল ভাগ করা সম্পর্কে আবানের যে অবস্থা হয়েছিল
,যারা এ হাদীসটি পাঠ করবো তাদেরও ঠিক একই অবস্থা হবে। আর তখন এ হাদীস থেকে এমনভাবে ফিরে যাবো যেন এ হাদীসের শ্রোতা আমরা নই অন্য কেউ এবং কখনোই নিজেকে একজন দায়িত্বশীল হিসাবরক্ষকের মত বিচার ও বিবেচনাই করব না।