22। ইসলাম ও তৎপূর্ববর্তী ঐশী ধর্মসমূহকে প্রতিপাদন করার উপায়ঃ
যদি কেউ ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে আমাদের নিকট প্রশ্ন তোলে তাহলে আমরা এক চিরন্তন মোজেযাকে প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা প্রতিপাদন করতে পারি। আর তা হলো পবিত্র কোরআন যার সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে তা আমাদের প্রাথমিক প্রশ্ন বা দ্বিধাকে দূরীভূত করে আমাদের অন্তরকে তুষ্ট করারও উপায়। মুক্ত চিন্তার অধিকারী কিছু মানুষ যারা তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে চায়
,তাদের মনে কখনো কখনো কিছু প্রশ্নের উদয় হয়। এ পন্থা অবলম্বন করে আমরা তাদেরকেও তুষ্ট করতে পারি।
পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহ যেমন- ইহুদী
,খ্রীষ্টান
,ইত্যাদিতে সন্দেহ করলে তাদের সত্যতা প্রমাণ করতে আমাদের নিজেদেরকে ও প্রশ্নকারীকে তুষ্ট করার কোন পন্থা নেই যদি না সর্বাগ্রে কোরআনের সত্যতা প্রমাণ করি ও ইসলামের প্রতি আমাদের বিশ্বাস থেকে তা নিষ্কাশন করি। কারণ কোরআনের মত এমন কোন মোজেযা ঐগুলোর জন্য আজ আর আমাদের হাতে অবশিষ্ট নেই। পূর্ববর্তী নবীগণের (আ.) মোজেযা ও অলৌকিক ঘটনা তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়। বর্ণনার ধরনে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আবার পূর্ববর্তী নবীদের গ্রন্থ বলে পরিগণিত যে সমস্ত গ্রন্থ আমাদের নিকট আছে যেমন- তৌরাত
,ইঞ্জিল তা কোনভাবেই চিরন্তন মোজেযা নয়। যা দ্বারা কাঙ্ক্ষিতরূপে ঐ ধর্মগুলোর সত্যতা প্রমাণের জন্য এমন কোন তুষ্টকারী দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যায় যেটি ইসলামের সত্যতাকে স্বীকার করলে করা যায়।
স্পষ্টতঃই আমাদের জন্য (যেহেতু আমরা মুসলমান) পূর্ববর্তী ধর্মের নবীদেরকে স্বীকার করা যুক্তিসঙ্গত। কারণ আমরা যখন ইসলাম ধর্মকে স্বীকার করে নিব তখন ইসলামে যা কিছু আছে কিংবা যা কিছুকে সত্যায়িত করে তার সবগুলোকে মেনে নেয়া আমাদের জন্য আবশ্যক। আর ইসলামের একটি শিক্ষা হলো পূর্ববর্তী নবীগণের নবুওয়াতকে স্বীকার করে নেয়া যা ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
অতএব
,মুসলমানগণ ইসলামের শিক্ষাকে বক্ষে ধারণ করার পর ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মের ও তৎপূর্ববর্তী ধর্মগুলোর সত্যতা প্রমাণের মুখাপেক্ষী নয়। কারণ ইসলামের সত্যতা স্বীকার করার মানেই হলো পূর্ববর্তী ধর্মসমূহের সত্যতা স্বীকার করা। ইসলামে বিশ্বাস করার মানেই হলো পূর্ববর্তী রাসুলগণে বিশ্বাস স্থাপন করা। সুতরাং মুসলমানদের জন্য ঐ ধর্মগুলো সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং ঐগুলোর বাহকের মোজেযা সম্পর্কে অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ ইসলামে বিশ্বাস করার কারণেই পূর্ববর্তী ধর্ম ও নবীগণের উপর বিশ্বাস করা তার জন্য আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।
হ্যাঁ
,যদি কেউ ইসলামের সত্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করেও তুষ্ট না হতে পারে (তার জ্ঞান ও পরিচিতির সীমাবদ্ধতার কারণে) তবে তাকে খ্রীষ্টান ধর্মের সত্যতা অনুসন্ধান করতে হবে। কারণ ইসলামের পূর্বে সর্বশেষ ধর্ম হলো এটিই। অতঃপর তাতে অনুসন্ধান করল কিন্তু তাতেও বিশ্বাস আনতে পারল না। তবে তাকে এর অব্যবহতি পূর্বের ধর্ম নিয়ে গবেষণা চালাতে হবে। আর এ ধর্মটি হলো ইহুদী ধর্ম। তাতেও যদি ফল না হয় তবে তাকে কোন ধর্ম সম্পর্কে ইয়াকীন বা বিশ্বাস অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত একে একে সব ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
বিপরীতক্রমে
,যে ইহুদী বা খ্রীষ্টানবাদে বিশ্বাসী তার ব্যাপার এর বিপরীত। সুতরাং একজন ইহুদীকে নিজের ধর্মের ব্যাপারে বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে খ্রীষ্টবাদ বা ইসলামের সত্যতা অনুসন্ধানের কোন অর্থ থাকতে পারে না। বরং (কোন ধর্মের প্রতি বদ্ধমূল ধারণার পূর্বে) বুদ্ধিবৃত্তির দাবী হলো গবেষণা ও অনুসন্ধান চালানো। অনুরূপ
,খ্রীষ্টানদেরও কেবলমাত্র খ্রীষ্টবাদ নিয়ে তুষ্ট থাকা উচিৎ নয়। বরং তার জন্য আবশ্যক হলো ইসলাম ধর্ম ও এর সত্যতা সম্পর্কে গবেষণা ও অনুসন্ধান করা। গবেষণা ও অনুসন্ধান ব্যতীত কোন ধর্মে তুষ্ট থাকার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। কারণ ইহুদী ধর্ম এবং তদানুরূপ খ্রীষ্টান ধর্মের কোনটিই তাদের পরবর্তী এমন কোন ধর্মের আবির্ভাবকে অস্বীকার করে না যা এদের স্থলাভিষিক্ত ও এতদ্ভয়ের রহিতকারী হবে। মূসা (আ.) ও ঈসা (আ.) দু
’
জনের কেউই বলেননি যে
,তাদের পরে কোন নবী আসবে না।
অতএব
,কিরূপে ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা তাদের বিশ্বাসের উপর নিশ্চিত থাকতে পারে এবং তাদের দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকতে পারে যদিও তারা তাদের পরবর্তী শরীয়তের উপর অনুসন্ধান চালায়নি
?যেমন- ইহুদীরা খ্রীষ্টান ধর্মের উপর
;অনুরূপ
,খ্রীষ্টানরা ও ইহুদীরা ইসলামের উপর। কিন্তু ফিতরাতগত (স্বভাবগত) বুদ্ধিবৃত্তির চাহিদা হলো পরবর্তী দাবীর সত্যতার উপর অনুসন্ধান চালানো। কারণ যদি তখন এর সত্যতা প্রমাণিত হয়
,তবে স্বীয় দ্বীন ত্যাগ করে শেষোক্ত দ্বীনে বিশ্বাস আনয়ন করবে এবং যদি এর সত্যতা প্রমাণিত না হয় তা
’
হলে বুদ্ধিবৃত্তির বিধান মোতাবেক তাদের পূর্ববর্তী ধর্মে বহাল থাকাই সঠিক।
তবে মুসলমান (যা ইতিপূর্বে বলেছিলাম) যেহেতু ইসলামে বিশ্বাস করে
,সেহেতু তার জন্য অন্য কোন ধর্মে অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই
,হোক সে এর পূর্ববর্তী ধর্ম কিংবা এর পরবর্তী কোন ধর্ম। পূর্ববর্তী ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করার প্রয়োজন না থাকার কারণ ইসলাম ঐগুলোকে সত্যায়িত করছে। সুতরাং ঐগুলো সম্পর্কে দলিল অনুসন্ধানের প্রয়োজন কী
?ঐগুলো সম্পর্কে ইসলামের মতামত হলো- ইসলাম ঐগুলোকে রদ করেছে। সুতরাং ঐ ধর্মের বিধি বা কিতাব মোতাবেক মুসলমানদেরকে আমল করতে হবে না। অপরদিকে ইসলাম পরবর্তী কোন ধর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধানের প্রয়োজন না থাকার কারণ হিসেবে হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর বাণী তুলে ধরা যায়।
তিনি বলেন-
“
আমার পর কোন নবী আসবে না।
”
আর প্রত্যেক মুসলমানরেই বিশ্বাস যে তিনি হলেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“
তিনি
{হযরত মোহাম্মদ (সা.)
}নিজের মনগড়া কোন কথা বলেন না যদি না তা তার উপর অবতীর্ণ ওহী হয়।
“
(সুরা নাজম-3-4)
সুতরাং ইসলাম পরবর্তী কোন ধর্ম (যদি কেউ দাবী করে থাকে) সম্পর্কে কেনইবা আমরা দলিল অনুসন্ধান করব
?কারণ তা তো কিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েই আছে।
তবে এখন মুসলমানদের জন্য এ প্রশ্ন এসে দাড়ায় যে কোন পন্থায় সঠিকভাবে হযরত মোহাম্মদের (সা.) উপর অবতীর্ণ শরীয়তের হুকুম আহকুম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে
?কারণ নবীর (সা.) রিসালাতের সময়কাল থেকে অনেক যুগ ও বর্ষের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আর ইতিমধ্যেই নানা মাযহাব
,ফেরকা ও মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে কোনটি সঠিক
?কারণ মুসলমানদের দায়িত্ব হলো সমস্ত হুকুম যেরূপে নাযিল হয়েছে সেরূপ আমল করা। কিন্ত কি করে একজন মুসলমান নিশ্চিত হবে যে
,এ হুকুমগুলো ঠিক যে রকম নাযিল হয়েছে সেরকমই। কারণ
,মুসলমানরা একাধিক দল ও মতে বিভক্ত
,তাদের নামায একরকম নয়। তাদের এবাদত ও তাদের আচরণ বিভিন্ন্। তাহলে তার কী করা উচিৎ
?কোন পদ্ধতিতে সে নামায পড়বে
?কোন পদ্ধতি সে অবলম্বন করবে তার এবাদত ও লেনদেনের ক্ষেত্রে। যেমন- বিবাহ
,তালাক
,উত্তরাধিকার
,ক্রয়-বিক্রয়
,ফৌজদারী
,বিধি
,শাস্তি প্রদান
,রক্তদান
,ইত্যাদি।
একজন মুসলমানের জন্য এটা সঠিক নয় যে সে তার পূর্ব পুরুষদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবে কিংবা তার বন্ধু-বান্ধবকে অনুসরণ করবে। বরং তার ও তার নিজের মধ্যে যা কিছু আছে কিংবা তার ও তার মহান আল্লাহর মধ্যে যা কিছু আছে সে ব্যাপারে তাকে নিশ্চিত হতে হবে। এখানে পক্ষপাতিত্ব
,কপটতা ও কুসংস্কারের কোন সুযোগ নেই বা কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। সে যাতে ভাল বিশ্বাস রাখে তার জন্য তা যৌক্তিকভাবে গ্রহণ করা আবশ্যক
,যাতে সে তার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং তার প্রভুর প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। আর তখন আল্লাহ তাকে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে শাস্তি দিবেন না যখন সে নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবে।
পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“
মানুষ কি মনে করে কোন উদ্দেশ্য ব্যতীতই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
”
(সুরা কিয়ামাহ- 36)
মহান আল্লাহ আরও বলেন-
“
প্রকৃতপক্ষে
,মানুষ নিজেই তার নিজের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট প্রমাণ।
”
(সুরা কিয়ামাহ-14)
“
নিশ্চয়ই এ কোরআন হলো স্মারক
,যে কেউ ইচ্ছা করলে তার প্রভুর পথ বেছে নিতে পারে।
”
(সুরা মুজাম্মিল -19)
সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি একজন মুসলমান তার নিজেকে করতে পারে তা হলো- সে
“
আহলে বাইতের
”
পথ নির্বাচন করবে না অন্য কারো পথ
?যদি আহলে বাইতের পথ বেছে নেয়
,তবে তা কি দ্বাদশ ইমামীয়াদের পথটি সঠিক
,না-কি এ ধরনের অন্য কোন ফেরকা
?আর যদি আহলে বাইতের পথ ভিন্ন অন্য কোন পথ
,যেমন- আহলে সুন্নতের পথ
,বেছে নেয় তবে তাকে চার মাযহারের কোন একটিকে অনুসরণ করতে হবে
,না কি অন্য কোন একটিকে
?এ প্রশ্নগুলো সমস্ত মুক্ত চিন্তার অধিকারী মানুষের মধ্যেই জাগতে পারে
,যতক্ষণ পর্যন্ত না সঠিক কোন পথ খুঁজে পায়।
অতএব
,আমাদের জন্য ইমামতের আলোচনা করা সমীচীন। যা দ্বাদশ ইমামীয়ারা বিশ্বাস করে।