ভূমিকা
বিসিমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) বলেন,‘‘
যদি মুহাম্মাদ (সা) এর ধর্ম আমার নিহত হওয়া ছাড়া টিকে না থাকে তাহলে,এসো হে তরবারী! নাও আমাকে।’’
নিঃসন্দেহে কারবালার মর্ম বিদারী ঘটনা হলো মানব ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। এটা এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা,যার সামনে বিশ্বের মহান চিন্তাবিদরা থমকে দাড়াতে বাধ্য হয়েছেন,পরম বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে স্তুতি-বন্দনায় মুখিরত হয়েছেন এই নজিরবিহীন আত্মত্যাগের। কারণ,কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়করা‘‘
অপমান আমাদের সয়না”
-এই স্লোগান ধ্বনিত করে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংখ্যায় হাতে গোনা জনাকয়েকটি হওয়া সত্ত্বেও খোদায়ী প্রেম ও শৌর্যে পূর্ণ টগবেগ অন্তর নিয়ে জিহাদ ও শাহাদাতের ময়দানে আবির্ভূত হন এবং প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার অধঃজগতকে পেছনে ফেলে উর্দ্ধজগতে মহান আল্লাহর সনে পাড়ি জমান। তারা স্বীয় কথা ও কাজের দ্বারা জগতবাসীকে জানিয়ে দিয়ে যান যে,‘‘
যে মৃত্যু সত্যের পথে হয়,তা মধূর চেয়েও সুধাময়।’’
বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানের জীবনপটে যেমন,তেমনি তাদের পবিত্র বিশ্বাসের পাদমূলে আশুরার সঞ্জীবনী ধারা বাহমান। কারবালার আন্দোলন সুদীর্ঘ চৌদ্দশ’
বছর ধরে-সুগভীর বারিধারা দ্বারা তৃষ্ণা নিবারণ করে এসেছে প্রাণসমূহের। আজও অবধি মূল্যবোধ,আবেগ,অনুভূতি,বিচক্ষণতা ও অভিপ্রায়ের অযুত-অজস্র সুক্ষ্ণ ও স্থুল বলয় বিদ্যমান যা এই আশুরার অক্ষকে ঘিরে আবর্তনশীল। প্রেমের বৃত্ত অঙ্কনের কাটা-কম্পাস স্বরূপ হলো এ আশুরা।
নিঃসন্দেহে এই কালজয়ী বিপ্লবের অন্তঃস্থ মর্মকথা এবং এর চেতনা,লক্ষ্য ও শিক্ষা একটি সমৃদ্ধশালী,নিখাদ ও প্রেরণাদায়ক সংস্কৃতি গঠন করে। প্রকৃত ইসলামের সুবিস্তৃত অঙ্গনে এবং আহলে বাইেতর সুহৃদ ভক্তকুল,ছোট-বড়,জ্ঞানী-মূর্খ নির্বিশেষে সর্বদা এই আশুরা সংস্কৃতির সাথেই জীবন যাপন করেছে,বিকিশত হয়েছে এবং এ জন্যে আত্মাহুতি দিয়েছে। এই সংস্কৃতির চর্চা তাদের জীবনে এত দূর প্রসারিত হয়েছে যে জন্মক্ষণে নবজাতেকর মুখে সাইয়্যেদুশ শুহাদার তুরবাত (কারাবালার মাটি ) ও ফোরাতের পানির আস্বাদ দেয় এবং দাফনের সময় কারবালার মাটি মৃতের সঙ্গে রাখে। আর জন্ম থেকে মৃত্যু অবিধও সারাজীবন হোসাইন ইবনে আলী (আ.) এর প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি পোষণ করে,ইমামের শাহাদাতের জন্য অশ্রুপাত করে। আর এই পবিত্র মমতা দুধের সাথেই প্রাণে প্রবেশ করে আর প্রাণের সাথেই নিঃসিরত হয়ে যায়।
কারবালার আন্দোলন সম্পর্কে অদ্যাবিধ অসংখ্য রচনা,গবেষণা এবং কাব্য রচিত হয়েছে। সুক্ষ্ণ চিন্তা ও ক্ষুরধার কলমের অধিকারী যারা,তারা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও নানান দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এই কালজয়ী বিপ্লবের বিশ্লেষণ করেছেন। এই সকল রচনাকর্ম যদি এক করা হয় তাহলে তা পরিণত হবে এক মহাগ্রন্থাগারে। কিন্তু তবুও এ সম্পর্কে নব নব গবেষণা ও ভাবনার অঙ্গন এখনো উন্মুক্ত রয়ে গেছে। কবি‘
সায়েব’
এর ভাষায়ঃ
‘‘
এক জীবন ধরে করা যায় (শুধু) বন্ধুর কোকড়া চুলের বর্ণনা
এই চিন্তায় যেওনা যে ছন্দ ও স্তবক ঠিক থাকলো কি-না’’
বক্ষমান বইখানি মহান দার্শনিক ও রুহানী আলেম আয়াতুল্লাহ শহীদ মুর্তাজা মোতাহারীর এই কালজয়ী বিপ্লব সম্পর্কিত বক্তৃতামালা ও রচনাবলী থেকে নির্বাচিত অংশের বঙ্গানুবাদ। ফার্সী ভাষায়‘
হেমাসা-এ হোসাইনী’
শিরোনামে তিন খণ্ডে প্রকাশিত এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই থেকে আরো 6টি কলাম যোগ করে বাংলাভাষায় বর্ধিত কলেবরে দ্বিতীয় বারের মতো প্রকাশিত হলো‘‘
ইমাম হোসাইন (আ.) এর কালজয়ী বিপ্লব’’
। ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্তৃক বইটি প্রকাশ করে বাংলাদেশের আহলে বাইত (আ.) এর প্রতি ভালবাসা পোষণকারী সকলের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হল যাতে তাদের আল্লাহ অভিমুখে পূর্ণযাত্রার পথে আলোকবর্তিকা হয় ইনশাআল্লাহ।
আশা করা যায়,বইটি পবিত্র আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তকূল,যারা অন্তরে ইমাম হোসাইন (আ.) এর প্রেমভক্তি লালন করে এবং তারই সমুন্নত আদর্শের সামনে মাথা নোয়ায়,তাদের জন্য উপকারী হবে।
কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস,ঢাকা।