ইমাম হোসাইনের (আ.) সব কথা বর্ণনা করতে গেল দীর্ঘ হয়ে যাবে। তবে এখানে আশুরার রাতের এক দিকের প্রতি ইশারা করা দরকার যে দিকগুলোর প্রতি খুব কমই লক্ষ্য করা হয়।
ইতিহাসের সব স্মরণীয় পুরুষই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন,যে পরিস্থিতিতে ইমাম হোসাইন (আ.) পড়েন আশুরার রাত্রে । অর্থাৎ বস্তুগত দিক দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েন এবং শত্রুকে পরাজিত করার বিন্দুমাত্র আশা নেই বরং অতিশীঘ্রই তিনি তার সঙ্গী-সাথীসহ শত্রুদের হাতে খণ্ড-বিখণ্ড হবেন এটিই নিশ্চিত হয়ে ওঠে। অনেকেই এ মুহুর্তে অভিযোগ করেন,আফসোস করেন ইতিহাস এ ধরনের বহু ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী। বলা হয় যে,নেপোলিয়ন যখন ঐ পরিস্থিতিতে পড়লো তখন বলেছিল : হায় প্রকৃতি! তুমি আমাকে এভাবেই মারলে।
কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) সবকিছু বুঝতে পেরেও মৃত্যু নির্ঘাত জেনেও আশুরার রাতে কী বলছেন? তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে সমবেত করলেন যেন যে কোনো বিজয়ীর চেয়েও তার মানসিকতায় উজ্জ্বলতার ঢেউ খেলে যাচ্ছে । তিনি বললেন :
اَثْنَي عَلَي اللهِ اَحْسَنَ الثَّنَاءِ وَ اَحْمَدُهُ عَلَي السَّرَّاءِ وَ الضَّرَّاءِ اَللَّهُمَّ اِنِّي اَحْمَدُكَ عَلَي اَنْ اَکرَمْتَنَا بِالنُّبُوَّةِ وَ عَلَّمْتَنَا الْقُرْآنَ وَ فَقَّهْتَنَا فِي الدِّينِ
যেন সবকিছুই ইমাম হোসাইনের (আ.) অনুকূলে আছে এবং সত্যি -সত্যিই সবকিছু তার অনুকূলে ছিল। কেননা এ পিরিস্থিতি একমাত্র তার জন্যেই দুঃখবহ ও প্রতিকূল,যে কেবল দুনিয়া ও ক্ষমতা চায় আর ব্যর্থ হয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। কিন্তু যার সবকিছুই আল্লাহর জন্যে,এমন কি যদি হুকুমতও চান তাহলেও তা আল্লাহর জন্যই চান এবং জানেন যে আল্লাহর পথেই এগিয়ে এসেছেন তাহলে তার কাছ তো এ পিরিস্তিতি অবশ্যই অনুকূল। এজন্যে তিনি আল্লাহর কাছে শোকরগুজারী-ই তো করবেন।
‘‘
আল্লাহকে সর্বোৎকৃষ্ট প্রশংসা জানাই এবং সুখে-দুঃখে সব অবস্থাতেই তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আল্লাহ আমাদেরকে নবুওয়াত দিয়ে সম্মানিত করেছেন,আমাদেরকে কোরআনের জ্ঞান দিয়েছেন এবং আপনার দীন পালনে আমাদেরকে সফল করেছেন-তাই আপনার লাখো শোকরিয়া আদায় করছি।’’
মোটকথা আমরা দেখলাম যে,এ আন্দোলনের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত কেবল পৌরুষত্ব,বীরত্ব,সত্যানুসরণ এবং সত্যপূজা। কিন্তু এ বীরত্ব কোনো গোত্র বা দেশ বিশেষে সীমাবদ্ধ নয়,এতে কোনো‘‘
আমিত্ব’’
এবং আত্মস্বার্থ নেই। সবই ও সবকিছুই আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর পথে। তিনি এ পথে শেষ নিশ্বাস নেয়া পর্যন্ত ও অটল ছিলেন। যুদ্ধক্লান্ত ইমাম হোসাইন (আ.) যখন শেষ তীর খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তখনও সে কেবলা থেকে কখনও পথভ্রষ্ট হননি যে কেবলার দিকে ফিরে পরম শান্তিতে বললেন
رِضاً بِقَضَائِكَ وَتَسْلِيمًا لِأَمْرِكَ وَلَا مَعْبُودَ سِوَاكَ يَاغِيَاثَ الْمُسْتَغِيثِينَ
‘
আপনার বিচারে আমি সন্তুষ্ট,আপনার আদেশের প্রতি আমি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত,আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই হে অসহায়দের সহায়।’
( বিহারুল আনোয়ারঃ 44/383 ,তুহাফুল উকুলঃ 176,আল-লুহুফঃ 33,মাকতালু মোকাররামঃ 232, তারিখে তাবারীঃ 6/229 , তারিখে ইবনে আসাকেরঃ 4/333 , কাশফুল গোম্মাহঃ 2/32)