চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103665
ডাউনলোড: 9120


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103665 / ডাউনলোড: 9120
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মহানবী (সা.)-এর নামকরণ

মহানবী (সা.)-এর জন্মগ্রহণের পর সপ্তম দিবস উপস্থিত হলো। আবদুল মুত্তালিব মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য একটি দুম্বা যবেহ করলেন। মহানবীর নাম রাখার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সকল কুরাইশ নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম মুহাম্মদ’রাখলেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কেন আপনার নাতির নাম মুহাম্মদ’রাখলেন,অথচ আরবদের মধ্যে এ নামটি অত্যন্ত বিরল? তখন তিনি বললেন, আমি চেয়েছিলাম যে,সে আকাশ ও পৃথিবীতে প্রশংসিত হোক।” এ সম্পর্কে কবি হাসসান ইবনে সাবিত লিখেছেন :

فشق له من اسمه ليبجله

فذو العرش محمود و هذا محمّد

নবীর সম্মান ও মর্যাদার জন্য স্রষ্টা তাঁর নিজ নাম থেকে তাঁর (নবীর) নাম নিষ্পন্ন করেছেন;তাই আরশের অধিপতি (মহান আল্লাহ্) মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং ইনি (তাঁর নবী) মুহাম্মদ (অর্থাৎ প্রশংসিত)।”

আর এ দু টি শব্দই (মাহমুদ ও মুহাম্মদ) একই উৎসমূল (হাম্দ) থেকে উৎসারিত এবং উক্ত শব্দদ্বয়ের অর্থও একই। নিঃসন্দেহে এ নাম চয়ন করার ক্ষেত্রে ঐশী অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। কারণ মুহাম্মদ নামটি যদিও আরবদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল,কিন্তু সে সময় খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তির নামই মুহাম্মদ রাখা হয়েছিল। কতিপয় ঐতিহাসিক যে সূক্ষ্ম পরিসংখ্যান দিয়েছেন তদনুযায়ী ঐ দিন পর্যন্ত সমগ্র আরবে কেবল 16 ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ’রাখা হয়েছিল। তাই এতৎসংক্রান্ত কবির উক্তি প্রণিধানযোগ্য :

أنّ الّذين سموا باسم محمّد

من قبل خير النّاس ضعف ثمان

মহানবীর আগে যাদের নাম মুহাম্মদ রাখা হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল 8-এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ষোল। 132

বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে,একটি শব্দের বাস্তব নমুনা যত কম হবে এতে ভুলভ্রান্তিও তত কমে যাবে। আর যেহেতু পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহ তাঁর নাম,চি হ্ন এবং আত্মিক ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তাই মহানবীর শনাক্তকারী নিদর্শন অবশ্যই এতটা উজ্জ্বল হতে হবে যে,তাতে কোন ভুলভ্রান্তির অবকাশই থাকবে না। তাঁর অন্যতম নিদর্শন তাঁর নাম। এ নামের বাস্তব নমুনা অর্থাৎ যাদের নাম মুহাম্মদ বাস্তবে তাদের সংখ্যা এতটা কম হবে যে,ব্যক্তি মহানবীকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সন্দেহ আর বিদ্যমান থাকবে না। বিশেষ করে যখন তাঁর পবিত্র নামের সাথে তাঁর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হবে। এমতাবস্থায় তাওরাত ও ইঞ্জিলে যে ব্যক্তির আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তাকে খুব স্বচ্ছ ও স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

প্রাচ্যবিদদের ভুলভ্রান্তি

পবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-কে দু বা ততোধিক নামে পরিচিত করিয়েছে।133 সূরা আলে ইমরান,সূরা মুহাম্মদ,সূরা ফাত্হ ও সূরা আহযাবের 138,2,29 ও 40 নং আয়াতে তাঁকে মুহাম্মদ’নামে এবং সূরা সাফের 6 নং আয়াতে তাঁকে আহমদ’নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর এ দু নাম থাকার কারণ হচ্ছে এই যে,মহানবীর মা হযরত আমেনা দাদা আবদুল মুত্তালিবের আগেই তাঁর নাম আহমদ’রেখেছিলেন। আর এ বিষয়টি ইতিহাসেও উল্লিখিত হয়েছে।134 অতএব,কতিপয় প্রাচ্যবিদ যে দাবি করেছেন,সূরা সফের 6 নং আয়াতে পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিল শরীফ যে নবীর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছে তাঁর নাম আহমদ,তিনি মুহাম্মদ নন;আর মুসলমানগণ যে ব্যক্তিকে তাদের নিজেদের নেতা বলে বিশ্বাস করে তিনি মুহাম্মদ,তিনি আহমদ নন”-তাঁদের এ দাবি সর্বৈব ভিত্তিহীন। কারণ পবিত্র কোরআন আমাদের নবীকে আহমদ’নামেও পরিচিত করিয়েছে এবং কতিপয় স্থানে তাঁকে মুহাম্মদ’নামে অভিহিত করেছে। যদি এ নবীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাঁদের দলিল পবিত্র কোরআনই হয়ে থাকে (আর এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যাপার ঠিক এটিই) তাহলে এ ক্ষেত্রে বলতে হয়,পবিত্র কোরআন তাঁকে এ দু টি নামেই অভিহিত করেছে অর্থাৎ একস্থানে তাঁকে মুহাম্মদ’এবং অন্যস্থানে আহমদ’নামে অভিহিত করেছে। এ আপত্তিটির মূলোৎপাটন করার জন্য আমরা নিচে আরো বেশি ব্যাখ্যা দেব।

আহমদ মহানবী (সা.)-এর নামসমূহের একটি

মহানবী (সা.)-এর জীবনেতিহাস সম্পর্কে যাঁদের সংক্ষিপ্ত তথ্য ও জ্ঞান রয়েছে তাঁরা জানেন যে,হযরত মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও বাল্যকাল থেকেই আহমদ’ও মুহাম্মদ’এ দু নামে পরিচিত ছিলেন। জনগণের কাছে তিনি এ দু নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর জন্য মুহাম্মদ’এবং তাঁর মা আমেনা আহমদ’নামটি মনোনীত করেছিলেন। এ বিষয়টি ইসলামের ইতিহাসের অকাট্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত এবং সকল সীরাত রচয়িতা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এবং এতৎসংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা সীরাতে হালাবীতে রয়েছে যা পাঠকবর্গ পড়ে দেখতে পারেন।135

দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর পিতৃব্য আবু তালিব হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বর্ণনাধিক ভালোবাসা,মমতা ও স্নেহ দিয়ে পুরো 42 বছর মহানবীর পবিত্র অস্তিত্ব প্রদীপের চারদিকে পতঙ্গের মতো লেগে থেকেছেন। তিনি মহানবীর প্রাণ রক্ষা করার জন্য তাঁর নিজ জান-মাল উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি। তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবীর শানে যে কবিতা আবৃত্তি করেছেন তাতে তিনি কখনো তাঁকে মুহাম্মদ’নামে আবার কখনো আহমদ’নামে অভিহিত করেছেন। আর সে সাথে এ বিষয়টি থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে,তখন থেকেই আহমদ’নামটি তাঁর অন্যতম প্রসিদ্ধ নাম হিসাবেই প্রচলিত ছিল।

এখন আমরা নিচে নমুনাস্বরূপ আরো কতিপয় পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দেব যেগুলোতে তিনি মহানবী (সা.)-কে আহমদ’নামে অভিহিত করেছিলেন।

إن يكن ما أتى به أحمد اليوم

سناء و كان في الحشر دينا

“আজ আহমদ যা আনয়ন করেছেন তা আসলে নূর (আলো) এবং কিয়ামত দিবসের পুরস্কার।”

و قوله لأحمد أنت أمرء

خلوف الحديث ضعيف النسب

“শত্রুরা বলছে : আহমদের বাণী ও কথাগুলো নিরর্থক এবং সে নিম্নবংশীয় অর্থাৎ দুর্বল বংশমর্যাদার অধিকারী।”

و ان كان أحمد قد جاء هم

بحق و لم يأتهم بالكذب

“নিঃসন্দেহে আহমদ তাদের কাছে সত্যধর্ম সহকারে এসেছেন,তিনি কোন মিথ্যা ধর্ম নিয়ে আসেন নি।”

ارادو قتل أحمد ظالموه

و ليس بقتلهم  فيهم زعيم

“যারা আহমদের ওপর জুলুম করেছে তারা চেয়েছিল তাঁকে হত্যা করতে,কিন্তু এ কাজে তাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ ছিল না।”

ইতিহাস ও হাদীসশাস্ত্রের গবেষক,পণ্ডিত ও আলেমগণ যে সব কবিতা আবু তালিবের সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলোতে তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবী (সা.)-কে আহমদ’নামে অভিহিত করেছেন। যা কিছু এখন আমরা বর্ণনা করেছি তার সব কিছুই আমরা তাঁর দিওয়ান (কাব্যসমগ্র)-এর 19,25 ও 29 পৃষ্ঠা হতে নিয়েছি। এ ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকবর্গকে আমরা নিম্নোক্ত দু টি গ্রন্থ অধ্যয়ন করার অনুরোধ করছি। গ্রন্থদ্বয় হলো :

1. আহমাদ,মওউদুল ইঞ্জিল (ইঞ্জিলের প্রতিশ্রুত নবী আহমদ),পৃ. 101-107;

2. মাফাহীমুল কোরআন।

মহানবীর স্তন্যপানের সময়কাল

নবজাতক শিশু মুহাম্মদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :

1. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন,কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চি হ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে,সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।136

2. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্,আনীসাহ্ ও শাইমা;তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়,শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার 4 মাস পরে বনি সা দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।

কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না,এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, চল,খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে,মহান আল্লাহর দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।” ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহর কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।137

এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব-যাঁর দানশীলতা,পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না,বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।

অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।138

আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কোন্ গোত্রের? তিনি বললেন, আমি বনি সা দ গোত্রের।” আবদুল মুত্তালিব বললেন, তোমার নাম কি? তিনি উত্তরে বললেন, হালীমাহ্।” আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন,بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة বাহবা,বাহবা! হে হালীমাহ্ ! দু টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ;একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت )-যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم )-যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা। 139