চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103717
ডাউনলোড: 9128


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103717 / ডাউনলোড: 9128
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

নবম অধ্যায় : মেষ পালন থেকে বাণিজ্য

আধ্যাত্মিক নেতাদের অনেক মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের বঞ্চনা,নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হয়। আর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যত মহৎ হবে তা অর্জন করার পথে বিপদাপদও তত বেশি ভয়ঙ্কর হবে।

এ হিসাবে আধ্যাত্মিক নেতাদের সফলকাম হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে ধৈর্য ও সহনশীলতা। অর্থাৎ যে কোন ধরনের অপবাদ,তিরস্কার এবং উৎপীড়ন ও নির্যাতনের মোকাবিলায় ধৈর্যধারণ। কারণ সংগ্রামের সকল পর্যায়ে ধৈর্য ও সহনশীলতা কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনের প্রকৃত শর্ত। এ কারণেই একজন প্রকৃত নেতার পক্ষে শত্রুদের আধিক্য দেখে ভয় পাওয়া এবং পশ্চাদপসরণ করা অনুচিত। অনুসারীদের স্বল্পতাও যেন তাকে ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত না করে। যে কোন ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া ও ঘাবড়ে যাওয়া অনুচিত।

নবীদের জীবনেতিহাসে এমন সব বিষয় রয়েছে যেগুলো চিন্তা করা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর ও কঠিন। হযরত নূহ (আ.)-এর জীবনী অধ্যয়ন করে জানতে পারি যে,তিনি 950 বছর (জনগণকে মহান আল্লাহর দীনের দিকে) আহবান করেছিলেন। তাঁর এ দীর্ঘ সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার ফলাফল ছিল এই যে,মাত্র 71 জন লোক তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। অর্থাৎ প্রতি বারো বছরে তিনি মাত্র একজন ব্যক্তিকে হেদায়েত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মানুষের মাঝে ধৈর্য ও সহনশীলতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। অবশ্যই অনভিপ্রেত ঘটনাবলী ঘটতে হবে। তাহলে মানবাত্মা কঠিন ও কষ্টকর বিষয়াদির সাথে পরিচিত হতে পারবে।

মহান নবীরা নবুওয়াত ও রিসালতের মর্যাদায় আনুষ্ঠানিকভাবে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তাঁদের জীবনের একটি অংশ পশুচারণ ও পশুপালনে ব্যয় করেছেন। তাঁরা বেশ কিছু সময় মরু-প্রান্তরে পশুপালনে ব্যস্ত ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে মানব জাতিকে প্রকৃত মানব হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল হওয়া এবং সব ধরনের বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টকে সহজ বলে গণ্য করা। কারণ বুদ্ধি ও অনুধাবন করার ক্ষমতার দিক থেকে পশু মানুষের সাথে তুলনার পুরোপুরি অযোগ্য। পশুপালন করার ক্লেশ যে ব্যক্তি সহ্য করতে পারবে অবশ্যই সে পথভ্রষ্টদের সুপথ প্রদর্শনের দায়িত্বভারও গ্রহণ করতে পারবে। আর এ সব পথভ্রষ্ট ব্যক্তির স্বভাবপ্রকৃতির (ফিতরাত) মূল ভিত মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দ্বারা গঠিত (অর্থাৎ মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকল মানুষের ফিতরাতে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস লুক্কায়িত রয়েছে। মুমিনদের মাঝে এ বিশ্বাস বিকশিত হয় আর কাফিরদের মাঝে এ বিশ্বাস কুফরের কারণে সুপ্ত ও অবিকশিত থেকে যায়।) এ কারণেই একটি হাদীসে বর্ণিত আছে :

ما بعث الله نبيّا قطّ حتّى يسترعيه الغنم ليعلّمه بذلك رعيّة للنّاس

“মহান আল্লাহ্ এমন কোন নবীকে প্রেরণ করেন নি যাঁকে পশুচারণ করার কাজে নিয়োজিত করেন নি। পশুচারণ কাজে সকল নবীকে নিযুক্ত করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে এর মাধ্যমে মানব জাতির সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ও প্রতিপালন পদ্ধতি শেখা ও আয়ত্ত করা। 171

মহানবী (সা.)ও তাঁর জীবনের একটি অংশ এ পথেই অতিবাহিত করেছেন। অনেক সীরাত রচয়িতা উল্লেখ করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন,

ما من نبيّ إلّا و قد رعى الغنم قيل و أنت يا رسول الله؟ فقال : أنا رعيتها لأهل مكّة بالقراريط

“নবুওয়াত ও রিসালাতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আগেই সকল নবী ও রাসূল বেশ কিছুকাল পশুচারণ ও পালন করেছেন।” তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো : আপনিও কি পশুচারণ করেছেন? তিনি তখন বললেন, হ্যাঁ,আমিও বেশ কিছুদিন কারারীত উপত্যকায় মক্কাবাসীদের পশুগুলো চড়িয়েছি। 172

যে ব্যক্তি আবু জাহল ও আবু লাহাবদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন এবং অধঃপতিত ব্যক্তিবর্গ যাদের চিন্তা-চেতনা,বিবেক-বুদ্ধি ও বোধশক্তির দৌড় এতটুকুই ছিল যে,তারা যে কোন পাথর ও কাঠ নির্মিত প্রতিমার সামনে শ্রদ্ধাবনত হয়ে যেত,এ ধরনের হীন-নীচ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে যিনি এমন সব ব্যক্তিকে গড়ে তুলবেন যারা একমাত্র মহান স্রষ্টার ইচ্ছা ব্যতীত আর কারো ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না,তাঁকে তো অবশ্যই বিভিন্নভাবে ও পদ্ধতিতে ধৈর্য ও সহনশীলতার শিক্ষা নিতেই হবে।

অন্য কারণ

এ স্থলে এ কাজের আরো একটি কারণও উল্লেখ করা যেতে পারে। আর তা হলো যে,একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি যার ধমনীতে আত্মসম্ভ্রমবোধ,শৌর্যবীর্য ও সাহসিকতার রক্ত প্রবাহমান,অশালীনতা এবং লাম্পট্যের দৃশ্য অবলোকন স্বাভাবিকভাবে তার কাছে অত্যন্ত কষ্টকর হবে। পরম সত্য মহান আল্লাহর ইবাদাত থেকে মক্কাবাসীদের বিমুখতা এবং নিস্প্রাণ প্রতিমাসমূহের চারপাশে তাদের প্রদক্ষিণ সব কিছুর চেয়ে বেশি একজন বোধসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে অপ্রীতিকর হবে। এ কারণেই মহানবী (সা.) বেশ কিছুদিন উন্মুক্ত মরু-প্রান্তরে ও পাহাড়ে কাটিয়ে দেয়ার মধ্যে কল্যাণ প্রত্যক্ষ করলেন। কারণ উন্মুক্ত মরু-প্রান্তর,উপত্যকা,পাহাড়-পর্বত স্বাভাবিকভাবেই ঐ সময়কার দূষিত সমাজ ও পরিবেশ থেকে মুক্ত ছিল। আর এর মাধ্যমে মহানবী তদানীন্তন সামাজিক পরিবেশের নাজুক অবস্থা দর্শন করে যে আত্মিক কষ্ট পেতেন তা থেকে খানিকটা হলেও নিস্কৃতি পেয়েছিলেন (এবং তাঁর চিত্ত প্রসন্নতা অর্জন করেছিল)।

অবশ্য এ কথার অর্থ এ নয় যে,দুর্নীতি ও অপরাধের সামনে একজন খোদাভীরু ব্যক্তি নীরবতা অবলম্বন করবেন এবং তাঁর নিজ জীবনকে অধঃপতিত ব্যক্তিদের থেকে পৃথক করে নেবেন। বরং যেহেতু মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর কাছ থেকে নীরবতা অবলম্বনের জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন এবং তখনও নবুওয়াতের ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল না,তাই তিনি এ ধরনের পদ্ধতি (মক্কার কোলাহলপূর্ণ দূষিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে কিছুকাল নির্মল উন্মুক্ত মরু-প্রান্তর,পাহাড়-পর্বত এবং উপত্যকায় অবস্থান) তাঁর জন্য মনোনীত করেছিলেন।

তৃতীয় কারণ

এ কাজটি (পশুচারণ) ছিল আকাশের সুন্দর দৃশ্যাবলী,তারকারাজির অবস্থা,প্রকৃতিজগৎ ও মনোজগতের নিদর্শনাবলী অধ্যয়ন ও গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য এক বিরাট সুযোগ। আর এর সবই হচ্ছে মহান স্রষ্টার অস্তিত্বের নিদর্শন।

নবীদের অন্তঃকরণ তাঁদের সৃষ্টি ও জন্মের শুরু থেকেই তাওহীদের প্রজ্বলিত আলোকবর্তিকা দ্বারা উজ্জ্বল হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর নিদর্শন এবং অস্তিত্বজগৎসমূহ নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান ও অধ্যয়ন করার প্রতি তাঁরা অমুখাপেক্ষী নন। তাঁরা এ পথেই ঈমানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছেন এবং আকাশসমূহ ও পৃথিবীর চেয়ে উন্নত মালাকুত বা ঊর্ধ্বলোক অর্থাৎ মহান আল্লাহর মহিমা ও আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশের অধিকার পেয়েছেন।173

আবু তালিবের প্রস্তাব

আবু তালিব যিনি ছিলেন কুরাইশদের প্রধান এবং দানশীলতা,মহত্ত্ব,ঔদার্য ও চারিত্রিক দৃঢ়তার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ তিনি নিজ ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কষ্টকর জীবনযাপন অবলোকন করে তাঁর পেশা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য হলেন। তাই তিনি তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে প্রস্তাব দিলেন, ধনাঢ্য কুরাইশ রমণী এবং ব্যবসায়ী খাদীজাহ্ বিনতে খুওয়াইলিদ একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির সন্ধান করছেন যে তাঁর ব্যবসায়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে এবং তাঁর পক্ষ থেকে কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে তাঁর ব্যবসায়িক পণ্য শামদেশে নিয়ে বিক্রি করবে। হে মুহাম্মদ! তুমি যদি তাঁর কাছে নিজেকে এ কাজের জন্য প্রার্থী হিসাবে উপস্থাপন কর তাহলে কতই না উত্তম হবে! 174

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেহেতু উচ্চ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন সেহেতু কোন পূর্ব প্রেক্ষাপট ও আবেদন ব্যতীত হযরত খাদীজার কাছে গিয়ে সরাসরি এ ধরনের প্রস্তাব করতে তাঁর বাধছিল। এ কারণেই তিনি চাচা আবু তালিবকে বলেছিলেন, সম্ভবত খাদীজাহ্ নিজেই আমার কাছে লোক পাঠাবেন।” কারণ তিনি জানতেন,তিনি জনগণের মাঝে আল আমীন’উপাধিতে ভূষিত ও প্রসিদ্ধ। ঘটনাও ঠিক এমনই ঘটেছিল। যখন খাদীজাহ্ মহানবীর সাথে আবু তালিবের উক্ত আলোচনা সম্পর্কে অবহিত হলেন তখন তাৎক্ষণিকভাবে এক ব্যক্তিকে মহানবীর কাছে প্রেরণ করে জানালেন, আপনার সত্যবাদিতা,বিশ্বস্ততা এবং উত্তম চরিত্র আমাকে আপনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী করেছে। অন্যদের আমি যা দিই তার চেয়ে আপনাকে দ্বিগুণ দিতে এবং আপনার সাথে আমার দু জন দাসকে পাঠাতে আমি প্রস্তুত যারা সফরের সকল পর্যায়ে আপনার আদেশ পালন করবে। 175

মহানবী এ ঘটনা চাচা আবু তালিবকে অবহিত করলেন। তিনি বললেন,

إنّ هذا الرزق ساقة الله إليك

“এ ঘটনা হচ্ছে যে জীবন মহান আল্লাহ্ তোমার কাছে পাঠিয়েছেন সেই জীবনের একটি মাধ্যম (উসিলা)।”

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না,আর তা হলো মহানবী (সা.) কি কুরাইশ বাণিজ্য কাফেলায় হযরত খাদীজার কর্মচারী হিসাবে গিয়েছিলেন,না বিষয়টি অন্য রকম ছিল? অর্থাৎ মহানবী কি খাদীজার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যে,তিনি বাণিজ্যিক পণ্যসমূহের বিক্রয়লব্ধ মুনাফায় শরীক হবেন এবং তাঁদের মধ্যে মুদারাবাহ্’(ব্যবসায়িক) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

হাশিমী বংশের উচ্চ মর্যাদা এবং স্বয়ং মহানবীর আত্মিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মর্যাদাবোধের কারণে তিনি কাফেলার সাথে খাদীজার কর্মচারী হিসাবে নয়,বরং মুদারাবাহ্ চুক্তির ভিত্তিতে তাঁর ব্যবসায়ে অংশীদার হিসাবে শামদেশে গমন করেছিলেন। আর দু টি জিনিস এ বিষয়টিকে সমর্থন করে।

প্রথমত আবু তালিবের প্রস্তাবে এমন কোন শব্দ নেই যা তাঁর ভাতিজার কর্মচারী হওয়ার বিষয়টি নির্দেশ করে,বরং তিনি এর আগে তাঁর অন্যান্য ভাইয়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বলেছিলেন,

امضوا بنا إلى دار خديجة بنت خويلد حتّى نسألها أن تعطي محمّدا مالا يتجربه

“চল আমরা খাদীজার গৃহে গমন করে তাঁকে প্রস্তাব দিই যে,তিনি কিছু মূলধন মুহাম্মদকে প্রদান করুন যাতে করে সে তা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। 176

দ্বিতীয়ত ইয়াকুবী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন, মহানবী (সা.) তাঁর জীবনে কারো বেতনভুক কর্মচারী হন নি। 177

কুরাইশ কাফেলা যাত্রা শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। খাদীজার ব্যবসায়িক পণ্যসমূহও উক্ত কাফেলার মধ্যে ছিল। ঐ সময় হযরত খাদীজাহ্ পথ চলতে সক্ষম এমন একটি উট এবং কিছু মূল্যবান বাণিজ্যিক পণ্য তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিনিধি ও অংশীদার মুহাম্মদ (সা.)-এর যিম্মায় প্রদান করলেন। তিনি তাঁর দু জন দাসকে আদেশ দিলেন তারা যেন সকল সময় পূর্ণ শিষ্টাচার রক্ষা করে,তিনি যা আদেশ দেবেন তা পালন করে এবং সকল অবস্থায় তাঁর অনুগত থাকে।

অবশেষে বাণিজ্য কাফেলা গন্তব্যস্থলে পৌঁছল। সবাই এ সফরে লাভবান হয়েছিল। কিন্তু মহানবী (সা.) সবার চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছিলেন। তিনি তিহামার বাজারে বিক্রি করার জন্য আরো কিছু পণ্য ক্রয় করেছিলেন।

কুরাইশ বাণিজ্য কাফেলা পূর্ণ ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করার পর মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলো। যুবক মহানবী মক্কা প্রত্যাবর্তন কালে পুনরায় ধ্বংসপ্রাপ্ত আদ ও সামুদ জাতির আবাসস্থল অতিক্রম করেছিলেন। মৃত্যুপুরীর নীরবতা যা অবাধ্য ঐ জনপদকে আচ্ছন্ন করেছিল তা তাঁর দৃষ্টিকে বস্তুজগতের ঊর্ধ্বে বিরাজমান জগৎসমূহের দিকেই বেশি নিবদ্ধ করছিল। পূর্ববর্তী সফরের স্মৃতি মহানবীর মধ্যে পুনরায় জাগ্রত হলো। ঐ দিনের কথা তাঁর স্মরণ হলো যে দিন চাচা আবু তালিবের সাথে এ সব মরু-প্রান্তর ও উপত্যকা পাড়ি দিয়েছিলেন। কুরাইশ বাণিজ্য কাফেলা পবিত্র মক্কা নগরীর নিকটবর্তী হলে হযরত খাদীজার দাস মাইসারাহ্ মহানবীকে বলল, কতই না উত্তম হবে যদি আপনি আমাদের আগে মক্কায় প্রবেশ করে হযরত খাদীজাকে এবারের বাণিজ্যিক সফরের ঘটনা এবং যে অভূতপূর্ব মুনাফা অর্জিত হয়েছে সে সম্পর্কে অবহিত করেন! হযরত খাদীজাহ্ যখন নিজ কক্ষে বসেছিলেন তখন মহানবী মক্কায় প্রবেশ করলেন। খাদীজাহ্ তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দ্রুত অগ্রসর হলেন এবং তাঁকে তাঁর বাসগৃহে নিয়ে আসলেন। মহানবী খুব চমৎকার ভাষায় পণ্যসমূহ বিক্রয় করার ঘটনা ব্যাখ্যা করলেন। আর ঠিক তখনই মাইসারাহ্ মক্কা নগরীতে প্রবেশ করল।178

খাদীজার দাস মাইসারাহ্ এ সফরে যা কিছু প্রত্যক্ষ করেছিল তার সবই মহানবীর উন্নত চরিত্র ও নীতি-নৈতিকতার পরিচায়ক ছিল। সে এ সব বিষয় খাদীজাকে জানিয়েছিল। যেমন এক ব্যাপারে এক ব্যবসায়ীর সাথে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতবিরোধ হলে ঐ লোকটি তাঁকে বলেছিল, লাত ও উয্যার নামে শপথ কর তাহলে আমিও তোমার কথা মেনে নেব।” তখন ঐ ব্যক্তির কথার জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য বস্তু হচ্ছে এই লাত ও উয্যা যাদের তোমরা পূজা কর। 179 এরপর মাইসারাহ্ আরো বলল, বুসরায় মুহাম্মদ বিশ্রামের জন্য একটি গাছের ছায়ায় বসেছিলেন। ঠিক তখনই গির্জার মধ্যে বসে থাকা একজন পাদ্রীর দৃষ্টি তাঁর ওপর পড়লে সে সেখান হতে বের হয়ে এসে তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেছিল। এরপর সে বলেছিল : এই ব্যক্তি যিনি এ গাছের ছায়ায় বসে আছেন তিনি ঐ নবী যাঁর ব্যাপারে তাওরাত ও ইঞ্জিলে প্রচুর সুসংবাদ আমি নিজে অধ্যয়ন করেছি।”180