চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103718
ডাউনলোড: 9128


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103718 / ডাউনলোড: 9128
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

খাদীজার গর্ভজাত সন্তানগণ

সন্তানের অস্তিত্ব বৈবাহিক জীবন ও বন্ধনকে দৃঢ় করে,জীবনকে করে আলোকিত;আর এক বিশেষ ধরনের দ্যুতি বয়ে এনে জীবন থেকে আঁধারকে করে বিতাড়িত। হযরত খাদীজার গর্ভে মহানবীর ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়। এদের দু টি ছিল পুত্রসন্তান;বড় ছেলের নাম ছিল কাসেম,এরপর আবদুল্লাহ্। কাসেম ও আবদুল্লাহকে যথাক্রমে তাহের ও তাইয়্যেবও বলা হতো। 4 জন ছিল কন্যাসন্তান। ইবনে হিশাম লিখেছেন, জ্যেষ্ঠ কন্যার নাম ছিল রুকাইয়াহ্। পরবর্তীতে যয়নাব,উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পুত্রসন্তানদ্বয় তাঁর নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মেয়েরা তাঁর নবুওয়াতকাল প্রত্যক্ষ করেছেন। 190

যে কোন অবস্থা ও পরিস্থিতিতে মহানবীর ধৈর্য তখন সকলের মুখে মুখে আলোচিত হতো। এতদ্সত্ত্বেও সন্তানদের মৃত্যুতে কখনো কখনো তাঁর অন্তরের বেদনা অশ্রুতে পরিণত হয়ে তাঁর চোখ থেকে পবিত্র গণ্ডদেশের ওপর ঝরে পড়ত। মারিয়ার গর্ভজাত তাঁর সন্তান ইবরাহীমের মৃত্যুতে মহানবী সবচেয়ে বেশি শোকাভিভূত হয়েছিলেন। তাঁর অন্তর তখন পুত্রবিয়োগের শোক ও বেদনায় মুহ্যমান ছিল,কিন্তু তাঁর কণ্ঠ ছিল মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ব্যস্ত,এমনকি এক মরুচারী আরব ইসলাম ধর্মের নীতিমালা ও মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যখন তাঁর কাঁদার ব্যাপারে আপত্তি করেছিল তখন মহানবী বলেছিলেন, এ ধরনের ক্রন্দন এক ধরনের রহমত।” এরপর তিনি বলেছিলেন,

و من لا يَرحم لا يُرحم

যে দয়া করে না তার প্রতিও দয়া প্রদর্শন করা হয় না। 191

ভিত্তিহীন ধারণা

ড. হাসানাইন হাইকাল মুহাম্মদের জীবন 192 গ্রন্থে লিখেছেন, নিঃসন্দেহে খাদীজাহ্ এদের প্রত্যেকের মৃত্যুকালে মূর্তিগুলোর দিকে মুখ করে সেগুলোকে জিজ্ঞাসা করতেন : খোদাগণ কেন তাঁর প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করছেন না?

ড. হাইকাল কর্তৃক বর্ণিত হযরত খাদীজার এ উক্তির ক্ষুদ্রতম ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। এ ধরনের বক্তব্যের উৎস হচ্ছে এই যে,ঐ সময় অধিকাংশ লোকই মূর্তিপূজক ছিল;অতএব,খাদীজাও তাদের মতোই (নাউযুবিল্লাহ্) মুশরিক ও মূর্তিপূজারী ছিলেন! অথচ মহানবী (সা.) যৌবনকালের শুরু থেকেই মূর্তিপূজা ও শিরককে তীব্রভাবে ঘৃণা করতেন এবং যে সফরে তিনি শাম গিয়েছিলেন সেই সফরে এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কারণ এক ব্যবসায়ীর সাথে যখন তাঁর হিসাব নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছিল তখন ঐ ব্যবসায়ী লাত ও উয্যার নামে শপথ করেছিল। মহানবী তাকে বলেছিলেন, আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য বিষয় হচ্ছে এগুলোই (অর্থাৎ লাত,উয্যা এবং সকল প্রকার প্রতিমা ও মূর্তি যেগুলোর পূজা-অর্চনা করা হয়)।”

এমতাবস্থায় বলা যায় কি খাদীজার মতো নারী যাঁর নিজ স্বামীর প্রতি টান,ভালোবাসা ও ভক্তি সম্পর্কে কোন সন্দেহই নেই তিনি তাঁর সন্তানদের মৃত্যুতে মূর্তি ও প্রতিমা অর্থাৎ মিথ্যা দেব-দেবীর আশ্রয় নেবেন যেগুলো ছিল তাঁর স্বামীর কাছে সবচেয়ে ঘৃণার পাত্র? অধিকন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিবাহ করার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের কারণ ও ভিত্তি ছিল প্রধানত মহানবীর উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী ও আধ্যাত্মিকতা। কারণ তিনি শুনেছিলেন যে,তিনিই শেষ নবী। এমতাবস্থায় এ ধরনের আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করে তিনি যে পুত্রশোকে মুহ্যমান হয়ে মূর্তি ও প্রতিমাসমূহের কাছে তাঁর অন্তরের দুঃখ প্রকাশ করবেন তা কিভাবে সম্ভব?

মহানবীর পালক পুত্র

মহানবী (সা.) যাইদ ইবনে হারেসাকে হাজারুল আসওয়াদের কাছে নিজ পুত্র বলে সম্বোধন করেছিলেন। আরবের মরু-দস্যুরা যাইদকে শামের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অপহরণ করে খাদীজার এক আত্মীয় হাকীম বিন হিযামের কাছে বিক্রি করে দেয়। তবে খাদীজাহ্ কিভাবে তাঁকে ক্রয় করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়।

‘মুহাম্মদের জীবনী’গ্রন্থের রচয়িতা বলেন, মহানবী (সা.) পুত্রদের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন বলেই তাঁকে (যাইদকে) ক্রয় করার জন্য খাদীজাকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে পুত্রবিয়োগের শোক ও দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়। হযরত খাদীজাহ্ যাইদকে ক্রয় করলে মহানবী তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দেন এবং সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেন।

কিন্তু অধিকাংশ সীরাত রচয়িতা ও ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন যে,মহানবীর সাথে হযরত খাদীজার বিবাহের সময় হাকীম বিন হিযাম যাইদকে হিবা বা উপহারস্বরূপ ফুফী খাদীজার হাতে অর্পণ করেছিলেন। যেহেতু যাইদ ছিলেন সব দিক থেকেই পবিত্র (চরিত্রবান) ও বুদ্ধিমান যুবক সেজন্য তিনি মহানবীর স্নেহভাজন হয়েছিলেন। আর হযরত খাদীজাহ্ও তাঁকে মহানবীর হাতে অর্পণ করেন। বেশ কিছুদিন পর যাইদের পিতা খোঁজ করতে করতে অপহৃত সন্তানের সন্ধান পেয়ে গেলেন। তিনি মহানবীকে অনুরোধ করলেন যেন তিনি তাঁকে পিতার সাথে নিজ এলাকায় ফেরার অনুমতি দেন। মহানবীও তাঁকে তাঁর নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তন অথবা মক্কা নগরীতে থেকে যাওয়ার মধ্য থেকে যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিলেন। মহানবীর স্নেহ ও দয়া তাঁকে মহানবীর কাছে থেকে যেতে আগ্রহী করে তোলে। এ কারণেই মহানবী তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তাঁর সাথে যয়নাব বিনতে জাহাশের বিবাহ দেন।193

মূর্তিপূজারীদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত

মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াত কুরাইশদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্যের সৃষ্টি করেছিল;কিন্তু সুদূর অতীত থেকেই তাদের মধ্যে এ বিরোধের নিদর্শনসমূহ ছড়িয়ে পড়েছিল। মহানবীর নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগেই কতিপয় ব্যক্তি আরবদের ধর্মের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেছিলেন এবং আরব বিশ্বের আনাচে-কানাচে সর্বত্র এক আরবী নবীর আবির্ভাবের বিষয় সর্বদা আলোচিত হতে থাকে যে,তিনি অতি শীঘ্রই আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তাওহীদ ও এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টার উপাসনাকে পুনরুজ্জীবিত ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন। ইয়াহুদীরা বলত, আমরা তাঁর অনুসারী হব। কারণ আমাদের ধর্মের মূল ভিত্তি ও উক্ত আরব নবীর ধর্মের মূল ভিত্তি একই। তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা ব্যবহার করে আমরা সকল প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলব এবং মূর্তিপূজার ভিত ধ্বংস করব।”

ইবনে হিশাম লিখেছেন, ইয়াহুদীরা মূর্তিপূজারী আরব সমাজকে আরবীয় নবীর আবির্ভাবকাল নিকটবর্তী বলার মাধ্যমে হুমকি প্রদর্শন করত। এ সব বক্তব্য মূর্তিপূজার যুগ যে অচিরেই গত হতে চলেছে তার একটি পটভূমি তাদের চোখের সামনে তুলে ধরত। ব্যাপারটি এতদূর গড়ায় যে,ইয়াহুদীদের পূর্ববর্তী প্রচারণার ফলে মহানবী (সা.) যখন ইসলাম ধর্মের প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন তখন আরবের কয়েকটি গোত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। কতিপয় কারণবশত ইয়াহুদীরা তাদের কুফরের ওপরই বহাল থাকে। নিম্নোক্ত আয়াতটি থেকেও তাদের অবস্থা পরিষ্কার হয়ে যায় :

) و لمّا جاء هم كتاب من عند الله مصدّق لما معهم و كانوا من قبل يستفتحون على الّذين كفروا فلمّا جاءهم ما عرفوا به فلعنة الله على الكافرين(

“যখন ঐশী গ্রন্থ (পবিত্র কোরআন) মহান আল্লাহর তরফ থেকে তাদের কাছে আসল যা তাদের কাছে বিদ্যমান গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং তারা ইতিপূর্বে (মহানবীর নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বে) সর্বশেষ নবীর আবির্ভাবের মাধ্যমে কাফিরদের ওপর বিজয় লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল,কিন্তু যখন তিনি (প্রতিশ্রুত শেষ নবী) তাদের কাছে আসলেন তখন তারা তাঁকে চিনল না,বরং তাঁকে অস্বীকার করল (অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব যে মহানেয়ামত ছিল সেই নেয়ামতের প্রতি তারা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল)। তাই মহান আল্লাহর লানত (ক্রোধ ও গজব) কাফির সম্প্রদায়ের ওপর বর্ষিত হোক।” (সূরা বাকারাহ্ : 89)

মূর্তিপূজার ভিতসমূহ নড়বড়ে হয়ে গেল

একবার কুরাইশদের এক উৎসবে একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। সূক্ষ্মদর্শী ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে ঐ ঘটনা ঘটার মাধ্যমে আসলে মূর্তিপূজকদের কর্তৃত্ব নির্মূল হওয়ার বিপদ ঘণ্টাই যেন বেজে উঠেছিল।

একদিন যখন মূর্তিপূজকরা একটি প্রতিমার চারপাশে সমবেত হয়ে তাদের কপাল সেটার সামনে মাটির ওপর রেখেছিল তখন তাদের নেতাদের মধ্য থেকে চার ব্যক্তি যাঁরা জ্ঞান ও বিদ্যা-বুদ্ধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন তাঁরা তাদের এ কাজকে পছন্দ করলেন না এবং এক কোণে গিয়ে পরস্পর আলোচনায় লিপ্ত হলেন। তাঁদের বক্তব্য ও আলোচনা ছিল নিম্নরূপ :

“আমাদের জাতি হযরত ইবরাহীমের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। এই পাথর যার চারপাশে আমাদের লোকেরা তাওয়াফ করে,আসলে তো তা শোনে না,দেখে না এবং উপকার বা ক্ষতিসাধনও করতে পারে না। 194

এই চার ব্যক্তি হলেন :

1. ওয়ারাকাহ্ ইবনে নওফেল যিনি ব্যাপক অধ্যয়ন করার পর খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়ম সংক্রান্ত প্রচুর জ্ঞান ও তথ্য অর্জন করেছিলেন;

2. আবদুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ যিনি ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পর ঈমান এনেছিলেন এবং মুসলমানদের সাথে হাবাশায় হিজরত করেছিলেন;

3. উসমান ইবনে হুওয়াইরিস যিনি রোম সম্রাটের দরবারে আশ্রয় নিয়ে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী হয়ে যান এবং

4. যাইদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল যিনি অনেক অধ্যয়ন ও গবেষণা করে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ধর্মের অনুসারী হয়েছিলেন।

মূর্তিপূজাবিরোধী এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব এ বিষয়ের প্রমাণ হতে পারে না যে,মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচার কার্যক্রম ছিল প্রকৃতপক্ষে মুষ্টিমেয় ক্ষুদ্র এ দলটির আহ্বানেরই ফল। কারণ মহানবীর নবুওয়াত সংক্রান্ত এ ধরনের বিশ্লেষণ আসলে পবিত্র ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী ও অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশ্লেষকের অজ্ঞতা থেকেই উদ্ভূত।

এ বিবাদ আসলে মূর্তিপূজা ত্যাগ ও এক স্রষ্টার উপাসনা ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। আর এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্নিহিত বিষয় এর চেয়ে বেশি কিছু ছিল না যা এখন আমরা উল্লেখ করেছি। তাই মহানবী (সা.)-এর বিশ্বজনীন আহবান যা এক ভুবন পরিমাণ বিশাল তত্ত্বজ্ঞান ও বিধানসমেত উদিত হয়েছিল তাকে কিভাবে এ ধরনের কলহের ফল বলে অভিহিত করা যাবে?

মহানবীর নবুওয়াতপ্রাপ্তির সময় ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নাত (রীতিনীতি) বলে পরিচিত দীনে হানীফ’তখনও হিজায থেকে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায় নি। হিজাযের এখানে-সেখানে দীনে হানীফের কিছু অনুসারী ছিল। তবে তাদের সংখ্যা এতটা ছিল না যে,যার ফলে তারা জনসমক্ষে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন অথবা একটি সামাজিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে অথবা কতিপয় ব্যক্তিকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলবে অথবা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো কোন ব্যক্তিত্বের প্রবর্তিত ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষামালার প্রামাণিক উৎস হবে।

দীনে হানিফের অনুসারীদের নিকট থেকে এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টায় বিশ্বাস,পারলৌকিক জীবনের প্রতি ঈমান এবং কখনো কখনো দু একটি নৈতিক শিক্ষা ও প্রবচন ব্যতীত আর কিছুই বর্ণিত হয় নি। আর যে তাওহীদী কাব্যসমূহ তাদের থেকে বর্ণিত বলে উল্লিখিত হয়েছে তা যে আসলে তাদের সাথেই সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ তাদেরই রচিত তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা না গেলেও এখনও তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি।195

এমতাবস্থায় কি সুমহান ইসলামী সংস্কৃতি,এ ধর্মের যুক্তিসংগত মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস,নিয়ম-নীতি এবং এ ধর্মের নৈতিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এ সব কিছুকে হিজাযের এখানে-সেখানে ছড়িয়ে থাকা গুটিকতক একেশ্বরবাদী দীনে হানীফের অনুসারীর সৃষ্টি ও কীর্তি বলে গণ্য করা সম্ভব? কারণ মহান আল্লাহ্,পারলৌকিক জীবন ও দু একটি নৈতিক প্রবচন ছাড়া আর কোন বিষয়ে তাদের (দীনে হানীফের অনুসারীদের) কোন বক্তব্য ছিল না।

কুরাইশদের অন্তর্নিহিত দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ

মহানবীর বয়স তখনও 35 বছর অতিক্রম করে নি,ঠিক এ সময় কুরাইশদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। মহানবীর দক্ষ হাতেই এ মহাবিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছিল। এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে,মহানবী (সা.) আপামর জনতার কাছে তখন কত সম্মানের পাত্র ছিলেন! আর সবাই তাঁর বিশ্বস্ততা ও সত্যবাদিতায় আস্থাশীল ছিল। নিচে ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হলো :

একবার এক ভয়ঙ্কর বন্যার ঢল পবিত্র মক্কা নগরীর উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে পবিত্র কাবার দিকে নেমে এসেছিল। যার ফলে মক্কা নগরীর কোন বাসগৃহ,এমনকি পবিত্র কাবাও অক্ষত থাকে নি। পবিত্র কাবার দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। কুরাইশরা পবিত্র কাবাগৃহ মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেয়,তবে তারা তা (কাবার ক্ষতিগ্রস্ত দেয়াল) ভাঙতে ভয় পাচ্ছিল। ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাই সর্বপ্রথম গাইতি হাতে নিয়ে কাবার দু টি স্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলে। তখন এক অব্যক্ত ভীতি তার পুরো শরীরকে ঘিরে ধরেছিল। মক্কার লোকেরা (কাবাগৃহ ভেঙ্গে ফেলার কারণে) এক মারাত্মক অশুভ ঘটনা ঘটার অপেক্ষা করছিল। কিন্তু যখন তারা দেখতে পেল যে,ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ্ মূর্তিসমূহের ক্রোধের শিকার হয় নি তখন তারা নিশ্চিত হলো যে,তার এ কাজে প্রতিমা ও মূর্তিগুলো অসন্তুষ্ট হয় নি। তাই পুরো কুরাইশ গোত্র পবিত্র কাবাগৃহ ভেঙ্গে পুনঃনির্মাণ করার কাজে অংশগ্রহণ করল। ঘটনাক্রমে ঐ দিনই এক রোমান ব্যবসায়ীর জাহাজ যা মিশর থেকে আসছিল তা মক্কার কাছে জেদ্দায় এক ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। কুরাইশগণ এ ঘটনা জানতে পেরে কয়েকজন লোককে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐ জাহাজের কাঠ কেনার জন্য জেদ্দায় প্রেরণ করে। আর পবিত্র কাবার কাঠের কাজ মক্কা নগরীতে বসবাসরত এক কিবতী কাঠমিস্ত্রীর হাতে সোপর্দ করা হয়। পবিত্র কাবার দেয়াল একজন মানুষের দেহের উচ্চতা সমান উঁচু করা হলে হজরে আসওয়াদ (কৃষ্ণ পাথর) যথাস্থানে স্থাপন করার সময় হয়ে যায়। এ সময় কুরাইশের শাখা গোত্রগুলোর গোত্রপতিদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয় (কৃষ্ণ পাথরটি যথাস্থানে স্থাপন করাকে কেন্দ্র করে)। বনি আবদুর দার ও বনি আদী গোত্রদ্বয় পরস্পর চুক্তি ও প্রতিজ্ঞাই করে বসে যে,তারা অন্যদের এ বিরল মর্যাদার অধিকারী হতে দেবে না। তারা তাদের চুক্তি ও অঙ্গীকারকে আরো মজবুত করার জন্য একটি পাত্র রক্ত দিয়ে পূর্ণ করে তাতে তাদের হাত ডুবিয়ে রঞ্জিত করেছিল।

এ ঘটনার কারণে পাঁচ দিন কাবাগৃহের নির্মাণ কাজ স্থগিত থাকে। কুরাইশ গোত্রের অবস্থা অত্যন্ত সংকীর্ণ ও শোচনীয় হয়ে গিয়েছিল। কুরাইশগণ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মসজিদুল হারামে অবস্থান নিয়ে একটি ভয়াবহ রক্তপাতের আশংকায় প্রমাদ গুণতে থাকে। অবশেষে আবু উমাইয়্যাহ্ বিন মুগরীহ্ আল মাখযুমী নামক কুরাইশ বংশোদ্ভূত এক বৃদ্ধ লোক কুরাইশ গোত্রপতিদের একত্র করে প্রস্তাব করল যে,সাফার দরজা (কিছু কিছু ঐতিহাসিক বর্ণনায় সালাম দরজা) দিয়ে প্রথম যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে তাকেই তারা তাদের এ বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসাবে গ্রহণ করবে। ঐ বৃদ্ধের এ প্রস্তাব সবাই গ্রহণ করল। হঠাৎ মহানবী (সা.) ঐ দরজা দিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন। তখন সবাই একসাথে বলে উঠল, এ ব্যক্তিই তো মুহাম্মদ যিনি সকলের আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত। আমরা তাঁর মধ্যস্থতা মেনে নিতে রাজী।” মহানবী (সা.) বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য একটি কাপড় আনতে বললেন। কাপড় আনা হলে তিনি নিজ হাতে হাজারে আসওয়াদ ঐ কাপড়ের মাঝখানে বসালেন। এরপর তিনি মক্কার চার গোত্রপতিকে এ কাপড়ের চার প্রান্ত ধরতে বললেন। যখন হাজারে আসওয়াদকে স্তম্ভের কাছে বহন করে আনা হলো তখন মহানবী (সা.) তাঁর পবিত্র হাত দিয়ে তা যথাস্থানে রাখলেন। আর এভাবে তিনি কুরাইশদের ঝগড়া-বিবাদ সুন্দরভাবে মিটিয়ে দিলেন যা কুরাইশদের এক ভয়ঙ্কর রক্তপাতের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।196

মহানবী হযরত আলীকে নিজ গৃহে নিয়ে আসেন

কোন এক বছর মক্কা ও এর আশেপাশের জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছিল। মহানবী (সা.) সিদ্ধান্ত নিলেন যে,শ্রদ্ধেয় চাচা আবু তালিব (রা.)-এর কাছে তাঁকে সাহায্য করার প্রস্তাব দেবেন এবং এভাবে তিনি তাঁর যাবতীয় সাংসারিক খরচ ও ব্যয়ভার কমিয়ে আনবেন। তাই তিনি তাঁর আরেক চাচা আব্বাস-এর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করলেন। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে,তাঁদের প্রত্যেকেই আবু তালিবের এক-একজন সন্তানকে নিজেদের ঘরে নিয়ে প্রতিপালন করবেন। তাই মহানবী (সা.) আলীকে এবং আব্বাস জাফরকে নিজ নিজ গৃহে নিয়ে যান।

প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক আবুল ফারাজ ইসফাহানী লিখেছেন : আব্বাস তালিবকে,হামযাহ্ জাফরকে এবং মহানবী (সা.) আলীকে নিজ নিজ ঘরে নিয়ে গেলেন। তখন মহানবী বলেছিলেন : আমি তাকেই পছন্দ ও গ্রহণ করেছি যাকে মহান আল্লাহ্ আমার জন্য মনোনীত করেছেন। 197

যদিও দুর্ভিক্ষের সময় আবু তালিবকে সাহায্য করাই ছিল বাহ্যিক ব্যাপার,তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল ভিন্ন একটি বিষয়। আর তা হলো মহানবীর ক্রোড়ে আলী (আ.)-এর প্রতিপালিত হওয়া এবং মহানবীর উন্নত চরিত্র তাঁর জীবনে বাস্তবায়ন করা।

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) নাহজুল বালাগায় এ ব্যাপারে বলেছেন,

“তোমাদের সবাই মহানবীর সাথে আমার নিকট সম্পর্ক ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত আছ। তিনি আমাকে তাঁর ক্রোড়ে প্রতিপালন ও বড় করেছেন এবং যখন আমি ছোট ছিলাম তখন তিনি আমাকে তাঁর বুকে টেনে নিতেন এবং আমাকে তাঁর পাশে তাঁর বিছানায় শোয়াতেন। আমি তাঁর সুঘ্রাণ নিতাম এবং প্রতিদিন তাঁর চরিত্র থেকে এক একটি বিষয় শিক্ষাগ্রহণ করতাম। 198

নবুওয়াতের পূর্বে তাঁর ধর্ম

যে মুহূর্তে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তখন থেকে যে দিন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন সে দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। অর্থাৎ এক ইলাহ্ ব্যতীত আর কারো উপাসনা করেন নি। তাঁর অভিভাবকগণও,যেমন আবদুল মুত্তালিব ও আবু তালিব সবাই একত্ববাদী ছিলেন। আপনাদের হয়তো স্মরণ আছে যে,হাতি বাহিনীর আক্রমণকালে আবদুল মুত্তালিব পবিত্র কাবার কড়া ধরে নিজ স্রষ্টার সাথে একান্ত নিভৃতে একজন এক খোদায় বিশ্বাসীর ন্যায় প্রার্থনা করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ্! একমাত্র তুমি ব্যতীত অন্য কারো প্রতি আমি আশা রাখি না...।”

ঠিক একইভাবে হযরত আবু তালিব (আ.) দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির সময় ভাতিজা হযরত মুহাম্মদকে নিয়ে ময়দানের দিকে যান এবং তাঁর উসীলায় আল্লাহর নামে শপথ করে বৃষ্টি প্রার্থনা করেন। এতৎসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রসিদ্ধ কবিতাও আছে যা ইতিহাসের গ্রন্থাবলীতে বর্ণিত হয়েছে। এমনকি মহানবী বুসরার পুরোহিত বাহীরার সাথে আলাপকালে আরবের প্রসিদ্ধ সব প্রতিমার ব্যাপারে তাঁর ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন। যখন পুরোহিত বাহীরা তাঁর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, লাত ও উয্যার শপথ,তোমাকে যা কিছু জিজ্ঞাসা করব আমাকে তার উত্তর দিবে”,তখন মহানবী তাঁকে তিরস্কার করে বলেছিলেন, আমার সামনে কখনই লাত ও উয্যার নামে শপথ করবেন না। এ পৃথিবীতে এতদুভয়ের উপাসনার ন্যায় আর কোন কিছুই আমার কাছে এত ঘৃণ্য নয়।” তখন বাহীরা বলেছিলেন, মহান আল্লাহর শপথ,আমি তোমাকে যা কিছু প্রশ্ন করব সে সম্পর্কে আমাকে অবগত করবে।” তখন মহানবী বলেছিলেন, আপনার যা ইচ্ছা তা আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। 199

এ সব কিছু থেকে প্রতীয়মান হয় যে,মহানবী (সা.) ও আবুদল মুত্তালিবের সন্তানগণ সবাই মহান আল্লাহর উপাসক এবং একত্ববাদী ছিলেন। আর তাঁর একত্ববাদী হবার সর্বোত্তম দলিল হচ্ছে হিরা গুহায় নবুওয়াতের আগে তাঁর নিভৃতে মহান আল্লাহর ইবাদাত ও ধ্যান। সীরাত রচয়িতাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে,মহানবী (সা.) প্রতি বছর কয়েক মাস হিরা গুহায় মহান আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করতেন। এ ব্যাপারে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন,

و لقد كان يُجاور في كلّ سنة بحراء فأراه و لا يراه غيره

“মহানবী প্রতি বছর হিরা গুহায় নিভৃতে অবস্থান করতেন;তাই কেবল আমিই (সেখানে) তাঁকে দেখতাম এবং অন্য কেউ তাঁকে দেখতে পেত না। 200

এমনকি যে দিন তিনি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন সে দিন তিনি হিরা গুহায় ইবাদাতে মশগুল ছিলেন।

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মহানবীর জীবনের এ অধ্যায় প্রসঙ্গে বলেছেন, যে দিন থেকে মহানবী (সা.) দুধপান করা থেকে বিরত হলেন সে দিন থেকে মহান আল্লাহ্ তাঁর শিক্ষা ও প্রতিপালনের জন্য সবচেয়ে বড় ফেরেশতাকে নিযুক্ত করেছিলেন এবং সে ফেরেশতাই দিবারাত্রি তাঁর দেখাশোনা করতেন এবং তাঁকে সুন্দর চরিত্র ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিতেন। 201

সুতরাং এমন মহান পরিবারের মধ্যে প্রতিপালিত ব্যক্তি যিনি স্তন্যপান কালোত্তর সময় থেকে জগতের সবচেয়ে বড় ফেরেশতার তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষিত হয়েছেন তিনি অবশ্যই একত্ববাদী ছিলেন এবং মুহূর্তের জন্যও তিনি তাওহীদের পথ থেকে সামান্যতম বিচ্যুত হন নি।

এ ব্যাপারে আর কোন কথা নেই। তবে একটি বিষয়ে কথা আছে,আর তা হলো যে,তিনি এ সময় অর্থাৎ নবুওয়াতের ঘোষণা দেয়ার আগে কোন্ আসমানী ধর্ম অনুসরণ করতেন? তিনি কি হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ধর্মের ওপর ছিলেন,না হযরত ঈসা মসীহর ধর্ম অথবা নিজ ধর্ম ও শরীয়তের ওপর বহাল ছিলেন? এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অভিমত রয়েছে যে,এ ব্যাপারে আলোচনা করা আমাদের এ ক্ষুদ্র ও সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়।202

হযরত ঈসা মসীর সাথে তুলনা

নিঃসন্দেহে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সব দিক থেকেই অতীতের সকল নবী-রাসূলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর কতিপয় নবী-রাসূলের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন বলেছে, কিছু কিছু নবী শৈশবেই নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাঁদের ওপর ঐশী গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছিল।” যেমন হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য নিম্নরূপ :

) يا يحيى خذ الكتاب بقوّة و آتيناه الحكم صبيّا(

“হে ইয়াহ্ইয়া! (খোদায়ী) শক্তির দ্বারা ঐশী গ্রন্থ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং আমরা তাকে শৈশব অবস্থায় বিচার করার ক্ষমতা দিয়েছিলাম।”

যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম দোলনায় ছিলেন তখন বনি ইসরাইলের নেতা ও গোত্রপতিগণ তাঁর মা মরিয়মকে চাপের মধ্যে রেখে তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন যে,তিনি কিভাবে সন্তানের জননী হয়েছেন। হযরত মরিয়ম দোলনার দিকে নির্দেশ করে তাদের বুঝিয়ে দিলেন যেন তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর দোলনায় শায়িত নবজাতক শিশু ঈসার কাছ থেকে জেনে নেয়। নবজাতক শিশু হযরত ঈসা (আ.) প্রাঞ্জল ও বলিষ্ঠ ভাষায় তাদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন,

) إنّي عبد الله آتاني الكتاب و جعلني نبيّا، و جعلني مباركا أينما كنت و أوصاني بالصّلوة و الزّكوة ما دمت حيّا(

  আমি মহান আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে ঐশী গ্রন্থ দিয়েছেন,আমাকে নবী করেছেন এবং আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যে পর্যন্ত আমি জীবিত আছি তত দিন পর্যন্ত তিনি আমাকে নামায পড়তে ও যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন।” (সূরা মরিয়ম : 31)

হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম তাঁর ধর্মের যাবতীয় মৌল ও শাখাগত বিষয় একদম সেই শৈশব ও মাতৃস্তন্য পানকালীন সময় জনতার কাছে স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন এবং তাদের কাছে তিনি যে তাওহীদের অনুসারী এবং মহান আল্লাহর দাস তা প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন। এখন আমরা আপনাদের বিবেককে সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করছি। আপনারাই বিচার করুন যেখানে ইয়াহ্ইয়া (আ.) ও ঈসা (আ.) শৈশব ও মাতৃস্তন্য পানকালীন সময় থেকেই আন্তরিকভাবে মুমিন (বিশ্বাসী) ছিলেন এবং তাঁদের মুখে বাস্তব মানবপ্রকৃতি বা স্বভাবধর্ম ঐ অতটুকু বয়সেই উচ্চারিত হয়েছে সেখানে আমরা কি বলতে পারি যে,বিশ্বাসীদের একমাত্র নেতা ও বিশ্বের সর্বোত্তম মানব 40 বছর বয়স পর্যন্ত মুমিন ছিলেন না,অথচ তিনিই হিরা গুহায় ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় মহান আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী ও প্রার্থনায় রত ছিলেন!