চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 100162
ডাউনলোড: 8503


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 100162 / ডাউনলোড: 8503
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

3. আমিই সিদ্দীকে আকবর

হযরত আলী (আ.)-এর বাণী ও ভাষণসমূহের মধ্যে এ বাণী এবং এতদসদৃশ অনেক বাণী রয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন,

أنا عبدُ اللهِ وأخو رسولِ اللهِ وأنا الصّدّيقُ الأكبرُ لا يقولها بعدي إلّا كاذبٌ مفتر ولقد صلَّيتُ مع رسولِ اللهِ قبل النّاسِ بِسبعِ سنينَ وأنا أوّلُ مَنْ صلّى

“আমি মহান আল্লাহর বান্দা এবং রাসূলুল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভ্রাতা। আমিই সিদ্দীকে আকবার (সবচেয়ে বড় সত্যবাদী)। একমাত্র অপবাদ আরোপকারী মিথ্যাবাদী ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি আমার পরে এ ধরনের দাবি করবে না। আমি মহানবী (সা.)-এর সাথে সকল মানুষের নামায পড়ারও 7 বছর আগে নামায পড়েছি। যারা তাঁর সাথে নামায পড়েছেন তাঁদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম। 229

মহানবী (সা.) থেকে বিভিন্ন ধরনের বাক্য ও বাচনভঙ্গি সহকারে বেশ কিছু মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন,

أوَّلُكم وارداً عليَّ الحوضَ أوّلُكم إسلاماً عليٌّ ابن أبي طالبٍ

“তোমাদের মধ্য থেকে আমার কাছে হাউযে কাউসারে আগমনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তিটি হচ্ছে তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী আলী ইবনে আবি তালিব।”

এ হাদীসের সনদ ও দলিল-প্রমাণ জানার জন্য আল গাদীর গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডের 320 পৃষ্ঠা (নাজাফ সংস্করণ) অধ্যয়ন করুন।

যখন কোন ব্যক্তি পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এ সব হাদীস অধ্যয়ন করবেন তখন তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে হযরত আলীর অগ্রবর্তী হওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবে। আর তখন তিনি অন্য দু টি বক্তব্য ও অভিমত যা আসলেই স্বল্প সূত্রে বর্ণিত অর্থাৎ সংখ্যায় নগণ্য তা কখনই গ্রহণ করবেন না। 60 জনের বেশি সাহাবী ও তাবেয়ী230 আলী ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী’-এ বক্তব্য ও অভিমতের সমর্থক। এমনকি তাবারীই হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি বিষয়টিকে সন্দেহযুক্ত করেছেন এবং কেবল অন্যের বক্তব্য ও অভিমত উদ্ধৃত করার ওপর নির্ভর করেছেন। তিনি দ্বিতীয় খণ্ডের 215 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন, নিজ পিতাকে ইবনে সাঈদ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হযরত আবু বকরই কি সর্বপ্রথম ঈমান এনেছিলেন? তিনি (সাঈদ) বলেছিলেন, না,তার আগে 50 জনেরও অধিক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। তবে তাঁর ইসলাম অন্যদের ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল।”

ইসহাকের সাথে খলীফা মামুনের কথোপকথন

ইবনে আবদে রাব্বিহ্ ইকদুল ফরীদ 231 গ্রন্থে  একটি চমৎকার কাহিনী বর্ণনা করেছেন যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ : খলীফা মামুন একবার একটি বিতর্ক সভার আয়োজন করেন এবং প্রসিদ্ধ আলেম ইসহাককে ঐ সভার সভাপতি নিয়োগ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অন্যদের ওপর হযরত আলীর অগ্রবর্তিতা প্রমাণিত হওয়ার পর ইসহাক বললেন, যখন আলী ঈমান এনেছিলেন তখন তিনি শিশু ছিলেন,তবে তখন আবু বকর পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছিলেন;এ কারণেই তাঁর ঈমান আলীর ঈমানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল।”

মামুন সাথে সাথে তাঁর কথার উত্তর দিলেন, মহানবী (সা.) কি আলীকে তাঁর বাল্যকালে ঈমান আনয়ন করার ব্যাপারে আহবান করেছিলেন নাকি তাঁর ঈমান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহামের (আত্মিক-আধ্যাত্মিক প্রেরণা) মাধ্যমে হয়েছিল? কখনই বলা যাবে না যে,তাঁর ঈমান ইলহামপ্রসূত ছিল। কারণ মহানবী (সা.)-এর ঈমানও ইলহামপ্রসূত ছিল না,বরং তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমেই হয়েছিল। আর এ ক্ষেত্রে আলীর কথা তো বাদই দিলাম। সুতরাং যে দিন মহানবী (সা.) তাঁকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানালেন সে দিন কি তিনি নিজ থেকে এ কাজটি (আলীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানানো) আঞ্জাম দিয়েছিলেন নাকি মহান আল্লাহ্ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন? আমরা কখনই ভাবতেই পারব না যে,মহানবী (সা.) আল্লাহ্পাকের আদেশ ব্যতীত নিজেকে এবং অন্যকে কষ্টের মধ্যে ফেলবেন। তাই বাধ্য হয়ে অবশ্যই বলতে হবে যে,মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর আদেশের ভিত্তিতেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানিয়েছিলেন। তাই মহান জ্ঞানী আল্লাহ্ কি মহানবীকে নির্দেশ দিতে পারেন যে,তিনি একজন অনুপযুক্ত শিশুকে-যার ঈমান ও ঈমানশূন্যতার মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানাবেন? কাজেই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে,মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্পাক থেকে এ ধরনের কাজ অসম্ভব।

অতএব,আমরা অবশ্যই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব যে,হযরত আলী (আ.)-এর ঈমান সহীহ ও দৃঢ় ছিল যা অন্যদের ঈমান থেকে কোন অংশেই কম ছিল না। আর অগ্রগামীরাই অগ্রগামী তারাই মহান আল্লাহর নিকটবর্তী( السّابقونَ السّابقونَ أولئك المقرّبون ) -এ আয়াতটির সর্বোৎকৃষ্ট বাস্তব নমুনা হচ্ছেন স্বয়ং আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)।”

ওহী অবতীর্ণ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গ

ওহীর আলোয় মহানবী (সা.)-এর আত্মা ও মন আলোকিত হয়ে গিয়েছিল;তিনি অত্যন্ত ভারী ও গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন যা মহান আল্লাহ্ তাঁর ওপর অর্পণ করেছিলেন। বিশেষ করে ঐ সময় যখন মহান আল্লাহ্ তাঁকে সম্বোধন করে বলেছিলেন,

) يا أيّها المدَّثِّرُ قُمْ فأنذرْ وربَّك فكبِّرْ(

“হে চাদরাবৃত,উঠুন,সতর্ক করুন,আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন” -এ স্থলে এসে ঐতিহাসিকগণ,বিশেষ করে ঐতিহাসিক তাবারী যাঁর ইতিহাসগ্রন্থ ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের কল্পকাহিনী ও উপাখ্যান দিয়ে সজ্জিত নয় তিনিانقطاع وحي অর্থাৎ ওহী অবতীর্ণ বন্ধ থাকা’ শীর্ষক একটি বিষয়ের অবতারণা করে বলেছেন, ওহীর ফেরেশতাকে দেখা এবং পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত শ্রবণ করার পর মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আরো বাণী অবতীর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন,কিন্তু না ঐ সুদর্শন ফেরেশতার কোন খবর ছিল,না আর কোন গায়েবী বার্তা তিনি শুনতে পেলেন।

রিসালাতের সূচনালগ্নে যদি প্রত্যাদেশ বন্ধ থাকার বিষয় সত্য হয়ে থাকে তাহলে তা পবিত্র কোরআনের ধারাবাহিক অবতরণ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। নীতিগতভাবে মহান আল্লাহর ঐশী ইচ্ছা এটিই ছিল যে,বিশেষ কল্যাণের ভিত্তিতে তিনি তাঁর ওহী ধারাবাহিক ও পর্যায়ক্রমিকভাবে অবতীর্ণ করবেন। আর যেহেতু ওহীর সূচনালগ্নে মহান আল্লাহর ওহী পরপর অর্থাৎ অবিরামভাবে অবতীর্ণ হয় নি তাই এ বিষয়টি অর্থাৎ ওহী অবতরণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থে আলোচিত হয়েছে;আর কখনই প্রকৃত অর্থে ওহী অবতীর্ণ হওয়া বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ থাকে নি।

যেহেতু এ বিষয়টি (ওহী অবতরণ বন্ধ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া) স্বার্থান্বেষী মতলববাজ লেখকদের (অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার) দলিল-প্রমাণে পরিণত হয়েছে তাই আমরা এ ব্যাপারে এমনভাবে আলোচনা করতে চাই যার ফলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে,ওহী অবতরণ বন্ধ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার শিরোনামে যে বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে তা বাস্তবতাবর্জিত এবং এ ভ্রান্ত বিষয়ের সমর্থনে পবিত্র কোরআনের যে কয়টি আয়াত ব্যবহার করা হয়েছে আসলে এ সব আয়াতের এ ধরনের প্রয়োগ ও ব্যবহারেরও কোন বাস্তবতা নেই।

বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য যে ঘটনাটি তাবারী বর্ণনা করেছেন তা আমরা এখানে উল্লেখ করব এবং এরপর আমরা তা খণ্ডন করব। তিনি লিখেছেন : যখন ওহীর পরম্পরা বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ হয়ে গেল,নবুওয়াতের অভিষেকের সূচনালগ্নে মহানবী (সা.)-এর মধ্যে যে অস্থিরতা,সন্দেহ ও সংশয় দেখা দিয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি হলো। হযরত খাদীজা’ও তাঁর মতো অস্থির হয়ে তাঁকে বলেছিলেন : আমি অনুমান করছি,আল্লাহ্ আপনার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। তিনি এ কথা শোনার পর হিরা পর্বতের দিকে চলে গেলেন। ঠিক তখনই পুনরায় তাঁর কাছে ওহী অবতীর্ণ হলো এবং তাঁকে নিম্নোক্ত এ কয়টি আয়াতের মাধ্যমে সম্বোধন করে বলা হলো :

) والضّحى واللّيل إذا سجى ما وَدَّعكَ ربُّك وما قلى و للآخرةُ خيرٌ لك من الأولى ولسوف يعطيك ربُّك فترضى، ألم يجدك يتيماً فآوى ووجدك ضالّاً فهدى ووجدك عائلاً فأغنى فأمّ اليتيمَ فلا تقْهر وأمَّ السّائل فلا تنهر وأمّا بنعمة ربِّك فحدِّثْ(

“মধ্যা হ্নের শপথ,আর রাতের শপথ যার আঁধার (সব কিছুকে) ছেয়ে ফেলে;আপনার প্রভু আপনাকে ত্যাগ করেন নি এবং (আপনার প্রতি) শত্রুতায় লিপ্ত হন নি। নিশ্চয়ই দুনিয়া অর্থাৎ পার্থিবজগৎ থেকে আখেরাত আপনার জন্য উত্তম। অতি শীঘ্রই আপনার প্রভু আপনাকে এমন সব জিনিস দেবেন যে,এর ফলে আপনি সন্তুষ্ট ও খুশী হবেন। আপনি স্মরণ করুন,যখন আপনি অনাথ ছিলেন তখন তিনি আপনাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। যখন আপনি অস্থির ও দিশেহারা ছিলেন তখন আপনাকে তিনি পথ-প্রদর্শন করেছেন,যখন আপনি দরিদ্র ও রিক্তহস্ত ছিলেন তখন তিনি আপনাকে অভাবশূন্য,বিত্তশালী করেছেন। তাই কখনই কোন অনাথকে কষ্ট দিবেন না এবং ভিক্ষুকের প্রতি রাগ করবেন না। আর আপনার প্রভুর নেয়ামতের ব্যাপারে আলোচনা করুন। (সূরা দুহা : 1-11)

এ সব আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে মহানবী (সা.)-এর অন্তরে অস্বাভাবিক ধরনের আনন্দ ও প্রশান্তির উদ্ভব হয় এবং তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে,যা কিছু তাঁর ব্যাপারে বলা হয়েছে তা সবই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।

এটি ইতিহাস’ হতে পারে না,বরং মিথ্যা কল্প-কাহিনী

হযরত খাদীজাহ্ (আ.)-এর জীবনেতিহাস ইতিহাসের পাতায় পাতায় সুগ্রথিত হয়ে আছে। খাদীজার দৃষ্টিপটে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী এবং সৎ কর্মসমূহ ছিল প্রাণবন্ত ও জীবন্ত। তিনি মহান আল্লাহকে ন্যায়পরায়ণ বলে বিশ্বাস করতেন। তাই তাঁর মধ্যে কিভাবে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে এ ধরনের অদ্ভুত ও ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে?

এমন ব্যক্তিকেই নবুওয়াতে অভিষিক্ত করা হয় যিনি প্রশংসিত ও উচ্চাঙ্গের চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী। আর স্বয়ং মহানবী (সা.) যতক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনর উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী এবং বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে এ পদও দেয়া হবে না। এ সব চারিত্রিক গুণের শীর্ষে রয়েছে ইসমাত (পবিত্রতা),আত্মিক প্রশান্তি ও স্থিরতা এবং মহান স্রষ্টার ওপর নির্ভরশীলতা;আর এ ধরনের গুণাবলীর অধিকারী হওয়ার কারণে তাঁর মনে এ ধরনের অলীক ধ্যান-ধারণার উদ্ভব হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব ও অবাস্তব। পণ্ডিতগণ বলেছেন,মহান নবীদের পূর্ণতাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া তাঁদের শৈশব ও বাল্যকাল থেকেই শুরু হয় এবং তাঁদের দৃষ্টির সামনে থেকে পর্দা ও অন্তরায়সমূহ একের পর এক বিদূরিত হতে থাকে এবং তাঁদের জ্ঞানগত যোগ্যতা পূর্ণতার পর্যায়ে উপনীত হয়। এর ফলে তাঁরা যা শোনেন এবং দেখেন সে সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহ তাঁদের মধ্যে দেখা দেয় না। যে ব্যক্তি এ সব পর্যায় আয়ত্ত করতে সক্ষম হবেন,মানুষের বিভিন্ন কথাবার্তা ও মন্তব্য তাঁর অন্তরে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করতে পারবে না।

সূরা আদ-দুহার আয়াতসমূহ,বিশেষ করে( ما ودّعك ربّك وما قلى ) অর্থাৎ আপনার প্রভু আপনাকে ত্যাগ করেন নি এবং (আপনার বিরুদ্ধে) শত্রুতায় লিপ্ত হন নি’-এ আয়াতটি থেকে এতটুকু প্রতীয়মান হয় যে,কোন এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে এ কথা বলেছিল। তবে কে বলেছিল এবং তার এ কথা কতখানি মহানবী (সা.)-এর মন-মানসিকতার ওপর (নেতিবাচক) প্রভাব বিস্তার করেছিল এ ব্যাপারে কোন কিছুই উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয় নি।

কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, কয়েকজন মুশরিক মহানবীকে এ কথা বলেছিল। আর এ সম্ভাবনার ভিত্তিতেই সূরা আদ-দুহার সকল আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সূচনালগ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে না। কারণ নবুওয়াতের অভিষেকের সূচনালগ্নে একমাত্র খাদীজাহ্ ও আলী ব্যতীত আর কোন ব্যক্তিই ওহী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না-যার ফলে তার পক্ষে এ ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য ও কটুক্তি করা সম্ভব হবে। এমনকি পুরো তিন বছর মহানবী (সা.)-এর রিসালাত ও নবুওয়াত অধিকাংশ মুশরিক থেকে গোপন রাখা হয়েছিল। আমরা এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত আলোচনা রাখব। এ সময় তিনি সাধারণ মানুষের কাছে ইসলাম ধর্ম প্রচারের আদেশ পান নি। অতঃপর( فاصدع بما تؤمر )‘ আপনি যে ব্যাপারে আদিষ্ট হচ্ছেন তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন’-এ আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য জনগণকে আহবান জানিয়েছিলেন অর্থাৎ প্রকাশ্যে মহানবীর দাওয়াতী কর্মকাণ্ড শুরু হয় উপরিউক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পরপরই।

ওহী অবতরণ বন্ধ ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারে সীরাত রচয়িতাদের মধ্যে মতপার্থক্য

পবিত্র কোরআনে কোথাও ওহী অবতরণ বন্ধ ও বিচ্ছিন্ন থাকার কথা বর্ণিত হয় নি। এমনকি এতৎসংক্রান্ত সামান্যতম ঈঙ্গিতও দেয়া হয় নি। এ বিষয়টি কেবল সীরাত ও তাফসীরের গ্রন্থসমূহেই দেখা যায়। আর ওহী অবতরণ বন্ধ ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ ও সময়কালের ব্যাপারে সীরাত রচয়িতা ও মুফাসসিরদের এতটা মতপার্থক্য রয়েছে যে,এর ফলে তাঁদের কারো বক্তব্য ও অভিমতের ওপর মোটেও নির্ভর করা যায় না। আমরা নিচে তাঁদের অভিমত ও বক্তব্যসমূহ উত্থাপন করছি :

1. ইয়াহুদীরা মহানবী (সা.)-কে আত্মা,গুহাবাসীদের অর্থাৎ আসহাবে কাহাফের কাহিনী এবং যুলকারনাইন-এ তিনটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। মহানবী (সা.) ইনশাআল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহ্পাক যদি চান’ না বলে বলেছিলেন, আগামীকাল আমি তোমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেব।’ এ কারণে মহান আল্লাহর ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মুশরিকরা ওহী অবতীর্ণ হতে বিলম্ব হওয়ায় খুব আনন্দিত হয়ে বলতে লাগল, মহান আল্লাহ্ মুহাম্মদকে ত্যাগ করেছেন। মুশরিকদের এ অমূলক চিন্তা খণ্ডন করার জন্যই সূরা দুহা অবতীর্ণ হয়। 232

সুতরাং উপরিউক্ত বর্ণনার ভিত্তিতে সূরা আদ-দুহা মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াত ও রিসালাতে অভিষেকের সূচনালগ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট তা বলা যায় না। কারণ ইয়াহুদী আলেমগণ মহানবী (সা.)-এর কাছে উপরিউক্ত বিষয় তিনটি সম্পর্কে নবুওয়াতে অভিষেকের আনুমানিক 7ম বর্ষে প্রশ্ন করেছিল যখন মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের বাস্তবতা ইয়াহুদী আলেমদের কাছে উত্থাপন করে তা আসলে সত্য কিনা তা জানার জন্য কুরাইশদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল মদীনা সফরে গিয়েছিল। ঐ সময় ইয়াহুদী পণ্ডিতগণ উক্ত প্রতিনিধি দলটিকে উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ে মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছিল।233

2. মহানবী (সা.)-এর খাটের নিচে একটি কুকুরের বাচ্চা মারা গেলে কেউ তা প্রত্যক্ষ করে নি। মহানবী (সা.) ঘর থেকে বাইরে গেলে খাওলা ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময় তা বাইরে ফেলে দেয়। ঐ সময় ওহীর ফেরেশতা সূরা আদ দুহাসহ আগমন করেন। মহানবী (সা.)-কে ফেরেশতা বলেছিলেন,إنّا لا ندخل بيتاً فيه كلبٌ যে গৃহে কুকুর আছে সেই গৃহে আমরা (ফেরেশতাগণ) প্রবেশ করি না। 234

3. মুসলমানগণ ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মহানবী (সা.) বলেছিলেন, যখন তোমরা তোমাদের নখ ও গোঁফ ছোট করো না তখন কিভাবে ওহী অবতীর্ণ হবে? 235

4. হযরত উসমান একবার কিছু আঙ্গুর অথবা রসালো খেজুর হাদিয়াস্বরূপ মহানবী (সা.)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। ভিক্ষুক এলে মহানবী তা তাকে দিয়ে দেন। হযরত উসমান ঐ আঙ্গুর বা খেজুর ঐ ভিক্ষুকের কাছ থেকে কিনে তা পুনরায় মহানবীর কাছে প্রেরণ করেন। আবারও ঐ ভিক্ষুক মহানবী (সা.)-এর কাছে যায় এবং এ কাজ তিনবার সংঘটিত হয়। অবশেষে মহানবী (সা.) দয়ার্দ্র কণ্ঠে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি ভিক্ষুক না ব্যবসায়ী। ঐ ভিক্ষুকটি মহানবী (সা.)-এর কথায় খুব মর্মাহত হয় এবং এ কারণেই মহানবীর ওপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটে।236

5. মহানবী (সা.)-এর কোন এক স্ত্রীর অথবা আত্মীয়ের কুকুরশাবক মহানবী (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.)-এর অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।237

6. মহানবী (সা.) ওহী অবতরণে বিলম্ব হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন ইখতিয়ার নেই।”

এরপরও এ ক্ষেত্রে আরো কিছু অভিমত ও বক্তব্য আছে। আগ্রহী পাঠকবর্গ বিভিন্ন তাফসীর অধ্যয়ন করে দেখতে পারেন।238

কিন্তু ইত্যবসরে তাবারী এমন একটি দিক ও কারণ উদ্ধৃত করেছেন এতৎসংক্রান্ত বিভিন্ন কারণ ও দিকের মধ্যে কেবল এ দিকটির প্রতিই অর্বাচীন লেখকগণ যাঁরা কোন বিবেচনা ও যাচাই না করে অভিমত ব্যক্ত করেন তাঁরা আকৃষ্ট হয়েছেন;আর তাঁরা একে মহানবী (সা.)-এর অন্তরে সন্দেহ ও সংশয়ের উদ্রেক হওয়ার নিদর্শন বলে গণ্য করেছেন। সেই দিক বা কারণ হচ্ছে,হিরা পর্বতের গুহায় ওহী অবতরণ ও নবুওয়াতে অভিষেকের ঘটনার পর মহানবী (সা.)-এর ওপর ওহী অবতরণ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। হযরত খাদীজাহ্ (আ.) তখন মহানবীকে বলেছিলেন, আমি ধারণা করছি,মহান আল্লাহ্ আপনার ওপর অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং আপনার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়েছেন। আর ঠিক তখনই ওহী অবতীর্ণ হলো :

) ما ودّعك ربُّك وما قلى(

“আপনার প্রভু আপনাকে ত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি শত্রুভাবাপন্নও হন নি। 239

এ সব অর্বাচীন লেখকের দুরভিসন্ধি পোষণ অথবা যাচাই বাছাই ও গবেষণা না করার প্রমাণ হচ্ছে এই যে,এ ব্যাপারে এত সব বর্ণনা,বক্তব্য ও অভিমত থাকতে তাঁরা কেবল এ বর্ণনাটি গ্রহণ করে তা এমন এক ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে তাঁদের ফায়সালা ও মতামতের ভিত্তি হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন যাঁর সমগ্র জীবনে সন্দেহ ও সংশয়ের কোন নিদর্শনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিম্নোক্ত দিকগুলো বিবেচনা করলে উপরিউক্ত বর্ণনার ভিত্তিহীনতা ও মিথ্যা হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। দিকগুলো হলো :

1. হযরত খাদীজাহ্ (আ.) এমন এক মহীয়সী নারী ছিলেন যিনি সর্বদা মহানবীকে ভালোবাসতেন এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি স্বামীর পথে আত্মত্যাগ করে গেছেন। তিনি তাঁর সমুদয় ধন-সম্পদ মহানবী (সা.)-এর সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য ওয়াক্ফ্ করে দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতে অভিষেকের বর্ষে তাঁদের বৈবাহিক জীবনের 15টি বছর অতিবাহিত হয়েছিল। এ দীর্ঘ সময় হযরত খাদীজাহ্ (আ.) মহানবী (সা.) থেকে কেবল পবিত্রতা ব্যতীত আর কিছুই প্রত্যক্ষ করেন নি। তাই মহানবী (সা.)-এর প্রতি অনুরক্ত ও নিবেদিতা এমন নারীর পক্ষে এ ধরনের কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথা বলা কখনই সম্ভব নয়।

2.( ما ودَّعك ربُّك وما قلى ) (আপনার প্রভু আপনাকে ত্যাগ করেন নি এবং আপনার বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত হন নি)-এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় না যে,হযরত খাদীজাহ্ এ ধরনের (জঘন্য) উক্তি করে থাকতে পারেন,বরং এ আয়াতটি থেকে এতটুকু প্রমাণিত হয় যে,মহানবী (সা.)-এর ব্যাপারে কোন ব্যক্তি এ ধরনের কথা বা মন্তব্য করেছিল। তবে এ উক্তি কে করেছিল এবং কেনই বা সে এ ধরনের উক্তি করেছিল তা স্পষ্ট নয়।

3. এ ঘটনা বা কাহিনীর বর্ণনাকারী যিনি একদিন খাদীজাহ্ (আ.)-কে মহানবী (সা.)-এর ভরসা ও সান্ত্বনা দানকারী হিসাবে এভাবে পরিচিত করিয়ে দেন যে,তিনি এমনকি মহানবী (সা.)-কে আত্মহত্যা করা থেকে বিরত রেখেছিলেন,অথচ আরেকদিন সে একই ব্যক্তি আবার হযরত খাদীজার চেহারা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে,তিনি (নাউযুবিল্লাহ্) নাকি মহানবীকে বলেছিলেন, মহান আল্লাহ্ আপনার শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছেন। তাহলে আমরা কি এ কথা বলতে পারি না যে,মিথ্যাবাদীর স্মৃতিশক্তি নেই? (যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী সে আগে কি কথা বলেছে পরে তা স্মরণ রাখতে পারে না। তাই তার পূর্বের বক্তব্যের সাথে পরবর্তী উক্তি ও বক্তব্যের পার্থক্য স্পষ্ট হয়।)

4. হিরা পর্বতের গুহার ঘটনা অর্থাৎ নবুওয়াতের অভিষেক এবং সূরা আলাকের কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সূরা দুহা অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত যদি ওহী অবতরণ বন্ধ থাকে এমতাবস্থায় সূরা দুহাকেই কোরআন অবতরণের ধারাবাহিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র কোরআনের 2য় সূরা বলে গণ্য করতে হবে,অথচ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি পবিত্র কোরআনের দশম সূরা।240

সূরা দুহা অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত যে সব সূরা অবতীর্ণ হয়েছিল সেগুলো নিচে বর্ণিত হলো :

1. সূরা আল আলাক,2. সূরা আল কলম,3. সূরা আল মুয্যাম্মিল,4. সূরা আল মুদ্দাসসির,5. সূরা লাহাব,6. সূরা আত তাকভীর,7. সূরা আল ইনশিরাহ্,8. সূরা আল আসর,9. সূরা আল ফাজর এবং 10. সূরা আদ দুহা।

ইতোমধ্যে ইয়াকূবী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে সূরা দুহা অবতীর্ণ হওয়ার তারিখের দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআনের 3য় সূরা হিসাবে গণ্য করেছেন। আর এ অভিমতটিও উপরিউক্ত বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়।

ওহী অবতরণ কতদিন বন্ধ ছিল এতৎসংক্রান্ত মতপার্থক্য

ওহী অবতরণ বন্ধ থাকার সময়কাল অত্যন্ত অস্পষ্ট এবং বিভিন্নভাবে তা বর্ণিত হয়েছে। আর তাফসীরের গ্রন্থসমূহে ওহী অবতরণ কতদিন বন্ধ ছিল সে ব্যাপারে নিম্নোক্ত বক্তব্যসমূহ পরিলক্ষিত হয়। যেমন 4 দিন,12 দিন,15 দিন,19 দিন,25 দিন ও 40 দিন।

তবে পবিত্র কোরআনের ধারাবাহিক অবতরণের অন্তর্নিহিত দর্শন নিয়ে যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব যে,ওহী অবতরণ বন্ধ থাকার বিষয়টি কোন বিচ্ছিন্ন ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ছিল না। কারণ পবিত্র কোরআন প্রথম দিন থেকেই ঘোষণা করেছে যে,মহান আল্লাহ্ এ গ্রন্থটি (কোরআন) ধীরে ধীরে (পর্যায়ক্রমে) নাযিল করার ইচ্ছা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এতদপ্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে :

) وقرآناً فرقْناه لتقرأه على النّاسِ على مكْثٍ(

“আর এ কোরআনকে ধাপে ধাপে নাযিল করেছি যাতে করে আপনি তা ধীরে ধীরে বিরতিসহকারে জনগণের কাছে পাঠ করেন। (সূরা আল ইসরা : 106)

পবিত্র কোরআনের অন্যত্র এ গ্রন্থের পর্যায়ক্রমিক অবতরণের মূল রহস্য উন্মোচন করে বলা হয়েছে :

) وقال الذين كفروا لولا نزّل عليه القرآن جملةً واحدةً كذالك لنثبّت به فؤادك ورتّلناه ترتيلاً(

“আর কাফিররা বলেছে : কেন কোরআনকে একবারে অবতীর্ণ করা হয় নি;আর আমরা তা এভাবেই অবতীর্ণ করেছি যাতে করে আমরা আপনার অন্তঃকরণকে দৃঢ় ও স্থির রাখতে পারি এবং আমরা এ গ্রন্থকে এক ধরনের বিশেষ শৃঙ্খলা দান করেছি। (সূরা ফুরকান :32)

আমরা যদি পবিত্র কোরআনের অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে একটু গভীরভাবে চিন্তা করি,তাহলে কখনই এটি আশা করা উচিত নয় যে,প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তে হযরত জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-এর সাথে যোগাযোগ রাখবেন এবং আয়াত অবতীর্ণ হবে;বরং পবিত্র কোরআনের পর্যায়ক্রমিক অবতরণের যে সব অন্তর্নিহিত রহস্য ও কারণ বিদ্যমান আছে এবং মুসলিম গবেষক আলেমগণ যেগুলো বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন241 সেগুলোর জন্যই পবিত্র কোরআন চাহিদা ও প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন সময়গত ব্যবধানে প্রশ্নকারীদের প্রশ্নসমূহের ভিত্তিতে অবতীর্ণ হয়েছে। প্রকৃত

প্রস্তাবে কখনই ওহী অবতরণ বন্ধ থাকে নি,বরং ওহী তাৎক্ষণিক অবতরণের কোন কারণই আসলে তখন বিদ্যমান ছিল না।

চতুর্দশ অধ্যায় : গোপনে দাওয়াত