চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103655
ডাউনলোড: 9120


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103655 / ডাউনলোড: 9120
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

কুরাইশদের অদ্ভুত অজুহাত

একদিন সূর্যাস্তের পর উতবাহ্,শাইবাহ্,আবু সুফিয়ান,নযর বিন হারিস,আবদুল বুহতুরী,ওয়ালীদ বিন মুগীরাহ্,আবু জাহল,আস ইবনে ওয়ায়েল প্রমুখ কুরাইশ নেতৃবৃন্দ পবিত্র কাবার পাশে একটি সভার আয়োজন করে মহানবী (সা.)-কে ডেকে তাঁর সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল। তারা এক ব্যক্তিকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে পাঠাল যাতে সে তাঁকে তাদের সভায় যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। মহানবী (সা.) ব্যাপারটি জানার পর তাদের হেদায়েত প্রাপ্তির আশায় ত্বরা করে উক্ত সভায় চলে আসেন। কোন একটি প্রসঙ্গে কথা শুরু হলেই কুরাইশরা তাদের অভিযোগগুলো বলতে থাকল। কুরাইশদের মাঝে যে বিভেদের সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে তারা অনুযোগের সুরে কথা বলল এবং যে কোন ধরনের ত্যাগ স্বীকার করার ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করল। শেষে তারা মহানবীর কাছে এমন সব আবেদন পেশ করেছিল যেগুলোর বর্ণনা পবিত্র কোরআনের সূরা ইসরার 90-93 নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আমরা ঐ আয়াতসমূহের অনুবাদ নিচে তুলে ধরলাম282 :

“হে মুহাম্মদ! নিম্নোক্ত কাজগুলো আঞ্জাম দেয়া ব্যতীত আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না:

1. আমাদের দেশ শুষ্ক ও পানিবিহীন। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর যাতে করে তিনি বালুকাময় এ মরু দেশের বুক চিরে নদী ও নহরসমূহ প্রবাহিত করেন;

2. তোমার হাতে অবশ্যই এমন এক উদ্যান থাকতে হবে যার ফলসমূহ আমরা ভক্ষণ করব এবং ঐ উদ্যানের মধ্য দিয়ে ঝরনা ও নহর প্রবাহমান থাকবে;

3. তোমাকে অবশ্যই এ আকাশ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে আমাদের ওপর ফেলতে হবে;

4. মহান আল্লাহ্ ও ফেরেশতাদেরকে (আমাদের সামনে) উপস্থিত কর;

5. তোমাকে স্বর্ণপ্রাসাদের অধিকারী হতে হবে;

6. তোমাকে আকাশের দিকে উড়ে যেতে হবে। তোমার প্রতি আমরা কখনই ঈমান আনব না যদি না তুমি আকাশ থেকে একটি চিঠি আন যাতে লিখিত আকারে তোমার নবুওয়াতের সত্যায়ন করা হয়েছে।

যেহেতু পবিত্র কোরআনের এ আয়াতসমূহের অর্থ এবং কুরাইশদের এ সব আহবানের প্রতি মহানবীর (ইতিবাচক) সাড়া না দেয়ার বিষয়টি ইসলাম ও মহানবীর বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান প্রাচ্যবিদদের মোক্ষম দলিলে পরিণত হয়েছে তাই এখন আমরা এ আয়াতগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করব এবং কুরাইশদের এ সব দাবির প্রতি মহানবীর সাড়া না দেয়ার পেছনে বিদ্যমান যুক্তিপূর্ণ কারণগুলো স্পষ্ট করে দেব।

যে কোন অবস্থা ও প্রেক্ষাপটে মহান নবিগণ মুজিযা প্রদর্শন করেন না,বরং মুজিযা প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও কতগুলো শর্ত রয়েছে যেগুলো এ সব দাবির ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।

প্রথমত যে সব বিষয় আসলেই সত্তাগতভাবে অবাস্তব ও অসম্ভব সেগুলো শক্তি ও সামর্থ্যরে বাইরে এবং সেগুলো কখনই মহান আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন না এবং কোন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী সত্তাও এ সব ব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করেন না। অতএব,জনগণ মহান নবীদের কাছে কোন অসম্ভব বিষয় বা কাজ সম্পাদন করার আহবান জানালে নবিগণ যদি তা অগ্রাহ্য করেন তাহলে তা কখনই নবীদের মুজিযা অস্বীকার করার দলিল বলে গণ্য হবে না।

অথচ এ শর্তটি তাদের কতিপয় দাবির (চতুর্থ দাবির) ক্ষেত্রে বিদ্যমান নেই। কারণ তারা মহানবীর কাছে দাবি করেছিল যেন তিনি তাদেরকে মহান আল্লাহর মুখোমুখি দাঁড় করান যাতে করে তারা তাঁকে নিকট থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারে। অথচ চর্মচোখে মহান আল্লাহকে দেখা অসম্ভব ও অবাস্তব বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত। কারণ তাঁকে দেখার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে এই যে,তিনি স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবেন এবং তিনি আকার-আকৃতি ও বর্ণের অধিকারী হবেন;(আর স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়া এবং নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি ও বর্ণবিশিষ্ট হওয়া আসলে বস্তু ও পদার্থ হওয়ার লক্ষণস্বরূপ) মহান আল্লাহ্ বস্তু ও বস্তুর অবিচ্ছেদ্য বিষয়াদি ও গুণাবলী থেকে মুক্ত ও পবিত্র।

এমনকি তাদের তৃতীয় দাবির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি এটিই হয়ে থাকে যে,তাদের ওপর আসমান পতিত হোক (তবে আকাশ থেকে টুকরা পাথর তাদের ওপর বর্ষিত হয়ে তারা সবাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হোক এটি উদ্দেশ্য নয়),তাহলে তাদের এ দাবি অবাস্তব ও অসম্ভব বলে গণ্য হবে। কারণ মহান আল্লাহর ঐশী ইচ্ছা অবধারিত করেছে যে,তিনি এ কাজটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আয়ুষ্কাল যখন সমাপ্ত হবে তখন আঞ্জাম দেবেন। আর মহান নবিগণও মুশরিকদেরকে এ ব্যাপারে অবগত করেছেন। (كما زعمت ) তুমি যেমন ভেবেছ ঠিক তেমন-এ বাক্য থেকেও উক্ত বিষয়টি প্রতীয়মান হয়ে যায়।

সৌরমণ্ডল ও মহাকাশীয় বস্তুসমূহের পতন যদিও সত্তাগতভাবে অসম্ভব নয় তবুও তা এ পৃথিবীর বুকে মানব প্রজন্মসমূহের অস্তিত্ব বজায় থাকুক এবং কাঙ্ক্ষিত মানবীয় পূর্ণতার দিকে তারা অগ্রসর হোক-এতৎসংক্রান্ত মহান আল্লাহর যে প্রজ্ঞাময় ইচ্ছা রয়েছে সেই ইচ্ছার প্রেক্ষাপটে অসম্ভব বলে গণ্য হবে। আর যে কোন প্রজ্ঞাবান সত্তা কখনই তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কোন কাজ সম্পাদন করেন না।

দ্বিতীয়ত যেহেতু মুজিযা প্রদর্শের আহবানের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নবীর কথা বা বাণীর সত্যতা প্রতিপন্ন করা এবং মুজিযা প্রদর্শনের মাধ্যমে অতি প্রাকৃতিক (ঊর্ধ্বতন ও আধ্যাত্মিক অবস্তুগত) জগতের সাথে তাঁর যোগসূত্র ও সম্পর্কের দৃঢ় ও শক্তিশালী দলিল অর্জিত হয় তাই যখনই কোন নবীর কাছে জনতার অলৌকিক বিষয় প্রদর্শনের দাবি এ ধরনের বৈশিষ্ট্য বিবর্জিত হবে (অর্থাৎ যদি ধরেও নেয়া হয় যে,নবী তাদের এ ধরনের আহবানে সাড়া দেবেন এবং মুজিযা প্রদর্শন করতে সম্মত হবেন তবুও) তখন আর তা অদৃশ্য অবস্তুগত জগতের সাথে তাঁর যোগসূত্র ও সম্পর্কের দলিল বলে গণ্য হবে না। এমতাবস্থায় কোন নবীই এমন কোন কাজ করবেন না যা তাঁর নবুওয়াতের মর্যাদার বিরোধী। আর এ ধরনের কাজ করার পক্ষে কোন যৌক্তিকতাও নেই।

ঘটনাচক্রে তাদের কিছু কিছু আহবান,যেমন নবী (সা.) কর্তৃক তাদের সামনে জমিনের বুকে ঝরনা ও নহর প্রবাহিত করা,আঙ্গুর ও খেজুর বাগান এবং স্বর্ণনির্মিত বাসগৃহের অধিকারী হওয়া ইত্যাদি আসলে উপরোল্লিখিত দাবি ও আহবানসমূহের অন্তর্ভুক্ত (যা অযৌক্তিক)। কারণ জমির বুকে নহর খনন করা অথবা খেজুর ও আঙ্গুর বাগানের মালিক হওয়া যার তলদেশ নিয়ে নহরসমূহ বয়ে যাচ্ছে অথবা স্বর্ণনির্মিত প্রাসাদ ও বাসগৃহের অধিকারী হওয়া এগুলোর স্বত্বাধিকারীর নবী হওয়ার দলিল হতে পারে না। কারণ অনেক লোকই এ সব সম্পত্তির মধ্যে কোন না কোনটির মালিক এবং তারা কখনই নবী নয়। বরং কখনো কখনো এমন সব ব্যক্তি পাওয়া যাবে যারা এর চাইতেও ধনবান,অথচ তাদের মধ্যে নবুওয়াত তো দূরের কথা ঈমানের বিন্দুমাত্র সৌরভও নেই। এখন যখন নবুওয়াতের সুউচ্চ মাকামের সাথে এ সব বিষয়ের অস্তিত্বের সামান্যতম যোগসূত্র নেই এবং এ সব বিষয় নবুওয়াতের দাবিদারের সত্যবাদিতার দলিল হতে পারে না তখন এ সব কাজ আঞ্জাম দেয়া ফালতু কাজ বলেই গণ্য হবে। আর নবুওয়াতের সুউচ্চ মাকাম এ ধরনের কাজ বা বিষয়সমূহ আঞ্জাম দেয়া হতে অতি উচ্চ ও মহান।

কখনো কখনো বলা হয় যে,কাফের-মুশরিকদের উপরিউক্ত প্রস্তাব তিনটি (ঝরনা,বাগান ও স্বর্ণনির্মিত প্রাসাদ) ঐ ক্ষেত্রে নবীর বাণী ও কথার সত্যতার দলিল হবে না যদি তিনি এ সব বিষয় স্বাভাবিক কারণ ও মাধ্যম ব্যবহার করে তৈরি করেন,তবে যদি তিনি অতি প্রাকৃতিক উপায়ে এ সব কাজে হাত দেন তখন নিঃসন্দেহে তা মুজিযা বলে গণ্য হবে এবং তা অবশ্যই নবুওয়াতের দাবিদারের সত্যবাদিতার দলিল বলেও গণ্য হবে।

কিন্তু বাহ্যত এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা ঠিক নয়। কারণ মুশরিকদের এ ধরনের আহবানের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল নবীর অবশ্যই বস্তুগত শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। মহান আল্লাহর নবী যে একজন দরিদ্র ব্যক্তি হতে পারেন তা তাদের দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে গণ্য হতো। তারা বিশ্বাস করত যে,মহান আল্লাহর ওহী অবশ্যই একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির ওপর অবতীর্ণ হবে। তাই তারা বলত :

) و قالوا لولا نزّل هذا القرآن على رجل من القريتين عظيم(

“কেন এ কোরআন দু জনপদ অর্থাৎ মক্কা ও তায়েফের কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির ওপর অবতীর্ণ করা হয় নি। (সূরা যুখরুফ : 31)

সুতরাং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল নবী (সা.)-এর বাহ্যিক (বস্তুগত) ক্ষমতা ও শক্তি এবং বিত্ত-বৈভব,এমনকি তা যদি স্বাভাবিক পন্থায়ও অর্জিত হয়।

যে কোন পন্থায় এমনকি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পন্থায় হলেও নবীর এ ধরনের কাজ সম্পন্ন করাই যদি মুশরিকদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এতৎসংক্রান্ত বিষয়ের দলিল হচ্ছে এই যে,বাগান ও স্বর্ণনির্মিত বাড়িঘর তারা স্বয়ং নবীর জন্য চাইত। তাই তারা বলত :

) أو يكون لك بيت من زخرف(

“যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি স্বর্ণনির্মিত গৃহের স্বত্বাধিকারী হবে সে পর্যন্ত আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না। (সূরা ইসরা : 93)

অর্থাৎ এ সব মুশরিক বলত : যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি বাগান ও স্বর্ণনির্মিত বাড়ির মালিক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না। আর তাদের এ বক্তব্যের লক্ষ্য যদি এটিই হতো যে,তিনি উপরিউক্ত বিষয়দ্বয় (বাগান ও স্বর্ণনির্মিত বাসগৃহের অধিকারী হওয়া) অবস্তুগত অতি প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা অর্জন করবেন,তাহলে এ কথা বলার অবশ্যই কোন যুক্তি থাকত না যে,যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি স্বর্ণনির্মিত বাড়ি ও বাগান নির্মাণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না।”

কিন্তু যেহেতু প্রথম প্রস্তাবে তারা বলেছিল,تفجرلنا من الأرض ينبوع ا আমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠের ওপর একটি ঝরনা প্রবাহিত কর 283 ,তাই তাদের এ কথার উদ্দেশ্য এটিই ছিল না যে,তিনি তাদের জন্য ঝরনা প্রবাহিত করবেন যাতে করে তারা তা ব্যবহার করতে পারে। বরং তিনি তাদের ঈমান আনয়ন করার জন্যই এ ধরনের কাজ করতেন।

তৃতীয়ত মুজিযা প্রদর্শনের আহবান জানানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে এর আলোকে তাঁর দাবির সত্যতা উপলব্ধি করা এবং তাঁর নবুওয়াতে বিশ্বাস স্থাপন। তাই যারা নবীর কাছে মুজিযা প্রদর্শন করার আহবান জানায় তাদের মধ্যে যদি এমন এক দল থাকে যারা মুজিযা প্রদর্শন করার কারণে নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে তাহলে ঠিক এমতাবস্থায় মুজিযা প্রদর্শন বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্দোষ ও শোভন বলে গণ্য হবে। তবে মুজিযা প্রদর্শন করার আহবানকারী যদি একগুঁয়ে ও ভাঁড় গোছের ব্যক্তিবর্গ হয় এবং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যাদুকরদের খেল-তামাসার মতো এক ধরনের বিনোদন ও ক্রীড়া-কৌতুক করাই হয়ে থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় তাদের আহবানে ইতিবাচক সাড়া দেয়া মহানবী (সা.)-এর জন্য আবশ্যক বিষয় বলে গণ্য হবে না।

ঠিক একইভাবে যেহেতু তারা বলেছে, হে নবী! আপনি আকাশে উড্ডয়ন করুন’,আর এতটুকুও তারা যথেষ্ট মনে করে নি,বরং এরপরও তারা বলেছে, আপনি অবশ্যই আকাশ থেকে আমাদের জন্য গ্রন্থ আনয়ন করবেন ,সেহেতু বলা যায় যে,এ সব আহবানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সত্য উন্মোচন করা ছিল না। কারণ তারা যদি সত্যের সন্ধানী হতো কেন তারা তাঁর আকাশে উড্ডয়নকেই যথেষ্ট মনে করে নি এবং জোর দিয়ে বলেছে এর সাথে আরো কিছু (আকাশ থেকে গ্রন্থ আনয়ন) সংযোজন করতে হবে?

এ দু টি আয়াত ছাড়াও আরো কতিপয় আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে,আকাশ থেকে গ্রন্থ প্রেরণ করার পরও তারা তাদের একগুঁয়েমী পরিত্যাগ করবে না এবং সত্য অস্বীকার করার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত আয়াতটি প্রকাশ্যভাবে এ সত্য প্রমাণ করেছে:

) و لو نزّلنا عليك كتابا في قرطاس فلمسوه بأيديهم لقال الّذين كفروا إن هذا إلّا سحر مّبين(

“আর যদি আমরা আপনার ওপর কাগজে লিখিত গ্রন্থ অবতীর্ণ করতাম,অতঃপর তা তারা নিজেদের হাতে স্পর্শও করত তাহলে যারা কুফর করেছে তারা বলত : এটি একটি স্পষ্ট যাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা আনআম : 7)

উপরিউক্ত আয়াতে কাগজে লিখিত গ্রন্থ অবতীর্ণ হওয়ার কাঙ্ক্ষিত অর্থ যে মুশরিকদের এ আহবান এতে কোন সন্দেহ নেই। আর মুশরিকদের এ আহবান সূরা ইসরার প্রাগুক্ত আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ মহানবী (সা.) আকাশের দিকে উড্ডয়ন করুন এবং তাদের জন্য (আকাশ থেকে) একটি গ্রন্থ আনয়ন করুন। মহান আল্লাহ্ এ আয়াতে বলেছেন, এ ধরনের কাজও যদি সম্পাদিত হয় তবু তারা ঈমান আনবে না।

চতুর্থত মুজিযা প্রদর্শনের আহবান এ জন্য করা হয় যে,মুজিযার আলোকে আহবানকারীরা ঈমান আনয়ন করবে এবং মহানবীর রিসালাতে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি মুজিযা প্রদর্শনের পরিণতি আহবানকারীদের অস্তিত্ব বিলোপ করাই হয়ে থাকে তাহলে তা পরিণামে উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হবে। তাদের মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ুক -তাদের এ কথার কাঙ্ক্ষিত অর্থ এই যে,আসমানী পাথরসমূহ তাদেরকে ধ্বংস করুক। এ আহবান মুজিযা প্রদর্শনের লক্ষ্যের সাথে মোটেও খাপ খায় না এবং এটি হবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হওয়ার উজ্জ্বল নমুনা।

শেষে এ বিষয়টি উল্লেখ না করেই পারছি না যে,মহানবী যুক্তি উপস্থাপনকারীর চিন্তার বিপক্ষে কখনই নিজেকে অক্ষম বলে পেশ করেন নি,বরংسبحان ربّي هل كنت إلّا بشرا رسولا আমার প্রভু পবিত্র,আমি কি একজন সংবাদ আনয়নকারী মানুষ ব্যতীত আর কিছু’-এ আয়াতটি দ্বারা তিনি দু টি বিষয় পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিষয় দু টি হলো :

1. মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা : আমার প্রভু পবিত্র’-এ বাক্যটি দিয়ে তিনি মহান আল্লাহকে সব ধরনের দুর্বলতা,অক্ষমতা ও দর্শন (চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা) থেকে মুক্ত ও পবিত্র বলেছেন এবং তাঁকে সব ধরনের সম্ভব কাজ আঞ্জাম দেবার ব্যাপারে ক্ষমতাবান বলেছেন।

2. মহানবীর শক্তির সীমাবদ্ধতা : আমি একজন সংবাদ আনয়নকারী মানুষ হওয়ার চাইতে আর বেশি কিছু নই’-এ বাক্যটি দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে,তিনি একজন আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত আর কিছুই নন। তিনি মহান আল্লাহর আদেশের আজ্ঞাবহ। মহান আল্লাহ্ যা কিছু ইচ্ছা করেন তিনি সেটাই আঞ্জাম দেন। সকল কাজ আসলে মহান আল্লাহর হাতে। এমন নয় যে,মহানবী যে কোন আহবানের সামনে তাঁর নিজ ইচ্ছাশক্তিসমেত আত্মসমর্পণ করতে পারেন।

অন্যভাবে বলা যায় প্রাগুক্ত আয়াতটি উত্তর দেয়ার পর্যায়ে (সব ধরনের) দোষ-ত্রুটি,দুর্বলতা ও অক্ষমতা,চর্মচোখে দর্শন এবং পর্যবেক্ষণ করা থেকে মহান আল্লাহকে পবিত্র বলে ঘোষণা করার পর মানুষ’ ও রাসূল’ এ শব্দদ্বয়ের ওপর সবিশেষ জোর দিয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে এটিই যে,যেহেতু আমি একজন মানুষ সেহেতু এ দৃষ্টিকোণ থেকে তোমরা যদি এ সব কাজ আমা থেকে আহবান কর তাহলে এ ধরনের আহবান আসলে সঠিক আহবান হবে না। কারণ এ ধরনের কাজ ও বিষয়াদি মহান আল্লাহর শক্তির মুখাপেক্ষী এবং মানুষের শক্তি ও সামর্থ্যরে বাইরে। যেহেতু আমি একজন নবী সেহেতু একজন নবী হিসাবে যদি তোমরা এ আহবান করে থাক তাহলে জেনে রাখ যে,নবী একজন আদেশপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হওয়ার চেয়ে বেশি কিছু নন। মহান আল্লাহ্ তাঁকে যা আদেশ দেন তিনি তা আঞ্জাম দেন;আর এ ক্ষেত্রে তাঁর নিজের কোন ইচ্ছাশক্তি ও চাওয়া-পাওয়াই নেই।

কুরাইশ নেতৃবর্গের বিরুদ্ধাচরণের কারণ

এ অংশটি ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। কারণ মানুষ চিন্তা করে দেখে যে,যদিও হযরত মুহাম্মদকে সকল কুরাইশ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত জানত এবং নবুওয়াতের ঘোষণা দেয়া পর্যন্ত তাঁর নিকট থেকে তারা এমনকি ছোট-খাটো স্খলনও প্রত্যক্ষ করে নি;তাঁর প্রাঞ্জল,সাবলীল ও বলিষ্ঠ বাণী (পবিত্র কোরআন) যা অন্তরসমূহকে আকৃষ্ট করত তারা তা শুনত;কখনো কখনো তারা তাঁর কাছ থেকে অলৌকিক কার্যাবলীও প্রত্যক্ষ করত যা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মবহির্ভূত ছিল। এত কিছু সত্ত্বেও তারা তাঁর বিরুদ্ধে কেন এতটা তীব্র বিরোধিতা করেছে?

তাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণসমূহ নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় হতে পারে :

1. মহানবীর প্রতি ঈর্ষা : একদল কুরাইশ মহানবীর প্রতি ঈর্ষা ও হিংসা পোষণ করার কারণে তাঁর অনুসরণ করতে পারে নি। আর তারা নিজেরাই নবুওয়াতের মতো ঐশী পদ ও দায়িত্ব লাভ করার দুরাশা পোষণ করত।

) و قالوا لولا نزّل هذا القرآن على رجل من القريتين عظيم(

“আর তারা বলত : দু জনপদ অর্থাৎ মক্কা ও তায়েফের কোন একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির ওপর যদি এ কোরআন অবতীর্ণ হতো”284 -এ আয়াতটির শানে নুযূল প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণ বলেছেন, ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ্ মহানবীর সাথে দেখা করে বলেছিল : আমি তোমার চেয়ে নবুওয়াতের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। কারণ আমি বয়স,ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততির দিক থেকে তোমার চেয়ে অগ্রগামী ও শ্রেষ্ঠ। 285

উমাইয়্যাহ্ ইবনে আবীস সাল্ত ঐ সব ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা ইসলাম ধর্মের আগেও মহানবীর ব্যাপারে আলোচনা করত। সে নিজেও এতটা আশাবাদী ছিল যে,সে নিজেই এ বিরাট পদমর্যাদা অর্থাৎ নবুওয়াতের মাকামের অধিকারী হবে। সে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মহানবীর অনুসরণ করে নি এবং জনগণকে মহানবীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলত।

আখনাস ছিল মহানবীর আরেক শত্রু। সে আবু জাহলকে জিজ্ঞাসা করেছিল, মুহাম্মদ সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? তখন সে বলেছিল, আমরা এবং আবদে মান্নাফ কৌলীন্য ও বংশগৌরবকে কেন্দ্র করে পরস্পর ঝগড়া করেছি। তাদের সাথে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আমরা বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে তাদের সমকক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন যখন আমরা তাদের সমকক্ষ হয়েছি তখন তারা দাবি করছে যে,আমাদের গোত্রভুক্ত এক ব্যক্তির ওপর ওহী নাযিল হচ্ছে। খোদার শপথ,আমরা কখনই তার প্রতি ঈমান আনব না। 286

এ সব উদাহরণ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি কুরাইশ নেতৃবৃন্দের হিংসা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। ইতিহাসের পাতায় পাতায় আরো উদাহরণ রয়েছে যা আমরা এখানে উল্লেখ করলাম না।

2. শেষ বিচার দিবস অর্থাৎ কিয়ামত দিবসের ভীতি : এ বিষয়টি কুরাইশদের বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রে অন্য সকল কারণের চেয়ে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল। কারণ তারা ছিল স্ফূর্তিবাজ,আমোদ-প্রমোদপ্রিয় ও বন্ধনহীন। এ সব ব্যক্তি বছরের পর বছর অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে আসছিল। তারা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইসলাম ধর্মের প্রতি আহবানকে তাদের চিরাচরিত পুরানো অভ্যাসের পরিপন্থী বলে শনাক্ত করে। তাই নিজেদের পুরানো অভ্যাস যা তাদের প্রবৃত্তির তাড়না ও প্রবণতার সাথে পূর্ণরূপে খাপ খেত তা ত্যাগ করা ছিল তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।

3. পরকালের শাস্তির ভয় : পবিত্র কোরআনের পারলৌকিক শাস্তি সংক্রান্ত আয়তসমূহ যা স্ফূর্তিবাজ,আমোদ-প্রমোদ ও বিলাস-ব্যসনে লিপ্ত,অত্যাচারী এবং উদাসীন লোকদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভয় দেখায় তা শোনার কারণে কুরাইশদের অন্তরে এক অদ্ভুত ভীতি ও শঙ্কার উদ্ভব হতো এবং তাদের চিন্তাধারা বিক্ষিপ্ত ও বিড়ম্বিত হয়ে যেত। যখন মহানবী (সা.) সুললিত কণ্ঠে পরকাল সংক্রান্ত আয়াতগুলো কুরাইশদের সাধারণ সভা ও সমাবেশগুলোতে তেলাওয়াত করতেন তখন এত বেশি হৈ চৈ পড়ে যেত যে,তাদের আমোদ-প্রমোদের আসরগুলো ভণ্ডুল হয়ে যেত। আরবগণ নিজেদেরকে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত করে রাখত। জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে নিশ্চয়তা অর্জন করার জন্য তীর নিক্ষেপ করে লটারী করত,পাথর দিয়ে শুভ-অশুভ নির্ণয় করত এবং পাখিদের আনাগোনাকে ভবিষ্যৎ ঘটনাসমূহের নিদর্শন বলে কল্পনা করত। এ সব কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যতিরেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে শাস্তি সম্পর্কে তাদের ভয় দেখাতেন সে শাস্তি সম্পর্কে ধীরস্থির ও প্রশান্তভাবে বসে থাকতে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এ কারণেই তারা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। তারা জনগণের মাঝে প্রচার করত যাতে করে মুহাম্মদ (সা.)-এর সুসংবাদ ও ভীতি প্রদর্শনের প্রতি কর্ণপাত না করে। যে আয়াতগুলো কুরাইশদের আমোদ-প্রমোদপ্রিয় উদাসীন নেতৃবর্গের চিন্তা-চেতনা ও মন-মানসিকতাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল তন্মধ্যে কয়েকটি আয়াত নিচে উল্লেখ করছি :

) فإذا جاءت الصّاخّة يوم يفرّ المرء من أخيه و أمّه و أبيه و صاحبته و بنيه لكلّ امرئ مّنهم يومئذ شأن يُغنيه(

“যে দিন পুনরুত্থান সংঘটিত হবে সে দিন মানুষ তার ভাই,মা,পিতা,স্ত্রী ও সন্তানদের থেকে পালিয়ে বেড়াবে। সকল মানুষ সে দিন নিজেকে নিয়েই মহাব্যস্ত হয়ে যাবে। (সূরা আবাসা : 33-37)

যখন তারা পবিত্র কাবার পাশে মদের পানপাত্রগুলো নিয়ে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত তখন এ আহবান তাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করত :

) كلّما نضجت جلودهم بدّلناهم جلودا غيرها ليذوقوا العذاب(

“যখনই আগুনের উত্তাপে তাদের দেহের চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে যাবে তখন তা আমরা পরিবর্তন করে দেব যাতে করে তারা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করে। (সূরা নিসা : 56)

উক্ত আহবান শোনামাত্রই তারা মানসিকভাবে এতটা অস্থির হয়ে যেত যে,অনিচ্ছাকৃতভাবে তারা তাদের পানপাত্রগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিত এবং ভয়,শঙ্কা ও কম্পন তাদের পুরো দেহকে আচ্ছন্ন করে রাখত।

4. আরব মুশরিক সমাজের ভীতি : হারেস বিন নওফেল ইবনে আবদে মান্নাফ মহানবীর সান্নিধ্যে উপস্থিত হয়ে আরজ করেছিল, আমরা জানি যে,তুমি যে ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন করছ তা সত্য ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপিত। তবে যখনই আমরা ঈমান আনব তখনই মুশরিক আরবগণ আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করবে। এ ধরনের লোকদের বক্তব্যের জবাবে মহানবী (সা.)-এর ওপর নিম্নোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল :

) و قالوا إن نتّبع الهدى معك نتخطّف من أرضنا أولم نمكّن لّهم حرما آمنا يُجبى إليه ثمرات كلّ شيء رّزقا مّن لّدنّا(

“তারা বলে যে,যখনই আমরা এ হেদায়েতের অনুসরণ করব তখনই আমাদেরকে আমাদের দেশ ও জনপদ থেকে বিতাড়িত করা হবে। তাদের কথার জবাবে আপনি বলে দিন : আমরা কি নিরাপদ হারাম (সংরক্ষিত অঞ্চল) অর্থাৎ পবিত্র মক্কা নগরী তাদের কর্তৃত্বে দেই নি যেখানে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের ফল জীবিকাস্বরূপ সরবরাহ করা হয়। (সূরা কাসাস : 57)

মুশরিকদের কতিপয় আপত্তি

কখনো কখনো মুশরিকগণ বলত,শামদেশ এমনই এক দেশ যেখানে নবিগণ আবির্ভূত ও প্রেরিত হয়েছেন,অথচ এখন পর্যন্ত এ বালুকাময় মরু অঞ্চলে (মক্কায়) কোন নবী আবির্ভূত হয়েছেন তা প্রত্যক্ষ করা যায় নি।

ইয়াহুদীদের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে আরবের অনেক মুশরিক বলত যে,মুহাম্মদের ওপর কোরআন কেন পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ ধাপে ধাপে অবতীর্ণ হয়? কেন তা তাওরাত ও ইঞ্জিলের মতো একত্রে একবারে অবতীর্ণ হয় না? পবিত্র কোরআন তাদের এ আপত্তিকে হুবহু উল্লেখ করে বলেছে:

) و قال الّذين كفروا لولا نزّل عليه القرآن جملة واحدة كذالك لنثبّت به فؤادك و رتّلناه ترتيلا(

“কাফেররা বলে : এ কোরআন কেন তার ওপর একত্রে একবারে অবতীর্ণ হয় না? তাদের এ কথার জবাবে আপনি বলে দিন : আর এভাবেই আমরা এর মাধ্যমে (অর্থাৎ ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ করার মাধ্যমে) আপনার অন্তঃকরণকে প্রশান্ত ও সুদৃঢ় রাখব। (সূরা ফুরকান : 32)

মুশরিকদের এ আপত্তির প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে পবিত্র কোরআনের পর্যায়ক্রমিক অবতরণের বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের উপরিউক্ত বক্তব্য অসদুদ্দেশ্য পোষণকারী প্রাচ্যবিদদেরকে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র ও পরাভূত করেছে। এখন আমরা এ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করব :