চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103707
ডাউনলোড: 9128


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103707 / ডাউনলোড: 9128
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মহানবীকে পাগল বলে আখ্যায়িত করা

ইতিহাসে অকাট্যভাবে প্রতিষ্ঠিত আছে যে,মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যৌবনের সূচনালগ্ন থেকেই জনগণের মাঝে সত্যবাদিতা ও সৎকর্মের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। এমনকি তাঁর শত্রুরাও তাঁর উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর সামনে শ্রদ্ধাবনত হয়ে যেত। তাঁর অন্যতম মহৎ গুণ ছিল এই যে,সকল মানুষ তাঁকে আস সাদেকুল আমীন’ অর্থাৎ পরম সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বলে সম্বোধন করত। এমনকি মুশরিকগণও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের দশ বছর পরেও তাঁর কাছে তাদের অতি মূল্যবান সম্পদ আমানত হিসাবে গচ্ছিত রাখত। যেহেতু তাঁর ইসলাম ধর্ম প্রচার কার্যক্রম শত্রুদের কাছে চরম অসহনীয় হয়ে গিয়েছিল তাই তাদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা এ বিষয়ে নিয়োজিত করেছিল যে,যে সব সম্পর্কের দ্বারা জনগণের অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে প্রভাবান্বিত করা সম্ভব সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু সম্পর্ককে তারা তাঁর থেকে ঘুরিয়ে দেবে। কারণ তারা জানত যে,অন্যান্য সম্পর্ক মুশরিকদের চিন্তা-চেতনায় গুরুত্বহীন হওয়ার কারণে সেগুলো কোন কাঙ্ক্ষিত প্রভাব রাখতে পারবে না। এ কারণেই তারা ইসলামের প্রতি তাঁর আহবান প্রত্যাখ্যান করার কারণ দর্শিয়ে বলতে বাধ্য হয়েছিল যে,তাঁর দাবিগুলোর উৎসমূল হচ্ছে কতকগুলো পাগলামিপূর্ণ চিন্তা-ভাবনা ও কল্পনা যেগুলো তাঁর যুহ্দ (পার্থিব আয়েশ বর্জন) ও সত্যবাদিতার মোটেও পরিপন্থী হবে না এবং এই লোক-দেখানো সম্পর্ক প্রচার করার ক্ষেত্রে তারা (কুরাইশগণ) বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।

চরম লোক দেখানোর কারণে অপবাদ আরোপের সময় তারা (কুরাইশগণ) পবিত্রতার ভাব ধারণ করত। তারা মহানবীর নবুওয়াতের বিষয়টি সন্দেহ ও সংশয়সহ প্রকাশ করত এবং বলত :

) إفترى على الله كذبا أم به جنّة(

“সে মহান আল্লাহর ওপর অপবাদ আরোপ করছে অথবা উন্মাদনা তার ওপর জেঁকে বসেছে অর্থাৎ সে উম্মাদ ও পাগল হয়ে গেছে।”-(সূরা সাবা : 8)

এটিই হচ্ছে সত্যের শত্রুদের ব্যবহৃত শয়তানী প্রক্রিয়া যা তারা সর্বদা মহান ব্যক্তিবর্গ ও সমাজ-সংস্কারকদেরকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য ব্যবহার ও প্রয়োগ করে থাকে। আর পবিত্র কোরআন থেকেও আমরা জানতে পারি যে,এ নিন্দিত প্রক্রিয়াটি মহানবীর রিসালাতের যুগের ব্যক্তিদের সাথেই সম্পর্কিত নয়,বরং পূর্ববর্তী যুগসমূহের শত্রুরাও নবীদেরকে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে।

উদাহরণস্বরূপ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে :

) وكذلك ما أتى الذين مِن قبلهم مِن رسولٍ إلّا قالوا ساحرٌ أوْ مجنونٌ، أتواصوا به بل هم قومٌ طاغونَ(

“আর ঠিক একইভাবে পূর্ববর্তী উম্মতসমূহে যখনই কোন রাসূল প্রেরিত হয়েছে তখনই তাঁকে যাদুকর অথবা পাগল বলা হয়েছে;তারা (পূর্ববর্তী উম্মতগণ) কি এ কথা বলার ব্যাপারে অনুরোধ করে নি,বরং তারাই ছিল অবাধ্য-সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত : 52-53)

বর্তমানে বিদ্যমান ইঞ্জিলসমূহেও উল্লিখিত আছে যে,হযরত ঈসা মাসীহ্ (আ.) যখন ইয়াহুদী জাতিকে উপদেশ দিলেন তখন তারা বলেছিল, তার মধ্যে শয়তান আছে এবং সে প্রলাপ বকছে। তাহলে কেন তোমরা তাঁর কথা শুনবে? 303

তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে,কুরাইশরা যদি এ সব অপবাদ ব্যতীত অন্য কোন অপবাদ আরোপ করতে পারত,তাহলে তারা কখনই ঐ অপবাদ আরোপ করা থেকে পিছপা হতো না। কিন্তু মহানবীর  চল্লিশোর্ধ নির্মল পবিত্র গৌরবোজ্জ্বল জীবন তাদেরকে অন্যান্য অপবাদ ও রটনা আরোপ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করেছে। খুবই ছোট-খাট ও তুচ্ছ ঘটনাকে মহানবীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য কুরাইশগণ সদা প্রস্তুত থাকত। উদাহরণস্বরূপ কখনো কখনো মহানবী (সা.) মারওয়া’ পাহাড়ের কাছে জাবর’ নামের এক খ্রিষ্টান গোলামের সাথে বসতেন। রিসালাতের যুগের শত্রুরা এ ব্যাপারকে তৎক্ষণাৎ পুঁজি করে বলত,এই খ্রিষ্টান গোলামই মহানবীকে পবিত্র কোরআন শিখাচ্ছে। পবিত্র কোরআন তাদের ভিত্তিহীন কথা ও বক্তব্যের জবাব দিয়েছে এভাবে :

) ولقد نعلمُ أنّهم يقولون إنّما يعلِّمه بشرٌ لسانُ الّذي يُلحدون إليه أعجميٌّ وهذا لسانٌ عربيٌّ مبينٌ(

“আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে,তারা (কুরাইশগণ) বলে : একজন মানুষ তাঁকে কোরআন শিখায়;যে ব্যক্তির প্রতি তারা ইঙ্গিত করছে তার ভাষা আজামী (অনারব ভাষা) এবং এ গ্রন্থটি (কোরআন) হচ্ছে অত্যন্ত স্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ। (সূরা নাহল : 103)

অবচেতন মনের কাল্পনিক ওহী মতবাদ : পাগলামীর অপবাদ আরোপের উন্নততর ধরন

মহান নবীদের ওহী,বিশেষ করে মহানবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ ওহী সম্পর্কে মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য ধর্মবিরোধী নাস্তিক গোষ্ঠীসমূহের অন্যতম প্রচেষ্টা হলো অবচেতন মনের কাল্পনিক ওহী মতবাদ

বিভিন্ন কারণে এ গোষ্ঠীটি মহানবীকে একজন মিথ্যাবাদী ও অপরাধী বলে অভিহিত করতে চায় না;কারণ তাঁর আচার-আচরণ ও কথাবার্তা,তাঁর নিজের বাণীর সত্যতার ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থাকে স্পষ্ট করে উত্থাপন করে। এ কারণেই তারা বিশ্বাস করে যে,তিনি আসলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন,তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং তাঁর যাবতীয় শিক্ষাও তাঁর কাছ থেকেই প্রাপ্ত। কিন্তু তারা তাঁর ঈমানকে ভিন্ন আরেকটি পথে ব্যাখ্যা করে থাকে। তারা বলে যে,ওহী হচ্ছে মুহাম্মদ (সা.)-এর আত্মারই এক ধরনের আহবান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বছরের পর বছর ধরে চিন্তা-ভাবনা এবং ঐ একই চিন্তা দ্বারা তাঁর আত্মার পরিতুষ্টির কারণে ঐ চিন্তা-ভাবনা তাঁর কাছে বাস্তবরূপ পরিগ্রহ করত এবং যে ব্যক্তি সর্বদা কোন ব্যাপার ও চিন্তার মধ্যে মগ্ন হয়ে যায় তার অন্তরে এ ধরনের শব্দ ঝংকৃত হতে থাকে এবং তার অবচেতন মনের ফেরেশতা ছিল তাঁর অস্তিত্বের সুগভীরে লুক্কায়িত তাঁর আশা-আকাঙ্ক্ষা।

তবে অবশ্যই আমাদের মনে রাখা উচিত যে,এ ধরনের অপব্যাখ্যাও নতুন নয়। রিসালাতের যুগের মুশরিকগণ মহানবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ ওহীকে এভাবেও ব্যাখ্যা করত এবং বলত :

) بل قالوا أضْغاثٌ أحلامٍ بلِ افتراه(

“যা কিছু সে (মুহাম্মদ) বলে তা হচ্ছে সব ইতস্তত বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারা যা তার কল্পনাপ্রসূত,বরং সে মিথ্যারোপ করেছে। (সূরা আম্বিয়া : 5)

তারা পবিত্র কোরআনকে কতগুলো ইতস্তত বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারা হিসাবে বিবেচনা করত যা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর মস্তিষ্কে উদিত হতো এবং তারা তাঁকে এ সব বিষয় সৃষ্টি ও রচনা করার ইচ্ছা পোষণকারী এবং ক্ষমতাবান বলে মনেও করত না। যদিও এ পর্যায় ছাড়িয়েও আরো বহুদূর এগিয়ে গিয়ে কেউ কেউ তাঁর ওপর মিথ্যা বলারও অপবাদ আরোপ করেছে।

পবিত্র কোরআন সূরা নাজমে মহানবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ ওহীর বিষয়টি বর্ণনা এবং ওহীর প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করেছে। এ গ্রন্থ এ মতবাদটি (অবচেতন মনের কাল্পনিক ওহী মতবাদ) অপনোদন করে বলেছে যে,একদল ব্যক্তি পবিত্র কোরআন ও মহানবীর নবুওয়াতের দাবিকে তাঁর নিজেরই কল্পনার ফসল বলে অভিহিত করে বলে যে,তিনি কল্পনা করেন তাঁর ওপর ওহী অবতীর্ণ হয় অথবা তিনি কোন ফেরেশতাকে দেখতে পান,অথচ কেবল তাঁর কল্পনার জগৎ ব্যতীত আর কোথাও এ ধরনের জিনিসের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই।

সূরা নাজমের এ আয়াতগুলো এক ধরনের অনবদ্য শৃঙ্খলা ও সামঞ্জস্যের অধিকারী এবং এমন এক ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতা বর্ণনা করছে যিনি বিশেষ বিশেষ অবস্থা ও পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর আধ্যাত্মিক দান ও আশীর্বাদপুষ্ট। পবিত্র কোরআন এ সূরায় অবচেতন মনের কাল্পনিক মতবাদ অপনোদন করে বলেছে :

) والنّجمِ إذا هوى ما ضلَّ صاحبكم وما غوى وما ينطقُ عنِ الهوى إنْ هو إلّا وحيٌ يوحى علّمه شديد القوى ذو مرّةٍ فاستوى وهو بالأُفقِ الأعلى ثمّ دنا فتدلّى فكان قاب قوسينِ أو أدنى فأوحى إلى عبده مآ أوحى ما كذب الفؤادُ ما رأى أفتمارونه على ما يرى ولقد رءاه نزلةً أُخرى عند سدرة المنتهى عندها جنّةُ المأْوى إذ يغشى السّدرةَ ما يغشى مازاغَ البصرُ و ما طغى لقد رأى مِن آياتِ ربِّه الكبرى(

“ঐ তারকার শপথ যখন তা অস্তগামী হয়,তোমাদের বন্ধু পথভ্রষ্ট (হন নি) এবং বিপথগামীও হন নি,তিনি প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার বশবর্তী হয়ে কথা বলেন না,যা কিছু তিনি বলেন তা ওহী ব্যতীত আর কিছুই নয় যা (তাঁর কাছে) প্রেরিত (প্রত্যাদেশ) হয়,এক শক্তিমান সত্তা (ওহীর ফেরেশতা) তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন,সহজাত শক্তিসম্পন্ন,তিনি নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেলেন ঊর্ধ্ব দিগন্তে304 ,অতঃপর নিকটবর্তী হলেন ও ঝুলে গেলেন,তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরো কম,তখন তিনি (ফেরেশতা) তাঁর (মহান আল্লাহর) বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা প্রত্যাদেশ করলেন,(মহানবীর) অন্তর মিথ্যা বলে নি যা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন,তিনি যা দেখেছেন সে ব্যাপারে কি তোমরা তাঁর সাথে তর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি আরেকবার তাঁকে দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার (সর্বশেষ দূরত্বে অবস্থিত কুলবৃক্ষ) কাছে,যার কাছে অবস্থিত বসবাসের বেহেশত,যা আচ্ছাদন করে তা-ই কুলবৃক্ষটিকে আচ্ছাদন করে,তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয় নি এবং সীমা লঙ্ঘনও করে নি,নিশ্চয়ই তিনি নিজ প্রভুর মহান নিদর্শনসমূহ অবলোকন করেছেন।”

পবিত্র কোরআন এ সব আয়াতে অবচেতন মনের কাল্পনিক ওহী মতবাদ’ এবং পবিত্র কোরআন তাঁর কল্পনার ফসল’-এ ধরনের ধারণার তীব্র নিন্দা করেছে। আর এ মতবাদের সমর্থকগণকে অহেতুক তর্কবিতর্ককারী ও কলহপ্রিয় বলে বিবেচনা করে। তাই পবিত্র কোরআন দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে যে,মহানবী (সা.)-এর অন্তর যেমন ভুল করে নি,ঠিক তেমনি তাঁর চোখ ও দৃষ্টিশক্তিও ভুল করে নি। উভয় ক্ষেত্রেই দর্শনকার্য সঠিক ও বাস্তব অর্থেই সম্পন্ন হয়েছে। তাই পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে :

) ما كذب الفؤاد ما رأى(

অন্তর যা দেখেছে তা ভুল দেখে নি।

) مازاغ البصرُ وما طغى(

চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভ্রষ্ট ও বিচ্যুত হয় নি এবং (দর্শন ও দৃষ্টি সংক্রান্ত নীতিমালার) লঙ্ঘন করে নি।

আর সব কিছুই সম্পূর্ণরূপেই বাস্তব ছিল;কোন কিছুই এ ক্ষেত্রে অলীক স্বপ্ন ছিল না।

পরোক্ষভাবে মহানবীকে পাগল বলার অপচেষ্টা

জাহেলী আরবগণ যদিও বিভিন্নভাবে মহান আল্লাহর ওহীর অপব্যাখ্যা দিত এবং মহানবীকে মিথ্যারোপকারী বলত অথবা তাঁকে যাদুকর বলে অভিহিত করত;তবু তারা জোর করে মহানবীকে পাগল ও গণক হিসাবেও পরিচিত করাতে চাইত।

তাদের পরিভাষায় পাগল হচ্ছে জ্বিনের আছরগ্রস্ত ব্যক্তি যে তার ওপর জ্বিনের হস্তক্ষেপের ফলে অনুধাবন করার ক্ষমতা ও বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং আবোল-তাবোল বকতে থাকে।

গণক হচ্ছে অদৃষ্টবক্তা কোন একটি জ্বিনের সাথে যার সম্পর্ক রয়েছে এবং যাকে বিভিন্ন অবস্থা ও ঘটনার সাথে পরিচিত করায়।

অবশেষে এক পাগল অথবা অদৃষ্টবক্তা গণকের বাণীগুলো কেবল তার নিজের সাথে জড়িত নয়,বরং সেগুলো হচ্ছে ঐ জ্বিনের পক্ষ থেকে প্রক্ষেপস্বরূপ যে তার মন ও কণ্ঠের ওপর আরোপ করে যদিও সে এ ব্যাপারে সচেতন নয়।

জাহেলী আরবগণ জ্ঞান ও বিদ্যা থেকে দূরে থাকা,ধোঁকাবাজি,কূটকৌশল ও ছলচাতুরী থেকে দূরে থাকার কারণে যা কিছু তাদের হৃদয়ে পোষণ করত তা অবাধে বলে ফেলত এবং মহানবী (সা.)-এর সামনে দাঁড়িয়েই বলত :

) وقالوا يا أيُّها الّذي نزّل عليه الذّكرُ إنّك لمجنون(

“হে ঐ ব্যক্তি যার ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে! নিশ্চয়ই তুমি পাগল। (সূরা হিজর : 6)

এই অভিযোগ কেবল মহানবী (সা.)-এর সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়,বরং মানব জাতির ইতিহাসে বিদ্যমান সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যায় যে,সংস্কারকদেরকে অজ্ঞ ও পাগল বলে অভিহিত করা হতো এবং এ ধরনের সম্পর্ক ও উপাধি আরোপ করার অন্তর্নিহিত কারণ ছিল এই যে,জনগণকে তাঁদের কাছ থেকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়া যাতে তারা তাঁদের কথা শ্রবণ না করে। পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-এর ব্যাপারে এ ধরনের উপাধি ও সম্পর্ক আরোপের বিষয়টি সূরা হিজরের 6 নং আয়াত,সূরা সাবার 8 নং আয়াত,সূরা সাফফাতের 36 নং আয়াত,সূরা দুখানের 14 নং আয়াত,সূরা তূরের 29 নং আয়াত,সূরা কলমের 2 নং আয়াত ও সূরা তাকভীরের 22 নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

2. পবিত্র কোরআনের বিরোধিতা করার চিন্তা

অপবাদ আরোপের মরিচাধরা হাতিয়ার মহানবী (সা.)-এর ওপর তেমন একটা কার্যকর হয় নি;কারণ জনগণ পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা সহকারে অনুভব করতে পেরেছিল যে,পবিত্র কোরআনের এক আশ্চর্যজনক আত্মিক আকর্ষণ ক্ষমতা আছে। আর তারা কখনই এ ধরনের মিষ্টি মধুর বাণী শুনে নি। এ কোরআনের বাণী এতটা গভীর ও মৌলিক যে,তা হৃদয়ে গেঁথে যায়। মহানবীকে দোষী সাব্যস্ত ও তাঁর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে লাভবান না হওয়ার ফলশ্রুতিতেই শত্রুরা আরেক ধরনের শিশুসুলভ ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত হয়। তারা ভেবেছিল যে,তা প্রয়োগ করার মাধ্যমে তারা মহানবীর প্রতি জনগণের মনোযোগ নষ্ট করে দিতে সক্ষম হবে।

নযর বিন হারেস কুরাইশদের অন্যতম বুদ্ধিমান,চতুর ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব ছিল। এ ব্যক্তি তার জীবনের একাংশ হীরা ও ইরাকে কাটিয়েছিল। সে ইরানের রাজা-বাদশাহ্ এবং রুস্তম ও ইসফানদিয়ারের মতো সেখানকার সাহসী বীরের অবস্থা এবং মঙ্গল ও অমঙ্গল সংক্রান্ত ইরানীদের বিশ্বাস সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞাত ছিল। মহানবীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য কুরাইশরা তাকে নির্বাচিত করে। তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে,নযর বিন হারেস হাটে-বাজারে,পথে-ঘাটে ও অলিতে-গলিতে ইরানী জাতি ও তাদের রাজা-বাদশাহ্দের গল্প ও কাহিনী বর্ণনা করে মহানবী (সা.)-এর বাণী শ্রবণ করা থেকে জনগণকে বিরত রাখবে এবং তাদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করবে। মহানবীর মর্যাদা ও সম্মান কমানোর জন্য এবং পবিত্র কোরআনের বাণী অর্থহীন দেখানোর জন্য সে সব সময় বলত : হে জনগণ! মুহাম্মদের বাণীগুলোর সাথে কি আমার কথাগুলোর কোন পার্থক্য আছে? সে তোমাদের কাছে এমন সম্প্রদায়ের গল্প ও কাহিনী বর্ণনা করে যারা মহান আল্লাহর ক্রোধ,গজব ও আযাবের শিকার হয়েছিল। আর আমিও এমন এক গোষ্ঠীর গল্প ও কাহিনী বর্ণনা করি যারা বিত্তবিভব ও প্রাচুর্যে নিমজ্জিত ছিল এবং দীর্ঘকাল পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করেছে।”

এ পরিকল্পনাটি এতটা নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ ছিল যে,তা গুটিকতক দিনের বেশি চলে নি। আর স্বয়ং কুরাইশরাও তার কথা শুনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং তার থেকে দূরে সরে যায়।

এ প্রসঙ্গে বেশ কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল। তন্মধ্যে কেবল একটি আয়াতের তরজমা নিচে দেয়া হলো :

) وقالوا أساطيرُ الأوّلينَ اكْتتبَها فهي تملى عليه بكرةً و أصيلاً، قل أنزلَه الّذي يعلمُ السِّرَّ في السّماوات والأرضِ إنّه كان غفوراً رحيما(

“আর তারা বলেছে : এগুলো হচ্ছে পূর্ববর্তীদের গল্প ও কাহিনী যেগুলো সে রচনা করেছে;আর এগুলো সকাল ও সন্ধ্যায় তার ওপর আরোপ করা হয়। আপনি বলে দিন যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সকল রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত তিনিই তা অবতীর্ণ করেছেন;নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা ফুরকান 5 ও 6)305

বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজস্ব অভিমত বজায় রাখা

মহানবী (সা.) খুব ভালোভাবেই জানতেন যে,অধিকাংশ মানুষের মূর্তিপূজা আসলে গোত্রপতিদের অন্ধ অনুসরণ থেকেই উদ্ভূত এবং তাদের অন্তরে তা প্রোথিত নয়। যদি গোত্রপতিদের মধ্যে এমন কোন বিপ্লব সংঘটিত এবং তা সফল হয় যার ফলে দু একজন গোত্রপতি (এ বিপ্লবের সাথে) একাত্ম হয়ে যায় তাহলে অগণিত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ কারণেই তিনি ওয়ালীদ বিন মুগীরার ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবার ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দিতেন। এই ওয়ালীদ বিন মুগীরার ছেলে খালিদ ইবনে ওয়ালীদ পরবর্তীতে মুসলমানদের দিগ্বিজয়ী সেনাপতি হয়েছিলেন। ওয়ালীদ ছিল সবচেয়ে বর্ষীয়ান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব-কুরাইশ বংশের মধ্যে যার ছিল মর্যাদা ও নেতৃত্ব। তাকে আরবদের মধ্যে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি বলে অভিহিত করা হতো এবং মতবিরোধের ক্ষেত্রে তার অভিমতের প্রতি সম্মান প্রদান করা হতো।

একদিন এক উপযুক্ত মুহূর্তে মহানবী তার সাথে কথা বলছিলেন। ঠিক সে সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতূম মহানবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে পবিত্র কোরআনের কিছু অংশ পাঠ করে শোনাতে অত্যন্ত জোরালোভাবে অনুরোধ করলেন। এ কারণেই তিনি ইবনে উম্মে মাকতূম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন,ভ্রূকুটি করলেন এবং তাঁর সাথে কথা বললেন না।

এ ঘটনা ঘটে গেল। কিন্তু মহানবী (সা.) এ অবস্থা ও পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন এমনি অবস্থায় সূরা আবাসার প্রথম দিকের 14টি আয়াত অবতীর্ণ হলো। এখানে কয়েকটি আয়াতের অনুবাদ দেয়া হলো :

“সে ভ্রূকুটি করল এবং পিঠ ফিরিয়ে নিল এ কারণে যে,তাঁর কাছে একজন অন্ধ (ইবনে উম্মে মাকতূম) এসেছে। আপনি কি জানেন যে,তার অন্তঃকরণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পবিত্র হবে এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে কি তার কোন লাভ হবে? কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের অভাবহীনতা প্রদর্শন করে সে কি আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে ও ঝুঁকে পড়বে? কিন্তু যে ব্যক্তি আপনার কাছে দ্রূত ছুটে আসে এবং (মহান আল্লাহকে) ভয় করে,আপনি কি তাঁর ব্যাপারে উদাসীন থাকবেন? এরকম করবেন না। কারণ এ কোরআন হচ্ছে স্মরণকারী ঐ ব্যক্তির জন্য,যে তা শিখতে চায়...। 306

প্রখ্যাত শিয়া গবেষক ও পণ্ডিতগণ ইতিহাসের এ অংশটিকে ভিত্তিহীন বলে জানেন এবং এ থেকে মহানবী (সা.)-এর চরিত্র পবিত্র বলে গণ্য করেন। তাঁরা বলেছেন,স্বয়ং এ সব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় না যে,যে ব্যক্তি ভ্রূকুটি করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে ব্যক্তি ছিল স্বয়ং মহানবী (সা.)। ইমাম জাফর সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,এ সূরায় যে ভ্রূকুটি করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে ব্যক্তিটি ছিল আসলে উমাইয়্যা বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি;যখন ইবনে উম্মে মাকতূম মহানবীর কাছে উপস্থিত হলেন তখন সে-ই তাঁর (ইবনে উম্মে মাকতূমের) প্রতি চরম অবজ্ঞা ও ঘৃণা প্রদর্শন করেছিল।307

3. কুরাইশগণ কর্তৃক পবিত্র কোরআন শ্রবণ বর্জন

তাওহীদভিত্তিক ইসলাম ধর্মের প্রসারে বাধা দেয়া এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও সংগ্রামের যে ব্যাপক পরিকল্পনা মক্কার পৌত্তলিকগণ গ্রহণ করেছিল তা একের পর এক বাস্তবায়ন করা হলো। কিন্তু তারা এ সব প্রতিরোধ ও সংগ্রামে ততটা সফল হয় নি এবং তাদের সকল পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র একের পর এক ব্যর্থ হয়ে যায়।

এক যুগ তারা মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাল;কিন্তু কখনই তারা পরিপূর্ণভাবে সফল হয় নি এবং মহানবী (সা.)-কে তারা তাঁর পথ ও আদর্শে অধিকতর অটল ও দৃঢ়তর পেয়েছে এবং প্রত্যক্ষ করেছে যে,ইসলাম ধর্ম দিন দিন প্রসার লাভ করেছে।

কুরাইশ নেতৃবর্গ জনগণকে পবিত্র কোরআন শ্রবণ করা থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ষড়যন্ত্র যাতে করে পূর্ণরূপে সফল হয় সেজন্য তারা পবিত্র মক্কার সর্বত্র গুপ্তচরদের নিয়োগ করে মহান আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারী ও ব্যবসা-বাণিজ্য উপলক্ষে মক্কায় আগত ব্যবসায়ীদেরকে মহানবী (সা.)-এর সাথে যোগাযোগ এবং সম্ভাব্য সকল পন্থায় তাদেরকে পবিত্র কোরআন শ্রবণ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এ সব কুরাইশ নেতৃবৃন্দের মুখপাত্র মক্কাবাসীদের মাঝে একটি ঘোষণাপত্র প্রচার করেছিল যার বিষয়বস্তু পবিত্র কোরআন বর্ণনা করেছে :

) وقال الذين كفروا لا تسمعوا لهذا القرآنِ وألْغَوا فيه لعلّكم تغلبون(

“কাফিরগণ বলেছে : এ কোরআন শ্রবণ করো না এবং (কোরআন) তিলাওয়াত করার সময় হৈ চৈ করো,আশা করা যায় যে,তোমরাই বিজয়ী হবে। (সূরা ফুসসিলাত : 26)

মহানবী (সা.)-এর সবচেয়ে সফল ও কার্যকর হাতিয়ার যা শত্রুদের মনে এক আশ্চর্যজনক ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করেছিল তা ছিল এই কোরআন। কুরাইশ নেতৃবর্গ দেখতে পেল যে,মহানবীর অগণিত শত্রু তাঁকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও কষ্ট দেয়ার জন্য তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেত;যখনই তাদের কর্ণকুহরে পবিত্র কোরআনের গুটিকতক আয়াতের সুললিত তিলাওয়াত ধ্বনি পৌঁছে যেত তখনই তারা নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত এবং তখন থেকেই তারা তাঁর একনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে যেত। এ ধরনের ঘটনাগুলোর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে,পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ শ্রবণ করা থেকে তারা তাদের অনুসারী ও সমর্থকদেরকে নিষেধ করবে এবং মহানবীর সাথে কথা বলা থেকে তারা বিরত থাকবে।

আইন ভঙ্গকারী আইন প্রণেতাগণ

যে গোষ্ঠীটি তীব্র একগুঁয়েমিবশত জনগণকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কোরআন শোনা থেকে বিরত রাখত এবং যে ব্যক্তি তাদের গৃহীত এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণ করত তাকেই তারা অপরাধী বলে গণ্য করত,তারাই কয়েকদিন পরে আইনভঙ্গকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তারা সর্বসম্মতিক্রমে যে আইনটি অনুমোদন করেছিল কার্যত তারা নিজেরাই গোপনে আইনটি ভঙ্গ করেছিল।

আবু সুফিয়ান,আবু জাহল ও আখনাস বিন শুরাইক একে অপরের অজান্তে এক রাতে ঘর থেকে বের হয়ে মহানবী (সা.)-এর গৃহাভিমুখে রওয়ানা হয়। তাদের প্রত্যেকেই এক এক কোণায় লুকিয়ে থাকে। মহানবী (সা.) যখন রাতের বেলা নামাযে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করবেন তখন তা শোনাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। ঐ তিন ব্যক্তি একে অপরের অজান্তে প্রভাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে পবিত্র কোরআন শ্রবণ করতে থাকে। প্রভাতে তারা নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পথিমধ্যে তাদের একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা পরস্পরকে তিরস্কার করে এবং বলতে থাকে, সরলমনা লোকেরা যদি আমাদের এ কাজের কথা জানতে পারে তাহলে তারা আমাদের ব্যাপারে কি বলবে?

দ্বিতীয় রাতেও এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। যেন এক অভ্যন্তরীণ আকর্ষণী ক্ষমতা তাদেরকে মহানবীর গৃহাভিমুখে টেনে নিয়ে যেত। ফেরার সময় আবার তিনজনেরই একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হয় এবং তারা নিজেরা একে অপরকে তিরস্কার করতে থাকে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে,তারা এ কাজের আর পুনরাবৃত্তি করবে না। কিন্তু পবিত্র কোরআনের আকর্ষণী ক্ষমতা তাদেরকে তৃতীয়বারের মতো পুনরায় একে অপরের অজান্তেই মহানবীর ঘরের চারপাশে জড়ো করেছিল এবং তারা প্রভাত পর্যন্ত মহানবীর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শুনতে থাকে। প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে ভয়-ভীতি বেড়ে যেতে লাগল এবং তারা নিজেদেরকে নিজেরাই বলতে লাগল যে,যদি মুহাম্মদের পুরস্কার ও শাস্তির অঙ্গীকার সত্য হয় তাহলে জীবনে তারা পাপী ও অপরাধী বলে গণ্য হবে।

দিনের আলোয় চারদিক উজ্জ্বল হয়ে গেলে সরলমনা লোকদের ভয়ে তারা মহানবীর ঘর ত্যাগ করে এবং প্রথম দু বারের মতো এবারেও ফেরার পথে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হয় এবং তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে,পবিত্র কোরআনের আকর্ষণী ক্ষমতা,আহবান ও বিধি-বিধানের সামনে তাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু অপ্রীতিকর ঘটনাবলী প্রতিহত করার জন্য তারা পরস্পর অঙ্গীকারবদ্ধ হয় যে,তারা চিরকালের জন্য এ অভ্যাস ত্যাগ করবে।308