চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103684
ডাউনলোড: 9120


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103684 / ডাউনলোড: 9120
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

ভাষাগত দিক থেকে কাল্পনিক এ উপাখ্যানটি রদ করার দলিল

প্রখ্যাত মিশরীয় আলেম আবদুহু বলেন, আরবী ভাষা ও কবিতায় কখনই গারানিক শব্দটি দেব-দেবী ও উপাস্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় নি;غرنيق   ওغرنوق যা অভিধানে বর্ণিত হয়েছে এগুলোর অর্থ হচ্ছে জলচর পাখি (গাংচিল,বলাকা) অথবা সুদর্শন শ্বেতাঙ্গ যুবক। আর এ অর্থগুলোর কোন একটিই দেব-দেবী,প্রতিমা ও উপাস্য অর্থের সাথে সংগতিশীল নয়।

স্যার উইলিয়াম মূর নামক একজন প্রাচ্যবিদ গারানিক -এর উপাখ্যানকে ইতিহাসের অকাট্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন। আর তাঁর এ অভিমতের পক্ষে দলিল হচ্ছে এই যে,হাবাশায় হিজরতকারী প্রথম দলটি হিজরতের তিন মাস গত হতে না হতেই কুরাইশদের সাথে মহানবী (সা.)-এর সন্ধিচুক্তির সংবাদটি শুনতে পায় এবং তারা মক্কায় প্রত্যাবর্তন করে। যে সব মুসলমান ঐ দেশে হিজরত করেছিলেন তাঁরা সেখানে বাদশাহ্ নাজ্জাশীর আশ্রয়ে নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করছিলেন। যদি তাঁদের কাছে কুরাইশদের সাথে মহানবীর নৈকট্য ও সন্ধি-চুক্তি সম্পাদনের সংবাদ না পৌঁছত তাহলে তাঁরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য মক্কা প্রত্যাবর্তন করতেন না। অতএব,মহানবী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি পন্থার উদ্ভাবন করে থাকবেনই। আর এ গারানিকের উপাখ্যানই হচ্ছে সেই পন্থা।

কিন্তু এখন আমরা সম্মানিত এ প্রাচ্যবিদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই,হাবাশায় হিজরতকারী মুসলমানদের মক্কায় প্রত্যাবর্তন যে অবশ্যই একটি সত্য সংবাদের ভিত্তিতে হতে হবে এ ধরনের কি কোন আবশ্যকতা আছে? এমন কোন দিন নেই যে,প্রবৃত্তির পূজারী ও স্বার্থান্বেষী চক্র জনগণের মাঝে হাজার ধরনের মিথ্যা সংবাদ ও তথ্য প্রচার করত না,বরং এসব মুহাজির মুসলমানদের হাবাশা থেকে মক্কায় ফিরিয়ে আনার জন্য একদল লোক যে কুরাইশদের সাথে মহানবীর সন্ধি-চুক্তি সম্পাদনের সংবাদটি জাল করে থাকতে পারে সে সম্ভাবনাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান। এর ফলে এ সংবাদ শুনে হিজরতকারী মুসলমানরা নিজেরাই হাবাশা থেকে পবিত্র মক্কায় প্রত্যাবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ কারণেই কতিপয় হিজরতকারী মুসলমান এ সংবাদটি বিশ্বাস করেছিলেন এবং মক্কায় ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু অপর কিছু সংখ্যক হিজরতকারী এ গুজব দ্বারা প্রতারিত না হয়ে হাবাশায় থেকে যান।

দ্বিতীয়ত আপনারা ভেবে দেখুন যে,মহানবী (সা.) সন্ধি-চুক্তি সম্পাদন করার মাধ্যমে কুরাইশদের সাথে তাঁর বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ কারণে সন্ধি-চুক্তির মূল ভিত কেন এ দু টি বাক্য জাল করার সাথেই সংশ্লিষ্ট হবে? বরং কুরাইশদের আকীদা-বিশ্বাস সংক্রান্ত এক নিরঙ্কুশ নীরবতা-একটি সহায়ক প্রতিজ্ঞা তাদের হৃদয়কে তাঁর নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ছিল যথেষ্ট।

যা হোক হিজরতকারীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এ উপাখ্যান সত্য হওয়ার দলিল নয়। আর এ বাক্য (এগুলো হচ্ছে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বলাকা,এদের শাফায়াত-ই কেবল প্রত্যাশা করা যায়) উচ্চারণ করার মধ্যেই কেবল শান্তি ও সন্ধি নিহিত নেই।

এর চেয়ে আরো আশ্চর্যজনক হচ্ছে এই যে,কোন কোন ব্যক্তি ধারণা করেছেন যে,সূরা হজ্বের 52-54 আয়াত গারানিক উপাখ্যানকে কেন্দ্র করেই অবতীর্ণ হয়েছে। যেহেতু এ আয়াতগুলো প্রাচ্যবিদ ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের হাতের দলিল সেহেতু আমরা এগুলোর

অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করব এবং সুস্পষ্ট করে দেব যে,এ সব আয়াত ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসরণ করে।

আয়াতগুলো এবং এগুলোর অনুবাদ নিচে উল্লেখ করা হলো :

) وما أرسلنا مِن قبلكَ مِنْ رسولٍ ولا نبيٍّ إلّا إذا تمنّى ألقى الشّيطانُ في أُمنِيَّته فينسخُ اللهُ ما يُلْقي الشَّيطانُ ثمَّ يحكِمُ الله آياته واللهُ عليمٌ حكيمٌ(

“আমরা আপনার আগে যে রাসূল ও নবীকেই প্রেরণ করেছি তিনি যখনই আকাঙ্ক্ষা করেছেন তখনই শয়তান তাঁর আশা-আকাঙ্ক্ষায় হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপ করেছে এবং মহান আল্লাহ্ নবী-রাসূলদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় শয়তান যা প্রক্ষেপ করে তা বিলুপ্ত (করে দেন)। অতঃপর তিনি (মহান আল্লাহ্) তাঁর আয়াতসমূহ দৃঢ় করে প্রতিষ্ঠিত করে দেন (অর্থাৎ নিদর্শনসমূহে দৃঢ়তা প্রদান করেন)। মহান আল্লাহ্ অত্যন্ত জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান। 315

) ليجعل ما يلقي الشيطان فتنة للّذين في قلوبهم مرض والقاسية قلوبهم وإنّ الظّالمين لفي شقاقٍ بعيدٍ(

“যাতে শয়তান যা কিছু সম্পন্ন করে, মহান আল্লাহ্ তা দিয়ে যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যাদের হৃদয় পাষাণ তাদেরকে পরীক্ষা করেন;আর নিশ্চয়ই অত্যাচারীরা চরম দুর্ভাগ্যে পতিত ও পারলৌকিক মুক্তি থেকে বহু দূরে (আছে)। 316

) وليعلم الذين أوتوا العلم أنّه الحقّ من ربّك فيؤمنوا به فتخبتَ له قلوبهم وإنّ اللهَ لهادِ الذين آمنوا إلى صراطٍ مستفيمٍ(

“যাতে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ জানতে সক্ষম হয় যে,এ কোরআন সত্য এবং আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে (অবতীর্ণ) এবং এর প্রতি ঈমান আনতে পারে। অতঃপর তাঁর প্রতি অবনত ও বিনয়ী হয়ে যায়;আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সরল সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন। 317

এখন আয়াতের অন্তর্নিহিত মূল অর্থ ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। প্রথম আয়াতটিতে তিনটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে :

ক. নবী-রাসূলগণ আকাঙ্ক্ষা করেন।

খ. শয়তান তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় হস্তক্ষেপ করে।

গ. মহান আল্লাহ্ শয়তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপের অশুভ প্রভাব বিলুপ্ত করে দেন।

ক. নবী-রাসূলগণের আকাঙ্ক্ষা বলতে কি বোঝানো হয়েছে?

মহান নবিগণ সব সময় তাঁদের নিজ উম্মাহ্ ও জাতির মাঝে হেদায়েত ও সত্য ধর্ম প্রচার ও প্রসারের আকাঙ্ক্ষা করতেন;আর তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য প্রভূত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন এবং এ পথে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদ ও কষ্ট-যন্ত্রণা সহ্য করেছেন এবং সেগুলোর প্রতিরোধ করেছেন। মহানবীও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁর বেশ কিছু পরিকল্পনা ছিল। তাই তিনি তাঁর আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপদান করার জন্য বেশ কিছু পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। পবিত্র কোরআন এ বাস্তবতাকে-

) وما أرسلنا من رسول ولا نبي إلّا إذا تمنّى(

আমি আপনার পূর্বে যে রাসূল ও নবীই প্রেরণ করেছি তিনি যখনই আকাঙ্ক্ষা করেছেন... (সূরা হজ্বের 52 নং আয়াত)-এ আয়াতের মাধ্যমে বর্ণনা করেছে।

এ পর্যন্তتمنّى (আকাঙ্ক্ষা করেছেন) এর অর্থ পরিষ্কার হয়ে গেছে;এখন আমরা দ্বিতীয় বিষয়টি ব্যাখ্যা করব।

খ. শয়তানের হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপের (القاء ) অর্থ কি?

নিম্নোক্ত প্রক্রিয়াদ্বয়ের যে কোন একটির দ্বারা শয়তান হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপ করে থাকে :

1. মহান নবীদের গৃহীত সিদ্ধান্তে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে এবং তাঁদের ও তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের মাঝে অগণিত বাধা বিদ্যমান আছে এবং এ সব বাধা-বিপত্তির কথা বিবেচনা করলে তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যে সফল হবেন না-এ ব্যাপারে তাঁদেরকে সন্দিহান করার মাধ্যমে।

2. যখনই মহান নবিগণ কোন কাজের প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করতেন এবং যখনই নিদর্শনাদি থেকে কোন নবীর দৃঢ় পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে যেত ঠিক তখনই শয়তান ও শয়তান প্রকৃতির লোকেরা মহান নবীদের বিরুদ্ধে জনগণকে প্ররোচিত করত এবং তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করে তাঁদেরকে তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা থেকে বিরত রাখত।

প্রথম সম্ভাবনা যেমন পবিত্র কোরআনের অন্যান্য আয়াতের সাথে মোটেও খাপ খায় না ঠিক তেমনি তা আলোচ্য দ্বিতীয় আয়াতের সাথেও সংগতিসম্পন্ন নয়;কিন্তু অন্যান্য আয়াতের দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের ওপর শয়তানের যে আধিপত্য ও কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা নেই তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্ণনা করেছে (যদিও শয়তান এভাবে তাঁদেরকে দেখাতে ও বোঝাতে চায় যে,তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না) এবং বলেছে :

) إنَّ عبادي ليس لك عليهم سلطانٌ(

“নিশ্চয়ই আমার (প্রকৃত) বান্দাদের ওপর তোমার কোন আধিপত্য ও কর্তৃত্ব নেই। (সূরা হিজর : 42 ও সূরা ইসরা : 65)

) إنّه ليسَ له سلطانٌ على الّذين آمنوا وعلى ربّهم يتوكّلون(

“নিশ্চয়ই ঐ সব ব্যক্তির ওপর শয়তানের কোন কর্তৃত্ব ও আধিপত্য নেই যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। (সূরা নাহল : 99)

এ আয়াত ও আরো অন্যান্য আয়াত যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে,মহান আল্লাহর ওয়ালীদের (বন্ধু) অন্তরে শয়তান অনুপ্রবেশ ও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না সেগুলো থেকেও প্রমাণিত হয়ে যায় যে,মহান নবীদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় শয়তানের হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপের প্রকৃত অর্থ তাঁদের ইচ্ছাশক্তি দুর্বল করা এবং তাঁদের কাছে তাঁদের কাজের পথে বিদ্যমান বাধা-বিপত্তিগুলো বড় করে দেখানো নয়।

কিন্তু আলোচ্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতের দৃষ্টিতে শয়তানের এ হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপের বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে,আমরা এ কাজের দ্বারা দু টি গোষ্ঠীকে পরীক্ষা করব। একটি গোষ্ঠী যাদের অন্তঃকরণ অসুস্থ এবং অন্য দলটি হচ্ছে জ্ঞানী যাঁরা মহান আল্লাহ্ ও তাঁর নিদর্শনসমূহে আস্থা রাখেন।

অর্থাৎ জনগণকে মহান নবীদের সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার মাধ্যমে শয়তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ প্রথম গোষ্ঠীটির ক্ষেত্রে মহান নবী ও রাসূলদের প্রতি তাদের অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণের কারণ হয়,অথচ অপর গোষ্ঠীটির ক্ষেত্রে এ হস্তক্ষেপের প্রভাব পূর্ববর্তী গোষ্ঠীর ঠিক বিপরীত হয়ে থাকে এবং এর ফলে তাঁদের দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।

যেহেতু মহান নবীদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় শয়তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপের এমন দু টি ভিন্ন ধরনের প্রভাব রয়েছে (অর্থাৎ একদল লোক মহান নবী-রাসূলগণের বিরোধী এবং অন্য একটি দল মহান আল্লাহ্,তার নবী-রাসূলগণ এবং নিদর্শনাদির প্রতি ঈমান রাখার ব্যাপারে অধিকতর দৃঢ় ও অবিচল হয়ে থাকে) সেহেতু এ থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে,শয়তানের হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপ আসলে দ্বিতীয় অর্থে অর্থাৎ মহান নবীদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে ও প্ররোচিত করে শত্রুদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিয়ে এবং তাদের সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শয়তান হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপ করে থাকে। তার হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপ কখনো এমন নয় যে,সে নবীদের অন্তরে হস্তক্ষেপ করে তাঁদের ইচ্ছাশক্তি ও সিদ্ধান্তকে দুর্বল ও খর্ব করে দিতে সক্ষম।

এ পর্যন্ত মহান নবীদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় শয়তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপের অর্থ স্পষ্ট হয়ে গেল। এরপর এখন তৃতীয় বিষয় অর্থাৎ শয়তানের এ অযাচিত হস্তক্ষেপের কুপ্রভাবগুলো বিলুপ্ত করা সংক্রান্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করব।

গ. হস্তক্ষেপ করার প্রভাবসমূহ মিটিয়ে দেবার প্রকৃত তাৎপর্য কী?

যদি শয়তানের হস্তক্ষেপের অর্থ একদল মানুষের বিরুদ্ধে আরেকদল মানুষকে উসকে দেয়া বোঝায় তাহলে এ কাজ তাদেরকে উন্নতি থেকে বিরত রাখবে। তাহলে এ পর্যায়ে মহান আল্লাহ্ কর্তৃক শয়তানের কাজ পরিপূর্ণ বিলুপ্ত করার অর্থ হচ্ছে এই যে,তাদের (শয়তানদের) ষড়যন্ত্র ও অমঙ্গল তাঁদের থেকে দূর করে দেন যে পর্যন্ত না মুমিনদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে,পরীক্ষা কেবল আঁধার হৃদয়েরই জন্য। উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত আয়াতটিতে বর্ণিত হয়েছে :

) إنّا لننصرُ رسلنا والّذين آمنوا في الحياة الدّنيا(

“নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রেরিত রাসূলগণ এবং পার্থিব জগতে যারা ঈমান এনেছে তাদের সবাইকে সাহায্য করব। (সূরা মুমীন : 51)

সংক্ষেপে : পবিত্র কোরআন এ সব আয়াতে নবীদের মাঝে মহান আল্লাহর সনাতন ও প্রতিষ্ঠিত একটি সুন্নাহ্ বা নিয়ম সম্পর্কে তথ্য জ্ঞাপন করে। আর তা হচ্ছে মহান নবিগণ কর্তৃক সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং জনগণকে সুপথে পরিচালনা করার ব্যাপারে সাফল্য লাভের আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর ঠিক তখনই মহান নবী-রাসূলদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে শয়তান এবং মানুষ ও জ্বিনরূপী শয়তানদের পালা চলে আসে। এরপরই শয়তানী ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাসমূহ নস্যাৎ করার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী সাহায্য এসে পৌঁছায়। এটিই ছিল অতীত সকল উম্মাহ্ ও জাতির মাঝে মহান আল্লাহর সুন্নাহ্। হযরত নূহ,হযরত ইবরাহীম এবং বনি ইসরাইলের নবী-রাসূলগণ,বিশেষত হযরত মূসা ও হযরত ঈসাসহ সকল নবী-রাসূলের জীবনেতিহাস এবং বিশেষ করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনেতিহাস এ ঐতিহাসিক সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করে।

বিংশতিতম অধ্যায় : অর্থনৈতিক অবরোধ ও সামাজিক বয়কট

সমাজের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দমন ও নিশ্চি হ্ন করার অত্যন্ত সহজ পন্থা হচ্ছে নেতিবাচক সংগ্রাম যার মূল ভিত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের একতার দ্বারা রচিত হয়।

বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির ওপর ইতিবাচক সংগ্রাম নির্ভরশীল। কারণ একদল যোদ্ধাকে অবশ্যই যুগোপযোগী হাতিয়ার ব্যবহার করতে হবে। আর জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার এবং অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করেই তাদেরকে অভীষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে,সংগ্রামের ধরন শত কষ্ট ও বিপদ সম্বলিত। আর প্রজ্ঞাবান নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল ও পদক্ষেপ এবং পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার পরই এ ধরনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হন;আর অস্থি পর্যন্ত ছুরি না পৌঁছা পর্যন্ত (দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত) এবং যুদ্ধের বিকল্প উপায় বিদ্যমান থাকলে তাঁরা এ ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন না।

কিন্তু নেতিবাচক সংগ্রাম ও প্রতিরোধ এ ধরনের বিষয়াদির ওপর নির্ভরশীল নয়। তা কেবল একটি নিয়ামকের ওপর নির্ভরশীল। আর তা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের একতা ও ঐকমত্য।

অর্থাৎ যে দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ চিন্তা ও লক্ষ্য আছে তারা আত্মিকভাবে একে অপরের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে,তারা একযোগে বিরোধী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সাথে তাদের সকল সম্পর্ক ও বন্ধন ছিন্ন করবে। তাদের সাথে কেনা-বেচা বন্ধ করে দেবে। তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থগিত রাখবে এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদেরকে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেবে এবং তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও তারা তাদের সাথে কোন সহযোগিতা করবে না। এমতাবস্থায় পৃথিবী প্রশস্ত ও বিশাল হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য একটি ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ কারাগারে পরিণত হবে যার ফলে যে কোন মুহূর্তে চাপ প্রয়োগ করা হলেই তারা (ঐ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়) ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বিরোধী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এ ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে (চাপসৃষ্টিকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের কাছে) আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের ইচ্ছাশক্তির কাছে বশ্যতা স্বীকার করে। কিন্তু এ ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অবশ্যই এমন একটি গোষ্ঠী হবে যাদের বিরোধিতার কোন আদশিরক ও মূলনীতিগত দৃঢ়ভিত্তি নেই। যেমন : ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী পদ লাভ করার জন্যই তারা নিজেদেরকে অন্যদের কাছ থেকে পৃথক করেছে। এ ধরনের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী যখনই বিপদের আশঙ্কা করবে এবং দুঃখ-কষ্ট,কারাভোগ ও অবরোধের সম্মুখীন হবে যেহেতু তাদের কোন আত্মিক ও ঈমানী লক্ষ্য নেই আর তাদেরকে উদ্বুদ্ধকারী কারণ ও লক্ষ্য যেহেতু বস্তুগত সেহেতু তারা ক্ষণস্থায়ী ও দ্রূত অপসৃয়মান (পার্থিব) ভোগ ও আনন্দকে সম্ভাব্য পারলৌকিক সুখ ও আনন্দের ওপর প্রাধান্য দেবে এবং অবশেষে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় বা অংশের আকাঙ্ক্ষার কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

তবে যে সম্প্রদায়ের বিরোধিতা ও সংগ্রামের মূল ভিত-ই হচ্ছে সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি তাদের অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস তারা এ ধরনের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রবল বায়ুপ্রবাহের সামনে মোটেও প্রকম্পিত হয় না,বরং অবরোধ ও আরোপিত চাপ তাদের ঈমানের মূল ভিতকে আরো দৃঢ় ও শক্তিশালী করে এবং তারা ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার ঢাল দিয়ে শত্রুর আঘাতগুলোর যথোপযুক্ত জবাব দেয়।

মানব জাতির ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে,সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের ইচ্ছা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সামনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দৃঢ়তা ও প্রতিরোধের সবচেয়ে শক্তিশালী কারণ হচ্ছে তাদের  ঈমানী শক্তি ও আদর্শের প্রতি বিশ্বাস। এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কখনো কখনো সর্বশেষ রক্তবিন্দু ঝরা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। আমরা আমাদের এ বক্তব্যের পক্ষে শত শত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারব।

কুরাইশদের ঘোষণা

কুরাইশ নেতৃবর্গ তাওহীদী ধর্মের আশ্চর্যজনক প্রসার ও প্রভাবের কারণে অত্যন্ত ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই তারা এ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পাবার চিন্তা করতে থাকে। হামযার মতো ব্যক্তিবর্গের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ,কুরাইশ বংশীয় চিন্তাশীল ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী যুবকদের ইসলাম ধর্মের প্রতি ঝোঁক এবং হাবাশায় হিজরতকারী মুসলমানগণ ধর্ম পালনের যে স্বাধীনতা পেয়েছিল সে সব কারণে মক্কার তদানীন্তন গোত্রীয় প্রশাসনের বিহ্বলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ইসলাম ধর্মের প্রসার রোধ করার জন্য পরিকল্পনাগুলো একের পর এক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে কুরাইশগণ খুবই অসন্তুষ্ট ও মনঃক্ষুন্ন হয়ে পড়ে। এ কারণেই তারা আরেকটি মারাত্মক নীল-নকশা প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে এবং তারা অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যা মুসলমানদের সামাজিক জীবনের শিরা-উপশিরা ও ধমনী কর্তন ও ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে এবং ইসলাম ধর্মের প্রসার ও প্রভাব নষ্ট করে দেবে। আর তাওহীদবাদী এ ধর্মের প্রবর্তক ও অনুসারীদেরকে এ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে চিরতরে নিঃশেষ করা সম্ভব হবে।

সুতরাং কুরাইশ নেতৃবর্গের উচ্চ পর্যায়ের একটি পরিষদ মানসুর বিন ইকরামার হস্তলিখিত একটি অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করে এবং তা কাবাগৃহের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখে এবং সকলেই অঙ্গীকার করে যে,কুরাইশ গোত্র আমৃত্যু নিম্নোক্ত ধারাসমূহ মোতাবেক কাজ করবে :

1. মুহাম্মদের সকল অনুসারী ও সমর্থকের সাথে সব ধরনের কেনা-বেচা নিষিদ্ধ করা হবে।

2. তাদের (মুসলমানদের) সাথে সকল সম্পর্ক ও মেলামেশা জোরালোভাবে নিষিদ্ধ করা হবে।

3. মুসলমানদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার কারো থাকবে না।

উপরিউক্ত ধারা সম্বলিত অঙ্গীকার পত্রটিতে কেবল মুতঈম বিন আদী ব্যতীত সকল কুরাইশ নেতা স্বাক্ষর করে এবং তা (চুক্তিনামা) কঠোরতার সাথে বাস্তবায়ন করা হয়। মহানবী (সা.)-এর একমাত্র সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক তাঁর পিতৃব্য হযরত আবু তালিব তাঁর সকল আত্মীয়-স্বজনের (হাশিম বংশীয়গণ) প্রতি মহানবী (সা.)-কে সাহায্য করার আহবান জানান। তিনি বনি হাশিমের সবাইকে পবিত্র মক্কা নগরীর বাইরে একটি পার্বত্য উপত্যকায় অবস্থান গ্রহণ করার নির্দেশ দিলে তাঁরা সবাই সেখানে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। স্মর্তব্য যে,উক্ত উপত্যকাটি শেবে আবু তালিব’ (আবু তালিবের উপত্যকা) নামে প্রসিদ্ধ। এ উপত্যকায় কয়েকটি জরাজীর্ণ বাড়ি ও ছোটখাটো ছাউনি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। বনি হাশিম ও মহানবী (সা.) মুশরিকদের সামাজিক জীবন ও কোলাহল থেকে দূরে সেই উপত্যকায় বসবাস করতে থাকেন। আর ঠিক এভাবেই হযরত আবু তালিব (রা.) কুরাইশদের আকস্মিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য উঁচু উঁচু স্থানসমূহে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়োজিত রাখেন যাতে করে যে কোন ঘটনা ঘটলেই তারা তাঁদেরকে অবগত করতে পারে।318 হযরত আবু তালিব (রা.) যখন কুরাইশদের এ চুক্তিটির ব্যাপারে অবগত হন তখন তিনি একটি কাসীদাহ্ আবৃত্তি করেন যার প্রথম পঙ্ক্তিটি হচ্ছে নিম্নরূপ:

ألم تعلموا أنّا وجدنا محمّدًا

نبيّاً كموسى حظّ في أوّل الكتب

তোমরা কি জান না যে,আমরা মুহাম্মদকে পেয়েছি

মূসার মতো নবী হিসাবে,যাঁর কথা আদি ধর্মগ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ আছে।

এ অবরোধ পুরো তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল। চাপ ও কঠোরতা এক অদ্ভুত পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। বনি হাশিমের শিশুদের মর্মভেদী ক্রন্দন পবিত্র মক্কার পাষাণ হৃদয়ের লোকদের কর্ণে পৌঁছতে লাগল। তবে তাদের অন্তরে তা ততটা প্রভাব ফেলত না। যুবক ও পুরুষরা কেবল এক টুকরো খেজুর খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত ও দিন অতিবাহিত করত। কখনো কখনো একটি খেজুর দুই টুকরো করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। পুরো এই তিন বছর হারাম মাসগুলোতে (যখন পুরো আরব উপদ্বীপে পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় থাকত তখন) বনি হাশিম শেবে আবু তালিব থেকে বের হয়ে আসত এবং সংক্ষিপ্ত কেনাবেচা ও ছোট-খাটো লেনদেন সম্পন্ন করত। এরপর তারা পুনরায় উপত্যকায় প্রত্যাবর্তন করত। মহানবীও কেবল এ মাসগুলোতেই ধর্ম প্রচারের সুযোগ পেতেন। কুরাইশদের লোকগণ এ মাসগুলোতেই বনি হাশিমের ওপর চাপ সৃষ্টি ও অত্যাচার করার সকল উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করত। বনি হাশিম ও মুসলমানগণ যখনই হাট-বাজার ও দোকানগুলোতে উপস্থিত হতো এবং কোন কিছু কিনতে চাইত এ সব চর তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে আরো চড়ামূল্যে তা ক্রয় করত এবং এভাবে তারা মুসলমানদের ক্রয় ক্ষমতা ছিনিয়ে নিত।

এ সময় আবু লাহাব সবচেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করত। সে বাজারের মধ্যে চিৎকার করে বলতে থাকত, হে লোকসকল! পণ্য-সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে ফেল যার ফলে তোমরা মুহাম্মদের অনুসারীদের ক্রয়-ক্ষমতা তাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হবে। মূল্য স্থির রাখার জন্য তোমরা নিজেরাও পণ্য-সামগ্রী চড়ামূল্যে ক্রয় কর। এ কারণেই জিনিসপত্রের দাম সব সময় চড়া থাকত।