চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড1%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 106926 / ডাউনলোড: 9721
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

উপত্যকায় বনি হাশিমের নাজুক অবস্থা

ক্ষুধার কষ্ট এতটা তীব্র হয়েছিল যে সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেছেন, একরাতে আমি উপত্যকার বাইরে আসলাম। আমি আমার সমস্ত শক্তি প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলাম। তখন আমি উটের চামড়া দেখতে পেলাম। আমি তা তুলে নিয়ে ধুয়ে পোড়ালাম এবং গুঁড়ো করলাম। এরপর অল্প একটু পানি দিয়ে ঐ গুঁড়ো চামড়াকে মণ্ডে পরিণত করলাম। আর এ মণ্ড তিনদিন পর্যন্ত খেয়েছিলাম।”

কুরাইশদের গুপ্তচররা উপত্যকায় যাওয়ার পথে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখত যাতে কেউ খাদ্য-সামগ্রী নিয়ে আবু তালিবের উপত্যকায় যেতে না পারে। এ ধরনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও দৃষ্টি রাখা সত্ত্বেও কখনো কখনো হযরত খাদীজার ভ্রাতুষ্পুত্র হাকীম বিন হিযাম,আবুল আস ইবনে রাবী এবং হিশাম ইবনে আমর মাঝরাতে কিছু গম ও খেজুর একটি উটের ওপর চাপিয়ে উপত্যকার কাছাকাছি চলে আসতেন। এরপর রশি উটের গলায় পেঁচিয়ে ঐ উটকে ছেড়ে দিতেন (আর উট উপত্যকার মধ্যে অবরুদ্ধ বনি হাশিমের কাছে পৌঁছে যেতে এবং তাঁরা উটের পিঠ থেকে প্রেরিত গম ও খেজুর নামিয়ে নিতেন।) কখনো কখনো এ ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে গিয়ে তাঁরা অসুবিধার সম্মুখীন হতেন। একদিন আবু জাহল দেখতে পেল যে,হাকীম বিন হিযাম কিছু খাদ্য-সামগ্রী উটের পিঠে নিয়ে উপত্যকার পথে রওয়ানা হয়েছেন। সে তীব্রভাবে তাঁর ওপর চড়াও হয়ে বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই কুরাইশদের কাছে নিয়ে গিয়ে অপমানিত করব। তাদের ধস্তাধস্তি ও বাকবিতণ্ডা দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল। আবুল বুখতুরী যে ছিল ইসলামের শত্রু সে সেখানে উপস্থিত হয়ে আবু জাহলের এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা করে বলল, সে (হাকীম) তার ফুফু খাদীজার জন্য খাদ্য নিয়ে যাচ্ছে। তাকে বাধা দেয়ার অধিকার তোমার নেই। এমনকি আবুল বুখতুরী এ কথা বলেও ক্ষান্ত হলো না। সে আবু জাহলকে লাথি মারল।

চুক্তি ও অঙ্গীকারপত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কুরাইশদের কঠোর আচরণ মুসলমানদের ধৈর্যশক্তি বিন্দুমাত্র হ্রাস করতে পারে নি। অবশেষে ছোট ছোট শিশুদের হৃদয় বিদীর্ণকারী ক্রন্দন এবং সার্বিকভাবে মুসলমানদের অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থা একটি গোষ্ঠীর ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তাই তারা চুক্তি ও অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে খুবই অনুতপ্ত হয় এবং উদ্ভূত সংকট নিরসন করার চিন্তাভাবনা করতে থাকে।

একদিন হিশাম ইবনে আমর আবদুল মুত্তালিবের দৌহিত্র যুহাইর ইবনে আবি উমাইয়্যার কাছে গিয়ে বলল, এটি কি শোভনীয় যে,তুমি পেট পুরে আহার করবে ও সর্বোত্তম পোশাক পরবে,অথচ তোমার নিকটাত্মীয়গণ বস্ত্রহীন ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় জীবনযাপন করবে? মহান আল্লাহর শপথ,যদি তুমি আবু জাহলের আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাকে তুমি তা বাস্তবায়ন করার আহবান জানাতে তাহলে সে কখনই তোমার আহবান মেনে নিত না। যুহাইর এ কথা শুনে বলল, আমি একা কুরাইশদের এ সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করতে পারব না। তবে আমার সাথে যদি কেউ থাকে,তাহলে আমি চুক্তি ও অঙ্গীকারপত্রটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করব। হিশাম তাকে বলল, আমি তোমার সাথে আছি। তখন সে বলল, তৃতীয় আরেক ব্যক্তিকে আমাদের সাথে নাও। তখন হিশাম মুতঈম ইবনে আদীর কাছে গিয়ে বলল, আমি চিন্তাও করতে পারি না যে,এ দু টি বংশ (বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিব) যারা আবদে মান্নাফের বংশধর এবং এ বংশের সাথে তোমার রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার কারণে তুমি নিজেও গর্বিত,তারা সকলেই মৃত্যুবরণ করুক তা তুমি কামনা করবে এবং এতে সন্তুষ্ট থাকবে? সে তখন বলল, আমিই বা কি করতে পারি। এক ব্যক্তির পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। তখন হিশাম উত্তরে বলল, আর কিছুসংখ্যক ব্যক্তি অবশ্যই আমাদের সাথে সহযোগিতা করবে। এ কারণে হিশাম বিষয়টি যেভাবে মুতঈমের কাছে উত্থাপন করেছিল ঠিক সেভাবে আবুল বুখতুরী ও যামআর কাছেও করল এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহবান জানাল। তারা সবাই ঠিক করল যে,তারা সকাল বেলা মসজিদুল হারামে উপস্থিত হবে।

যুহাইর ও তার কতিপয় সহযোগীর উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে কুরাইশদের অধিবেশন শুরু হলো। যুহাইর নীরবতা ভেঙ্গে বলল, আজ কুরাইশদের উচিত তাদের থেকে এ ন্যাক্কারজনক কালিমার দাগ দূর করা। আজ অবশ্যই বেইনসাফীমূলক এ অঙ্গীকারপত্রটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতে হবে। কারণ বনি হাশিমের হৃদয়বিদারী এ দুরবস্থা সবাইকে দুঃখভারাক্রান্ত করেছে।”

তখন আবু জাহল বলল, এটি কখনই বাস্তবায়ন করা যাবে না। আর কুরাইশদের চুক্তি ও অঙ্গীকার (সর্বাবস্থায়) সম্মানার্হ। ঠিক তখন যুহাইরের বক্তব্য সমর্থন করে যামআহ্ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, অবশ্যই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করতে হবে। আর আমরা শুরু থেকেই এ চুক্তি ও অঙ্গীকারের ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিলাম না। সভার আরেক প্রান্ত থেকে যারা নিজেরাই এ ধরনের বৈষম্যমূলক অন্যায় চুক্তি ভঙ্গ করতে চাচ্ছিল তারাও যুহাইরের বক্তব্য সমর্থন করল। আবু জাহল বুঝতে পারল যে,বিষয়টি খুবই গুরুতর এবং এ ব্যাপারে আগেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আর এরা তার অনুপস্থিতিতেই চুক্তি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ কারণে সে একটু নরম হলো এবং চুপচাপ রইল। মুতইম তৎক্ষণাৎ এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করল এবং চুক্তিপত্রটি ছিঁড়ে ফেলার জন্য যে স্থানে তা সংরক্ষিত ছিল সেখানে গিয়ে দেখতে পেল যে,ইতোমধ্যে উঁইপোকা চুক্তিপত্রটি খেয়ে ফেলেছে এবং কেবলبسمك اللهمّ (হে আল্লাহ্! তোমার নামে)-এ বাক্যটি ব্যতীত ঐ চুক্তিপত্রের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এখানে স্মর্তব্য যে কুরাইশগণ তাদের চিঠিপত্র,অঙ্গীকার বা চুক্তিপত্র ইত্যাদির শুরুতেبسمك اللهمّ লিখত।৩১৯

হযরত আবু তালিব ঐ দিন কাছ থেকে ঘটনাটি দেখলেন এবং এর পরিসমাপ্তি ঘটার জন্য অপেক্ষমাণ রইলেন। ঘটনার পূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়ার পর তিনি উপত্যকায় ফিরে গিয়ে পুরো ব্যাপার তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে জানালেন। হযরত আবু তালিব (রা.)-এর সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েই উপত্যকায় আশ্রয়গ্রহণকারিগণ আবার তাঁদের নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন।

কোন কোন ঐতিহাসিক লিখেছেন : মহানবী (সা.),হযরত আবু তালিব (রা.) ও হযরত খাদীজাহ্ (রা.) অবরোধ চলাকালীন সময়ে তাঁদের সকল সম্পদ ব্যয় করে ফেলেছিলেন। তখন হঠাৎ জিবরাইল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে মহানবী (সা.)-কে জানালেন, কুরাইশ যে চুক্তিপত্রটি লিখে সীলমোহর লাগিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল তা পুরোটা উঁই পোকা খেয়ে ফেলেছে। কেবল

بسمك اللهم -এ বাক্যাংশটি ব্যতীত উক্ত চুক্তিপত্রের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। মহানবী (সা.) হযরত আবু তালিবকে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। তাঁরা উপত্যকায় আশ্রয়গ্রহণকারী কতিপয় ব্যক্তির সাথে উপত্যকা থেকে বের হয়ে পবিত্র কাবায় আসলেন এবং সেখানে বসে পড়লেন। এ সময় কুরাইশরা আবু তালিবকে ঘিরে ফেলল এবং তাঁকে বলতে লাগল, আমাদের সাথে তোমার আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা স্মরণ করা এবং নিজ ভ্রাতুষ্পুত্রকে সমর্থন দান করা থেকে বিরত থাকার সময় কি আসে নি?

হযরত আবু তালিব (রা.) তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, চুক্তিপত্রটি নিয়ে এসো। তারা সেই চুক্তিপত্রটি নিয়ে আসল,অথচ তখনও সেটির সীলমোহর বিদ্যমান ছিল। হযরত আবু তালিব (রা.) বললেন, এটিই কি সেই চুক্তিপত্র যা তোমরা সবাই লিখেছ? তারা তখন বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কেউ কি এতে কোন পরিবর্তন সাধন করেছ? তারা বলল, না। তিনি তাদেরকে বললেন, আমার ভ্রাতুষ্পুত্র তার প্রভুর কাছ থেকে একটি সংবাদপ্রাপ্ত হয়েছে। যদি তার কথা সত্য হয় তাহলে কি তোমরা তার ওপর থেকে হাত উঠিয়ে নেবে (অর্থাৎ তার সাথে শত্রুতা করবে না,তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না,তাকে ধর্ম প্রচারে বাধা দেবে না)? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আর যদি তার কথা মিথ্যা হয় তাহলে আমিও তাকে তোমাদের হাতে তুলে দেব আর তোমরা তাকে হত্যা করো। কুরাইশগণ তখন আবু তালিবের কথা মেনে নিয়ে বলল, (হে আবু তালিব!) তুমি এখন ন্যায় পথেই অগ্রসর হয়েছ। আবু তালিব তখন বললেন, আমার ভ্রাতুষ্পুত্র বলেছে : উঁই পোকা চুক্তিপত্রটি খেয়ে ফেলেছে। তারা তখন চুক্তিপত্রটির সীলমোহর ভেঙ্গে দেখতে পেল যে,সত্যিই উঁই পোকা মহান আল্লাহর নাম ব্যতীত গোটা চুক্তিপত্রটি খেয়ে ফেলেছে। এ ঘটনা তাদের হেদায়েতের কারণ তো হলোই না,বরং তাদের শত্রুতাকে আরো বাড়িয়ে দিল। আর অবশেষে বনি হাশিম উপত্যকায় প্রত্যাবর্তন করলেন।৩২০ হিশাম কর্তৃক অবরোধ ভাঙ্গা পর্যন্ত বনি হাশিমকে সেখানে থাকতে হয়েছিল।

চুক্তি ভঙ্গ হওয়ার পর হযরত আবু তালিব (রা.) দুঃসাহসী এ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রশংসায় যে কবিতাটি রচনা করেছিলেন ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন।৩২১

এগুলো ছিল মহানবী (সা.)-এর ইসলাম ধর্ম প্রচার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কুরাইশদের অন্যায়মূলক প্রতিক্রিয়াসমূহের গুটিকতক নমুনা। অবশ্য সবসময় নিশ্চিতভাবে দাবি করা সম্ভব নয় যে,আমরা যে ধারাবাহিকতা উল্লেখ করেছি ঠিক সেভাবেই এ সব প্রতিক্রিয়া সংঘটিত ও প্রদর্শিত হয়েছে। তবে ইতিহাস অধ্যয়ন করলে,বিশেষ করে আমরা যা উল্লেখ করেছি তদনুসারে এ ধরনের ধারাবাহিকতা দৃষ্টিগোচর হয়। নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসের মাঝামাঝিতে অর্থনৈতিক অবরোধের অবসান হয়।

তবে কুরাইশদের নির্যাতন ও প্রতিক্রিয়াগুলো যা কিছু আমরা এ গ্রন্থে উল্লেখ করেছি কেবল সেগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না,বরং এ সুমহান ঐশী আন্দোলনের বিপক্ষে তাদের আরো কিছু প্রচারপদ্ধতি ছিল যেগুলো তারা ব্যবহার করত। যেমন মহানবী (সা.)-এর সুমহান ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করার জন্য তারা তাঁকে  আবতার’ অর্থাৎ নির্বংশ বলত। যখনই মহানবী (সা.)-এর নাম আলোচিত হতো তখনই আ স ইবনে ওয়াইল সাহমী বলত : আরে তার কথা বাদ দাও তো। সে তো আঁটকুড়ে;সে যদি মৃত্যুবরণ করে,তাহলে তার ধর্ম প্রচার কার্যক্রমও থেমে যাবে।”

এ সময় সূরা কাওসার অবতীর্ণ হয় এবং এ সূরায় বলা হয়েছে যে,মহানবী (সা.)-কে অগণিত সন্তান-সন্ততি ও বংশধর দেয়া হবে।৩২২

একুশতম অধ্যায় : হযরত আবু তালিব (রা.)-এর মৃত্যু

যখন আমি এ অধ্যায় রচনা করছিলাম তখন সৌদি আরবের কাতীফ নগরীর কারাগারে এক মুক্তমনা ও সাহসী যুবক বন্দী ছিলেন যিনি কুরাইশ বংশের মুমিন হযরত আবু তালিব’৩২৩ নামক একটি বই-এর রচয়িতা। এই বইতে তিনি আবু তালিব (রা.)-এর ঈমান,ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং নিষ্ঠার ব্যাপারে লিখেছেন। তিনি আহলে সুন্নাতের আলেমদের তথ্য ও দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে হযরত আবু তালিব (রা.) যে মুমিন ছিলেন তা প্রমাণ করেছেন। সৌদি আরবের বিচার বিভাগ আকীদা-বিশ্বাস ও বাক-স্বাধীনতার এ যুগে এবং বর্তমান মুক্ত বিশ্বে,তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিল যেন তিনি তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। যেহেতু এ যুবক যে সত্যের ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে তা অস্বীকার করতে চান নি সেহেতু তাঁকে মৃতুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তাঁর প্রাণ রক্ষার ব্যাপারে বেশ কিছু উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়ার পর তাঁর শাস্তির মাত্রা লাঘব করা হয় এবং (মৃতুদণ্ডের পরিবর্তে) তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর আরো বেশ কিছু জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হলে উপরিউক্ত দণ্ড আরো লাঘব ও শিথিল করা হয় অর্থাৎ তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ৮০ ঘা বেত্রাঘাত করার আদেশ দেয়া হয়।

তিনি এখন কারাগারে দণ্ডভোগের জন্য অপেক্ষমাণ। (সে দেশের) মুসলিম জনসাধারণের উচিত হয় সাহস করে সৌদি আরবের বিচার বিভাগ ও আদালতের৩২৪ কাছে তাঁর শাস্তি ও দণ্ড মওকুফ করার জন্য আবেদন জানানো এবং সমগ্র বিশ্বের মুসলামানদের সৌদি আরবের ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ করা নতুবা নিরপরাধ এ যুবককে বেত্রাঘাতে জর্জরিত হয়ে প্রাণ হারাতে হবে।৩২৫

অবশেষে কুরাইশদের আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ তাদেরই মধ্য থেকে কতিপয় চিন্তাশীল ব্যক্তির উদ্যোগে ভেঙ্গে যায় এবং ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মহানবী (সা.) ও তাঁর অনুসারিগণ তিন বছর নির্বাসনে কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহানোর পর আবু তালিবের উপত্যকা থেকে বের হয়ে আসেন এবং নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। মুসলমাদের সাথে কেনা-বেচা পুনরায় চালু হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তাঁদের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। হঠাৎ করে মহানবী (সা.) এ সময় অত্যন্ত তিক্ত অবস্থার সম্মুখীন হন। এক বিরাট মুসীবতের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব নিরপরাধ মুসলমানদের মন-মানসিকতা ও আত্মিক শক্তির ওপর পড়েছিল। অত্যন্ত নাজুক ও সংবেদনশীল ঐ মুহূর্তে এ ঘটনার ব্যাপকতা ও তীব্রতা কোন মাপকাঠি দিয়েই পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কারণ কোন মতাদর্শ ও চিন্তাধারার বিকাশ দু ধরনের কারণের ওপর নির্ভরশীল। কারণদ্বয় নিম্নরূপ : বাক-স্বাধীনতা এবং শত্রুর কাপুরুষোচিত আক্রমণ প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। ঘটনাক্রমে যে মুহূর্তে মুসলমানগণ বাক-স্বাধীনতা ভোগ করতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই তাঁরা দ্বিতীয় কারণটি হারায় অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিরক্ষা বিধায়ক তাঁদের মধ্য হতে বিদায় নেন এবং চিরনিদ্রায় শায়িত হন।

সে দিন মহানবী (সা.) তাঁর একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিরক্ষা বিধায়ককে হারান যিনি তাঁকে ৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পৃষ্ঠপোষকতা দান ও রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পতঙ্গের মতো তাঁর অস্তিত্ব প্রদীপের চারপাশে ঘুরেছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আয়-উপার্জনের সংস্থান হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর (মহানবীর) যাবতীয় ব্যয় বহন করেছেন এবং তাঁকে তাঁর নিজ সন্তানদের ওপরও অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

মহানবী (সা.) এমন এক ব্যক্তিত্বকে হারালেন যাঁর হাতে আবদুল মুত্তালিব (মহানবীর দাদা) তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোতে তাঁকে অর্থাৎ শিশু অনাথ হযরত মুহাম্মদকে তুলে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে নিম্নোক্ত কবিতার মাধ্যমে সম্বোধন করে বলেছিলেন :

أُوصيك يا عبد مناف بعدي

بموعد بعد أبيه فرد

“হে আবদে মান্নাফ (হযরত আবু তালিবের নাম ছিল আবদে মান্নাফ এবং এ কারণেই তাঁর পিতা তাঁকে এ নামে সম্বোধন করেছেন)!৩২৬ ঐ ব্যক্তির লালন-পালন ও রক্ষণাবেক্ষণ তোমার কাঁধে অর্পণ করছি যে তার নিজ পিতার মতই তাওহীদবাদী। আর তিনি পিতা আবদুল মুত্তালিবের প্রতি সাড়া দিয়ে বলেছিলেন :

يا أبت لا توصيّن بمحمّدٍ فإنّه ابني وابن أخي

“হে পিতা! মুহাম্মদের ব্যাপারে অসিয়ত করার প্রয়োজন নেই;কারণ সে আমারই সন্তান এবং আমারই ভ্রাতুষ্পুত্র।”

সম্ভবত যে মুহূর্তে হযরত আবু তালিবের কপালে মৃত্যুঘামের বারিবিন্দুগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল,তখন মহানবী (সা.) অতীতের তিক্ত ও মধুর ঘটনাগুলো স্মরণ করছিলেন এবং নিজেকে বলছিলেন :

১. এ ব্যক্তি যিনি মৃত্যুপথযাত্রী তিনিই আমার সেই দয়ালু পিতৃব্য যিনি অবরোধ চলাকালীন সময়ে (আবু তালিবের) গিরি উপত্যকায় রাতের বেলা আমাকে আমার শয্যা বা ঘুমানোর জায়গা থেকে উঠিয়ে আমার হাত ধরে অন্য এক স্থানে নিয়ে যেতেন। সেখানে আমার শোয়া ও বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করতেন এবং তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তান আলীকে আমার শয্যাস্থানে শোয়াতেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এটিই যে,যদি (রাতের বেলা) কখনও আকস্মিকভাবে কুরাইশরা আক্রমণ চালিয়ে আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় টুকরো টুকরো করতে চায় তাহলে তাদের নিক্ষিপ্ত তীর যেন লক্ষ্যভেদ করতে না পারে এবং তাঁর সন্তান আলীই যেন আমার প্রাণ রক্ষার বিনিময়ে কোরবানী হয়ে যায়। এমনকি যে রাতে তাঁর সন্তান আলী তাঁকে বলেছিলেন : আব্বা,অবশেষে এক রাতে আমিও এই শয্যায় শায়িতাবস্থায় নিহত হয়ে যাব। তখন তিনি তাকে বেশ কঠিন ভাষায় বলেছিলেন :

إصبرن يا بنيّ فالصبر احجى

كلّ حيّ مصيره لشعوبٍ

قد بلوناك والبلاء شديدٌ

لفداء النّجيب وابن النّجيب

হে বৎস! ধৈর্য জ্ঞান ও বুদ্ধির নিদর্শন।

প্রত্যেক জীবিত সত্তাই মৃত্যুবরণ করবে।

আমি তোমার ধৈর্য পরীক্ষা করছি এবং বিপদ-আপদও বেশ কঠিন।

আমি তোমাকে ঐ মহানুভবের জীবিত থাকার জন্য উৎসর্গ করেছি যিনি আরেক মহানুভব সত্তারই সন্তান।

আর তাঁর সন্তান আলীও তাঁকে আরো মিষ্টি ও চমৎকার ভাষায় উত্তর দিয়েছিল এবং নবীর পথে মৃত্যুবরণ করাকে নিজের জন্য বিরাট গৌরব বলে অভিহিত করেছিল।৩২৭

২. এ নিস্প্রাণ দেহটি আমার শ্রদ্ধেয় ও আন্তরিক পিতৃব্যের দেহ যিনি আমার পথে তিন বছর অন্তরীন ও অবরুদ্ধ জীবনযাপন করেছেন এবং যিনি পুরো বনি হাশিমের শান্তি ও আরাম কেড়ে নিয়েছিলেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা সবাই আমার সাথে একটি উপত্যকায় বসবাস করে এবং নিজেদের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব সব কিছু বিসর্জন দেয়। অর্থাৎ তিনি তাঁর পুরো পার্থিব জীবন ও অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরেছেন এবং কুরাইশদের কাছে মারাত্মক ভাষায় চিঠি দিয়ে তাদেরকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে,তিনি কখনই আমাকে সাহায্য দান ও পৃষ্ঠপোষকতা করা থেকে বিরত থাকবেন না। এখানে তাঁর চিঠির মূল পাঠ্যটি উদ্ধৃত করা হলো :

“হে মুহাম্মদের শত্রুরা। ভেবো না যে,আমরা মুহাম্মদকে ত্যাগ করব। কখনই না। সে সর্বদা আমাদের নিকট ও দূর সম্পর্কের সকল আত্মীয়-স্বজনের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত। বনি হাশিমের শক্তিশালী বাহুগুলো তাঁকে সব ধরনের আঘাত ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। ৩২৮

চাচার মৃত্যু নিশ্চিত হলে আবু তালিবের গৃহ থেকে শোক,বিলাপ ও ক্রন্দন শোনা যেতে লাগল। শত্রু-বন্ধু সকলেই তাঁর দাফন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য তাঁর ঘরে উপস্থিত হয়েছিল। তাহলে কি এত দ্রূত কুরাইশ গোত্রপ্রধান এবং তাদের নেতা হযরত আবু তালিবের (রা.) মতো ব্যক্তির মৃত্যুবরণের ঘটনাটির পরিসমাপ্তি ও যবনিকাপাত ঘটবে?

আবু তালিবের হৃদ্যতা ও আবেগের উদাহরণ

ইতিহাসের পাতায় পাতায় পরস্পরের প্রতি বিভিন্ন ব্যক্তির ভালোবাসা ও আবেগ অনুভূতির নিদর্শনসমূহ বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর অধিকাংশই ছিল বস্তুবাদী মাপকাঠি এবং বিত্ত-বিভবকে কেন্দ্র করেই;আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের অস্তিত্বের সুগভীরে প্রোথিত এ ভালোবাসা ও আবেগ-অনুভূতির ব হ্নিশিখা নির্বাপিত হয়ে যায়।

তবে যে সব আবেগ-অনুভূতির ভিত্তি হচ্ছে আত্মীয়তা ও রক্তের বন্ধন অথবা ভালোবাসার পাত্র অর্থাৎ প্রিয় ব্যক্তিটির আত্মিক-আধ্যাত্মিক পূর্ণতা ও উৎকৃষ্ট গুণাবলীর প্রতি আস্থা,বিশ্বাস এবং নিষ্ঠা সেগুলোর ব হ্নিশিখা এত তাড়াতাড়ি নিভে যায় না এবং এ সব ব্যক্তির ভালোবাসা ও আবেগ-অনুভূতি এত তাড়াতাড়ি ও সহজেই বিলুপ্ত হবে না।

ঘটনাক্রমে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আবু তালিব (রা.)-এর ভালোবাসার দু টি উৎস ছিল। অর্থাৎ মহানবীর প্রতি তাঁর যেমন বিশ্বাস ছিল অর্থাৎ তিনি তাঁকে একজন ইনসানে কামিল (পূর্ণ মানব) এবং মানবতা ও মানব চরিত্রের পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ হিসাবে বিবেচনা করতেন ঠিক তেমনি তিনি (মহানবী) ছিলেন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র এবং হযরত আবু তালিব (রা.)ও তাঁর নিজ অন্তরে নিজ ভাই ও সন্তানদের স্থলে তাঁকে (মহানবী) স্থান দিয়েছিলেন এবং প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

হযরত আবু তালিব (রা.) মহানবী (সা.)-এর আধ্যাত্মিকতা ও আত্মিক পবিত্রতায় এতটা বিশ্বাস ও আস্থা পোষণ করতেন যে,তিনি দুর্ভিক্ষের সময় মহানবীকে সাথে নিয়ে মুসাল্লায় যেতেন এবং মহান আল্লাহর কাছে তাঁর নৈকট্য ও মর্যাদার উসীলায় প্রার্থনা করতেন এবং বিপদগ্রস্ত ও ঐশ্বরিক দয়া ও করুণাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন এবং তাঁর প্রার্থনায় ফল হতো। অনেক ঐতিহাসিকই নিম্নোক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন :

কোন এক বছর মক্কা নগরী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের অধিবাসিগণ এক বিস্ময়কর অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ কবলিত হয়েছিল। ভূপৃষ্ঠ ও আকাশের করুণা ও আশীর্বাদ তাদের জন্য যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কুরাইশগণ দলে দলে অশ্রুসিক্ত নয়নে হযরত আবু তালিবের কাছে গমন করে ঐকান্তিকভাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিল যেন তিনি মুসাল্লায় গিয়ে মহান আল্লাহর কাছে জনগণের জন্য রহমতের বৃষ্টি প্রার্থনা করেন। হযরত আবু তালিব (রা.) শিশু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাত ধরে পবিত্র কাবার দেয়ালের দিকে ঠেস দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করে বলেছিলেন, হে দয়ালু প্রভু! এই শিশু পুত্রটির উসিলায় (আর তিনি তখন আঙ্গুল দিয়ে রাসূলুল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন) আপনার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং আমাদেরকে আপনার অসীম দয়া ও মহানুভবতার অন্তর্ভুক্ত করে নিন।”

সকল ঐতিহাসিক সর্বসম্মতিক্রমে লিখেছেন : হযরত আবু তালিব (রা.) যখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন তখন আকাশে একখণ্ড মেঘও ছিল না। কিন্তু অনতিবিলম্বে আকাশে চারদিক থেকে মেঘমালা ছুটে আসল। সমগ্র মক্কা নগরী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল। মেঘমালার গর্জন ও বিদ্যুৎ চমকানি সেখানে এক মহা হৈ চৈ ও চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করল। প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের ফলে মক্কা নগরীর সর্বত্র বন্যা দেখা দিল এবং নিকট ও দূরবর্তী সকল এলাকা রহমতের বারিবিন্দু দিয়ে সিক্ত ও প্লাবিত হয়ে গেল। সবার মন হাসি-আনন্দে ভরে উঠল। এ সময় হযরত আবু তালিব (রা.) কতিপয় পঙ্ক্তি রচনা করেছিলেন।৩২৮

হযরত আবু তালিব (রা.) জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে তাঁর রচিত কাসীদাটি রচনা ও আবৃত্তি করেছিলেন যখন কুরাইশদের হাতে মহানবীকে তুলে দেয়ার জন্য তাঁর ওপর তাদের পক্ষ থেকে চাপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিনি এই কাসীদায় মহানবী (সা.)-এর পুণ্যময় অস্তিত্বের সাথে বৃষ্টি বর্ষণের ঘটনাটি সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেছিলেন।

ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৮৬ পৃষ্ঠায় (আবু তালিবের) ঐ কাসীদা থেকে ৯৪ টি পঙ্ক্তি উল্লেখ করেছেন। অথচ ইবনে কাসীর শামী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৫২-৫৭ পৃষ্ঠায় উক্ত কাসিদা থেকে ৯২ টি পঙ্ক্তি উল্লেখ করেছেন। এ কাসিদাটি বলিষ্ঠতা,মাধুর্যতা,সাবলীলতা,ভাষার প্রাঞ্জলতা আকর্ষণ এবং স্পষ্টরূপে প্রকাশ করার ক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুলন্ত কাব্যসপ্তক (মুআল্লাকাত-ই সাবআহ্) অপেক্ষাও উন্নততর ও শ্রেষ্ঠ। এখানে উল্লেখ্য যে,অন্ধকার যুগের আরবগণ এ মুআল্লাকাত-ই সাবআহ্ নিয়ে গর্ব করত এবং এগুলোকে সর্বোৎকৃষ্ট কাব্য বলে গণ্য করত।

হযরত আবু তালিবের কাব্যসমগ্রের সংগ্রাহক আবু হাফ্ফান আবদী উক্ত কাসিদা-ই লামিয়ার ১২১টি পঙ্ক্তি উল্লেখ করেছেন এবং সম্ভবত সমগ্র কাসিদাটি এ ১২১টি পঙক্তি বিশিষ্টই হবে।

হযরত আবু তালিব (রা.) এ কাসিদায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আলোকিত (নূরানী) বদনমণ্ডলের উসীলায় মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করার ব্যাপারে ইঙ্গিত করে বলেছেন :

وأبيضُ يستسقي الغام بوجهه

ثمالَ اليتامى عصمةً للارامل

يلوذ به الهلاك من آل هاشم

فهم عنده في رحمة و فواضل

“সেই শ্বেতশুভ্র সত্তার পবিত্র মুখমণ্ডলের উসীলায়

তীব্র উষ্ণ ও অনাবৃষ্টির দিবসও হয় পানি দ্বারা স্নাত-সিক্ত,

যে অনাথদের আশ্রয়স্থল ও অভিভাবক এবং বিধবা ও অসহায়দের ত্রাণকর্তা-যার কাছে আশ্রয় নেয় বনি হাশিমের অভাগাগণ

যার সান্নিধ্যে তারা লাভ করে (পরম করুণাময়ের) করুণা ও সমৃদ্ধি।”


14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49

50

51

52

53

54

55

56

57

58

59

60

61