চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 103673
ডাউনলোড: 9120


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 103673 / ডাউনলোড: 9120
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

আটাশতম অধ্যায় : কিবলা পরিবর্তন

মহানবী (সা.)-এর হিজরতের কয়েক মাস অতিবাহিত না হতেই ইয়াহুদীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ শুরু হলো। হিজরতের সপ্তদশ মাসে445 মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসল কাবাকে কিবলা হিসাবে গ্রহণের এবং নামাযের সময় মসজিদুল হারামের দিকে লক্ষ্য করে নামায পড়ার। বিস্তারিত ঘটনাটি নিম্নরূপ :

মহানবী (সা.) মক্কী জীবনের তের বছর বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়েছেন। তাঁর মদীনায় হিজরতের পরও এ নির্দেশ বহাল থাকে। মদীনায় হিজরতের পরও ঐশী নির্দেশ এটি ছিল যে,ইয়াহুদীরা যে কিবলার দিকে ফিরে নামায পড়ে মুসলমানগণও যেন সে দিকে ফিরে নামায পড়ে। এ বিষয়টি কার্যত প্রাচীন ও নবীন এ দু ধর্মের নৈকট্য ও সহযোগিতার চি‎‎ হ্ন হিসাবে প্রতীয়মান হতো। কিন্তু মুসলমানদের উন্নতি ও সমৃদ্ধির শঙ্কা ইয়াহুদীদেরকে আচ্ছাদিত করল। কারণ মুসলমানদের উত্তরোত্তর অগ্রগতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সারা আরব উপদ্বীপে ইসলামের বিজয়ের আলামত বহন করছিল। ইয়াহুদীরা আশংকা করল অচিরেই তাদের ধর্ম বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করল। তারা বিভিন্নভাবে মহানবী (সা.) ও মুসলমানদের কষ্ট দিতে লাগল। বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বলতে লাগল,মুহাম্মদ দাবি করে যে,সে স্বতন্ত্র এক ধর্ম নিয়ে এসেছে এবং তার আনীত শরীয়ত পূর্ববর্তী সকল ধর্মের সমাপ্তকারী ও স্থলাভিষিক্ত,অথচ সে স্বতন্ত্র কিবলার অধিকারী নয়,বরং ইয়াহুদীদের কিবলার দিকে নামায পড়ে। তাদের এ কথা মহানবীকে বেশ কষ্ট দিত। তিনি মাঝরাত্রিতে গৃহ থেকে বের হতেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে এ বিষয়ে ওহী আগমনের প্রতীক্ষা করতেন। নিম্নোক্ত আয়াতটি এ কথার সত্যতা প্রমাণ করে :

) قد نرى تقلّب وجهك في السّماء فلنولّينّك قبلة ترضها(

আমরা আকাশের দিকে তোমার অর্থবহ দৃষ্টিসমূহকে লক্ষ্য করেছি। তাই যে কিবলার দিকে তুমি সন্তুষ্ট সে দিকেই তোমার মুখ ফিরিয়ে দেব। 446

পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ থেকে জানা যায় ইয়াহুদীদের আচরণের প্রতিবাদ ছাড়াও কিবলা পরিবর্তনের অন্য কারণও বিদ্যমান ছিল এবং তা হলো মুসলমানদের পরীক্ষা করা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মুমিনদের মিথ্যা ঈমানের দাবিদারদের থেকে পৃথক করা হয়েছিল যাতে রাসূল (সা.) তাদের চিনতে পারেন। কারণ নামাযের মধ্যে ঐশী নির্দেশ মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে নতুন ধর্মের প্রতি ঈমান ও ইখলাসের (নিষ্ঠা) প্রমাণ বহন করে এবং এ নির্দেশের অবমাননা কপটতার চি হ্ন হিসাবে পরিগণিত। পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে এ বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে :

) و ما جعلنا القبلة الّتي كنت عليها إلّا لنعلم من يتّبع الرّسول ممّن ينقلب على عقبيه و إن كانت لكبيرة إلّا على الّذين هدى الله(

তুমি এতদিন যে কিবলার অনুসরণ করছিলে তা এ উদ্দেশ্যে ছিল যে,যাতে আমরা জানতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে ও কে ফিরে যায়। মহান আল্লাহ্ যাদের সৎ পথে পরিচালিত করেছেন তা ব্যতীত অপরের নিকট এটি নিশ্চয়ই কঠিন। 447

অবশ্য আরব উপদ্বীপ ও ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়নে কিবলা পরিবর্তনের অন্যান্য কারণও জানা যায়।

প্রথমত কাবা একত্ববাদের মহান সৈনিক হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে নির্মিত হওয়ায় আরবদের নিকট বিশেষ সম্মানিত ছিল। তাই কাবাকে কিবলা হিসাবে ঘোষণা আরবের সাধারণ মানুষদের সন্তুষ্টির কারণ হয়েছিল এবং তাদেরকে ইসলাম ও ইসলামের একত্ববাদী চিন্তাকে গ্রহণে উৎসাহিত করেছিল। সুতরাং সভ্যতাবিবর্জিত ও একগুঁয়ে মনোভাবের আরব মুশরিকদের ইসলামের প্রতি ঝোঁকানোর এ মহৎ লক্ষ্য কিবলা পরিবর্তনের মধ্যে নিহিত ছিল। এর ফলেই সারা বিশ্বে ইসলামের প্রসারের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত কাবাকে কিবলা হিসাবে গ্রহণের ফলে ইয়াহুদীদের হতে মুসলমানরা স্বতন্ত্র হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু মদীনার ইয়াহুদীদের ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল সেহেতু এর প্রয়োজন ছিল। তারা প্রতি মুহূর্তেই ষড়যন্ত্র করত এবং জটিল প্রশ্ন উত্থাপনের মাধ্যমে মহানবীর সময় ক্ষেপণ করত। তারা মনে করত এর মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তাই কিবলা পরিবর্তন ইয়াহুদীদের প্রত্যাখ্যান ও দূরত্ব সৃষ্টির কারণ হয়েছিল। 10 মুহররম (আশুরার দিন) রোযা রাখার বিধান রহিত হওয়ার লক্ষ্যও এটি ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখত। মহানবী (সা.) এবং মুসলমানগনও এ দিনটিকে স্মরণ করে রোযা রাখতেন। পরবর্তীতে আশুরার রোযা রহিত হওয়ার নির্দেশ আসে এবং রমযান মাসের রোযা ফরয করা হয়।

যেহেতু ইসলামের সকল ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তাই তার পূর্ণত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সকল দিকেই প্রকাশিত হওয়া আবশ্যক।

উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে ভাবতে লাগলেন তাঁদের পূর্ববর্তী নামাযসমূহ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই তখনই নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলো :

) و ما كان الله ليضيع إيمانكم إنّ الله بالنّاس لرءوف رحيم(

আল্লাহ্ তোমাদের কর্মকে নিষ্ফল করবেন না। নিশ্চয়ই তিনি মানুষের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও করুণাময়। 448

মহানবী (সা.) যোহরের নামাযের দু রাকাত পড়েছিলেন এমতাবস্থায় জিবরাইল অবতীর্ণ হলেন এবং মহানবীকে ওহীর দ্বারা নির্দেশ দেয়া হলো মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরানোর। কোন কোন হাদীসে এসেছে যে,জিবরাইল (আ.) রাসূলের হাত ধরে মসজিদুল হারামের দিকে ঘুরিয়ে দেন। যে সকল নর-নারী মসজিদে নামাযরত ছিলেন তাঁরাও তাঁর অনুকরণে সে দিকে ঘোরেন। সে দিন থেকেই কাবা মুসলমানদের স্বতন্ত্র কিবলা হিসাবে ঘোষিত হলো।

মহানবীর বৈজ্ঞানিক মুজেযা

পূর্ববর্তী ভূগোলবিদদের হিসাব অনুযায়ী মদীনার অবস্থান হলো 25 ডিগ্রী অক্ষাংশে এবং 75 ডিগ্রী 20 মিনিট দ্রাঘিমায়। এ হিসাব অনুযায়ী মদীনা থেকে কিবলার যে দিকনির্দেশনা রয়েছে মহানবীর মিহরাবের অবস্থান তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ কারণে মুসলিম মনীষিগণ এ বৈষম্য দূরীকরণে বিভিন্ন ব্যাখ্যার আশ্রয় নিতেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রসিদ্ধ মুসলিম বিশেষজ্ঞ সরদার কাবুলী প্রমাণ করেছেন যে,মদীনার অবস্থান হলো 24 ডিগ্রী 75 মিনিট অক্ষাংশে এবং 39 ডিগ্রী 59 মিনিট দ্রাঘিমায়। নতুন এ হিসাবে মদীনা থেকে কিবলার অবস্থান ঠিক দক্ষিণ হতে 45 মিনিট ব্যবধানে।449

মহানবীর মিহরাব ঠিক এরূপ অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়টি মহানবীর একটি বৈজ্ঞানিক মুজিযা। কারণ যে সময়ে দিক নির্ণয়ের কোন মাধ্যম ছিল না সে সময় তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে কিবলার সঠিক স্থান নির্ণয়ে সক্ষম হয়েছিলেন। পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে,হযরত জিবরাইল (আ.) নামাযরত অবস্থায় রাসূলকে কাবার দিকে ঘুরিয়ে দেন।450

 

উনত্রিশতম অধ্যায় : বদরের যুদ্ধ

ইসলামের প্রসিদ্ধ যুদ্ধসমূহের মধ্যে বদর অন্যতম। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা মুসলমানদের নিকট পরবর্তীতে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এ কারণেই যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় সাক্ষী উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পক্ষসমূহ তাদের দাবির যথার্থতা বুঝাতে কতজন বদরী সাহাবী তাদের সঙ্গে রয়েছেন তার উল্লেখ করত। রাসূল (সা.)-এর জীবনীতে বদরে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বদরী বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ বিষয়টি বদরের যুদ্ধের গুরুত্বকে আমাদের নিকট তুলে ধরে।

দু অধ্যায় পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি দ্বিতীয় হিজরীর জমাদিউল আউয়াল মাসের মাঝামাঝি মদীনায় খবর পৌঁছায় আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কা থেকে সিরিয়ায় বাণিজ্য কাফেলা যাত্রা করেছে। মহানবী (সা.) এ কাফেলাকে ধরার জন্য জাতুল উশাইরা পর্যন্ত গমন করেন ও পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করেন। কিন্তু ঐ কাফেলার সন্ধান পান নি। কাফেলাটি প্রত্যাবর্তনের সময় শরতের প্রথম দিক নির্দিষ্ট ছিল। কারণ সাধারণত এ সময়েই সিরিয়া থেকে মক্কায় কাফেলাসমূহ ফিরে আসে। যে কোন যুদ্ধে তথ্য হলো জয়ের প্রথম পদক্ষেপ। যদি যুদ্ধের সেনাপতি শত্রুর ক্ষমতা,অবস্থান ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানে তবে যুদ্ধের প্রথমেই পরাস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসলামের নবীর যুদ্ধকৌশলের প্রশংসিত ও লক্ষণীয় একটি দিক হলো- যার প্রমাণ প্রতিটি যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ থেকে আমরা পাই- শত্রুর অবস্থান ও প্রস্তুতি সম্পর্কে অগ্রিম তথ্য সংগ্রহ। তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি বৃহৎ ও ক্ষুদ্র সকল যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লামা মাজলিসীর451 বর্ণনা মতে রাসূল (সা.) আদী নামের এক সাহাবীকে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন। হায়াতে মুহাম্মদ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক গ্রন্থ অনুযায়ী মহানবী কুরাইশ কাফেলার যাত্রাপথ,প্রহরীর সংখ্যা ও আনীত পণ্যের ধরন সম্পর্কে জানার জন্য তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ ও সাঈদ ইবনে যাইদকে প্রেরণ করেছিলেন। তাঁদের আনীত তথ্য নিম্নরূপ ছিল :

1. কাফেলাটি বেশ বড় এবং মক্কার সকল গোত্রের লোকই তাতে রয়েছে।

2. কাফেলার নেতৃত্বে রয়েছে আবু সুফিয়ান এবং 40 জন প্রহরী ও রক্ষী তাদের সঙ্গে রয়েছে।

3. এক হাজার উষ্ট্র মাল বহন করে নিয়ে আসছে যার মূল্য পঞ্চাশ হাজার দিনারের সমপরিমাণ।

যেহেতু মদীনার মুহাজির মুসলমানদের সম্পদসমূহ মক্কার কুরাইশদের দ্বারা অবরুদ্ধ (ক্রোক) হয়েছিল সেহেতু মুসলমানদের জন্য কুরাইশদের বাণিজ্য পণ্য অবরোধের প্রয়োজন ছিল। যদি কুরাইশরা মুসলমানদের সম্পদ অবরোধ অব্যাহত রাখে তবে মুসলমানরাও স্বাভাবিকভাবে কুরাইশদের বাণিজ্য পণ্য অবরোধ করে গনীমত হিসাবে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেবে। এ লক্ষ্য নিয়েই রাসূল (সা.) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন,

هذا غير قريش فيها أموالهم فاخرجوا إليها لعل الله يغنمكموها

হে লোকসকল! কুরাইশ কাফেলা নিকটেই। তাদের সম্পদ হাতে পেতে মদীনা থেকে বেরিয়ে যাও। এতে তোমাদের অর্থনৈতিক অসুবিধা দূর হবে। 552

মহানবী (সা.) আবদুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মাকতুমকে মদীনার মসজিদে ইমামতির এবং আবু লাবাবাকে মদীনার সার্বিক দায়িত্ব দান করে দ্বিতীয় হিজরীর রমজান মাসের 8 তারিখে তিনশ তের জন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে কুরাইশদের সম্পদ আটক করার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হলেন।

যাফরান নামক স্থানের দিকে মহানবীর যাত্রা

সংবাদদাতাদের প্রেরিত বার্তা পেয়ে মহানবী (সা.) হিজরী বর্ষের দ্বিতীয় সালের রমজান মাসের আট তারিখ সোমবার কুরাইশ কাফেলার উদ্দেশ্যে যাফরানের553 দিকে যাত্রা করেন। তিনি আলী ইবনে আবি তালিব ও মুসআবের হাতে পৃথক দু টি পতাকা প্রদান করেন। প্রেরিত সেনাদলে বিরাশি জন মুহাজির,খাজরাজ গোত্রের একশ সতের জন এবং একষট্টি জন আওস গোত্রের লোক ছিলেন। সেনাদলে মাত্র তিনটি অশ্ব ও সত্তরটি উষ্ট্র ছিল।

ইসলামের সে যুগে মুসলিম সমাজে আত্মত্যাগ ও শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা এতটা তীব্র ছিল যে,অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকও সে যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল;কিন্তু রাসূল (সা.) তাদেরকে মদীনায় ফিরিয়ে দেন।

মহানবী (সা.)-এর কথা হতে পূর্বেই বোঝা গিয়েছিল,এ অভিযান মুসলমানদের জীবনে কিছুটা স্বস্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তির সুযোগ এনে দেবে। কুরাইশরা যে সম্পদসমূহ মক্কায় বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল তা-ই মুসলমানদের আশার উপকরণ ছিল। মুসলমানরা তা কব্জা করার উদ্দেশ্যেই মদীনা থেকে বের হয়েছিল। এ কাজের বৈধতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি,কুরাইশরা মক্কায় মুসলমানদের সমগ্র সম্পদ ক্রোক করেছিল এবং তাদের মক্কায় যাতায়াতের পথরোধ করেছিল। ফলে তারা তাদের জীবন নির্বাহের উপকরণ হতে বঞ্চিত ছিল। স্পষ্ট যে,যে কোন জ্ঞানসম্পন্ন মানুষই বলবেন শত্রুর সঙ্গে সেরূপ আচরণই করা উচিত যেরূপ আচরণ সে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে করেছে।

প্রকৃতপক্ষে কুরাইশদের কাফেলাসমূহের ওপর মুসলমানদের আক্রমণের কারণ মুসলমানদের প্রতি তাদের নির্যাতনমূলক আচরণ যা কোরআনও উল্লেখ করেছে এবং মুসলমানদের এ আক্রমণের অনুমতি দিয়ে বলেছে :

) أذن للّذين يُقاتلون بأنّهم ظُلموا و أنّ الله على نصرهم لقدير(

যাদের প্রতি আক্রমণ করা হয়েছে তাদের প্রতিরোধের অনুমতি দেয়া হলো। কারণ তারা নির্যাতিত হয়েছে এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করতে পূর্ণ ক্ষমতাবান। 554

আবু সুফিয়ান সিরিয়ার দিকে যাত্রার পূর্বেই জেনেছিল যে,মহানবী (সা.) তাদের কাফেলাকে পশ্চাদ্ধাবন করতে পারেন। এ কারণেই সে প্রত্যাবর্তনের পথে সতর্কতা অবলম্বনের লক্ষ্যে যে কাফেলারই মুখোমুখি হতো প্রশ্ন করত মুহাম্মদ (সা.) কাফেলার পথ রুদ্ধ করে রেখেছেন কি না? যখন তার নিকট বার্তা পৌঁছল মহানবী (সা.) সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে মদীনা হতে বেরিয়ে এসেছেন ও কুরাইশ কাফেলার পশ্চাদ্ধাবনের মনোবৃত্তিতে বদর প্রান্তরের নিকটবর্তী যাফরানে ছাউনী ফেলেছেন তখন সে কাফেলা নিয়ে অগ্রসর হতে নিবৃত্ত হয়ে কুরাইশদের এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করাকে অধিকতর যুক্তিযুক্ত মনে করল। সে দামদাম (জামজাম) ইবনে আমর গিফারী নামক এক দ্রুতগামী উষ্ট্রচালককে ভাড়া করে নির্দেশ দিল মক্কায় পৌঁছে মক্কার সাহসী কুরাইশ বীরদের ও কাফেলার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তাদের জানাও তারা যেন মুসলমানদের হাত থেকে কুরাইশ কাফেলাকে বাঁচাতে মক্কা থেকে এখানে এসে পৌঁছায়।

দামদাম দ্রুত মক্কায় পৌঁছে আবু সুফিয়ানের নির্দেশ অনুযায়ী নিজ উষ্ট্রের কান কেটে ও নাক ছিদ্র করে,তার পিঠে বসবার স্থানটি বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে অগ্র ও পশ্চাৎ ছিন্ন করে বলল, হে মক্কার অধিবাসিগণ! তোমাদের বাণিজ্য পণ্য বহনকারী উটগুলো আক্রান্ত হয়েছে। মুহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা তোমাদের পণ্য লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছে। তোমাদের পণ্য তোমাদের হাতে পৌঁছবে বলে মনে হয় না,দ্রুত কুরাইশ কাফেলার সাহায্যে এগিয়ে এস। 555

উষ্ট্রের কান ও নাক হতে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। উটের এ করুণ অবস্থাদৃষ্টে এবং দামদামের মর্মস্পর্শী বক্তব্য ও সাহায্যের আহ্বানে মক্কার অধিবাসীদের রক্ত উষ্ণ হয়ে উঠল। সকল যোদ্ধা ও সাহসী পুরুষ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে মক্কা থেকে বের হলো। মক্কার প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু আবু লাহাব এ দলটির সঙ্গে আসে নি,তবে সে আস ইবনে হিশাম নামে এক ব্যক্তিকে তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য চার হাজার দিরহাম দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য রাজী করায়।

কুরাইশ গোত্রপতিদের মধ্যে উমাইয়্যা ইবনে খালাফ বিশেষ কারণে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছিল না। কারণ সে শুনেছিল মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,সে মুসলমানদের হাতে নিহত হবে। কুরাইশ গোত্রপ্রধানরা দেখল এরূপ ব্যক্তিত্ব যদি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তবে নিশ্চিতভাবে তাতে কুরাইশদের ক্ষতি ও মর্যাদাহানি হবে। উমাইয়্যা ইবনে খালাফকে যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কুরাইশরা দু ব্যক্তিকে (যারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বের হচ্ছিল) উমাইয়্যার নিকট প্রেরণ করে। সে যখন কুরাইশদের নিকট বসেছিল তখন এ দু ব্যক্তি একটি ট্রেতে সুরমাদানি নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলে, হে উমাইয়্যা! যখন তুমি নিজ গোত্র ও ভূমির সম্ভ্রম রক্ষা ও বাণিজ্য পণ্য উদ্ধারের কাজ হতে বিরত থেকে নারীদের ন্যায় ঘরের কোণে বসে যুদ্ধ এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছ তখন নারীদের ন্যায় এ সুরমা চোখে দিয়ে তাদের সঙ্গেই বসে থাক,কুরাইশ বীর যোদ্ধাদের তালিকা হতে নিজের নাম উঠিয়ে নাও।

এরূপ আক্রমণাত্মক কথা উমাইয়্যাকে এতটা উত্তেজিত করল যে,সে অবচেতনভাবেই যুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে কুরাইশ কাফেলার সঙ্গে বাণিজ্য পণ্য উদ্ধারের লক্ষ্যে রওয়ানা হলো।556

কুরাইশ যে সমস্যার মুখোমুখি হলো

যাত্রার সময় নির্ধারিত হলো। কুরাইশ গোত্রপ্রধানরা বুঝতে পারল মুসলমানদের পূর্বেই বনি বকর গোত্রের মতো কঠিন শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পশ্চাৎ দিক থেকে তাদের আক্রমণের শিকার হতে পারে। কারণ বনি বকরের সঙ্গে কুরাইশদের রক্তের শত্রুতা ছিল। এ ঘটনাটি ইবনে হিশাম তাঁর সিরাত গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।557 বনি বকর গোত্রের প্রসিদ্ধ ব্যক্তি সুরাকা ইবনে মালিক এ সময় তাদের নিকট এসে নিশ্চয়তা দান করল যে,এমন কিছু ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই এবং কুরাইশরা নিশ্চিত মনে মক্কা হতে বেরিয়ে যেতে পারবে।

মহানবী (সা.) কুরাইশ বাণিজ্য কাফেলাকে অবরোধ করার লক্ষ্যে মদীনা থেকে বের হয়েছিলেন এবং যাফরান নামক স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বাণিজ্য কাফেলার আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে নতুন খবর এসে পৌঁছাল যা ইসলামের সৈনিকদের চিন্তা-চেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাল এবং তাদের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। মহানবীর নিকট সংবাদ পৌঁছেছিল যে,মক্কাবাসীরা তাদের বাণিজ্য কাফেলাকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে বের হয়েছে এবং আশেপাশেই অবস্থান গ্রহণ করেছে। মক্কার সকল গোত্রই এ সৈন্যদলে অংশগ্রহণ করেছে। মুসলমানদের মহান নেতা দু পথের মাঝে নিজেকে লক্ষ্য করলেন। একদিকে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা বাণিজ্যপণ্য অবরোধের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হয়েছিলেন এবং এ কারণে মক্কা থেকে আগত বড় একটি সেনাদলের মুখোমুখি হওয়ার উপযুক্ত প্রস্তুতি তাঁদের ছিল না;লোকবল এবং যুদ্ধাস্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই তাঁদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। অন্যদিকে যে পথে তাঁরা মদীনা থেকে বের হয়েছিলেন সে পথেই যদি পুনরায় মদীনায় ফিরে যেতেন তবে এতদিন পরিচালিত বিভিন্ন সামরিক মহড়াগুলোর ফলে অর্জিত মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হতো। হয়তো এর ফলে শত্রুরা দুঃসাহস দেখিয়ে আরো অগ্রসর হয়ে ইসলামের কেন্দ্র মদীনাতেও আক্রমণ করে বসত। তাই মহানবী (সা.) পশ্চাদপসরণকে উপযুক্ত মনে করলেন না,বরং যেটুকু শক্তি রয়েছে তা নিয়েই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিরোধ করাই সমীচীন মনে করলেন।

অন্য যে বিষয়টি এখানে লক্ষণীয় ছিল তা হলো মদীনা থেকে আগত সেনাদলের অধিকাংশই ছিলেন আনসার যুবক। তাঁদের মধ্যে শুধু 74 জন মুহাজির ছিলেন। তদুপরি মহানবী (সা.) আকাবায় আনসারদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন তা ছিল প্রতিরক্ষামূলক- আক্রমণাত্মক নয়। তাই তাঁরা মদীনার বাইরে তাঁর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন এমন কোন প্রতিশ্রুতি সেখানে ছিল না। এমন মুহূর্তে মুসলিম সেনাদলের সর্বাধিনায়ক কি করলেন? তিনি সামরিক পরামর্শ সভার আহবান ব্যতীত আর কোন পথ খুঁজে পেলেন না। এভাবে তিনি মতামত জানার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চিন্তা করলেন।

সামরিক পরামর্শ সভা

তিনি দাঁড়িয়ে সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, এ বিষয়ে তোমাদের মত কি? সর্বপ্রথম আবু বকর দাঁড়িয়ে বললেন, কুরাইশদের সম্ভ্রান্ত সাহসী ব্যক্তিরা মক্কা থেকে আগত সেনাদলে অংশগ্রহণ করছে। কুরাইশ কখনই অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করে নি এবং তাদের সম্মানিত স্থান থেকে নিচে নেমে অপমানকে গ্রহণ করে নি। অন্যদিকে আমরা মদীনা থেকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আসি নি। 558 (অর্থাৎ যুদ্ধ না করার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে এবং মদীনায় ফিরে যাওয়াই উত্তম।) রাসূল (সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, বসুন। অতঃপর হযরত উমর দাঁড়িয়ে হযরত আবু বকরের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। রাসূল তাঁকেও বসার নির্দেশ দিলেন। তখন হযরত মিকদাদ (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অন্তর আপনার সঙ্গে। আল্লাহ্ আপনাকে যা নির্দেশ দিয়েছেন আপনি তারই অনুসরণ করুন। মহান আল্লাহর শপথ,কখনই আমরা আপনাকে সেরূপ কথা বলব না যেরূপ কথা বনি ইসরাইল হযরত মূসাকে বলেছিলেন। যখন হযরত মূসা (আ.) বনি ইসরাইলকে জিহাদের আহবান জানিয়েছিলেন তখন তারা হযরত মূসাকে বলেছিল : হে মূসা! তুমি ও তোমার প্রভু তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর এবং আমরা এখানেই বসে থাকব।559 কিন্তু আমরা এর বিপরীতে আপনাকে বলব : আপনি আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহের ছায়ায় জিহাদ করুন এবং আমরাও আপনার অনুগত হয়ে আপনার অধীনে যুদ্ধ করব। 560 মহানবী (সা.) মিকদাদের এ কথায় অত্যন্ত খুশী হলেন এবং তাঁর জন্য মহান আল্লাহর নিকট বিশেষভাবে দোয়া করলেন।

মিথ্যার প্রতি গোঁড়ামি ও সত্যকে গোপনের প্রয়াস সকল লেখকের ক্ষেত্রেই অন্যায় বলে বিবেচিত হলেও ঐতিহাসিকদের ক্ষেত্রে এটি আরো বড় অন্যায়। কারণ ইতিহাস হলো দর্পণের ন্যায় যা সমাজের মানুষগুলোর প্রকৃত চেহারাকে প্রতিফলিত করে। ইতিহাসের মধ্যেই মানুষ তাদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। তাই ঐতিহাসিকদের উচিত ইতিহাসের পাতাগুলোকে ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য সকল ধরনের গোঁড়ামি ও মিথ্যার মরিচা হতে মুক্ত রাখা।

ইবনে হিশাম,মাকরিযী561 এবং তাবারী562 তাঁদের ইতিহাস গ্রন্থসমূহে মহানবীর সামরিক পরামর্শ সভার ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন এবং হযরত মিকদাদ এবং সা দ ইবনে মায়ায-এর বক্তব্য এনেছেন,কিন্তু হযরত আবু বকর ও হযরত উমরের বক্তব্যকে পূর্ণরূপে বর্ণনা না করে শুধু বলেছেন যে,তাঁরাও দাঁড়ালেন এবং উত্তম কথা বললেন। এ প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিকদের প্রতি আমার প্রশ্ন : যদি তাঁরা উত্তম কথাই বলে থাকেন,তবে কেন আপনারা তা বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকলেন?

সেদিন তাঁরা যা বলেছিলেন আমরা তা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। যদিও এ ঐতিহাসিকগণ এ সত্যের ওপর পর্দার আবরণ টেনে দেয়ার চেষ্টা করেছেন,কিন্তু অন্য ঐতিহাসিকগণ তা বর্ণনা করেছেন।563 এ সব বর্ণনা থেকে বোঝা যায় তাঁরা উত্তম কোন কথা বলেন নি,বরং তাঁরা এমন কথা বলেছিলেন যা থেকে বক্তার আতঙ্কিত ও ভীত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কারণ তাঁরা কুরাইশদের এতটা শক্তিশালী ভেবেছিলেন যেন তাদের কখনই পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাঁদের কথার নেতিবাচক ভঙ্গিটি যে নবীকে অসন্তুষ্ট করেছিল তা তাবারীর বর্ণনার অংশ থেকে কিছুটা আঁচ করা যায়। কারণ তাবারীর বর্ণনা থেকে শায়খাইন (আবু বকর ও উমর) সর্বপ্রথম কথা বলেছিলেন তা বোঝা যায় এবং তাঁদের কথার জবাবেই হযরত মিকদাদ ও সা দ ইবনে মায়ায কথা বলেছিলেন।

তাবারী হযরত আবদুল্লহ্ ইবনে মাসউদের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন, বদরের দিন আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল মিকদাদের অবস্থানে যদি আমি অবস্থান নিতে পারতাম। কারণ তিনি বিরূপ এক পরিবেশে বলেছিলেন : আমরা কখনই বনি ইসরাইল জাতির মতো আপনাকে (মহানবীকে) বলব না যে,আপনি ও আপনার প্রভু গিয়ে যুদ্ধ করুন এবং আমরা এখানে বসে রইলাম। যখন মহানবীর চেহারা ক্রোধে রক্তিম হয়ে গিয়েছিল তখন হযরত মিকদাদ এমন কথা বলেছিলেন যাতে মহানবীর চেহারা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়েছিল। তাই আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল ঐ ইপ্সিত অবস্থানটি যদি আমি অর্জন করতে পারতাম! 664 তাই বোঝা যায়,মিকদাদের পূর্বে শায়খাইন আতঙ্ক ও হতাশার বাণী শুনিয়েছিলেন ও মদীনায় ফিরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছিলেন।

এটি ছিল একটি পরামর্শ সভা। তাই সভায় উপস্থিত প্রত্যেকেরই নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার ছিল। কিন্তু ইতিহাসের পরিক্রমা প্রমাণ করেছে হযরত মিকদাদ (রা.) উপরিউক্ত দু ব্যক্তি হতে সত্যের অধিকতর নিকটবর্তী ছিলেন।