চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড3%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 108647 / ডাউনলোড: 10080
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

যে ঘটনা যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলল

আসওয়াদ মাখযুমী একজন রুক্ষ্ম মেজাজের লোক ছিল। তার দৃষ্টি যখন মুসলমানদের নির্মিত হাউজের (চৌবাচ্চা) ওপর পড়ল সে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিল এ হাউজ থেকে পানি পান করার অথবা সেটি নষ্ট করার। এজন্য সে প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত ছিল না। তাই মুশরিকদের ছাউনি থেকে বেরিয়ে সে হাউজের নিকটে এল। সে সময় ইসলামের মহান সৈনিক হযরত হামযাহ্ (রা.) সেখানে প্রহরারত ছিলেন। সে পানির নিকট পৌঁছে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে রত হলে তিনি তরবারির এক আঘাতে তার এক পা বিচ্ছিন্ন করলেন। এ অবস্থায়ই সে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পানির দিকে অগ্রসর হলে হযরত হামযাহ্ সেখানে তাকে হত্যা করলেন।

এ ঘটনাটি যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলল। কারণ কোন দলকে যুদ্ধে উদ্দীপিত করার জন্য হত্যা অপেক্ষা উত্তম কোন ইস্যু থাকতে পারে না। কুরাইশদের যে দলটির অন্তরে বিদ্বেষের আগুন জ্বলছিল ও যুদ্ধের জন্য বাহানা খুঁজছিল এজন্য উত্তম বাহানা হাতে পেল। এরূপ অস্ত্র হাতে পেয়ে তারা যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলল।৫৭৫

মল্লযুদ্ধের শুরু

আরবের প্রাচীন যুদ্ধরীতি ছিল মল্লযুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হওয়া। অতঃপর সম্মিলিত যুদ্ধ শুরু হতো।

আসওয়াদ মাখযুমী নিহত হওয়ার পর কুরাইশের তিন প্রসিদ্ধ বীর সামনে এগিয়ে এসে মুসলমানদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। এরা তিনজন হলো রাবীয়ার পুত্র উতবা ও শাইবা এবং উতবার পুত্র ওয়ালিদ। সুসজ্জিত এ তিন বীর। এরা যুদ্ধের ময়দানের মাঝে অশ্বের পদশব্দ তুলে প্রতিদ্বন্দ্বী আহবান করল। আনসারদের মধ্য হতে তিন সাহসী যুবক আওফ,সাউয ও আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা মুসলমানদের সৈন্যছত্র হতে বেরিয়ে এসে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। কিন্তু উতবা যেহেতু জানত এরা মদীনার আনসার সেহেতু তাদের উদ্দেশে বলল, তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোন কাজ নেই।

অতঃপর এক ব্যক্তি চিৎকার করে বলল, হে মুহাম্মদ! আমাদের সমমর্যাদার ও সমগোত্রীয় কোন ব্যক্তিকে প্রেরণ কর। রাসূল (সা.) উবাইদাহ্ ইবনে হারেস ইবনে আবদুল মুত্তালিব,হামযাহ্ এবং আলীকে সামনে এগিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। এ তিন সাহসী বীর নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করে সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং নিজ নিজ পরিচয় দান করলেন। উতবা এ তিন ব্যক্তিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে গ্রহণ করে বলল, তোমরা আমাদের সমকক্ষ।

কেউ কেউ বলেছেন,এ মল্লযুদ্ধে প্রত্যেকে তাঁর সমবয়সীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। সবচেয়ে তরুণ আলী (আ.) মুয়াবিয়ার মামা ওয়ালিদের সঙ্গে,মধ্যবয়সী হামযাহ্ মুয়াবিয়ার নানা উতবার সঙ্গে এবং প্রৌঢ় উবাইদাহ্ শাইবার সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অবশ্য ইবনে হিশাম শাইবাকে হযরত হামযার এবং উতবাকে হযরত উবাইদার প্রতিদ্বন্দ্বী বলেছেন। এখন আমরা দেখব কোন্ মতটি সঠিক। দু টি বিষয়কে বিশ্লেষণ করলে সত্য আমাদের নিকট স্পষ্ট হবে।

প্রথমত ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন,আলী ও হামযাহ্ তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রথম আক্রমণেই পরাস্ত করতে সক্ষম হন। তাঁরা তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার পরই উবাইদার সাহায্যে এগিয়ে যান ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করেন।৫৭৬

দ্বিতীয়ত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মুয়াবিয়ার প্রতি প্রেরিত তাঁর পত্রে বলেছেন,

و عندي السّيف الّذي اعضضته بجدّك و خالك و أخيك في مقام واحد

আমার নিকট সেই তরবারি রয়েছে যার দ্বারা তোমার নানা (হিন্দার পিতা উতবা),মামা (ওয়ালিদ ইবনে উতবা) এবং ভ্রাতাকে (হানযালা ইবনে আবি সুফিয়ান)-কে হত্যা করেছি। আমি এখনও সেই রূপ শক্তির অধিকারী। ৫৭৭

এ পত্র হতে স্পষ্ট যে,হযরত আলী (আ.) মুয়াবিয়ার নানা উতবার হত্যায় অংশগ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে আমরা জানি হযরত আলী ও হামযাহ্ তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে কোন প্রতি-আক্রমণের সুযোগ না দিয়েই হত্যা করেছিলেন।

যদি উতবা হযরত হামযার প্রতিদ্বন্দ্বী হতো তবে হযরত আলী বলতেন না, আমি তরবারির আঘাতে তোমার নানাকে হত্যা করেছি । সুতরাং স্পষ্ট যে,হযরত হামযার প্রতিদ্বন্দ্বী শাইবা ছিল এবং হযরত উবাইদার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল উতবা। তাই হযরত আলী ও হামযাহ্ স্বীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার পর উতবাকে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন।

সম্মিলিত আক্রমণ শুরু হলো

কুরাইশদের প্রসিদ্ধ যোদ্ধারা পরাস্ত হলে সম্মিলিত যুদ্ধ শুরু হলো। মহানবী (সা.) তাঁর নেতৃত্বের স্থান হতে নির্দেশ দিলেন মুসলিম যোদ্ধারা যেন সম্মিলিত যুদ্ধ শুরুর পূর্বে মুশরিকদের অগ্রাভিযান প্রতিরোধ করতে শত্রুদের উদ্দেশে তীর নিক্ষেপ করে।

অতঃপর নেতৃত্ব মঞ্চ হতে নিচে নেমে এসে সৈন্যদলকে বিন্যস্ত করলেন। এ সময় সাওয়াদ ইবনে আজিয়া সেনাসারি হতে এগিয়ে এলে মহানবী (সা.) তাঁর ছড়ি দিয়ে তাঁর পেটে মৃদু আঘাত করলেন ও তাঁকে পিছিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন।৫৭৮ সাওয়াদ রাসূলের উদ্দেশে বললেন, আপনি অন্যায়ভাবে আমাকে আঘাত করেছেন,আমি এর কিসাস চাই। মহানবী (সা.) মুহূর্ত বিলম্ব না করে স্বীয় জামা উঠিয়ে প্রতিশোধ নিতে বললেন। সৈন্যদল আশ্চর্য হয়ে মহানবীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। সাওয়াদ তাঁর পবিত্র বুকে চুম্বন করলেন এবং ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, আমার শেষ জীবন পর্যন্ত আপনার বুকে চুম্বন করতে চাই।

অতঃপর মহানবী (সা.) তাঁর নেতৃত্ব মঞ্চের স্থানে ফিরে এসে পূর্ণ ঈমানসহ মহান আল্লাহর উদ্দেশে বললেন, হে প্রভু! যদি এ দলটি আজকে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তবে পৃথিবীর বুকে আপনার ইবাদাত করার মতো কেউ থাকবে না। ৫৭৯

সম্মিলিত আক্রমণের ঘটনাটি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসহকারে ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। তাতে এ বিষয়টি নিশ্চিত যে,মহানবী (সা.) নেতৃত্ব মঞ্চ হতে অনেক বারই নিচে নেমে এসেছেন এবং মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। একবার তিনি মুসলমানদের উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলেছেন,

و الذي نفس محمّد بيده لا يقاتلهم اليوم رجل فيقتل صابرا محتسبا مقبلا غير مدبر إلّا ادخله الله الجنة

সেই আল্লাহর শপথ,যার হাতে আমার (মুহাম্মদের) প্রাণ নিবদ্ধ,আজকের দিনে যে ব্যক্তি ধৈর্যের সাথে আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে নিহত হবে,আল্লাহ্ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।

সমর নায়কের এরূপ বক্তব্যে সৈন্যরা কেউ কেউ এতটা অনুপ্রাণিত হলেন যে,দ্রুত শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় স্বীয় বর্ম খুলে রেখে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। উমাইর ইবনে হিমাম রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার নিকট থেকে বেহেশতের দূরত্ব কতটুকু? রাসূল বললেন, কাফিরদের নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পরিমাণ। তাঁর হাতে কয়েক টুকরা খেজুর ছিল যা তিনি দূরে নিক্ষেপ করলেন এবং যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। অতঃপর মহানবী (সা.) এক মুঠো মাটি নিয়ে কাফিরদের উদ্দেশে নিক্ষেপ করে বললেন, তোমাদের মুখমণ্ডলসমূহ বিকৃত হোক! ৫৮০ অতঃপর সম্মিলিত আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মুসলমানদের শিবিরে জয়ের আভাস লক্ষ্য করা গেল। শত্রুরা সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হয়ে পালাতে শুরু করল। যেহেতু মুসলিম সেনারা ঈমানের বলে বলীয়ান ছিলেন এবং তাঁরা জানতেন হত্যা করা এবং নিহত হওয়া উভয়ই তাঁদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে তাই কোন কিছুতেই তাঁরা ভীত ছিলেন না এবং কোন কিছুই তাঁদের অগ্রযাত্রাকে রহিত করতে পারছিল না।

অধিকারসমূহ রক্ষা

দু ধরনের ব্যক্তির অধিকার রক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন ছিল;তাদের একদল হলো সেই সমস্ত ব্যক্তি যারা মক্কায় অবস্থানকালীন সময় মুসলমানদের প্রতি সদাচরণ করেছিল ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছিল,যেমন আবুল বাখতারী- যে মুসলমানদের ওপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। অপর দল হলো সেই সকল ব্যক্তি যারা ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি অন্তর হতে ভালোবাসা প্রদর্শন করত এবং তাঁদের কল্যাণাকাক্সক্ষী ছিল,কিন্তু কুরাইশদের সাথে রণাঙ্গনে আসতে বাধ্য হয়েছিল। যেমন রাসূলের চাচা আব্বাসের মতো বনি হাশিমের কিছু সংখ্যক ব্যক্তি।

যেহেতু ইসলামের নবী রহমত ও অনুগ্রহের আধার ছিলেন সেহেতু এ দু ধরনের ব্যক্তির রক্ত ঝরানো হতে নিবৃত থাকতে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

উমাইয়্যা ইবনে খালাফকে হত্যা

আবদুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক উমাইয়্যা ইবনে খালাফ এবং তার পুত্র বন্দী হয়েছিল। আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও তার মধ্যে পূর্ব হতেই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাই তিনি চেয়েছিলেন উমাইয়্যাকে জীবিত অবস্থায় যুদ্ধবন্দী হিসাবে বাঁচিয়ে পরবর্তীতে তাকে মুক্তি দিয়ে সওয়াব অর্জনের।

মক্কায় থাকাকালীন আবিসিনিয়ার হযরত বেলাল উমাইয়্যার ক্রীতদাস ছিলেন। সে সময়ই তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। এ কারণে সে হযরত বেলালকে চরম নিপীড়ন করত। সে প্রায়শই তাঁকে উত্তপ্ত পাথরের ওপর শুইয়ে বুকে ভারী পাথর চাপা দিত। এভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে সে চাইত তাঁকে ইসলাম হতে পূর্বের ধর্মে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু এত নির্যাতন সত্ত্বেও হযরত বেলাল বলতেন, আহাদ,আহাদ। অর্থাৎ আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়। এ সময় একজন মুসলমান তাঁকে ক্রয় করে মুক্ত করে দেন।

বদর যুদ্ধের সময় হযরত বেলাল লক্ষ্য করলেন আবদুর রহমান ইবনে আওফ তার পক্ষ নিয়ে তাকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা নিয়েছে। তাই তিনি চিৎকার করে মুসলমানদের উদ্দেশে বললেন, হে আল্লাহর সাহায্যকারী! উমাইয়্যা ইবনে খালাফ কাফিরদের নেতা। তাকে জীবিত ছেড়ে দিও না। ৫৮১ মুসলমানরা চারিদিক থেকে উমাইয়্যা ইবনে খালাফ এবং তার পুত্রকে ঘিরে ফেলল এবং তাদের উভয়কে হত্যা করল।

যদিও মহানবী (সা.) অর্থনৈতিক বয়কটের সময়ে সাহায্য করার কারণে নির্দেশ দিয়েছিলেন আবুল বাখতারিকে যেন হত্যা না করা হয়,৫৮২ কিন্তু মাযযার নামক এক ব্যক্তি তাকে বন্দি করে রাসূলের নিকট নিয়ে আসার সময় সে দুর্ভাগ্যক্রমে নিহত হয়।

জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ

এ যুদ্ধে ১৪ জন মুসলমান ও ৭০ জন কাফির নিহত হয় এবং ৭০ জন মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়। বন্দীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নাদার (নাজার) ইবনে হারেস,উকবা ইবনে আবি মুয়ীত,আবু গাররাহ্,সুহাইল ইবনে আমর,আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব এবং আবুল আস।৫৮৩

বদর যুদ্ধের শহীদদেরকে রণক্ষেত্রের এক প্রান্তে সমাধিস্থ করা হয়েছিল যা এখনও বিদ্যমান। রাসূল (সা.) কুরাইশদের মৃতদেহগুলোকে একস্থানে জমায়েত করে একটি কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন। যখন ওকবার মৃতদেহ টেনে-হিঁচড়ে কূপের দিকের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার পুত্র আবু হুযাইফা তা লক্ষ্য করে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। মহানবী (সা.) তা বুঝতে পেরে বললেন, তোমার মনে কোন প্রকার সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে কি? তিনি বললেন, না,তবে আমি আমার পিতাকে জ্ঞানী,ধৈর্যশীল ও সম্মানার্হ ব্যক্তি হিসাবে জানতাম এবং সব সময় ভাবতাম এ বিষয়গুলো তাকে ইসলামের দিকে পরিচালিত করবে। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি আমার ধারণা ভুল ছিল।

তোমরা তাদের থেকে অধিকতর শ্রবণকারী নও

বদরের যুদ্ধের অবসান ঘটল এবং কুরাইশরা চরমভাবে পরাস্ত হলো। তাদের মধ্যে ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়েছিল,বাকীরা রণক্ষেত্র হতে পালিয়ে গিয়েছিল। তাদের মৃতদেহগুলোকে রাসূলের নির্দেশে একটি বড় কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। যখন তাদের মৃতদেহগুলোকে কূপে নিক্ষেপ করা হলো মহানবী (সা.) একে একে তাদের নাম ধরে ডেকে বললেন, হে উতবা,শাইবা,উমাইর,আবু জাহল... তোমরা কি তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাকে সত্য হিসাবে পেয়েছ? (জেনে রাখ) আমি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত প্রতিশ্রুতি সত্য হিসাবে পেয়েছি। এ সময় মুসলমানদের মধ্য থেকে কেউ কেউ রাসূলকে প্রশ্ন করলেন, যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে লক্ষ্য করে কি আপনি কথা বলছেন? রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা তাদের থেকে অধিকতর শ্রবণকারী নও,কিন্তু তাদের উত্তর দানের ক্ষমতা নেই।

ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন,এ সময় রাসূল (সা.) তাদের (মৃতদের) উদ্দেশে আরো বলেন, কত নিকৃষ্ট আত্মীয় (ও প্রতিবেশী) ছিলে তোমরা! তোমরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ,কিন্তু অন্যরা আমাকে সত্য প্রতিপন্ন করেছে। তোমরা আমাকে আমার জন্মভূমি হতে বিতাড়িত করেছ,অন্যরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। তোমরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ,অন্যরা আমাকে সাহায্য করেছে। তোমরা কি প্রতিপালকের পক্ষ হতে আগত প্রতিশ্রুতিকে সত্য হিসাবে পেয়েছ?

যে কবিতাটিতে স্থায়িত্বের রং লেগেছে

উপরিউক্ত ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক সত্য। শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সকল ঐতিহাসিক এটি বর্ণনা করেছেন। আমরা নিচে এরূপ কিছু ঐতিহাসিক সূত্রের প্রতি ইঙ্গিত করব।

রাসূল (সা.)-এর সাহাবী সমকালীন প্রসিদ্ধ কবি হাস্সান ইবনে সাবিত ইসলামের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন। তিনি কবিতা রচনার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের সাহায্য করতেন (তাঁর কবিতা তাদের উজ্জীবিত করত)। আনন্দের বিষয় হলো তাঁর কবিতার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বদরের যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর কবিতা রয়েছে যার কয়েকটি ছত্রে এ সত্য ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন,

يناديهم رسول الله لما

قذفناهم كباب في القليب

أ لم تجدوا كلامي كان حقا

وامر الله يأخذ بالقلوب

فما نطقوا و لو نطقوا لقالوا

صدقت و كنت ذا رأى مُصيب

যখন তাদের কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করলাম,

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন : আমার কথাকে কি তোমরা সত্য পাও নি?

আল্লাহর বাণী অন্তঃকরণসমূহকে আবিষ্ট করে,

কিন্তু তারা কথা বলে নি।

যদি তারা কথা বলতে পারত অবশ্যই বলত :

তুমি সত্য বলেছ,তোমার মত দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত।

মহানবী (সা.)-এর কথিত এ বাক্যটি ما أنتم بأسمع منهم   তোমরা তাদের থেকে অধিকতর শ্রবণকারী নও থেকে স্পষ্ট অন্য কোন বাক্য হতে পারে কি? এ বাক্যটি থেকে বোঝা যায় মহানবী (সা.) তাদের প্রত্যেককে একে একে নাম ধরে ডেকে তাদের অন্তঃসত্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

এ ঐতিহাসিক সত্যকে কোন ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিত্তিতে অস্বীকার করার অধিকার কোন মুসলমানের নেই। কোন কোন ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী ব্যক্তিরা বলে থাকে যেহেতু এ ঘটনাটি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির ও বস্তুগত জ্ঞানের সঙ্গে সংগতিশীল নয় সেহেতু এটি সঠিক নয়। আমরা এখানে এ সম্পর্কে বেশ কিছু বর্ণনার উৎসকে নিম্নে উল্লেখ করছি। আরবী ভাষার সাথে সুপরিচিত পাঠকবর্গ মহানবীর বক্তব্য থেকে সুস্পষ্টরূপে বিষয়টির সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবেন।৫৮৪

বদর যুদ্ধের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ

মুসলিম ঐতিহাসিকদের অধিকাংশের বর্ণনা মতে বদরের দিন মল্ল ও সম্মিলিত যুদ্ধ যোহর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কুরাইশদের পলায়ন ও কিছু সংখ্যকের বন্দী হওয়ার মাধ্যমে দুপুরের মধ্যেই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। মহানবী বদরের শহীদদের দাফন সম্পন্ন করার পর সেখানে আসরের নামায পড়েন এবং সন্ধ্যার পূর্বেই বদর প্রান্তর ত্যাগ করেন। এ সময় প্রথমবারের মতো তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে গনীমতের সম্পদ বণ্টনের মতপার্থক্য লক্ষ্য করলেন। তাঁদের প্রত্যেক দল নিজেদেরকে গনীমত লাভের বিষয়ে অন্যদের হতে অধিক হকদার মনে করতে লাগলেন। মহানবীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সৈন্যরা যুক্তি প্রদর্শন করলেন,যেহেতু আমরা মহানবীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলাম তাই গনীমত লাভের অধিকার অন্যদের চেয়ে আমাদের অধিক। যাঁরা গনীমত সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাঁরাও নিজ যুক্তিতে অধিক দাবি করলেন। যাঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুকে ধাওয়া করেছিলেন এবং অন্যদের গনীমত সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন তাঁরাও এ যুক্তিতে অধিক পাওয়ার দাবি জানালেন।

কোন একটি সেনাদলের জন্য অনৈক্য ও বিভেদ অপেক্ষা ক্ষতিকর কোন বিষয় নেই। মহানবী (সা.) সৈন্যদের বস্তুগত আকাঙ্ক্ষাকে স্তিমিত করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে গনীমত বণ্টন করা থেকে বিরত থেকে সমগ্র গনীমত আবদুল্লাহ্ ইবনে কা ব নামক এক সাহবীর হাতে সমর্পণ করে কয়েক ব্যক্তিকে তা বহন ও সংরক্ষণে তাঁকে সাহায্য করার নির্দেশ দিলেন। তিনি এ সম্পদ বণ্টনের সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বনের জন্য সময় নিলেন। ইনসাফ ও ন্যায়ের দাবি অনুযায়ী এ গনীমতে সকল সৈন্যের অধিকার ছিল। কারণ সকল সৈনিক এ যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং সৈন্যদলের এক অংশের সহযোগিতা ছাড়া অন্য অংশ সফলতা লাভ করতে পারে না। তাই রাসূল (সা.) মদীনায় ফেরার পথে গনীমতকে সকলের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করলেন।

রাসূল (সা.) কর্তৃক সমভাবে গনীমত বণ্টনের বিষয়টিতে সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস অসন্তুষ্ট হলে তিনি রাসূলকে বললেন, সম্মানিত বনি যোহরা গোত্রের আমাকে আপনি ইয়াসরিবের কৃষক,ফল বাগানের দেখাশোনাকারী ও পানি সেচনকারীদের সমকক্ষ হিসাবে দেখছেন? তাঁর এ কথায় রাসূল (সা.) খুবই অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, আমার এ যুদ্ধের লক্ষ্য অসহায় ও নিরাশ্রয়দের সাহায্য করা এবং অত্যাচারীদের নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষা। আমি এজন্য প্রেরিত হয়েছি যে,সকল বৈষম্য ও অযাচিত শ্রেষ্ঠত্বের অবসান ঘটাব এবং মানুষের মাঝে সাম্য ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করব।

গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ (কোরআনের নির্দেশমতে৫৮৫ ) আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং তাঁর বংশের ইয়াতিম,নিরাশ্রয়,মুসাফির ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু মহানবী (সা.) এ যুদ্ধলব্ধ গনীমতের এ অংশটুকুও সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। এমনও হতে পারে যে,কোরআনের এ আয়াতটি তখনও অবতীর্ণ হয় নি অথবা অবতীর্ণ হয়েছিল,কিন্তু রাসূল তাঁর নিজ অধিকার বলে সৈন্যদের সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে এ অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন।

পথে দু বন্দীর নিহত হওয়া

মদীনায় ফেরার পথে দু টি স্থানে রাসূলের নির্দেশে দু বন্দীকে হত্যা করা হয়। সাফরা নামক উপত্যকায় নাদর ইবনে হারেস যে ইসলামের কঠিন শত্রু ছিল তার প্রাণদণ্ড দেয়া হয় এবং ইরকুস্ যারিয়া নামক স্থানে উকবা ইবনে আবি মুয়ীতের প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে,বন্দীদের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশ হলো তাদেরকে দাস হিসাবে রাখা হবে অথবা দাস হিসাবে বিক্রি করা হবে। কিন্তু কেন এ দু জনের ব্যাপারে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো? যে নবী বদরের অন্যান্য বন্দীর বিষয়ে মুসলমানদের বিশেষভাবে সদাচরণের নির্দেশ দিলেন কেন এ দু জনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত দিলেন?

বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের পতাকাধারী আবু আযিয তার বন্দী অবস্থার কথা এভাবে বর্ণনা করেছে। তার ভাষায়, যে দিন থেকে রাসূল বন্দীদের প্রতি বিশেষভাবে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সে দিন থেকে মুসলমানদের নিকট আমরা খুবই সম্মানিত ছিলাম। তারা আমাদের পরিতৃপ্ত না করা পর্যন্ত নিজেরা খাদ্য গ্রহণ করত না।

তাই বলা যায় এ দু ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে ইসলামের সার্বিক কল্যাণ নিহিত ছিল- প্রতিশোধের কোন স্পৃহা ছিল না। কারণ তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের হোতা ছিল। তারাই বিভিন্ন গোত্রকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করেছিল। রাসূল (সা.) নিশ্চিত ছিলেন যদি এদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করবে।

মদীনায় মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ প্রেরণ

রাসূল (সা.) আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা ও যায়েদ ইবনে হারেসাকে দূত হিসাবে মদীনায় মুসলমানদের বিজয়ের বার্তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সে সাথে কাফিরদের পরাজয় এবং উতবা,শাইবা,আবু জাহল,যামআ,উমাইয়্যা,নাবিয়াহ্,মানবা ও আবুল বাখতারীসহ বড় বড় কাফির নেতার নিহত হওয়ার বার্তাও তাঁরা পৌঁছালেন। রাসূলের প্রেরিত দূতরা যখন মদীনায় পৌঁছেন তখন মুসলমানরা রাসূলের কন্যা৫৮৬ ও হযরত উসমানের স্ত্রীর দাফনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ফলে যুদ্ধের বিজয়ের সঙ্গে রাসূলের কন্যাবিয়োগের ঘটনা মিশ্রিত হয়ে গেল।

যা হোক,বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের ঘটনাটি মক্কার মুশরিক এবং মদীনার ইয়াহুদী ও মুনাফিকদের মনে আতংক ও ভীতির সঞ্চার করল। কারণ তারা কখনই বিশ্বাস করতে পারে নি এরূপ বিজয় মুসলমানদের ভাগ্যে ঘটবে। তাই প্রচার করতে চাইল এ খবর মিথ্যা। কিন্তু মুসলমানদের বিজয়ী দল যখন বন্দীদের সঙ্গে নিয়ে মদীনায় প্রবেশ করল তখন সকল সংশয় ও মিথ্যার অপনোদন ঘটল।৫৮৭

মক্কাবাসীদের নিকট তাদের নেতাদের নিহত হওয়ার সংবাদ

হাইসামানে খাজায়ী প্রথম ব্যক্তি হিসাবে মক্কায় প্রবেশ করে বদরের রক্তক্ষয়ী ঘটনা সম্পর্কে (যাতে তাদের গোত্রপ্রধানরা নিহত হয়েছিল) মক্কাবাসীদের অবহিত করল। আবু রাফে যিনি হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের দাস ছিলেন ও পরবর্তীতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও হযরত আলী (আ.)-এর প্রিয়ভাজন হিসাবে পরিণত হয়েছিলেন তিনি বর্ণনা করেছেন, সে সময় ইসলামের আলোয় হযরত আব্বাসের গৃহ আলোকিত হয়েছিল। হযরত আব্বাস,তাঁর স্ত্রী উম্মুল ফযল ও আমি ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু ভয়ে আমাদের ঈমানকে গোপন রেখেছিলাম। যখন ইসলামের শত্রুদের মৃত্যুর খবর মক্কায় পৌঁছল আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু কুরাইশ ও তাদের সমর্থকরা খুবই ব্যথিত হয়েছিল। আবু লাহাব নিজে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও অন্য এক ব্যক্তিকে তার স্থলে যুদ্ধ করার জন্য ভাড়া করেছিল। ঐ মুহূর্তে সে কাবার নিকটবর্তী জমজম কূপের নিকটে বসেছিল। এ সময় খবর পৌঁছল আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস (হারব) মক্কায় পৌঁছেছে। সে আবু সুফিয়ানকে খবর পাঠাল যত দ্রুত সম্ভব যেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সে এসে আবু লাহাবের পাশে বসল এবং বদরের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিল। ঘটনার বিবরণ তার ওপর বজ্রপাতের মতো আপতিত হলো এবং সে ভয়ে শিহরিত হলো। সে দিনই সে জ্বরে আক্রান্ত হলো এবং বিশেষ কষ্টকর রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ পর মৃত্যুবরণ করল।

রাসূল (সা.)-এর চাচা আব্বাসের বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি ইতিহাসের একটি জটিল প্রশ্ন। তিনি এ যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন। তিনি এ যুদ্ধে মুশরিকদের সঙ্গে বদরে এসেছিলেন,অন্যদিকে তিনিই সে ব্যক্তি যিনি আকাবার শপথ গ্রহণের দিন মদীনার আনসারদের আহবান জানিয়েছিলেন রাসূলকে সাহায্য করার জন্য। এ প্রশ্নের সমাধান দিয়েছে তাঁর দাস আবু রাফের বক্তব্য। আবু রাফে বলেছেন, তিনিও তাঁর ভ্রাতা আবু তালিবের ন্যায় একত্ববাদী ধর্ম ইসলাম ও তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছিলেন,কিন্তু সে সময়ের দাবি অনুযায়ী তিনি তাঁর ঈমানকে গোপন রেখেছিলেন এবং এভাবে মহানবীকে সাহায্য করতে প্রয়াস পেয়েছিলেন। তিনি কুরাইশদের গোপন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে রাসূলকে অবহিত করতেন। যেমন উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি পূর্বেই রাসূলকে অবহিত করেছিলেন।

যা হোক কুরাইশদের সত্তর ব্যক্তির মৃত্যুর খবরটি সমগ্র মক্কাবাসীকে শোকাভিভূত করল এবং তাদের সকল সুখ ও আনন্দকে কেড়ে নিল।৫৮৮

ফিজারের যুদ্ধসমূহ

এ ধরনের ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করা আমাদের আলোচনার গণ্ডির বাইরে। শ্রদ্ধেয় পাঠকবর্গ যাতে করে এ সব যুদ্ধের সাথে অপরিচিত না থাকেন তাই এ সব যুদ্ধের কারণ ও পদ্ধতির ওপর সামান্য আলোকপাত করব। এখানে উল্লেখ্য যে,কেবল একদল ঐতিহাসিকের মতে ফিজারের যুদ্ধগুলোর কোন একটিতে মহানবী (সা.) যোগদান করেছিলেন।

জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা পুরো বছরই যুদ্ধ ও লুটপাট করে কাটিয়ে দিত। আর এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার জন্য আরবদের জাতীয় জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও কার্যত অচল হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই সমগ্র বছরের মধ্যে রজব,যিলক্বদ,যিলহজ্ব ও মুহররম-এ চার মাস আরবদের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ রাখা হতো। যার ফলে তারা বাজার বসিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে এবং আপন পেশায় নিয়োজিত থাকতে সক্ষম হতো।166

এর ওপর ভিত্তি করেই এ দীর্ঘ চার মাসে উকায,মাজনাহ্ এবং যিল মাজাযের বাজারগুলোতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হতো। শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলেই একে অপরের পাশে বসে লেন-দেন করতো। একে অপরের বিপরীতে গর্ব ও অহংকারও প্রকাশ করা হতো। আরবের নামীদামী কণ্ঠশিল্পী ও কবি তাদের স্বরচিত কবিতা,গান ও কাসীদাহ্ ঐ সব মাহফিলে পরিবেশন করত। প্রসিদ্ধ বক্তাগণ ঐসব স্থানে বক্তৃতা করত। শত্রুদের আক্রমণের হাত থেকে নিরাপদ হওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হয়েই ইয়াহুদী,খ্রিষ্টান এবং মূর্তিপূজকগণ এ সব স্থানে আরব বিশ্বের জনগণের কাছে নিজ নিজ আকীদা-বিশ্বাস ও ধর্মমত প্রচার করত।

কিন্তু আরব জাতির ইতিহাসে এ নিষিদ্ধ মাস চতুষ্টয়ের সম্মান চার বার লঙ্ঘিত হয়েছিল। এর ফলে কতিপয় আরব গোত্র পরস্পরের ওপর আক্রমণ করেছিল। যেহেতু এ সব যুদ্ধ নিষিদ্ধ (হারাম) মাসগুলোতে সংঘটিত হয়েছিল তাই এ সব যুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছিল ফিজারের যুদ্ধ’। এখন আমরা সংক্ষেপে এ যুদ্ধগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করব।

ফিজারের প্রথম যুদ্ধ

এ যুদ্ধে বিবদমান পক্ষদ্বয় ছিল কিনানাহ্ ও হাওয়াযিন গোত্র। এ যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে বদর বিন মাশা র নামক এক ব্যক্তি উকাযের বাজারে নিজের জন্য একটি স্থান তৈরি করে সেখানে প্রতিদিন জনগণের সামনে নিজের গৌরব জাহির করত। একদিন হাতে তলোয়ার নিয়ে বলল, হে লোকসকল! আমি সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। যে আমার কথা শুনবে না সে অবশ্যই এ তরবারি দ্বারা নিহত হবে।” ঐ সময় এক ব্যক্তি তার পায়ে তরবারি দিয়ে আঘাত করে তার পা কেটে ফেলে। এ কারণেই দু টি গোত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়,তবে কেউ নিহত হওয়া ব্যতিরেকেই তারা সংঘর্ষ করা থেকে বিরত হয়।

ফিজারের দ্বিতীয় যুদ্ধ

এ যুদ্ধের কারণ ছিল এই যে,বনি আ মের গোত্রের একজন সুন্দরী মহিলা এক যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে-মহিলাদের প্রতি দৃষ্টি দেয়াই ছিল যার অভ্যাস। যুবকটি তার মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করার জন্য অনুরোধ করলে ঐ রমণী তা প্রত্যাখ্যান করে। প্রবৃত্তির পূজারী যুবকটি রমণীর পেছনে বসে তার লম্বা গাউনের প্রান্তগুলো গাছের কাটা দিয়ে এমনভাবে পরস্পর গেঁথে দিয়েছিল যে,বসা অবস্থা থেকে দাঁড়ানোর সময় ঐ রমণীর মুখমণ্ডল অনাবৃত হয়ে যায়। এ সময় ঐ রমণী ও যুবক তাদের নিজ নিজ গোত্রকে আহবান করলে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং কিছুসংখ্যক লোকের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে অবশেষে সংঘর্ষের অবসান ঘটে।

ফিজারের তৃতীয় যুদ্ধ

কিনান গোত্রের এক ব্যক্তির কাছে বনি আ মের গোত্রের এক ব্যক্তির কিছু পাওনা ছিল। ঐ ঋণগ্রস্ত লোকটি আজ দেব,কাল দেব বলে পাওনাদার লোকটিকে ঘুরাচ্ছিল। এতে এ দু ব্যক্তির মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ব্যক্তিদ্বয়ের নিজ নিজ গোত্রও পরস্পরকে হত্যা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু শান্তির ব্যাপারে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে উভয় গোত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে।

ফিজারের চতুর্থ যুদ্ধ

এ যুদ্ধে মহানবী (সা.) অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তাঁর বয়স কত ছিল সে সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন,তখন মহানবীর বয়স ছিল 14 অথবা 15 বছর। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন,তখন তাঁর বয়স ছিল 20 বছর। যেহেতু এ যুদ্ধ 4 বছর স্থায়ী হয়েছিল তাই এতৎসংক্রান্ত বিদ্যমান সকল বর্ণনা বিশুদ্ধ হতে পারে।167

এ যুদ্ধের মূল কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে,নূমান বিন মুনযির প্রতি বছর একটি বাণিজ্যিক কাফেলা প্রস্তুত করে ব্যবসায়িক পণ্য-সামগ্রী ঐ কাফেলার সাথে উকাযের মেলায় পাঠাত। ঐ সব পণ্যের বিনিময়ে চামড়া,দড়ি এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা কাপড় ক্রয় করে আনার নির্দেশ দিত। উরওয়াতুর রিজাল নামক হাওয়াযিন গোত্রের এক ব্যক্তিকে কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বারাদ বিন কাইস (কিনান গোত্রের) হাওয়াযিন ব্যক্তিটির উন্নতির কারণে অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ল। সে নূমান বিন মুনযিরের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানাল,কিন্তু তার প্রতিবাদে কোন ফল হলো না। তার ভেতরে ক্রোধ ও হিংসার অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে উঠল। সে সর্বদা উরওয়াতুর রিজালকে পথিমধ্যে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিল। অবশেষে বনি মুররা গোত্রের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সে তাকে হত্যা করে। আর এভাবে হাওয়াযিন লোকটির রক্তে তার হাত রঞ্জিত হয়।

ঐ দিনগুলোতে কুরাইশ ও কিনানাহ্ গোত্র পরস্পর মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। আর এ ঘটনাটি ঐ সময় সংঘটিত হয় যখন আরব গোত্রগুলো উকাযের বাজারগুলোতে কেনা-বেচা ও লেন-দেনে ব্যস্ত ছিল। এক লোক কুরাইশ গোত্রকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। হাওয়াযিন গোত্র ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার আগেই কুরাইশ ও কিনানাহ্ গোত্র নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে হারাম শরীফে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হাওয়াযিন গোত্র তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পিছু নেয় ও ধাওয়া করে। হারাম শরীফে পৌঁছানোর আগেই এ দু দলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অবশেষে আবহাওয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলে যুদ্ধরত গোত্রগুলো যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়। আর এটি ছিল আঁধারের মধ্যে হারাম শরীফের দিকে অগ্রসর এবং কুরাইশ ও কিনানাহ্ গোত্রের জন্য শত্রুর হাত থেকে নিরাপদ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ঐ দিন থেকে কুরাইশ ও তাদের মিত্ররা মাঝে-মধ্যে হারাম শরীফ থেকে বের হয়ে এসে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতো। চাচাদের সাথে মহানবীও কিছু দিন যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এ অবস্থা চার বছর স্থায়ী হয়েছিল। অবশেষে যুদ্ধে হাওয়াযিন গোত্রের মধ্যে থেকে যারা নিহত হয়েছিল তাদের রক্তপণ পরিশোধ করার মাধ্যমে ফিজারের চতুর্থ যুদ্ধের যবনিকাপাত হয়। উল্লেখ্য যে,এ যুদ্ধে কুরাইশদের চেয়ে হাওয়াযিন গোত্রের নিহতদের সংখ্যা বেশি ছিল।

হিলফুল ফুযূল (প্রতিজ্ঞা-সংঘ)

অতীতকালে হিলফুল ফুযূল’নামে একটি প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি জুরহুম গোত্রের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। এ প্রতিজ্ঞার মূল ভিত্তি ছিল অত্যাচারিত ও পতিতদের অধিকার সংরক্ষণ। এ চুক্তির স্থপতি ছিলেন ঐ সব ব্যক্তি যাদের প্রত্যেকের নাম ছিল ফযল ধাতু থেকে নিষ্পন্ন। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীরের বর্ণনা অনুযায়ী হিলফুল ফুযূলের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম ছিল ফযল বিন ফাযালাহ্ (فضل بن فضالة ),ফযল বিন আল হারেস (فضل بن الحارث ) এবং ফযল বিন ওয়াদাআহ্

(فضل بن وداعة )।168

যেহেতু কয়েকজন কুরাইশ যে চুক্তি নিজেদের মধ্যে সম্পাদন করেছিলেন,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে তা হিলফুল ফুযূলের অনুরূপ ছিল সেহেতু এ ঐক্য ও চুক্তির নামও হিলফুল ফুযূল’দেয়া হয়েছিল।

মহানবীর নবুওয়াত ঘোষণার 20 বছর পূর্বে যিলক্বদ মাসে এক ব্যক্তি পবিত্র মক্কা নগরীতে বাণিজ্যিক পণ্যসহ প্রবেশ করে। ঘটনাক্রমে আ স ইবনে ওয়ায়েল তা ক্রয় করে। কিন্তু যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে ঐ লোকটিকে তা পরিশোধ না করলে তাদের মধ্যে তীব্র ঝগড়া বেঁধে যায়। যে সব কুরাইশ বংশীয় ব্যক্তি পবিত্র কাবার পাশে বসা ছিল তাদের প্রতি (হতভাগ্য) পণ্য বিক্রেতার দৃষ্টি পড়ল এবং তার আহাজারি ও ক্রন্দনধ্বনিও তীব্র ও উচ্চ হলো। সে কিছু কবিতা আবৃত্তি করল যা ঐ সব লোকের অন্তঃকরণে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিল যাদের ধমণীতে পৌরুষ ও শৌর্য-বীর্যের রক্ত প্রবাহমান ছিল। ইত্যবসরে যুবাইর ইবনে আবদুল মুত্তালিব উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর সাথে আরো কতিপয় ব্যক্তিও আবদুল্লাহ্ ইবনে জাদআনের গৃহে একত্রিত হলেন। তাঁরা পরস্পর প্রতিজ্ঞা করলেন এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যতদূর সম্ভব অত্যাচারীর কাছ থেকে অত্যাচারিতের অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে শপথ করলেন। প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি সম্পন্ন হলে তাঁরা আস ইবনে ওয়ায়েলের কাছে আসলেন এবং সে যে পণ্য কিনে মূল্য পরিশোধ করে নি তা তার থেকে নিয়ে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

আরবের কবি-সাহিত্যিক ও গীতিকারগণ এ চুক্তির প্রশংসায় বেশ কিছু কবিতাও রচনা করেছেন।169

মহানবী (সা.) উক্ত হিলফুল ফুযূলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারণ তা মজলুমের জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করত। মহানবী এ চুক্তি ও প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে বেশ কিছু কথা বলেছেন যেগুলোর মধ্য থেকে এখানে কেবল দু টি বাণীর উদ্ধৃতি দেব :

لقد شهدت في دار عبد الله بن جدعان حلفا لو دعيت به في الأسلام لأجبت

“আবদুল্লাহ্ ইবনে জাদআনের ঘরে এমন একটি প্রতিজ্ঞা সম্পাদিত হবার বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলাম যদি এখনও (নবুওয়াত ঘোষণার পরেও) আমাকে উক্ত প্রতিজ্ঞার দিকে আহবান জানানো হয় তাহলেও আমি এতে সাড়া দেব।”

ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন : মহানবী (সা.) হিলফুল ফুযূল চুক্তির ব্যাপারে পরবর্তীকালে বলেছেন,

ما أحب أن لي به حمر النعم

“লাল পশম বিশিষ্ট উটের বদলেও এ চুক্তি ভঙ্গ করতে আমি মোটেও প্রস্তুত নই।”

হিলফুল ফুযূল এতটা দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত ছিল যে,ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এ চুক্তির অন্তর্নিহিত মূল বিষয় মেনে চলার ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব আছে বলে বিশ্বাস করত। মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে নিযুক্ত ওয়ালীদ ইবনে উতবাহ্ ইবনে আবু সুফিয়ানের পবিত্র মদীনা নগরীর প্রশাসক থাকাকালীন যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা এ বিষয়ের উৎকৃষ্ট দলিল। শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (আ.) জীবনে কখনই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি। একবার একটি সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে মদীনার তৎকালীন শাসনকর্তার সাথে তাঁর মতপার্থক্য হয়েছিল। ইমাম হুসাইন অত্যাচার ও অন্যায়ের ভিত্তি ধ্বংস করা এবং জনগণকে ন্যায্য অধিকার আদায় করার প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত করানোর জন্য ঐ জালেম শাসনকর্তাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, মহান আল্লাহর শপথ,যদি তুমি আমার ওপর অন্যায় ও জোরজবরদস্তি কর তাহলে আমি আমার তরবারি কোষমুক্ত করে মহানবী (সা.)-এর মসজিদে দাঁড়িয়ে ঐ চুক্তি ও প্রতিজ্ঞার দিকে সবাইকে আহবান করব যা তাদের পূর্ব পুরুষগণই সম্পাদন করেছিলেন।” তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর দণ্ডায়মান হয়ে এ কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন এবং আরো বললেন, আমরা সবাই রুখে দাঁড়াব এবং তাঁর ন্যায্য অধিকার আদায় করব অথবা এ পথে আমরা সবাই নিহত হব।” ইমাম হুসাইন (আ.)-এর এ উদাত্ত আহবান ধীরে ধীরে আল মিসওয়ার ইবনে মিখরামাহ্ ও আবদুর রহমান ইবনে উসমানের মতো সকল আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তির কর্ণগোচর হলে সবাই ইমাম হুসাইনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর দিকে ছুটে গেলেন। ফলে ঐ অত্যাচারী শাসনকর্তা উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে যায় এবং ইমামের ওপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকে।170

 


22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49

50

51

52

53

54

55

56

57

58

59

60

61