চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79202
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79202 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মুসলমানদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক

পবিত্র মদীনা নগরীতে বসবাসের শুরুর দিন থেকে মহানবী (সা.) ইসলামের প্রভাব বলয়ের চৌহদ্দির বাইরে শত্রুদের সার্বিক অবস্থা,গতিবিধি ও তৎপরতা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য সর্বদা দক্ষ ও নিপুণ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মদীনার আশেপাশে প্রেরণ করতেন। এ কারণেই গোয়েন্দা তথ্য প্রদানকারীরা গোপন তথ্য প্রদান করেন যে,ইসলামের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সামরিক জোট গঠিত হয়েছে এবং এ জোটের লোকেরা একটি নির্দিষ্ট দিনে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং মদীনা নগরী অবরোধ করবে। মহানবী (সা.) তৎক্ষণাৎ একটি প্রতিরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ সভার আয়োজন করেন,যাতে সবাই উহুদ যুদ্ধে অর্জিত তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হন। একদল দুর্গে আশ্রয় নিয়ে দুর্গের টাওয়ার ও উচ্চ স্থান থেকে যুদ্ধ পরিচালনাকে শহরের বাইরে গিয়ে শত্রু সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। তবে এ পরিকল্পনা যথেষ্ট ছিল না। কারণ উত্তাল সৈন্যদের আক্রমণ দুর্গ ও টাওয়ারগুলোকে ধ্বংস করে ফেলত এবং মুসলমানদের ভূলুণ্ঠিত করে ফেলত। তাই তখন এমন কোন কাজ করা প্রয়োজন ছিল,যার ফলে তারা মদীনা নগরীর নিকটবর্তী হতে সক্ষম না হয়।

ইরানীদের রণকৌশলের সাথে পরিচিত সালমান ফার্সী বললেন : যখনই পারস্যবাসী ভয়ঙ্কর শত্রুর আক্রমণের মুখোমুখি হয়,তখন তারা শহর ও নগরীর চারপাশে গভীর পরিখা খনন করে শত্রুবাহিনীর অগ্রগতি রোধ করে থাকে। তাই মদীনা নগরীর যে সব স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অর্থাৎ শত্রুবাহিনীর যানবাহন এবং যুদ্ধের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি যে সব স্থান দিয়ে সহজেই আনা-নেয়া করা যাবে,সেসব স্থানে গভীর পরিখা খনন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মদীনা নগরীর এ অঞ্চলে শত্রুবাহিনীর অগ্রগতি অবশ্যই থামিয়ে দিতে হবে। আর পরিখার পাশে বাঙ্কার নির্মাণ করে সেখান থেকে শহরের প্রতিরক্ষা কার্যকর করতে হবে এবং পরিখার আশে-পাশের টাওয়ারগুলো থেকে শত্রুবাহিনীর উপর তীর ও পাথর নিক্ষেপ করে পরিখা অতিক্রম করে শহরের ভিতরে তাদের প্রবেশ প্রতিহত করতে হবে। 116

সালমানের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রতিরক্ষামূলক এ পরিকল্পনাটি ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছিল। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,মহানবী (সা.) কয়েক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে যে সব স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান,সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে একটি বিশেষ রেখা টেনে পরিখা খননের স্থান নির্ধারণ করলেন। ঠিক হলো,উহুদ থেকে রাতিজ পর্যন্ত একটি পরিখা খনন করা হবে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতি চল্লিশ হাত অন্তর স্থানের প্রহরা দশ যোদ্ধার ওপর ন্যস্ত করা হবে।

মহানবী (সা.) নিজে সর্বপ্রথম গাঁইতি দিয়ে পরিখা খনন কাজ শুরু করলেন এবং হযরত আলী (আ.) খননকৃত মাটি সেখান থেকে বের করে আনতে লাগলেন। মহানবীর কপাল ও মুখমণ্ডল বেয়ে ঘাম ঝরছিল। ঐ সময় নিম্নোক্ত বাক্য তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো :

لا عيش إلّا عيش الآخرة اللهم اغفر الأنصار و المهاجرة

“পারলৌকিক জীবনই হচ্ছে প্রকৃত জীবন। হে আল্লাহ! মুহাজির ও আনসারদের আপনি ক্ষমা করে দিন।”

মহানবী (সা.) তাঁর এ কাজের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের কর্মসূচীর একটি দিক উন্মোচন করেছেন এবং ইসলামী সমাজকে বুঝিয়ে দিয়েছেন,সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং জনগণের নেতাকে অবশ্যই অন্য ব্যক্তিদের মতো সবার শোক-দুঃখে অংশীদার হতে হবে এবং সর্বদা তাদের কাঁধ থেকে বোঝা নিজের কাঁধেও বহন করতে হবে। এ কারণেই মহানবীর এ কর্ম মুসলমানদের মধ্যে এক বিস্ময়কর কর্মোদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। তাঁরা সবাই ব্যতিক্রম ছাড়াই পরিখা খনন কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এমনকি বনী কুরাইযা গোত্রের ইহুদীরা-যারা মুসলমানদের সাথে সন্ধি চুক্তি সম্পাদন করেছিল,তারা পর্যন্ত খনন করার সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করে খনন কাজের অগ্রগতিতে সাহায্য করেছিল।117

মুসলমানরা ঐ সময় তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে ছিলেন। তা সত্বেও অবস্থাপন্ন পরিবারসমূহের পক্ষ থেকে ইসলামের সৈনিকদের সাহায্য করা হচ্ছিল। যখন বিশাল বিশাল পাথরের স্তর বের হওয়ার কারণে পরিখা খনন কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল,তখন তাঁরা মহানবীর শরণাপন্ন হলে তিনি খুব জোরে আঘাত করে ঐ সব প্রকাণ্ড পাথর ভেঙে টুকরো টুকরো করেছিলেন।

খননকারী শ্রমিকদের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করলে পরিখার দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায়। কারণ ঐ সময় মুসলমানদের সংখ্যা (প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত অনুসারে) ছিল তিন হাজার118 এবং নির্ধারণ করা হয়েছিল যে,প্রত্যেক দশ জন যোদ্ধা চল্লিশ হাত ভূমি প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। এ অবস্থায় পরিখার দৈর্ঘ্য বারো হাজার হাত অর্থাৎ প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার হবে এবং এর প্রস্থ এতটা ছিল যে,চৌকস অশ্বারোহীরাও অশ্ব নিয়ে তা অতিক্রম করতে পারছিল না। স্বভাবতই এ পরিখার গভীরতা কমপক্ষে পাঁচ মিটার এবং এর প্রস্থও পাঁচ মিটার হয়ে থাকবে।

সালমান ফার্সী সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর প্রসিদ্ধ উক্তি

লোকদেরকে ভাগ করে দেয়ার সময় সালমানের ব্যাপারে মুহাজির ও আনসারগণ পরস্পর কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হন। তাঁদের সবাই বলছিলেন : সালমান আমাদের মধ্যে এবং তিনি অবশ্যই আমাদের সহকর্মী হবেন।” মহানবী (সা.) তখন তাঁর এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিতর্কের অবসান ঘটালেন : سلمان منّا أهل البيت সালমান আমাদের আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। 119

মহানবী (সা.) দিন-রাত পরিখার পাশে কাটাতে লাগলেন যাতে পরিখা খনন কাজ (যথাসময়ে) শেষ হয়। তবে মুনাফিক চক্র বিভিন্ন ধরনের ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করিয়ে দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি নিয়ে,কখনো কখনো অনুমতি না নিয়েই নিজেদের বাড়ীতে ফিরে যেত। তবে মুমিনগণ দৃঢ় সংকল্প সহকারে কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ দর্শিয়ে সর্বাধিনায়কের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই তাঁরা দায়িত্ব থেকে অবসর নিতেন এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে তাঁরা আবার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতেন। পুরো বিষয়টা স্পষ্টভাবে সূরা নূরের 62 ও 63 তম আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

আরব ও ইহুদী যৌথ বাহিনীর মদীনা অবরোধ

যে গভীর পরিখা সম্মিলিত আরব বাহিনীর আগমনের ছয়দিন আগে খনন করা হয়েছিল,তারা পঙ্গপালের মতো তার পাশে এসে সমবেত হলো। তারা উহুদ পর্বতের পাদদেশে মুসলিম বাহিনীর মুখোমুখী হবার আশা করেছিল। কিন্তু উহুদের ময়দানে পৌঁছে তারা সেখানে মুসলিম বাহিনীর কোন চিহ্নই দেখতে পেল না। তাই তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে এবং অবশেষে পরিখার ধারে এসে উপস্থিত হয়। মদীনার সংবেদনশীল অঞ্চলে একটি গভীর পরিখা দেখতে পেয়ে তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। তারা সবাই বলছিল : মুহাম্মদ এ রণ-কৌশলটা একজন ইরানীর কাছ থেকে শিখেছে। তা না হলে আরবরা এ ধরনের রণ-কৌশলের সাথে মোটেই পরিচিত নয়।

উভয় পক্ষের সামরিক শক্তির একটি সূক্ষ্ণ পরিসংখ্যান

আরব বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পরিখার অপর প্রান্তে তাদের তারবারিগুলোর ঝলকানি সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল। ইমতা’ গ্রন্থে মাকরীযীর উদ্ধৃতি অনুসারে কেবল কুরাইশ গোত্রই চার হাজার সৈন্য,তিন শ’ অশ্ব এবং পনেরো শ’ উট নিয়ে পরিখার পাশে তাঁবু স্থাপন করেছিল। কুরাইশদের মিত্র বনী সালীম গোত্র মাররুয যাহরান এলাকায় সাত শ সৈন্য নিয়ে কুরাইশদের সাথে যোগ দিয়েছিল। বনী ফিযারাহ্ এক হাজার যোদ্ধা এবং বনী আশজা ও বনী মুররাহ্ গোত্রের প্রতিটিই চার শ’ সৈন্য সহ এবং অবশিষ্ট গোত্রগুলো,যাদের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার পাঁচ শ’ , অন্য একটি স্থানে তাঁবু স্থাপন করেছিল;আর এভাবে সম্মিলিত আরব বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

মুসলমানদের সংখ্যা তিন হাজার অতিক্রম করে নি। সালা (سلع ) পর্বতের প্রান্তদেশ উঁচু ভূমিতে তারা তাঁবু স্থাপন করেছিল। এ অঞ্চল পরিখা ও পরিখার বাইরের অবস্থার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখছিল এবং শত্রু বাহিনীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও গতিবিধি সেখান থেকে দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। একদল মুসলিম সৈন্য পরিখার উপর দিয়ে গমানাগমন নিয়ন্ত্রণ এবং এর প্রতিরক্ষা বিধানের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাঁরা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে নির্মিত বাঙ্কারসমূহে অবস্থান নিয়ে শত্রু বাহিনীর পরিখা অতিক্রম করার প্রচেষ্টা প্রতিহত করছিলেন।

মুশরিক বাহিনী প্রায় এক মাস পরিখার অপর প্রান্তে অবস্থান করেছিল। কেবল সীমিত সংখ্যক সৈন্য ব্যতীত তারা পরিখা অতিক্রম করতে সক্ষম হয় নি। আর পরিখা অতিক্রম করার চিন্তা যাদের মাথায় ছিল,তারা আধুনিককালে ব্যবহৃত গোলার পরিবর্তে তখন ব্যবহৃত পাথর নিক্ষেপ করার কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। ঐ সময় আগ্রাসনকারী আরব বাহিনীকে নিয়ে মুসলমানদের বেশ কিছু মিষ্টি-মধুর কাহিনী আছে যেসব ইতিহাসে বর্ণিত আছে।120

তীব্র শীত ও খাদ্য-সামগ্রীর অভাব

পরিখার যুদ্ধ শীতকালে সংঘটিত হয়েছিল। ঐ বছর মদীনা অনাবৃষ্টি ও এক ধরনের দুর্ভিক্ষ কবলিত হয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে মুশরিক বাহিনীর খাদ্য ও রসদপত্র এতটা ছিল না যে,তারা সেখানে দীর্ঘ দিন অবস্থান করতে সক্ষম হবে। তারা ভাবতেও পারে নি যে,পরিখার পাশে তাদেরকে এক মাস আটকে থাকতে হবে। বরং তারা নিশ্চিত ছিল,অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসলামের সকল সাহসী যোদ্ধাকে ধরাশায়ী এবং মুসলমানদের হত্যা করবে।

কয়েকদিন অতিবাহিত হবার পর যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলনকারীরা (ইহুদীরা) এ সমস্যা উপলব্ধি করল। তারা বুঝতে পারল,সময় গত হওয়ার সাথে সাথে সম্মিলিত মুশরিক বাহিনীর সেনাপতিদের ইচ্ছাশক্তিও হ্রাস পেতে থাকবে এবং খাদ্য ও রসদপত্রের অভাব এবং শীতের প্রকোপ বাড়ার কারণে তাদের প্রতিরোধ ও দৃঢ়তাও হ্রাস পাবে। এ কারণেই তারা এ চিন্তা করতে লাগল যে,মদীনা নগরীর ভেতরে বসবাসকারী বনী কুরাইযার কাছে তারা সাহায্য চাইবে যাতে তারা মদীনার অভ্যন্তরে যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে সম্মিলিত আরব বাহিনীর সামনে মদীনা নগরীতে প্রবেশ করার পথ উন্মুক্ত করে দেয়।

বনী কুরাইযার দুর্গে হুইয়াই ইবনে আখতাবের আগমন

বনী কুরাইযাহ্ ছিল একমাত্র ইহুদী গোত্র যারা মদীনায় মুসলমানদের সাথে শান্তিতে বসবাস করত এবং মহানবী (সা.)-এর সাথে সন্ধিচুক্তি করার কারণে মুসলমানরাও তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করত।

হুইয়াই ইবনে আখতাব বুঝতে পারল,সম্মিলিত আরব বাহিনীর স্বার্থে মদীনার ভেতর থেকে সাহায্য নেয়াই হচ্ছে বিজয় লাভের একমাত্র পথ। মুসলমান এবং বনী কুরাইযার ইহুদীদের মাঝে যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করার জন্য এবং গৃহযুদ্ধে মুসলমানদের ব্যস্ত হওয়া সম্মিলিত আরব বাহিনীর বিজয় লাভের অনুকূল বিবেচনায় সে মহানবীর সাথে বনী কুরাইযার ইহুদীদের শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করার আহবান জানায়। এ পরিকল্পনা মোতাবেক সে বনী কুরাইযার দুর্গের দ্বারে উপস্থিত হয়ে তাদের কাছে নিজের পরিচিতি তুলে ধরে। বনী কুরাইযার সর্দার কা ব দুর্গের ফটক না খোলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সে খুব মিনতি করতে থাকে এবং চিৎকার করে বলতে থাকে : হে কা ব! তুমি কি তোমার রুটি-রোযগারের ব্যাপারে ভীত যে,এ কারণে তুমি আমার জন্য দুর্গের ফটক খুলছ না?”   এ কথা কা বের অনুভূতিকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। সে দুর্গের ফটক খোলার নির্দেশ দিল। তার নির্দেশে দুর্গের ফটক খোলা হলো এবং যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলনকারী (হুয়াই ইবনে আখতাব) অভিন্ন ধর্মানুসারী কা বের পাশে বসে বলল : আমি তোমার জন্য এক দুনিয়া সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে এসেছি। কুরাইশ গোত্রপতিরা,আরবের নেতারা এবং গাতফান গোত্রের সর্দাররা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অভিন্ন শত্রু অর্থাৎ মুহাম্মদকে ধ্বংস করার জন্য পরিখার পাশে এসে অবস্থান নিয়েছে এবং আমাকে কথা দিয়েছে মুহাম্মদ ও মুসলমানদের পাইকারীভাবে হত্যা না করে তারা নিজেদের বাসস্থানে প্রত্যাবর্তন করবে না।”

কা ব জবাবে তাকে বলল, তুমি এক দুনিয়া অপদস্থতা ও অসম্মান সাথে নিয়ে এসেছ। আমার দৃষ্টিতে আরব বাহিনী ঐ মেঘসদৃশ,যা কেবল গর্জনই করে,তবে এক ফোঁটা বৃষ্টিও এ থেকে বর্ষিত হয় না। হে আখতাব তনয়! হে যুদ্ধের উস্কানিদাতা ও যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলনকারী! আমাদের ওপর থেকে তোমার হাত গুটিয়ে নাও। মুহাম্মদের সুকুমার চারিত্রিক বৈশিষ্টাবলীর কারণে আমরা তাঁর সাথে আমাদের শান্তি চুক্তি উপেক্ষা করতে পারব না। আমরা তাঁর থেকে সত্যবাদিতা,নির্মলতা,সততা ও পবিত্রতা ছাড়া আর কিছুই প্রত্যক্ষ করি নি। তাই আমরা কিভাবে তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব?

কিন্তু হুইয়াই ইবনে আখতাব একজন দক্ষ উষ্ট্রচালকের মতো-যে কুঁজের উপর হাত বুলিয়ে পাগলা উটকে শান্ত করে-এতটা কথা বলল যে,কা ব শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। হুইয়াই তাকে কথা দিল,সম্মিলিত আরব বাহিনী যদি মুহাম্মদের ওপর বিজয়ী নাও হয়,স্বয়ং সে দুর্গে প্রবেশ করে (তাদের সুখ-দুঃখের) ভাগীদার হবে। কা ব হুইয়াই এর উপস্থিতিতে ইহুদী নেতাদের ডেকে একটি পরামর্শসভার আয়োজন করল এবং সে তাদের মতামত জানতে চাইল। তারা সবাই বলল : তোমার অভিমতই আমাদের অভিমত। তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে,আমরা তা মানতে প্রস্তুত আছি। 121

যুবাইর বাতা ছিল একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি। সে বলল : আমি তাওরাতে পড়েছি,শেষ যুগে মক্কা থেকে এক নবী আবির্ভূত হবেন এবং মদীনায় হিজরত করবেন। তাঁর ধর্ম সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত হবে। আর কোন বাহিনীই তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখবে না। মুহাম্মদ যদি ঐ প্রতিশ্রুত নবী হয়ে থাকেন,তা হলে এ সম্মিলিত বাহিনী তাঁর ওপর বিজয়ী হবে না।” হুইয়াই ইবনে আখতাব সাথে সাথে বলল : ঐ (প্রতিশ্রুত) নবী বনী ইসরাঈল বংশোদ্ভূত হবেন। আর মুহাম্মদ হচ্ছে ইসমাঈলের বংশধর যে যাদু ও ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে এ দলটিকে (মুসলমানদের) জড়ো করেছে।” সে এ প্রসঙ্গে এতটা দৃঢ়তার সাথে বুঝালো,যা অবশেষে তাদের সবাইকে শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করতে প্ররোচিত করল (এবং তারা শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিল)। এ সময় হুইয়াই তাদের ও মহানবী (সা.)-এর মাঝে সম্পাদিত শান্তিচুক্তিপত্র চাইল এবং তাদের সবার চোখের সামনে তা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করল। এরপর সে বলল : সবকিছু এখন শেষ হয়ে গেছে। কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন তোমরা সবাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। 122

বনী কুরাইযার চুক্তি ভঙ্গের ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর অবগতি

মহানবী (সা.) তাঁর দক্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বনী কুরাইযাহ্ কর্তৃক শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করার ব্যাপারে ঐ অতি সংবেদনশীল মুহূর্তে অবগত হলেন এবং খুবই চিন্তিত ও ব্যথিত হলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ মুসলিম সাহসী সেনা কর্মকর্তা এবং আউস ও খাযরাজ গোত্রের সর্দার সা দ ইবনে মায়ায এবং সা দ ইবনে উবাদাকে দায়িত্ব দিলেন,তাঁরা এ সংক্রান্ত সূক্ষ্ম তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং বনী কুরাইযার বিশ্বাসঘাতকতা করার খবর সঠিক হয়ে থাকলে তাঁরা মহানবীকে আযাল ওয়া কারাহ্’123 (عضل و قاره )-এ সাংকেতিক শব্দ উচ্চারণ করে অবহিত করবেন। আর তারা তাদের চুক্তির ওপর অটল থাকলে যেন তাঁরা প্রকাশ্যে এ বিষয়টি অস্বীকার করেন।

সা দ ইবনে মায়ায এবং সা দ ইবনে উবাদাহ্ আরো দু জন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে বনী কুরাইযার দুর্গের ফটকের কাছে আগমন করলেন এবং কা বের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হবার মুহূর্তেই মহানবী (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে তার গালি-গালাজ,নিন্দাবাদ ও কটূক্তি ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলেন না। সা দ তাঁর অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণার (ইলহাম) ভিত্তিতে বললেন : মহান আল্লাহর শপথ! সম্মিলিত আরব বাহিনী এ ভূ-খণ্ড থেকে চলে যাবে এবং মহানবী (সা.) এ দুর্গ অবরোধ করে তোমার মুণ্ডুপাত করবেন এবং তোমার গোত্রকে অপদস্থ করবেন।” এরপর তাঁরা সাথে সাথে ফিরে এসে মহানবীকে বললেন : ‘আযাল ওয়া কারাহ্’ ।

মহানবীও উচ্চকণ্ঠে বললেন :الله أكبر أبشروا يا معشر المسلمين بالفتح আল্লাহু আকবার (আল্লাহ্ মহান)। হে মুসলিম জনতা! তোমাদের সুসংবাদ (দিচ্ছি),বিজয় অতি নিকটে।”

ইসলামের মহান নেতার সাহসিকতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক এ বাক্য তিনি এজন্য বলেছিলেন যাতে বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের চুক্তি ভঙ্গের সংবাদ শুনে মুসলমানদের মনোবল দুর্বল না হয়ে পড়ে।124

বনী কুরাইযাহ্ পরিচালিত প্রাথমিক আগ্রাসন

বনী কুরাইযা গোত্রের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল এই যে,প্রথমে তারা মদীনা নগরীতে লুটতরাজ চালাবে এবং যে মুসলমান নারী ও শিশু ঘরে আশ্রয় নিয়েছে,তারা তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করবে। আর তারা মদীনায় তাদের এ পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত করবে।

যেমন বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের বীরেরা রহস্যজনকভাবে মদীনা নগরীতে টহল দেয়া শুরু করে ও ঘোরাফেরা করতে থাকে। সাফীয়াহ্ বিনতে আবদুল মুত্তালিব এ ব্যাপারে বলেছেন : আমি হাস্সান ইবনে সাবিতের ঘরে ছিলাম এবং হাস্সানও স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি সহ সেখানে বসবাস করছিল। হঠাৎ আমি একজন ইহুদী লোককে দেখতে পেলাম,সে দুর্গের চারপাশে রহস্যজনকভাবে ঘোরাফেরা করছে। আমি হাস্সানকে বললাম : এ লোকটির মনে কুমতলব আছে। হাস্সান বললেন : হে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা! তাকে হত্যা করার সাহস আমার নেই এবং এ দুর্গ থেকে বের হলে আমার ক্ষতি হতে পারে বলে আমি শঙ্কা বোধ করছি। আমি নিরুপায় হয়ে নিজেই দাঁড়িয়ে আমার কোমর বাঁধলাম এবং এক টুকরো লোহা নিলাম এবং এক আঘাতে ঐ ইহুদী লোকটাকে ধরাশায়ী করে ফেললাম।”

মুসলমানদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মহানবী (সা.)-কে গোপন রিপোর্ট প্রদান করে অবহিত করলেন,বনী কুরাইযাহ্,কুরাইশ গোত্র এবং বনী গাতফানের কাছে দু হাজার সৈন্য চেয়েছে যাতে তারা বনী কুরাইযার দুর্গের ভেতর দিয়ে মদীনায় প্রবেশ করে মদীনা নগরী তছনছ ও লুটপাট করতে সক্ষম হয়। এ সংবাদ ঐ সময় পৌঁছে যখন মুসলমানরা পরিখার পারগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন,যাতে শত্রু সেনারা তা অতিক্রম করে মদীনায় প্রবেশ করতে না পারে। মহানবী (সা.) তৎক্ষণাৎ যাইদ ইবনে হারিসা ও মাসলামাহ ইবনে আসলাম নামের দু জন সেনানায়ককে পাঁচ শ’ সৈন্য নিয়ে মদীনার অভ্যন্তরে টহল দেয়া এবং তাকবীর দিয়ে বনী কুরাইযার আগ্রাসন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন যাতে করে মদীনার মুসলিম নারী ও শিশুরা তাদের তাকবীর ধ্বনি শুনে শান্ত ও নিরুদ্বিগ্ন থাকে।125

মুখোমুখি ঈমান ও কুফর

মুশরিক ও ইহুদীরা পরিখার যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালিত করেছিল। তবে এ সব যুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিপক্ষ একটি বিশেষ গোষ্ঠী ছিল এবং সেগুলো সমগ্র আরবোপদ্বীপকে ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার মত ব্যাপক ও সর্বজনীন দিকসম্পন্ন ছিল না। শত্রুরা এতসব চেষ্টা করেও নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সরকার ও রাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হয় নি বলে এবার তারা বিভিন্ন গোত্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সম্মিলিত সেনাবাহিনী গঠন করে ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করতে এবং তূণের সর্বশেষ তীরটি মুসলমানদের দিকে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল। তারা সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাত্রা করে। মুসলমানদের পক্ষ থেকে মদীনা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে শত্রুবাহিনী এ যুদ্ধে বিজয় লাভ করত।

এ কারণেই ইসলামের শত্রুরা আরবদের সেরা বীর যোদ্ধা আমর ইবনে আবদে উদকে সাথে করে এনেছিল এ উদ্দেশ্যে যে,তার বাহুবলের দ্বারা তারা তাদের বিজয় আরো ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে।

সুতরাং পরিখা যুদ্ধের দিনগুলোয় শিরক ও ইসলামের দুই বীরের মুখোমুখী হবার মুহূর্তে আসলে ইসলাম ও কুফরই মুখোমুখী হয়েছিল;আর এ দ্বৈত সমর ছিল ঈমান ও কুফরের পরস্পর মুখোমুখী হবার প্রাঙ্গন।

সম্মিলিত আরব বাহিনীর ব্যর্থ হবার অন্যতম কারণ ছিল তাদের সামনে খনন করে রাখা ঐ গভীর পরিখা। শত্রু বাহিনী ঐ পরিখা অতিক্রম করার জন্য রাতদিন চেষ্টা করেছিল। তবে তারা পরিখা রক্ষাকারী সৈন্যদের তীব্র আক্রমণ এবং মহানবী (সা.)-এর গৃহীত প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপসমূহের মুখোমুখী হতে থাকে।

ঐ বছরের তীব্র হাঁড়-কাঁপানো শীত,খাদ্যসামগ্রী এবং খড়-কুটার অভাব আরব বাহিনীর অস্তিত্ব ও তাদের পশুগুলোর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হুয়াই ইবনে আখতাব বনী কুরাইযার ইহুদীদের কাছ থেকে 20টি উট বোঝাই খেজুর সাহায্য পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল। কিন্তু মুসলিম কর্মকর্তারা সেগুলো আটক করেছিলেন। এরপর সেগুলো মুসলিম বাহিনীর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়েছিল।126

একদিন আবু সুফিয়ান মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রেরিত এক পত্রে লিখেছিল : আমি এক বিশাল ব্যয়বহুল সেনাবাহিনী নিয়ে আপনার ধর্মকে উচ্ছেদ করার জন্য এসেছি। কিন্তু কী আর করব। আপনি যেন আমাদের মুখোমুখী হতে পছন্দ করছেন না! আপনি আমাদের ও আপনার মাঝে একটি গভীর পরিখা খনন করে রেখেছেন। জানি না,আপনি এ সমরকৌশল কার কাছ থেকে শিখেছেন! তবে এ কথা বলে রাখছি যে,উহুদের মতো একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ না বাঁধিয়ে আমি মক্কায় ফিরে যাচ্ছি না।”

মহানবী (সা.) তাকে উত্তরে লিখেছিলেন : আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের কাছে মহান আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে... অনেক দিন যাবত আত্মদর্পে বিভোর হয়ে তুমি ভাবছ,ইসলাম ধর্মের চির উজ্জ্বল প্রদীপ তুমি নিভিয়ে দিতে সক্ষম হবে। তবে তুমি এটা জেনে নাও,এ ব্যাপারে সফল হওয়ার যোগ্যতার অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে তুমি অনেক হীন ও নীচ। অতি শীঘ্রই তুমি পরাজিত হয়ে ফিরে যাবে। আর আমি ভবিষ্যতে কুরাইশদের বড় বড় প্রতিমা তোমার চোখের সামনেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। 127

পত্রলেখকের দৃঢ় সংকল্পের কথা ব্যক্ত করা এ পত্রের উত্তর ছিল নিক্ষিপ্ত তীরতুল্য যা মুশরিক-বাহিনীর সেনাপতির হৃদপিণ্ডে গেঁথে গিয়েছিল। কুরাইশরা মহানবীর সত্যবাদিতায় আস্থা রাখত বলে তারা অস্বাভাবিকভাবে নিজেদের মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল। তবে তারা তাদের চেষ্টা চালানো থেকে হাত গুটিয়ে নেয় নি। এক রাতে খালিদ ইবনে ওয়ালীদ একটি বিশেষ সেনাদল নিয়ে এ পরিখা অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু উসাইদ ইবনে হুযাইরের নেতৃত্বে দু শ’ মুসলিম সৈন্যের প্রতিরক্ষামূলক তৎপরতার কারণে সে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়েছিল।

মহানবী (সা.) মুসলিম সেনাবাহিনী ও যোদ্ধাদের মনোবল শক্তিশালী করার ব্যাপারে ক্ষণিকের জন্যও অমনোযোগী হন নি। তিনি তাঁর অগ্নিগর্ভ ভাষণ এবং আকর্ষণীয় ও প্রাণোদ্দীপক বাণীর দ্বারা তাঁদেরকে চিন্তা-বিশ্বাসের স্বাধীনতার পবিত্র অঙ্গনের প্রতিরক্ষার জন্য সদা প্রস্তুত রাখতেন। একদিন তিনি এক বিশাল মহতী সমাবেশে সৈনিক ও সেনাধ্যক্ষগণের দিকে তাকিয়ে এক সংক্ষিপ্ত দুআর পর বলেছিলেন :

أيّها النّاس إذا لقيتم العدوّ فاصبروا و اعلموا أنّ الجنّة تحت ظلال السّيُوف

“হে ইসলামের সৈনিকবৃন্দ! শত্রুবাহিনীর মোকাবেলায় প্রতিরোধ করে যাও এবং জেনে রাখ,বেহেশত হচ্ছে ঐসব তরবারির ছায়ায় যেসব সত্য,ন্যায় ও মুক্তির পথে উন্মুক্ত করা হয়। 128