চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড7%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81899 / ডাউনলোড: 7554
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

1

2

একটি ধর্মীয়-রাজনৈতিক সফর

ষষ্ঠ হিজরী সাল তিক্ত-মিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে আসছিল। হঠাৎ এক রাতে মহানবী (সা.) একটি সুন্দর স্বপ্নে দেখলেন,মুসলমানরা মসজিদুল হারামে (পবিত্র কাবাঘরের চারদিকে) হজ্বের আনুষ্ঠানিকতাসমূহ পালনে রত। তিনি এ স্বপ্নের কথা তাঁর সাথীগণকে বললেন এবং একে একটি শুভ আলামত মনে করে বললেন,খুব শীঘ্রই মুসলমানরা তাদের মনের আশা পূরণে সক্ষম হবে।১৭২

কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি মুসলমানদের উমরার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং মদীনার আশে-পাশের যে সকল গোত্র তখনও মূর্তিপূজক ছিল,তাদেরও আহবান জানালেন মুসলমানদের সফরসঙ্গী হওয়ার। এ খবর হিজাযের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল যে,মুসলমানরা যিলকদ মাসে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় যাচ্ছে।

এই আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সফরে আত্মিক ও নৈতিক কল্যাণের দিক ছাড়াও সামাজিক ও রাজনৈতিক কল্যাণের দিকও বিদ্যমান ছিল এবং সমগ্র আরবোপদ্বীপে মুসলমানদের অবস্থানকে সুদৃঢ়করণ ও হিজাযের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে একত্ববাদী ধর্ম ইসলাম প্রচারের জন্য সহায়ক ছিল। কারণ হলো :

প্রথমত আরবের মূর্তিপূজক বিভিন্ন গোত্র ভাবত,মহানবী (সা.) তাদের সকল ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধী,এমনকি তাদের অন্যতম প্রাচীন আচার হজ্ব ও উমরারও তিনি বিরোধী। এ কারণে রাসূল (সা.) ও তাঁর প্রচারিত ধর্মের প্রতি ভীত ছিল। তাই এমন মুহূর্তে রাসূল (সা.) ও তাঁর সঙ্গীগণের উমরা পালনে যাত্রার ঘোষণায় তাদের ঐ ভীতি ও আশংকা খানিকটা দূর হলো। মুহাম্মদ (সা.) কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারিকভাবে দেখিয়ে দিতে চাইলেন তিনি আল্লাহর ঘরের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও একে কেন্দ্র করে আবর্তিত ধর্মীয় আচার ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্নসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিরোধী তো ননই;বরং এরূপ কর্মকে ফরয মনে করেন এবং আরবদের আদি পিতা হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর ন্যায় এর সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনে সচেষ্ট। যারা ইসলামকে তাদের সকল ধর্মীয় ও জাতীয় আচার-অনুষ্ঠানের এক শ’ ভাগ বিরোধী মনে করত,মুহাম্মদ (সা.) চেয়েছিলেন ঐ সকল দল ও গোষ্ঠীকে এভাবে আকর্ষণ করতে ও তাদের মন থেকে ভীতি দূর করতে।

দ্বিতীয়ত এভাবে যদি মুসলমানগণ শত-সহস্র আরব মুশরিকের সামনে সফলতার সাথে ও স্বাধীনভাবে মসজিদুল হারামে উমরা পালনে সক্ষম হন,তা হলে তা ইসলামের পক্ষে প্রচারের এক বিরাট সুযোগ এনে দেবে। কারণ এ সময়ে আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুশরিকরা মুসলমানদের খবর তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে নিয়ে যাবে। ফলে যে সকল স্থানে ইসলামের আহবান পৌঁছানো মহানবী (সা.)-এর পক্ষে সম্ভব ছিল না বা তাঁর পক্ষে কাউকে প্রচারক হিসেবে পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে নি,সেখানেও তাঁর বাণী পৌঁছে যাবে। অন্ততপক্ষে এর প্রভাব কার্যকর হবে।

তৃতীয়ত মুহাম্মদ (সা.) যাত্রার পূর্বে মদীনায় অবস্থানকালেই হারাম মাসসমূহের১৭৩ কথা স্মরণ করে বলেন : আমরা শুধুই আল্লাহর ঘর যিয়ারতে যাব।” তাই সফরের সময় বহনের জন্য আরবদের মধ্যে প্রচলিত একটি তরবারি ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র সঙ্গে না নেয়ার জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দিলেন। এ নির্দেশের ফলে অনেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো। কারণ,আরবের মুশরিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালাতো যে,তিনি কোন আরব রীতি মানেন না,তারা দেখল,রাসূলও অন্যদের মতো এ মাসগুলোতে যুদ্ধ হারাম মনে করেন ও এই প্রাচীন রীতিকে সমর্থন করেন।

ইসলামের মহান কাণ্ডারী জানতেন,এ পদ্ধতিতে মুসলমানরা সফলতা লাভ করলে তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত একটি লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে। তা ছাড়া জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত এ দল নিজ আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু ও সুহৃদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ পাবে। আর কুরাইশরা মক্কায় প্রবেশে মুসলমানদের বাধা দিলে সমগ্র আরবোপদ্বীপের গোত্রগুলোর কাছে অসম্মানিত হবে। কারণ আরবের সাধারণ নিরপেক্ষ গোত্রগুলোর আগত প্রতিনিধিরা দেখবে আল্লাহর ঘরের উদ্দেশে ফরয হজ্ব করতে আসা একদল নিরস্ত্র হাজীর সঙ্গে কুরাইশরা কিরূপ আচরণ করেছে;অথচ মসজিদুল হারামের ওপর সকল আরবের অধিকার রয়েছে এবং কুরাইশরা কেবল তার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে রয়েছে।

এর ফলে মুসলমানদের সত্যতার সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটবে এবং কুরাইশদের অবৈধ শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি তারা বুঝতে পারবে। ফলে কুরাইশরা ইসলামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে তাদেরকে সঙ্গী ও চুক্তিবদ্ধ করতে পারবে না। কারণ তারা সহস্র লোকের সামনে মুসলমানদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

মহানবী (সা.) বিষয়টির বিভিন্ন দিক চিন্তা করে উমরার জন্য যাত্রার নির্দেশ দিলেন। চৌদ্দ হাজার ১৭৪ ষোল১৭৫ হাজার অথবা আঠারো হাজার১৭৬ ,হজ্বযাত্রী যুল হুলাইফা’ নামক স্থানে ইহরাম বাঁধলেন। তাঁরা কুরবানীর জন্য সত্তরটি উট সঙ্গে নিলেন এবং উটগুলোকে কোরবানীর জন্য চিহ্নিত করে সবার কাছে নিজেদের সফরের উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন।

রাসূল (সা.) কয়েকজন সংবাদবাহককে পূর্বেই সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করলেন যাতে কোন শত্রু দেখলে তাঁর কাছে দ্রুত সংবাদ পৌঁছান।

‘আসফান’ থেকে রাসূলের প্রেরিত সংবাদবাহক সংবাদ নিয়ে এলেন :

“কুরাইশরা আপনাদের আগমন সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং তাদের সৈন্যদের প্রস্তুত করে লাত ও ওজ্জার১৭৭ শপথ করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যে,আপনাকে কোনক্রমেই মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না। কুরাইশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও ব্যক্তিরা মক্কার নিকটবর্তী যি তুয়া’ য় সমবেত হয়েছে এবং মুসলমানদের অগ্রযাত্রা রোধ করতে তাদের সাহসী যোদ্ধা খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে দু শ’ সৈন্যসহ আসফানের আট মাইল দূরের কারাউল গামীম’ -এ নিয়োজিত করেছে।১৭৮ তাদের উদ্দেশ্য মুসলমানদের গতিরোধ করা,এমনকি যদি এতে তাদের নিহতও হতে হয়।”

মহানবী (সা.) এ সংবাদ শুনে বললেন : কুরাইশদের জন্য আফসোস! যুদ্ধ তাদের শেষ করে দিয়েছে। হায়! যদি কুরাইশরা আরবের মূর্তিপূজক গোত্রগুলোর সঙ্গে আমাকে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ দিত! সেক্ষেত্রে ঐ গোত্রগুলো আমার ওপর বিজয়ী হলে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতো,আর আমি তাদের ওপর বিজয়ী হলে হয় তারা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিত,নতুবা তারা তাদের বিদ্যমান শক্তি নিয়ে আমার সাথে যুদ্ধ করত। আল্লাহর শপথ! একত্ববাদী এ ধর্মের প্রচারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। হয় এতে আল্লাহ্ আমাদের বিজয়ী করবেন,নতুবা তাঁর পথে প্রাণ বিসর্জন দেব।” অতঃপর একজন অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শককে ডেকে এমনভাবে কাফেলাকে নিয়ে যেতে বললেন যাতে খালিদের সেনাদলের মুখোমুখি না হতে হয়। আসলাম গোত্রের একজন দিশারী কাফেলা পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেছিলেন। তিনি এক দুর্গম উপত্যকা দিয়ে কাফেলাকে অতিক্রম করিয়ে হুদায়বিয়া’ য় পৌঁছলে মহানবী (সা.)-এর উট মাটিতে বসে পড়ল। মহানবী (সা.) বললেন : এ উট আল্লাহর নির্দেশে এখানে বসে পড়েছে। এখানেই আমাদের করণীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” অতঃপর সবাইকে বাহন হতে নেমে তাঁবু স্থাপনের নির্দেশ দিলেন।

সময় না গড়াতেই কুরাইশ অশ্বারোহী সেনারা রাসূল (সা.)-এর নতুন পথ সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁর অবস্থান গ্রহণের স্থানের কাছে চলে আসে। মহানবী (সা.) যাত্রা স্থগিত না করে অগ্রযাত্রার সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই কুরাইশ সৈন্যদের রক্ষণব্যূহ ভেদ করে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে তাদের হত্যা করে রক্তের ওপর দিয়ে পথ অতিক্রম করতে হতো। অথচ সবাই জানত রাসূল (সা.) উমরা ও কাবা ঘর যিয়ারত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসেন নি। তাই এ রকম কিছু ঘটলে মহানবীর ব্যক্তিত্ব ও শান্তিকামী চরিত্রের ভাবমর্যাদার ওপর আঘাত আসত। উপরন্তু আগত ঐ সৈন্যদের হত্যার মাধ্যমেই ঘটনার যবনিকাপাত ঘটতো না। কারণ সাথে সাথেই একের পর এক নতুন সেনাবাহিনী তাঁদের প্রতিরোধের জন্য আসত এবং তা অব্যাহত থাকত। অন্যদিকে মুসলমানরা তরবারি ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র সঙ্গে নেন নি। এ অবস্থায় যুদ্ধ করা কখনোই কল্যাণকর হতো না। তাই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান বাঞ্ছনীয় ছিল।

এ কারণেই বাহন হতে নামার পর মহানবী (সা.) তাঁর সঙ্গীদের উদ্দেশে বলেন : যদি আজ কুরাইশরা আমার কাছে এমন কিছু চায় যা তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় করে,তবে আমি অবশ্যই তা দেব এবং সমঝোতার পথকেই বেছে নেব। ১৭৯

সবাই রাসূল (সা.)-এর কথা শুনলেন এবং শত্রুদের কানেও তা পৌঁছল। তারা রাসূলের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নিল। তাই কয়েকজনকে তাঁর নিকট প্রেরণ করল তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার জন্য।

রাসূল (সা.) সকাশে কুরাইশ প্রতিনিধিদল

কুরাইশরা কয়েক দফায় রাসূলের নিকট বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রেরণ করে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইল।

সর্বপ্রথম বুদাইল খাযায়ী তার গোত্রের কয়েকজনকে নিয়ে রাসূলের কাছে এল। মহানবী (সা.) তাদের বললেন : আমি যুদ্ধের জন্য আসি নি;বরং আল্লাহর ঘর যিয়ারতে এসেছি।” প্রতিনিধিদল কুরাইশ নেতাদের নিকট ফিরে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলল। কিন্তু কুরাইশরা তাদের কথা সহজে বিশ্বাস করতে পারল না। তাই তারা বলল : আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে কোন অবস্থায়ই মক্কায় প্রবেশ করতে দেব না,এমনকি যদি সে উমরাও করতে আসে।”

দ্বিতীয় বার কুরাইশদের পক্ষ থেকে মুকরিজ’ নামের এক ব্যক্তি রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করল। সেও কুরাইশদের নিকট ফিরে গিয়ে বুদাইলের অনুরূপ প্রতিবেদন দিল। কিন্তু কুরাইশরা তাদের দু জনের কথাই বিশ্বাস করল না। তৃতীয় বার আরবের তীরন্দাজ বাহিনীর নেতা হুলাইস ইবনে আলকামাকে দ্বন্দ্ব-সংশয় অবসানের লক্ষ্যে রাসূলের নিকট পাঠালো।১৮০ তাকে দূর থেকে দেখেই রাসূল (সা.) মন্তব্য করলেন :

“এই ব্যক্তি আল্লাহর পরিচয় লাভকারী পবিত্র এক গোত্রের মানুষ। তার সামনে কুরবানীর জন্য আনীত উটগুলো ছেড়ে দাও যাতে সে বুঝতে পারে আমরা যুদ্ধ করতে আসি নি। উমরা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য নেই।” এই শীর্ণ সত্তরটি উটের উপর হুলাইসের দৃষ্টি পড়লে সে দেখল সেগুলো খাদ্যাভাবে শুকিয়ে গেছে এবং একে অপরের লোম ছিঁড়ে খাচ্ছে। সে মহানবীর সঙ্গে দেখা না করেই যত দ্রুত সম্ভব কুরাইশদের নিকট ফিরে গিয়ে বলল : আমরা তোমাদের সাথে এ শর্তে কখনোই চুক্তিবদ্ধ হই নি যে,আল্লাহর ঘরের যিয়ারতকারীদের বাধা দেবে। মুহাম্মদ যিয়ারত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন নি। যে খোদার হাতে আমার জীবন,তাঁর শপথ! যদি মুহাম্মদকে প্রবেশে বাধা দাও,তা হলে আমি আমার গোত্রের সকল লোক (যাদের অধিকাংশই তীরন্দাজ) নিয়ে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব।”

হুলাইসের কথায় কুরাইশরা ভীত হলো এবং চিন্তা করে তাকে বলল : শান্ত হও। আমরা এমন পথ অবলম্বন করব,যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও।”

অবশেষে তারা বুদ্ধিমান,সমঝদার ও তাদের কল্যাণকামী উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফীকে মহানবী (সা.)-এর নিকট প্রেরণ করল। সে প্রথমে কুরাইশদের প্রতিনিধি হিসেবে যেতে রাজী হয় নি। কারণ সে লক্ষ্য করেছে,পূর্ববর্তী প্রতিনিধিদের তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে ও তাদের বিশ্বাস না করে মানহানি ঘটিয়েছে। কিন্তু কুরাইশরা তাকে আশ্বস্ত করল এই বলে যে,তাদের নিকট তার বিশেষ সম্মান রয়েছে এবং তাকে তারা বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ দেবে না।

উরওয়া ইবনে মাসউদ রাসূল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল : বিভিন্ন দলকে নিজের চারদিকে সমবেত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে,নিজ জন্মভূমি (মক্কা) আক্রমণ করবে? কিন্তু জেনে রাখ,কুরাইশরা তাদের সমগ্র শক্তি নিয়ে তোমার মোকাবেলা করবে এবং কোন অবস্থায়ই তোমাকে মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি,তোমার চারপাশে সমবেত এরা তোমাকে একা ফেলে পালিয়ে না যায়!

তার এ কথা বলর সময় হযরত আবু বকর মহানবীর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি উরওয়ার উদ্দেশে বললেন : তুমি ভুল করছ। মহানবী (সা.)-এর সঙ্গীরা কখনোই তাঁকে ছেড়ে যাবে না।” উরওয়া মুসলমানদের মানসিক শক্তি দুর্বল করার জন্য কূটনৈতিক চাল চালছিল। সে কথা বলার সময় মহানবীকে অসম্মান করার লক্ষ্যে বারবার তাঁর শ্মশ্রুতে হাত দিচ্ছিল। অন্যদিকে মুগীরা ইবনে শু বা প্রতিবারই তার হাতে আঘাত করে সরিয়ে দিচ্ছিলেন ও বলছিলেন : সম্মান ও আদব রক্ষা করে আচরণ কর। মহানবীর সাথে বেয়াদবী করো না।” উরওয়া ইবনে মাসউদ রাসূলকে প্রশ্ন করল : এই ব্যক্তিটি কে? (সম্ভবত রাসূলের চারদিকে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন,তাঁরা মুখ ঢেকে রেখেছিলেন)। মহানবী (সা.) বললেন : সে তোমার ভ্রাতুষ্পুত্র শু বার পুত্র মুগীরা।” উরওয়া রাগান্বিত হয়ে মুগীরাকে বলল : হে চালবাজ প্রতারক! আমি গতকাল তোর সম্মান কিনেছি (রক্ষা করেছি)। তুই ইসলাম গ্রহণের পর সাকীফ গোত্রের তের জনকে হত্যা করেছিস। আমি সাকীফ গোত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করা থেকে রক্ষা পেতে সবার রক্তপণ শোধ করেছি।” মহানবী তার কথায় ছেদ টেনে তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন যেমনটি পূর্ববর্তী প্রতিনিধিদের নিকট দিয়েছিলেন। অতঃপর উরওয়ার এতক্ষণের কথার দাঁতভাঙা জবাব দিতে উঠে ওযূ করতে গেলেন। উরওয়া লক্ষ্য করল মহানবীর ওযূর পানি মাটিতে পড়ার পূর্বেই কাড়াকাড়ি করে মুসলমানরা তা নিয়ে নিচ্ছেন। উরওয়া সেখান থেকে উঠে কুরাইশদের সমাবেশস্থল যি তুয়া’ র দিকে যাত্রা করল। কুরাইশদের বৈঠকে প্রবেশ করে রাসূলের আসার উদ্দেশ্য ও সাক্ষাতের বিবরণ পেশ করল। অতঃপর বলল : আমি বড় বড় রাজা-বাদশা দেখেছি। ক্ষমতাবান সম্রাট,যেমন পারস্য ও রোম সম্রাট,আবিসিনিয়ার বাদশাহ,সবাইকে দেখেছি। কিন্তু নিজ অনুসারী ও ভক্তদের মাঝে মুহাম্মদের মতো সম্মানের অধিকারী কাউকে দেখি নি। আমি দেখেছি তাঁর অনুসারীরা তাঁর ওযূর পানি মাটিতে পরার পূর্বেই বরকত লাভের উদ্দেশ্যে তা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে। যদি তাঁর কোন চুল বা লোমও মাটিতে পড়ে,তারা তা ত্বরিৎগতিতে তুলে নিচ্ছে। সুতরাং তার বিপজ্জনক মর্যাদাকর অবস্থান সম্পর্কে কুরাইশদের চিন্তা করা উচিত। ১৮১

মহানবী (সা.)-এর প্রতিনিধি প্রেরণ

বিশ্ব মুসলিমের নেতা মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে কুরাইশ প্রতিনিধি দলগুলোর বৈঠক সফলতা লাভ করে নি। তাই স্বাভাবিকভাবে মহানবীর ভাববার সম্ভাবনা ছিল,কুরাইশদের প্রেরিত প্রতিনিধি সঠিকভাবে তথ্য পৌঁছাতে সক্ষম হয় নি বা কেউ কেউ সঠিক তথ্য সেখানে পৌঁছাক,তা চায় নি কিংবা মিথ্যুক বলে অভিযুক্ত হওয়ার ভয়ে স্পষ্টভাবে বক্তব্য উপস্থাপন থেকে বিরত থেকেছে। এদিক চিন্তা করে মহানবী সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি পৌত্তলিক দলের নেতাদের কাছে প্রেরণ করে তাঁর উদ্দেশ্য যে উমরা করা ছাড়া অন্য কিছু নয়,তা জানিয়ে দেবেন।

তিনি খাযায়া গোত্রের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে এ কাজের জন্য মনোনীত করলেন। তাঁর নাম খিরাশ ইবনে উমাইয়্যা। মহানবী (সা.) তাঁকে একটি উট দিয়ে কুরাইশদের নিকট যেতে বললেন। তিনি কুরাইশদের নিকট গিয়ে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেন। কিন্তু কুরাইশরা কোন দূতের প্রতি সম্মানজনক আচরণের বিশ্বজনীন নীতি অনুসরণের বিপরীতে তাঁর উটটিকে হত্যা করল ও তাঁকেও হত্যা করতে উদ্যত হলো। কিন্তু তীরন্দাজ আরবরা কুরাইশদের এ কাজ থেকে নিবৃত্ত করল। এ কাজের মাধ্যমে কুরাইশরা প্রমাণ করল,তারা শান্তি,সন্ধি ও সমঝোতার পথ অবলম্বন করতে রাজী নয়;বরং যুদ্ধ বাঁধানোর চিন্তায় রয়েছে।

এ ঘটনার পরপরই কুরাইশদের প্রশিক্ষিত ৫০ যুবক মুসলমানদের অবস্থানের নিকট মহড়া দেয়ার দায়িত্ব পেল। সে সাথে সুযোগ পেলে মুসলমানদের সম্পদ লুট করে তাঁদের কয়েকজনকে বন্দী করে কুরাইশদের নিকট নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের এ পরিকল্পনা ব্যর্থ তো হলোই;বরং তারা সবাই মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়ে রাসূলের নিকট আনীত হলো। বন্দী হওয়ার পূর্বে তারা মুসলমানদের উদ্দেশে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করা সত্বেও মহানবী (সা.) তাঁর শান্তিকামী মনোভাব প্রমাণ করতে তাদের সবাইকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং বুঝিয়ে দিলেন,তিনি যুদ্ধ করতে আসেন নি।১৮২

মহানবী (সা.) দ্বিতীয় বারের মতো প্রতিনিধি প্রেরণ করলেন। এতকিছু সত্বেও তিনি সন্ধি ও সমঝোতার বিষয়ে নিরাশ হলেন না এবং সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে এবং কুরাইশ নেতাদের মতের পরিবর্তন ঘটাতে চাইলেন। তিনি এমন এক ব্যক্তিকে মনোনীত করলেন কুরাইশদের রক্তে যার হাত রঞ্জিত হয় নি। সুতরাং হযরত আলী,যুবাইরসহ ইসলামের যে সব মহাসৈনিক আরব ও কুরাইশদের মহাবীরদের মুখোমুখি হয়ে তাদের অনেককে হত্যা করেছেন,তাঁদেরকে মনোনীত করা সমীচীন মনে করলেন না। এজন্য তিনি সর্বপ্রথম হযরত উমর ইবনে খাত্তাবের কথা চিন্তা করলেন। কারণ তিনি সেদিন পর্যন্ত কোন কুরাইশের এক ফোঁটা রক্তও ঝরান নি। কিন্তু হযরত উমর এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে অজুহাত দেখিয়ে বললেন : আমি আমার জীবনের বিষয়ে কুরাইশদের হতে শঙ্কিত এবং মক্কায় আমার কোন নিকটাত্মীয়ও নেই যে আমার পক্ষাবলম্বন করে আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচাবে। তাই আমি এমন এক ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করছি,যিনি এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম। তিনি হলেন উসমান ইবনে আফ্ফান। যেহেতু তিনি উমাইয়্যা বংশোদ্ভূত এবং আবু সুফিয়ানের নিকটাত্মীয়,সেহেতু তিনি আপনার বাণী কুরাইশদের নিকট পৌঁছানোর অধিক উপযুক্ত।” হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এ কাজের দায়িত্ব পেলেন এবং মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন। তিনি পথিমধ্যে আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আসের সাক্ষাৎ পেলেন এবং তার আশ্রয়ে মক্কায় প্রবেশ করলেন। আবান প্রতিশ্রুতি দিল,কেউ তাঁর ক্ষতি করবে না এবং সে তাঁকে নিরাপদে কুরাইশদের নিকট নিয়ে যাবে যাতে তিনি রাসূলের বাণী পৌঁছাতে পারেন। কিন্তু কুরাইশরা রাসূলের বাণী শুনে বলল : আমরা শপথ করেছি মুহাম্মদকে জোরপূর্বক মক্কায় প্রবেশ করতে দেব না। এ শপথের ফলে সংলাপের মাধ্যমে তাকে মক্কায় প্রবেশ করতে দেয়ার পথ রুদ্ধ হয়েছে।” অতঃপর তারা হযরত উসমানকে কাবা ঘর তাওয়াফের অনুমতি দিল। কিন্তু তিনি রাসূলের সম্মানে তা থেকে বিরত থাকলেন। কুরাইশরা আরো যা করল,তা হলো হযরত উসমানকে ফিরে যেতে দিল না। সম্ভবত তারা চাইল তাঁর যাত্রা বিলম্বিত করে কোন উপায় বের করতে।১৮৩

বারতম পত্র

২২ জিলক্বদ ১৩২৯ হিঃ

কোরআনের আয়াত হতে উপস্থাপিত প্রমাণসমূহ

আলহামদুলিল্লাহ্! আপনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা কোরআনের জ্ঞানে সম্যক জ্ঞাত এবং এর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিক সম্পর্কে সচেতন। রাসূলের পবিত্র বংশধরগণ সম্পর্কে কোরআনে যেরূপ স্পষ্ট আয়াতসমূহ রয়েছে অন্য কারো সম্পর্কে সেরূপ স্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কি?

কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহে যেরূপ তাঁদের বিষয়ে বলা হয়েছে যে,পাপ ও পঙ্কিলতা হতে তাঁরা সম্পূর্ণ পবিত্র সেরূপ অন্য কারো বিষয়ে বলা হয়েছে কি?৫০

আয়াতে তাতহীর অন্য কারো বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে কি? কোরআন তাঁদের ব্যতীত অন্য কারো প্রতি ভালবাসা পোষণকে ফরয ঘোষণা করেছে কি?৫১

হযরত জিবরাঈল (আ.) মোবাহিলার আয়াতটি তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো জন্য এনেছেন কি? অবশ্যই না,বরং তাঁদের ব্যাপারেই বলেছেন,

বলুন,এসো আমরা আমাদের সন্তানদের,নারীদের ও নিজ সত্তাদেরকে আহবান করি এবং আল্লাহকে বলি মিথ্যাবাদীদের ধ্বংস করুন। (সূরা আলে ইমরান : ৬১)

هل أتى هل أتى بِمدح سواهم لا و مولى بذكرهم حلّاها

সূরা হাল আতা (সূরা দাহর) তাঁদের ব্যতীত অন্য কারো প্রশংসায় অবতীর্ণ হয় নি,বরং শুধু তাঁদের লক্ষ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে।

আহলে বাইত কি আল্লাহর রজ্জু নন যেখানে কোরআনে বলা হয়েছে-

) و اعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرّقوا(

তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না৫২

তাঁরা কি কোরআনে বর্ণিত সত্যপন্থী নন যেখানে আল্লাহ্ বলছেন,

 ( وكونوا مع الصادقين ) এবং সত্যপন্থীদের সঙ্গে থাক। (সূরা তওবা : ১১৯)

সত্যপন্থী বলতে আমাদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসানুসারে নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত। ইবনে হাজার তাঁর আসসাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়ে ৯০ পৃষ্ঠায় ৫ নং আয়াতের তাফসীরে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আমি ৬ষ্ঠ পত্রে উল্লেখ করেছিলাম।

আল্লাহ্ কি তাঁদেরকে সিরাতুল্লাহ্ বলে উল্লেখ করেন নি-

) و إنّ هذا صراطي مستقيما فاتبعوه(

নিশ্চয়ই এটি আমার সরল সঠিক পথ, এ পথের অনুসরণ কর। (সূরা আনআম : ১৫৩)

অন্যরা আল্লাহর পথ নন। তাই বলেছেন,

) ولا تتبعوا السبل فتفرق بكم عن سبيله(

বিচ্ছিন্নতা ও বক্রতার পথসমূহ অবলম্বন কর না, তাহলে আল্লাহর পথ হতে দূরে সরে যাবে ৫৩

এবং কোরআনে বর্ণিত উলিল আমর কি তাঁরাই নন যেখানে বলা হয়েছে-

) يا ايها الذين آمنوا اطيعوا الله و اطيعوا الرسول و اولي الامر منكم(

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যকার দায়িত্বশীলদের (উলিল আমরের) আনুগত্য কর   ৫৪

তাঁরাই কি কোরআনে বর্ণিত আহলুয যিকর নন-

) فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون(

যদি তোমরা না জান তাহলে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ৫৫

সূরা নিসার ১১৫ নং আয়াতে যে মুমিনদের বিবরণ দেয়া হয়েছে তাঁরাই কি সেই মুমিনীন নন? বলা হয়েছে- যে কেউ সত্য প্রকাশিত হবার পর নবীর বিরুদ্ধাচারণ করবে ও মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ গ্রহণ করবে আমরা তাদেরকে সেই পথেই পরিচালিত করবো এবং অবশেষে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো। ৫৬

তাঁরাই কি সেই ব্যক্তিবর্গ নন যারা আল্লাহর দিকে মানুষদের হেদায়েত করেন। যেমন সূরা রাদের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

) انما انت منذر و لكل قوم هاد(

নিশ্চয়ই আপনি কেবল ভয় প্রদর্শনকারী এবং প্রত্যেক জাতি ও গোত্রের জন্যই হেদায়েতকারী রয়েছে। ৫৭

এরাই কি সেই ব্যক্তিবর্গ নন যাঁদেরকে মহান আল্লাহ্ নিয়ামত দান করেছেন?

সূরা ফাতিহা যার অপর নাম হলো সাবয়ুল মাছানী এবং কোরআনে সেই সূরাতে আমাদের সরল সঠিক পথে ও যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন তাদের পথে পরিচালিত করুন বলতে কাদের পথকে বুঝানো হয়েছে?৫৮

সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে,সে কিয়ামতের দিন তাঁদের সঙ্গে থাকবে যাঁদের ওপর আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন,(তাঁরা হলেন) নবী,সিদ্দীক,শহীদ ও সৎ কর্মশীল বান্দাগণ।

নিঃসন্দেহে আহলে বাইতের ইমামগণ সিদ্দীক,শহীদ ও সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত। তবে কি আল্লাহ্ সর্বসাধারণের সার্বিক নেতা হিসেবে তাঁদেরকেই মনোনীত করেন নি? নবীর পরবর্তীতে মুসলমানদের নেতৃত্ব দানের ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব শুধু তাঁদের জন্যই নির্ধারিত করেন নি?

যদি বিষয়টি না জানেন তবে দেখুন-

নিশ্চয়ই তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) হলেন শুধু আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং যারা ঈমান আনে,নামায কায়েম করে এবং রুকুরত অবস্থায় যাকাত দেয়। যারা আল্লাহ্,তাঁর রাসূল ও ঈমানদারদের অভিভাবকত্বকে মেনে নেয় তারাই জয়ী হবে,কারণ আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।৫৯  

মহান আল্লাহ্ ক্ষমা ও মাগফেরাতের শর্ত হিসেবে তওবা,ঈমান আনা,সৎ কর্ম করা ও আহলে বাইতের ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন যেমনটি সূরা ত্বহার ৮২ নং আয়াতে এসেছে-

আমি আমার ক্ষমাকে তওবার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন,ঈমান আনয়ন,সৎ কর্ম সম্পাদন এবং হেদায়েত প্রাপ্তির৬০ মধ্যেই রেখেছি (অর্থাৎ তারাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে যারা তওবা করেছে,ঈমান আনয়ন করেছে,সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে)।

তাহলে তাঁদের বেলায়েত কি একটি আমানত নয় যা সূরা আহযাবের ৭২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

আমরা আমানতকে আসমান,যমীন ও পর্বতের নিকট পেশ করেছিলাম কিন্তু তারা তা গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল এবং তারা বোঝা বহনের ভয় করছিল কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেছিল। কারণ মানুষ (নিজের প্রতি) অত্যাচারী এবং অজ্ঞ।৬১  

তাঁদের (আহলে বাইতের) বেলায়েত ও অভিভাবকত্বকেই আল্লাহ্ কোরআনেسِلْمٌ (সিল্ম) বলে উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে প্রবেশের জন্য সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, হে ঈমানদারগণ,সকলেই সমবেতভাবে সিল্ম বা শান্তি ও মুক্তির মধ্যে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। ৬২

তাঁদের বেলায়েত বা অভিভাবকত্বকেই কি মহান আল্লাহ্ কোরআনেنعيم (নাঈম) বলে উল্লেখ করেন নি যে বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে( ثم لتسئلن يومئذ عن النعيم )৬৩

রাসূল (সা.) কি তাঁদের বেলায়েতকে ঘোষণার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন নি? এবং এ বিষয়ে রাসূলকে প্রদত্ত নির্দেশ অনেকটা রাসূলকে ভীতি প্রদর্শনের মত ছিল,নয় কি? যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন,

হে রাসূল!যা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গরূপে পৌঁছান। যদি তা না করেন আপনি আপনার রেসালতের দায়িত্বই পালন করেন নি এবং আল্লাহ্ আপনাকে মানুষ হতে (সম্ভাব্য বিপদ হতে) রক্ষা করবেন। ৬৪

রাসূল (সা.) গাদীর দিবসে এ বাণী প্রচারের জন্য কি ব্যাপক পদক্ষেপ নেন নি? পরিষ্কার ভাষায় পূর্ণাঙ্গরূপে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেন নি? মহান আল্লাহ্ তখনই সূরা মায়েদার এ আয়াত নাযিল করেন- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের মনোনীত দীন হিসেবে গ্রহণ করলাম। ৬৫

তাহলে কি আপনি জানেন না মহান আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তি যে তাঁদের (আহলে বাইতের) বেলায়েত ও নেতৃত্বকে সরাসরি অস্বীকার করেছিল এবং নবীর সঙ্গে এ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল তার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছেন? ঐ ব্যক্তি চিৎকার করে বলেছিল, হে আল্লাহ্! যদি এটি সত্য ও আপনার পক্ষ হতে হয়ে থাকে,তবে আসমান হতে আমার ওপর পাথর বর্ষণ করুন এবং আজাব নাযিল করুন। আল্লাহ্পাক ঐ ব্যক্তিকে হস্তীবাহিনীর ন্যায় ধ্বংস করেন। তখনই এক ব্যক্তি চাইল সেই আজাব সংঘটিত হোক যা অবধারিত কাফিরদের জন্য এবং যার প্রতিরোধকারী কেউ নেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।৬৬ (*১৪)

অতিশীঘ্রই পুনরুত্থান দিবসে আহলে বাইতের বেলায়েত ও নেতৃত্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে যেমনটি সূরা সাফ্ফাতের ২৪ নং আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে( وقفوهم إنّهم مسئولون )’ এবং তাদেরকে থামাও,তারা জিজ্ঞাসিত হবে।৬৭ এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় কারণ তাঁদের নেতৃত্ব ও বেলায়েত এমন একটি বিষয় যা ঘোষণার জন্য সকল নবীর আগমন ঘটেছে এবং তাঁরা বিশ্বে আল্লাহর সর্বোত্তম নিদর্শন। নবীদের স্থলাভিষিক্ত ওলী ও ঐশী প্রতিনিধিগণ মানুষের কাছে এ সত্যটি প্রকাশ করে গিয়েছেন,যেমন সূরা যুখরুফের ৪৫ নং আয়াতে এসেছে-

) وأسأل من أرسلنا من قبلك من رسلنا(

তোমার পূর্বে আমাদের রাসূলদের মধ্য থেকে যাদের প্রেরণ করেছিলাম তাদের নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন কর।৬৮

আহলে বাইত সম্পর্কে এ প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্পাক আমি কি তোমাদের প্রভু নই -এর প্রতিশ্রুতি থেকেই গ্রহণ করেছেন যা সূরা আ রাফের ১৭২ নং আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে।(*১৫) আয়াতটি হলো : আল্লাহ্ বনি আদম হতে তার জন্মের পূর্বে এ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন (তার পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বের করে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন) যে,আমি কি তোমাদের প্রভু নই? তারা বলল,হ্যাঁ। এ বিষয় আহলে সুন্নাহর হাদীসসমূহেও উল্লিখিত হয়েছে।

এবং আদম তাঁর স্রষ্টা হতে কয়েকটি বাক্য প্রাপ্ত হলেন,তার মাধ্যমে ক্ষমা চাইলেন এবং আল্লাহ্ তাঁর তওবাকে গ্রহণ করলেন। ৬৯

তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেছেন, আল্লাহ্ তাদের (এ উম্মতকে) আজাব দান করবেন না যখন তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান। ৭০

পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্য তাঁরা নিরাপত্তাস্থল এবং আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচার মাধ্যম। তাঁরাই যে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্যদের হিংসার পাত্র তা সূরা নিসার ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষকে (নবী ও তার পরিবারবর্গকে) আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামত হতে যা দান করেছেন তারা তার প্রতি হিংসা করে। ৭১

তাঁদের বিষয়েই আল্লাহ্ বলেছেন, জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ বলে : আমরা ঈমান এনেছি। ৭২

আমাদের জানা উচিত আ রাফের ব্যক্তিবর্গ তাঁরাই। এজন্য আল্লাহ্পাক বলেছেন, এবং আ রাফে একদল ব্যক্তি রয়েছেন যাদের চেহারা দেখে সবাই চিনবে। ৭৩

তাঁরাই আল্লাহ্ বর্ণিত সত্যবাদী ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গ। কোরআন বলেছে, মুমিনদের মধ্যে একদল লোক রয়েছে তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পালন করেছে,তাদের একদল দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে (শহীদ হয়েছে) এবং অপর দল অপেক্ষমান রয়েছে (তাদের সাথে মিলিত হবার),তারা তাদের সংকল্প কখনোই পরিবর্তন করে নি। ৭৪

তাঁদেরকেই আল্লাহ্ তাঁর গুণকীর্তনকারী বলে বর্ণনা করেছেন- আল্লাহ্ যে সকল গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন,সেখানে (একদল লোক) সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এমন লোকেরা,যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে,নামায কায়েম ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। ৭৫

তাদের ঘরসমূহ হলো সেই ঘরসমূহ যার সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেছেন, আল্লাহ্ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং যেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন। ৭৬

তাঁদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ্ সূরা নূরের ৩৫ আয়াতে বলেছেন, তাদের উদাহরণ হলো কুলঙ্গি এবং তাদের অস্তিত্ব আমারই নূরের অস্তিত্ব।৭৭ অথচ আল্লাহর জন্য আসমান ও জমীনে সর্বোত্তম উদাহরণ বিদ্যমান এবং তিনি ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাবান।

তাঁরা আল্লাহ্ বর্ণিত অগ্রবর্তী নৈকট্যপ্রাপ্ত দল যেমনটি এ আয়াতে বলা হয়েছে-

( السّابقون السّابقون أولَائك المقرّبون)

অর্থাৎ অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই,তারাই নৈকট্যশীল।৭৮

এবং সত্যবাদী,শহীদ,সাক্ষ্য প্রদানকারী এবং সৎ কর্মশীল বলতে তাঁদেরই বোঝানো হয়েছে।৭৯

আহলে বাইত এবং তাঁদের ইমামগণ সম্পর্কেই আল্লাহ্পাক বলেছেন,

( وممن خلقنا أمة يهدون بالْحقّ و به يعدلون)

আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা সত্যের দিকে মানুষকে হেদায়েত করে (পথ দেখায়) এবং সে অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে। ৮০

আহলে বাইতের অনুসারী এবং বিরোধী ও শত্রুদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে-

( لا يستوي أصحاب النّار و أصحاب الْجَنَّة أصحاب الْجَنَّة هم الفائزون)

জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসীগণ সমান হতে পারে না। জান্নাতের অধিবাসীরাই সফলকাম।৮১

তাঁদের পক্ষের ও বিপক্ষের দল সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন,

( أم نجعل الّذين آمنوا و عملوا الصّالِحات كالمفسدين في الأرض أم نجعل المتّقين كالفجّار)

আমি কি বিশ্বাসী ও সৎ কর্মশীলদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাফেরদের সমতুল্য করে দেব,না খোদাভীরুদেরকে পাপাচারীদের সমান করে দেব? ৮২  

এই দু দল সম্পর্কে অন্যত্র বলেছেন,

( أم حسب الّذين اجترحوا السيّئات أن نجعلهم كالذين آمنوا و عملوا الصّالِحات سواء محياهم و مَماتُهم ساء ما يحكمون)

যারা দুষ্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে ও তাদের জীবন ও মৃত্যু কি সমান হবে? ৮৩

আহলে বাইত ও তাঁদের অনুসারীদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে-

( إنّ الّذين آمنوا و عملوا الصّالِحات أولَائك هم خيرُ البريّة)

যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে তারাই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।৮৪

আহলে বাইত ও তাঁদের শত্রুদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে-

এই দু বাদী-বিবাদী,তারা তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বিতর্ক করে। অতএব,যারা কাফির তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।৮৫

এবং আহলে বাইত ও তাঁদের শত্রুদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে- মুমিন কি কখনো ফাসেকের মত হতে পারে? তারা সমান নয়। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে তাদের বাসস্থান হলো চিরস্থায়ী জান্নাত তাদের সৎ কর্মের বিনিময়স্বরূপ আর যারা গুনাহ করেছে তারা তাদের বাসস্থানকে জাহান্নামের মধ্যে প্রস্তুত করেছে। যখনই তারা চাইবে তা হতে বের হতে,তাদেরকে জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেয়া হবে ও বলা হবে,যে জাহান্নামকে অস্বীকার করতে তার স্বাদ আস্বাদন কর।৮৬

অন্যত্র ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা হাজীদের পানি পান করানো ও কাবা শরীফের খাদেম হওয়ার কারণে অহংকার ও গর্ব পোষণ করতো তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লোকের সমান মনে কর যে ঈমান রাখে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে? এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়,আর আল্লাহ্ জালেম লোকদের হেদায়েত করেন না। ৮৭

তেমনিভাবে আল্লাহ্পাক আহলে বাইতের বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় সফলতার কথা কোরআনে বর্ণনা করেছেন-

( و من النّاس من يشري نفسه ابتغاء مرضات الله و الله رءوف بالعباد)

এবং মানুষের মধ্যে একদল লোক আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিনিময়ে নিজেদের জীবনকে বিক্রয় করে এবং আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।৮৮

অন্যত্র বলেছেন, আল্লাহ্ মুমিনদের জীবন ও সম্পদকে বেহেশতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে,হত্যা করে ও নিহত হয়। এ প্রতিশ্রুতি সত্য ও অবশ্যম্ভাবী যা তাওরাত,ইঞ্জিল ও কোরআনে এসেছে- এবং আল্লাহ্ হতে কে অধিক ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী?

সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর যা তোমরা আল্লাহর সঙ্গে করেছ। তারা (এ মুমিনগণ) তওবাকারী,ইবাদতকারী,কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী,দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদকারী,রুকু ও সিজদাকারী,সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকারী,আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। (সূরা তওবা : ১১১ ও ১১২)

যারা স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে (দান করে) রাত্রে ও দিনে,গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্য তাদের সওয়াব তাদের পালনকর্তার নিকট সংরক্ষিত। তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা

চিন্তিতও হবে না। (বাকারা : ২৭৪)৮৯

তাঁরাই সত্যকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ্ তার সাক্ষ্য প্রদান করে বলেছেন, যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে ও সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে,তারাই তো খোদাভীরু ও মুত্তাকী (পরহেজগার)।৯০

সুতরাং তাঁরাই রাসূল (সা.)-এর গোত্রের সর্বোচ্চ নিষ্ঠাবান এবং তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় যাঁদের মহান আল্লাহ্ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করে বলেছেন,

( و أنذر عشيرتك الأقربين )“ এবং তোমার নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শন কর। এবং তাঁরাই কোরআনে বর্ণিত উলুল আরহাম বা নিকটাত্মীয় যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আনফালের ৭৫ নং আয়াতে( أولوا الأرحام بعضهم أولى ببعض ) অর্থাৎ বস্তুত যারা নিকটাত্মীয় তারা পরস্পর অধিক হক্বদার এবং এদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে তাঁদের মর্যাদা কিয়ামতের দিন বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং নবীর সঙ্গে মিলিত হয়ে জান্নাতুন নাঈমে অবস্থান করবেন। এর প্রমাণ কোরআনের এ আয়াত যাতে বলা হয়েছে-

যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের পরিবার ও বংশের যারা তাদের (ঈমানের ক্ষেত্রে) অনুসরণ করেছে সেই বংশধরদেরও আমি তাদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল হতে কিছুই কম করা হবে না। ৯১

তাঁরাই সেই ব্যক্তিবর্গ যাঁদের অধিকারকে আল্লাহ্ আদায় করতে বলেছেন-

وآت ذا القربىحقّه অর্থাৎ নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায় কর। তাঁরাই খুমসের অধিকারী যা আদায় না করলে তাঁদের হক্ব আমাদের ওপর কিয়ামতের দিনও থেকে যাবে- জেনে রাখো,তোমরা যা কিছু অর্জন কর,তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং তাঁর নিকটাত্মীয়,ইয়াতীম,অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের.। (সূরা আনফাল : ৪১)

তাঁরা ফাই সম্পদেরও অধিকারী কারণ আল্লাহ্ বলেছেন, যা মহান আল্লাহ্ জনপদবাসীদের কাছ থেকে রাসূলকে দিয়েছেন তা আল্লাহর,রাসূলের,তাঁর আত্মীয়-স্বজনের,ইয়াতিমদের,অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের। (সূরা হাশর : ৭)

নবীর আহলে বাইতকে সম্বোধন করে আল্লাহ্ বলেছেন,

( إنّما يريد الله ليذهب عنكم الرّجس أهل البيت و يطهّركم تطهيرا)

হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চান তোমাদের হতে পাপ পঙ্কিলতা দূরীভূত করতে ও সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব : ৩৩)

তাঁদেরকেই আল্লাহ্ আলে ইয়াসিন বলে সম্বোধন করে সালাম দিয়েছেন-و سلام على الياسين অর্থাৎ আলে ইয়াসিনের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।৯২ (সূরা সাফ্ফাত : ১৩০)

তাঁরাই রাসূলের বংশধর যাঁদের ওপর দরূদ পড়াকে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের জন্য নামাযে ওয়াজিব করেছেন-

﴿ إنّ الله و ملائكته يصلّون على النَّبِيّ يا أيّها الّذين آمنوا صلّوا عليه و سلّموا تسليما

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরূদ পড়েন,হে ঈমানদারগণ! তোমরাও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ কর।৯৩

সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার ওপর সালাম কিরূপে পাঠ করতে হবে জানি কিন্তু দরূদ কিরূপে পড়ব? রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ অর্থাৎ হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ কর।

এ হাদীস হতে বুঝা যায় আহলে বাইতের ওপর দরূদ পাঠও এই আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণেই আলেমগণ এই আয়াতকে আহলে বাইতের শানে বর্ণিত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর আসসাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়েও তাই করেছেন।৯৪

طوبى لهم তাদের জন্যই সুসংবাদ ও তাদের জন্যই চিরস্থায়ী বেহেশত এবং তার দ্বারগুলো উন্মুক্ত রয়েছে।৯৫

আরব কবি বলেছেন,

من يباريهم و في الشّمس معنى؟ مجهد متعب لمن باراها

কে পারে তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অর্থাৎ সূর্যের সাথে যে প্রতিযোগিতা করে তার ওপরই ক্লান্ত ও শ্রান্তের অর্থ বর্তায় (অর্থাৎ সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে)।

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তাঁরা মনোনীত,আল্লাহর অনুমতিক্রমে পুণ্যকর্মে তাঁরা অন্যদের হতে অগ্রগামী। তাঁরা আল্লাহর কিতাবের উত্তরাধিকারী এবং তাঁদের সম্পর্কেই আল্লাহ্ বলেছেন,

অতঃপর কিতাবকে (আল কোরআন) তাঁর বান্দাদের মধ্যে মনোনীত ব্যক্তিদের হাতে সমর্পণ করলাম। আর বান্দাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে এবং তারা ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নেয় নি।

তাদের (বান্দাগণের) অনেকেই মধ্যপন্থী ও ন্যায়পরায়ণ এবং তারা আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী। যেমন কোরআনে এসেছে-

এবং তাদের অনেকেই পুণ্যকর্মে অগ্রগামী হয়েছে এবং তারাই ইমাম। এটি একটি বড় নিয়ামত।৯৬

আহলে বাইতের ফজীলত বর্ণনা করে যে সকল আয়াত এসেছে তা বর্ণনার জন্য এ পর্যন্তই যথেষ্ট বলে মনে করেছি। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি হযরত আলী (আ.)-এর শানে কোরআনে ৩০০ আয়াত বর্ণিত হয়েছে।৯৭

অন্য আরেকজন তাফসীরকারক বলেছেন, কোরআনের এক চতুর্থাংশ আয়াত আহলে বাইতের শানে বর্ণিত হয়েছে এবং এটি আশ্চর্যের কোন বিষয় নয়,কারণ আহলে বাইত ও কোরআন একই সত্তার দুই অংশ।

এখন পর্যন্ত যে সমস্ত স্পষ্ট আয়াত আপনার নিকট বর্ণনা করলাম তা কোরআনের মূল ও ভিত্তি( هُنَّ أُمُّ الْكِتَاب ) । এ আয়াতগুলো খুব সহজে গ্রহণ করুন (মেনে নিন)। আর ভক্তি ও উদারতার সাথে সূক্ষ্মভাবে এসব আয়াত অধ্যয়ন করুন এবং এসব আয়াত সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান মহান আল্লাহর বাণী হতে গ্রহণ করুন যে সম্পর্কে অন্য কোন জ্ঞানী ব্যক্তি আপনাকে অবগত করবে না।

ওয়াসসালাম

বারতম পত্র

২২ জিলক্বদ ১৩২৯ হিঃ

কোরআনের আয়াত হতে উপস্থাপিত প্রমাণসমূহ

আলহামদুলিল্লাহ্! আপনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা কোরআনের জ্ঞানে সম্যক জ্ঞাত এবং এর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিক সম্পর্কে সচেতন। রাসূলের পবিত্র বংশধরগণ সম্পর্কে কোরআনে যেরূপ স্পষ্ট আয়াতসমূহ রয়েছে অন্য কারো সম্পর্কে সেরূপ স্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কি?

কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহে যেরূপ তাঁদের বিষয়ে বলা হয়েছে যে,পাপ ও পঙ্কিলতা হতে তাঁরা সম্পূর্ণ পবিত্র সেরূপ অন্য কারো বিষয়ে বলা হয়েছে কি?৫০

আয়াতে তাতহীর অন্য কারো বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে কি? কোরআন তাঁদের ব্যতীত অন্য কারো প্রতি ভালবাসা পোষণকে ফরয ঘোষণা করেছে কি?৫১

হযরত জিবরাঈল (আ.) মোবাহিলার আয়াতটি তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো জন্য এনেছেন কি? অবশ্যই না,বরং তাঁদের ব্যাপারেই বলেছেন,

বলুন,এসো আমরা আমাদের সন্তানদের,নারীদের ও নিজ সত্তাদেরকে আহবান করি এবং আল্লাহকে বলি মিথ্যাবাদীদের ধ্বংস করুন। (সূরা আলে ইমরান : ৬১)

هل أتى هل أتى بِمدح سواهم لا و مولى بذكرهم حلّاها

সূরা হাল আতা (সূরা দাহর) তাঁদের ব্যতীত অন্য কারো প্রশংসায় অবতীর্ণ হয় নি,বরং শুধু তাঁদের লক্ষ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে।

আহলে বাইত কি আল্লাহর রজ্জু নন যেখানে কোরআনে বলা হয়েছে-

) و اعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرّقوا(

তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না৫২

তাঁরা কি কোরআনে বর্ণিত সত্যপন্থী নন যেখানে আল্লাহ্ বলছেন,

 ( وكونوا مع الصادقين ) এবং সত্যপন্থীদের সঙ্গে থাক। (সূরা তওবা : ১১৯)

সত্যপন্থী বলতে আমাদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসানুসারে নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত। ইবনে হাজার তাঁর আসসাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়ে ৯০ পৃষ্ঠায় ৫ নং আয়াতের তাফসীরে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আমি ৬ষ্ঠ পত্রে উল্লেখ করেছিলাম।

আল্লাহ্ কি তাঁদেরকে সিরাতুল্লাহ্ বলে উল্লেখ করেন নি-

) و إنّ هذا صراطي مستقيما فاتبعوه(

নিশ্চয়ই এটি আমার সরল সঠিক পথ, এ পথের অনুসরণ কর। (সূরা আনআম : ১৫৩)

অন্যরা আল্লাহর পথ নন। তাই বলেছেন,

) ولا تتبعوا السبل فتفرق بكم عن سبيله(

বিচ্ছিন্নতা ও বক্রতার পথসমূহ অবলম্বন কর না, তাহলে আল্লাহর পথ হতে দূরে সরে যাবে ৫৩

এবং কোরআনে বর্ণিত উলিল আমর কি তাঁরাই নন যেখানে বলা হয়েছে-

) يا ايها الذين آمنوا اطيعوا الله و اطيعوا الرسول و اولي الامر منكم(

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যকার দায়িত্বশীলদের (উলিল আমরের) আনুগত্য কর   ৫৪

তাঁরাই কি কোরআনে বর্ণিত আহলুয যিকর নন-

) فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون(

যদি তোমরা না জান তাহলে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ৫৫

সূরা নিসার ১১৫ নং আয়াতে যে মুমিনদের বিবরণ দেয়া হয়েছে তাঁরাই কি সেই মুমিনীন নন? বলা হয়েছে- যে কেউ সত্য প্রকাশিত হবার পর নবীর বিরুদ্ধাচারণ করবে ও মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ গ্রহণ করবে আমরা তাদেরকে সেই পথেই পরিচালিত করবো এবং অবশেষে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো। ৫৬

তাঁরাই কি সেই ব্যক্তিবর্গ নন যারা আল্লাহর দিকে মানুষদের হেদায়েত করেন। যেমন সূরা রাদের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

) انما انت منذر و لكل قوم هاد(

নিশ্চয়ই আপনি কেবল ভয় প্রদর্শনকারী এবং প্রত্যেক জাতি ও গোত্রের জন্যই হেদায়েতকারী রয়েছে। ৫৭

এরাই কি সেই ব্যক্তিবর্গ নন যাঁদেরকে মহান আল্লাহ্ নিয়ামত দান করেছেন?

সূরা ফাতিহা যার অপর নাম হলো সাবয়ুল মাছানী এবং কোরআনে সেই সূরাতে আমাদের সরল সঠিক পথে ও যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন তাদের পথে পরিচালিত করুন বলতে কাদের পথকে বুঝানো হয়েছে?৫৮

সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে,সে কিয়ামতের দিন তাঁদের সঙ্গে থাকবে যাঁদের ওপর আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন,(তাঁরা হলেন) নবী,সিদ্দীক,শহীদ ও সৎ কর্মশীল বান্দাগণ।

নিঃসন্দেহে আহলে বাইতের ইমামগণ সিদ্দীক,শহীদ ও সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত। তবে কি আল্লাহ্ সর্বসাধারণের সার্বিক নেতা হিসেবে তাঁদেরকেই মনোনীত করেন নি? নবীর পরবর্তীতে মুসলমানদের নেতৃত্ব দানের ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব শুধু তাঁদের জন্যই নির্ধারিত করেন নি?

যদি বিষয়টি না জানেন তবে দেখুন-

নিশ্চয়ই তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) হলেন শুধু আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং যারা ঈমান আনে,নামায কায়েম করে এবং রুকুরত অবস্থায় যাকাত দেয়। যারা আল্লাহ্,তাঁর রাসূল ও ঈমানদারদের অভিভাবকত্বকে মেনে নেয় তারাই জয়ী হবে,কারণ আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।৫৯  

মহান আল্লাহ্ ক্ষমা ও মাগফেরাতের শর্ত হিসেবে তওবা,ঈমান আনা,সৎ কর্ম করা ও আহলে বাইতের ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন যেমনটি সূরা ত্বহার ৮২ নং আয়াতে এসেছে-

আমি আমার ক্ষমাকে তওবার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন,ঈমান আনয়ন,সৎ কর্ম সম্পাদন এবং হেদায়েত প্রাপ্তির৬০ মধ্যেই রেখেছি (অর্থাৎ তারাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে যারা তওবা করেছে,ঈমান আনয়ন করেছে,সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে)।

তাহলে তাঁদের বেলায়েত কি একটি আমানত নয় যা সূরা আহযাবের ৭২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

আমরা আমানতকে আসমান,যমীন ও পর্বতের নিকট পেশ করেছিলাম কিন্তু তারা তা গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল এবং তারা বোঝা বহনের ভয় করছিল কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেছিল। কারণ মানুষ (নিজের প্রতি) অত্যাচারী এবং অজ্ঞ।৬১  

তাঁদের (আহলে বাইতের) বেলায়েত ও অভিভাবকত্বকেই আল্লাহ্ কোরআনেسِلْمٌ (সিল্ম) বলে উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে প্রবেশের জন্য সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, হে ঈমানদারগণ,সকলেই সমবেতভাবে সিল্ম বা শান্তি ও মুক্তির মধ্যে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। ৬২

তাঁদের বেলায়েত বা অভিভাবকত্বকেই কি মহান আল্লাহ্ কোরআনেنعيم (নাঈম) বলে উল্লেখ করেন নি যে বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে( ثم لتسئلن يومئذ عن النعيم )৬৩

রাসূল (সা.) কি তাঁদের বেলায়েতকে ঘোষণার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন নি? এবং এ বিষয়ে রাসূলকে প্রদত্ত নির্দেশ অনেকটা রাসূলকে ভীতি প্রদর্শনের মত ছিল,নয় কি? যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন,

হে রাসূল!যা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গরূপে পৌঁছান। যদি তা না করেন আপনি আপনার রেসালতের দায়িত্বই পালন করেন নি এবং আল্লাহ্ আপনাকে মানুষ হতে (সম্ভাব্য বিপদ হতে) রক্ষা করবেন। ৬৪

রাসূল (সা.) গাদীর দিবসে এ বাণী প্রচারের জন্য কি ব্যাপক পদক্ষেপ নেন নি? পরিষ্কার ভাষায় পূর্ণাঙ্গরূপে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেন নি? মহান আল্লাহ্ তখনই সূরা মায়েদার এ আয়াত নাযিল করেন- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের মনোনীত দীন হিসেবে গ্রহণ করলাম। ৬৫

তাহলে কি আপনি জানেন না মহান আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তি যে তাঁদের (আহলে বাইতের) বেলায়েত ও নেতৃত্বকে সরাসরি অস্বীকার করেছিল এবং নবীর সঙ্গে এ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল তার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছেন? ঐ ব্যক্তি চিৎকার করে বলেছিল, হে আল্লাহ্! যদি এটি সত্য ও আপনার পক্ষ হতে হয়ে থাকে,তবে আসমান হতে আমার ওপর পাথর বর্ষণ করুন এবং আজাব নাযিল করুন। আল্লাহ্পাক ঐ ব্যক্তিকে হস্তীবাহিনীর ন্যায় ধ্বংস করেন। তখনই এক ব্যক্তি চাইল সেই আজাব সংঘটিত হোক যা অবধারিত কাফিরদের জন্য এবং যার প্রতিরোধকারী কেউ নেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।৬৬ (*১৪)

অতিশীঘ্রই পুনরুত্থান দিবসে আহলে বাইতের বেলায়েত ও নেতৃত্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে যেমনটি সূরা সাফ্ফাতের ২৪ নং আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে( وقفوهم إنّهم مسئولون )’ এবং তাদেরকে থামাও,তারা জিজ্ঞাসিত হবে।৬৭ এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় কারণ তাঁদের নেতৃত্ব ও বেলায়েত এমন একটি বিষয় যা ঘোষণার জন্য সকল নবীর আগমন ঘটেছে এবং তাঁরা বিশ্বে আল্লাহর সর্বোত্তম নিদর্শন। নবীদের স্থলাভিষিক্ত ওলী ও ঐশী প্রতিনিধিগণ মানুষের কাছে এ সত্যটি প্রকাশ করে গিয়েছেন,যেমন সূরা যুখরুফের ৪৫ নং আয়াতে এসেছে-

) وأسأل من أرسلنا من قبلك من رسلنا(

তোমার পূর্বে আমাদের রাসূলদের মধ্য থেকে যাদের প্রেরণ করেছিলাম তাদের নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন কর।৬৮

আহলে বাইত সম্পর্কে এ প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্পাক আমি কি তোমাদের প্রভু নই -এর প্রতিশ্রুতি থেকেই গ্রহণ করেছেন যা সূরা আ রাফের ১৭২ নং আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে।(*১৫) আয়াতটি হলো : আল্লাহ্ বনি আদম হতে তার জন্মের পূর্বে এ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন (তার পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বের করে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন) যে,আমি কি তোমাদের প্রভু নই? তারা বলল,হ্যাঁ। এ বিষয় আহলে সুন্নাহর হাদীসসমূহেও উল্লিখিত হয়েছে।

এবং আদম তাঁর স্রষ্টা হতে কয়েকটি বাক্য প্রাপ্ত হলেন,তার মাধ্যমে ক্ষমা চাইলেন এবং আল্লাহ্ তাঁর তওবাকে গ্রহণ করলেন। ৬৯

তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেছেন, আল্লাহ্ তাদের (এ উম্মতকে) আজাব দান করবেন না যখন তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান। ৭০

পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্য তাঁরা নিরাপত্তাস্থল এবং আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচার মাধ্যম। তাঁরাই যে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্যদের হিংসার পাত্র তা সূরা নিসার ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষকে (নবী ও তার পরিবারবর্গকে) আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামত হতে যা দান করেছেন তারা তার প্রতি হিংসা করে। ৭১

তাঁদের বিষয়েই আল্লাহ্ বলেছেন, জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ বলে : আমরা ঈমান এনেছি। ৭২

আমাদের জানা উচিত আ রাফের ব্যক্তিবর্গ তাঁরাই। এজন্য আল্লাহ্পাক বলেছেন, এবং আ রাফে একদল ব্যক্তি রয়েছেন যাদের চেহারা দেখে সবাই চিনবে। ৭৩

তাঁরাই আল্লাহ্ বর্ণিত সত্যবাদী ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গ। কোরআন বলেছে, মুমিনদের মধ্যে একদল লোক রয়েছে তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পালন করেছে,তাদের একদল দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে (শহীদ হয়েছে) এবং অপর দল অপেক্ষমান রয়েছে (তাদের সাথে মিলিত হবার),তারা তাদের সংকল্প কখনোই পরিবর্তন করে নি। ৭৪

তাঁদেরকেই আল্লাহ্ তাঁর গুণকীর্তনকারী বলে বর্ণনা করেছেন- আল্লাহ্ যে সকল গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন,সেখানে (একদল লোক) সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এমন লোকেরা,যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে,নামায কায়েম ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। ৭৫

তাদের ঘরসমূহ হলো সেই ঘরসমূহ যার সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেছেন, আল্লাহ্ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং যেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন। ৭৬

তাঁদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ্ সূরা নূরের ৩৫ আয়াতে বলেছেন, তাদের উদাহরণ হলো কুলঙ্গি এবং তাদের অস্তিত্ব আমারই নূরের অস্তিত্ব।৭৭ অথচ আল্লাহর জন্য আসমান ও জমীনে সর্বোত্তম উদাহরণ বিদ্যমান এবং তিনি ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাবান।

তাঁরা আল্লাহ্ বর্ণিত অগ্রবর্তী নৈকট্যপ্রাপ্ত দল যেমনটি এ আয়াতে বলা হয়েছে-

( السّابقون السّابقون أولَائك المقرّبون)

অর্থাৎ অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই,তারাই নৈকট্যশীল।৭৮

এবং সত্যবাদী,শহীদ,সাক্ষ্য প্রদানকারী এবং সৎ কর্মশীল বলতে তাঁদেরই বোঝানো হয়েছে।৭৯

আহলে বাইত এবং তাঁদের ইমামগণ সম্পর্কেই আল্লাহ্পাক বলেছেন,

( وممن خلقنا أمة يهدون بالْحقّ و به يعدلون)

আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা সত্যের দিকে মানুষকে হেদায়েত করে (পথ দেখায়) এবং সে অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে। ৮০

আহলে বাইতের অনুসারী এবং বিরোধী ও শত্রুদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে-

( لا يستوي أصحاب النّار و أصحاب الْجَنَّة أصحاب الْجَنَّة هم الفائزون)

জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসীগণ সমান হতে পারে না। জান্নাতের অধিবাসীরাই সফলকাম।৮১

তাঁদের পক্ষের ও বিপক্ষের দল সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন,

( أم نجعل الّذين آمنوا و عملوا الصّالِحات كالمفسدين في الأرض أم نجعل المتّقين كالفجّار)

আমি কি বিশ্বাসী ও সৎ কর্মশীলদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাফেরদের সমতুল্য করে দেব,না খোদাভীরুদেরকে পাপাচারীদের সমান করে দেব? ৮২  

এই দু দল সম্পর্কে অন্যত্র বলেছেন,

( أم حسب الّذين اجترحوا السيّئات أن نجعلهم كالذين آمنوا و عملوا الصّالِحات سواء محياهم و مَماتُهم ساء ما يحكمون)

যারা দুষ্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে ও তাদের জীবন ও মৃত্যু কি সমান হবে? ৮৩

আহলে বাইত ও তাঁদের অনুসারীদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে-

( إنّ الّذين آمنوا و عملوا الصّالِحات أولَائك هم خيرُ البريّة)

যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে তারাই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।৮৪

আহলে বাইত ও তাঁদের শত্রুদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে-

এই দু বাদী-বিবাদী,তারা তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বিতর্ক করে। অতএব,যারা কাফির তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।৮৫

এবং আহলে বাইত ও তাঁদের শত্রুদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে- মুমিন কি কখনো ফাসেকের মত হতে পারে? তারা সমান নয়। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে তাদের বাসস্থান হলো চিরস্থায়ী জান্নাত তাদের সৎ কর্মের বিনিময়স্বরূপ আর যারা গুনাহ করেছে তারা তাদের বাসস্থানকে জাহান্নামের মধ্যে প্রস্তুত করেছে। যখনই তারা চাইবে তা হতে বের হতে,তাদেরকে জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেয়া হবে ও বলা হবে,যে জাহান্নামকে অস্বীকার করতে তার স্বাদ আস্বাদন কর।৮৬

অন্যত্র ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা হাজীদের পানি পান করানো ও কাবা শরীফের খাদেম হওয়ার কারণে অহংকার ও গর্ব পোষণ করতো তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লোকের সমান মনে কর যে ঈমান রাখে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে? এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়,আর আল্লাহ্ জালেম লোকদের হেদায়েত করেন না। ৮৭

তেমনিভাবে আল্লাহ্পাক আহলে বাইতের বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় সফলতার কথা কোরআনে বর্ণনা করেছেন-

( و من النّاس من يشري نفسه ابتغاء مرضات الله و الله رءوف بالعباد)

এবং মানুষের মধ্যে একদল লোক আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিনিময়ে নিজেদের জীবনকে বিক্রয় করে এবং আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।৮৮

অন্যত্র বলেছেন, আল্লাহ্ মুমিনদের জীবন ও সম্পদকে বেহেশতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে,হত্যা করে ও নিহত হয়। এ প্রতিশ্রুতি সত্য ও অবশ্যম্ভাবী যা তাওরাত,ইঞ্জিল ও কোরআনে এসেছে- এবং আল্লাহ্ হতে কে অধিক ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী?

সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর যা তোমরা আল্লাহর সঙ্গে করেছ। তারা (এ মুমিনগণ) তওবাকারী,ইবাদতকারী,কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী,দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদকারী,রুকু ও সিজদাকারী,সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকারী,আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। (সূরা তওবা : ১১১ ও ১১২)

যারা স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে (দান করে) রাত্রে ও দিনে,গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্য তাদের সওয়াব তাদের পালনকর্তার নিকট সংরক্ষিত। তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা

চিন্তিতও হবে না। (বাকারা : ২৭৪)৮৯

তাঁরাই সত্যকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ্ তার সাক্ষ্য প্রদান করে বলেছেন, যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে ও সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে,তারাই তো খোদাভীরু ও মুত্তাকী (পরহেজগার)।৯০

সুতরাং তাঁরাই রাসূল (সা.)-এর গোত্রের সর্বোচ্চ নিষ্ঠাবান এবং তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় যাঁদের মহান আল্লাহ্ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করে বলেছেন,

( و أنذر عشيرتك الأقربين )“ এবং তোমার নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শন কর। এবং তাঁরাই কোরআনে বর্ণিত উলুল আরহাম বা নিকটাত্মীয় যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আনফালের ৭৫ নং আয়াতে( أولوا الأرحام بعضهم أولى ببعض ) অর্থাৎ বস্তুত যারা নিকটাত্মীয় তারা পরস্পর অধিক হক্বদার এবং এদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে তাঁদের মর্যাদা কিয়ামতের দিন বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং নবীর সঙ্গে মিলিত হয়ে জান্নাতুন নাঈমে অবস্থান করবেন। এর প্রমাণ কোরআনের এ আয়াত যাতে বলা হয়েছে-

যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের পরিবার ও বংশের যারা তাদের (ঈমানের ক্ষেত্রে) অনুসরণ করেছে সেই বংশধরদেরও আমি তাদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল হতে কিছুই কম করা হবে না। ৯১

তাঁরাই সেই ব্যক্তিবর্গ যাঁদের অধিকারকে আল্লাহ্ আদায় করতে বলেছেন-

وآت ذا القربىحقّه অর্থাৎ নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায় কর। তাঁরাই খুমসের অধিকারী যা আদায় না করলে তাঁদের হক্ব আমাদের ওপর কিয়ামতের দিনও থেকে যাবে- জেনে রাখো,তোমরা যা কিছু অর্জন কর,তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং তাঁর নিকটাত্মীয়,ইয়াতীম,অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের.। (সূরা আনফাল : ৪১)

তাঁরা ফাই সম্পদেরও অধিকারী কারণ আল্লাহ্ বলেছেন, যা মহান আল্লাহ্ জনপদবাসীদের কাছ থেকে রাসূলকে দিয়েছেন তা আল্লাহর,রাসূলের,তাঁর আত্মীয়-স্বজনের,ইয়াতিমদের,অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের। (সূরা হাশর : ৭)

নবীর আহলে বাইতকে সম্বোধন করে আল্লাহ্ বলেছেন,

( إنّما يريد الله ليذهب عنكم الرّجس أهل البيت و يطهّركم تطهيرا)

হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চান তোমাদের হতে পাপ পঙ্কিলতা দূরীভূত করতে ও সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব : ৩৩)

তাঁদেরকেই আল্লাহ্ আলে ইয়াসিন বলে সম্বোধন করে সালাম দিয়েছেন-و سلام على الياسين অর্থাৎ আলে ইয়াসিনের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।৯২ (সূরা সাফ্ফাত : ১৩০)

তাঁরাই রাসূলের বংশধর যাঁদের ওপর দরূদ পড়াকে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের জন্য নামাযে ওয়াজিব করেছেন-

﴿ إنّ الله و ملائكته يصلّون على النَّبِيّ يا أيّها الّذين آمنوا صلّوا عليه و سلّموا تسليما

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরূদ পড়েন,হে ঈমানদারগণ! তোমরাও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ কর।৯৩

সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার ওপর সালাম কিরূপে পাঠ করতে হবে জানি কিন্তু দরূদ কিরূপে পড়ব? রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ অর্থাৎ হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ কর।

এ হাদীস হতে বুঝা যায় আহলে বাইতের ওপর দরূদ পাঠও এই আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণেই আলেমগণ এই আয়াতকে আহলে বাইতের শানে বর্ণিত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর আসসাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়েও তাই করেছেন।৯৪

طوبى لهم তাদের জন্যই সুসংবাদ ও তাদের জন্যই চিরস্থায়ী বেহেশত এবং তার দ্বারগুলো উন্মুক্ত রয়েছে।৯৫

আরব কবি বলেছেন,

من يباريهم و في الشّمس معنى؟ مجهد متعب لمن باراها

কে পারে তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অর্থাৎ সূর্যের সাথে যে প্রতিযোগিতা করে তার ওপরই ক্লান্ত ও শ্রান্তের অর্থ বর্তায় (অর্থাৎ সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে)।

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তাঁরা মনোনীত,আল্লাহর অনুমতিক্রমে পুণ্যকর্মে তাঁরা অন্যদের হতে অগ্রগামী। তাঁরা আল্লাহর কিতাবের উত্তরাধিকারী এবং তাঁদের সম্পর্কেই আল্লাহ্ বলেছেন,

অতঃপর কিতাবকে (আল কোরআন) তাঁর বান্দাদের মধ্যে মনোনীত ব্যক্তিদের হাতে সমর্পণ করলাম। আর বান্দাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে এবং তারা ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নেয় নি।

তাদের (বান্দাগণের) অনেকেই মধ্যপন্থী ও ন্যায়পরায়ণ এবং তারা আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী। যেমন কোরআনে এসেছে-

এবং তাদের অনেকেই পুণ্যকর্মে অগ্রগামী হয়েছে এবং তারাই ইমাম। এটি একটি বড় নিয়ামত।৯৬

আহলে বাইতের ফজীলত বর্ণনা করে যে সকল আয়াত এসেছে তা বর্ণনার জন্য এ পর্যন্তই যথেষ্ট বলে মনে করেছি। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি হযরত আলী (আ.)-এর শানে কোরআনে ৩০০ আয়াত বর্ণিত হয়েছে।৯৭

অন্য আরেকজন তাফসীরকারক বলেছেন, কোরআনের এক চতুর্থাংশ আয়াত আহলে বাইতের শানে বর্ণিত হয়েছে এবং এটি আশ্চর্যের কোন বিষয় নয়,কারণ আহলে বাইত ও কোরআন একই সত্তার দুই অংশ।

এখন পর্যন্ত যে সমস্ত স্পষ্ট আয়াত আপনার নিকট বর্ণনা করলাম তা কোরআনের মূল ও ভিত্তি( هُنَّ أُمُّ الْكِتَاب ) । এ আয়াতগুলো খুব সহজে গ্রহণ করুন (মেনে নিন)। আর ভক্তি ও উদারতার সাথে সূক্ষ্মভাবে এসব আয়াত অধ্যয়ন করুন এবং এসব আয়াত সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান মহান আল্লাহর বাণী হতে গ্রহণ করুন যে সম্পর্কে অন্য কোন জ্ঞানী ব্যক্তি আপনাকে অবগত করবে না।

ওয়াসসালাম

বারতম পত্র

২২ জিলক্বদ ১৩২৯ হিঃ

কোরআনের আয়াত হতে উপস্থাপিত প্রমাণসমূহ

আলহামদুলিল্লাহ্! আপনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা কোরআনের জ্ঞানে সম্যক জ্ঞাত এবং এর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিক সম্পর্কে সচেতন। রাসূলের পবিত্র বংশধরগণ সম্পর্কে কোরআনে যেরূপ স্পষ্ট আয়াতসমূহ রয়েছে অন্য কারো সম্পর্কে সেরূপ স্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কি?

কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহে যেরূপ তাঁদের বিষয়ে বলা হয়েছে যে,পাপ ও পঙ্কিলতা হতে তাঁরা সম্পূর্ণ পবিত্র সেরূপ অন্য কারো বিষয়ে বলা হয়েছে কি?৫০

আয়াতে তাতহীর অন্য কারো বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে কি? কোরআন তাঁদের ব্যতীত অন্য কারো প্রতি ভালবাসা পোষণকে ফরয ঘোষণা করেছে কি?৫১

হযরত জিবরাঈল (আ.) মোবাহিলার আয়াতটি তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো জন্য এনেছেন কি? অবশ্যই না,বরং তাঁদের ব্যাপারেই বলেছেন,

বলুন,এসো আমরা আমাদের সন্তানদের,নারীদের ও নিজ সত্তাদেরকে আহবান করি এবং আল্লাহকে বলি মিথ্যাবাদীদের ধ্বংস করুন। (সূরা আলে ইমরান : ৬১)

هل أتى هل أتى بِمدح سواهم لا و مولى بذكرهم حلّاها

সূরা হাল আতা (সূরা দাহর) তাঁদের ব্যতীত অন্য কারো প্রশংসায় অবতীর্ণ হয় নি,বরং শুধু তাঁদের লক্ষ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে।

আহলে বাইত কি আল্লাহর রজ্জু নন যেখানে কোরআনে বলা হয়েছে-

) و اعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرّقوا(

তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না৫২

তাঁরা কি কোরআনে বর্ণিত সত্যপন্থী নন যেখানে আল্লাহ্ বলছেন,

 ( وكونوا مع الصادقين ) এবং সত্যপন্থীদের সঙ্গে থাক। (সূরা তওবা : ১১৯)

সত্যপন্থী বলতে আমাদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসানুসারে নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত। ইবনে হাজার তাঁর আসসাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়ে ৯০ পৃষ্ঠায় ৫ নং আয়াতের তাফসীরে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আমি ৬ষ্ঠ পত্রে উল্লেখ করেছিলাম।

আল্লাহ্ কি তাঁদেরকে সিরাতুল্লাহ্ বলে উল্লেখ করেন নি-

) و إنّ هذا صراطي مستقيما فاتبعوه(

নিশ্চয়ই এটি আমার সরল সঠিক পথ, এ পথের অনুসরণ কর। (সূরা আনআম : ১৫৩)

অন্যরা আল্লাহর পথ নন। তাই বলেছেন,

) ولا تتبعوا السبل فتفرق بكم عن سبيله(

বিচ্ছিন্নতা ও বক্রতার পথসমূহ অবলম্বন কর না, তাহলে আল্লাহর পথ হতে দূরে সরে যাবে ৫৩

এবং কোরআনে বর্ণিত উলিল আমর কি তাঁরাই নন যেখানে বলা হয়েছে-

) يا ايها الذين آمنوا اطيعوا الله و اطيعوا الرسول و اولي الامر منكم(

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যকার দায়িত্বশীলদের (উলিল আমরের) আনুগত্য কর   ৫৪

তাঁরাই কি কোরআনে বর্ণিত আহলুয যিকর নন-

) فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون(

যদি তোমরা না জান তাহলে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ৫৫

সূরা নিসার ১১৫ নং আয়াতে যে মুমিনদের বিবরণ দেয়া হয়েছে তাঁরাই কি সেই মুমিনীন নন? বলা হয়েছে- যে কেউ সত্য প্রকাশিত হবার পর নবীর বিরুদ্ধাচারণ করবে ও মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ গ্রহণ করবে আমরা তাদেরকে সেই পথেই পরিচালিত করবো এবং অবশেষে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো। ৫৬

তাঁরাই কি সেই ব্যক্তিবর্গ নন যারা আল্লাহর দিকে মানুষদের হেদায়েত করেন। যেমন সূরা রাদের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

) انما انت منذر و لكل قوم هاد(

নিশ্চয়ই আপনি কেবল ভয় প্রদর্শনকারী এবং প্রত্যেক জাতি ও গোত্রের জন্যই হেদায়েতকারী রয়েছে। ৫৭

এরাই কি সেই ব্যক্তিবর্গ নন যাঁদেরকে মহান আল্লাহ্ নিয়ামত দান করেছেন?

সূরা ফাতিহা যার অপর নাম হলো সাবয়ুল মাছানী এবং কোরআনে সেই সূরাতে আমাদের সরল সঠিক পথে ও যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন তাদের পথে পরিচালিত করুন বলতে কাদের পথকে বুঝানো হয়েছে?৫৮

সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে,সে কিয়ামতের দিন তাঁদের সঙ্গে থাকবে যাঁদের ওপর আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন,(তাঁরা হলেন) নবী,সিদ্দীক,শহীদ ও সৎ কর্মশীল বান্দাগণ।

নিঃসন্দেহে আহলে বাইতের ইমামগণ সিদ্দীক,শহীদ ও সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত। তবে কি আল্লাহ্ সর্বসাধারণের সার্বিক নেতা হিসেবে তাঁদেরকেই মনোনীত করেন নি? নবীর পরবর্তীতে মুসলমানদের নেতৃত্ব দানের ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব শুধু তাঁদের জন্যই নির্ধারিত করেন নি?

যদি বিষয়টি না জানেন তবে দেখুন-

নিশ্চয়ই তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) হলেন শুধু আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং যারা ঈমান আনে,নামায কায়েম করে এবং রুকুরত অবস্থায় যাকাত দেয়। যারা আল্লাহ্,তাঁর রাসূল ও ঈমানদারদের অভিভাবকত্বকে মেনে নেয় তারাই জয়ী হবে,কারণ আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।৫৯  

মহান আল্লাহ্ ক্ষমা ও মাগফেরাতের শর্ত হিসেবে তওবা,ঈমান আনা,সৎ কর্ম করা ও আহলে বাইতের ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন যেমনটি সূরা ত্বহার ৮২ নং আয়াতে এসেছে-

আমি আমার ক্ষমাকে তওবার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন,ঈমান আনয়ন,সৎ কর্ম সম্পাদন এবং হেদায়েত প্রাপ্তির৬০ মধ্যেই রেখেছি (অর্থাৎ তারাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে যারা তওবা করেছে,ঈমান আনয়ন করেছে,সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে)।

তাহলে তাঁদের বেলায়েত কি একটি আমানত নয় যা সূরা আহযাবের ৭২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

আমরা আমানতকে আসমান,যমীন ও পর্বতের নিকট পেশ করেছিলাম কিন্তু তারা তা গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল এবং তারা বোঝা বহনের ভয় করছিল কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেছিল। কারণ মানুষ (নিজের প্রতি) অত্যাচারী এবং অজ্ঞ।৬১  

তাঁদের (আহলে বাইতের) বেলায়েত ও অভিভাবকত্বকেই আল্লাহ্ কোরআনেسِلْمٌ (সিল্ম) বলে উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে প্রবেশের জন্য সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, হে ঈমানদারগণ,সকলেই সমবেতভাবে সিল্ম বা শান্তি ও মুক্তির মধ্যে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। ৬২

তাঁদের বেলায়েত বা অভিভাবকত্বকেই কি মহান আল্লাহ্ কোরআনেنعيم (নাঈম) বলে উল্লেখ করেন নি যে বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে( ثم لتسئلن يومئذ عن النعيم )৬৩

রাসূল (সা.) কি তাঁদের বেলায়েতকে ঘোষণার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন নি? এবং এ বিষয়ে রাসূলকে প্রদত্ত নির্দেশ অনেকটা রাসূলকে ভীতি প্রদর্শনের মত ছিল,নয় কি? যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন,

হে রাসূল!যা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গরূপে পৌঁছান। যদি তা না করেন আপনি আপনার রেসালতের দায়িত্বই পালন করেন নি এবং আল্লাহ্ আপনাকে মানুষ হতে (সম্ভাব্য বিপদ হতে) রক্ষা করবেন। ৬৪

রাসূল (সা.) গাদীর দিবসে এ বাণী প্রচারের জন্য কি ব্যাপক পদক্ষেপ নেন নি? পরিষ্কার ভাষায় পূর্ণাঙ্গরূপে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেন নি? মহান আল্লাহ্ তখনই সূরা মায়েদার এ আয়াত নাযিল করেন- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের মনোনীত দীন হিসেবে গ্রহণ করলাম। ৬৫

তাহলে কি আপনি জানেন না মহান আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তি যে তাঁদের (আহলে বাইতের) বেলায়েত ও নেতৃত্বকে সরাসরি অস্বীকার করেছিল এবং নবীর সঙ্গে এ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল তার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছেন? ঐ ব্যক্তি চিৎকার করে বলেছিল, হে আল্লাহ্! যদি এটি সত্য ও আপনার পক্ষ হতে হয়ে থাকে,তবে আসমান হতে আমার ওপর পাথর বর্ষণ করুন এবং আজাব নাযিল করুন। আল্লাহ্পাক ঐ ব্যক্তিকে হস্তীবাহিনীর ন্যায় ধ্বংস করেন। তখনই এক ব্যক্তি চাইল সেই আজাব সংঘটিত হোক যা অবধারিত কাফিরদের জন্য এবং যার প্রতিরোধকারী কেউ নেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।৬৬ (*১৪)

অতিশীঘ্রই পুনরুত্থান দিবসে আহলে বাইতের বেলায়েত ও নেতৃত্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে যেমনটি সূরা সাফ্ফাতের ২৪ নং আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে( وقفوهم إنّهم مسئولون )’ এবং তাদেরকে থামাও,তারা জিজ্ঞাসিত হবে।৬৭ এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় কারণ তাঁদের নেতৃত্ব ও বেলায়েত এমন একটি বিষয় যা ঘোষণার জন্য সকল নবীর আগমন ঘটেছে এবং তাঁরা বিশ্বে আল্লাহর সর্বোত্তম নিদর্শন। নবীদের স্থলাভিষিক্ত ওলী ও ঐশী প্রতিনিধিগণ মানুষের কাছে এ সত্যটি প্রকাশ করে গিয়েছেন,যেমন সূরা যুখরুফের ৪৫ নং আয়াতে এসেছে-

) وأسأل من أرسلنا من قبلك من رسلنا(

তোমার পূর্বে আমাদের রাসূলদের মধ্য থেকে যাদের প্রেরণ করেছিলাম তাদের নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন কর।৬৮

আহলে বাইত সম্পর্কে এ প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্পাক আমি কি তোমাদের প্রভু নই -এর প্রতিশ্রুতি থেকেই গ্রহণ করেছেন যা সূরা আ রাফের ১৭২ নং আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে।(*১৫) আয়াতটি হলো : আল্লাহ্ বনি আদম হতে তার জন্মের পূর্বে এ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন (তার পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বের করে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন) যে,আমি কি তোমাদের প্রভু নই? তারা বলল,হ্যাঁ। এ বিষয় আহলে সুন্নাহর হাদীসসমূহেও উল্লিখিত হয়েছে।

এবং আদম তাঁর স্রষ্টা হতে কয়েকটি বাক্য প্রাপ্ত হলেন,তার মাধ্যমে ক্ষমা চাইলেন এবং আল্লাহ্ তাঁর তওবাকে গ্রহণ করলেন। ৬৯

তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেছেন, আল্লাহ্ তাদের (এ উম্মতকে) আজাব দান করবেন না যখন তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান। ৭০

পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্য তাঁরা নিরাপত্তাস্থল এবং আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচার মাধ্যম। তাঁরাই যে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্যদের হিংসার পাত্র তা সূরা নিসার ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষকে (নবী ও তার পরিবারবর্গকে) আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামত হতে যা দান করেছেন তারা তার প্রতি হিংসা করে। ৭১

তাঁদের বিষয়েই আল্লাহ্ বলেছেন, জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ বলে : আমরা ঈমান এনেছি। ৭২

আমাদের জানা উচিত আ রাফের ব্যক্তিবর্গ তাঁরাই। এজন্য আল্লাহ্পাক বলেছেন, এবং আ রাফে একদল ব্যক্তি রয়েছেন যাদের চেহারা দেখে সবাই চিনবে। ৭৩

তাঁরাই আল্লাহ্ বর্ণিত সত্যবাদী ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গ। কোরআন বলেছে, মুমিনদের মধ্যে একদল লোক রয়েছে তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পালন করেছে,তাদের একদল দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে (শহীদ হয়েছে) এবং অপর দল অপেক্ষমান রয়েছে (তাদের সাথে মিলিত হবার),তারা তাদের সংকল্প কখনোই পরিবর্তন করে নি। ৭৪

তাঁদেরকেই আল্লাহ্ তাঁর গুণকীর্তনকারী বলে বর্ণনা করেছেন- আল্লাহ্ যে সকল গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন,সেখানে (একদল লোক) সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এমন লোকেরা,যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে,নামায কায়েম ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। ৭৫

তাদের ঘরসমূহ হলো সেই ঘরসমূহ যার সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেছেন, আল্লাহ্ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং যেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন। ৭৬

তাঁদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ্ সূরা নূরের ৩৫ আয়াতে বলেছেন, তাদের উদাহরণ হলো কুলঙ্গি এবং তাদের অস্তিত্ব আমারই নূরের অস্তিত্ব।৭৭ অথচ আল্লাহর জন্য আসমান ও জমীনে সর্বোত্তম উদাহরণ বিদ্যমান এবং তিনি ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাবান।

তাঁরা আল্লাহ্ বর্ণিত অগ্রবর্তী নৈকট্যপ্রাপ্ত দল যেমনটি এ আয়াতে বলা হয়েছে-

( السّابقون السّابقون أولَائك المقرّبون)

অর্থাৎ অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই,তারাই নৈকট্যশীল।৭৮

এবং সত্যবাদী,শহীদ,সাক্ষ্য প্রদানকারী এবং সৎ কর্মশীল বলতে তাঁদেরই বোঝানো হয়েছে।৭৯

আহলে বাইত এবং তাঁদের ইমামগণ সম্পর্কেই আল্লাহ্পাক বলেছেন,

( وممن خلقنا أمة يهدون بالْحقّ و به يعدلون)

আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা সত্যের দিকে মানুষকে হেদায়েত করে (পথ দেখায়) এবং সে অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে। ৮০

আহলে বাইতের অনুসারী এবং বিরোধী ও শত্রুদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে-

( لا يستوي أصحاب النّار و أصحاب الْجَنَّة أصحاب الْجَنَّة هم الفائزون)

জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসীগণ সমান হতে পারে না। জান্নাতের অধিবাসীরাই সফলকাম।৮১

তাঁদের পক্ষের ও বিপক্ষের দল সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন,

( أم نجعل الّذين آمنوا و عملوا الصّالِحات كالمفسدين في الأرض أم نجعل المتّقين كالفجّار)

আমি কি বিশ্বাসী ও সৎ কর্মশীলদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাফেরদের সমতুল্য করে দেব,না খোদাভীরুদেরকে পাপাচারীদের সমান করে দেব? ৮২  

এই দু দল সম্পর্কে অন্যত্র বলেছেন,

( أم حسب الّذين اجترحوا السيّئات أن نجعلهم كالذين آمنوا و عملوا الصّالِحات سواء محياهم و مَماتُهم ساء ما يحكمون)

যারা দুষ্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে ও তাদের জীবন ও মৃত্যু কি সমান হবে? ৮৩

আহলে বাইত ও তাঁদের অনুসারীদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে-

( إنّ الّذين آمنوا و عملوا الصّالِحات أولَائك هم خيرُ البريّة)

যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে তারাই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।৮৪

আহলে বাইত ও তাঁদের শত্রুদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে-

এই দু বাদী-বিবাদী,তারা তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বিতর্ক করে। অতএব,যারা কাফির তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।৮৫

এবং আহলে বাইত ও তাঁদের শত্রুদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে- মুমিন কি কখনো ফাসেকের মত হতে পারে? তারা সমান নয়। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে তাদের বাসস্থান হলো চিরস্থায়ী জান্নাত তাদের সৎ কর্মের বিনিময়স্বরূপ আর যারা গুনাহ করেছে তারা তাদের বাসস্থানকে জাহান্নামের মধ্যে প্রস্তুত করেছে। যখনই তারা চাইবে তা হতে বের হতে,তাদেরকে জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেয়া হবে ও বলা হবে,যে জাহান্নামকে অস্বীকার করতে তার স্বাদ আস্বাদন কর।৮৬

অন্যত্র ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা হাজীদের পানি পান করানো ও কাবা শরীফের খাদেম হওয়ার কারণে অহংকার ও গর্ব পোষণ করতো তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লোকের সমান মনে কর যে ঈমান রাখে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে? এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়,আর আল্লাহ্ জালেম লোকদের হেদায়েত করেন না। ৮৭

তেমনিভাবে আল্লাহ্পাক আহলে বাইতের বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় সফলতার কথা কোরআনে বর্ণনা করেছেন-

( و من النّاس من يشري نفسه ابتغاء مرضات الله و الله رءوف بالعباد)

এবং মানুষের মধ্যে একদল লোক আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিনিময়ে নিজেদের জীবনকে বিক্রয় করে এবং আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।৮৮

অন্যত্র বলেছেন, আল্লাহ্ মুমিনদের জীবন ও সম্পদকে বেহেশতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে,হত্যা করে ও নিহত হয়। এ প্রতিশ্রুতি সত্য ও অবশ্যম্ভাবী যা তাওরাত,ইঞ্জিল ও কোরআনে এসেছে- এবং আল্লাহ্ হতে কে অধিক ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী?

সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর যা তোমরা আল্লাহর সঙ্গে করেছ। তারা (এ মুমিনগণ) তওবাকারী,ইবাদতকারী,কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী,দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদকারী,রুকু ও সিজদাকারী,সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকারী,আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। (সূরা তওবা : ১১১ ও ১১২)

যারা স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে (দান করে) রাত্রে ও দিনে,গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্য তাদের সওয়াব তাদের পালনকর্তার নিকট সংরক্ষিত। তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা

চিন্তিতও হবে না। (বাকারা : ২৭৪)৮৯

তাঁরাই সত্যকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ্ তার সাক্ষ্য প্রদান করে বলেছেন, যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে ও সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে,তারাই তো খোদাভীরু ও মুত্তাকী (পরহেজগার)।৯০

সুতরাং তাঁরাই রাসূল (সা.)-এর গোত্রের সর্বোচ্চ নিষ্ঠাবান এবং তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় যাঁদের মহান আল্লাহ্ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করে বলেছেন,

( و أنذر عشيرتك الأقربين )“ এবং তোমার নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শন কর। এবং তাঁরাই কোরআনে বর্ণিত উলুল আরহাম বা নিকটাত্মীয় যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আনফালের ৭৫ নং আয়াতে( أولوا الأرحام بعضهم أولى ببعض ) অর্থাৎ বস্তুত যারা নিকটাত্মীয় তারা পরস্পর অধিক হক্বদার এবং এদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে তাঁদের মর্যাদা কিয়ামতের দিন বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং নবীর সঙ্গে মিলিত হয়ে জান্নাতুন নাঈমে অবস্থান করবেন। এর প্রমাণ কোরআনের এ আয়াত যাতে বলা হয়েছে-

যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের পরিবার ও বংশের যারা তাদের (ঈমানের ক্ষেত্রে) অনুসরণ করেছে সেই বংশধরদেরও আমি তাদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল হতে কিছুই কম করা হবে না। ৯১

তাঁরাই সেই ব্যক্তিবর্গ যাঁদের অধিকারকে আল্লাহ্ আদায় করতে বলেছেন-

وآت ذا القربىحقّه অর্থাৎ নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায় কর। তাঁরাই খুমসের অধিকারী যা আদায় না করলে তাঁদের হক্ব আমাদের ওপর কিয়ামতের দিনও থেকে যাবে- জেনে রাখো,তোমরা যা কিছু অর্জন কর,তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং তাঁর নিকটাত্মীয়,ইয়াতীম,অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের.। (সূরা আনফাল : ৪১)

তাঁরা ফাই সম্পদেরও অধিকারী কারণ আল্লাহ্ বলেছেন, যা মহান আল্লাহ্ জনপদবাসীদের কাছ থেকে রাসূলকে দিয়েছেন তা আল্লাহর,রাসূলের,তাঁর আত্মীয়-স্বজনের,ইয়াতিমদের,অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের। (সূরা হাশর : ৭)

নবীর আহলে বাইতকে সম্বোধন করে আল্লাহ্ বলেছেন,

( إنّما يريد الله ليذهب عنكم الرّجس أهل البيت و يطهّركم تطهيرا)

হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চান তোমাদের হতে পাপ পঙ্কিলতা দূরীভূত করতে ও সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব : ৩৩)

তাঁদেরকেই আল্লাহ্ আলে ইয়াসিন বলে সম্বোধন করে সালাম দিয়েছেন-و سلام على الياسين অর্থাৎ আলে ইয়াসিনের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।৯২ (সূরা সাফ্ফাত : ১৩০)

তাঁরাই রাসূলের বংশধর যাঁদের ওপর দরূদ পড়াকে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের জন্য নামাযে ওয়াজিব করেছেন-

﴿ إنّ الله و ملائكته يصلّون على النَّبِيّ يا أيّها الّذين آمنوا صلّوا عليه و سلّموا تسليما

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরূদ পড়েন,হে ঈমানদারগণ! তোমরাও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ কর।৯৩

সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার ওপর সালাম কিরূপে পাঠ করতে হবে জানি কিন্তু দরূদ কিরূপে পড়ব? রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ অর্থাৎ হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ কর।

এ হাদীস হতে বুঝা যায় আহলে বাইতের ওপর দরূদ পাঠও এই আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণেই আলেমগণ এই আয়াতকে আহলে বাইতের শানে বর্ণিত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর আসসাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়েও তাই করেছেন।৯৪

طوبى لهم তাদের জন্যই সুসংবাদ ও তাদের জন্যই চিরস্থায়ী বেহেশত এবং তার দ্বারগুলো উন্মুক্ত রয়েছে।৯৫

আরব কবি বলেছেন,

من يباريهم و في الشّمس معنى؟ مجهد متعب لمن باراها

কে পারে তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অর্থাৎ সূর্যের সাথে যে প্রতিযোগিতা করে তার ওপরই ক্লান্ত ও শ্রান্তের অর্থ বর্তায় (অর্থাৎ সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে)।

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তাঁরা মনোনীত,আল্লাহর অনুমতিক্রমে পুণ্যকর্মে তাঁরা অন্যদের হতে অগ্রগামী। তাঁরা আল্লাহর কিতাবের উত্তরাধিকারী এবং তাঁদের সম্পর্কেই আল্লাহ্ বলেছেন,

অতঃপর কিতাবকে (আল কোরআন) তাঁর বান্দাদের মধ্যে মনোনীত ব্যক্তিদের হাতে সমর্পণ করলাম। আর বান্দাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে এবং তারা ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নেয় নি।

তাদের (বান্দাগণের) অনেকেই মধ্যপন্থী ও ন্যায়পরায়ণ এবং তারা আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী। যেমন কোরআনে এসেছে-

এবং তাদের অনেকেই পুণ্যকর্মে অগ্রগামী হয়েছে এবং তারাই ইমাম। এটি একটি বড় নিয়ামত।৯৬

আহলে বাইতের ফজীলত বর্ণনা করে যে সকল আয়াত এসেছে তা বর্ণনার জন্য এ পর্যন্তই যথেষ্ট বলে মনে করেছি। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি হযরত আলী (আ.)-এর শানে কোরআনে ৩০০ আয়াত বর্ণিত হয়েছে।৯৭

অন্য আরেকজন তাফসীরকারক বলেছেন, কোরআনের এক চতুর্থাংশ আয়াত আহলে বাইতের শানে বর্ণিত হয়েছে এবং এটি আশ্চর্যের কোন বিষয় নয়,কারণ আহলে বাইত ও কোরআন একই সত্তার দুই অংশ।

এখন পর্যন্ত যে সমস্ত স্পষ্ট আয়াত আপনার নিকট বর্ণনা করলাম তা কোরআনের মূল ও ভিত্তি( هُنَّ أُمُّ الْكِتَاب ) । এ আয়াতগুলো খুব সহজে গ্রহণ করুন (মেনে নিন)। আর ভক্তি ও উদারতার সাথে সূক্ষ্মভাবে এসব আয়াত অধ্যয়ন করুন এবং এসব আয়াত সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান মহান আল্লাহর বাণী হতে গ্রহণ করুন যে সম্পর্কে অন্য কোন জ্ঞানী ব্যক্তি আপনাকে অবগত করবে না।

ওয়াসসালাম


7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49

50

51

52

53