চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79243
ডাউনলোড: 7054


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79243 / ডাউনলোড: 7054
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মহানবীর ষষ্ঠ দূতের ইয়ামামায় গমন

মহানবীর ষষ্ঠ দূত বাহরাইন ও নাজদের মধ্যবর্তী ইয়ামামায় প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি সেখানে পৌঁছে ইয়ামামার শাসক হাওযাত ইবনে আলাল হানাফীর নিকট তাঁর পত্র পৌঁছালেন। পত্রের বাণী ছিল নিম্নরূপ :

“পরম করুণাময় ও দাতা আল্লাহর নামে। সৎপথ প্রাপ্তদের উপর সালাম। আপনি জেনে রাখুন,আমার আনীত দ্বীন দ্রুতগামী বাহন যে পর্যন্ত পৌঁছায় (পূর্ব-পশ্চিম সকল দিকে),সে পর্যন্ত পৌঁছবে। আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন,তবেই নিরাপত্তা লাভ করবেন এবং আপনার রাজত্ব টিকে থাকবে।”

ইয়ামামার শাসক খ্রিষ্টান ছিলেন,এজন্য মহানবী (সা.) সেখানে প্রেরণের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে দূত মনোনীত করেছিলেন,যিনি দীর্ঘদিন আবিসিনিয়ায় ছিলেন এবং খ্রিষ্টীয় আচার,বিশ্বাস ও ধর্মীয় যুক্তিসমূহ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এই দূতের নাম সুলাইত ইবনে আমর,যিনি মুসলমানরা মক্কায় মুশরিকদের চরম নির্যাতনের শিকার থাকাকালে রাসূলের নির্দেশে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। ইসলামের উন্নত শিক্ষা এবং বিভিন্ন স্থানে সফরে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ফলে তাঁর বক্তব্য দানের ক্ষমতা এবং সাহস বেশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তিনি একজন বাগ্মী ও সাহসী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর যুক্তিপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বক্তব্যের মাধ্যমে ইয়ামামার শাসককে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁর উদ্দেশে বলেন : সেই ব্যক্তিই মহান,যে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে এবং খোদাভীতিকে পাথেয় বানিয়েছে। যে জাতি আপনার নেতৃত্বে সৌভাগ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবে,তার পরিণতি কখনো মন্দ হতে পারে না। আমি আপনাকে সর্বোত্তম বিষয়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছি এবং নিকৃষ্ট বিষয় হতে দূরে থাকার উপদেশ দিচ্ছি। আমি আপনাকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানাচ্ছি এবং শয়তানের উপাসনা ও মন্দ প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করছি। আল্লাহর ইবাদতের সুফল চিরস্থায়ী বেহেশ্ত এবং শয়তান ও প্রবৃত্তির অনুসরণের পরিণতি জাহান্নাম। আমি যা বলছি,তা ছাড়া অন্য কিছু যদি গ্রহণ করেন,তবে অপেক্ষা করুন পর্দা উন্মোচিত হয়ে মহাসত্য প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত।”

ইয়ামামার শাসকের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল রাসূলের দূতের কথা তার মনে প্রভাব ফেলেছে। সে দূতের কাছে মহানবীর নবুওয়াতের বিষয়ে চিন্তার জন্য কয়েক দিন সময় চাইল। ঘটনাক্রমে সে সময়ে রোম থেকে একজন প্রথম সারির ধর্মযাজক ইয়ামামায় গেলেন। ইয়ামামার শাসক তাঁর কাছে ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন : কেন তাঁর সত্যায়ন থেকে বিরত রয়েছ?”   সে বলল : আমি আমার রাজত্ব ও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত।” ধর্মযাজক বললেন : আমার মনে হয়,তাঁর অনুসরণ করাই কল্যাণকর ও শ্রেয়। কারণ তিনিই সেই আরব নবী,যাঁর সম্পর্কে হযরত ঈসা (আ.) সংবাদ দিয়েছেন এবং ইনযীলে উল্লিখিত হয়েছে,মুহাম্মদ আল্লাহর নবী।”

ধর্মযাজকের উপদেশমূলক বাণী তাকে মানসিক শক্তি দান করল এবং সে মহানবীর দূতকে ডেকে নিম্নোক্ত (বক্তব্য সম্বলিত) পত্র প্রদান করল : আপনি আমাকে সবচেয়ে সুন্দর ধর্মের প্রতি আহবান করেছেন। আমি আমার জাতির মধ্যে সবচেয়ে বাগ্মী ব্যক্তি ও শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে পরিচিত। আরবদের মধ্যে আমার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আমি আপনার ধর্ম অনুসরণে রাজি আছি। তবে এ শর্তে যে,আপনি আমাকে ধর্মীয় বিশেষ মর্যাদা দেবেন এবং আপনার মর্যাদার অংশীদার (প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত) করবেন।”

সে এ পর্যন্ত বলেই ক্ষান্ত হলো না;বরং মাজাআ ইবনে মারারার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলকে তার বক্তব্য পৌঁছে দেয়ার জন্য মদীনায় প্রেরণ করল এবং তাদেরকে বলে পাঠালো যে,যদি রাসূল তাঁর মৃত্যুর পর তাকে তাঁর স্থলবর্তী করেন,তবে সে ইসলাম গ্রহণ করবে ও তাঁকে সহযোগিতা করবে,নতুবা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তার প্রেরিত প্রতিনিধিরা মহানবীর নিকট উপস্থিত হয়ে শর্তহীন ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে ইয়ামামার শাসকের বাণী তাঁর কাছে পৌঁছাল। মহানবী (সা.) তার কথা শুনে বললেন : যদি তার ঈমান আনা শর্তাধীন হয়ে থাকে,তবে সে খিলাফত লাভের উপযুক্ত নয়। আল্লাহ্ আমাকে তার অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন। 232

মহানবীর অন্যান্য পত্র

মহানবী (সা.) বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকবর্গ ও গোত্রপতিদের নিকট যে পত্রসমূহ দিয়েছেন,তার সংখ্যা অনেক। ঐতিহাসিক ও গবেষকগণ মহানবীর প্রেরিত ঊনত্রিশখানা পত্রের বিবরণ উল্লেখ করেছেন। আমরা গ্রন্থের কলেবর যাতে বৃদ্ধি না পায়,সে লক্ষ্যে অন্যসবের উল্লেখ থেকে বিরত থাকছি।

চুয়াল্লিশতম অধ্যায় :সপ্তম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

খাইবরের দুর্ভেদ্য দুর্গ (আশংকার কেন্দ্র)

ইসলামের প্রদীপ-নক্ষত্র মদীনার আকাশে আলো বিকিরণ শুরু করলে মদীনার ইহুদীরা মক্কার কুরাইশদের থেকেও মহানবী ও মুসলমানদের শত্রুর চোখে দেখতে লাগল এবং সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো।

মদীনা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী ইহুদীরা তাদের অপতৎপরতা ও মন্দ কর্মের পরিণতিতেই দুর্ভাগ্যে পতিত হয়। তাদের অনেকেই মৃতুদণ্ড প্রাপ্ত হয় এবং কোন কোন গোত্র,যেমন বনী কাইনুকা এবং বনী নাযীর মদীনা থেকে বহিষ্কৃত হয়। তারা খাইবর,ওয়াদিউল কুরা বা আযারআতে শামে নতুনভাবে বসতি স্থাপন করে।

মদীনার 32 ফারসাখ (প্রায় 200 কিলোমিটার) দূরবর্তী খাইবর উপত্যকায় অবস্থিত সমতল ভূমিটি অত্যন্ত উর্বর ছিল। মহানবীর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে ইহুদীরা বসবাস ও আত্মরক্ষার জন্য সেখানে সাতটি দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করেছিল। ঐ অঞ্চলের ভূমি ও আবহাওয়া কৃষিকাজের জন্য খুবই উপযোগী থাকায় ওখানে বসবাসকারীরা কৃষিকাজের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছিল,যার দ্বারা তারা আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রস্তুত করত। তারা এক্ষেত্রে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল। সেখানকার জনসংখ্যা বিশ হাজারের অধিক ছিল এবং তাদের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাহসী ও দক্ষ যোদ্ধা ছিল।233

খাইবরের ইহুদীদের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল,তারা আরবের সকল গোত্রকে মদীনার ইসলামী সরকার উৎখাতে উস্কানি দিচ্ছিল এবং মুশরিকরা ইহুদীদের অর্থনৈতিক ও যুদ্ধ সরঞ্জামের পৃষ্ঠপোষকতায় আরবের সকল প্রান্ত থেকে মদীনার সন্নিকটে সমবেত হয়েছিল। এর পরিণতিতে খন্দকের (আহযাব) যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল,যার বিবরণ পাঠকরা পূর্বে পাঠ করেছেন। ঐ যুদ্ধে মহানবীর রণকৌশল ও তাঁর সঙ্গীগণের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকার ফলে আক্রমণকারীরা এক মাস পরিখার বিপরীতে অবস্থান গ্রহণের পর নিজেদের ঘরে,যেমন খাইবরের ইহুদীরা খাইবরে প্রত্যাবর্তনে বাধ্য হয় এবং ইসলামের কেন্দ্র নিরাপত্তা লাভ করে ও শান্তি ফিরে আসে।

খাইবরের ইহুদীদের কাপুরুষোচিত ভূমিকা মহানবীকে বিশৃঙ্খলা ও আশংকার এ কেন্দ্রে আক্রমণ করে তাদের উচ্ছেদ ও নিরস্ত্র করার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। কারণ,এ আশংকা ছিল,একগুঁয়ে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এ জাতি আরবের গোত্রগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে মুসলমাদের বিরুদ্ধে নতুন করে উস্কানী দেবে এবং আহযাবের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। বিশেষত কুরাইশদের মূর্তিপূজা ও স্বধর্মের প্রতি যতটা গোঁড়ামি ছিল,ইহুদীদের স্বধর্মের প্রতি গোঁড়ামি তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এ কারণেই এক হাজার মূর্তিপূজকের বিপরীতে একজন ইহুদীও ইসলাম গ্রহণ করে নি। তারা এতটা গোঁড়া ছিল যে,নিজ ধর্ম ত্যাগ করে সত্য ধর্ম গ্রহণে তাদের কোন আগ্রহই ছিল না।

অন্য যে বিষয়টি মহানবীকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছিল,তা হলো,তিনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকদের প্রতি মাধুর্যপূর্ণ ভাষায় পত্র দিয়ে তাদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। এ প্রেক্ষিতে বিশেষত পারস্য ও রোম সম্রাট ইহুদীদের ব্যবহার করে মুসলমানদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ এবং দীন ইসলামকে অঙ্কুরেই বিনাশ করার প্রচেষ্টা নিতে পারে এ আশংকায় ইহুদীদের কর্মকাণ্ডের উপর কড়া নজর রাখা এবং তাদেরকে নিরস্ত্র করা প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে এ সম্ভাবনাও ছিল,ইহুদীরা রোম ও পারস্য সম্রাটদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে,যেভাবে ইতোপূর্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সংগঠিত করেছিল। বিশেষত ঐ সময়ে ইরান ও রোমের মধ্যেকার যুদ্ধে তারা এক পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করত। এসব দিক চিন্তা করে মহানবী (সা.) দেখলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বিপজ্জনক অগ্নি নির্বাপণ দরকার। এ কাজের জন্য তখনই ছিল উপযুক্ত সময়। কারণ হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণের কোন সম্ভবনা ছিল না;বরং সেদিক থেকে মদীনা নিরাপদ ছিল। আর সে মুহূর্তে ইহুদীদের সংগঠিত শক্তির উপর আক্রমণ ঘটলে কুরাইশরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। অন্যদিকে আহযাবের যুদ্ধে ইহুদীদের সহযোগী মদীনার উত্তরের গাতফান গোত্রসহ অন্যান্য গোত্র,যারা তাদের সাহায্য করতে পারে,তাদের বিষয়েও মহানবী বিশেষ পরিকল্পনা নিলেন।

উপরিউক্ত উদ্দেশ্যসমূহ সামনে রেখে আরব ভূখণ্ডে ইহুদীদের সর্বশেষ কেন্দ্র দখলের লক্ষ্যে মহানবী (সা.) মুসলমাদের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বললেন,এ যুদ্ধে শুধু তারাই সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে যারা হুদায়বিয়ার সন্ধিতে উপস্থিত ছিল। অন্যরা ইচ্ছা করলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারে,কিন্তু গনীমত থেকে কিছুই পাবে না। রাসূল (সা.) গাইলা লাইসীকে মদীনায় তাঁর স্থলবর্তী করে হযরত আলীর হাতে সাদা পতাকা দিয়ে যাত্রার নির্দেশ দিলেন। সেনাদল দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য উট চালানোর সময় বিশেষ সঙ্গীত (হিদা) গাওয়ার অনুমতি দিলেন। উটচালক দলের অগ্রগামী ব্যক্তি আমের ইবনে আকওয়া নিম্নোক্ত কবিতা পড়ছিলেন :

والله لولا الله ما اهـتدينـا

و لا تـصدقنا و لا صليـنـا

انا إذا قوم  بـغـوا علينـا

و ان أرادوا فـتـنـة  ابيـنـا

فانـزلـن سـكينة علينـا

و ثبت الأقـدام ان لاقيـنـا

অর্থাৎ আল্লাহর শপথ,যদি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ না থাকত,তবে আমরা বিপথগামী হতাম। কোন যাকাতও দিতাম না,নামাযও পড়তাম না। আমরা এমন এক জাতি,যদি কেউ আমাদের উপর জুলুম করে বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে,আমরা তাদের অধীনতাকে মানি না। আল্লাহ্ আমাদের তাঁর পথে অবিচল রাখুন এবং আমাদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করুন।

এই কবিতা ও সঙ্গীতের বিষয়বস্তু এ যুদ্ধের উদ্দেশ্যকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করছে। এ থেকে বোঝা যায়,ইহুদীরা আমাদের উপর জুলুম করেছে এবং আমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়েছে বলে আমরা এ ফিতনার কেন্দ্র ধ্বংস করে আগুন নির্বাপিত করতে সফরের কষ্ট সহ্য করছি। তাঁর সঙ্গীতের বিষয়বস্তু মহানবীকে এতটা খুশী করেছিল যে,তিনি আমেরের জন্য দুআ করেন। এ যুদ্ধেই আমের শাহাদাতের শরবত পান করেন।

মহানবী (সা.) সেনাবহিনীকে যাত্রার নির্দেশ দেয়ার সময় সামরিক কৌশল গোপন রাখার বিষয়ে বিশেষ সচেতন ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কেউ তাঁদের গন্তব্যস্থল সম্পর্কে যেন জানতে না পারে এবং শত্রুরা কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তাদের উপর আকস্মিক আক্রমণ চালাবেন ও দুর্গ অবরুদ্ধ করবেন। অন্যদিকে শত্রুপক্ষের মিত্ররা যাতে মনে করে,মহানবী (সা.) তাদের উদ্দেশে হয় তো যাত্রা করে থাকবেন। তাই তারা নিজ ঘর থেকে বের হবার সাহস করবে না।

কেউ কেউ যেন এটা মনে করে,মহানবীর উত্তর দিকে পরিচালিত এ অভিযানের উদ্দেশ্য আহযাবের যুদ্ধে ইহুদীদের দুই সহযোগী গোত্র গাতফান ও ফাযারাহ্। তাই রাসূল (সা.) যখন রাজিই’ নামক স্থানে পৌঁছেন,তখন সেনাদলকে খাইবরের দিকে পরিচালিত করে তাদের ও বনী গাতফান গোত্রের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান নেন যাতে এ দুই গোত্রের মধ্যে যোগাযোগ ছিন্ন হয় এবং তারা খাইবরের ইহুদীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে না পারে। খাইবরের অবরোধ এক মাস স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু এ এক মাসে ঐ গোত্র তাদেরকে সাহায্য করতে পারে নি।234

ইসলামের মহান নেতা দু শ’ অশ্বারোহীসহ এক হাজার ছয় শ’ সৈন্য নিয়ে খাইবর অভিযানে যাত্রা করেন।235

মহানবী (সা.) খাইবরের নিকটবর্তী হলে নিম্নোক্ত দুআ পড়েন,যা তাঁর পবিত্র নিয়্যতের পরিচয় বহন করে :

اللهم ربّ السّموات و ما اظللن و ربّ الأرضين و ما اقللن... نسألك خير هذه القرية و خير أهلها و خير ما فيها، و نعوذ بك من شرها و شر أهلها و شر ما فيها

“হে আল্লাহ,আপনি আকাশ ও যা কিছু তার নিচে রয়েছে,তার পালনকর্তা এবং পৃথিবীসমূহ ও যা কিছু ভারী বস্তু তার উপর রয়েছে,তারও প্রভু। আমি আপনার নিকট এ ভূমি,এর অধিবাসী এবং যা কিছু তাতে রয়েছে,সবকিছুর কল্যাণ কামনা করছি এবং এ ভূমি,এর অধিবাসী এবং এর মধ্যে বিদ্যমান অকল্যাণ হতে আপনার আশ্রয় চাইছি। 236

এক হাজার ছয় শ’ সাহসী সৈনিক,যারা প্রত্যেকেই যুদ্ধের তীব্র আগ্রহ ও উত্তেজনা নিয়ে এখানে এসেছে,তাঁদের সামনে এভাবে ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রার্থনা প্রমাণ করে মহানবী (সা.) প্রতিশোধ গ্রহণ এবং দেশ ও ভূমি দখলের মনোবৃত্তি নিয়ে সেখানে যান নি,বরং তিনি গিয়েছেন এ বিপজ্জনক কেন্দ্র,যে কোন মুহূর্তে যা কাফের ও মুশরিকদের ঘাঁটিতে পরিণত হওয়ার আশংকা রয়েছে,তাকে নিরস্ত্র ও শক্তিহীন করতে,যাতে এদিক থেকে ইসলামের অগ্রযাত্রা নিরাপদ থাকে।

রাতে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পথ অবরুদ্ধ

খাইবরের সাতটি দুর্গের প্রতিটির বিশেষ নাম ছিল;যথাক্রমে নায়েম,কামুস,কুতাইবা,নাসতাত,শাক্ক,তীহ্ এবং মালালিম। কোন কোন দুর্গ কখনো যে সেনাপতির অধীন ছিল,তার নামে অভিহিত হতো,যেমন মারহাবের দুর্গ। অন্যদিকে শত্রুদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি দুর্গের পাশে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ছিল,যাতে কেল্লাগুলোর প্রহরীরা দুর্গের বাইরের খবরাখবর দুর্গের অভ্যন্তরে সরবরাহ করতে পারে। দুর্গগুলো এমনভাবে নির্মিত হয়েছিল,যেন দুর্গের অধিবাসীরা বাইরের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে এবং শত্রুর অবস্থানের ওপর মিনজানিক (পাথর ছোড়ার জন্য বিশেষ কামান) দ্বারা আক্রমণ চালাতে পারে।237

সাতটি দুর্গে অবস্থানরত বিশ হাজার অধিবাসীর মধ্যে দুই হাজার যোদ্ধা ছিল। খাদ্য ও পানীয় এতটা সঞ্চিত ছিল যে,তারা সবাই এ দিক থেকে নিশ্চিত ছিল। তাদের গুদামগুলো খাদ্যে পূর্ণ ছিল। এ দুর্গগুলো এতটা সুরক্ষিত ছিল যে,ছিদ্র করারও কোন সুযোগ ছিল না। যে কেউ দুর্গের দিকে অগ্রসর হলে পাথরের বা তীরের আঘাতে নিহত বা আহত হতো। তাই এ দুর্গগুলো ইহুদী যোদ্ধাদের জন্য শক্তিশালী ঘাঁটি বলে পরিগণিত হতো।

এরূপ শক্তিশালী ও সুসজ্জিত শত্রুর ঘাঁটি দখলের উদ্দেশ্যে আগত মুসলমানদের তা দখল করতে সর্বোচ্চ যুদ্ধকলা ও সূক্ষ্মতম সমরশৈলী অবলম্বনের প্রয়োজন ছিল। তাই মুসলিম যোদ্ধারা সর্বপ্রথম যে কাজ করলো,তা হলো,রাতে দুর্গের দিকের সকল গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পথ অবরোধ করল। এ কাজ এত দ্রুত ও গোপনে সম্পাদিত হলো যে,দুর্গগুলোর প্রহরীরাও তা টের পেল না। সকালে খাইবরের কৃষকরা দুর্গ হতে কৃষিক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বের হলে লক্ষ্য করল,ইসলামের সাহসী ও সংগ্রামী যোদ্ধারা সকল পথ অবরোধ করে রেখেছে,তাদের চেহারা ঈমান ও প্রত্যয়ের চিহ্ন বহন করছে,তাদের শক্তিশালী হাতে রয়েছে ধারালো অস্ত্র। এ অবস্থায় অগ্রসর হলেই বন্দী হতে হবে। তাই এ দৃশ্য দেখামাত্রই তারা এতটা ভীত হলো যে,দ্রুত দুর্গের মধ্যে পালিয়ে গেল। ভেতরে প্রবেশ করে সমবেতভাবে সৈন্যদের জানালো,মুহাম্মদ তার সৈন্যদের নিয়ে দুর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সাথে সাথে দুর্গের কপাট বন্ধ করা হলো। দুর্গের ভেতরে যুদ্ধ উপলক্ষে জরুরী সভা বসলো। অপরদিকে মহানবী (সা.)-এর চোখ কোদাল,বেলচা,গাঁইতি ইত্যাদির মতো ধ্বংসকারী সরঞ্জামের উপর পড়লে তিনি একে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করলেন। তাই মুসলিম সেনাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য বললেন :

الله أكبر خربت خيبر انا إذا نزلنا بساحة قوم فساء صباح المنذرين

“সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই আল্লাহ্,খাইবর ধ্বংস হোক;আমরা যখন এমন জাতির ভূমিতে এসেছি,যাদের সতর্ক করা হয়েছে,তাদের পরিণতি কত মন্দ!

যুদ্ধাবস্থার জরুরী বৈঠকে ইহুদীরা সিদ্ধান্ত নিল,নারী ও শিশুদের একটি দুর্গে এবং খাদ্যদ্রব্য এক দুর্গে রেখে অন্যান্য দুর্গ থেকে প্রতিরোধ করবে। দুর্গের অভ্যন্তর থেকে যোদ্ধারা পাথর ও তীর দিয়ে আক্রমণ করবে এবং সুযোগ বুঝে দুর্গ থেকে বের হয়ে মুসলমানদের সাথে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হবে। এ যুদ্ধকৌশল তারা যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিল এবং এ কৌশলে তারা এক মাস ইসলামের দুর্বার যোদ্ধাদের প্রতিরোধ করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি কখনো কখনো একটি দুর্গ দখলের জন্য মুসলমানরা দশ দিন যুদ্ধ করেছে,কিন্তু কোন ফল হয় নি।

পর পর ইহুদী ঘাঁটির পতন

মুসলমানরা যেখানে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন সে স্থান সামরিক দৃষ্টিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ,ইহুদী সৈন্যদের আক্রমণের আওতায় ছিলেন তাঁরা। খুব সহজেই ইহুদীরা ঐ স্থানে তাঁদের উপর তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে পারত। এ কারণে মুসলমানদের সাহসী ও অভিজ্ঞ সৈন্য হুবাব ইবনে মুনযার মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন : আপনি যদি আল্লাহর নির্দেশে এ স্থানে অবস্থান নিয়ে থাকেন,তবে আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ আল্লাহর নির্দেশ সকল পরামর্শ ও পূর্ব অনুমানের ঊর্ধ্বে। কিন্তু যদি কোন পরিকল্পনা ছাড়া এমনিই এখানে অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন,সেক্ষেত্রে সেনাদলের সদস্যদের পরামর্শ দানের সুযোগ দিলে আমার পরামর্শ হলো,এ স্থান শত্রুর নাগালের মধ্যে। কারণ,তাদের দুর্গ নামতাত’ -এর তীরন্দাজদের সামনে কোন ঘর ও খেজুর গাছ না থাকায় সহজেই তারা আমাদের অবস্থানের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত হানতে পারবে।” মহানবী (সা.) ইসলামের মহান মৌলনীতি (পরামর্শের নীতি) অনুসারে অন্যদের মতামতের গুরুত্ব দেয়ার জন্য বললেন : যদি তোমরা এর থেকে উত্তম স্থান নির্বাচন কর,আমরা ক্যাম্প সরিয়ে সেখানে নিয়ে যাব।” হুবাব ইবনে মুনযার খাইবরের অবস্থানগুলোর সুবিধা-অসুবিধা পর্যালোচনা করে এমন স্থান নির্বাচন করলেন যা খেজুর বাগানের পশ্চাতে ছিল। ফলে যুদ্ধ ক্যাম্পটি সেখানে সরিয়ে নেয়া হলো। খাইবরের যুদ্ধ চলাকালীন দিনের বেলা মহানবী ও সৈন্যগণ ক্যাম্প থেকে দুর্গের দিকে আসতেন ও রাতে সেখানে ফিরে যেতেন।238

খাইবারের যুদ্ধের বিস্তারিত ও যথাযথ বিবরণ দেয়া অসম্ভব। কিন্তু ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থসমূহ থেকে মোটামুটিভাবে জানা যায়,মুসলিম সৈন্যরা একটি একটি করে দুর্গ দখলে অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁরা চেষ্টা করতেন,যে দুর্গে আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে,তা থেকে অন্য দুর্গগুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে। এভাবে একটি দুর্গের পতন ঘটানোর পর অপর দুর্গে আক্রমণ করতেন। কিন্তু যে দুর্গগুলো মাটির নিচ দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত ছিল এবং যে দুর্গগুলোর অভ্যন্তরে সৈন্যরা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলত,সেগুলোর দখল প্রক্রিয়া বেশ ধীর গতিতে সম্পন্ন হতো। কিন্তু যে দুর্গগুলোর সৈন্যদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হতো বা অন্য দুর্গ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত,সহজেই তার পতন হতো। সেক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনাও কম ঘটত।

একদল ঐতিহাসিকের মতে,খাইবরের দুর্গগুলোর মধ্যে প্রথম পতন ঘটে নায়েম দুর্গের। মুসলমানদের তা দখলে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছিল। এ দুর্গ দখল করতে ইসলামের এক মহান সৈনিক মাহমুদ ইবনে মাসলামা নিহত হন এবং আরো কয়েক সৈন্য আহত হন। মাহমুদ ইহুদীদের নিক্ষিপ্ত একটি বড় পাথরের আঘাতে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য ইবনে আসীরের239 বর্ণনামতে তিনি আহত হওয়ার তিন দিন পর শাহাদাত বরণ করেন। পঞ্চাশ জন আহত সৈনিক ব্যান্ডেজ ও শুশ্রূষার জন্য নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তরিত হন।240

বনী গিফার গোত্রের একদল নারী রাসূলের অনুমতিক্রমে খাইবরে এসেছিলেন। তাঁরা আহতদের শুশ্রূষা ও তাঁদের জন্য বৈধ অন্যান্য দায়িত্ব পালনে আত্মত্যাগী ভূমিকা রাখেন এবং এ জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।241

সামরিক পরামর্শসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নায়েম দুর্গের পর কামুস দুর্গকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলো। এ দুর্গে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আবিল হুকাইক। এ দুর্গও মুসলিম সেনাদের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে হস্তগত হলো। ইহুদী নেতা হুইয়াই ইবনে আখতাবের242 কন্যা সাফিয়া এ সময় বন্দী হন,যিনি পরবর্তীতে রাসূলের স্ত্রী হয়েছিলেন।

এ দুই দুর্গের পতন মুসলমানদের মানসিক শক্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল এবং ইহুদীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হলো। কিন্তু মুসলমানদের খাদ্য-দ্রব্যের রসদ ফুরিয়ে এসেছিল বলে তাঁরা খাদ্যসংকটে পড়েছিলেন। ফলে বাধ্য হয়ে এমন প্রাণীর মাংস খেতে বাধ্য হলেন যা মাকরূহ। যে দুর্গে ইহুদীরা খাদ্য-দ্রব্য মজুদ রেখেছিল,তখনও তা মুসলমানদের দখলে আসে নি।

সংকটের মুহূর্তেও চরম আত্মসংযম

মুসলমানদের উপর ক্ষুধার চাপ তীব্রতর হলে তাঁরা মাকরূহ প্রাণীর মাংস খেতে বাধ্য হচ্ছিলেন। তখন একজন কৃষ্ণাঙ্গ রাখাল,যে ইহুদীদের দুম্বাগুলোকে দেখাশুনা করত,রাসূলের নিকট এসে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইল। মহানবী (সা.) আকর্ষণীয় বক্তব্যের মাধ্যমে তার কাছে ইসলাম ধর্মকে তুলে ধরলেন। সেও এতে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করল। সে মহানবীকে বলল : এ দুম্বাগুলো আমার তত্ত্বাবধানে আমানত হিসেবে রয়েছে। এখন তো আমার সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। তাই এ দুম্বাগুলোকে আপনি নিতে পারেন।”

মহানবী (সা.) সহস্রাধিক ক্ষুধার্ত সৈনিকের সামনে সুস্পষ্টভাবে বললেন : আমাদের ধর্মে আমানতের খেয়ানত অন্যতম বড় অপরাধ ও গুনাহ। তোমার দায়িত্ব হলো,দুর্গে গিয়ে দুম্বাগুলোর মালিকের কাছে সেগুলো ফিরিয়ে দেয়া।” সে রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ মতো কাজ করল। সেগুলো ফিরিয়ে দিয়ে সে রাসূলের সৈন্যদলে যোগ দিল। অবশেষে মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হলো।243

মহানবী (সা.) তাঁর যৌবনে আল আমীন’ বা বিশ্বস্ত’ উপাধি লাভ করেছিলেন। কিন্তু তা শুধু সে সময়েই ছিল না;বরং সারা জীবন তিনি এমনই ছিলেন। সকালে দুর্গগুলো থেকে রাখালরা মেষ পাল নিয়ে সবুজ মাঠে যেত এবং সন্ধ্যায় ফিরত,কিন্তু কোন মুসলমানই তা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন নি। কারণ তাঁরা তাঁদের নেতার প্রশিক্ষণে ইসলামের মহান শিক্ষার ছায়ায় তাঁর মতো বিশ্বস্ত ও আমানতদার হিসেবে তৈরি হয়েছিলেন। রাসূল (সা.) শুধু একদিন চরম খাদ্য সংকটে পড়ায় মাত্র দু টি মেষ গ্রহণের অনুমতি তিনি দিয়েছিলেন,যাতে সৈন্যরা তাঁদের জীবন বাঁচাতে পারেন। যদি সংকট এতটা তীব্র না হতো,তবে কখনোই তা করার অনুমতি দিতেন না। অধিকাংশ সময়ই সৈন্যরা ক্ষুধার কষ্টের কথা বললে তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে বলতেন : যে দুর্গে খাদ্য-দ্রব্য রয়েছে,তা হস্তগত কর।” যুদ্ধের মাধ্যমে হস্তগত করা ছাড়া তাদের সম্পদে হস্তক্ষেপে নিষেধ করতেন।244

এ সত্বেও সমসাময়িক কোন কোন মধ্যপ্রাচ্যবিদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামের মহান উদ্দেশ্যকে খাটো করে দেখাতে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এ বিষয়টি প্রমাণের মাধ্যমে যে,মুসলমানরা যুদ্ধের সময় ন্যায়পরায়ণ আচরণ করতেন না এবং ইসলামের যুদ্ধগুলো গনীমত লাভ ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হতো। কিন্তু এ ঘটনাসহ এরূপ অসংখ্য ঘটনা,যা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে,তাদের এ মিথ্যা দাবী অসার প্রমাণ করে। কারণ নিজ ত্যাগী সৈন্যদের জীবন-মরণ সমস্যার সময়ও মহানবী ঐ রাখালকে তার ইহুদী মনিবের সম্পদে বিশ্বাসঘাতকতায় নিষেধ করেছেন;অথচ তিনি ইচ্ছা করলেই তা আটক করতে পারতেন।