চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79186
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79186 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

বিজয়ের কারণ

খাইবরের দুর্গগুলো বিজিত হলো। ইহুদীরা মুসলিম সৈন্যদের সামনে আত্মসমর্পণ করল। কিন্তু এ বিজয়ের প্রভাবক কারণসমূহ কি ছিল?

মুসলমানরা এ যুদ্ধে নিম্নোক্ত কারণে জয়লাভে সক্ষম হন :

1. সঠিক পরিকল্পনা ও উপযুক্ত সামরিক কৌশল গ্রহণ;

2. শত্রুদের অভ্যন্তর থেকে তথ্য লাভ;

3. আমীরুল মুমিনীন আলীর আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় বীরত্ব।

1. সঠিক পরিকল্পনা ও উপযুক্ত সামরিক কৌশল গ্রহণ

মুসলিম সেনাবাহিনী এমন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেছিল,যাতে ইহুদী ও তাদের সহযোগী গোত্রগুলোর,যেমন গাতফানের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। গাতফান গোত্রে বিখ্যাত ও সাহসী অনেক যোদ্ধা ছিল। যদি তারা ইহুদীদের সাহায্যে এগিয়ে আসত এবং সমবেতভাবে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতো,তবে মুসলমানদের পক্ষে জয়লাভ কঠিন হতো। যখন গাতফান গোত্র মহানবী (সা.) ও তাঁর সঙ্গীগণের যুদ্ধযাত্রার কথা শুনল,সাথে সাথে তারা তাদের মিত্রপক্ষকে সাহায্য করতে পর্যাপ্ত অস্ত্র ও রসদ নিয়ে খাইবরের দিকে অগ্রসর হলো;কিন্তু পথিমধ্যে খবর পেল,মুসলিম সেনাদল তাদের পথ ঘুরিয়ে গাতফান গোত্রকে আক্রমণের জন্য অগ্রসর হচ্ছে। এ গুজব তাদেরকে এতটা সন্ত্রস্ত করল যে,তারা অর্ধেক পথ হতে নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরে গেল এবং খাইবরের যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে বের হয় নি।

ঐতিহাসিকগণ এ গুজব গায়েবী শব্দ ভেসে আসার মাধ্যমে ঘটেছিল বলেছেন। কিন্তু এটি অসম্ভব নয় যে,তা মহানবীর নির্দেশে স্বয়ং গাতফান গোত্রের অভ্যন্তরে আত্মগোপন করে থাকা মুসলমানদের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল। সম্ভবত গাতফান গোত্রের কোন কোন উপগোত্র ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তবে তারা নিজেদের কাফের বলে পরিচয় দিত এবং তারাই দক্ষতার সাথে এমন গুজব ছড়িয়েছিল,যাতে গাতফান গোত্র তাদের মিত্র খাইবরের ইহুদীদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে না পারে। এরূপ ঘটনা ইতোপূর্বে খন্দকের যুদ্ধেও ঘটেছিল। এক্ষেত্রেও নুআঈম ইবনে মাসউদ’ নামের গাতফান গোত্রের এক মুসলমানের প্রচারিত গুজবে গাতফান ইহুদীদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকে।

2. গোপন তথ্য সংগ্রহ

মহানবী (সা.) যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি খাইবর অবরোধের পূর্বেই ইবাদ ইবনে বাশার’ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিশ জনকে খাইবর অভিমুখে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন। তাঁরা খাইবরের নিকটবর্তী স্থানে এক ইহুদীর দেখা পেয়ে তার সঙ্গে আলাপ করে বুঝতে পারলেন,সে একজন ইহুদী গুপ্তচর। সাথে সাথেই তাকে গ্রেফতার করে মহানবী (সা.)-এর সামনে উপস্থিত করা হলো। তাকে হত্যার হুমকি দেয়ার ফলে সে ভয়ে ইহুদীদের গোপন সব তথ্য ফাঁস করে দিল। অবশেষে জানা গেল মুনাফিক প্রধান আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের দেয়া তথ্যে তারা মুসলমানদের আগমনের কথা জানতে পেরেছিল। ফলে তারা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। অপরদিকে গাতফান গোত্র হতে সাহায্যের আশ্বাস থাকলেও তা তখনও বাস্তবায়িত হয় নি।

যুদ্ধের দিনে একদল মুসলিম প্রহরী একজন ইহুদীকে গ্রেফতার করে মহানবীর নিকট আনে। তিনি ইহুদীদের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে : যদি আমার প্রাণ রক্ষার নিশ্চয়তা দেন,তবে আমি সব বলব।” তাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হলে সে বলে : আজ রাতে খাইবরের যোদ্ধারা নাশতাত’ দুর্গ থেকে শাক’ দুর্গে স্থানান্তরিত হবে এবং সেখান থেকে আত্মরক্ষা করবে। হে আবুল কাসেম (মুহাম্মদ)! যদি আপনি কালকে নাশতাত দুর্গ দখল করতে পারেন” ,মহানবী (সা.) বললেন : ইনশাআল্লাহ্।” সে বলল : তা হলে এর মাটির নিচের প্রকোষ্ঠে পর্যাপ্ত মিনজানিক (পাথর ছোঁড়ার কামান বিশেষ),অস্ত্র ও পাথর বহনের গাড়ী,তরবারি ও ঢাল রয়েছে,যা আপনার হস্তগত হবে। সেক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহার করে শাক দুর্গে আঘাত হানতে পারবেন।” এ তথ্য জানার ফলে পরবর্তী দিনের হামলার লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত হলো এবং আরো বোঝা গেল,নাশতাত দুর্গ দখলে বেশি সৈন্য নিয়োগ করতে হবে না। এর বিপরীতে শাক দুর্গ দখল করতে হলে সতর্ক থাকতে হবে এবং অধিক সৈন্য ব্যবহার করতে হবে।

অপর একটি দুর্গ দখলে তিন দিনের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর এক ইহুদী ব্যক্তি-সম্ভবত জীবন বাঁচানোর জন্য-এ পরামর্শ দিলো যে,সে ইহুদীদের পানির উৎস সম্পর্কে অবহিত। যদি তা মুসলমানরা বন্ধ করে,তবে তারা খাওয়ার পানির সংকটে পড়বে। অন্য কোন পন্থায় তাদের দুর্বল করা যাবে না এবং এক মাস যুদ্ধ করলেও লাভ হবে না। এক বর্ণনায় এসেছে,মহানবী (সা.) শত্রুর পানির উৎস অবরোধে রাজী হন নি এবং বললেন: আমি কখনোই কাউকে তৃষ্ণায় কষ্ট দিয়ে হত্যা করা সমর্থন করতে পারি না। 262

কিন্তু অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,তিনি কাফেরদের মানসিক শক্তি দুর্বল করতে সাময়িকভাবে পানি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পানি বন্ধ করার ফলে তারা এতটা ভীত হয়ে পড়েছিল যে,সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধের পরপরই তারা আত্মসমর্পণ করে।263

3. হযরত আলী (আ.)-এর ত্যাগ

হযরত আলী (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন : আমরা ইহুদীদের শক্তিশালী বাহিনী ও লৌহ কঠিন দুর্গের মোকাবেলায় দাঁড়ালাম। তাদের যোদ্ধারা প্রতিদিন দুর্গ থেকে বেরিয়ে এসে যুদ্ধের আহবান জানাত এবং মুসলমানদের অনেকেই তাদের হাতে নিহত হতো। একদিন মহানবী (সা.) আমাকে দুর্গ অভিমুখে যাত্রার নির্দেশ দিলেন। আমি তাদের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের মুখোমুখি হলাম। তাদের অনেককেই হত্যা করলাম এবং একদল পালিয়ে গেল। তারা দুর্গের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়ে দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আমি দুর্গের দরজা উপড়ে ফেলে একাকী ভেতরে প্রবেশ করলাম। কেউ আর আমার সামনে এগিয়ে এলো না। এ পথে আল্লাহ্ ছাড়া কেউই আমাকে সাহায্য করে নি।”

যুদ্ধের ময়দানে ভালোবাসা ও সহানুভূতি

কামুস দুর্গের পতনকালে ইহুদী নেতা হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা সাফিয়া অন্য একজন নারীসহ বন্দী হন। হযরত বিলাল তাঁদের দু জনকে ইহুদীদের মৃতদেহের পাশ দিয়ে রাসূলের নিকট নিয়ে এলেন। তিনি তাঁদের কথা শুনলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে স্বীয় চাদর দ্বারা সাফিয়ার মাথা আবৃত করলেন এবং তাঁকে বিশেষ সম্মানসহ সেনা ছাউনীর বিশেষ স্থানে বিশ্রামের ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর হযরত বিলালের প্রতি অসন্তুষ্ট চিত্তে বললেন : তোমার অন্তর থেকে কি দয়া ও ভালোবাসা উঠে গিয়েছে? কেন এই দুই নারীকে তাদের স্বজনদের মৃতদেহের পাশ দিয়ে এনেছ?  শুধু এটুকু সম্মান দেখিয়েই তিনি ক্ষান্ত হলেন না,বরং তাঁকে স্বীয় স্ত্রীর মহা মর্যাদায় সম্মানিত করলেন। এভাবে তাঁর মানসিক কষ্ট কমানোর চেষ্টা করলেন। মহানবীর সুন্দর ব্যবহার ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণে তিনি তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যুশয্যায় অন্যান্য স্ত্রীগণের তুলনায় তিনি অধিক ক্রন্দন করেছিলেন।264

কিনানা ইবনে রবীর মৃত্যুদণ্ড

বনী নাযীর গোত্রের ইহুদীরা মদীনা হতে বহিষ্কৃত হয়ে খাইবরে গিয়ে বসবাস শুরু করল। তারা সেখানে যুদ্ধের ব্যয় বহন,বনী নাযীরের হাতে নিহত ব্যক্তিদের রক্তপণ আদায় ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে সমবায় ব্যাংক গড়ে তুলেছিল। মহানবী (সা.) জানতে পারলেন,এ সমবায় ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব ছিল সাফিয়ার স্বামী কিনানা ইবনে রবীর হাতে। মহানবী তাকে সামনে উপস্থিত করার নির্দেশ দিলে তাকে আনা হলো। তিনি তাকে এ ব্যাংকের অর্থ কোথায় রাখা হয়েছে,সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে এ ধরনের ব্যাংকের অস্তিত্বই সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করল। ফলে তিনি তাকে আটক রাখার নির্দেশ দিয়ে অর্থ জমা রাখার স্থানটি খুঁজতে বললেন। এক ব্যক্তি বলল : আমার মনে হয় সে এ সম্পদ ও অর্থগুলো একটি পতিত ভবনে লুকিয়ে রেখেছে। আমি তাকে যুদ্ধের সময় ঘন ঘন সেখানে যেতে দেখেছি।” মহানবী (সা.) কিনানাকে পুনরায় তাঁর সামনে আনার নির্দেশ দিলেন। তাকে আনা হলে তিনি বললেন : আমাকে জানানো হয়েছে,ঐ অর্থ তুমি অমুক স্থানে লুকিয়ে রেখেছ। যদি তা সেখানে পাওয়া যায়,তা হলে তোমার মৃত্যুদণ্ড হবে।” সে ঐ স্থানে অর্থ লুকিয়ে রাখার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। মহানবী ঐ স্থানটি খননের নির্দেশ দিলেন। খননের ফলে বনী নাযীরের অর্থ-সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হলো। এখন কিনানের উপর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিশ্চিত হলো। কারণ সে এ বিষয়টি গোপন করা ছাড়াও পাথর নিক্ষেপ করে মাহমুদ ইবনে মাসলামাকে হত্যা করেছিল। রাসূল (সা.) অন্যান্য ইহুদীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং একজন মুসলমানের রক্তের বদলা নেয়ার জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। তাকে নিহত ব্যক্তির ভাই মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার হাতে অর্পণ করলেন। তিনি তাকে হত্যা করলেন।265 কিনানা এক মুসলিম সেনাপতিকে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সর্বশেষ আসামী।

যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনীমত) বণ্টন

শত্রুর দুর্গ দখল সম্পন্ন ও তাদেরকে নিরস্ত্র করার পর মহানবী শত্রুদের থেকে পাওয়া সকল সম্পদ এক স্থানে জমা করার নির্দেশ দিলেন। তাঁর পক্ষ থেকে একজন সৈন্য চিৎকার করে ঘোষণা করলেন : প্রত্যেক মুসলিম সেনাকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে যে,সুঁই-সুতা পরিমাণ শত্রুসম্পদ হস্তগত হলেও বায়তুল মালে জমা দেয়ার। কারণ বায়তুল মালের খিয়ানত ও অন্যায় আত্মসাতের শাস্তি কিয়ামতে ভয়াবহ হবে।

ইসলামের মহান নেতা আমানতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কড়াকড়ি করতেন। এমনকি আমানত যথাযথভাবে ফিরিয়ে দেয়াকে ঈমানের এবং তার আত্মসাৎকে কপটতা ও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল মনে করতেন।266 এ কারণে একবার একজন সৈনিকের মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদের মধ্যে এরূপ চুরি করা সম্পদ পেয়ে যাওয়ায় তার জানাযার নামায তিনি পড়েন নি। মুসলিম সৈন্যগণ খাইবর হতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেবার দিন এক দাস রাসূলের আসবাসপত্র গোছানোর সময় তীরবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

কিভাবে,কোথা থেকে তীর এলো তা দেখার জন্য এদিক-ওদিক খোঁজ করা হলো;কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। এদিকে সবাই বলাবলি করতে লাগল,এ ব্যক্তি রাসূলের আসবাসপত্র গোছানোর সময় তীরবিদ্ধ হয়েছে,তার সৌভাগ্য যে,সে বেহেশ্তবাসী হবে। কিন্তু মহানবী (সা.) বললেন : আমি এক্ষেত্রে তোমাদের অনুরূপ বিশ্বাস রাখি না। কারণ সে যে চাদর পরে আছে,তা গণীমতের সম্পদ। সে তা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছে। এ সম্পদ তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের মতো ঘিরে ধরবে।” এ সময় রাসূলের অপর এক সাহাবী বললেন : আমি বিনা অনুমতিতে গণীমতের সম্পদ থেকে দু টি দামী জুতার ফিতা নিয়েছি।” তিনি বললেন : এখনই তা ফিরিয়ে দাও,নতুবা কিয়ামতের দিন তোমার পা দু টি আগুনে জ্বালানো হবে। 267

এ ঘটনাগুলোও কোন কোন মধ্যপ্রাচ্যবিদের দাবীর অসারতা প্রমাণ করে। কারণ তারা ইসলামের যুদ্ধগুলো সম্পদ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে ছিল বলে থাকেন এবং এর আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য গোপন করার প্রচেষ্টা চালান। অথচ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের হিসাবের ক্ষেত্রে এতটা শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার বিধানের প্রতি গুরুত্ব দান কোন লুটতরাজ সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে কখনোই দেখা যায় না। কোন সম্পদলোভী জাতির নেতা আমানত ফিরিয়ে দেয়া ঈমানের চিহ্ন মনে করে না এবং তার সৈন্যদের এতটা প্রশিক্ষিত করে না যে,জুতার ফিতাও ফিরিয়ে দিতে হয় যাতে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের প্রকৃত বণ্টন পদ্ধতি অনুযায়ী তা পাওয়ার সঠিক অধিকারীর হাতে যথাযথ পৌঁছে যায়।

স্মৃতিময় আবিসিনিয়া থেকে কাফেলার প্রত্যাবর্তন

মহানবী (সা.) খাইবরের উদ্দেশে যাত্রার পূর্বে আমর ইবনে উমাইয়্যাকে নাজ্জাশীর দরবারে পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন এ উদ্দেশ্যে যে,তিনি রাসূলের ইসলামের আহবান তাঁর নিকট পৌঁছান এবং আবিসিনিয়ার প্রবাসী মুসলমানদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার ব্যবস্থা করার আহবান জানান। নাজ্জাশী দু টি জাহাজ দিয়ে তাঁদের প্রেরণ করলেন। তাঁরা মদীনার নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলে নোঙ্গর করলেন। তাঁরা মদীনায় পৌঁছে মহানবী (সা.) খাইবরের দিকে যাত্রা করেছেন জেনে সেখানে অপেক্ষা না করে খাইবরের দিকে রওয়ানা হলেন। আবিসিনিয়া প্রত্যাগত মুসলমানরা খাইবরে পৌঁছানোর পূর্বেই সব দুর্গ দখল সম্পন্ন হয়েছিল। রাসূল (সা.) জাফর ইবনে আবী তালিবকে অভ্যর্থনা জানাতে কিছু দূর এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর কপালে চুমু খেয়ে বললেন :

بايّهما أشد سرورا؟ بقدومك يا جعفر أم بفتح الله علي يد أخيك خيبر

“আমি জানি না কোনটিতে বেশি আনন্দিত হয়েছি! দীর্ঘদিন পর তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে,নাকি তোমার ভাই আলীর মাধ্যমে আল্লাহ্ যে ইহুদীদের দুর্গগুলোর পতন ঘটিয়েছেন,তাতে।”

অতঃপর বললেন : আমি আজ তোমাকে কিছু উপহার দেব।” সবাই ভাবলেন হয় তো কোন বস্তুগত উপহার তিনি তাঁকে দেবেন,যেমন দামী বস্ত্র বা সোনা-রূপা ইত্যাদি। কিন্তু মহানবী (সা.) কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তাঁকে বিশেষ এক নামায শিক্ষা দিলেন যা পরবর্তীতে জাফর তাইয়্যার-এর নামায’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।268

যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা

এ যুদ্ধে মুসলমানদের মৃতের সংখ্যা 20 জনের অধিক ছিল না। অপর পক্ষে ইহুদীদের নিহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ ছিল। ইতিহাসে 93 জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।269

বিশ্বের সকল খোদায়ী ও মহান ব্যক্তি বিজয়ের মুহূর্তে অসহায় ও দুর্বল শত্রুদের সাথে উন্নত ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করে থাকেন। শত্রুর অন্যায় আচরণকে উপেক্ষা করে তাদের সাথে দয়ার্দ্র আচরণ করেন। শত্রু আত্মসমর্পণ করার সময় থেকেই সহানুভূতির দ্বার তাদের জন্য উন্মোচিত করেন এবং সকল প্রতিশোধের স্পৃহা ও বিদ্বেষকে ভুলে যান।

যে শত্রুরা তাদের প্রচুর অর্থ ও সম্পদ মুশরিকদের পেছনে খরচ করে তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে মদীনা আক্রমণে প্রলুব্ধ করেছিল ও এভাবে ইসলামের পতন ঘটাতে চেয়েছিল,খাইবর বিজয়ের পর মুসলমানদের মহান নেতা সেই ইহুদীদের জন্য তাঁর করুণায় মুক্তপক্ষ হলেন। তাদের প্রস্তাবকে তিনি মেনে নিলেন এবং সেখানে তাদের বসবাসের অনুমতি দিলেন। খাইবরের ভূমিও তাদের মালিকানায় থাকল। শুধু তাদের ভূমি থেকে উপার্জিত অর্থের অর্ধেক মুসলমানদের দিতে হবে।270 এমনকি ইবনে হিশামের271 মতে,এ প্রস্তাব রাসূল (সা.) নিজেই দেন এবং তাদেরকে কৃষিভূমি ও খেজুর বাগানের মালিক ও তত্ত্বাবধায়ক ঘোষণা করেন।

মহানবী (সা.) তাদের সবাইকে হত্যা করতে পারতেন এবং তাদেরকে সেখান থেকে বহিষ্কার ও ইসলাম গ্রহণে বাধ্যও করতে পারতেন। সাম্রাজ্যবাদের ছত্রছায়ায় প্রতিপালিত প্রাচ্যবিদরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ প্রচার চালায় যে,ইসলাম শক্তি ও তরবারির ধর্ম এবং মুসলমানরা পরাজিত জাতিগুলোকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছিল। তা কখনোই সঠিক নয়;বরং তাঁরা সবসময় প্রতিপক্ষকে তাদের ধর্মের মৌলিক বিধি-বিধান ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করতেন। মহানবী (সা.) খাইবরের ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করে থাকলে তা এ কারণে করেছিলেন যে,তারা ইসলামের ও একত্ববাদী ধর্মের জন্য বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে পরিগণিত হতো এবং সবসময়ই তারা ইসলামের নব প্রতিষ্ঠিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই এক্ষেত্রে তাদের সাথে তিনি বাধ্য হয়েই যুদ্ধ করেন এবং তাদের নিরস্ত্র করে ইসলামী সরকারের অধীনে নিয়ে আসেন এবং এতে মুসলমানরা তাদের হতে নিরাপদ হয় ও তারাও পূর্ণ স্বাধীনতা সহকারে তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য কাজ করার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধান পালনের সুযোগ ভোগ করতে থাকে। এমনটি না করা হলে মুসলমানরা সমস্যায় পড়তেন এবং ইসলামের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতো।

মহানবী (সা.) তাদের কাছ থেকে জিযিয়া (বিশেষ কর) গ্রহণ করেছেন এজন্য যে,তারা যেন ইসলামী সরকারের অধীনে পূর্ণ নিরাপত্তা সহকারে বসবাস করতে পারে। তাদের জীবন ও সম্পদ যেন কোনরূপ হুমকির সম্মুখীন না হয়,তার নিশ্চয়তা বিধান মুসলমানদের দায়িত্ব ছিল। ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার তার মুসলমান অধিবাসীদের থেকে যে পরিমাণ অর্থ কর (যেমন : আয়কর,খাজনা ও ভূমিকর প্রভৃতি) হিসেবে গ্রহণ করে থাকে,তার ইহুদী ও খ্রিষ্টান নাগরিকদের থেকে তার চেয়েও কম অর্থ গ্রহণ করে থাকে। এটি যথার্থ হিসেব করেই করা হয়ে থাকে। মুসলমানরা খুমস ও যাকাত দেয়া ছাড়াও ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কখনো কখনো নিজের উপার্জন ও মূলধন হতেও খরচ করতে বাধ্য। অন্যদিকে ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা ইসলামের নিরাপত্তার পতাকাতলে জীবন যাপন করবে,তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত অধিকারগুলো ভোগ করবে এবং এর বিপরীতে মুসলমানদের মতোই বা তার চেয়ে কম অর্থ জিযিয়া হিসেবে দেবে। তাই এটি অন্যায্য কোন বিষয় নয়। ইসলামী রাষ্ট্রে জিযিয়া জোরপূর্বক চাঁদা গ্রহণও নয়।

প্রতি বছর মহানবী (সা.)-এর পক্ষে এক ব্যক্তি খাইবরে উৎপাদনের হিসাব গ্রহণ ও জিযিয়া আদায়ের জন্য যেতেন। যে ব্যক্তিত্বকে তিনি এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন,তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক ছিলেন,যাঁর সুবিচার ও ন্যায়ানুগ আচরণে ইহুদীরা আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল। এ ব্যক্তিত্ব হলেন আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা,যিনি পরবর্তীতে মুতার যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি খাইবরের মোট ফসলে মুসলমানদের নির্ধারিত অংশের বিষয়ে অনেক সময় অনুমান করে বলতেন। ইহুদীরা ভাবত,তিনি হয় তো ভুল করে বেশি বলেছেন। তিনি তখন তাদেরকে বলতেন : যদি তোমরা মনে কর,আমি ভুল করেছি,তবে যেহেতু উভয়ে সমান সমান পাওয়ার কথা,তাই আমি যে অনুমান করেছি,তার ভিত্তিতে পূর্বেই তোমাদের অর্থ দিয়ে দেব। ফসল বিক্রির পর দু ভাগ করে নেয়ার দরকার নেই। পুরোটাই মুসলমানদের হবে,এতে যদি মুসলমানদের ক্ষতিও হয়।” ইহুদীরা তাঁর এ ন্যায্য কথায় বলত,এ ধরনের ন্যায়বিচারের ছায়াতেই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী টিকে রয়েছে। 272

যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মধ্যে একখানা তাওরাতও ছিল। ইহুদীরা রাসূলের কাছে তা ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানালে তিনি বায়তুল মালের (রাষ্ট্রীয় কোষাগারের) দায়িত্বশীলকে তাদের নিকট তা ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।

ইহুদীদের একগুঁয়ে আচরণ

মহানবী (সা.)-এর সহানুভূতিসম্পন্ন আচরণের বিপরীতে ইহুদীরা ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা হতে বিরত থাকে নি। তারা তাঁর ও তাঁর সাথীগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করতে লাগল। তাদের দু টি নীল নকশার বিবরণ এখানে পেশ করছি :

1. একদল ইহুদী সম্ভ্রান্ত এক ইহুদীর স্ত্রীকে প্ররোচিত করল মহানবীকে বিষ প্রয়োগ করতে। ঐ নারী এক ব্যক্তিকে রাসূলের এক সাহাবীর নিকট তাঁর পছন্দনীয় খাদ্য বিশেষত দুম্বার কোন্ অংশ তিনি খেতে পছন্দ করেন,তা জানার জন্য পাঠাল। ঐ সাহাবী বললেন,দুম্বার সামনের পায়ের মাংস খেতে তিনি পছন্দ করেন। ঐ ইহুদী নারীর নাম ছিল যাইনাব। সে পুরো একটি দুম্বার কাবাব বানাল ও তার পায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষ মিশ্রিত করল। অতঃপর তা রাসূলকে উপহার হিসেবে পাঠালো। রাসূল প্রথম লোকমা মুখে দিয়েই বুঝতে পারলেন,তা বিষ মিশ্রিত এবং সাথে সাথেই তা মুখ থেকে ফেলে দিলেন। কিন্তু তাঁর এক সাহাবী বাশার ইবনে বাররা মারুর’ কয়েক লোকমা খেয়ে ফেলেছিলেন এবং সাথে সাথেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহানবী (সা.) যায়নাবকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন : কেন আমার প্রতি এমন অন্যায় ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করেছ?”   সে শিশুদের ন্যায় অজুহাত দেখিয়ে বলল : তুমি আমাদের গোত্রকে নাজেহাল করেছ,তাদের অপমানকর অবস্থায় ফেলেছ। তাই ভেবেছিলাম,যদি অত্যাচারী শাসক হয়ে থাক,তা হলে এ বিষমিশ্রিত খাদ্য খেয়ে মৃত্যুবরণ করবে,আর যদি আল্লাহর নবী হয়ে থাক,তবে এ খাদ্য গ্রহণ করবে না।” মহানবী (সা.) তাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং তাকে যারা এ কাজে প্ররোচিত করেছিল,তাদেরকে ধরতে বললেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর নবী ছাড়া অন্য কোন শাসকের সাথে যদি এরূপ আচরণ করা হতো,তবে তাদের সবার রক্তে মাটি রঞ্জিত করত ও নির্দোষদের অনেককেও মৃত্যু পর্যন্ত কারাবন্দী করে রাখতো।273

এক ইহুদী নারীর পক্ষ হতে এ ধরনের অপচেষ্টার ফলে মহানবী (সা.)-এর অনেক সাহাবী তাঁর স্ত্রী সাফিয়ার প্রতি সন্দেহপ্রবণ হলেন এবং ভাবলেন,তিনি রাতের অন্ধকারে তাঁর জীবননাশের অপচেষ্টা চালাতে পারেন। এজন্য খাইবর থেকে মদীনা পর্যন্ত যেখানেই কাফেলা রাত যাপন করেছে,আবু আইউব আনসারী তাঁর তাঁবুর পাশে প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছেন। মহানবী (সা.) তাঁর এ প্রহরার বিষয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন। একদিন ভোরে মহানবী তাঁবু হতে বেরিয়ে দেখলেন আবু আইউব আনসারী তাঁবুর বাইরে তরবারি হাতে পায়চারী করছেন। তাঁকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন : যেহেতু আশংকা করছিলাম এই ইহুদী নারী সাফিয়ার অন্তর হতে গোত্রীয় গোঁড়ামী ও কুফরী অপসারিত হয় নি এবং সে আপনার ক্ষতি করতে পারে,সেহেতু সারারাত আপনার তাঁবুর বাইরে পাহারা দিচ্ছিলাম।” মহানবী (সা.) এই নিবেদিতপ্রাণ সাহাবীর আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর জন্য দুআ করলেন।274

2. মহানবী (সা.)-এর উদারতা ও ভালোবাসার জবাবে ইহুদীরা তাঁর প্রতি অবিচার ও অকৃতজ্ঞ আচরণ করেছিল। তার অপর একটি নমুনা হলো : একবার রাসূলের পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ্ ইবনে সাহল খাইবর হতে খাদ্যশস্য মদীনায় আনার দায়িত্ব পেলেন। তিনি মুসলমানদের অংশ পৃথক করার সময় ইহুদীদের নিযুক্ত একদল সন্ত্রাসী তাঁর উপর হামলা চালাল। তারা তাঁর ঘাড়ে এত জোরে আঘাত করল যে,ঘাড় ভেঙে গেল ও তিনি মাটিতে পড়ে মারা গেলেন। তখন তারা তাঁর লাশ নিয়ে একটি নালার মধ্যে নিক্ষেপ করল। অতঃপর ইহুদী নেতারা একদল প্রতিনিধি রাসূলের নিকটে প্রেরণ করে তাঁর মৃত্যু অজ্ঞাত কারণে হয়েছে বলে জানালো। আবদুল্লাহর ভাই আবদুর রহমান ইবনে সাহল তার চাচাতো ভাইদের নিয়ে রাসূলের কাছে এসে তার ভাইয়ের লাশ ইহুদীদের বসতির নিকট পাওয়া গেছে বলে জানায়। যেহেতু আবদুর রহমান কিশোর ছিলেন,সেজন্য তিনি তার কথা থামিয়ে আগে বড়দের কথা বলার সুযোগ দিতে বললেন,যা ইসলামের একটি সামাজিক রীতি। তাঁদের কথা শোনার পর রাসূল বললেন : তোমরা আবদুল্লাহর হত্যাকারীকে চিনে থাকলে আল্লাহর শপথ করে বল,সে তার হত্যাকারী। সে ক্ষেত্রে আমি তাকে গ্রেফতার করে তোমাদের হাতে অর্পণ করব।” তাঁরা যেহেতু ইসলামের বিচারপদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন এবং পরহেজগারী ও খোদাভীরুতার পথ অবলম্বনকে নিজেদের পাথেয় করেছিলেন,এতে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হলেও বললেন : আমরা তো তাঁর হত্যাকারীকে চিনি না।” রাসূল বললেন : ইহুদীরা যদি আল্লাহর শপথ করে বলে যে,তার হত্যাকারীকে তারা চেনে না,তা হলে এই শপথের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আবদুল্লাহর রক্তপণ থেকে মুক্ত হবে,তোমরা কি তা মেনে নেবে?”   তাঁরা বললেন : ইহুদীদের শপথ আমাদর কাছে মূল্যহীন।” এ কথা শুনে তিনি ইহুদী গোত্রপতিদের উদ্দেশে এ মর্মে পত্র লেখার নির্দেশ দিলেন যে,যেহেতু তাদের বসতিতে একজন মুসলমানের ক্ষত-বিক্ষত দেহ পাওয়া গেছে,তাই তারা তার রক্তের জিম্মাদার ও এর রক্তপণ তাদেরই দিতে হবে। তারা তাঁর পত্রের জবাবে শপথ করে বলল: আমরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাই নি এবং তাঁর হত্যাকারী কে,তাও জানি না।” যেহেতু তিনি দেখলেন হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অসমাধানযোগ্য অবস্থায় পৌঁছেছে,তাই নতুন করে রক্তপাত এড়াতে নিজেই আবদুল্লাহর রক্তপণের অর্থ পরিশোধ করলেন।275

এভাবে রাসূল (সা.) আবার প্রমাণ করলেন,তিনি কোন যুদ্ধবাজ ও কলহপ্রিয় ব্যক্তি নন। তিনি সাধারণ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি হলে আবদুল্লাহর হত্যার ব্যাপারটিকে ব্যবহার করে ইহুদীদের শায়েস্তা করতেন ও তাদের অনেকেরই প্রাণহানি ঘটাতেন। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ তাঁকে পবিত্র কুরআনে মানবের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও তাদের জন্য আল্লাহর রহমতস্বরূপ বলেছেন। তিনি কখনোই দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে বা বাধ্য না হলে তরবারি ধারণ করতেন না।276