চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড3%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 84016 / ডাউনলোড: 7997
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

1

2

3

4

5

6

কল্যাণমূলক মিথ্যা২৭৭

‘হাজ্জাজ ইবনে আলাত’ নামের এক ব্যবসায়ী খাইবরে বাস করত। মক্কার অধিবাসীদের সাথে তার ব্যবসায়িক লেন-দেন ছিল। সে একগুঁয়ে ইহুদী জাতির সাথে মহানবী (সা.)-এর সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ ও ইসলামের চোখ ধাঁধানো মর্যাদা লক্ষ্য করে (যা তার হৃদয়কে আলোকিত করেছিল) রাসূলের নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। সে মক্কাবাসীর কাছে তার পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে চতুরতার সাথে পরিকল্পনা আঁটল। সে মক্কায় প্রবেশ করে দেখল কুরাইশ নেতারা উদ্বিগ্ন অবস্থায় খাইবরের খবরের অপক্ষোয় রয়েছে। তাই সে মক্কায় প্রবেশ করে তাদের কাছে পৌঁছামাত্রই তারা তার উটকে ঘিরে অধৈর্য হয়ে রাসূলের জয়-পরাজয়ের খবর জানতে চাইল। সে তাদের প্রশ্নের জবাবে বলল : মুহ্ম্মাদ পরাজিত হয়েছে। এ রকম শোচনীয় পরাজয়ের কথা তোমরা কখনো শোন নি। তার সাথীরা হয় নিহত হয়েছে বা বন্দী। সে নিজেও বন্দী হয়েছে। ইহুদীরা তাকে মক্কায় এনে তোমাদের সামনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এই মিথ্যা খবর তাদের এতটা আনন্দিত করল যে,তারা আনন্দে পাখির মতো উড়তে লাগল। অতঃপর হাজ্জাজ তাদেরকে লক্ষ্য করে বলল : এই সুসংবাদ দেয়ার কারণে আমাকে আমার পাওনাগুলো দিয়ে দাও যাতে করে অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা খাইবরে পৌঁছার পূর্বেই আমি মুসলমান বন্দীদের কিনতে পারি।” প্রতারিত মক্কাবাসীরা যত দ্রুত সম্ভব তার পাওনা টাকা দিয়ে দিল।

এ খবর রাসূল (সা.)-এর চাচা আব্বাসের কানে পৌঁছলে তিনি চিন্তিত হলেন। তিনি হাজ্জাজের নিকট উপস্থিত হওয়ামাত্রই হাজ্জাজ চোখের ইশারায় জানালো,সে পরে বিস্তারিত জানাবে। মক্কা ত্যাগের পূর্বে সে গোপনে আব্বাসের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল : আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনা (মিথ্যা খবর ছড়ানো) এজন্য করেছিলাম যে,মক্কায় যাদের কাছে পাওনা ছিল তাদের থেকে তা আদায় করা। প্রকৃত খবর হলো,যেদিন আমি খাইবার থেকে যাত্রা করি,সেদিন সব ক টি দুর্গ মুসলমানদের হস্তগত হয়েছে এবং হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা সাফিয়াও মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়েছেন। আমি মক্কা থেকে চলে যাওয়ার তিন দিন পর এ সত্য খবর প্রচার করুন,এর পূর্বে নয়।” তিন দিন পর আব্বাস দামী পোশাক পরে নিজেকে পরিপাটি করে সুগন্ধি মেখে লাঠি হাতে নিয়ে কাবা ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করতে লাগলেন। আব্বাসকে আনন্দিত দেখে তারা আশ্চর্যান্বিত হলো। তিনি তাদের বললেন : এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। হাজ্জাজ তার পাওনা আদায়ের জন্য তোমাদের মিথ্যা খবর দিয়েছে। সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে যেদিন খাইবর থেকে মক্কার দিকে যাত্রা করে,সেদিন মুহাম্মদ (সা.) ও মুসলমানদের ভাগ্যে সবচেয়ে বড় বিজয় ঘটেছে। ইহুদীদের দুর্গগুলো দখল হয়েছে এবং তাদেরকে নিরস্ত্র করা হয়েছে। তাদের একদল নিহত ও অপর দল মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়েছে।” কুরাইশ নেতারা এ খবর শুনে চরম হতাশ হলো। এর কিছুক্ষণ পরই তাদের দূত মুসলমানদের খাইবর বিজয়ের খবর নিয়ে এলো।২৭৮

পঁয়তাল্লিশতম অধ্যায় : সপ্তম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

ফাদাকের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ফাদাক একটি আবাদ ও উর্বর অঞ্চলের নাম যা খাইবরের কাছে অবস্থিত (ছিল)। মদীনা থেকে এ অঞ্চলের দূরত্ব ছিল প্রায় ১৪০ কি.মি.। খাইবরের দুর্গগুলোর পরই এ অঞ্চলটি হিজাযের ইহুদীদের বসবাসকেন্দ্র বলে গণ্য হতো।২৭৯

মদীনার উত্তর দিক থেকে নিরাপত্তাজনিত যে শূন্যতা অনুভূত হতো, মুসলিম বাহিনী কর্তৃক খাইবর, ওয়াদিউল কুরা ও তাইমা অঞ্চলের ইহুদীদের দমন করার পর সামরিক শক্তির মাধ্যমে তা পূরণ করা হয়েছিল। এ ভূখণ্ডের ইহুদীদের সামরিক শক্তির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে-যারা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি বলে গণ্য হতো-মুহীত নামক দূতকে (মহানবীর পক্ষ থেকে) ফাদাক অঞ্চলের ইহুদী নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করা হয়। ইউশা’ ইবনে নূন যিনি এ অঞ্চলের ইহুদীদের প্রধান ছিলেন, যুদ্ধ করার চেয়ে সন্ধি ও আত্মসমর্পণের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেন এবং প্রতি বছর ফাদাকের মোট উৎপাদিত শস্যের অর্ধেক মহানবী (সা.)-এর হাতে অর্পণ এবং ইসলামের পতাকাতলে (ইসলামী রাষ্ট্রের ছায়ায়) বসবাস করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। আর ঠিক একইভাবে তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করার এবং এর বিপরীতে ইসলামী রাষ্ট্র ঐ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।

যেসব ভূখণ্ড সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ও যুদ্ধের মাধ্যমে অধিকার করা হয় সেগুলো সর্বসাধারণ মুসলিম উম্মাহর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ঐসব বিজিত অঞ্চলের সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব ইসলাম ও মুসলমানদের শাসনকর্তার (মহানবী বা তাঁর পরে তাঁর খলীফা) হাতে ন্যস্ত। তবে যে অঞ্চল সামরিক অভিযান পরিচালনা এবং সেনাবাহিনী প্রেরণ না করে (বিনা যুদ্ধে) মুসলমানদের হস্তগত হয়, তা স্বয়ং মহানবী (সা.) এবং তাঁর পরে তাঁর স্থলবর্তী ইমামের সাথেই সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকে এবং এ ধরনের ভূখণ্ডের সর্বময় ক্ষমতা ও এখতিয়ার কেবল তাঁর হাতেই ন্যস্ত থাকে। তিনি তা দান করে দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে ভাড়াও দিতে পারেন। এ সংক্রান্ত আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তিনি এ ধরনের সম্পদ থেকে তাঁর নিকটাত্মীয়দের বৈধ প্রয়োজনাদি সম্মানজনকভাবেও মেটাতে পারেন।২৮০

মহানবী (সা.) শরীয়তের এ বিধানের ভিত্তিতে ফাদাক তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.)-এর কাছে হিবা করেছিলেন। বিদ্যমান সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুসারে এ সম্পত্তি হিবা করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দু টি বিষয় :

১. মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর মুসলমানদের সার্বিক বিষয়াদি পরিচালনার দায়িত্ব এবং নেতৃত্বভার হযরত আলীর ওপর অর্পিত ছিল; আর এ বিষয়টি বহুবার মহানবী স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এক বিরাট ব্যয়েরও প্রয়োজন আছে। হযরত আলী (আ.) এ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ ও পালন করার জন্য ফাদাক থেকে লব্ধ আয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারতেন। (মহানবীর ওফাতের পর) খিলাফত-প্রশাসন এ ধরনের পূর্বাভাসের ব্যাপারে অবগত ছিল বিধায় তাঁর ওফাতের পর প্রথম দিনগুলোতেই তাঁর আহলে বাইতের হাত থেকে ফাদাক’ নিজ কর্তৃত্বে নিয়ে যায়।

২. মহানবীর বংশধরগণ, যাঁদের পূর্ণাঙ্গ নমুনা হচ্ছেন হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন, তাঁরা যাতে মহানবীর ওফাতের পর সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন এবং মহানবীর মান-মর্যাদাও যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেজন্য তিনি ফাদাক ভূখণ্ড নিজ কন্যা ফাতিমা (আ.)-এর কাছে হিবা করেছিলেন।

শিয়া মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ এবং কতিপয় সুন্নী আলেম লিখেছেন : যখন

) و آت ذا القربى حقّه و المسكين و ابن السّبيل(

আর আপনি (আপনার) নিকটাত্মীয়, দরিদ্র এবং মুসাফিরকে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করুন’২৮১ -এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন মহানবী (সা.) নিজ কন্যাসন্তান হযরত ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁর কাছে ফাদাকের স্বত্ব হস্তান্তর করেছিলেন।২৮২ এ ঘটনার বর্ণনাকারী হচ্ছেন আবু সাঈদ খুদরী, যিনি মহানবী (সা.)-এর অন্যতম সম্মানিত সাহাবী ছিলেন।

শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সকল মুফাসসির বিশ্বাস করেন, এ আয়াত মহানবী (সা.)-এর নিকটাত্মীয়দের অধিকার প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তাঁর কন্যা যিলকুবরা অর্থাৎ নিকটাত্মীয়দের সবচেয়ে স্পষ্ট বাস্তব নমুনা। এমনকি সন্ধ্যাবেলা যখন ঐ শামদেশীয় লোকটি ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীন (আ.)-কে বলেছিল : তুমি তোমার নিজের পরিচয় দাও”, তখন তিনি নিজ পরিচয় তুলে ধরার জন্য উপরিউক্ত আয়াত (সূরা ইসরা : ২৬) তেলাওয়াত করেছিলেন। আর এ বিষয়টি মুসলমানদের মধ্যে এতটা স্পষ্ট ছিল, শামদেশীয় ঐ লোকটি ইমাম যাইনুল আবেদীনের বক্তব্য সত্যায়ন স্বরূপ মাথা নেড়ে তাঁকে এভাবে বলেছিল : রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সাথে আপনার নিকটাত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার কারণে মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে আপনাদের অধিকার প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন।”২৮৩

সারসংক্ষেপ : এ আয়াত যে হযরত ফাতিমা যাহরা এবং তাঁর বংশধরগণের শানে অবতীর্ণ হয়েছে, সে ব্যাপারে মুসলিম জ্ঞানীদের মধ্যে ঐকমত্য (ইজমা) রয়েছে। তবে এ আয়াত অবতীর্ণ হবার সময় মহানবী (সা.) ফাদাক ভূখণ্ডটি যে হযরত ফাতিমার উদ্দেশ্যে হিবা করেছিলেন, সে ব্যাপারে শিয়া মুসলিম আলেমদের মধ্যে ঐকমত্য বিদ্যমান আছে এবং কতিপয় সুন্নী আলেমও এ ব্যাপারে শিয়া আলেমদের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন।

আব্বাসী খলীফা (যে কারণেই হোক না কেন) হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর বংশধরগণের কাছে ফাদাক ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মূসা নামক এক বিখ্যাত ঐতিহাসিকের কাছে একটি পত্রে তাঁকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি (ঐতিহাসিক) উপরিউক্ত হাদীস- যা ছিল ঐ আয়াতের শানে নুযূল- খলীফার কাছে লিখে পাঠিয়েছিলেন। আর খলীফা মামুনও হযরত ফাতিমার বংশধরগণের কাছে ফাদাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।২৮৪

আব্বাসী খলীফা (মামুন) মদীনার শাসনকর্তার কাছে লিখেছিলেন : মহানবী (সা.) ফাদাক গ্রামটি স্বীয় কন্যা হযরত ফাতিমাকে হিবা করেছিলেন এবং এটি একটি সন্দোহতীত বিষয়। আর হযরত ফাতিমার বংশধরগণের মধ্যেও এ ব্যাপারে কোন মতভিন্নতা নেই।”২৮৫

মামুন যেদিন ফাদাক সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য আসনে উপবিষ্ট হলেন, তখন প্রথমে তাঁর হাতে একটি আবেদনপত্র আসে, যার লেখক নিজেকে হযরত ফাতিমা (আ.)-এর পক্ষ সমর্থনকারী বলে পরিচয় প্রদান করেন। মামুন ঐ পত্রটি পড়ে একটু ক্রন্দন করেন এবং বলেন : হযরত ফাতিমার পক্ষ সমর্থনকারী কে? তখন এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে নিজেকে হযরত ফাতিমার পক্ষ সমর্থনকারী বলে তুলে ধরলেন।

বিচার অধিবেশনটি তাঁর ও মামুনের মধ্যে একটি বিতর্কসভার রূপ পরিগ্রহ করেছিল। অবশেষে মামুন নিজেকে দোষী বলে দেখতে পেলেন এবং আদালতের প্রধান বিচারপতিকে হযরত ফাতিমার বংশধরগণের কাছে ফাদাক ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেয়ার জন্য একটি পত্র লেখার নির্দেশ দিলেন। উক্ত পত্র লেখা হলো এবং খলীফা মামুন তা অনুমোদন করলেন। ঐ সময় উক্ত বিতর্ক সভায় উপস্থিত দে বেল দাঁড়িয়ে কিছু কবিতা আবৃত্তি করেন, যার শুরুতে ছিল নিম্নোক্ত পঙ্ক্তি :

أصبح وجه الزّمان قد ضحكا

بـردّ مـأمـون هـاشـم فـدكا

ফুটে উঠেছে হাসির রেখা কালের আননে

বনী হাশিমের কাছে মামুনের

ফাদাক ফিরিয়ে দেয়ার কারণে।

ফাদাক ভূখণ্ড যে হযরত ফাতিমার বৈধ সম্পত্তি ছিল, তা প্রমাণ করার জন্য যে সব দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে শিয়ারা সেগুলোর বিন্দুমাত্র মুখাপেক্ষী নয়। কারণ ইসলামের সর্বপ্রধান পরম সত্যবাদী (সিদ্দীকে আকবর) আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) বসরার গভর্নর উসমান ইবনে হুনাইফের কাছে লেখা এক পত্রে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ফাদাকের মালিকানা উল্লেখ করে বলেছেন :

بلي كانت فِى أيدينا فدك من كلّ ما أظلّته السّماء. فَشَحَّت عليها نفوسُ قومٍ، و سَخَتْ عنها نفوسُ قومٍ آخَرين و نعمَ الحَكَمُ اللهُ

“হ্যাঁ, যেসব কিছুর ওপর আকাশ ছায়া প্রদান করেছে, সেসবের মধ্যে ফাদাক গ্রামের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূসম্পত্তিও অন্তর্ভুক্ত, যা আমাদের হাতে (কর্তৃত্বে) ছিল। কিন্তু কোন কোন গোষ্ঠী এ ব্যাপারে কার্পণ্য করল। আর একদল উদার ও মহানুভব ব্যক্তি বিশেষ কতিপয় বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে তা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। তবে মহান আল্লাহ্ই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।২৮৬

তাই এ স্পষ্ট বক্তব্য বিদ্যমান থাকা সত্বেও এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা কী করে সম্ভব হতে পারে?

মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পরে ফাদাকের ইতিহাস

মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মহানবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরাকে তাঁর বৈধ ভূসম্পত্তি থেকে বঞ্চিত এবং তাঁর নিযুক্ত কর্মচারী ও শ্রমিকদের সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাই তিনি আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে তাঁর বৈধ অধিকার আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

প্রথম পর্যায়ে ফাদাক গ্রামটি হযরত ফাতিমা (আ.)-এর কর্তৃত্বাধীন ছিল। আর এ কর্তৃত্ব তাঁর স্বত্বাধিকারী হওয়ার প্রমাণ ছিল। এ সত্বেও ইসলাম ধর্মের বিচার সংক্রান্ত যাবতীয় নীতির বিপক্ষে প্রশাসন তাঁর কাছে সাক্ষী উপস্থিত করার দাবী জানায়। অথচ বিশ্বের কোথাও কোন সম্পদ কারো কর্তৃত্বে বিদ্যমান থাকলে, যাকে পারিভাষিক অর্থে যূল ইয়াদ’ (ذو اليد ) বা স্বত্বাধিকারী’ বলা হয়, তার কাছ থেকে কখনো সাক্ষী চাওয়া হয় না। হযরত ফাতিমা বাধ্য হয়ে হযরত আলী (আ.)-এর মতো ব্যক্তিত্ব এবং উম্মে আইমানের মতো নারী, যাঁকে মহানবী (সা.) বেহেশতের নারীগণের অন্তর্ভুক্ত বলে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাঁকে, এবং বালাযুরীর২৮৭ বর্ণনানুযায়ী, মহানবীর আযাদকৃত দাস রাবাহকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য খলীফার কাছে নিয়ে যান। খিলাফত-প্রশাসন তাঁদের সাক্ষ্য প্রদানকে মোটেই গুরুত্ব দেন নি এবং এভাবে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যাকে যে ভূসম্পত্তি হিবা করেছিলেন, তা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়ে যায়।

আয়াতে তাতহীর২৮৮ অনুসারে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.), হযরত আলী (আ.) এবং তাঁদের সন্তানদ্বয় (হাসান ও হুসাইন) সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র; আর যদি এ আয়াত মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীগণকে শামিল করে, তবুও তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা নিশ্চিতভাবে এ আয়াতে বর্ণিত আহলে বাইতের বাস্তব নমুনা হবেন। তবে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, এ বিষয়টিও সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয় এবং তদানীন্তন খলীফা হযরত ফাতিমার এ দাবীকে স্বীকৃতি দেন নি।

শিয়া আলেমগণ বিশ্বাস করেন, খলীফা অবশেষে মহানবীর কন্যার দাবীর কাছে মাথা নত করেছিলেন এবং ফাদাক যে তাঁর বৈধ নিষ্কণ্টক ভূসম্পত্তি, সে ব্যাপারে একটি পত্র লিখে তাঁকে প্রদান করেছিলেন। পত্র নিয়ে ফেরার সময় পথিমধ্যে খলীফার পুরানো বন্ধুর সাথে মহানবীর কন্যা হযরত ফাতিমার সাক্ষাৎ হলে তিনি পত্র লেখার ঘটনা জানতে পারেন। তিনি হযরত ফাতিমা (আ.)-এর কাছ থেকে পত্রটি এনে খলীফার সামনে উপস্থিত করে তাঁকে বলেছিলেন : যেহেতু এ ঘটনার মধ্যে আলীর স্বার্থ আছে, তাই তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। আর উম্মে আইমান একজন মহিলা এবং একজন মহিলার সাক্ষ্যের কোন মূল্য নেই।” এরপর তিনি খলীফার সামনেই উক্ত পত্র ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন।২৮৯

হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে এ ঘটনা একটু ভিন্নভাবে বর্ণনা করে বলেছেন : খলীফা হযরত ফাতিমার মালিকানার সত্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ সেখানে তাঁর বন্ধু হযরত উমর এসে উপস্থিত হন এবং বলেন, এ পত্রটি আসলে কী? তখন খলীফা তাঁকে বলেছিলেন : এ পত্রে আমি ফাতিমার মালিকানা সত্যায়ন করেছি।” তখন হযরত উমর বললেন : আপনার জন্য (ভবিষ্যতে) ফাদাকের আয়ের প্রয়োজন হবে। কারণ আগামীকাল যদি আরবের মুশরিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এত খরচ কোথা থেকে আপনি মেটাবেন? আর এরপর হযরত উমর উক্ত পত্র নিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন।২৯০

এ কারণেই এখান থেকে একজন শিয়া কালামবিদ আলেমের বক্তব্যের বস্তুনিষ্ঠতা উপলব্ধি করা যায়। তা হলো, ইবনে আবীল হাদীদ বলেছেন :“‘ আমি আলী ইবনে নাকী’ নামক একজন ইমামীয়া শিয়া কালামবিদ আলেমকে বলেছিলাম, ফাদাক গ্রামটা এতটা বড় ছিল না এবং ঐ ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে গুটিকতক খেজুর গাছ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর ঐ সব খেজুর গাছ এতটা মূল্যবান ছিল না যে কারণে ফাতিমার বিরোধীরা এ ভূখণ্ডের ব্যাপারে লোভ করবে।”২৯১

তিনি আমার প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন : আপনি এ ব্যাপারে ভুল করছেন। সেখানকার খেজুর গাছগুলোর সংখ্যা কুফার বর্তমান খেজুর গাছগুলোর চেয়ে কম ছিল না। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এ উর্বর ভূখণ্ড থেকে মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত ও বংশধরগণের বঞ্চিত করার কারণ ছিল, আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) পাছে এ ভূখণ্ডের আয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিরোধ করার কাজে ব্যবহার করেন এমন আশংকার দিকটি বাস্তবায়নে সক্ষম না হন। এ কারণে শুধু হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-কেই ফাদাক থেকে বঞ্চিত করা হয় নি; বরং বনী হাশিম এবং আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণকে তাঁদের ন্যায্য অধিকার অর্থাৎ খলীফাদের শাসনামলে মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ অর্থাৎ মালে গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ (খুমস) থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। নিঃসন্দেহে যে গোষ্ঠীটি চরম অভাব, দারিদ্র্য ও দূরবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করতে বাধ্য হবে এবং জীবনের চাহিদা মেটাতেই ব্যস্ত থাকবে, তারা কখনোই বিদ্যমান অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার চিন্তা তাদের মাথায় লালন করবে না।২৯২

ইবনে আবীল হাদীদ শারহু নাহজিল বালাগাহ্ গ্রন্থের ২৮৪ পৃষ্ঠায় পশ্চিম বাগদাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন বিখ্যাত শিক্ষক (আলী ইবনুল ফারিকী) থেকে এ বাক্যটি উদ্ধৃত করে বলেছেন : আমি তাঁকে বললাম : মহানবী (সা.)-এর কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.) কি তাঁর দাবীর ক্ষেত্রে সত্যবাদী ছিলেন? তিনি বলেছিলেন : হ্যাঁ”। আমি তাকে বললাম, খলীফা কি জানতেন যে, হযরত ফাতিমা সত্যবাদী? তিনি বলেছিলেন : হ্যাঁ।” তখন আমি তাঁকে বলেছিলাম : খলীফা কেন তাঁর নিশ্চিত বৈধ অধিকার তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেন নি? এ সময় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক স্মিত হেসে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে বলেছিলেন : খলীফা যদি সত্যবাদী নারী হিসেবে হযরত ফাতিমা (আ.)-এর বক্তব্যসমূহ মেনে নিতেন এবং সাক্ষী না চেয়েই ফাদাক ভূখণ্ড তাঁর কাছে হস্তান্তর করতেন; তা হলে পরের দিন তিনি নিজ স্বামী আলী (আ.)-এর অনুকূলে এ অবস্থাকে কাজে লাগাতেন এবং বলতেন : খিলাফত আমার স্বামীর সাথে সংশ্লিষ্ট। আর এ অবস্থায় খলীফা আলীর কাছে খিলাফত হস্তান্তর করতে বাধ্য হতেন। কারণ তিনি ফাতিমাকে সত্যবাদী বলে মেনে নিয়েছেন এবং বিশ্বাস করেন। কিন্তু এ ধরনের দাবীর পথ রুদ্ধ করার জন্যই খলীফা হযরত ফাতিমাকে তাঁর বৈধ নিশ্চিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন।”

ফাদাক ভূখণ্ড থেকে হযরত ফাতিমা (আ.)-এর সন্তান ও বংশধরগণকে বঞ্চিত করার ভিত প্রথম খলীফার সময়েই রচিত হয়েছিল। আর হযরত আলী (আ.)-এর ইন্তেকালের পর মুয়াবিয়া খিলাফতের সার্বিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ফাদাক ভূখণ্ডকে তিন ব্যক্তির (মারওয়ান, আমর ইবনে উসমান ও নিজ পুত্র ইয়াযীদ) মধ্যে বণ্টন করে দেন। মারওয়ানের খিলাফতকালে ফাদাকের সকল অংশ তার হাতে চলে আসে এবং সে তা তার পুত্র আবদুল আযীযকে হিবা করে দেয়। আর সেও তা তার পুত্র উমর ইবনে আবদুল আযীযকে প্রদান করেছিল। বনী উমাইয়্যার খলীফার মধ্যে কেবল উমর ইবনে আবদুল আযীযই মধ্যপন্থী ছিলেন। তাই খলীফা হবার পর তিনি সর্বপ্রথম যে বিদআত বিলোপ করেন, তা ছিল, তিনি ফাদাক ভূখণ্ড হযরত ফাতিমার বংশধরগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর পরবর্তী খলীফারা বনী হাশিমের হাত থেকে ফাদাক ছিনিয়ে নিয়েছিল এবং বনী উমাইয়্যার খলীফাদের জীবন অবসান হওয়ার দিন পর্যন্ত ফাদাক তাদের কর্তৃত্বে থেকে গিয়েছিল।

বনী আব্বাসের খিলাফতকালে ফাদাক ভূখণ্ড সংক্রান্ত সমস্যা আরো আশ্চর্যজনক রূপ পরিগ্রহ করেছিল। যেমন আবুল আব্বাস আস্ সাফফাহ্ (প্রথম আব্বাসী খলীফা) আবদুল্লাহ্ ইবনে হাসানের কাছে ফাদাক হস্তান্তর করেছিল। তারপর দ্বিতীয় আব্বাসী খলীফা মানসূর আদ দাওয়ানিকী আবার তা কেড়ে নিয়েছিল। তবে তার পুত্র খলীফা মাহদী তা হযরত ফাতিমার বংশধরদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর (মাহদী) মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থে আব্বাসী খলীফা মূসা ও খলীফা হারুনুর রশীদ হযরত ফাতিমার বংশধরদের হাত থেকে ফাদাক কেড়ে নিয়েছিলেন। আর এ অবস্থাটা মামুনের খলীফা হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ফাদাক সংক্রান্ত ন্যায্য অধিকার এর প্রকৃত স্বত্বাধিকারীগণের কাছে ফিরিয়ে দেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ফাদাক আবারো অস্থিতিশীল অবস্থার শিকার হয় অর্থাৎ কখনো তা হযরত ফাতিমার বংশধরগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হতো, কখনো তা তাঁদের কাছে ফেরত দেয়া হতো। বনী উমাইয়্যা ও বনী আব্বাসের খিলাফতকালে অর্থনৈতিক গুরুত্বের চেয়ে ফাদাকের রাজনৈতিক গুরুত্বই অধিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। ইসলামের প্রথম যুগের খলীফাগণ ফাদাকের আয়ের মুখাপেক্ষী ছিলেন। তবে পরবর্তী যুগগুলোতে খলীফা ও আমীর-অমাত্যগণ এতটা অর্থ ও ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েছিল যে, তাদের আর ফাদাকের আয়ের প্রয়োজন হতো না। এ কারণেই যখন খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীয হযরত ফাতিমা (আ.)-এর বংশধরগণের কাছে ফাদাক অর্পণ করেন, তখন বনী উমাইয়্যা তাঁকে ভর্ৎসনা করে বলেছিল : আপনি এ কাজের দ্বারা শায়খাইন’ অর্থাৎ হযরত আবু বকর ও হযরত উমরকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।” আর এ কারণে তারা তাঁকে ফাদাকের মূল মালিকানা নিজ হাতে রেখে এ ভূসম্পত্তির আয় হযরত ফাতিমার সন্তান ও বংশধরগণের মধ্যে বণ্টন করতে বাধ্য করেছিল।২৯৩

আইনের মানদণ্ডে ফাদাক

ফাদাক সংক্রান্ত বিষয় অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে যায়, মহানবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমাকে তাঁর ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ছিল নেহায়েত একটি রাজনৈতিক ব্যাপার। আর এ বিষয়টি তদানীন্তন শাসনকর্তার কাছে অধিক স্পষ্ট ছিল। এ কারণেই মহানবীর কন্যা হযরত ফাতিমা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও বাক-অলংকার সমৃদ্ধ এক অনলবর্ষী বক্তৃতায় বলেছিলেন :

هذا كتاب الله حكما و عدلا و ناطقا و فضلا يقول: يرثنِى و يرث من آل يعقوب و ورث سليمان داوود و بيّن عزّ و جلّ فِى ما وزع من الأقساط و شرع من الفرائض

“মহান আল্লাহর কিতাব কুরআন- যা হচ্ছে ফয়সালাকারী, স্পষ্টভাষী বিচারক এবং মীমাংসাকারী-বলছে : হযরত যাকারিয়া (আ.) মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, মহান আল্লাহ্ তাঁকে এমন এক সন্তান দিন, যে তাঁর ও ইয়াকুবের বংশধারার উত্তরাধিকারী হবে।২৯৪ এ কিতাবে আরো বলা হয়েছে : আর সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।২৯৫ মহান আল্লাহ্ (তাঁর) ইলাহী কিতাব কুরআনে উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য অংশগুলো বর্ণনা করেছেন এবং ফারায়েযও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।”২৯৬

মহান নবীগণের উত্তরাধিকারী যে তাঁদের সন্তান ও বংশধরগণ- এ সংক্রান্ত উপরিউক্ত আয়াতদ্বয়ের অর্থনির্দেশ এবং যে হাদীস কেবল খলীফাই রেওয়ায়েত করেছেন, সেই হাদীসের ব্যাপারে আলোচনা পর্যালোচনা এ অধ্যায়ের কলেবর বৃদ্ধি করবে। তাই আগ্রহী পাঠকবৃন্দ তাফসীরের গ্রন্থসমূহ পাঠ করতে পারেন। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য ফারাযহায়ী হাসসাসে আয যেন্দেগানীয়ে আলী’ অর্থাৎ হযরত আলীর জীবনের সংবেদনশীল অধ্যায় ও ঘটনাসমূহ’ গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারেন।)

ওয়াদিউল কুরা বিজয়

মহানবী (সা.) কেবল এ এলাকায় (ফাদাক) ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোকেই দমন করেন নি, বরং তিনি ইহুদীদের আরো একটি ঘাঁটি ওয়াদিউল কুরায়’ সামরিক অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন বলে মনে করেন। তাই তিনি নিজেই কয়েকদিন সেখানকার ইহুদীদের দুর্গ অবরোধ করে রাখেন এবং বিজয়ের পর খাইবরের অধিবাসীদের সাথে যে ধরনের সন্ধি চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন, সে ধরনের একটি চুক্তি ওয়াদিউল কুরার ইহুদীদের সাথেও সম্পাদন করেন। আর এভাবে তিনি সম্পূর্ণ হিজায অঞ্চলকে ইহুদী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের হাত থেকে মুক্ত করেন এবং তাদের সবাইকে নিরস্ত্র করে মুসলমানদের হেফাযতে আনেন।২৯৭

ইসলামের মুবাল্লিগগণের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড

আদাল (عضل ) ও কারা (قاره ) গোত্রের একদল প্রতিনিধি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলে : হে রাসূলাল্লাহ্! আমাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুঁকেছে এবং আমাদের সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। আপনি দয়া করে আপনার একদল সাহাবীকে প্রেরণ করুন তাঁরা আমাদের মাঝে ধর্ম প্রচার করবেন,আমাদেরকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেবেন এবং মহান আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত হালাল ও হারাম সম্পর্কে আমাদের অবহিত করবেন। 75

মহানবী (সা.)-এর দায়িত্ব ছিল এই যে,কতিপয় বড় গোত্রের প্রতিনিধি এ দলটির আহবানে সাড়া দেবেন। আর মুসলমানদেরও দায়িত্ব ছিল যে কোন কিছুর বিনিময়ে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। এ কারণে মহানবী (সা.) মুরসেদ নামক এক সাহাবীর অধিনায়কত্বে একটি দলকে গোত্রগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে উল্লিখিত অঞ্চলে প্রেরণ করেন। তাঁরা গোত্রীয় প্রতিনিধিদের সাথে মদীনা এবং মুসলমানদের শক্তি ও কর্তৃত্বের আওতার বাইরে চলে যান এবং রাযী নামক এক পানির উৎসের স্থানে পৌঁছেন। সেখানে গিয়ে গোত্রীয় প্রতিনিধিরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের প্রকাশ ঘটায়। তারা হুজাইল গোত্রের সাহায্য নিয়ে মদীনা থেকে প্রেরিত লোকদের বন্দী ও হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঐ অঞ্চলে মুসলমানরা (মদীনা থেকে প্রেরিত মুবাল্লিগ) যখন শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হন,তখন তরবারি ছাড়া তাঁদের আর কোন আশ্রয়স্থল ছিল না। এ কারণে তরবারির বাঁট শক্ত করে হাতে ধরে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের জন্য তাঁরা তৈরি হয়ে যান। কিন্তু শত্রুপক্ষ শপথ করে বলে : তোমাদের বন্দী করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। আমাদের লক্ষ্য হলো তোমাদের জীবিত অবস্থায় পাকড়াও করে কুরাইশ নেতাদের হাতে তুলে দেয়া এবং তার বিনিময়ে কিছু অর্থ লাভ করা।

মুসলিম মুবাল্লিগগণ একে অপরের দিকে তাকালেন এবং তাঁদের অধিকাংশই সিদ্ধান্ত নিলেন,তাঁরা লড়াই করবেন। তাঁরা বললেন : আমরা মূর্তিপূজারী ও মুশরিকদের কোন প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করব না। অতঃপর তাঁরা তরবারি কোষমুক্ত করেন এবং ইসলামের প্রতিরক্ষায় ও মহানবী (সা.)-কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার লক্ষ্যে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদাত লাভ করেন। কিন্তু যাইদ ইবনে দাসিনাহ্,খুবাইব ইবনে আদী ও আবদুল্লাহ্ তরবারি কোষবদ্ধ করে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। অর্ধেক পথে এসে আবদুল্লাহ্ আত্মসমর্পণ করার কারণে অনুতপ্ত হন। তিনি হাতের বাঁধন খুলে ফেলেন এবং তরবারি কোষমুক্ত করে শত্রুর ওপর আক্রমণ করেন। শত্রুরা পশ্চাদপসরণ করে এবং পাথর নিক্ষেপ করে তাঁকে ধরাশায়ী করে। তারা তাঁর দিকে এত বেশি পাথর নিক্ষেপ করে যে,তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই প্রাণ হারান। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। কিন্তু অপর দুই বন্দীকে মক্কার কাফেরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার বিনিময়ে মুসলমানদের যারা বন্দী করেছিল তাদের দুই বন্দীকে কুরাইশরা মুক্তি দেয়।

সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা,যার পিতা বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল,বন্দী যাইদকে ক্রয় করে যাতে একজন ইসলাম প্রচারককে হত্যার মাধ্যমে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো যে,এক বিশাল জনতার সামনে যাইদকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। তানঈমে76 ফাঁসিকাষ্ঠ টানানো হয়।

কুরাইশরা ও তাদের মিত্ররা নির্দিষ্ট তারিখে সেখানে সমবেত হয়। তার মৃত্যুর জন্য কয়েক মুহূর্তের বেশি বাকী ছিল না।

মক্কার ফিরআউন আবু সুফিয়ান সকল ঘটনায় নিজে দূরে থেকে নেপথ্যে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত। আবু সুফিয়ান এবার যাইদকে লক্ষ্য করে বলে : তুমি যে আল্লাহকে বিশ্বাস করো,তার শপথ দিয়ে বলছি-আমাকে বলো,তুমি কি চাও যে,মুহাম্মদ তোমার পরিবর্তে নিহত হোক? তা হলে তুমি মুক্তি পাবে এবং নিজ ঘরে ফিরে যাবে।

যাইদ পূর্ণ সাহসিকতার সাথে বললেন :  আমি কখনো রাজি হব না যে,মহানবী (সা.)-এর পায়ে কোন কাঁটা বিদ্ধ হোক,যদিও তার বিনিময়ে আমার মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।

যাইদের বলিষ্ঠ জবাব আবু সুফিয়ানকে বিব্রত করে। মহানবী (সা.)-এর প্রতি সাহাবীগণের ভালোবাসার আধিক্য দেখে বিস্মিত হয়ে সে মন্তব্য করে : আমার দীর্ঘ জীবনে মুহাম্মদের সাথীদের মতো আর কারো সাথী দেখি নি,যারা এত বেশি ত্যাগী হতে পারে,এত অধিক ভালোবাসা পোষণ করতে পারে!

কিছুক্ষণের মধ্যেই যাইদকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়। তাঁর প্রাণপাখি উড়ে যায় ঊর্ধ্বলোকের পানে। সত্য ও ন্যায়ের সীমান্ত রক্ষায়,ইসলামের সত্য বাণী প্রচারের লক্ষ্যে এঁরা শিরকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিসর্জন দেন।

দ্বিতীয় ব্যক্তি খুবাইব দীর্ঘদিন বন্দী অবস্থায় কাটান। মক্কার পরামর্শসভা সিদ্ধান্ত নেয়,তাঁকেও তানঈম-এ ফাঁসিকাষ্ঠে চড়ানো হবে।77

খুবাইব ফাঁসিকাষ্ঠের পাশে মক্কার নেতা ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দু রাকাত নামায আদায়ের অনুমতি গ্রহণ করেন। এরপর অতি সংক্ষেপে দু রাকাত নামায আদায় করেন এবং কুরাইশ নেতাদের লক্ষ্য করে বলেন : আমি মৃত্যুকে ভয় করি বলে তোমাদের ধারণা হতে পারে-এ সন্দেহ যদি না হতো,তা হলে এর চেয়ে বেশি নামায পড়তাম।78 নামাযের রূকূ ও সিজদা দীর্ঘ করতাম। এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন : হে আল্লাহ্! আপনার নবীর পক্ষ হতে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা আমরা পালন করেছি। ঐ মুহূর্তে হত্যার আদেশ জারি করা হয়। খুবাইবকে ফাঁসিকাষ্ঠে চড়ানো হয়। খুবাইব ফাঁসিকাষ্ঠের ওপর বলতে লাগলেন : হে আল্লাহ্! আপনি জানেন,আমার একজন বন্ধুও আশেপাশে নেই,যে আমার সালাম মহানবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছে দেবে। হে আল্লাহ্! আপনিই আমার সালাম তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দিন।

হয় তো এই আধ্যাত্মিক পুরুষের ধর্মীয় আবেগ আবু উকবার সহ্য হচ্ছিল না। সে দাঁড়িয়ে খুবাইবের ওপর এক শক্ত আঘাত হানে এবং তাঁকে শহীদ করে।

ইবনে হিশামের বর্ণনা অনুযায়ী79 খুবাইব প্রাণত্যাগের পূর্বক্ষণে শূলির উপর এ কয়েক পঙ্ক্তি আবৃত্তি করেন :

فوالله ما أرجو اذا مت مسلما

علي اى جنب كان فى الله مصرعى

وذلك فِى ذات االله و ان يشأ

يبـارك علي اوصـال شلـومـمزع

মহান আল্লাহর শপথ! যদি মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করি,

তা হলে কোন্ এলাকায় আমাকে দাফন করা হবে,তা নিয়ে চিন্তা করি না।

আমার এই হৃদয়বিদারক মৃত্যু আল্লাহর পথে,তিনি যদি চান,

এ শাহাদাত আমার দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য মুবারক করে দেবেন।

এ হৃদয়বিদারক ঘটনা মহানবী (সা.)-কে দারুণভাবে মর্মাহত করে এবং মুসলমানদের গভীর শোকে নিমজ্জিত করে। মুসলমানদের মহান কবি হাস্সান ইবনে সাবিত এ উপলক্ষে মর্মস্পর্শী কবিতা রচনা করেন যা ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

রাসূল (সা.) এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন,এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এর ফলে বহু কষ্টে প্রশিক্ষিত ইসলাম প্রচারের বীর সেনানীর উপর অপূরণীয় আঘাত আসতে পারে। কুৎসিত অন্তরের ইতর লোকেরা পূত চরিত্রের ধর্মপ্রচারকগণের উপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে যেতে পারে।

এই বীর মুজাহিদের লাশ বহু দিন ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলন্ত ছিল। একদল লোক লাশ পাহারা দিত। অবশেষে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে দু জন দুঃসাহসী মুসলমান রাতের বেলা ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে তাঁর লাশ নামিয়ে আনেন এবং দাফন করেন।80

বীরে মাউনার ঘটনা

হিজরী চতুর্থ সালের সফর মাসে রাযী নামক স্থানে ইসলামের কৃতি সন্তানদের শাহাদাতের খবর মহানবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছার আগে আবু বাররা আমেরী মদীনায় আগমন করে। মহানবী (সা.) তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সে দাওয়াত কবুল করল না। তবে মহানবী (সা.)-এর খেদমতে আরয করল,যদি তিনি শক্তিশালী কোন ধর্ম প্রচারকারী দলকে নাজদ এলাকায় প্রেরণ করেন,তা হলে তাদের ঈমান আনার আশা করা যায়। কেননা তাওহীদের প্রতি তাদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। মহানবী (সা.) বললেন : নাজদবাসীদের প্রতারণা ও শত্রুতাকে আমি ভয় পাই। আবু বাররা বলল : আপনার প্রেরিত ব্যক্তিবর্গ আমার আশ্রয়ে থাকবেন। আমিই নিশ্চয়তা দিচ্ছি,আমি তাদেরকে যে কোন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করব।

মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে চল্লিশ জন ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব,মুনযির-এর নেতৃত্বে নাজদের উদ্দেশে রওয়ানা হন। তাঁদের সবাই ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফেয ও ধর্মীয় বিধানে পারদর্শী। তাঁরা বীরে মাউনার (মাউনার কূপ) কাছে গিয়ে যাত্রা বিরতি করেন। মহানবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত একখানা পত্র নাজদ গোত্রীয় নেতা আমর ইবনে তুফাইলের উদ্দেশে লিখেছিলেন। তাঁর পত্র আমেরের কাছে পৌঁছানোর জন্য একজন মুসলমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আমের শুধু যে মহানবী (সা.)-এর চিঠিখানা পড়ে নি,তা নয়;বরং পত্রবাহককেও হত্যা করে। এরপর সে তার গোত্রের লোকদের ইসলাম প্রচারকগণকে হত্যা করার আহবান জানায়। গোত্রের লোকেরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকে এবং বলে,গোত্রের মুরব্বী আবু বাররা তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিজ গোত্রের লোকদের সাহায্যের ব্যাপারে সে নিরাশ হয় এবং আশেপাশের গোত্র ও সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চায়। এভাবে ইসলামের মুবাল্লিগগণের অবস্থানস্থলটি আমেরের লোকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়।

ইসলামের প্রচারকারীরা শুধু যে বড় জ্ঞানী ও ধর্ম প্রচারক ছিলেন,তা-ই নয়;বরং বীর যোদ্ধাও ছিলেন। তাঁরা আত্মসমর্পণকে নিজেদের জন্য অবমাননাকর মনে করেন এবং তরবারি হাতে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেন। শুধু কা ব ইবনে যাইদ আহত শরীর নিয়ে কোনমতে মদীনা পৌঁছেন এবং ঘটনাটি মহানবীকে অবহিত করেন।

এ হৃদয়বিদারক ঘটনা গোটা ইসলামী বিশ্ব ও মুসলমানদের দারুণভাবে মর্মাহত করে। মহানবী (সা.) বহু দিন ধরে বীরে মাউনার স্মরণ করতেন।81

এ দু টি ঘটনাই ছিল উহুদ যুদ্ধে পরাজয়ের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কেননা এর ফলে মুসলমানদের হত্যার জন্য আশেপাশের গোত্রগুলোর সাহস বেড়ে গিয়েছিল।

প্রাচ্যবিদদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবস্থান

প্রাচ্যবিদরা যেখানে কোন মুশরিকের মুখে সামান্য আঁচড় লাগলেই সমালোচনামুখর হয়ে উঠেন এবং ইসলাম ও মুসলমানদের উপর মারমুখী হয়ে যান,আর জোর করে এ কথা বলার চেষ্টা করেন যে,ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে,তাঁরা এই বেদনাদায়ক দু টি ঘটনার ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন এবং এ ব্যাপারে একটা কথাও বলেন নি।

বিশ্বের কোথায় আছে যে,জ্ঞানের ঝাণ্ডাবাহীদের হত্যা করা হয়? ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়ে থাকলে এই মিশনারী দলগুলো কেন প্রাণকে হাতের তালুতে রেখে ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন এবং শাহাদাতকে আলিঙ্গন করেছেন?

এ দু টি ঘটনার অনেক শিক্ষণীয় দিক আছে। তাঁদের ঈমানের শক্তি,আত্মত্যাগ,জান বাজি রেখে যুদ্ধ ও সাহসিকতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়,বিস্ময়কর এবং মুসলমানদের জন্য প্রেরণার উৎস।

মুমিন কখনো একবারের বেশি প্রতারিত হয় না

রাযী ও বীরে মাউনার হৃদয়বিদারক ঘটনায় ইসলামের বহু মুবাল্লিগ শহীদ হওয়ার কারণে মুসলমানদের মধ্যে দারুণ মর্মবেদনার সৃষ্টি হয়। এক অস্বাভাবিক ধরনের বিষাদ মুসলমানদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। এখানে এসে পাঠকদের মনে হয় তো প্রশ্ন জাগবে,মহানবী (সা.) কেন এহেন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন? প্রথম ঘটনায় অর্থাৎ রাযীর নিকটে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে,তারপরও অপর চল্লিশ ব্যক্তিকে তিনি কেন বীরে মাউনায় পাঠালেন? মহানবী (সা.) কি নিজেই বলেন নি : لا يلدغ المؤمن من جُحر مرّتين মুমিন (সর্পের) এক গর্ত হতে দু বার দংশিত হয় না।

এ প্রশ্নের জবাব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কেননা ইসলাম প্রচারকারী দলটি আবু বাররার গোত্রের হাতে শহীদ হন নি। যদিও তার ভাতিজা আমের ইবনে তুফাইল আবু বাররার গোত্র-যা তার নিজেরও গোত্র-ইসলাম প্রচারকদের হত্যার জন্য প্ররোচিত করছিল,কিন্তু ঐ গোত্রের একজনও তার কথায় সায় দেয় নি। সবাই বলেছিল : তোমার চাচা তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমের ইবনে তুফাইল পার্শ্ববর্তী ভিন্ন গোত্র সালীম যাকওয়ান -এর কাছ থেকে সহায়তা নেয় এবং ইসলাম প্রচারকগণকে নির্মমভাবে শহীদ করে। ইসলামের প্রচার সৈনিকরা আবু বাররার এলাকার উদ্দেশে গমনকালে নিজেদের মধ্য থেকে আমর ইবনে উমাইয়্যা ও হারিস ইবনে সিম্মাহকে82 তাঁদের উটগুলো চরানো ও দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত করেন। তাঁরা তাঁদের কাজে নিয়োজিত অবস্থায় হঠাৎ আমের ইবনে তুফাইল তাঁদের ওপর চড়াও হয়। ফলে হারিস ইবনে সিম্মাহ্ নিহত হন এবং আমর ইবনে উমাইয়্যাকে মুক্তি দেয়া হয়। আমর ইবনে উমাইয়্যা মদীনায় ফিরে আসার সময় দু জন লোকের সাক্ষাৎ পান। তিনি নিশ্চিত হন,তারা সেই গোত্রের লোক যারা দীনের মুবাল্লিগগণকে হত্যা করেছে। এ কারণে তিনি উভয়কে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে মদীনায় ফিরে আসেন।

তাঁর এ কাজটি ভুল ধারণার কারণে হয়েছিল। কেননা তারা আবু বাররার (বনী আমের) গোত্রের লোক ছিল,যারা আপন গোত্রপতির প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে মুসলিম ধর্মপ্রচারকদের দলের ওপর হামলা চালাতে রাযী হয় নি।

এ ঘটনার ফলেও মহানবী (সা.)-এর মর্মবেদনা বৃদ্ধি পায়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন,ঐ দু জনের রক্তমূল্য তিনি পরিশোধ করবেন।

তবে এ ব্যাপারে তাবাকাতে ইবনে সা দ-এর83 প্রণেতা স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন,উভয় দলের পরিণতির খবর একই রাতে মহানবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছায়। দ্বিতীয় দলটি পাঠানোর সময় মহানবী (সা.) রাযীর শহীদদের ভাগ্যে কী ঘটেছে,তা জানতেন না।

চৌত্রিশতম অধ্যায় : চতুর্থ হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

বনী নাযীরের যুদ্ধ

মদীনার মুনাফিক ও ইহুদীরা উহুদে মুসলমানদের পরাজয় এবং ধর্মীয় বিশেষজ্ঞগণের নিহত হবার ঘটনায় দারুণ খুশী হয়েছিল। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল,মদীনায় কোন বিদ্রোহ ঘটাবে। এর মাধ্যমে মদীনার বাইরের গোত্রগুলোকে বোঝাবে যে,মদীনায় ন্যূনতম ঐক্য ও সংহতি বিদ্যমান নেই। কাজেই বহিঃশক্তি এসে ইসলামের নব্য প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করতে পারবে।

মহানবী (সা.) বনী নাযীর গোত্রের ইহুদীদের উদ্দেশ্য ও চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে অবহিত হবার জন্য একদল সৈনিকসহ তাদের দুর্গের দিকে গমন করেন। কিন্তু বনী নাযীরের সাথে যোগাযোগের পেছনে মহানবীর দৃশ্যমান উদ্দেশ্য ছিল আমর ইবনে উমাইয়্যার হাতে নিহত বনী আমের গোত্রের দুই আরবের রক্তমূল্য পরিশোধে তাদের সহায়তা নেয়া। কেননা বনী নাযীর গোত্র মুসলমানদের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। ওদিকে বনী আমেরের সাথেও তাদের মৈত্রীচুক্তি ছিল। চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলো সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে সহায়তা দিয়ে থাকে।

মহানবী (সা.) দুর্গের প্রবেশদ্বারে অবতরণ করেন এবং তাঁর উদ্দেশ্যের কথা গোত্রীয় প্রধানদের কাছে তুলে ধরেন। তারা দৃশ্যত খোলা মনে মহানবীকে অভ্যর্থনা জানায় এবং কথা দেয়,রক্তমূল্য পরিশোধের ব্যাপারে তারা তাঁকে সাহায্য করবে। তারা মহানবীকে তাঁর ডাকনাম আবুল কাসেম -এ সম্বোধন করে অনুরোধ করতে থাকে : আপনি আমাদের দুর্গে প্রবেশ করুন এবং একটি দিন এখানে অবস্থান করুন। রাসূল তাদের অনুরোধ গ্রহণ করলেন না;বরং দুর্গের দেয়ালের ছায়ায় সাথী ও সৈনিকগণ সহ বসেন এবং বনী নাযীর গোত্রের সর্দারদের সাথে কথাবার্তা বলতে থাকেন।84

মহানবী (সা.) উপলব্ধি করেন,তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথার সাথে এক ধরনের সংশয়পূর্ণ রহস্যজনক তৎপরতা মিশে আছে। অন্যদিকে তিনি যেখানে বসে ছিলেন,সেখানে লোকজনের আনাগোনা বেশি করে পরিলক্ষিত হচ্ছিল। কানে কানে কথাবার্তা বেশি হচ্ছিল,যা থেকে সহজেই সন্দেহ জাগে। মূলত বনী নাযীরের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল,মহানবীকে অতর্কিত আক্রমণ করে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেবে। তাদের একজন আমর হাজ্জাশ প্রস্তুতি নিয়েছিল,সে ছাদের উপর যাবে এবং মহানবী (সা.)-এর উপর একটি পাথর ফেলে তাঁকে হত্যা করবে।

সৌভাগ্যজনকভাবে তাদের নীল-নকশা ব্যর্থ হয়ে যায়। তাদের সন্দেহপূর্ণ ও অসংলগ্ন আচরণ থেকে তাদের চক্রান্ত আঁচ করা যাচ্ছিল। আল ওয়াকিদীর বর্ণনা অনুযায়ী ওহীর ফেরেশতা মহানবীকে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। তিনি তাঁর স্থান থেকে সরে বসেন এবং এমনভাবে মজলিস ছেড়ে উঠে যান যে,ইহুদীরা মনে করল,কোন কাজে তিনি বাইরে যাচ্ছেন এবং আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু রাসূল (সা.) মদীনার পথ ধরে অগ্রসর হন। তাঁর সাহাবীগণকেও এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু জানালেন না। তাঁরা তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু তাঁরা যতই অপেক্ষা করুন,তাতে কোন ফল হলো না।

বনী নাযীরের ইহুদীরা দারুণ দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে পড়ে গেল। তারা একদিকে ধারণা করছিল যে,মহানবী (সা.) তাদের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছেন। তা-ই যদি হয়,তবে তাদের বড় ধরনের শাস্তি পেতে হবে। অপরদিকে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল : মহানবী যেহেতু এখন আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছেন,তার প্রতিশোধ আমরা তার সাথীদের কাছ থেকেই নিই। তবে সাথে সাথে বলছিল যে,এ অবস্থায় পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে যাবে এবং মহানবী (সা.) নিঃসন্দেহে আমাদের কাছ থেকে এর প্রতিশোধ নেবেন।

এহেন পরিস্থিতিতে মহানবী (সা.)-এর সাথে যাঁরা এসেছিলেন,তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন,মহানবীর খোঁজে তাঁরা যাবেন এবং তিনি কোথায় আছেন,তা সন্ধান করবেন। দুর্গের প্রাচীর থেকে বেশি দূরে যেতে না যেতেই তাঁরা এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ পান,যিনি মদীনা থেকে আসছিলেন। তিনি মহানবীর মদীনা প্রবেশের সংবাদ নিয়ে আসেন। তাঁরা তৎক্ষণাৎ মহানবীর নিকট উপস্থিত হন। সেখানেই তাঁরা ইহুদীদের চক্রান্তের কথা জানতে পারেন,যা ওহীর ফেরেশতা জিবরীল (আ.) তাঁকে জানিয়েছিলেন।85

এ জঘন্য অপরাধ মোকাবেলায় করণীয়

এখন এ বিশ্বাসঘাতকদের ব্যাপারে মহানবীর করণীয় কি? এরাই সেই সম্প্রদায় যারা ইসলামী হুকুমতের নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছিল। ইসলামের সৈনিকরা তাদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করছিলেন। জীবনভর তারা মহানবীর নবুওয়াতের সাক্ষ্য-প্রমাণ স্বচক্ষে দেখছিল। তারা তাদের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থে শেষ নবীর সত্যতার পক্ষে সাক্ষ্য ও প্রমাণ দেখতে পেয়েছে;অথচ তাঁকে আতিথেয়তার পরিবর্তে হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছে। অত্যন্ত কাপুরুষোচিত পন্থায় তাঁকে হত্যার উদ্যোগ নিয়েছে।

এক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের দাবী কী? এ ধরনের পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এবং এরূপ বিশ্বাসঘাতকতার মূলোৎপাটন করা হয়,তার জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে?

এক্ষেত্রে রাসূল (সা.) গৃহীত পদ্ধতি ছিল যুক্তিসঙ্গত। গোটা সেনাবাহিনীতে তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। এরপর মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমা আউসীকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁকে নির্দেশ দেন,অতি সত্বর তাঁর পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত হুকুম যেন বনী নাযীরের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। তিনি বনী নাযীরের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বললেন : ইসলামের মহান নবী আমার মাধ্যমে তোমাদের কাছে এই বার্তা পাঠিয়েছেন যে,দশ দিনের মধ্যে অবশ্যই তোমরা এই ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যাবে। কেননা তোমরা চুক্তিভঙ্গ করেছ,প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছ। যদি দশ দিনের মধ্যে এ এলাকা ত্যাগ না কর,তা হলে তোমাদের রক্ত প্রবাহিত করা হবে।

এ বার্তা ইহুদীদের মধ্যে মারাত্মক হতাশার সৃষ্টি করে। তারা প্রত্যেকে এ ষড়যন্ত্রের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে। তাদের জনৈক নেতা সবাইকে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব করে। কিন্তু অধিকাংশের গোয়ার্তুমী এ প্রস্তাব গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চরম অসহায়ত্ব তাদের ঘিরে ধরে। নিরুপায় হয়ে মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমার উদ্দেশে বলে : হে মুহাম্মদ! আপনি আউস গোত্রের লোক। মহানবীর আগমনের পূর্বে আউস গোত্রের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি ছিল। এখন কেন আমাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন?”   তিনি পূর্ণ সৎ সাহস ও বলিষ্ঠতা সহকারে বললেন : সেদিন পার হয়ে গেছে। এখন মানুষের মন পরিবর্তন হয়ে গেছে।

এ সিদ্ধান্ত সেই চুক্তির আওতায় নেয়া হয়,যে চুক্তি মহানবীর মদীনা আগমনের প্রথম দিনগুলোয়ই তিনি মদীনার ইহুদী গোত্রগুলোর সাথে সম্পাদন করেছিলেন। ঐ চুক্তিতে বনী নাযীর গোত্রের পক্ষে হুইয়াই ইবনে আখতাব স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তির বিষয়বস্তু আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। এর কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে : মহানবী তিন গোত্রের সাথেই (বনী নাযীর,বনী কাইনুকা ও বনী কুরাইযাহ্) চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন,তারা কখনো রাসূলুল্লাহ্ ও তাঁর সাহাবীগণের ক্ষতি করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেবে না;মুখে বা হাতে তাঁদের কোন ক্ষতি করবে না।... যদি ঐ তিন গোত্রের কোন একটি চুক্তির বিষয়বস্তুর বিরোধী আচরণ করে,তা হলে তাদের রক্তপাত ঘটানো,সম্পদ বাজেয়াফ্ত করা এবং তাদের নারী ও সন্তানদের বন্দী করার অধিকার মহানবীর থাকবে।86

কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন

প্রাচ্যবিদদের দেখা যায়,এখানে এসে তাঁরা পুনরায় কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন শুরু করে দেন। তাঁরা মায়ের চেয়ে মাসীর দরদের মতো বনী নাযীর গোত্রের বিশ্বাসঘাতক,চুক্তিভঙ্গকারী ইহুদীদের জন্য যারপর নাই অশ্রু বিসর্জন করেছেন। তারা মহানবীর কাজ ন্যায়বিচারের পরিপন্থী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন।

তাদের এ মায়াকান্না ও সমালোচনা সত্য উদ্ঘাটন বা প্রকৃত বিষয় হৃদয়ঙ্গম করার উদ্দেশ্যে নয়। কেননা সম্মানিত পাঠকবর্গ ইহুদীদের সাথে মহানবীর চুক্তির যে বিবরণ পাঠ করেছেন,তাতে এ মতটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে,মহানবী তাদের জন্য যে শাস্তির ব্যবস্থা করেন,তা চুক্তিপত্রে উল্লিখিত শাস্তির চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক লঘু। আজকের দিনে এসব প্রাচ্যবিদের প্রভুদের পক্ষ থেকে প্রাচ্যে ও প্রতীচ্যে কত জঘন্য অপরাধ করা হচ্ছে,অথচ এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্য হতে একজনও সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন না। কিন্তু মহানবী (সা.) যখন মুষ্টিমেয় বিশ্বাসঘাতককে তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে উল্লিখিত শাস্তির চেয়েও কম শাস্তির ব্যবস্থা করেন,তখন কতিপয় লেখক সমালোচনামুখর হয়ে উঠেন। অথচ এসব লেখক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ জাতীয় ঘটনাগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকেন।


9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49

50

51

52

53