চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79218
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79218 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

ছেচল্লিশতম অধ্যায় : সপ্তম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

উমরাতুল কাযা298

হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মুসলমানগণ এ চুক্তি সম্পাদিত হবার তারিখ থেকে এক বছর অতিক্রান্ত হবার পর পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করে উমরার আমলসমূহ আঞ্জাম দেবার পর পবিত্র মক্কা নগরী ত্যাগ করতে পারতেন (হুদায়বিয়ার শান্তি চুক্তি মোতাবেক)। তখন (এ চুক্তি মোতাবেক) সফর করার সময়, মুসাফিরের সাথে যে অস্ত্র থাকে তা অর্থাৎ তরবারি ছাড়া, অন্য কোন অস্ত্র বহন করার অনুমতি তাঁদের ছিল না।

হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হবার পর থেকে পুরো এক বছর কেটে যায়। মুসলমানদের জন্য এ চুক্তি থেকে কল্যাণ লাভ করার সময়ও তখন ঘনিয়ে এসেছিল। মুহাজির মুসলমানগণ, যাঁরা সাত বছর নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে তাওহীদী ধর্ম রক্ষা করার জন্য নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করার পরিবর্তে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছিলেন, আবার মহান আল্লাহর ঘর যিয়ারত, নিকট আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ এবং ফেলে আসা ঘর-বাড়ি পরিদর্শন করার জন্য পবিত্র মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করতে যাচ্ছেন। যখন মহানবী (সা.) ঘোষণা করলেন, যারা গত বছর বাইতুল্লাহ্ যিয়ারত করতে পারে নি, তারা যেন সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়’, তখন তাঁদের মধ্যে অভূতপূর্ব উদ্দীপনা ও সাড়া পড়ে যায় এবং তাঁদের নয়নযুগল আনন্দাশ্রুতে ভরে যায়। বিগত বছরে মহানবী (সা.) 1300 সাহাবী সহকারে পবিত্র মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করে থাকলেও পরের বছর (হিজরতের সপ্তম বর্ষে) মহানবীর সফর সঙ্গীর সংখ্যা দু হাজারে উন্নীত হয়েছিল।

তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বড় বড় মুহাজির ও আনসার ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যাঁরা সকল ক্ষেত্রে মহানবীর পেছনে পেছনে পা ফেলেছেন। ঠিক একইভাবে ষাটটি উট, যেগুলোর গলায় কুরবানীর চিহ্ন ছিল, সেগুলোও তাঁরা নিজেদের সাথে এনেছিলেন। মহানবী (সা.) মদীনার মসজিদ থেকে ইহরাম বাঁধেন এবং অন্যরাও তাঁর অনুসরণ করে সেখান থেকে ইহরাম পরেছিলেন। দু হাজার লোক ইহরাম পরে লাব্বাইকা বলতে বলতে পবিত্র মক্কার পথে বের হয়ে যান। এ কাফেলা এতটা মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের অধিকারী ছিল যে, ইসলাম ধর্মের আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃত স্বরূপের দিকে আরবের অনেক মূর্তিপূজারী মুশরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

আমরা যদি বলি, এ সফর আসলে প্রচারের (তাবলীগের) সফর ছিল এবং এ সব ব্যক্তি আসলেই প্রচার-সৈনিক ছিলেন, তা হলে তা কোন বৃথা কথা হবে না। এ সফরের আধ্যাত্মিক প্রভাব অল্প কিছু দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই উহুদ যুদ্ধের বীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং আরবদের মধ্যেকার ধুরন্ধর রাজনীতিজ্ঞ আমর ইবনে আসের মতো ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে কঠোর ও পাষণ্ড শত্রুরা পর্যন্ত এ বিশাল মর্যাদা প্রত্যক্ষ করার পর ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল এবং কিছু সময় গত হওয়ার পর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।

মহানবী (সা.) কুরাইশদের হিংসা ও বিশ্বাসঘাতকতা থেকে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। তিনি আশংকা করছিলেন, পবিত্র মক্কায় কুরাইশরা তাঁকে ও তাঁর সাহাবীগণকে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করতে পারে। আবার অন্য দিকে হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তির একটি ধারা অনুসারে অস্ত্র সাথে নিয়ে পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করা অনুচিত। তাই সব ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য মহানবী (সা.) তাঁর এক সেনাপতি মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি বর্ম ও বর্শার মতো প্রয়োজনীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এবং এক শ’ দ্রুতগামী ঘোড়া সমেত দু শ’ যোদ্ধা সাথে নিয়ে উমরার কাফেলা যাত্রা করার আগে রওয়ানা হয়ে পবিত্র হারাম299 শরীফের কাছে অবস্থিত মাররুয যাহরান উপত্যকায় অবস্থান নিয়ে মহানবীর আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

মহানবী (সা.)-এর গতিবিধির ওপর নজরদারীরত কুরাইশ গুপ্তচররা মাররুয যাহরান উপত্যকায় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত দু শ’ অশ্বারোহীর আগমনের ব্যাপারে অবগত হয় এবং কুরাইশ নেতাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও পেশ করে।

মুকরিম ইবনে হাফ্স কুরাইশদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে মহানবী (সা.)-এর সাথে যোগাযোগ করে তাঁকে কুরাইশদের আপত্তির কথা জানায়। মহানবী কুরাইশ প্রতিনিধিকে এর জবাবে বলেছিলেন : আমি ও আমার সাহাবীরা কখনই চুক্তিবিরোধী কোন কাজ করবো না। আমরা সবাই অস্ত্র ছাড়াই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করব। এ সেনাপতি ও দু শ’ জন সৈন্য সকল অস্ত্র-শস্ত্র সহ এ এলাকায় (মাররুয যাহরান উপত্যকায়) অবস্থান করবে এবং তারা আর সামনে অগ্রসর হবে না।” মহানবী (সা.) তাঁর এ বাণীর দ্বারা কুরাইশদের বুঝিয়ে দেন যে, যদি তোমরা আমাদের নিরস্ত্র থাকার সুযোগে আমাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালাও, তা হলে এসব সাহায্যকারী সৈন্যরা- যারা হারামের বাইরে মোতায়েন আছে- তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের সাহায্যার্থে দ্রুত চলে আসবে এবং আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে। কুরাইশরা মহানবীর দূরদর্শিতার কথা জানতে পারল। তারা মুসলমানদের সামনে পবিত্র মক্কা নগরীর দরজা খুলে দিল। কাফির-মুশরিকদের নেতারা এবং তাদের অধীনস্থরা মক্কা নগরী ত্যাগ করে এর আশে-পাশের পাহাড় ও টিলাগুলোয় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, যাতে মহানবী (সা.) ও তাঁর সফর- সঙ্গীগণের সাথে তারা মুখোমুখী না হয় এবং দূর থেকে তাঁদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ওপর লক্ষ্য রাখতে পারে।

পবিত্র মক্কা নগরীতে মহানবী (সা.)-এর প্রবেশ

মহানবী (সা.) একটি বিশেষ উটের পিঠে আরোহণ করে সফরসঙ্গীগণ পরিবেষ্টিত হয়ে পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন। তখন তাঁরা তালবীয়া (লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক) পাঠ করছিলেন। সুশৃঙ্খল এ জামায়াতের মনোজ্ঞ এ লাব্বাইক ধ্বনি এতটা আকর্ষণীয় ছিল যে, তা মক্কার সকল অধিবাসীর ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং তাদের মধ্যে মুসলমানদের প্রতি এক বিশেষ টান ও নমনীয়তা সৃষ্টি করেছিল। আর সেই সাথে মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি মুশরিকদের হৃদয়ে ত্রাসের সঞ্চারও করেছিল। মুসলমানদের লাব্বাইক’ ধ্বনি থেমে গেলে আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা, যিনি মহানবী (সা.)-এর উটের রজ্জু ধরে রেখেছিলেন, বলিষ্ঠ কণ্ঠে ও মধুর সুরে নিম্নোক্ত কাব্য পঙ্ক্তিমালা আবৃত্তি করছিলেন :

خلوا بنى الكفار عن سبيله

خلـوا فكلّ الـخير فِى قـبوله

يا ربّ إنّـى مـؤمن بـقيله

أعـرف حـقّ  الله فِـى قـبوله

“হে মুশরিক ও কাফিরদের সন্তানরা! মহনবী (সা.)-এর জন্য পথ খুলে দাও। তোমরা জেনে রাখ, তিনি সকল কল্যাণের উৎস (অর্থাৎ তাঁকে মেনে নেয়া ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মধ্যেই কেবল কল্যাণ নিহিত আছে)। হে প্রভু! আমি তাঁর বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাঁর রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করা সংক্রান্ত আপনার নির্দেশ সম্পর্কেও আমি জ্ঞাত।”300

যে উটের উপর মহানবী (সা.) উপবিষ্ট ছিলেন, সেই উটের উপর আরোহণ করেই তিনি পবিত্র কা বা তাওয়াফ করলেন। এবার তিনি ইবনে রাওয়াহাকে নিম্নোক্ত বিশেষ দুআ তাঁর কণ্ঠে পাঠ এবং অন্যদেরও তাঁর সাথে তা পাঠ করার নির্দেশ দেন :

لا إله إلّا الله وحده وحده، صدق وعده، و نصر عبده و أعزّ جنده و هزم الأحزاب وحده

“কেবল আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক-অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পালন করেছেন (তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তোমরা অর্থাৎ মুসলমানরা শীঘ্রই মহান আল্লাহর ঘর কাবা যিয়ারত করবে), নিজ বান্দাকে (মহানবীকে) সাহায্য করেছেন, তাওহীদের সেনাবাহিনীকে সম্মানিত করেছেন এবং একাই তিনি কুফর ও শিরকের সকল গোষ্ঠীকে পরাজিত করেছেন।”

সেদিন যিয়ারত করার যাবতীয় স্থান এবং মসজিদ, কাবা ও সাফা-মারওয়াহ্ সহ উমরার যাবতীয় অনুষ্ঠান পালন করার স্থান মুসলমানদের অধিকারে চলে আসে। যে স্থান দীর্ঘকাল ধরে শিরক ও পৌত্তলিকতার কেন্দ্র ছিল সেখানে এ ধরনের উষ্ণ তাওহীদী স্লোগান শিরকের নেতাদের ও তাদের অনুসারীদের মনোবল ও মানসিকতার ওপর এমন তীব্র আঘাত হেনেছিল যা পরবর্তীতে সমগ্র আরব উপদ্বীপে মহানবী (সা.)-এর বিজয় নিশ্চিত ও বাস্তবায়িত করেছিল।

যুহরের সময় হলে মহানবী (সা.) ও মুসলমানগণ সামষ্টিকভাবে মসজিদুল হারামে নামায আদায় করলেন এবং মুসলমানদের মুয়ায্যিন অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে সেখানে আযান দিলেন।

বিলাল হাবাশী, যিনি তাওহীদী আদর্শ গ্রহণ করার অপরাধে দীর্ঘদিন এ নগরীতে নির্যাতিত হয়েছিলেন, মহানবীর নির্দেশে পবিত্র কাবার ছাদের উপর উঠলেন এবং যেখানে মহান আল্লাহর একত্ব এবং মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান সবচেয়ে বড় অপরাধ বলে গণ্য হতো, সেখানে তিনি কানের উপর হাত রেখে আযানের বাক্যসমূহ একের পর এক তাঁর বিশেষ কণ্ঠধ্বনি দিয়ে তেলাওয়াত করছিলেন। উল্লেখ্য, আযানের বাক্যসমূহ সকল মুসলমানের জ্ঞাত ছিল। তাঁর কণ্ঠধ্বনি এবং আযানের প্রতিটি বাক্য শোনার পর মুসলমানদের কণ্ঠে তার পুনরাবৃত্তি ও সত্যায়ন মূর্তিপূজক এবং তাওহীদের শত্রুদের কানে গিয়ে পৌঁছতে থাকে এবং তারা এতটা অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত হয়ে যায় যে, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা ও খালিদ ইবনে উসাইদ বলেই ফেলে : মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এ কারণে যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা মৃত্যুবরণ করেছে বলে তাদেরকে এ হাবশী দাসের কণ্ঠধ্বনি শুনতে হলো না।” সুহাইল ইবনে আমর যখন বিলালের তাকবীর ধ্বনি শুনতে পেল, তখন সে তার মুখমণ্ডল একটি রুমাল দিয়ে ঢেকে ফেলেছিল। তারা (কুরাইশ নেতারা) বিলালের কণ্ঠে আযান শুনতে পেয়ে ততটা অসন্তুষ্ট হচ্ছিল না। তবে আযানের বাক্যসমূহের অন্তর্নিহিত অর্থ, যা তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আকীদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, তাদেরকে পীড়া দিচ্ছিল।

মহানবী (সা.) সাফা-মারওয়াহ্ এ দু পাহাড়ের মাঝে সাঈ করতে ব্যস্ত ছিলেন। যেহেতু মুনাফিক চক্র এবং পৌত্তলিক মুশরিকরা গুজব রটিয়েছিল যে, মদীনার জ্বর বা শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী আবহাওয়া মুসলমানদের ধরাশায়ী (জরাব্যাধিগ্রস্ত) করে ফেলেছে, সেহেতু মহানবী (সা.) তাঁর সাঈ-এর কিছু অংশে হারওয়ালা301 করলেন এবং মুসলমানরাও এ অংশে তাঁকে অনুসরণ করে হারওয়ালা করল।

সাঈ সমাপ্ত হলে উটগুলো কুরবানী করা হলো এবং সবাই চুল ছেটে ছোট করে ইহরাম খুলে ফেললেন। মহানবী (সা.) তখন মাররুয যাহরানে অবস্থানরত দু শ’ অশ্বারোহী সৈন্যের কাছে গিয়ে অস্ত্র সংরক্ষণ করার জন্য দু শ’ ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যাতে করে এ সেনাদলও হারাম শরীফে প্রবেশ করে উমরার আমলসমূহ আঞ্জাম দিতে পারে।

উমরার আমল ও আনুষ্ঠনিকতা শেষ হলো। মুহাজিরগণ নিজেদের ঘর-বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তাঁরা কয়েকজন আনসারকেও মেহমান হিসেবে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। এভাবে আনসারগণ মুহাজিরগণকে দীর্ঘ 8 বছর যে সেবা প্রদান করেছিলেন, মুহাজিরগণ তার খানিকটা পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

মহানবী (সা.)-এর মক্কা নগরী ত্যাগ

ইসলাম ও মুসলমানদের চোখ ধাঁধাঁনো গৌরব এবং মর্যাদাকর অবস্থা মক্কার অধিবাসীদের মন-মানসিকতা ও আত্মিক বলের ওপর বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছিল। তারা মুসলমানদের আত্মিক শক্তির সাথে বেশি করে পরিচিত হলো। মুশরিক নেতারা বুঝতে পারল, পবিত্র মক্কা নগরীতে মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের অবস্থান পৌত্তলিক ধর্ম ও মতাদর্শের প্রতি মক্কাবাসীদের আগ্রহ দুর্বল করে ফেলেছে এবং উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করেছে।

এ কারণেই হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়কাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর, হুওয়াইতিব নামের এক কুরাইশ প্রতিনিধি মহানবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল : চুক্তিপত্রে যে সময় আপনাদের পবিত্র মক্কায় অবস্থান করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা বর্তমানে শেষ হয়ে গেছে। তাই যত শীঘ্র সম্ভব আমাদের এলাকা ত্যাগ করুন।” কুরাইশ প্রতিনিধির এ স্পষ্ট উক্তির কারণে মহানবী (সা.)-এর কয়েকজন সাহাবী অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তবে মহানবী এমন ধরনের ব্যক্তিত্ব ছিলেন না যে, তিনি চুক্তি মোতাবেক কাজ করার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করবেন। মুসলমানদের মধ্যে মদীনার উদ্দেশে যাত্রা করার আহবান জানানো হলে সবাই তাৎক্ষণিকভাবে পবিত্র মক্কার হারাম শরীফ ত্যাগ করেন।

মহানবী (সা.)-এর চাচা হযরত আব্বাসের স্ত্রী উম্মুল ফযলের বোন মায়মুনা মুসলমানগণের উদ্দীপনাপূর্ণ আবেগ ও অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভগ্নিপতি হযরত আব্বাসের কাছে পত্র পাঠিয়ে বলেছিলেন, তিনি মহানবী (সা.)-এর সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে প্রস্তুত।

মহানবী (সা.) মায়মুনার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলেন এবং এভাবে কুরাইশদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ও বন্ধন অধিক দৃঢ় করেছিলেন। বয়সের বিস্তর ব্যবধান সত্বেও তাঁর প্রতি এক অল্পবয়স্কা তরুণীর ঝোঁক তাঁর (মহানবীর) আধ্যাত্মিক প্রভাবের এক উজ্জ্বল দলিল। এমনকি মহানবী (সা.) কুরাইশ প্রতিনিধির কাছে পবিত্র মক্কায় বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং ওয়ালীমা অর্থাৎ বিবাহোত্তর ভোজ-সভায় মক্কা নগরীর সকল নেতার অংশগ্রহণের সময় ও সুযোগের আবেদন জানালেন। কিন্তু কুরাইশ প্রতিনিধি তাঁর এ আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল : আপনার প্রদত্ত খাদ্যের কোন প্রয়োজন আমাদের নেই।”

মহানবী (সা.) মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা যেন মধ্যাহ্নের আগেই মক্কা নগরী ত্যাগ করেন এবং দুপুরের পর সেখানে আর কেউ অবস্থান না করেন। তবে তিনি কেবল নিজ দাস আবু রাফেকে মক্কায় থেকে গিয়ে সন্ধ্যার সময় মহানবীর নবপরিণীতা বধূকে সাথে নিয়ে মদীনার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার আদেশ দেন।302

মুসলমানগণের মক্কা নগরী ত্যাগ করার পর মহানবী (সা.)-এর শত্রুরা মায়মুনাকে তিরস্কার করে। তবে তাদের তিরস্কার ও ভর্ৎসনা মায়মুনার মনের ওপর বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারে নি। কারণ তিনি মহানবীর প্রতি আত্মিকভাবে ঝুঁকে পড়েছিলেন বলেই তাঁর সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এভাবে এক বছর আগে মহানবী সত্য স্বপ্নের ভিত্তিতে মুসলমানদের পবিত্র কাবা যিয়ারত এবং তাদের সামনে পবিত্র মক্কার ফটকগুলো উন্মুক্ত হওয়ার যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হলো।

এ প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয়েছিল সূরা ফাত্হের 27তম আয়াত :

) لقد صدق اللهُ رسولَهُ الرّؤياء بالحقّ لتدخلنّ المسجدَ الحرامَ إن شاء الله آمنين محلّقين رؤوسكم و مقصّرين لا تخافون فَعَلِمَ ما لم تعلموا فجعل من دون ذلك فتحاً قريباً(

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুণ্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদের একটি আসন্ন বিজয়।”

সাতচল্লিশতম অধ্যায় : অষ্টম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

মুতার যুদ্ধ

সপ্তম হিজরী অতিবাহিত হলো। হুদায়বিয়ার সন্ধির ছায়ায় মুসলমানরা দল বেঁধে একত্রে পবিত্র কাবা যিয়ারত করতে এবং পৌত্তলিকতার প্রাণকেন্দ্রে তাওহীদ বা একত্ববাদের অনুকূলে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে সক্ষম হন। এর ফলে খালিদ ইবনে ওয়ালীদ303 , আমর ইবনে আস এবং উসমান ইবনে তালহার মতো কতিপয় কুরাইশ নেতার অন্তর ইসলাম ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হয়। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁরা মদীনায় আগমন করে মহানবী (সা.)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং মক্কার প্রশাসনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন, যার নিস্প্রাণ কাঠামোই শুধু তখন বিদ্যমান ছিল।304

কতিপয় সীরাত রচয়িতা পঞ্চম হিজরীতে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ও আমর ইবনে আসের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে নিঃসন্দেহে তাঁরা ঐ বছর ইসলাম গ্রহণ করেন নি। কারণ, খালিদ ইবনে ওয়ালীদ হিজরতের ষষ্ঠ বর্ষে সংঘটিত হুদাইবিয়ার যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর একটি অংশের সেনাপতি ছিলেন এবং এ দুই সেনাপতি একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

হিজরতের অষ্টম বর্ষের প্রথম দিকে হিজাজের বেশিরভাগ অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত শান্ত অবস্থা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাওহীদের আহবানধ্বনি অনেক এলাকায় বিস্তৃতি লাভ করেছিল। উত্তরে ইহুদীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং দক্ষিণে কুরাইশদের আক্রমণ যখন আর ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য হুমকি নয়, তখনই মহানবী (সা.) শামের সীমান্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রতি তাঁর আহবান ও প্রচার কার্যক্রম নিয়োজিত করা এবং ঐ দিনগুলোতে রোম সম্রাটের শাসনাধীন জনসমষ্টিকে ইসলাম ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। এ কারণেই তিনি হারিস ইবনে উমাইর আয্দীকে একটি পত্র সহ শামের শাসনকর্তার দরবারে প্রেরণ করেন। সে সময় শামের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন রোমান সম্রাটের পক্ষ থেকে নিযুক্ত হারিস ইবনে আবী শিমর গাসসানী। মহানবীর দূত শামের সীমান্তবর্তী নগরসমূহে প্রবেশ করলে সীমান্ত অঞ্চলগুলোর শাসনকর্তা শুরাহবীল তাঁর আগমনের কথা অবগত হয়ে তাঁকে মুতা’ গ্রামে গ্রেফতার করেন। পূর্ণাঙ্গ জিজ্ঞাসাবাদে মহানবীর দূত স্বীকার করেন, তিনি শামের শাসনকর্তা হারিস আল গাসসানীর কাছে মহানবীর পক্ষ থেকে প্রেরিত পত্রবাহক। সীমান্ত এলাকার শাসনকর্তার আদেশে সব ধরনের মানবীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে এই দূতকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়। অথচ সকল আন্তর্জাতিক ও মানবীয় নিয়ম অনুসারে পৃথিবীর সকল অঞ্চল ও রাষ্ট্রে দূতের জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

মহানবী (সা.) শুরাহবীলের জঘন্য অপরাধ সম্পর্কে অবগত হন এবং দূত নিহত হওয়ায় অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্রুদ্ধ হন। এ ধরনের কাপুরুষোচিত কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি মুসলমানদের অবহিত করেন। আর এ কারণেই তিনি ইসলামের দূতকে হত্যাকারী এই উদ্ধত ও দাম্ভিক শাসনকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিজ সৈন্যদের আহবান জানান।

আরো বেদনাদায়ক ঘটনা

এ ঘটনার পাশাপাশি সে সময়ে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে যায়। এ ঘটনা শামের সীমান্ত অঞ্চলের ইসলাম প্রচারকদের ধর্ম প্রচার করার স্বাধীনতা হরণকারী অধিবাসী এবং কাপুরুষোচিতভাবে মহানবীর দূতকে হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার জন্য মহানবীর সিদ্ধান্তকে দৃঢ়তর করেছিল।

হিজরতের অষ্টম বর্ষের রবী মাসে কা ব ইবনে উমাইর আল গিফারী মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে তাবলীগ (প্রচার কার্য) সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতার অধিকারী পনের ব্যক্তিকে নিয়ে ওয়াদীউল কুরার পশ্চাতে অবস্থিত যাত্ ইত্লাহ্ অঞ্চলের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে তাওহীদী দীন ও মহানবী (সা.)-এর রিসালত প্রচারের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ইসলামের প্রচার সৈনিকরা ঐ অঞ্চলে আগমন করে ইসলামের শক্তিশালী যু্ক্তি ও দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করে জনগণকে তাওহীদের দিকে আহবান জানাতে থাকেন। হঠাৎ ঐ এলাকার জনগণ তাঁদের সাথে তীব্র বিরোধিতা শুরু করে এবং তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়।

মুবাল্লিগগণ নিজেদের এক বিশাল জনতার বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ দেখতে পান এবং তাঁরা প্রাণপণে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। অবশেষে তাঁরা অপদস্থতা ও বশ্যতা বরণ করার চেয়ে শাহাদাত লাভকেই প্রাধান্য দেন। তাঁদের মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের লাশসমূহের মাঝে পড়ে থাকা আহত একজন মধ্যরাতে সে স্থান ত্যাগ করে মদীনার পথে অগ্রসর হন এবং মহানবীকে পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন।

প্রচারকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনার কারণে মহানবী (সা.) জমাদি মাসে জিহাদের ফরমান জারী করেন এবং তিন হাজার সৈন্যের এক বাহিনী সীমা লঙ্ঘনকারী এবং ইসলামের প্রচারকার্যক্রমে বাধাদানকারীদের দমন করার জন্য (এ অঞ্চলের দিকে) প্রেরিত হয়।305

জিহাদের ফরমান জারী করা হলো। মদীনার সেনাছাউনীতে (জুরফ) তিন হাজার সাহসী যোদ্ধা সমবেত হলেন। মহানবী (সা.) নিজেই সেনাছাউনীতে এলেন এবং বক্তব্য প্রদান করলেন :

“তোমরা যে জায়গায় যাচ্ছ সেখানে ইসলামের দূতকে হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে তোমরা পুনরায় ইসলামের দাওয়াত দেবে। যদি তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, তা হলে তোমরা ইসলামের দূতের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। আর তা না হলে, তোমরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। হে ইসলামের সৈনিকরা! তোমরা মহান আল্লাহর নামে জিহাদ করবে; মহান আল্লাহর শত্রুরা এবং তোমাদের শত্রুরা, যারা শামদেশে বসবাস করছে, তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেবে। যে সব সন্যাসী সমাজের কোলাহল থেকে বিমুখ হয়ে আশ্রম ও উপাসনালয়সমূহে বসবাস করছে, তাদের ওপর চড়াও হবে না। একদল লোকের মন-মগজে স্থাপিত শয়তানের আস্তানাগুলো তরবারির আঘাতে ধ্বংস করবে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের তোমরা হত্যা করবে না। কখনো তোমরা কোন খেজুর গাছ ও বৃক্ষ কাটবে না এবং কোন ঘর-বাড়িও ধ্বংস করবে না।306

হে মুজাহিদরা! সেনাবাহিনীর অধিনায়ক আমার পিতৃব্যপুত্র জাফর ইবনে আবী তালিব। তিনি নিহত হলে যাইদ ইবনে হারেসা পতাকা তুলে নেবে এবং সেনাবাহিনী পরিচালনা করবে, আর সেও নিহত হলে সেনাদলের অধিনায়ক হবে আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা। আর সেও যদি নিহত হয়, তা হলে তোমরা কোন একজনকে সেনাবাহিনীর অধিনায়ক নির্বাচিত করবে।”

এরপর সেনাবাহিনীকে যাত্রার নির্দেশ দেয়া হলো এবং মহানবী (সা.) একদল মুসলমানকে সাথে নিয়ে সানীয়াতুল বিদা পর্যন্ত গিয়ে তাদেরকে বিদায় দেন। সেখানে বিদায় দানকারীরা সৈন্যদের বিদায় দিল এবং তারা পূর্ব প্রথা অনুযায়ী বলল : دفع الله عنكم و ردّكم سالمين غانمين মহান আল্লাহ্ তোমাদের থেকে শত্রুদেরকে দূরে ঠেলে দিন এবং নিরাপদে ও যুদ্ধের গনীমতসহ তিনি তোমাদের ফিরিয়ে আনুন।”

কিন্তু সেনাদলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অধিনায়ক ইবনে রাওয়াহা তাদের জবাবে এ কাব্যপঙ্ক্তি আবৃত্তি করলেন :

لكنّنِى أسأل الرّحمان مغفرة

و ضربة ذات قرع تقذف الزبدا

 “কিন্তু আমি পরম দয়ালু মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং কামনা করছি (তরবারির) প্রচণ্ড এক আঘাত যার ফলে হাতের তালু থেকে রক্ত ঝরবে।”307

এ বাক্য আসলে এ অধিনায়কের ঈমানী শক্তির মাত্রা এবং মহান আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণের প্রতি তাঁর তীব্র আগ্রহের প্রমাণ। এ অবস্থায় সবাই দেখতে পায় যে, এ সাহসী অধিনায়ক কাঁদছেন। কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন : দুনিয়ার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র টান নেই। তবে আমি মহানবী (সা.)-কে এ আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনেছি :

) و إن منكم إلّا واردها كان علي ربّك حتما مقضيّا(

-মহান আল্লাহর অবশ্যম্ভাবী ফয়সালা এটাই যে, তোমাদের সবাইকে দোযখের উপর আসতেই হবে এবং সেখান থেকে পুণ্যবানরা বেহেশতের দিকে রওয়ানা হবে।308

তখন আমার দোযখের উপর আগমন অবশ্যম্ভাবী। তবে আমার কাছে স্পষ্ট নয়, দোযখের উপর আমার আগমনের পরিণতি কেমন হবে (অর্থাৎ আমি কি দোযখের উপর আগমন করার পর সেখান থেকে পুণ্যবানদের সাথে বেহেশতের দিকে রওয়ানা হতে পারব, নাকি দোযখের মধ্যে পতিত হব)? 309