চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79192
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79192 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

প্রথম অধিনায়কের ব্যাপারে মত-পার্থক্য

কতিপয় সীরাত রচয়িতা লিখেছেন, প্রথম অধিনায়ক ছিলেন মহানবী (সা.)-এর পালকপুত্র যাইদ ইবনে হারেসা। আর জাফর ও আবদুল্লাহ্ যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সহকারী ছিলেন। তবে শিয়া গবেষক আলেমগণ এ ধারণার বিপরীতে হযরত জাফর ইবনে আবী তালিবকে এ সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক বলে জানেন এবং অন্য দু জন অর্থাৎ যাইদ ও আবদুল্লাহকে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সহকারী অধিনায়ক হিসেবে গণ্য করেন। এখন আমাদের অবশ্যই দেখা উচিত যে, এ দুই অভিমতের মধ্যে কোনটি বাস্তব অবস্থার সাথে খাপ খায়? এ বাস্তবতায় উপনীত হবার জন্য দু টি পথ আছে। যথা :

1. সামাজিক মর্যাদা এবং তাকওয়া ও জ্ঞানগত পর্যায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে যাইদ ইবনে হারেসা জাফর আত তাইয়ারের সমকক্ষ ছিলেন না। ইবনে আসীর উসদুল গাবাহ্ গ্রন্থে জাফর তাইয়ার সম্পর্কে লিখেছেন : তিনি চরিত্র, মন-মানসিকতা, আত্মিক শক্তি, মুখাবয়ব এবং দৈহিক কাঠামোগত দিক থেকে মহানবী (সা.)-এর সদৃশ ছিলেন। তিনি আলী (আ.)-এর ঈমান আনয়নের স্বল্প সময় পরেই মহানবী (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। যেদিন হযরত আবু তালিব (রা.) আলী (আ.)-কে রাসূলের ডান পাশে নামায আদায় করতে দেখলেন সেদিন তিনি জাফরকে বলেছিলেন : তুমিও তার (মহানবী) বাম পাশে গিয়ে নামায আদায় কর।”

জাফর ঐ দলের নেতা ছিলেন যারা নিজের ধর্ম রক্ষা করার জন্য মক্কায় নিজেদের ঘর-বাড়ী ও জীবনযাত্রা ত্যাগ করে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে হাবাশায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি সেখানে মুহাজিরদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি শক্তিশালী ও কার্যকর যুক্তি উপস্থাপন করে হাবাশার বাদশার অন্তরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করেছিলেন। তিনি হযরত ঈসা মসীহ্ এবং তাঁর মা হযরত মারিয়াম সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত তেলাওয়াত করে ঐ সব কুরাইশ প্রতিনিধি, যারা হিজরতকারী মুসলমানদেরকে হিজাযে ফিরিয়ে আনার জন্য হাবাশায় গিয়েছিল, তাদের মিথ্যাবাদিতা প্রমাণ করেছিলেন। তিনি আশ্রয় গ্রহণকারী মুহাজির মুসলমানদের পক্ষে হাবাশার বাদশার সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং এর ফলে বাদশাহ্ নাজ্জাশী কুরাইশ প্রতিনিধিদেরকে তাঁর দরবার থেকে বের করে দিয়েছিলেন।310

জাফর সেই ব্যক্তি, মহানবী (সা.) খাইবরে হাবাশাহ্ থেকে তাঁর আগমনের সংবাদ পেয়ে 16 কদম এগিয়ে গিয়ে তাঁকে বরণ করেন এবং তাঁর কাঁধে হাত রেখে তাঁর কপালে চুম্বন করেন। মহানবী (সা.) আনন্দের আতিশয্যে খুব কেঁদেছিলেন এবং বলেছিলেন : আমি জানি না, হাবাশাহ্ থেকে তোমার আগমন বা তোমার ভাই আলীর হাতে খাইবর বিজয়- এ দু টি ঘটনার মধ্যে কোনটির জন্য অধিক আনন্দিত হব?

তিনি সেই মহান ব্যক্তি, যাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সাহস, বীরত্ব ও পৌরুষের কথা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) স্মরণ করেছেন। যখন হযরত আলী (আ.) জানতে পারলেন, আমর ইবনে আস মুআবিয়ার হাতে বাইআত করেছেন এবং তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন যে, তাঁরা আলীর ওপর বিজয়ী হলে মুআবিয়া মিশরের শাসনকাজ আমরের হাতে অর্পণ করবেন, তখন আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এ সংবাদ শুনে অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাঁর চাচা হামযাহ্ এবং ভাই জাফরের বীরত্বের কথা স্মরণ করে বলেছিলেন : এ দুই ব্যক্তি জীবিত থাকলে আমার বিজয়ের তারকা উদিত হতো।”311

এ ধরনের অতি গুরুত্বপূর্ণ মুখ্য চরিত্র, যার খানিকটা এখানে উদ্ধৃত হয়েছে, থাকতে কি বিবেক-বুদ্ধি অনুমতি দেবে যে, মহানবী সর্বাধিনায়কত্বের পদ যাইদকে প্রদান করবেন এবং জাফরকে তাঁর প্রথম সহকারী’ নিযুক্ত করবেন?

2. এ সব সেনাপতির শোকে যে সব শোকগাঁথা বড় বড় মুসলিম কবি রচনা করেছেন, সেসব থেকেও প্রমাণিত হয়, জাফরই ছিলেন এ সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং যাইদ ও আবদুল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল সহকারীর পদ। মহানবী (সা.)-এর যুগের কবি হাসসান ইবনে সাবিত অধিনায়কদের শাহাদাতের শোক-সংবাদ পৌঁছানোর পর একটি কাসীদাহ্ পাঠ করেছিলেন, এর মূল পাঠ সীরাতে ইবনে হিশামে উল্লিখিত আছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন :

“মুতার রণাঙ্গনে যে সব অধিনায়ক একের পর এক নিহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই মহান আল্লাহর করুণা ও দয়ার মধ্যে নিমজ্জিত। তাঁরা হলেন জাফর, যাইদ ও আবদুল্লাহ্ যাঁরা একের পর এক মৃত্যুর কারণগুলোকে করেছেন বুক পেতে আলিঙ্গন।”312

এ সব শোকগাঁথা ও কবিতার মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট হচ্ছে কা ব ইবনে মালেকের কাসীদাহ্ যা তিনি মুতার যুদ্ধের শহীদদের শোকে রচনা করেছিলেন। তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, প্রথম অধিনায়ক ছিলেন জাফর এবং কবি নিজেই মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ জারী করার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। মহানবী (সা.) সেনাবাহিনীর অধিনায়কত্ব সর্বপ্রথম জাফরের হাতে অর্পণ করেছিলেন। কবি তাঁর ভাষায় বলেন :

إذ يهتدونِى بجعفر ولوائه

قدام أوّلهم فنعم الأوّل

ঐ সময়ের কথা তোমরা কর স্মরণ

ইসলামের সৈনিকরা প্রথম অধিনায়ক জাফরের পতাকাতলে যখন

জিহাদের ময়দানের দিকে করেছিল গমন।

ঐ দিনগুলোর রচনা এ কবিতাগুলো কালের বিবর্তনে আজও টিকে আছে এবং সংরক্ষিত আছে। এগুলো হচ্ছে এ বিষয়ের সবচেয়ে জীবন্ত ও শক্তিশালী প্রমাণ যে, আহলে সুন্নাতের সীরাত রচয়িতারা এ প্রসঙ্গে যা লিখেছেন, তা আসলে বাস্তবতাবিরোধী। রাবিগণ বিশেষ কতকগুলো রাজনৈতিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের জন্য তা জাল করেছেন এবং সীরাত রচয়িতাগণও যাচাই-বাছাই ছাড়াই সেগুলো তাঁদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। ঐসব রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এ গ্রন্থে এখন আলোচনা সম্ভব নয়। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, ইবনে হিশাম যদিও কাসীদাসমূহ উল্লেখ করেছেন, তবুও তিনি জাফর তাইয়ারকে প্রথম সহকারী বলে গণ্য করেছেন।313

মুসলিম ও রোমান সেনাবাহিনীর রণাঙ্গনে অবস্থান গ্রহণ

রোম তখন ইরানের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করার কারণে অদ্ভুত ধরনের গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়েছিল। পারস্যের ওপর তাদের বিজয়গুলোর কারণে উৎফুল্ল থাকা সত্বেও তারা ইসলামের মুজাহিদগণের সাহসিকতা ও বীরত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। উল্লেখ্য, তাঁরা (ইসলামের মুজাহিদগণ) তাঁদের সত্তাগত বীরত্ব ও ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়েই এতসব গৌরব অর্জন করেছিলেন। এ কারণেই, ইসলামের সৈনিকদের যাত্রা করার সময় এবং তাদের প্রস্তুতির কথা রোম-সরকারকে জানানো হয়েছিল। রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস শামদেশে তাঁর নিযুক্ত শাসনকর্তার সাহায্য নিয়ে তিন হাজার সৈন্যের মুসলিম বাহিনীকে মোকাবেলার জন্য বিশাল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রস্তুত করেন। শামদেশের শাসনকর্তা শুরাহবীল একাই শামের বিভিন্ন গোত্র থেকে এক লাখ যোদ্ধা সংগ্রহ করে নিজ পতাকাতলে সমবেত করেছিল। মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধ করার জন্য সে ঐ বিশাল সেনাবাহিনীকে শামের সীমান্তগুলোর দিকে প্রেরণ করে। এমনকি রোমান সম্রাটও পূর্বের তথ্যের ভিত্তিতে এক লাখ সৈন্য নিয়ে রোম থেকে যাত্রা করেন এবং বাল্কা অঞ্চলের মায়াব নামের একটি নগরীতে প্রবেশ করে যাত্রাবিরতি করেন এবং সাহায্যকারী রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে সেখানে অবস্থান নেন।314

মুসলমানদের বিজয় সংক্রান্ত যে সব তথ্য রোমের সমরাধিনায়কদের কাছে পৌঁছতো সেগুলোর ভিত্তিতেই ক্ষুদ্র একটি সেনাদলকে মোকাবেলার জন্য এত সৈন্য সমাবেশ ও বিশাল সেনাবাহিনীর আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল। অথচ তিন হাজার সৈন্য, যত সাহসীই হোক না কেন, তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এ বিশাল সেনাবাহিনীর এক-দশমাংশই যথেষ্ট ছিল।

ঠিক একইভাবে এ দুই সেনাবাহিনীর সামর্থ্য ও যোগ্যতার তুলনামূলক মূল্যায়ন করলে, মুসলিম বাহিনী- কী লোকবল, কী সামরিক কলা-কৌশল- উভয় দিক থেকে রোমান সেনাবাহিনীর চেয়ে বহু গুণ দুর্বল ছিল। কারণ, রোমান সেনা কর্মকর্তারা ইরান ও রোমের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধগুলোয় অংশগ্রহণ করার ফলে কতকগুলো গোপন সামরিক কৌশল ও সাফল্যের গোপন রহস্য আয়ত্ব করেছিল; অথচ এসব ক্ষেত্রে নবগঠিত মুসলিম সেনাদলের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ প্রাথমিক পর্যায়ের ছিল। অধিকন্তু মুসলিম সেনাবাহিনীর সামরিক অস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম এবং যানবাহন রোমান সেনাবাহিনীর সমকক্ষ ছিল না। আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ইসলামী শক্তি ভিন দেশের মাটিতে আক্রমণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, আর রোমানরা তাদের নিজ ভূ-খণ্ডের সমুদয় সামরিক সুযোগ-সুবিধার অধিকারী ছিল এবং তাদের অবস্থান ছিল আত্মরক্ষামূলক। এ অবস্থায় হামলাকারী বাহিনীকে অবশ্যই এতটা শক্তিশালী হতে হবে যে, তারা সব প্রতিকূল পরিস্থিতি উৎরাতে সক্ষম হয়।

এতসব বিবেচনা করেই মুসলিম সেনাবাহিনীর অধিনায়কগণ কয়েক কদম দূরত্বের মধ্যে মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা সত্বেও পলায়নের চেয়ে প্রতিরোধ, সংগ্রাম ও দৃঢ়পদ থাকাকেই প্রাধান্য দেন এবং এভাবে তাঁদের ঐতিহাসিক সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেন।

শাম সীমান্তে আক্রমণ করার পর মুসলিম সেনাবাহিনী শত্রুবাহিনীর প্রস্তুতি ও সামরিক ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে। যুদ্ধ করার পদ্ধতি ও কৌশল ঠিক করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি সামরিক পরামর্শসভার আয়োজন করা হয়। একদল বলেন, মহানবী (সা.)-এর কাছে পুরো ঘটনা পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য জেনে নেবেন। এ অভিমত প্রায় গৃহীত হয়েই গিয়েছিল, ঠিক তেমনি মুহূর্তে সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সহকারী অধিনায়ক আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা (যিনি মদীনা থেকে যাত্রা করার সময় মহান আল্লাহর কাছে শাহাদাতের মৃত্যু কামনা করেছিলেন) দাঁড়িয়ে অগ্নি ঝরানো ও তেজোদ্দীপ্ত এক ভাষণ দেন এবং বলেন :

“মহান আল্লাহর শপথ! আমরা কখনোই অধিক জনবল ও অস্ত্র নিয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করি নি। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে যে ঈমান দান করে সম্মানিত করেছেন, সেই ঈমানের আলোকে আমরা শত্রুর মুকাবিলা করতাম ও মুখোমুখী হতাম।

আপনারা সবাই উঠে পড়ুন এবং পথ চলা অব্যাহত রাখুন। আপনারা স্মরণ করুন, বদরের যুদ্ধে মাত্র দু টি ঘোড়া এবং উহুদের যুদ্ধে মাত্র একটি ঘোড়ার চেয়ে বেশি কিছু আমাদের ছিল না। কিন্তু এ যুদ্ধে আমরা দু টি পরিণতির মধ্যে যে কোন একটির অপেক্ষায় আছি : হয় তাদের ওপর আমরা বিজয়ী হব- আর এটা হচ্ছে সেই প্রতিশ্রুতি, যা মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে দিয়েছেন এবং মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতির কখনো অন্যথা হয় না;- অথবা আমরা শাহাদাত বরণ করব। আর এ অবস্থায় আমরা আমাদের ভাইদের সাথে মিলিত হব।”

এ ভাষণ ইসলামী সেনাবাহিনীর মধ্যে জিহাদের প্রেরণা শক্তিশালী করে এবং তাঁরা তাঁদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন। উভয় সেনাবাহিনী শারীফ’ নামক স্থানে পরস্পর মুখোমুখি হয়। কিন্তু কৌশলগত কারণে ইসলামী বাহিনী খানিকটা পশ্চাদপসরণ করে মুতা অঞ্চলে অবস্থান গ্রহণ করে।

সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জাফর ইবনে আবী তালিব সৈন্যদের বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে প্রতিটি অংশের জন্য একজন অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ এবং হাতাহাতি সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। তাঁকে অবশ্যই পতাকা হাতে নিয়ে নিজ সৈনিকদের আক্রমণ পরিচালনা করতে হবে, অথচ ঐ একই সময় তাঁকে যুদ্ধ ও আত্মরক্ষাও করে যেতে হবে।

শত্রুদের ওপর আক্রমণ চালানোর সময় বীরগাঁথা আবৃত্তি থেকে আত্মিক সাহস এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে তাঁর দৃঢ় ইচ্ছা-শক্তি পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়। তিনি আক্রমণ করার সময় বলছিলেন:

يا حبّذا الـجنة و أقـترابها

طيّـبة و بـاردا شـرابُـها

و الروم روم قد دنا عذابها

كافرة بعـيـدة أنسـابـها

علىّ إذ لاقيتها ضرابها

“আমি আনন্দিত যে, প্রতিশ্রুত বেহেশত- ঐ পবিত্র বেহেশত, যেখানে আছে শীতল সুপেয় পানীয়সমূহ- নিকটবর্তী হয়েছে। আর এর বিপরীতে রোমের পতন ও ধ্বংসও নিকটবর্তী হয়ে গেছে- ঐ রোমান জাতি, যারা তাওহীদী ধর্মকে অস্বীকার করেছে এবং আমাদের থেকে যাদের সকল সম্পর্ক ও বন্ধন দূর হয়ে গেছে। আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যখনই তাদের মুখোমুখী হব, তখনই তাদের ওপর আঘাত হানব।315

ইসলামী সেনাদলের প্রথম প্রধান অধিনায়ক (জাফর ইবনে আবী তালিব) প্রাণপণ আক্রমণ চালান এবং প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। যখন তিনি নিজেকে শত্রুদের দ্বারা আবেষ্টিত দেখতে পান এবং শাহাদাত বরণের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান, তখন যাতে করে শত্রুরা তাঁর অশ্ব ব্যবহার করতে না পারে এবং শত্রুদের যাতে তিনি বোঝাতে সক্ষম হন যে, এ জড়জগতের সাথে তিনি তাঁর সর্বশেষ বন্ধনও ছিন্ন করে ফেলেছেন, সেজন্য তিনি ঘোড়া থেকে নিচে নেমে পড়েন এবং এক আঘাতে সেটাকে নিশ্চল করে দেন। এরপর তিনি আত্মরক্ষা ও আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। ঠিক তখনই তাঁর ডান হাত কর্তিত হয়ে গেলে পতাকা যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়, সেজন্য তিনি তাঁর বাম হাত দিয়ে তা ধরে রাখেন। কিন্তু তাঁর বাম হাতও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তিনি তাঁর দু বাহু দিয়ে পতাকা ধরে রাখেন। অবশেষে আশিটিরও অধিক আঘাত নিয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং প্রাণত্যাগ করেন।

তখন প্রথম সহকারী অধিনায়ক যাইদ ইবনে হারেসার পালা আসে। তিনি পতাকা কাঁধে নিয়ে অতুলনীয় বীরত্বের সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্শার অসংখ্য আঘাতে জর্জরিত হয়ে প্রাণত্যাগ করেন। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সহকারী অধিনায়ক আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা তখন পতাকা হাতে তুলে নেন এবং অশ্বের উপর আরোহণ করে বীবত্বব্যঞ্জক কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন। যুদ্ধ চলাকালে তাঁর তীব্র ক্ষুধা পেলে ক্ষুধা নিবারণের জন্য এক লোকমা খাদ্য তাঁর হাতে দেয়া হয়। তখনও তিনি কিছুই খান নি; হঠাৎ শক্রবাহিনীর প্লাবনের মতো প্রচণ্ড ক্ষিপ্র আক্রমণের শব্দ তাঁর কানে আসে! তিনি খাদ্যের টুকরাটি সাথে সাথে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শত্রুবাহিনীর কাছে চলে যান এবং শাহাদাত বরণ পর্যন্ত প্রাণপণ যুদ্ধ করতে থাকেন।

দিশাহারা মুসলিম বাহিনী

আর ঠিক সে সময় মুসলিম বাহিনীর দিশাহারা অবস্থা শুরু হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং তাঁর দু জন সহকারী একের পর এক পর্যায়ক্রমে শাহাদাত বরণ করেন। কিন্তু মহানবী (সা.) এ অবস্থা যে ঘটতে পারে, তা আগে থেকে বুঝতে পেরেছিলেন বলেই সৈন্যদের ওপর অধিনায়ক নির্বাচন করার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। এ সময় সাবিত ইবনে আকরাস পতাকা তুলে নিয়ে সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন : আপনারা একজন অধিনায়ক নির্বাচিত করুন।” তখন সবাই বলেছিল : আপনি আমাদের অধিনায়ক হন।” তিনি বললেন : আমি কখনোই এ দায়িত্ব গ্রহণ করব না। আপনারা অন্য কাউকে নির্বাচিত করুন। অতপর সাবিত নিজে এবং সৈন্যরা মিলে খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে, যিনি সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং এ সেনাদলে উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করলেন।

তিনি যখন সেনাবাহিনীর অধিনায়ক নির্বাচিত হলেন, সেটি ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল মুহূর্ত। তখন মুসলিম বাহিনীর ওপর ভয়-ভীতি প্রভাব বিস্তার করেছিল। সেনাবাহিনীর অধিনায়ক তখন এমন এক সামরিক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, যার কোন পূর্ব নযীর ছিল না। তিনি মাঝরাতে যখন সবদিক ঘন কালো আঁধারে নিমজ্জিত, তখন প্রচণ্ড শোরগোল করে সৈন্যদের স্থান পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন। অর্থাৎ (পরিকল্পনা ছিল) সেনাদলের ডান বাহু বাম বাহুর জন্য স্থান ছেড়ে দেবে এবং একইভাবে বাম বাহু ডান বাহুর জন্য নিজ স্থান ত্যাগ করবে। একইভাবে সেনাবাহিনীর অগ্রভাগ মধ্যভাগের জায়গায় এবং মধ্যভাগ অগ্রভাগের জায়গায় চলে যাবে। আর এ প্রক্রিয়া প্রভাত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তিনি আরো নির্দেশ প্রদান করেন, সেনাবাহিনীর একটি অংশ মাঝরাতে দূরবর্তী এলাকায় চলে যাবে এবং ভোর হলে তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ স্লোগান দিতে দিতে মুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হবে। পুরো এ পরিকল্পনা এজন্য করা হয়েছিল যে, রোমান বাহিনী যেন ভাবে যে, মুসলমানদের জন্য সাহায্যকারী বাহিনী চলে এসেছে। ঘটনাচক্রে এ ধারণার বশবর্তী হয়ে শক্রবাহিনী পরের দিন মুসলমানদের ওপর আক্রমণ থেকে বিরত থাকে। তারা নিজেরা বলাবলি করছিল যে, সাহায্যকারী বাহিনী ছাড়াই এ সেনাদল অতুলনীয় সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছে। আর যখন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন তাদের দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও অবিচলতা বহু গুণ বৃদ্ধি পাবে। এ যুদ্ধে রোমান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক একজন মুসলিম সৈন্যের হাতে নিহত হয়েছিল।316

মুসলমানরা যে পথ ধরে এসেছিলেন, সে পথে তাদের ফিরে যাওয়ার একটা সুযোগ এনে দেয় রোমান বাহিনীর নীরবতা। সবচেয়ে বড় যে সাফল্য মুসলমানরা এ যুদ্ধে অর্জন করেছিলেন, তা ছিল এই, একটি ক্ষুদ্র বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সামনে এক বা তিন দিন প্রতিরোধ করেছে এবং অবশেষে প্রাণ নিয়ে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করেছে। নতুন সেনাপতির সামরিক কৌশল যেহেতু একটি বিচক্ষণ পদক্ষেপ ছিল, তা মুসলমানদের মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছে এবং এর ফলে তাঁরা নিরাপদে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছেন, সেহেতু তা প্রশংসাযোগ্য।317

ইসলামের সৈনিকদের মদীনায় প্রত্যাবর্তন

মদীনা প্রবেশের আগেই যুদ্ধের অবস্থা এবং মুসলিম সেনাবাহিনীর পশ্চাদপসরণ সংক্রান্ত তথ্যসমূহ মদীনায় পৌঁছে গিয়েছিল। তাই মুসলিম জনতা ইসলামের সৈনিকদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য দ্রুত ছুটে আসে এবং মদীনার সেনাছাউনী অর্থাৎ জুরফ এলাকায় তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে।

নতুন সেনাপতির এ কাজ একটি বিচক্ষণধর্মী রণকৌশল হলেও তা যেহেতু মুসলমানদের গৌরবাত্মক অনুভূতি এবং তাদের চেতনাগত খাঁটি বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে মানানসই হয় নি, সেহেতু মুসলমানদের দৃষ্টিতে তাদের পশ্চাদপসরণ সুন্দর কাজ বলে গণ্য হয় নি। এ কারণেই হে পলাতকরা! কেন তোমরা জিহাদ থেকে পলায়ন করেছ’- এ ধরনের ভর্ৎসনামূলক ধ্বনি তুলে এবং তাদের মাথা ও মুখমণ্ডলের উপর ধূলো-মাটি নিক্ষেপ করে তাদেরকে বরণ করা হয়েছিল। সাধারণ মুসলিম জনতার আচরণ এদের সাথে এতটা রূঢ় ছিল যে, এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক ব্যক্তিই দীর্ঘকাল ঘরে বসে থাকতে এবং প্রকাশ্যে বের না হতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁরা কখনো ঘরের বাইরে আসলে জনতা তাঁদের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলত : তিনি ঐ সব ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত, যারা জিহাদ থেকে পলায়ন করেছে’।318

ইতিহাসের বদলে কল্পকাহিনী

মুসলমানদের মধ্যে হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবী তালিবের উপাধি আসাদুল্লাহ্’ (আল্লাহর সিংহ) হওয়ায় কতিপয় লোক তাঁর বরাবরে এক কাল্পনিক নেতা বা বীরকে দাঁড় করিয়ে তাঁর উপাধি সাইফুল্লাহ্’ (মহান আল্লাহর তরবারি) দিতে চেয়েছে, আর এ ব্যক্তি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ ব্যতীত আর কেউ নন। এ কারণেই তারা বলে, মুতার যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর মহানবী (সা.) তাঁকে সাইফুল্লাহ্’ উপাধি প্রদান করেন।

মহানবী যদি তাঁকে অন্য কোন ঘটনা উপলক্ষে এ উপাধি প্রদান করতেন, তা হলে তো কোন কথাই ছিল না। কিন্তু মুতার য্দ্ধু থেকে প্রত্যাবর্তন করার পরের সার্বিক পরিস্থিতি তাঁকে মহানবী (সা.)-এর এ ধরনের উপাধিতে ভূষিত করা মোটেই অপরিহার্য করে না। যে ব্যক্তি এমন এক দলের নেতৃত্বে ছিলেন যাদেরকে জনগণ পলায়নকারী’ বলে অভিহিত করেছে এবং যাদের মাথা ও মুখমণ্ডলের উপর ধূলা-মাটি নিক্ষেপ করে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, সেই ব্যক্তিকে মহানবী সাইফুল্লাহ্’-এর মতো কোন উপাধিতে ভূষিত করবেন, তা কি যথার্থ ও সঙ্গত হবে? তিনি যদি অন্যান্য যুদ্ধে আল্লাহর তবরারির পূর্ণাঙ্গ রূপ ও বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকেন, তা হলেও তিনি মোটেই এ যুদ্ধে এ ধরনের উপাধির বাস্তব বহিঃপ্রকাশ ছিলেন না এবং কেবল এক ধরনের প্রশংসনীয় সামরিক কৌশল ব্যতীত এ যুদ্ধে তাঁর থেকে আর কিছুই প্রকাশ পায় নি। আর তা না হলে, তাঁকে এবং তাঁর অধীন সৈন্যদেরকে মুসলিম জনতা পলায়নকারী’ উপাধিতে ভূষিত করত না। ইবনে সা দ লিখেছেন : পশ্চাদপসরণ করার সময় রোমের একদল সৈন্য মুসলিম বাহিনীর পশ্চাদ্ধাবন করে তাদের কয়েকজনকে হত্যা করেছিল।”319

‘সাইফুল্লাহ্’ উপাধির উপাখ্যান যারা রচনা করেছে, তারা তাদের বক্তব্য দৃঢ় করার জন্য এ বাক্যটিও ছুঁড়ে দিয়েছে : খালিদ যখন অধিনায়কত্ব লাভ করেন, তখন তিনি আক্রমণ করার নির্দেশ দেন এবং তিনি নিজেও বীরবিক্রমে আক্রমণ চালান। তাঁর হাতে 9টি তরবারি ভেঙে যায়। আর কেবল একটি ঢাল তাঁর হাতে অবশিষ্ট (অক্ষত) ছিল।

এ মিথ্যা গল্প-কাহিনীর রচয়িতারা অবারও উদাসীন থেকেছে যে, খালিদ ও তাঁর অধীন সৈন্যরা যদি যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের রণনৈপুণ্য ও দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকতেন, তা হলে মদীনার জনগণ কেন তাঁদেরকে পলায়নকারী’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল এবং কেন তারা ধূলা-মাটি নিক্ষেপ করে তাঁদেরকে বরণ করেছিল? এ অবস্থায় তাদের উচিত ছিল দুম্বা জবাই করে এবং গোলাপ জল ও সুগন্ধি ছিটিয়ে তাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো।

জাফরের ইন্তেকালে মহানবী (সা.)-এর আকুল কান্না

মহানবী (সা.) তাঁর পিতৃব্যপুত্র জাফরের শাহাদাতে খুব বেশি কেঁদেছিলেন। তিনি জাফরের স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইসকে তাঁর স্বামীর মৃত্যু সংবাদ সম্পর্কে অবগত করান এবং তাঁকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানানোর জন্য মহানবী (সা.) জাফরের বাড়ীতে যান এবং আসমার দিকে তাকিয়ে বলেন : আমার সন্তানরা কোথায়? তখন জাফরের স্ত্রী জাফরের তিন সন্তান আবদুল্লাহ্, আউন ও মুহাম্মদকে মহানবীর কাছে ডেকে আনেন। তাঁর সন্তানদের প্রতি মহানবীকে অত্যন্ত স্নেহ ও মমতা প্রদর্শন করতে দেখেই আসমা বুঝে নেন, তাঁর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন। এজন্যই তিনি জিজ্ঞেস করেন : মনে হচ্ছে আমার সন্তানরা এতীম হয়ে গেছে? কারণ, আপনি তাদের সাথে এতীমদের প্রতি সম্ভাব্য আচরণ করছেন! এ সময় মহানবী (সা.) এত বেশি কান্নাকাটি করেন যে, তাঁর পবিত্র দাঁড়ি বেয়ে অশ্রুর ফোঁটা ঝরে পড়ছিল। অতঃপর মহানবী নিজ কন্যা ফাতিমাকে খাবার তৈরি করার নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.) জাফরের পরিবারকে তিন দিন আপ্যায়ন করেছিলেন। এ ঘটনার পর মহানবীর হৃদয়ে জাফর ইবনে আবী তালিব ও যাইদ ইবনে হারিসার শোক চিরস্থায়ী হয়ে গিয়েছিল এবং যখনই তিনি নিজ ঘরে প্রবেশ করতেন, তখনই তিনি তাঁদের জন্য ক্রন্দন করতেন।320

আটচল্লিশতম অধ্যায় : অষ্টম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ