চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79204
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79204 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মক্কার মহিলাদের মহানবী (সা.)-এর বাইআত (আনুগত্য)

আকাবার357 বাইআতের পর মহানবী (সা.) প্রথম বারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে নিম্নোক্ত দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য মহিলাদের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ করেছিলেন :

1. মহান আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করবে না;

2. বিশ্বাসঘাতকতা করবে না;

3. যিনা বা ব্যভিচার করবে না;

4. নিজ সন্তানদের হত্যা করবে না;

5. যে সন্তানরা অন্যদের ঔরসজাত তাদেরকে স্বামীদের সাথে সম্পর্কিত করবে না;

6. কল্যাণকর কাজসমূহের ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর বিরোধিতা করবে না।

বাইআতের আনুষ্ঠানিকতা ঠিক এমনই ছিল : মহানবী (সা.) পানিভর্তি একটি পাত্র আনার নির্দেশ দিলেন। পাত্রটি আনা হলে তিনি তাতে কিছু সুগন্ধি ঢাললেন। অতঃপর তিনি ঐ পাত্রের মধ্যে হাত রাখলেন এবং যে আয়াতে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের358 উল্লেখ করা হয়েছে, তা তেলাওয়াত করলেন। তিনি নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং মহিলাদের বললেন : যারা এ শর্তাবলীসহ আমার কাছে বাইআত করতে প্রস্তুত, তারা এ পাত্রে হাত রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের কথা ঘোষণা দেবে।

এ বাইআত গ্রহণের কারণ ছিল এই যে, মক্কাবাসীদের মধ্যে অনেক অপবিত্র ও অসতী মহিলা ছিল এবং তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা না হলে অশ্লীল কার্যকলাপ গোপনে চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

এদেরই একজন ছিল আবু সুফিয়ানের স্ত্রী মুআবিয়ার মা হিন্দ। তার চারিত্রিক রেকর্ড অত্যন্ত খারাপ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। সে যে বিশেষ ধরনের সহিংসতা ও রূঢ়তা পোষণ করত, সে কারণে সে তার চিন্তা-ভাবনা স্বামী আবু সুফিয়ানের ওপর চাপিয়ে দিত। আবু সুফিয়ান সন্ধি ও শান্তির দিকে ঝুঁকে পড়ার দিন সে জনগণকে যুদ্ধ ও রক্তপাতের দিকে আহবান জানাচ্ছিল (মক্কা বিজয় দিবসে)।

এ নারীর প্রত্যক্ষ উস্কানি উহুদ প্রান্তরে যুদ্ধের অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হবার কারণ হয়েছিল এবং তা নির্বাপিত করার জন্য মহানবীকে সত্তর ব্যক্তিকে কুরবানী দিতে হয়েছিল, যাঁদের একজন ছিলেন হামযাহ্। এ নিষ্ঠুর হৃদয়ের অধিকারী নারী বিশেষ এক ধরনের হিংস্রতা সহ হযরত হামযার পার্শ্বদেশ ছিঁড়ে তাঁর কলিজা বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে টুকরো টুকরো করেছিল।359

প্রকাশ্যে সবার সামনে এ মহিলার মতো নারীদের বাইআত গ্রহণ ছাড়া মহানবী (সা.)-এর আর কোন উপায়ও ছিল না। মহানবী বাইআতের ধারাসমূহ পাঠ করছিলেন। যখন তিনি তারা চুরি করবে না’- এ ধারায় উপনীত হলেন, তখন হিন্দ- যে নিজের মাথা ও মুখমণ্ডল খুব ভালোভাবে ঢেকে রেখেছিল,- তার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল : হে রাসূলাল্লাহ্! আপনি নির্দেশ দিচ্ছেন, মহিলারা যেন চুরি না করে। তবে আমি কী করতে পারি, যখন আমার এক অত্যন্ত কৃপণ ও কঠোর স্বামী আছে। এ কারণেই আমি অতীতে তার অর্থ ও সম্পদে হাত লাগিয়েছি।”

আবু সুফিয়ান দাঁড়িয়ে বলল : আমি অতীতকে হালাল করে দিলাম। তোমাকেও কথা দিতে হবে যে, তুমি ভবিষ্যতে চুরি করবে না।” মহানবী (সা.) আবু সুফিয়ানের কথায় হিন্দকে চিনতে পেরে বললেন : তুমি কি উতবার কন্যা? সে বলল : জী। হে রাসূলাল্লাহ্! আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিন, তা হলে মহান আল্লাহ্ও আপনার প্রতি অনুগ্রহ করবেন।”

মহানবী যখন তারা ব্যভিচার করবে না’- এ বাক্য উচ্চারণ করলেন, তখন হিন্দ আবারও নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে দোষমুক্ত প্রমাণ করার জন্য একটি কথা বলল, যা তার অজান্তেই তার অপবিত্র অন্তরকে ফাঁস করে দিল। সে বলল : মুক্ত নারী360 কি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়? মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বয়ং এ ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন আসলে ব্যক্তির গোপন অন্তরকেই প্রকাশ করে দেয়ার নামান্তর মাত্র। যেহেতু হিন্দ নিজেকে এ ধরনের গর্হিত নোংরা কাজ সম্পন্নকারিণী হিসেবে বিবেচনা করত এবং সে নিশ্চিত ছিল, জনগণ এ কথা361 শোনার মুহূর্তে তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে, তাই সে তার থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য তৎক্ষণাৎ বলেছিল : মুক্ত নারী কি কখনো অশ্লীলতা ও নোংরামিতে লিপ্ত হয়ে নিজেকে অপবিত্র করতে পারে? ঘটনাচক্রে জাহিলীয়াতের যুগে তার সাথে যাদের অবৈধ সম্পর্ক ছিল, তারা সবাই তার এ অস্বীকৃতির কারণে খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল ও তারা এতে হেসেছিল। তাদের হাসা এবং হিন্দের আত্মপক্ষ সমর্থন তার অধিক অপমানের কারণ হয়েছিল।362

মক্কা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের প্রতিমালয়গুলোর ধ্বংস সাধন

পবিত্র মক্কার চারপাশে অসংখ্য প্রতিমালয় ছিল, যেগুলো আশ-পাশের গোত্রগুলোর কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র বলে গণ্য হতো। পবিত্র মক্কা অঞ্চলে মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতার মূলোৎপাটন করার জন্য মহানবী (সা.) মক্কার আশে-পাশে বেশ কিছু বাহিনী প্রেরণ করেন যাতে তারা প্রতিমালয়গুলো ধ্বংস করে। স্বয়ং মক্কা নগরীতে ঘোষণা করা হয়, কারো ঘরে কোন মূর্তি থাকলে সে যেন তা তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলে।363 এ ক্ষেত্রে আমর ইবনে আস ও সা দ ইবনে যাইদ যথাক্রমে সুওয়া’ ও মানাত’ প্রতিমা ধ্বংস করার দায়িত্ব পান।

খালিদ ইবনে ওয়ালীদ, জাযীমাহ্ বিন আমীর গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া এবং উয্যা’ নামক মূর্তি ভাঙার জন্য একটি সেনাদলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে ঐ গোত্রের আবাসভূমির দিকে রওয়ানা হন। মহানবী (সা.) তাঁকে রক্তপাত ও যুদ্ধ না করার নির্দেশ দেন এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফকে তাঁর সহকারী নিযুক্ত করেন।

জাহিলীয়াতের যুগে বনী জাযীমাহ্ গোত্র ইয়েমেন থেকে ফেরার পথে খালিদ ইবনে ওয়ালীদের চাচা ও আবদুর রহমানের পিতাকে হত্যা করে তাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল। আর খালিদ মনে মনে তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতেন। তিনি বনী জাযীমার মুখোমুখি হলে তাদের সবাইকে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত ও আত্মরক্ষা করার জন্য প্রস্তুত দেখতে পেলেন। সেনাদলের অধিনায়ক উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করলেন : তোমরা তোমাদের অস্ত্র মাটিতে ফেলে দাও। কারণ মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতার দিন শেষ হয়ে গেছে এবং উম্মুল কুরার (পবিত্র মক্কা নগরী) পতন হয়েছে এবং সেখানকার সকল অধিবাসী ইসলামের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।” গোত্রের নেতারা অস্ত্র জমা দিয়ে মুসলিম সেনাদলের কাছে আত্মসমর্পণ করার পক্ষে মত প্রকাশ করে। ঐ গোত্রের এক ব্যক্তি বিশেষ বুদ্ধিমত্তার কারণে বুঝতে পারে যে, সেনাদলের অধিনায়কের অসদিচ্ছা রয়েছে। তাই সে গোত্রপতিদের বলল : আত্মসমর্পণের পরিণতি হবে বন্দীদশা এবং এরপর মৃত্যু।” অবশেষে গোত্রপতিদের মতই বাস্তবায়িত হলো এবং তারা ইসলামের সৈনিকদের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করল। এ সময় সেনাদলের অধিনায়ক অত্যন্ত কাপুরুষোচিতভাবে এবং পবিত্র ইসলামের সুস্পষ্ট বিধানের বিপক্ষে ঐ গোত্রের পুরুষদের হাত পেছনের দিকে বেঁধে বন্দী করার আদেশ দেন। অতঃপর ভোরের বেলা বন্দীদের মধ্য থেকে একটি দলকে খালিদের নির্দেশে হত্যা করা হয় এবং আরেক দলকে মুক্তি দেয়া হয়।

খালিদের ভয়ঙ্কর অপরাধের সংবাদ মহানবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ হযরত আলী (আ.)-কে ঐ গোত্রের কাছে গিয়ে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ এবং নিহত ব্যক্তিদের রক্তমূল্য (দিয়াত) প্রদান করার নির্দেশ ও দায়িত্ব দেন। হযরত আলী (আ.) মহানবীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে এতটা সূক্ষ্মদর্শিতা অবলম্বন করেছিলেন যে, এমনকি গোত্রের কুকুরগুলো যে কাঠের পাত্রে পানি পান করত এবং খালিদের আক্রমণের কারণে ভেঙে গিয়েছিল, সেটার মূল্যও প্রদান করলেন।

এরপর তিনি সকল শোকসন্তপ্ত গোত্রপতিকে ডেকে নিয়ে বললেন : যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের রক্তমূল্য কি যথাযথভাবে প্রদান করা হয়েছে? তখন সবাই বলল : হ্যাঁ।” এরপর আলী (আ.), ঐ গোত্রের আরো কিছু ক্ষয়-ক্ষতি ঘটে থাকতে পারে, যে ব্যাপারে তারা তখনো জ্ঞাত নয় বা তারা তখনো উপলব্ধি করতে পারে নি বিধায় আরো অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে পবিত্র মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি মহানবীকে তাঁর কাজের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করেন। মহানবী তাঁর এ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এরপর তিনি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দু হাত উপরের দিকে তুলে সানুনয় দুআ করলেন :

اللّهمّ إنّى أبرء إليك ممّا صنع خالد بن الوليد

  হে আল্লাহ্! আপনি জ্ঞাত থাকুন, আমি খালিদ ইবনে ওয়ালীদের অপরাধের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট এবং আমি কখনো তাকে যুদ্ধের আদেশ দিই নি।”364

হযরত আমীরুল মুমিনীন ঐ গোত্রের অধিবাসীদের মানসিক ও আত্মিক ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিকার বিধান করার বিষয়টিও বিবেচনা করেছিলেন। এ কারণে তিনি যে সব ব্যক্তি খালিদের আক্রমণের ফলে ভয় পেয়েছিল, তাদেরকেও কিছু পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন এবং তাদের মনোরঞ্জন করেছিলেন। মহানবী (সা.) যখন হযরত আলীর এ ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতির কথা জানতে পারলেন, তিনি বলেছিলেন : হে আলী! আমি তোমার এ কাজ অগণিত লাল পশমবিশিষ্ট উট দিয়েও বিনিময় করব না।365 হে আলী! তুমি আমার সন্তুষ্টি অর্জন করেছ; মহান আল্লাহ্ও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। হে আলী! তুমি মুসলমানদের পথ প্রদর্শক। ঐ ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যে তোমাকে ভালোবাসে এবং তোমার পথে চলে; ঐ ব্যক্তি দুর্ভাগা, যে তোমার বিরোধিতা করে এবং তোমার পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও বিচ্যুত হয়।”366 মূসার কাছে হারুন যেমন, আমার কাছে তুমিও ঠিক তেমনি। তবে আমার পর কোন নবী নেই।”367

খালিদের আরো এক অপরাধ

এটাই একমাত্র অপরাধ ছিল না যা খালিদ তাঁর বাহ্যিক ইসলামী জীবনে ঘটিয়েছিলেন; বরং হযরত আবু বকরের খিলাফতকালে তিনি এর চেয়েও জঘন্য অপরাধ করেছিলেন। এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ : মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর কতিপয় আরব গোত্র মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল অথবা বিশুদ্ধ অভিমত অনুসারে, হযরত আবু বকরের খিলাফত তারা মেনে নেয় নি এবং এ কারণে তারা যাকাত দেয়া থেকে বিরত থেকেছিল। খলীফা আবু বকর এক সেনাবাহিনীকে আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় মুরতাদদের দমনের জন্য প্রেরণ করেন।

খালিদ ইবনে ওয়ালীদ মুরতাদ হয়ে যাওয়ার ধুয়ো তুলে মালিক ইবনে নুওয়াইরার গোত্রের ওপর আক্রমণ করেন। মালিক এবং তাঁর গোত্রের সকল ব্যক্তি আত্মরক্ষা করার জন্য প্রস্তুত ছিল এবং তারা সবাই তখন বলছিল : আমরা মুসলমান। তাই আমাদের ওপর আক্রমণ চালানো ইসলামী সেনাবাহিনীর জন্য অনুচিত। খালিদ তাদেরকে ছলে-বলে-কৌশলে নিরস্ত্র করে ফেলে এবং উক্ত গোত্রের প্রধান মালিক ইবনে নুওয়াইরাকে, যিনি একজন মুসলমান ছিলেন, হত্যা এবং তাঁর স্ত্রীর সাথে সীমা লঙ্ঘন করেন।

এত বড় জঘন্য অপরাধ করা সত্বেও তাঁকে সাইফুল্লাহ্’ (আল্লাহর তরবারী) এবং ইসলামের একজন মহান সমরাধিনায়ক বলা কি আসলেই আমাদের জন্য যথাযথ ও শোভনীয় হবে?368

পঞ্চাশতম অধ্যায় : অষ্টম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

হুনাইনের যুদ্ধ

মহানবী (সা.)-এর কর্মপদ্ধতি এমন ছিল যে, তিনি কোন একটি অঞ্চল জয় করে সেখানে যতদিন অবস্থান করতেন, ততদিন তিনি স্বয়ং ঐ অঞ্চলের রাজনৈতিক বিষয় এবং জনগণের ধর্মীয় বিষয়াদি দেখা-শোনা করতেন। আর তিনি ঐ এলাকা ত্যাগ করলেই সেখানে বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে যোগ্য ব্যক্তিদের নিযুক্ত করতেন। কারণ এ ধরনের অঞ্চলের অধিবাসীরা উচ্ছেদকৃত পুরনো ব্যবস্থার সাথে পরিচিত ছিল; নব প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের তেমন কোন ধারণাই ছিল না। অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম একটি সামরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক তথা ধর্মীয় ব্যবস্থা যার বিধি-বিধান ওহীর পবিত্র উৎসধারা উৎসারিত এবং জনগণকে এ ধর্মের নীতিমালার সাথে পরিচিত করানো এবং তাদের মাঝে তা প্রয়োগ ও প্রচলন করার বিষয়টি যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বিশেষ শিক্ষা-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের মুখাপেক্ষী, যাঁরা পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা সহ জনগণকে দীন ইসলামের বিশুদ্ধ নিয়ম-নীতি ও আকীদা-বিশ্বাসের সাথে পরিচিত করাবেন এবং তাদের মাঝে ইসলামের রাজনীতি বাস্তবে প্রয়োগ করবেন।

মহানবী হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রের আবাসভূমির উদ্দেশে পবিত্র মক্কা নগরী ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলে মক্কাবাসীদের ধর্মীয় শিক্ষা ও দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য মুয়ায ইবনে জাবালকে ধর্মশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং অন্যতম যোগ্যতাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি উত্তাব ইবনে উসাইদ-এর হাতে নগরীর সার্বিক বিষয় পরিচালনা ও মসজিদে নামাযের ইমামতীর দায়িত্ব অর্পণ করেন। মহানবী পবিত্র মক্কা নগরীতে পনের দিন অবস্থান করার পর হাওয়াযিন গোত্রের আবাসভূমির উদ্দেশে রওয়ানা হলেন।369

নজিরবিহীন সেনাবাহিনী

মহানবী (সা.)-এর পতাকাতলে ঐ দিন বারো হাজার সশস্ত্র সৈন্য ছিল। তাদের মধ্যে দশ হাজার সৈন্য মহানবীর সাথে মদীনা থেকে এসেছিল যারা মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেছিল এবং বাকী দু হাজার সৈন্য কুরাইশ বংশীয় তরুণ যুবক, যারা সম্প্রতি (মক্কা বিজয়ের পর) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এ অংশের নেতৃত্বভার ছিল আবু সুফিয়ানের ওপর।

এ ধরনের সেনাবাহিনী সে সময় খুব বিরল ছিল এবং এ সংখ্যাধিক্যই তাদের প্রাথমিক পরাজয়ের কারণ হয়েছিল। কারণ তারা তাদের অতীত ভূমিকার বিপরীতে নিজেদের সৈন্যসংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে অহংকারী হয়ে পড়েছিল এবং সামরিক কৌশলের কথা একদম ভুলেই গিয়েছিল। বিশাল সেনাবাহিনীর উপর হযরত আবু বকরের দৃষ্টি পতিত হলে তিনি বলেছিলেন : আমাদের সংখ্যা কম নয় এবং আমরা কখনো পরাজিত হবো না। কারণ আমরা শত্রু সৈন্যদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।”370

তবে তিনি মোটেই লক্ষ্য করেন নি, যুদ্ধে জয়ের কারণ কেবল লোকবল ও সৈন্যসংখ্যার আধিক্য নয়; বরং এ কারণটি বিজয়ের অন্যান্য কারণের তুলনায় কম গুরুত্বের অধিকারী। এ সত্যটিই পবিত্র কুরআন এভাবে উল্লেখ করেছে :

) لقد نصركم الله فِى مواطن كثيرة و يوم حنين إذ أعجبتكم كثرتكم فلم تغن عنكم شيئاً و ضاقب عليكم الأرض بما رحبت ثمّ ولّيتم مدبرين(

“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ অনেক স্থানে তোমাদের সাহায্য করেছেন এবং হুনাইন যুদ্ধের দিনে; তোমরা তোমাদের জনসংখ্যার আধিক্যে প্রফুল্ল হয়েছিলে, তবে তা তোমাদের কোন উপকারেই আসে নি এবং যমীন প্রশস্ত হওয়া সত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তোমরা শত্রুদের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।” (সূরা তওবা : 25)

তথ্য সংগ্রহ

মক্কা বিজয়ের পরপর হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রের মধ্যে এক ধরনের আন্দোলন ও উদ্দীপনা এবং শাখা-গোত্রসমূহের মধ্যে বেশ কিছু বিশেষ ধরনের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তাদের মধ্যেকার আন্তঃ যোগাযোগের কেন্দ্র ছিল মালিক ইবনে আউফ নাসরী নামের এক তরুণ সাহসী বীর যোদ্ধা। তাদের বৈঠক ও পরামর্শের ফলাফল এই দাঁড়াল যে, তাদের কাছে ইসলামী সেনাবাহিনীর আগমনের আগেই তারা নিজেরাই এ বাহিনীর মোকাবেলা করবে এবং মুসলমানরা আক্রমণ করার আগেই তারা বিশেষ ধরনের সামরিক কৌশল অবলম্বন করে মুসলমানদের ওপর মারণাঘাত হানবে। তারা নিজেদের মধ্য থেকে ত্রিশ বছর বয়স্ক এক নির্ভীক যুবককে তাদের সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করে। এ যুদ্ধে সকল শাখা-গোত্র আঘাতকারী অভিন্ন সামরিক ইউনিটে পরিণত হয়েছিল।

সর্বাধিনায়কের নির্দেশে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল যোদ্ধা তাদের সকল নারী ও পশুসম্পদকে রণাঙ্গনের পেছনে নিয়ে এসেছিল। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলেছিল : এ সময় এ লোকগুলো তাদের নারী ও সম্পদ রক্ষার জন্য দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করবে এবং কখনো তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন ও পশ্চাদপসরণ করবে না।”371

যুদ্ধ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বৃদ্ধ দুরাইদ ইবনে সাম্মাহ্ যখন শিশুদের কান্না ও নারীদের চিৎকার শুনতে পেল, সে মালিকের (অধিনায়কের) সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল এবং তার এ পদক্ষেপ সামরিক নীতিমালার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যাখ্যাত গণ্য করে বলল : এ পদক্ষেপের পরিণতি হবে এই যে, যদি তোমরা পরাজয় বরণ কর, তা হলে তোমাদের সকল নারী ও ধন-সম্পদ বিনিময় ছাড়া তোমরা মুসলিম সেনাবাহিনীর কাছে অর্পণ করবে।” কিন্তু মালিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ বৃদ্ধের কথায় কর্ণপাত না করে বলল : আপনি যেমন নিজে বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, তেমনি আপনার জ্ঞান-বুদ্ধিও লোপ পেয়েছে এবং যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কৌশলও ভুলে গেছেন।” সময় অতিক্রন্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, বৃদ্ধ লোকটির কথাই ঠিক ছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ কেবল বিপদাপদের মধ্যে হাত-পা আটকে যাওয়া ছাড়া আর কোন সুফল বয়ে আনে নি।

মহানবী (সা.) আবদুল্লাহ্ আসলামীকে একজন অখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে শত্রুপক্ষের অস্ত্র, রসদপত্র, গতিবিধি ও প্রকৃত উদ্দেশ্য সংক্রান্ত তথ্য লাভের জন্য তাদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি শত্রুসেনাদের মধ্যে ঘোরাফেরা করে মহানবী (সা.)-এর কাছে ফিরে এসে বেশ কিছু তথ্য ও প্রতিবেদন পেশ করেন। মালিকও গোপন তথ্যাবলী সংগ্রহ করার জন্য মুসলমানদের মাঝে তিন জন গুপ্তচর প্রেরণ করে। কিন্তু ঐ তিন ব্যক্তি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে মালিকের কাছে ফিরে গিয়েছিল।

শত্রু বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সামরিক কৌশল এবং অতর্কিত আক্রমণ করে শত্রুপক্ষকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়ার নীতি অবলম্বন করে নিজেদের লোকবলের ঘাটতি পূরণ ও সৈন্যদের দুর্বল মনোভাব চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সে অতর্কিত আক্রমণ পরিচালনা করে ইসলামী বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে তাদের সেনা ইউনিটগুলোর শৃঙ্খলা নষ্ট করার মাধ্যমে মুসলিম সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কের সমর পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল।

সে এ উদ্দেশ্যে হুনাইন অঞ্চলের দিকে যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহৃত উপত্যকাটির শেষ প্রান্তে (সৈন্যসহ) অবস্থান গ্রহণ করে এবং নির্দেশ জারী করে যে, বড় বড় পাথরের পেছনে ও পাহাড়-পর্বতের গর্ত ও ফাটলগুলোর মধ্যে এবং উপত্যকার উঁচু উঁচু জায়গায় সৈন্যরা সবাই লুকিয়ে থাকবে। মুসলিম সেনাবাহিনী এ গভীর ও দীর্ঘ উপত্যকায় প্রবেশ করলে তারা সবাই তাদের নিজ নিজ গোপন স্থান থেকে বের হয়ে মুসলিম বাহিনীর ইউনিটগুলোর ওপর তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকবে। এরপর একটি বিশেষ দল যথারীতি পাহাড় বেয়ে নীচে নেমে যাবে এবং তীরন্দাজদের সহায়তায় মুসলিম সৈন্যদের হত্যা করবে।

মুসলমানদের যুদ্ধের উপকরণ ও সাজ-সরঞ্জাম

মহানবী (সা.) শত্রুপক্ষের শক্তি ও গোঁয়ার্তুমি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। পবিত্র মক্কা নগরী থেকে (রণাঙ্গনের উদ্দেশে) যাত্রা করার আগেই তিনি সাফ্ওয়ান ইবনে উমাইয়্যাকে ডেকে তার কাছ থেকে এক শ’টি বর্ম ধার নেন এবং সেগুলোর জামানতেরও প্রতিশ্রুতি দেন এবং তিনি নিজে দু টি বর্ম পরিধান করেন, মাথায় একটি শিরস্ত্রাণ পরেন এবং তাঁকে উপঢৌকন হিসেবে দেয়া সাদা খচ্চরটির উপর আরোহণ করে ইসলামী সেনাবাহনীর পেছনে পেছনে যাত্রা করেন।

সেনাবাহিনী রাতটা উপত্যকার প্রবেশমুখে বিশ্রামে কাটায়। তখনও চারদিক পুরোপুরি উজ্জ্বল হয়ে উঠে নি, ঐ সময় বনী সালীম গোত্র খালিদ ইবনে ওয়ালীদের নেতৃত্বে হুনাইনের দিকে পার হয়ে যাওয়ার জন্য উপত্যকায় প্রবেশ করে। মুসলিম সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশ উপত্যকার মাঝখানে পৌঁছলে হঠাৎ করে তীর নিক্ষেপের শব্দ ও পাথরের পেছনে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধবাজ লোকদের উচ্চকণ্ঠের হুঙ্কারধ্বনি মুসলমানদের অন্তরে অদ্ভূত ভয়-ভীতির সঞ্চার করে এবং তাদের মাথা ও মুখমণ্ডলের উপর শিলাবৃষ্টির মতো তীর বর্ষিত হতে থাকে। আর তখন ঐ সব তীরন্দাজের ছত্রছায়ায় একদল যোদ্ধা মুসলিম সৈনদের আক্রমণ করে বসে।

শত্রুবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ মুসলমানদের হতভম্ব ও ভীত-সন্ত্রস্ত্র করে ফেলে। তারা নিজেদের অজান্তেই দিক-বিদিক পলায়ন করতে থাকে। আর শত্রুর চেয়ে বরং তারা নিজেরাই মুসলিম বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সৈন্যদের কাতারসমূহ ভেঙে যাওয়ার জন্য বেশি দায়ী ছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যেকার মুনাফিকরা এ ঘটনা ঘটার কারণে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল। এমনকি আবু সুফিয়ান বলেছিল : মুসলমানরা লোহিত সাগরের কূল পর্যন্ত ছুটতে থাকবে।” আরেক জন মুনাফিক বলল : যাদু বাতিল হয়ে গেছে।” তৃতীয় মুনাফিক ইসলামের দফা রফা করা এবং মহানবীকে ঐ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মাঝে হত্যা করে তাওহীদের প্রদীপ এবং রিসালাতের প্রজ্বলিত মশাল নিভিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছিল।

অবিচল মহানবী (সা.) এবং একদল ত্যাগী জানবাজ যোদ্ধা

মুসলমানদের পলায়ন- যার প্রধান কারণ ছিল তাদের ভয়-ভীতি ও বিশৃঙ্খল হয়ে যাওয়া,- মহানবীকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে। তিনি অনুভব করছিলেন, আর এক মুহূর্তও যদি বিলম্ব করা হয়, তা হলে ইতিহাসের ভিত্তি ধ্বসে পড়বে। তখন মানব সমাজ তার চলার পথ পরিবর্তন করে ফেলবে এবং মুশরিক বাহিনী তাওহীদবাদী মুসলিম বাহিনীকে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেবে। এ কারণেই তিনি তাঁর বাহক পশুর উপর চড়ে উচ্চকণ্ঠে বলতে লাগলেন :

يا أنصار الله و أنصار رسوله أنا عبد الله و رسوله

“হে মহান আল্লাহর সাহায্যকারীরা! রাসূলের সঙ্গী-সাথীরা! আমি মহান আল্লাহর বান্দা ও তাঁর প্রেরিত পুরুষ।” এ কথা বলে মহানবী তাঁর বাহক পশুটিকে যুদ্ধের ময়দানের দিকে ধাবিত করলেন। রণাঙ্গনটিকে তখন মালিকের যোদ্ধারা তাদের নিজেদের কসরত স্থলে পরিণত করেছিল এবং একদল মুসলমানকে হত্যা করেছিল। আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.), আব্বাস, ফাযল ইবনে আব্বাস, উসামাহ্ ও আবু সুফিয়ান ইবনে হারিসের মতো মুষ্টিমেয় আত্মত্যাগী যোদ্ধা- যাঁরা যুদ্ধের শুরু থেকে এক মুহূর্তের জন্যও মহানবীর (নিরাপত্তার) ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অবহেলা প্রদর্শন করেন নি এবং তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন,- তাঁরাও তাঁর সাথে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে ছুটে গেলেন।372

মহানবী (সা.) তাঁর চাচা উচ্চ কণ্ঠস্বরের অধিকারী আব্বাসকে বললেন যেন তিনি উচ্চকণ্ঠে মুসলমানদের আহবান জানিয়ে বলেন : হে আনসারগণ! তোমরা যারা মহানবীকে সাহায্য করেছ, হে ঐ ব্যক্তিরা! যারা রিদওয়ান বৃক্ষের নীচে মহানবীর হাতে বাইআত করেছিলে, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? মহানবী এখানে আছেন।” হযরত আব্বাসের আহবান-ধ্বনি যখন তাদের কানে পৌঁছল তখন ধর্মীয় চেতনা ও আত্মসম্মানবোধ তাদের উদ্দীপ্ত করল। তৎক্ষণাৎ তারা সবাই বলতে লাগল : লাব্বাইক, লাব্বাইক (আমরা উপস্থিত, আমরা উপস্থিত) এবং বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে তারা মহানবীর কাছে প্রত্যাবর্তন করল।

মহানবীর সুস্থ ও নিরাপদ থাকা সম্পর্কে সবাইকে সুসংবাদ দানকারী হযরত আব্বাসের অবিরাম উদাত্ত আহবান-ধ্বনি পলায়নপর সেনাদলগুলোকে অদ্ভূত অনুশোচনা সহ মহানবীর দিকে ফিরে আসতে এবং শত্রুবাহিনীর সামনে নিজেদের সারিসমূহ সুশৃঙ্খল ও সুদৃঢ় করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মুসলমানরা মহানবীর নির্দেশে এবং পলায়নের কলঙ্কচিহ্ন মুছে ফেলার জন্য ব্যাপকভিত্তিক আক্রমণ চালনা করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শত্রুবাহিনীকে পিছু হটতে ও পলায়ন করতে বাধ্য করে। মহানবীও মুসলমানদের সাহস ও উৎসাহ দেয়ার জন্য বলছিলেন : আমি মহান আল্লাহর নবী এবং আমি কখনো মিথ্যা বলি না; মহান আল্লাহ্ আমাকে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

মহানবী (সা.)-এর এই সামরিক পরিকল্পনা হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রের যুবক ও যুদ্ধবাজ লোকদের নিজেদের নারী ও পশুসম্পদগুলো (রণাঙ্গনে) ফেলে দিয়ে আওতাস, নাখলাহ্ ও তায়েফের দুর্গগুলোয় আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছিল। এ সময় শত্রুপক্ষের কতিপয় যোদ্ধা নিহত হয়েছিল।