চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79240
ডাউনলোড: 7054


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79240 / ডাউনলোড: 7054
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

যুদ্ধের গনীমত

ইতিহাসে উল্লেখ আছে, এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্য থেকে আট373 ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। এর বিপরীতে শত্রুপক্ষের ছয় হাজার ব্যক্তি বন্দী হয়েছিল এবং চব্বিশ হাজার উট, চল্লিশ হাজার দুম্বা ও চার হাজার ওয়াকীয়াহ্ রৌপ্য (রণাঙ্গনে) ফেলে রেখে তারা পলায়ন করেছিল। মহানবী (সা.) সকল যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধলব্ধ গনীমতসমূহ জিরানাহ্ (জায়েররিনা) এলাকায় নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। তিনি যুদ্ধবন্দীদের হেফাযত করার জন্য কয়েক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন এবং যুদ্ধবন্দীদের কতকগুলো বাড়িতে আশ্রয় দেন। আওতাস, নাখলাহ্ ও তায়েফ এলাকায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়া শত্রুবাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবন করে দমন করা পর্যন্ত মহানবী জিরানায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদসমূহ যথাযথ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন।

একান্নতম অধ্যায় : অষ্টম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

তায়েফ যুদ্ধ

তায়েফ নগরী হিজাযের অন্যতম গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন কেন্দ্র ও উর্বর এলাকা, যা পবিত্র মক্কা নগরীর দক্ষিণ-পূর্বে বারো ফারসাখ দূরত্বে এবং সমুদ্রতল থেকে এক হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। তায়েফ অঞ্চলে মনোরম আবহাওয়া এবং প্রচুর উদ্যান ও খেজুর বাগান থাকার কারণে তা হিজাযের আমোদ-প্রমোদকারীদের বিনোদন ও অবকাশ যাপনের কেন্দ্র ছিল এবং আছে। আরবের শক্তিশালী ও জনবহুল গোত্রগুলোর একটি বলে গণ্য সাকীফ গোত্র এ শহরে বসবাস করত।

সাকীফ গোত্রের আরবদের মধ্যে ঐ সব ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা হুনাইন যুদ্ধে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল এবং শোচনীয় পরাজয় বরণ করার পর নিজেদের শহর তায়েফে আশ্রয় নিয়েছিল। উল্লেখ্য, এ তায়েফ নগরীতে সুদৃঢ় ও সুউচ্চ দুর্গসমূহ বিদ্যমান ছিল।

পূর্ণরূপে বিজয় অর্জনের জন্য মহানবী (সা.) হুনাইন যুদ্ধের ফেরারী শত্রুবাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবন করার নির্দেশ দেন। এ কারণেই তিনি আবু আমীর আশ আরী ও আবু মূসা আশ আরীকে একদল সৈন্য নিয়ে ঐ সব ফেরারী শত্রুর আওতাস এলাকায় আশ্রয় নেয়া একটি অংশকে পশ্চাদ্ধাবন করার দায়িত্ব প্রদান করেন374 এবং মহানবী নিজে অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে তায়েফের উদ্দেশে রওয়ানা হন।375

তিনি যাত্রাপথে হুনাইন যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলনকারী দুর্গ মালিকের দুর্গ’ মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। অবশ্য মালিকের দুর্গ আসলে প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ধ্বংস করা হয় নি; বরং পশ্চাদপসরণ করার সময় শত্রুর কোন আশ্রয়স্থল না রাখার জন্যই ধ্বংস করা হয়েছিল।

ইসলামী সেনাদলের সারিসমূহ একের পর এক যাত্রা করে এবং তায়েফ নগরীর চারপাশে তাঁবু স্থাপন করে। তায়েফ দুর্গ অত্যন্ত উঁচু এবং এর প্রাচীর ছিল খুবই মজবুত। দুর্গের পর্যবেক্ষণ টাওয়ারগুলো সম্পূর্ণরূপে দুর্গের বাইরের উপরও নিয়ন্ত্রণ রাখত। দুর্গ অবরোধ শুরু হলো। কিন্তু তখনো অবরোধ-বলয় পরিপূর্ণ হয় নি। অমনি শত্রুবাহিনী তীর নিক্ষেপ করে মুসলিম সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রায় বাধা দেয় এবং সেই মুহূর্তে একদল মুসলিম সৈন্যকে ধরাশায়ী করে ফেলে।376

মহানবী (সা.) সেনাবাহিনীকে পশ্চাদপসরণ এবং শত্রুবাহিনীর তীরের আওতার বাইরে তাঁবুগুলো সরিয়ে নিয়ে স্থাপন করার নির্দেশ দিলেন।377 সালমান ফার্সী, যাঁর সামরিক পরামর্শ ও পরিকল্পনার কারণে মুসলমানরা খন্দকের যুদ্ধে সুফল লাভ করেছিলেন, মহানবীকে মিনজানিক স্থাপন করে শত্রুর দুর্গের উপর পাথর বর্ষণের প্রস্তাব দিলেন। তখনকার যুদ্ধ-বিগ্রহে মিনজানিক বর্তমানকালের কামানের কাজ আঞ্জাম দিত। মুসলিম সেনাপতিগণ হযরত সালমান ফার্সীর নির্দেশনায় মিনজানিক স্থাপন করে প্রায় বিশ দিন ধরে দুর্গের টাওয়ারগুলো লক্ষ্য করে এবং দুর্গের অভ্যন্তরে অবিরাম পাথর বর্ষণ করেছিলেন।378 কিন্তু শত্রুবাহিনী এ সব তীব্র সামরিক পদক্ষেপের বিপরীতে তীর নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে এবং এভাবে তারা মুসলিম সৈনিকদের ক্ষতিসাধন করে।

এখন আমাদের দেখা উচিত, কিভাবে ঐ যুদ্ধে মিনজানিক মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল? কেউ কেউ বলেন, সালমান নিজ হাতে এ মিনজানিক তৈরি করেছিলেন এবং তা ব্যবহার করার পদ্ধতি মুসলিম সৈনিকদের শিখিয়েছিলেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, খায়বর বিজয়ের সময় এ যুদ্ধাস্ত্র মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল (মুসলমানরা এ যুদ্ধাস্ত্রটি নির্মাণ করেছিলেন) এবং তায়েফ যুদ্ধে তাঁরা তা নিয়ে এসেছিলেন।379 এটা অসম্ভব নয় যে, সালমান এই মিনজানিক মেরামত করে তা স্থাপন ও ব্যবহার করার পদ্ধতি মুসলমানদের শিখিয়ে থাকতে পারেন। ঐতিহাসিক বিবরণাদি থেকে বোঝা যায়, খায়বর যুদ্ধলব্ধ মিনজানিকটিই একমাত্র মিনজানিক ছিল না। কারণ হুনাইন ও তায়েফ যুদ্ধের সময়ই মহানবী (সা.) দূস গোত্রের প্রতিমালয়সমূহ ধ্বংস করার জন্য তুফাইল ইবনে আমর আদ্ দূসীকে সেখানে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি তাঁর গোত্রের চার শ’ সৈন্য সহ একটি মিনজানিক ও একটি দু চাকার গাড়ি সাথে নিয়ে তায়েফে মহানবী (সা.)-এর সকাশে উপস্থিত হন। শত্রুদের কাছ থেকে দূস গোত্রের মুজাহিদগণ যে সব যুদ্ধাস্ত্র ও যন্ত্রপাতি গনীমতস্বরূপ অর্জন করেছিলেন, সেগুলো তায়েফ যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল।380

দু চাকা বিশিষ্ট (পশু চালিত) যুদ্ধযানের মাধ্যমে দুর্গ-প্রাচীরে ফাটল সৃষ্টি

শত্রুবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছিল। মিনজানিক স্থাপন করে পাথর নিক্ষেপ করার সময় যুদ্ধের গাড়ি ব্যবহার করে দুর্গের প্রাচীর ভাঙারও সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যাতে মুসলিম যোদ্ধারা দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। কিন্তু দুর্গের দেয়াল ভাঙার ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা ছিল। কারণ দুর্গের টাওয়ারগুলো এবং দুর্গের সকল অংশ থেকে ইসলামী সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলোর ওপর শিলাবৃষ্টির মতো তীর নিক্ষেপ করা হচ্ছিল এবং দুর্গ প্রাচীরের নিকটবর্তী হওয়া কারো পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এ কাজের জন্য সর্বোত্তম উপায় ছিল যুদ্ধযান, যা ঐ সময় বিশ্বের সুসজ্জিত সেনাবাহিনীগুলোয় অপূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যমান থাকত। যুদ্ধযান কাঠের তৈরি এবং তা একটা পুরু চামড়া দিয়ে ঢেকে রাখা হতো। শক্তিধর যোদ্ধারা এ গাড়ির ভেতরে অবস্থান নিয়ে তা দুর্গের দিকে চালিয়ে নিয়ে যেত এবং এর ভেতরে থেকেই তারা দুর্গের প্রাচীর ছিদ্র করত বা ভাঙতো। মুসলিম সৈন্যরা বীরত্বের সাথে এ পথে দুর্গপ্রাচীর ভাঙার কাজে মশগুল হন। কিন্তু শত্রুবাহিনী গলিত লোহার টুকরা ও জ্বলন্ত লোহার শলাকা নিক্ষেপ করে যুদ্ধযানের আবরণ পুড়িয়ে ধ্বংস করে গাড়ির আরোহীদের ক্ষতিসাধন করেছিল। শত্রু সেনাদের প্রচেষ্টায় এ রণকৌশলটিও ফলপ্রসূ হলো না এবং বিজয়ও লাভ করা গেল না। মুসলিম বাহিনীর কতিপয় যোদ্ধা আহত ও নিহত হলে অবশেষে তাঁরা এ পদ্ধতি ত্যাগ করতে বাধ্য হন।381

অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক আঘাত

বিজয় অর্জন শুধু সামরিক পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রজ্ঞাবান সেনাপতি মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক আঘাত হানার মাধ্যমে শত্রুবাহিনীর শক্তি খর্ব করে তাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পারেন। কখনো কখনো আত্মিক ও অর্থনৈতিক আঘাত, শারীরিক আঘাত ও ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও শত্রুবাহিনীর জন্য বহু গুণ বেশি ক্ষতিকারক হয়ে থাকে। তায়েফ ভূখণ্ড ছিল খেজুর ও আঙুর চাষের ক্ষেত্র এবং সমগ্র হিজায অঞ্চলে তা উর্বরতার জন্য প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল। তায়েফবাসী খেজুর ও আঙুরের বাগানগুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রচুর শ্রম ব্যয় করেছিল বলেই এ সব বাগান ও ক্ষেত-খামার সংরক্ষণ ও টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে তীব্র আগ্রহী ছিল।

মহানবী (সা.) দুর্গে আশ্রয় গ্রহণকারীদের হুমকি দেয়ার জন্য ঘোষণা করলেন, আশ্রয়গ্রহণকারীরা যদি প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে, তা হলে তাদের বাগান ও ক্ষেত-খামারসমূহ ধ্বংস করে ফেলা হবে। শত্রুপক্ষ মহানবীর এ হুমকির প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ করল না। কারণ তারা ভাবত না যে, একজন দয়ালু নবী এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ তারা দেখতে পেল, বাগান ও ক্ষেত-খামারসমূহ ধ্বংস করার নির্দেশ জারী করা হয়েছে এবং খেজুর ও আঙুর গাছ কাটা শুরু হয়ে গেছে। এ সময় শত্রুপক্ষের বিলাপ ও অনুনয়-বিনয় শুরু হয়ে গেল। তারা তাদের ও মহানবীর মাঝে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য মহানবীর কাছে আবেদন জানাল।

তায়েফ দুর্গে আশ্রয় গ্রহণকারীরাই হুনাইন ও তায়েফ যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছিল এবং এ দু যুদ্ধে মহানবীকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল; এ সত্বেও মহানবী শত্রুপক্ষের আবেদন মেনে নিয়ে আবারও যুদ্ধের ময়দানে শত্রুবাহিনীর সামনে তাঁর দয়ার্দ্রপূর্ণ চরিত্র প্রকাশ করে নিজ সাহাবীগণকে গাছগুলো কাটা থেকে বিরত থাকার আদেশ দান করলেন।

শত্রুপক্ষের প্রতি মহানবীর আচার-আচরণ ও মন-মানসিকতার যে সব পূর্ব নজির ও অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে, সেসবের ভিত্তিতে আমরা কালবিলম্ব না করে বলতে পারি যে, গাছ কাটার নির্দেশ আসলে নিছক হুমকি প্রদর্শনমূলক পদক্ষেপ ছিল। আর এ পদ্ধতি যদি কার্যকর না-ই হতো, তা হলে মহানবী (সা.) তা অব্যাহত রাখা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতেন।

তায়েফ দুর্গ জয়ের সর্বশেষ প্রচেষ্টা

সাকীফ গোত্র প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারী ছিল। তাই তাদের অনেক দাস-দাসীও ছিল। দুর্গের অভ্যন্তরীণ অবস্থা এবং শত্রুপক্ষের সামরিক শক্তি ও যুদ্ধ-প্রস্তুতির মাত্রা জানা এবং তাদের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টির জন্য মহানবী (সা.) এ কথা ঘোষণা করার নির্দেশ দেন যে, শত্রুর দুর্গ থেকে যে দাস-ই বের হয়ে এসে ইসলামী বাহিনীর কাছে আশ্রয় নেবে, সে মুক্তি পাবে। এ পদক্ষেপও কিছুটা ফলপ্রসূ হয়েছিল। প্রায় বিশ জন ক্রীতদাস কৌশলে দুর্গ থেকে পালিয়ে এসে মুসলমানদের সাথে যোগ দিয়েছিল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে জানা গেল, দুর্গের অধিবাসীরা কিছুতেই আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক নয় এবং দুর্গ অবরোধ যদি এক বছরও স্থায়ী হয়, তবুও তারা খাদ্য-পানীয়ের দিক থেকে মোটেই সংকটজনক অবস্থায় পতিত হবে না।

ইসলামী সেনাবাহিনীর মদীনায় প্রত্যাবর্তন

মহানবী (সা.) এ যুদ্ধে সব ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত হলো যে, দুর্গ জয়ের জন্য আরো অধিক প্রচেষ্টা ও ধৈর্যের প্রয়োজন ছিল। ইত্যবসরে সাময়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিম সেনাবাহিনীর হাতে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও উপায়-উপকরণাদি তায়েফ এলাকায় এর চেয়ে বেশি অবস্থান করার অনুমতি দিচ্ছিল না। কারণ :

প্রথমত এ অবরোধ চলাকালে তের জন মুসলমান নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে সাত জন কুরাইশ, চার জন আনসার ও একজন অন্য গোত্রের ছিলেন। আরো কতিপয় মুসলমানও হুনাইন উপত্যকায় শত্রুবাহিনীর ধূর্ততামূলক আক্রমণ এবং সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে যাওয়ার কারণে প্রাণ হারিয়েছিলেন, যাঁদের নাম ও সংখ্যা দুঃখজনকভাবে সীরাত গ্রন্থসমূহে সংরক্ষণ ও নিবন্ধন করা হয় নি। এ কারণে মুসলিম সেনাবাহিনীর মানসিকতায় এক ধরনের ক্লান্তি ও অবসাদ পরিলক্ষিত হচ্ছিল।

দ্বিতীয়ত শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যিলক্বদ মাস চলে এসেছিল। আর যিলক্বদ মাসে যুদ্ধ করা আরবদের দৃষ্টিতে হারাম ছিল। ইসলাম ধর্মও পরবর্তীতে এ ভালো প্রথাটি আরো সুসংহতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।382 এ কারণেই এ প্রথা সংরক্ষণের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ অবরোধ তুলে নেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে গিয়েছিল, যাতে সাকীফ গোত্রীয় আরবরা মহানবীকে ভালো প্রথা বা সুন্নাত লঙ্ঘনকারী বলে অভিযুক্ত করতে সক্ষম না হয়।

এ ছাড়া হজ্ব অনুষ্ঠানও ঘনিয়ে এসেছিল এবং ঐ বছর (হিজরতের অষ্টম বর্ষ) হজ্ব অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা মুসলমানদের দায়িত্বে চলে এসেছিল। এর আগে হজ্বের যাবতীয় অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতা মক্কার মুশরিকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো।

সমগ্র আরব উপদ্বীপের অধিবাসীদের এক সুবিশাল মহতী সমাবেশের সময়কাল হজ্ব মৌসুম ইসলাম ধর্মের প্রচার ও তাওহীদী আদর্শের প্রকৃত স্বরূপ বর্ণনা করারও সর্বোত্তম মৌসুম বা সময় ছিল। মহানবী (সা.) অবশ্যই প্রথম বারের মতো তাঁর হাতে আসা এ সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করবেন এবং তাঁর চিন্তা-ভাবনাকে এমন সব বিষয়ের দিকে নিবদ্ধ করবেন যেসব দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি দুর্গ জয় করার চেয়েও বহু গুণ মহান ও গুরুত্বপূর্ণ। এ সব দিক বিবেচনা করে মহানবী (সা.) তায়েফ অবরোধ উঠিয়ে নেন এবং সেনাবাহিনী সাথে নিয়ে জিরানায় চলে যান। এখানে হুনাইন যুদ্ধের গণীমত ও যুদ্ধবন্দীদের রাখা হয়েছিল।

যুদ্ধোত্তর ঘটনাবলী

হুনাইন ও তায়েফ যুদ্ধ সমাপ্ত হলো। কোন ফলাফল অর্জন ছাড়াই মহানবী (সা.), তায়েফ যুদ্ধে যে সব গণীমত অর্জিত হয়েছিল, সেগুলো (যোদ্ধাদের মধ্যে) বণ্টন করে দেয়ার জন্য জিরানায় ফিরে যান। হুনাইন যুদ্ধে মুসলমানরা যে বিশাল দৃষ্টি আকর্ষণকারী গণীমত লাভ করেছিলেন, তা বিগত যুদ্ধ ও গাযওয়াসমূহে কখনই ইসলামী বাহিনী অর্জন করতে পারে নি। কারণ মহানবী (সা.) যেদিন জিরানায় ফিরে যান সেদিন গণীমতসমূহ সংরক্ষণ করার কেন্দ্রে ছয় হাজার বন্দী, চব্বিশ হাজার উট, চল্লিশ হাজারের অধিক দুম্বা এবং আট শ’ বায়ান্ন কিলোগ্রাম রূপা ছিল383 এবং সেদিন ইসলামী বাহিনীর ব্যয়ের একটি অংশ এ পথেই মেটানো যেত।

মহানবী (সা.) জিরানাহ্ এলাকায় 13 দিন অবস্থান করেন এবং এ সময় তিনি এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে গণীমতসমূহ বণ্টন করেন। কতিপয় যুদ্ধবন্দীকেও মুক্তি দেয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে তিনি তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের কাছে অর্পণ করেছিলেন। এখানে তিনি হুনাইন ও তায়েফ যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলনকারী মালিক ইবনে আউফের আত্মসমর্পণ ও ইসলাম গ্রহণ করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি তাঁর কর্মপদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট ভাষায় সকল ব্যক্তির অবদানের ব্যাপারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং প্রাজ্ঞ নীতি অবলম্বন করে তাওহীদী আদর্শের প্রতি ইসলামের শত্রুদের হৃদয় আকৃষ্ট করলেন। আর (গনীমত বণ্টন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে) তাঁর ও একদল আনসারের মধ্যে বিরোধের উদ্ভব ঘটে। এক চিত্তাকর্ষক আবেগময় ভাষণ প্রদান করে তিনি সে বিরোধের ইতি টানেন।

গণ-অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন

মহানবী (সা.)-এর অন্যতম চরিত্রবৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির অবদান ও অধিকার যত সামান্যই হোক, তা উপেক্ষা করতেন না এবং যে কোন ব্যক্তি তাঁর জন্য ভালো কাজ বা উপকার করলে তিনি তাকে তার কয়েক গুণ বেশি প্রদান করতেন।

মহানবী (সা.) তাঁর শৈশবকাল হাওয়াযিন গোত্রের একটি শাখা বনী সা দ গোত্রে অতিবাহিত করেছিলেন এবং হালীমা সাদীয়াহ্ নাম্নী এক মহিলা তাঁকে স্তন্যদান করেছিলেন। সেই মহিলা পাঁচ বছর তাঁকে লালন-পালন করেছিলেন।

ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বনী সা দ গোত্র, যাদের একদল নারী ও শিশু এবং কিছু পরিমাণ সম্পদ হুনাইনের যুদ্ধে মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। তারা জানত, মুহাম্মদ (সা.) তাদের মাঝে প্রতিপালিত হয়েছেন এবং তাদের স্বগোত্রীয় এক মহিলার স্তন্য পান করেছেন। অন্যদিকে তিনি বিশেষ ধরনের স্নেহ, মমতা, মহানুভবতা ও কৃতজ্ঞতাবোধ সম্পন্ন। তারা যদি এ বিষয়ের দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তা হলে নিঃসন্দেহে তিনি তাদের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেবেন এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠাবেন।

এ গোত্রের চৌদ্দ জন সর্দার, যাঁদের প্রত্যেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং যাঁদের নিয়ে গঠিত নেতৃত্বে একজন ছিলেন যুহাইর ইবনে সারদ এবং অপর ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর দুধ চাচা, তাঁরা মহানবীর কাছে এসে আবেদন জানালেন :

“যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে আপনার দুধ-ফুফু, দুধ-খালা, দুধ-বোন এবং আপনার শৈশবকালের সেবিকারা রয়েছেন। মহানুভবতা ও স্নেহ-মমতার অনিবার্য ফল হচ্ছে এটাই যে, আপনার কাছে এ গোত্রের কতিপয় নারীর যে অধিকার আছে, তা সংরক্ষণ করার খাতিরে আমাদের সকল নারী, পুরুষ ও শিশু যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দিন। আর আপনি যেখানে দয়া ও অনুগ্রহের সাগর, সেখানে আপনার কথা বাদ দিলেও আমরা যদি ইরাক ও শামের নেতা নূমান ইবনে মুনযির বা হারিস ইবনে আবি শিমরের কাছে এ ধরনের অনুরোধ করতাম, তা হলেও তা গৃহীত হবার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী থাকতাম।” মহানবী (সা.) তাদের কথার জবাবে বললেন : তোমরা কি তোমাদের নারী ও শিশুদের বেশি ভালোবাস, না তোমাদের সম্পদগুলো অধিক পছন্দ কর? তারা সবাই মহানবীর এ প্রশ্নের জবাবে বলল : কোন কিছুর সাথে কখনোই আমরা আমাদের নারী ও শিশুদের বিনিময় করব না।” মহানবী বললেন : আমি আমার ও আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদের প্রাপ্য অংশ তোমাদের প্রদান করতে প্রস্তত আছি। তবে মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য মুসলমানের অংশ তাদের নিজেদের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তাদেরকে স্বেচ্ছায় তাদের প্রাপ্য অংশ ও অধিকার ত্যাগ করতে হবে।” তখন তিনি তাদেরকে বললেন : আমি যখন যুহরের নামায পড়ব তখন তোমরা মুসল্লীদের কাতারসমূহের মধ্য থেকে দাঁড়িয়ে মুসলমানদের উদ্দেশে এ কথাগুলো বলবে : আমরা মহানবীকে মুসলমানদের কাছে সুপারিশকারী এবং মুসলমানদেরও মহানবীর কাছে মধ্যস্থতাকারী করছি, যাতে আমাদের নারী ও শিশুদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ঠিক তখন আমিও দাঁড়িয়ে যা কিছু আমার ও আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদের সাথে সংশ্লিষ্ট, তা তোমাদের প্রদান করব এবং অন্যদের কাছেও অনুরোধ জানাব যে, তারাও যেন তাদের প্রাপ্য অংশ তোমাদের প্রদান করে।

যুহরের নামাযের পর গোত্র-প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর শিখিয়ে দেয়া কথাগুলোই উপস্থিত মুসল্লীগণকে বলল এবং মহানবী (সা.) নিজের ও তাঁর নিকটাত্মীয়গণের প্রাপ্য অংশ তাদেরকে দিয়ে দিলেন।” মুহাজির ও আনসারগণও মহানবীকে অনুসরণ করে তাঁদের সংশ্লিষ্ট অংশ তাদেরকে দিয়ে দিলেন। এ সময় আকবা ইবনে হারিস ও উয়াইনাহ্ ইবনে হিসন-এর মতো কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের প্রাপ্য অংশ দিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকে। মহানবী তাদেরকে বললেন: তোমরা যদি তোমাদের বন্দীদের (তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে) দিয়ে দাও, তা হলে আমি প্রত্যেক বন্দীর বিপরীতে (এরপর) প্রথম যুদ্ধে যে সব বন্দী অধিকারে আসবে, তাদের মধ্য থেকে ছয় জনকে প্রদান করব।”384

মহানবী (সা.)-এর বাস্তব পদক্ষেপ ও হৃদয়গ্রাহী ভাষণে কেবল এক বৃদ্ধা, যাকে উয়াইনা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, সে ছাড়া হাওয়াযিন গোত্রীয় সকল যুদ্ধবন্দী মুক্তি পেল। ষাট বছর পূর্বে বনী সা দ গোত্রের আবাসভূমিতে হালীমা সাদীয়ার হাতে রোপিত একটি ভালো কাজ দীর্ঘ সময় গত হবার পর ফল দান করল385 এবং ঐ ভালো কাজের ছায়ায় হাওয়াযিন গোত্রের সকল যুদ্ধবন্দী দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে গেল।

অতঃপর মহানবী তাঁর দুধ-বোন শাইমাকে নিজের কাছে ডেকে মাটির উপর নিজ চাদর বিছিয়ে তার উপর বসালেন এবং তাঁর ও তাঁর পারিবারিক জীবনের খোঁজ-খবর নিলেন। মহানবী (সা.) হাওয়াযিন গোত্রের সকল যুদ্ধবন্দীকে মুক্তিদান করে ইসলাম ধর্মের প্রতি এ গোত্রের আকর্ষণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দিলেন এবং এ গোত্রের সবাই আন্তরিকতার সাথে ইসলাম গ্রহণ করল। এভাবে তায়েফ তার সর্বশেষ মিত্রও হারাল।

মালিক ইবনে আউফের ইসলাম গ্রহণ

এ সময় মহানবী (সা.) নাসর গোত্রের লৌহমানব ও হুনাইন যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলনকারী মালিক ইবনে আউফের সমস্যা বনী সা দ গোত্রের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সমাধান করার সুবর্ণ সুযোগ পেলেন এবং তার সদ্ব্যবহারও করলেন, যাতে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তার মিত্র সাকীফ গোত্রের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে। এ কারণে তিনি মালিকের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সবাই তাঁকে বলল : সে তায়েফে আশ্রয় নিয়েছে এবং সাকীফ গোত্রের সাথে সহযোগিতা করছে।” মহানবী বললেন : আমার পক্ষ থেকে এ বার্তা তার কাছে তোমরা পৌঁছে দিয়ে বলবে : যদি সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং আমাদের সাথে যোগ দেয়, তা হলে আমি তার আত্মীয়-স্বজনদের (দাসত্ব বন্ধন থেকে) মুক্ত করে দেব এবং তাকেও এক শ’ উট প্রদান করব।” হাওয়াযিন প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর বার্তা তার কাছে পৌঁছে দেয়। সে নিজেও সাকীফ গোত্রের অবস্থা নাজুক ও টাল-মাটাল দেখতে পাচ্ছিল এবং অন্যদিকে সে ইসলাম ধর্মের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কেও জ্ঞাত ছিল। তাই সে তায়েফ থেকে বের হয়ে মুসলমানদের সাথে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। কিন্তু সে ভয় পাচ্ছিল, সাকীফ গোত্র তার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জেনে গিয়ে তাকে দুর্গের অভ্যন্তরে আটকে ফেলতে পারে! সে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। সে তায়েফ থেকে দূরে একটি স্থানে তার জন্য একটি হাওদাবিশিষ্ট উট প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়। অতঃপর সে দ্রুত সেখান থেকে জিরানায় এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আর মহানবীও তাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে মোতাবেক তার সাথে আচরণ করলেন এবং তাকে নাসর, সামালাহ্ ও সালিমাহ্ গোত্রের মুসলমানদের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করলেন।

সে তার স্বভাবসুলভ গৌরববোধ ও ইসলাম প্রদত্ত তার মর্যাদার কারণে সাকীফ গোত্রের জীবনযাত্রা সংকীর্ণ করে ফেলেছিল এবং তাদের তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও দুরবস্থার মধ্যে আপতিত করেছিল।

সে মহানবী (সা.)-এর অনুগ্রহের কাছে নিজেকে অত্যন্ত লজ্জিত মনে করে মহানবীর অতুলনীয় দয়া, মহানুভবতা এবং উন্নত চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বেশ কিছু কাব্য রচনা করেছিল যেসবের সূচনায় নিম্নোক্ত পঙ্ক্তিটি রয়েছে :

ما أن رأيت و لا سـمعت بـمثله

فِى النّاس كلّهم بـمثل مـحمّد

“আমি কখনোই সমগ্র মানব জাতির মাঝে মুহাম্মদের সমকক্ষ না কাউকে দেখেছি,

আর না কারো কথা শুনেছি।”386