চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79212
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79212 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

গনীমত বণ্টন

মহানবী (সা.)-এর সাহাবীগণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধলব্ধ গনীমতগুলো বণ্টন করে দেয়ার ব্যাপারে জোর দিতে লাগল। মহানবী (সা.) তাঁর অনাগ্রহ প্রমাণের জন্য একটি উটের পাশে দাঁড়িয়ে উটের কুঁজের কিছু পশম মুষ্টিবদ্ধ করে জনতার দিকে মুখ করে বলেছিলেন : তোমাদের যুদ্ধলব্ধ গনীমতগুলোর মধ্যে কেবল খুমস ব্যতীত আমার আর কোন অধিকার নেই। এমনকি, এ খুমস- যা আমার অধিকার, তাও তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দেব। তাই তোমাদের কারো কাছে যে কোন ধরনের গনীমতই থাকুক, যদি তা সুঁই-সূতাও হয়, তবুও সে যেন তা ফেরত দেয়, যাতে ন্যায্যভাবে এ সব গনীমত তোমাদের মাঝে বণ্টন সম্ভব হয়।”

মহানবী (সা.) মুসলমানদের মধ্যে পুরো বাইতুল মাল বণ্টন করে দিলেন এবং বাইতুল মালের খুমস- যা কেবল তাঁর ছিল, তা তিনি কুরাইশ নেতৃবর্গের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন এবং আবু সুফিয়ান ও তার ছেলে মুআবিয়া, হাকিম বিন হিযাম, হারিস ইবনে হারিস, হারিস ইবনে হিশাম, সুহাইল ইবনে আমর, হুওয়াইতিব ইবনে আবদুল উয্যা, আলা ইবনে জারিয়াহ্ প্রমুখের মতো ব্যক্তিবর্গ, যারা সবাই বিগত দিন পর্যন্ত কুফর ও শিরকের প্রতিভূ এবং মহানবী (সা.)-এর কঠোর শত্রু ছিল, তাদের প্রত্যেককে এক শ’টি করে উট প্রদান করলেন। একইভাবে পূর্বোক্ত ব্যক্তিদের চেয়ে যাদের শত্রুতামূলক অবস্থান একটু কম ছিল, তাদের প্রত্যেককে পঞ্চাশটি করে উট দিয়েছিলেন। আর তারা এ ধরনের মূল্যবান দান ও গনীমতগুলোয় নিজেদের আরো অন্যান্য অংশসহ মহানবীর স্নেহ, ভালোবাসা ও অনুগ্রহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের অজান্তেই ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় এ গোষ্ঠীকে মুআল্লাফাতুল কুলূব387 (مؤلّفة القلوب ) বলা হয়েছে এবং ইসলাম ধর্মে যাকাত যে সব খাতে ব্যয় করা হয়, সেগুলোর একটি হচ্ছে এ গোষ্ঠী।

ইবনে সা388 স্পষ্ট লিখেছেন : (মহানবীর) এ সব দান আসলে ঐ খুমস389 থেকে ছিল, যা ব্যক্তিগতভাবে মহানবী (সা.)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল (অর্থাৎ মহানবী যুদ্ধলব্ধ গনীমত থেকে যে খুমস পেয়েছিলেন)। আর তিনি অন্যের অধিকার থেকে একটি দীনার নিয়ে তা কখনই এ গোষ্ঠীর হৃদয় জয় করা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করার পথে ব্যয় করেন নি।

মহানবীর এ ধরনের উদারভাবে দান একদল মুসলমান এবং বিশেষ করে কতিপয় আনসারের কাছে অত্যন্ত দুর্বিষহ বলে মনে হয়েছিল। যারা মহানবীর এ দানসমূহের সুমহান লক্ষ্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিল না, তারা ভেবেছিল, বংশগত পক্ষপাতিত্ব ও গোঁড়ামি মহানবীকে গনীমতের খুমস নিজ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বণ্টন করে দিতে প্ররোচিত করেছে! এমনকি যুল খুওয়াইসিরা নামক তামীম গোত্রের এক ব্যক্তি এতটা স্পর্ধা প্রদর্শন করেছিল যে, সে মহানবীর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেই ফেলল : আজ আমি আপনার কাজগুলো সূক্ষ্মভাবে বিবেচনা করে দেখতে পেলাম, গনীমত বণ্টন করার ক্ষেত্রে আপনি ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করেন নি।” মহানবী এ লোকটির স্পর্ধামূলক কথায় খুব অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁর মুখমণ্ডলে ক্ষোভ ও উষ্মার চিহ্ন প্রকাশ পেল। তিনি তখন বললেন : তোমার জন্য আক্ষেপ! আমার কাছে যদি ন্যায়পরায়ণতা না থাকে, তা হলে তা কার কাছে থাকবে? দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর মহানবীর কাছে তাকে হত্যা করার জন্য আবেদন করলে তিনি বলেছিলেন : তাকে ছেড়ে দাও। সে ভবিষ্যতে এমন এক দলের নেতা হবে, তীর যেভাবে ধনুক থেকে বের হয়ে যায়, তদ্রূপ তারাও ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যাবে।”390

ঠিক যেভাবে মহানবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তদ্রূপ এ লোকটি হযরত আলী (আ.)-এর শাসনামলে খারেজী সম্প্রদায়ের প্রধান হয়েছিল এবং ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক এ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব তার হাতে ছিল। তবে অপরাধের আগে অপরাধের শাস্তি দান ইসলাম ধর্মের নীতিমালার বিরোধী বিধায় মহানবী তাকে শাস্তি দেন নি। সা দ ইবনে উবাদাহ্ আনসারগণের পক্ষ থেকে তাদের অভিযোগবার্তা মহানবী (সা.)-এর সামনে উপস্থিত করেন। মহানবী তাঁকে বললেন : তাদের সবাইকে একটি স্থানে জড়ো কর যাতে আমি তাদেরকে আসল ঘটনা ব্যাখ্যা করে বুঝাতে পারি। মহানবী ভাবগাম্ভীর্যের সাথে আনসারগণের সভায় উপস্থিত হলেন এবং তাদের উদ্দেশে বললেন :

“তোমরা পথভ্রষ্ট ও বিচ্যুত গোষ্ঠী ছিলে, যারা আমার মাধ্যমে সুপথ পেয়েছ। তোমরা দরিদ্র ছিলে; এখন তোমরা সচ্ছল ও অভাবশূন্য হয়েছ। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে; এখন তোমরা একে অপরের প্রতি দয়াবান হয়েছ।” সবাই তখন স্বীকার করে বলল : হে রাসূলাল্লাহ্! এ কথা ঠিক।” মহানবী বললেন : তোমরা আরেকভাবে আমাকে এ কথার জবাব দিতে পার এবং তোমরা আমার অবদানসমূহের বিপরীতে আমার ওপর তোমাদের যে সব অধিকার আছে, সেগুলো আমার সামনে তুলে ধরে বলতে পার : হে রাসূলাল্লাহ্! যেদিন কুরাইশরা আপনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, আমরা সেদিন আপনাকে গ্রহণ করেছি (আপনার নবুওয়াত সত্য বলে স্বীকার করেছি); কুরাইশরা যেদিন আপনাকে সাহায্য করে নি, সেদিন আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি; কুরাইশরা আপনাকে আশ্রয়হীন করলে আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। আপনি যেদিন কপর্দকহীন ছিলেন, সেদিন আমরা আপনাকে আর্থিক সাহায্য করেছি।”

“হে আনসাররা! আমি সামান্য সম্পদ কুরাইশদের দিয়েছি যাতে করে তারা ইসলাম ধর্মে অটল থাকে, তা থেকে তোমাদের ইসলাম ধর্মের কাছে সঁপে দিয়েছি, সেজন্য কেন তোমরা বিষণ্ণ হয়েছ? তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, অন্যেরা উট ও দুম্বা নিয়ে যাবে, আর তোমরা নিজেদের সাথে তোমাদের নবীকে নিয়ে যাবে? মহান আল্লাহর শপথ! যদি সমগ্র মানব জাতি এক পথে এবং আনসাররা আরেক পথে চলে, তা হলে আমি আনসারদের পথই বেছে নেব।” অতঃপর তিনি আনসার এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। মহানবী (সা.)-এর ভাষণ আনসারগণের অনুভূতিকে এতটা নাড়া দিয়েছিল যে, তাঁরা সবাই কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন : হে রাসূলাল্লাহ্! আমরা আমাদের প্রাপ্ত অংশের ব্যাপারে সন্তুষ্ট আছি এবং আমাদের সামান্যতম অভিযোগও নেই।”

মহানবী (সা.)-এর উমরা পালন

গনীমত বণ্টন করার পর মহানবী (সা.) জিরানাহ্ থেকে উমরা পালন করার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা গমন করলেন। তিনি উমরার আমলসমূহ আঞ্জাম দেয়ার পর যিলক্বদ মাসের শেষে বা যিলহজ্ব মাসের প্রথম দিকে পবিত্র মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।391

বায়ান্নতম অধ্যায় : অষ্টম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

কা ব ইবনে যুহাইরের বিখ্যাত কাসীদাহ্

হিজরতের অষ্টম বর্ষের পবিত্র যিলক্বদ মাসের মাঝামাঝিতে মহানবী (সা.) জিরানায় হুনাইন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন করার কাজ শেষ করে অবকাশ লাভ করেন। হজ্ব মৌসুমও ঘনিয়ে এল এবং হিজরতের অষ্টম বর্ষ ছিল পবিত্র মক্কার ইসলামী হুকুমতের তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে মুসলমান ও মুশরিক নির্বিশেষে সমগ্র আরব জাতির হজ্ব পালন করার প্রথম বছর। মহতী এ অনুষ্ঠানে মহানবীর অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে হজ্বের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করত এবং তাঁর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের দ্বারা ঐ মহতী সমাবেশে ইসলাম ধর্মের মৌলিক ও প্রকৃত প্রচার কার্যক্রমের বাস্তবায়নও সম্ভব হতো।

অন্যদিকে ইসলামী হুকুমতের প্রাণকেন্দ্র মদীনায় মহানবী (সা.)-এর বেশ কিছু দায়িত্ব ছিল এবং তিন মাস যাবত তিনি মদীনা নগরীর বাইরে ছিলেন। আর যে সব বিষয় সেখানে সরাসরি তাঁকেই আঞ্জাম দিতে হতো সেসব সম্পূর্ণরূপে তত্ত্বাবধায়কশূন্য হয়ে পড়েছিল। মহানবী সমুদয় দিক পর্যালোচনার পর এক উমরা সম্পন্ন করে পবিত্র মক্কা ত্যাগ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মদীনায় ফিরে যাওয়ার মধ্যেই কল্যাণ দেখতে পেলেন।

নব্য বিজিত অঞ্চলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়াদি পরিচালনার জন্য এমন সব ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা প্রয়োজন ছিল যেন মহানবীর অনুপস্থিতিতে কোন সংকটের উদ্ভব না হয়। এ কারণেই একজন সহিষ্ণু ও বুদ্ধিমান যুবক উত্তাব ইবনে উমাইদ, যাঁর জীবন থেকে বিশ বসন্তের অধিক সময় গত হয় নি, তাঁকে মহানবী এক দিরহাম মাসোহারার বিনিময়ে পবিত্র মক্কার প্রশাসক ও শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত করলেন। এ কাজের মাধ্যমে তিনি কতকগুলো ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছিলেন। মহানবী এ কাজের দ্বারা প্রমাণ করেছিলেন, সামাজিক পদ ও দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ও নিযুক্ত হবার বিষয়টি শুধু যোগ্যতার সাথেই সম্পর্কিত এবং অল্প বয়স্ক হওয়া কখনোই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন যুবকের সবচেয়ে বড় সামাজিক পদমর্যাদা লাভের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না। পবিত্র মক্কার শাসনকর্তা এক বিশাল জনসমাবেশে জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন : মহানবী (সা.) আমার জন্য মাসোহারার ব্যবস্থা করেছেন এবং আমি এ কারণে আপনাদের উপঢৌকন ও সাহায্যের মোটেই মুখাপেক্ষী নই।”392

মহানবী (সা.)-এর আরেক সুন্দর নির্বাচন হচ্ছে এই যে, তিনি মুয়ায ইবনে জাবালকে (মক্কাবাসীদের) ধর্মীয় বিধি-বিধান ও পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন। তিনি সাহাবীগণের মাঝে ফিক্হ্ এবং পবিত্র কুরআনের বিধি-বিধান সংক্রান্ত জ্ঞানের ক্ষেত্রে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। এমনকি মহানবী (সা.) যখন তাঁকে ইয়েমেনে বিচারকাজ পরিচালনা করার জন্য দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন : বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে তোমার দলিল-প্রমাণ কী হবে? তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন : মহান আল্লাহর কিতাব।” মহানবী তখন বললেন : যদি পবিত্র কুরআনে ঐ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ না থাকে, তা হলে তুমি কিসের ভিত্তিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করবে? তিনি বললেন : মহানবী (সা.) সম্পাদিত বিচারকাজসমূহের ভিত্তিতে। কারণ আমি বিভিন্ন বিষয়ে আপনার বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করেছি এবং মনের মধ্যে গেঁথে রেখেছি। যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে যার বিষয়বস্তু আপনার কোন একটি বিচারের অনুরূপ হয়, তা হলে আপনার বিচার থেকে সাহায্য নিয়ে তদনুসারে ফয়সালা দেব।” রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তৃতীয় বারের মতো তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন : যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে যে ব্যাপারে মহান আল্লাহর কিতাবে কোন স্পষ্ট নির্দেশ নেই এবং আমার পক্ষ থেকেও কোন রায় প্রদান করা হয় নি, তা হলে তুমি কী করবে? তখন তিনি বলেছিলেন : আমি ইজতিহাদ করব এবং শরীয়তের মূলনীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও সাম্যের (ইনসাফের) ভিত্তিতে বিচার করব।” তখন মহানবী বলেছিলেন : মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এজন্য যে, তিনি বিচারকাজ পরিচালনা করার জন্য এমন এক ব্যক্তিকে মনোনীত করার ক্ষেত্রে তাঁর নবীকে সফল করেছেন, যাঁর কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক।”393

কা ব ইবনে যুহাইর ইবনে আবী সালামার ঘটনা

যুহাইর ইবনে আবী সালামা জাহিলীয়াতের যুগে আরব কবি ও কথাশিল্পীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি আল মুআল্লাকাত আস্ সাবআহ্’ অর্থাৎ প্রসিদ্ধ ঝুলন্ত সাত কাব্য’-এর একটির রচয়িতা ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ সাত কাব্য পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হবার আগে পবিত্র কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং সেগুলো আরব সাহিত্যের গর্ব ও মর্যাদার প্রতীক বলে গণ্য হতো।394 তিনি মহানবী (সা.)-এর রিসালাত ও নবুওয়াতের আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং বুজাইর ও কা ব নামের দু পুত্রসন্তান রেখে গিয়েছিলেন। প্রথম সন্তান (বুজাইর) মহানবীর বিশ্বস্ত অনুরাগী ও গুণগ্রাহীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং দ্বিতীয় সন্তান (কা ব) তাঁর কঠোর শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কা ব এক শক্তিশালী বংশগত কাব্যপ্রতিভার অধিকারী থাকায় তার কবিতা ও কাসীদায় মহানবীর প্রতি কটাক্ষ করত এবং তাঁর নিন্দা ও গালমন্দ করে একদল লোককে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে উস্কানী দিত।

মহানবী (সা.) 24 যিলক্বদ মদীনায় প্রবেশ করেন। কা ব-এর ভাই মক্কা বিজয়, তায়েফ অবরোধ এবং মদীনায় প্রত্যাবর্তনকালে মহানবীর সাথে ছিলেন। তিনি নিকট থেকে প্রত্যক্ষ করলেন যে, মহানবী (সা.) কতিপয় কবি, যারা তাঁর ভাইয়ের মতো তীব্র বিদ্রূপ ও গালিগালাজকারী ছিল এবং জনগণকে ইসলামের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করত, তাদেরকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং তাদের রক্ত মূল্যহীন বলে ঘোষণা করেছেন। অবশেষে ঐ সব কবির একজনকে হত্যাও করা হয়েছে এবং আরো দু জন কবি পালিয়ে গিয়ে জনদৃষ্টির অন্তরালে আত্মগোপন করেছে।

বুজাইর কা বের কাছে একটি চিঠিতে পুরো ঘটনা লিখে জানালেন এবং চিঠির শেষে শুভেচ্ছাস্বরূপ উল্লেখ করলেন, যদি সে মহানবীর প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ অব্যাহত রাখে, তা হলে তাকে হত্যা করা হবে। আর যদি সে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সকাশে উপস্থিত হয়ে তার অতীত কর্মের ব্যাপারে অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশ করে অনুতপ্ত হয়, তা হলে মহানবী অনুতপ্ত ব্যক্তিদের তওবা গ্রহণ করেন এবং তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন।

কা ব তার ভাইয়ের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন এবং পবিত্র মদীনার দিকে রওয়ানা হলেন। তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করার সময় মহানবী ফজরের নামায পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। কা ব প্রথম বারের মতো মহানবী (সা.)-এর সাথে নামায আদায় করলেন। অতঃপর তিনি মহানবীর পাশে বসে তাঁর হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললেন : হে রাসূলাল্লাহ্! কা ব তার অতীত কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছে এবং এখন সে একত্ববাদী দীনের প্রতি তার বিশ্বস্ততা প্রকাশ করার জন্য এসেছে। সে যদি নিজে আপনার কাছে উপস্থিত হয়, তা হলে কি আপনি তার তওবা গ্রহণ করবেন? মহানবী তখন বললেন : হ্যাঁ।” তখন কা ব বললেন : আমিই সে কা ব ইবনে যুহাইর।”

কা ব মহানবীর প্রতি তার অতীতের সকল কটূক্তি, নিন্দাবাদ, বিদ্রূপ ও অবমাননার প্রতিকার বিধান করার উদ্দেশ্যে একটি মনোরম কাসীদাহ্, যা তিনি আগেই মহানবী (সা.)-এর প্রশংসায় রচনা করে এনেছিলেন, তা মহানবী ও তাঁর সাহাবীগণের সামনে মসজিদে পাঠ করলেন।395 চমৎকার এ কাসীদা কা বের সর্বোৎকৃষ্ট কাসীদাসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং যেদিন এ কাসীদা মহানবীর সামনে পাঠ করা হয়েছিল, সেদিন থেকে মুসলমানরা এ কাসীদা মুখস্ত ও প্রচার করার ব্যাপারে যত্ন নিয়েছে। ঠিক একইভাবে মুসলিম জ্ঞানীগুণী ও আলেমগণের পক্ষ থেকে এ কাসীদার অনেক ব্যাখ্যাও লেখা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ কাসীদা লামিয়াহ্’ রীতিতে396 রচিত। এ কাব্যের মোট পঙ্ক্তির সংখ্যা হচ্ছে 58। এর শুরুতে রয়েছে নিম্নোক্ত পঙ্ক্তি :

بانت سعاد فقلبِى اليوم مبتول

متيّم اثرها لم يُفد مكبول

জাহিলীয়াতের যুগের কবিরা, যারা প্রেমিকাকে সম্বোধন করে বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন উল্লেখ করার মাধ্যমে নিজেদের কাব্য বা কাসীদা শুরু করত, তাদের রীতিতে কা বও তাঁর এ কাসীদা তাঁর চাচার মেয়ে প্রেমিকা সুয়াদকে স্মরণ করে শুরু করেন এবং বলেন :

সুয়াদ আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে

এবং আমার হৃদয় আজ টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

আর তার অনুপস্থিতিতে তা হীন ও অপদস্থ;

আর এখনো তার মোহ থেকে আমার হৃদয় মুক্তি পায় নি

এবং তা তার কাছে এখনো বন্দী হয়ে আছে।

কা ব তাঁর গর্হিত কার্যকলাপ সম্পর্কে ক্ষমা চেয়ে ও দুঃখ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত পঙ্ক্তিতে বলেন :

نُـبـئـتُ أنّ الـرسـول اوعـدني

و العفو عند رسول الله مأمول

আমাকে জানানো হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাকে (প্রাণনাশের) হুমকি দিয়েছেন,

অথচ রাসূলুল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা করে দেয়াই হচ্ছে কাম্য।

এরপর তিনি বলেন :

إنّ الرسول الله لنور يُستضاء به

مهنّد من سيـوف الله مسـلول

মহানবী এমন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা

যার আলোকরশ্মির প্রভাবে

বিশ্ববাসী সৎ পথে পরিচালিত হয়

এবং তিনি মহান আল্লাহর উন্মুক্ত তলোয়ারসমূহের অন্তর্ভুক্ত

যা সর্বত্র ও সবসময় পূর্ণরূপে বিজয়ী। 397

শোক ও আনন্দের একাত্মতা

হিজরতের অষ্টম বর্ষের শেষের দিকে মহানবী (সা.) তাঁর জ্যেষ্ঠা398 কন্যা হযরত যায়নাবকে হারান। তিনি মহানবীর নবুওয়াত লাভের আগেই খালাত ভাই আবুল আসের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং সাথে সাথে তিনি পিতার রিসালতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বামী শিরক ও পৌত্তলিকতায় বহাল থেকে যায়। সে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং (মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়)। মহানবী (সা.) তাকে মুক্তি দেন এবং এ কারণে শর্ত করেন যে, তাঁর কন্যা যায়নাবকে সে মদীনায় পাঠিয়ে দেবে। সেও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিল এবং (মক্কায় ফিরে গিয়ে) মহানবীর কন্যা যায়নাবকে মদীনায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু কুরাইশ নেতৃবর্গ তাঁকে (যায়নাব) মাঝপথ থেকে মক্কায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়। ঐ লোকটি পথিমধ্যে হযরত যায়নাবের হাওদার কাছে গিয়ে তাঁর হাওদার মধ্যে বর্শা ঢুকিয়ে দেয়। মহানবীর আশ্রয়হীনা কন্যা অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁর গর্ভপাত ঘটে। তবে তিনি মদীনায় চলে যাওয়ার ইচ্ছার ওপর অটল থাকেন এবং অত্যন্ত বেদনাক্লিষ্ট ও অসুস্থ শরীরে মদীনায় প্রবেশ করেন। আর (তখন থেকে) তিনি জীবনের অবশিষ্ট সময় অসুস্থতার মধ্যে কাটান এবং হিজরতের অষ্টম বর্ষের শেষভাগে তিনি ইন্তেকাল করেন। এ শোক ও দুঃখ আরেকটি আনন্দের সাথে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। কারণ মহানবী (সা.) ঐ বছরের শেষের দিকে, মিশরের শাসনকর্তা মুকুকেস তাঁর (মহানবীর) জন্য যে পরিচারিকা উপহারস্বরূপ প্রেরণ করেছিলেন, তাঁর গর্ভে এক পুত্রসন্তান লাভ করেন- যাঁর নাম তিনি ইবরাহীম’ রেখেছিলেন। যখন ধাত্রী (সালমা) মহানবীকে মহান আল্লাহ্ এক পুত্রসন্তান দিয়েছেন এ সুসংবাদ দিলেন, তখন তিনি তাকে একটি অত্যন্ত মূল্যবান উপহার প্রদান করেছিলেন।

সপ্তম দিবসে মহানবী (শিশুসন্তানের জন্য) একটি দুম্বা আকীকা দিলেন এবং নবজাতকের মাথার চুল ছেঁটে তার সম ওজনের রূপা মহান আল্লাহর পথে দান করলেন।399

তেপ্পান্নতম অধ্যায় : নবম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

তাঈ গোত্রের আবাসভূমিতে হযরত আলী (আ.)

আদী ইবনে হাতেমের ইসলাম গ্রহণ

হিজরতের অষ্টম বর্ষ সকল আনন্দ, দুঃখ ও তিক্ততাসহ অতিবাহিত হলো। এ বছর শিরক, পৌত্তলিকতা ও মূর্তিপূজার সবচেয়ে বড় ঘাঁটি মুসলমানদের পদানত হয় এবং দীন ইসলামের মহান নেতা পরিপূর্ণ বিজয় সহকারে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। ইসলামের সামরিক শক্তি আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চলে সম্প্রসারিত হয়। আরবের বিদ্রোহী ও উদ্ধত গোত্রগুলো, যারা ঐ দিন পর্যন্ত ইসলাম ও তাওহীদবাদের এহেন বিজয় সম্পর্কে মোটেই চিন্তা করত না, ধীরে ধীরে এ চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছিল যে, তারা মুসলমানদের নিকটবর্তী হবে এবং তাদের ধর্ম গ্রহণ করবে। এ কারণেই বিভিন্ন আরব গোত্রের প্রতিনিধিরা এবং কখনো কখনো গোত্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে আরব গোত্র মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও ঈমান আনার কথা ঘোষণা করতে থাকে। হিজরতের নবম বর্ষে গোত্রগুলোর প্রতিনিধিরা এত বেশি মদীনায় আসা-যাওয়া করেছিল যে, এ কারণে ঐ বছরের নামকরণ হয়েছিল প্রতিনিধি দলগুলোর আগমনের বর্ষ’ বা আমুল উফূদ’400 (عام الوفود )।

যাইদুল খাইল-এর নেতৃত্বে তাঈ গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয় এবং গোত্রপতি কথা বলা শুরু করে। মহানবী যাইদুল খাইল-এর বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা দেখে বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন : আরবের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে তাদের সম্পর্কে যা শুনেছিলাম, তার চেয়ে তাদেরকে অনেক কম যোগ্যতাসম্পন্নই পেয়েছি। কিন্তু যাইদ সম্পর্কে যা শুনেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন পেয়েছি। তাই তাকে যাইদুল খাইল’ বলার পরিবর্তে যাইদুল খাইর’ (কল্যাণের যাইদ) বলা কতই না উত্তম! 401

এ প্রতিনিধি দলের বৃত্তান্ত402 অধ্যয়ন এবং মহানবী (সা.)-এর সাথে তাদের কথোপকথন সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হলে স্পষ্ট হয়ে যায়, যুক্তিপ্রমাণ নির্ভর প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলাম আরব উপদ্বীপে প্রসার লাভ করেছিল। অবশ্য যুগের সীমা লঙ্ঘনকারী অত্যাচারী-তাগূতী চক্র আবু সফিয়ান, আবু জেহেলরা ইসলাম ধর্মের স্বাভাবিক প্রচার ও প্রসারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শত্রুদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা ছাড়াও এ সব অত্যাচারী চক্রকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্যও মহানবীর যুদ্ধসমূহ পরিচালিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ তাগূতী চক্র ইসলামের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং হিজায, নজদ ও অন্যান্য এলাকায় ইসলামের প্রচার-সৈনিকগণের প্রবেশের পথে বাধাদান করত। তাগূতীদের উৎখাত এবং প্রচার ও প্রসারের পথে যে সব কাঁটা বিদ্যমান, সেগুলো উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত কোন ধর্ম ও সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, শুধু মহানবীই নন, বরং সকল নবীই সর্বাগ্রে তাগূতী চক্রকে দমন ও প্রতিবন্ধকতাগুলো ধ্বংস করার জন্য নিজেদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছেন।

পবিত্র কুরআন সূরা নাসর-এ প্রতিনিধি দলগুলোর আগমন এবং আরব উপদ্বীপে ইসলামের ক্রমবর্ধমান বিজয় প্রসঙ্গে বলেছে :

) إذا جاء نصر الله و الفتح و رأيت النّاس يدخلون فِى دين الله أفواجا فسبح بحمد ربّك و استغفره إنّه كان توّابا(

“যখন মহান আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে; আর আপনি মানুষকে দেখবেন, দলে দলে মহান আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে, তখন আপনি আপনার রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অনুশোচনা গ্রহণকারী।”403

আরব গোত্রগুলোয় এ ধরনের প্রস্তুতি এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলগুলোর আগমন সত্বেও হিজরতের নবম বর্ষে সাতটি সারিয়াহ404 (سريّة ) এবং একটি গাযওয়াহ্405 (غزوة ) সংঘটিত হয়েছিল।

ষড়যন্ত্রগুলো নস্যাৎ করার জন্য এবং তখনও আরব গোত্রগুলোর মধ্যে যে সব বড় বড় মূর্তি ও প্রতিমা পূজার প্রচলন ছিল, সেগুলো ভাঙার জন্য প্রধানত এসব সারিয়াহ্ পরিচালনা করা হয়েছিল। এ সব সারিয়ার অন্যতম হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের সারিয়াহ্। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে তিনি তাঈ গোত্রের আবাসভূমির দিকে গমন করেন। হিজরতের নবম বর্ষে মহানবী (সা.)-এর গাযওয়াসমূহের মধ্য থেকে তাবুকের গাযওয়াহ্ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ গাযওয়ায় মহানবী এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে মদীনা ত্যাগ করে তাবুক সীমান্ত অঞ্চলের দিকে যাত্রা করেন এবং শত্রুবাহিনীর মুখোমুখি হওয়া ও রক্তপাত ছাড়াই পবিত্র মদীনা নগরীতে ফিরে আসেন। তবে তিনি ভবিষ্যতের জন্য সীমান্ত শহর ও নগরীগুলো জয় করার পথ সুগম করেন।