চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79196
ডাউনলোড: 7043


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79196 / ডাউনলোড: 7043
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মহানবী (সা.)-কে মুনাফিকদের হত্যার ষড়যন্ত্র

মহানবী (সা.) প্রায় দশ দিন434 তাবুকে অবস্থান করেছিলেন এবং দাওমাতুল জান্দালে খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে প্রেরণের পর তিনি মদীনার পথে রওয়ানা হন। বারো জন মুনাফিক, যাদের আট জন ছিল কুরাইশ বংশোদ্ভূত এবং বাকী চার জন ছিল মদীনার অধিবাসী, সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দুই পাহাড়ের মাঝের দুর্গম সরু পথের (গিরিপথ) উপর থেকে মহানবীর মদীনা ও শামের মাঝে পথ চলা উটকে ভীত-সন্ত্রস্ত্র করে দেবে এবং এভাবে তারা মহানবীকে উপত্যকার গভীরে ফেলে দিতে সক্ষম হবে। মুসলিম সেনাবাহিনী এ গিরিপথের কাছে পৌঁছলে মহানবী (সা.) বললেন : যে কেউ ইচ্ছা করলে উপত্যকা বা মরু-প্রান্তরের মাঝখান দিয়েও পথ চলতে পারে। কারণ মরু-প্রান্তর বেশ প্রশস্ত। কিন্তু স্বয়ং মহানবী এ গিরিপথ ধরে উঁচুতে উঠে গেলেন এবং পথ চলতে লাগলেন। হযরত হুযাইফা তাঁর উট চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির তার লাগাম ধরে টানছিলেন। তখনও মহানবী গিরিপথ ধরে ততটা উঁচুতে উঠেন নি, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তাঁর পেছন দিকে তাকিয়ে ঐ আলোকোজ্জ্বল রাতে কতিপয় আরোহীকে দেখতে পেলেন, তারা তাঁকে অনুসরণ করছে এবং তারা যাতে শনাক্ত না হয়ে যায়, সেজন্য তাদের মুখমণ্ডল কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে এবং নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। মহানবী ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের প্রতি ভীতিপ্রদ আওয়াজ দিলেন এবং হযরত হুযাইফাকে লাঠি দিয়ে ঐ সব অনুসরণকারীর উটগুলোকে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।

রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আওয়াজ, অনুসরণকারীদের অন্তরে প্রচণ্ড ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং তারাও বুঝতে পেরেছিল, মহানবী তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাই তারা তৎক্ষণাৎ যে পথে এসেছিল, সে পথেই ফিরে গিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছিল।

হুযাইফা বলেন : আমি তাদের উটগুলোর চিহ্ন দেখে তাদেরকে চিনতে পেরেছিলাম এবং মহানবী (সা.)-কে বলেছিলাম : আমি আপনার কাছে তাদের পরিচিতি তুলে ধরব, যাতে আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। মহানবী (সা.) তখন দয়ার্দ্রপূর্ণ কণ্ঠে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন তাদের নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকি। সম্ভবত তারা তওবা করতে পারে। তিনি আরো বললেন : আমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করলে বিধর্মীরা বলবে, মুহাম্মদ শক্তি ও ক্ষমতার তুঙ্গে পৌঁছানোর পর নিজ সঙ্গী-সাথীদের গর্দানের ওপর তরবারির আঘাত হেনেছে।”435

নিয়্যত আমলের প্রতিনিধি

স্বদেশে বিজয়ী বেশে সেনাবাহিনীর প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য অপেক্ষা আর কোন দৃশ্যই অধিক জমকালো হয় না। একজন মুজাহিদ যোদ্ধার গৌরব ও মর্যাদা সংরক্ষণকারী এবং তাঁর অস্তিত্বের নিশ্চয়তা বিধায়ক শত্রুর ওপর বিজয়ের চেয়ে আর কোন কিছুই তাঁর কাছে অধিকতর আনন্দদায়ক ও সুমিষ্ট হতে পারে না। ঘটনাক্রমে উভয় বিষয়ই মদীনায় ইসলামের বিজয়ী সেনাদলের প্রত্যাবর্তন মুহূর্তে পরিদৃষ্ট হয়েছিল।

তাবুক ও মদীনার অন্তর্বর্তী দূরত্ব অতিক্রমের পর বিজয়ী মুসলিম বাহিনী পূর্ণ গৌরব ও জাঁকজমক সহ মদীনায় প্রবেশ করল। ইসলামের সৈনিকরা তখন আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। সৈনিকদের গৌরব ও শত্রুর ওপর বিজয়ী হবার গর্ব তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছিল। আর এর কারণও স্পষ্ট ছিল। কারণ শক্তিশালী রাষ্ট্র, যা নিজের শক্তিধর প্রতিপক্ষ ইরানকে মাটিতে বসিয়ে দিয়েছিল, সেই শক্তিশালী রাষ্ট্রকেই তারা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য ও তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করতে এবং শাম ও হিজাযের সকল সীমান্তবাসীকে নিজেদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছে।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, শত্রুর ওপর বিজয় এমন এক গৌরব- যা এ সেনাবাহিনীর ভাগ্যে জুটেছিল এবং যারা কোন গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই মদীনায় বসে থেকেছিল (এবং যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত ছিল) তাদের ওপর এদের গর্ব করা ছিল নিতান্ত স্বাভাবিক ও যুক্তিসংগত। তবে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা ও বিজয়ী বেশে প্রত্যাবর্তন কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মাঝে মাত্রাতিরিক্ত গর্বের উদ্ভব ঘটাতে পারত এবং সেই সম্ভাবনাও ছিল। আর তা যুক্তিসংগত কারণবশত মদীনায় থেকে যাওয়া এবং দুঃখ ও আনন্দে আন্তরিকভাবে তাদের শরীকদের প্রতি অবমাননা, অবজ্ঞা ও ধৃষ্টতা বলে গণ্য হবার সম্ভাবনা ছিল। এ কারণেই মহানবী (সা.) মদীনার কাছাকাছি স্থানে অল্প সময়ের জন্য ইসলামী বাহিনী যাত্রা বিরতি করলে তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন :

إن بالمدينة لأقواما ما سرتم سيرا و لا قطعتم واديا إلّا كانوا معكم، قالوا : يا رسول الله و هم بالمدينة؟ قال: نعم حبسهم العذر

“মদীনায় এমন কিছু ব্যক্তি ও দল আছে, যারা এ অভিযানে তোমাদের শরীক ছিল এবং তোমরা যেখানেই পা রেখেছ, তারাও সেখানে পা রেখেছে।” তখন মহানবীকে জিজ্ঞেস করা হলো: এটা কিভাবে কল্পনা করা সম্ভব যে, তারা মদীনায় অবস্থান করছে, অথচ আমাদের সাথে এ অভিযানে রয়েছে? তখন তিনি বললেন : তারা ঐ সব ব্যক্তি, যারা ইসলামের এক সুমহান দায়িত্ব অর্থাৎ জিহাদের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ পোষণ করা সত্বেও কোন যুক্তিসংগত কারণবশত জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে।436

মহানবী (সা.) তাঁর এ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের একটি শিক্ষণীয় কর্মসূচী ও নীতির দিকে ইঙ্গিত করেন এবং সেই সাথে তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, পবিত্র চিন্তাধারা ও সদিচ্ছা নেক আমল বা পুণ্যময় কর্মের স্থলবর্তী হয় এবং যে সব ব্যক্তি শক্তি-সামর্থ্য না থাকার কারণে এবং উপায়-উপকরণের অভাবে পুণ্যের কাজ আঞ্জাম দেয়া থেকে বঞ্চিত থাকে, আত্মিক আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করার কারণে তারাও পুণ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যদের শরীক হতে পারবে।

ইসলাম যদি বাহ্য অবস্থা সংস্কার করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়, তা হলে অভ্যন্তরীণ (আত্মিক) অবস্থা সংশোধন ও সংস্কারের ব্যাপারে এ ধর্মের আগ্রহ আরো বেশি হবে। কারণ সকল সংস্কার কার্যক্রমের উৎস হচ্ছে আকীদা-বিশ্বাস এবং চিন্তা-প্রক্রিয়ার সংশোধন এবং আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আমাদের চিন্তা-ভাবনা দ্বারা উদ্ভূত ও উৎসারিত।

মহানবী (সা.) তাঁর বক্তব্যের দ্বারা মুজাহিদদের অসমীচীন অহংকার বিলুপ্ত করে দিলেন এবং সংগতভাবে বিরত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মর্যাদা রক্ষা করলেন। তবে যে সব লোক বিনা কারণে যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত ছিল তাদেরকে শিক্ষা দেয়া এবং তাদের বিচরণক্ষেত্র সংকীর্ণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।

নেতিবাচক সংগ্রাম ও প্রতিরোধ

যেদিন মদীনায় সর্বসাধারণ রণপ্রস্তুতি ও সেনা পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সেদিন তিন ব্যক্তি হিলাল, কা ব ও মুরারাহ্ মহানবীর নিকট উপস্থিত হয়ে এ জিহাদে যোগদান না করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। তাদের অজুহাত ছিল এই যে, তখনও ক্ষেত-খামার ও বাগান থেকে শস্য তোলা, মাড়াই ও সংগ্রহের কাজ শেষ হয় নি এবং তাদের ফসল তোলা ও মাড়াইয়ের কাজ কেবল অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। তবে তারা মহানবীকে কথা দিয়েছিল যে, কয়েক দিনের ব্যবধানে ফসল গুছিয়ে ঠিক করার পর তারা যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম বাহিনীর সাথে যোগ দেবে।

এ ধরনের ধর্ম ও অর্থ, বস্তুগত স্বার্থ এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা ইত্যাদির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধকারী লোকেরা আসলে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। তারা দ্রুত অপসৃয়মান বন্তুগত আনন্দ উপভোগকে চিন্তাগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার পতাকাতলে বাস্তবায়িত মর্যাদাকর মানব জীবনের সমকক্ষ বলে মনে করে, এমনকি কখনো কখনো তারা ঐ সব বস্তুগত আনন্দ ও উপভোগকে মর্যাদাকর মানব জীবনের উপরও প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

মহানবী (সা.) মদীনায় প্রত্যাবর্তনের পর এ ধরনের লোকদের যথোপযুক্ত শাস্তি দান করে সমাজের অন্যান্য সদস্য ও ব্যক্তির মধ্যে এ ব্যাধি সংক্রমণের পথ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তারা কেবল এ জিহাদে অংশগ্রহণ তো করেই নি; বরং নিজেদের প্রতিশ্রুতিও পালন করে নি। তারা ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এতটা মশগুল হয়ে গিয়েছিল যে, মদীনায় বিজয়ী বেশে মহানবীর প্রত্যাবর্তনের সংবাদ হঠাৎ করেই প্রচারিত হয়ে গেল। এ তিন জন ক্ষতিপূরণের আশায় মহানবীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দ্রুত ছুটে এসেছিল এবং অন্যদের মতো তারাও মহানবীর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছিল।

মহানবী (সা.) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ঐ গৌরবময় সমাবেশে এবং আনন্দের মধ্যে তিনি ভাষণ দেয়া শুরু করলেন। প্রথম যে কথা তিনি ঐ বিশাল সমাবেশে বলেছিলেন তা হলো :

হে লোকসকল! এ তিন ব্যক্তি ইসলামের বিধানকে হালকা করে দেখেছে ও উপেক্ষা করেছে এবং তারা আমার সাথে যে প্রতিজ্ঞা করেছিল, সে অনুসারে কাজ করে নি এবং তারা তাওহীদের মর্যাদাকর জীবনের ওপর নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। সুতরাং এদের সাথে তোমরা তোমাদের যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেল।”

যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরতদের সংখ্যা নব্বই জন হওয়া সত্বেও যেহেতু এদের অধিকাংশই ছিল মুনাফিক এবং শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে তারা যে অংশগ্রহণ করবে, তা তাদের কাছ থেকে কখনই আশা করা যায় না, সেহেতু এ তিন মুসলমানের ওপরই বয়কট ও তাদেরকে একঘরে করে রাখার মূল চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এ তিন ব্যক্তির মধ্যে মুরারাহ্ ও হিলাল বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং মুসলমানদের মাঝে তাদের সুনাম ছিল।

মহানবী (সা.)-এর প্রাজ্ঞ নীতি, যা তাঁর ধর্ম তথা শরীয়তেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, অতি বিস্ময়কর প্রভাব রেখেছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে যারা বিরত ছিল, তাদের কেনা-বেচা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের পণ্য-সামগ্রী বিক্রি হতো না। তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ট লোকজনও তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল, এমনকি তাদের সাথে কথা বলা ও তাদের কাছে যাতায়াত পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল।

তাদের সাথে জনগণের সম্পর্কচ্ছেদ তাদের আত্মা ও মন-মানসিকতার ওপর এতটা চাপ প্রয়োগ করেছিল যে, পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্বেও তাদের দৃষ্টিতে তা একটি খাঁচার চেয়ে বেশি কিছু ছিল না।437

এ তিন ব্যক্তি পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা সহ উপলব্ধি করতে পেরেছিল, মুসলমানদের কাতারে সত্যিকারভাবে শামিল হওয়া ছাড়া ইসলামী সামাজিক পরিমণ্ডলে বসবাস মোটেই সম্ভব নয় এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের বিপরীতে সংখ্যাস্বল্পদের জীবন দীর্ঘস্থায়ী হবে না, বিশেষ করে এ সংখ্যাস্বল্পরা যদি উচ্চাভিলাষী, মতলববাজ ও দুরভিসন্ধি সম্পন্ন হয়।

একদিকে এ সব হিসাব-নিকাশ এবং অন্যদিকে মানব প্রকৃতির (ফিতরাত) আকর্ষণ, তাদেরকে পুনরায় প্রকৃত ঈমানের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তারা তওবা করে এবং মহান আল্লাহর দরবারে নিজেদের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখিত ও অনুতপ্ত হয়। মহান আল্লাহ্ও তাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে বলে মহানবীকে অবগত করেন এবং সাথে সাথে মহানবীর পক্ষ থেকেও তাদেরকে একঘরে করে রাখার নির্দেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়।438

মসজিদে যিরারের ঘটনা

আরব উপদ্বীপে মদীনা ও নাজরান আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের জন্য দু টি বিশাল কেন্দ্র বলে গণ্য হতো। এ কারণেই আউস ও খাযরাজ গোত্রীয় কিছু আরব ইহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিল।

উহুদ যুদ্ধের একজন বিখ্যাত শহীদ হানযালার পিতা আবু আমীর জাহিলীয়াতের যুগে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি প্রচণ্ডভাবে ঝুঁকে পড়েছিল এবং খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ইসলামের নব তারকা মদীনা থেকে উদিত হয়ে সকল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিজের মাঝে বিলীন করে দেয়ায় আবু আমীর খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিল। আর তখন থেকেই সে আউস ও খাযরাজ গোত্রের মুনাফিকদের সাথে আন্তরিক সহযোগিতা শুরু করে দেয়। মহানবী (সা.) তার ধ্বংসাত্মক তৎপরতা সম্পর্কে জ্ঞাত হলে তাকে গ্রেফতার করতে চাইলেন। কিন্তু সে প্রথমে মদীনা থেকে মক্কায় পালিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তায়েফে এবং তায়েফের পতন হলে সেখান থেকে সে শামে পালিয়ে যায়। সে সুদূর শাম থেকে মুনাফিক গোষ্ঠীর গোপন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত।

সে বন্ধুদের প্রতি লেখা একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছিল : কুবা গ্রামে তোমরা মুসলমানদের বিপক্ষে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে এবং নামাযের ওয়াক্তে সেখানে জড়ো হবে। ফরয নামায আদায় করার বাহানায় সেখানে ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি এবং গোষ্ঠীগত কর্মসূচী ও পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে পরস্পর আলোচনা ও মতবিনিময় করবে।

আবু আমীর এ কালের ইসলামের শত্রুদের মতো অনুধাবন করেছিল যে, যে দেশে ধর্ম পূর্ণরূপে প্রচলিত, সেখানে ধর্মের মূলোৎপাটনের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হচ্ছে ধর্মের নামের অপব্যবহার। ধর্মের ক্ষতিসাধন করার জন্য অন্য যে কোন উপাদানের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ধর্মের নাম ব্যবহার করা যেতে পারে।

সে খুব ভালোভাবেই জানত, মহানবী (সা.) যে কোন শিরোনামে মুনাফিকদের সমাবেশকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেবেন না। তবে এ কেন্দ্রের গায়ে যদি ধর্মীয় লেভেল আঁটা যায় এবং মসজিদ ও ইবাদতগাহ্ নির্মাণ করার বহিরাবরণে যদি নিজেদের একটি সমাবেশস্থল নির্মাণ করা যায়, সে ক্ষেত্রে হয় তো বা মহানবী (সা.) তাদেরকে অনুমতি দেবেন।

মহানবী (সা.)-এর তাবুক অভিযানে বের হওয়ার সময় মুনাফিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে অন্ধকার ও বর্ষণমুখর রাতে তাদের বৃদ্ধ ও রোগীরা ঘর থেকে কুবা মসজিদের দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে না- এ বাহানায় তাদের মহল্লায় একখানা মসজিদ নির্মাণের অনুমতি চায়। কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের আবেদন অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করা সংক্রান্ত কোন কথাই বললেন না এবং এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় অভিযান থেকে ফেরা পর্যন্ত স্থগিত রাখলেন।439

মুনাফিক গোষ্ঠী মহানবী (সা.)-এর অনুপস্থিতিতে একটি স্থান নির্বাচন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঐ স্থানে মসজিদের নামে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। মহানবী (সা.)-এর মদীনায় প্রত্যাবর্তনের দিন তারা মহানবীর কাছে এসে আবেদন জানাল, তিনি যেন কয়েক রাকাআত নামায আদায় করার মাধ্যমে এ ইবাদতগাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে ওহীর ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে মহানবীকে পুরো ব্যাপার সম্পর্কে অবহিত করলেন এবং এ ইমারতকে মসজিদ-ই যিরার’ (مسجد ضرار ) বলে অভিহিত করলেন যা রাজনৈতিক শ্রেণীবিভক্তি এবং মসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে।440

মহানবী (সা.) মসজিদে যিরারের ইমারত ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া, সেখানকার কড়িকাঠগুলো জ্বালিয়ে ফেলা এবং বেশ কিছুকাল তা ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ জারী করেছিলেন।441

মুনাফিক-গোষ্ঠীর ললাটের উপর মসজিদে যিরার ধ্বংস করা ছিল এক বিরাট মারণ আঘাত। এরপর থেকে এ গোষ্ঠীর সূত্র ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ও সমর্থক আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাইও তাবুক যুদ্ধের পর দু মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে। তাবুক অভিযান ছিল সর্বশেষ ইসলামী গায্ওয়া যাতে মহানবী (সা.) নিজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপর তিনি আর কোন সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করেন নি।

পঞ্চান্নতম অধ্যায় : নবম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

মদীনায় সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দল

তাবুক অভিযান অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছিল এবং মুজাহিদগণ ক্লান্ত দেহে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। যোদ্ধারা এ সামরিক অভিযানে পথিমধ্যে কোন শত্রুর মুখোমুখি হন নি এবং তাদের কোন গনীমতও অর্জিত হয় নি। এ কারণে একদল সরলমনা লোক এ অভিযানকে বৃথা বলে বিবেচনা করত। তবে তারা এ অভিযানের অদৃশ্য ফলাফল সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ অভিযানের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে গেল এবং আরবের সবচেয়ে অনমনীয় গোত্র- যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং মহানবীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে মোটেই প্রস্তুত ছিল না,- মহানবীর নিকট প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে নিজেদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা দিয়েছিল এবং মুসলমানদের জন্য তাদের দুর্গগুলোর দরজাগুলো খুলে দিয়েছিল যাতে তাঁরা এ গোত্রের প্রতিমা ও মূর্তিগুলো ধ্বংস করে সেগুলোর স্থানে তাওহীদের পতাকা উড্ডীন করেন।

মূলত অগভীর দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ব্যক্তিরা সবসময় দৃশ্যমান ও তথাকথিত মুঠিপূর্ণকারী ফলাফলের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামের সৈনিকরা যদি পথিমধ্যে কোন শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তাকে হত্যা করতেন এবং তার অর্থ-সম্পদ জব্দ করতেন, তা হলে তারা বলত, যুদ্ধের ফলাফল খুবই উজ্জ্বল ছিল। তবে গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা ঘটনাবলীকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন; যে কাজ লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে, সে কাজের প্রশংসা করেন এবং সেটাকে ফলপ্রসূ বলে বিবেচনা করেন।

মহানবী (সা.)-এর লক্ষ্য ছিল সমগ্র আরব জাতির ইসলাম গ্রহণ, সে ক্ষেত্রে তাবুক যুদ্ধ ঘটনাচক্রে বেশ উপযোগী প্রভাব রেখেছিল। কারণ সমগ্র হিজাযে প্রচারিত হয়ে গিয়েছিল, রোমানরা (যে রোমান জাতি সর্বশেষ যুদ্ধে তদানীন্তন সভ্য বিশ্বের অর্ধেক অংশ যে ইরানী জাতি,- এমনকি ইয়েমেন ও তৎসংলগ্ন এলাকাসমূহের ওপর শাসন ও কর্তৃত্ব করত,- তাদেরকে পরাজিত করে তাদের কাছ থেকে ক্রুশ উদ্ধার করে তা বাইতুল মুকাদ্দাস তথা জেরুজালেমে নিয়ে গিয়েছিল) মুসলমানদের সামরিক শক্তি দেখে ভীত হয়ে মুসলিম সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা থেকে বিরত থেকেছে। এ সংবাদ প্রচারিত হবার ফলে কঠোর (মানসিকতাসম্পন্ন) আরব গোত্রগুলো, যারা আগের দিন পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলমানদের সাথে সন্ধি করতে মোটেই প্রস্তুত ছিল না, তারা মুসলমানদের সাথে সহযোগিতা করার চিন্তা শুরু করে এবং তদানীন্তন বিশ্বের পরাশক্তিগুলো, যেমন রোম ও ইরানের আগ্রাসন থেকে নিরাপদ থাকার জন্য ইসলাম গ্রহণ করার প্রবণতা প্রদর্শন করে।

সাকীফ গোত্রে মতবিরোধ

আরব জাতির মধ্যে সাকীফ গোত্র অবর্ণনীয় ঔদ্ধত্য, অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমীর জন্য কুখ্যাত ছিল। এ গোত্র তায়েফের মজবুত দুর্গে আশ্রয় নিয়ে পুরো এক মাস মুসলিম বাহিনীকে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিল এবং তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে নি।442

সাকীফ গোত্রের একজন নেতা উরওয়াহ্ ইবনে মাসউদ সাকীফ তাবুক অঞ্চলে ইসলামী বাহিনীর বিরাট বিজয় সম্পর্কে অবগত হলেন। মহানবী (সা.)-এর মদীনায় প্রবেশের আগেই উরওয়াহ্ মহানবী সকাশে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মহানবীর কাছে তায়েফ গিয়ে নিজ গোত্রের কাছে একত্ববাদী ধর্মের দাওয়াত প্রদানের অনুমতি চান। মহানবী এ দাওয়াতের পরিণতির ব্যাপারে আশংকা প্রকাশ করে বললেন : আমি ভয় পাচ্ছি, তুমি এ পথে প্রাণ হারাবে।” তিনি জবাবে বলেছিলেন, তারা তাদের নিজেদের চোখের চেয়েও তাঁকে অধিক ভালোবাসে।

উরওয়াহ্ ইসলামের যে মহত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তা তখনও তাঁর গোত্র ও গোত্রের অন্য নেতারা বুঝতে পারে নি। তখনও তাদের মন-মগজে মিথ্যার অহংকার বিদ্যমান ছিল। এ কারণেই তারা প্রথমে ইসলামের প্রচারকারীকে নিজ কক্ষে দাওয়াতরত অবস্থায়ই তীর বর্ষণ করে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করে। শাহাদাত লাভের মুহূর্তে তিনি বলেছিলেন : আমার মৃত্যু হচ্ছে একটি অলৌকিক বিষয় যে ব্যাপারে মহানবী (সা.) আমাকে আগেই জানিয়েছিলেন।”

সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দল

উরওয়াহ্ ইবনে মাসউদ সাকীফকে হত্যা করার পর সাকীফ গোত্রের অধিবাসীরা অত্যন্ত অনুতপ্ত হলো এবং বুঝতে পারল, যে হিজাযের সর্বত্র তাওহীদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছে, সেখানে তাদের আর বসবাস সম্ভব নয় এবং তাদের সকল চারণক্ষেত্র ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ মুসলমানদের পক্ষ থেকে হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে। নিজেদের সমস্যাগুলো পর্যালোচনার জন্য আয়োজিত সভায় তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের তরফ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে মহানবীর সাথে আলোচনা এবং কতিপয় শর্তসাপেক্ষে সাকীফ গোত্রের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয় ঘোষণার জন্য এক ব্যক্তিকে মদীনায় প্রেরণ করা হবে।

তারা সর্বসম্মতিক্রমে আবদা ইয়ালাইলকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যে মদীনায় গিয়ে মহানবীর কাছে তাদের বার্তা পৌঁছে দেবে। কিন্তু সে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে : আমার যাবার পর তোমাদের অভিমত যে পাল্টে যাবে এবং আমাকেও উরওয়ার মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে, তা মোটেই অসম্ভব নয়।” এরপর সে আরো বলেছিল: সাকীফ গোত্রের আরো পাঁচ ব্যক্তি আমার সাথে থাকলে আমি তোমাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব গ্রহণ করব। আর এ ছয় ব্যক্তিকে সমানভাবে এ প্রতিনিধি দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে।”

আবদা ইয়ালাইলের প্রস্তাব গৃহীত হলো। ছয় ব্যক্তি মদীনার উদ্দেশে তায়েফ নগরী ছেড়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর মদীনা নগরীর অদূরে একটি ঝরনার পাশে যাত্রাবিরতি করে। মুগীরাহ্ ইবনে শুবাহ্ সাকীফ, যে মহানবীর সাহাবীগণের ঘোড়াগুলো চারণভূমিতে নিয়ে এসেছিল, সে নিজ গোত্রপতিদের ঝরনার পাশে দেখতে পায়। তৎক্ষণাৎ সে তাদের কাছে দ্রুত ছুটে যায় এবং তাদের আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে নেয়। অতঃপর মহানবীকে একগুঁয়ে সাকীফ গোত্রের অধিবাসীদের গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য সে ঐ ছয় ব্যক্তির কাছে ঘোড়াগুলো সোপর্দ করে দ্রুত মদীনার পথে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে হযরত আবু বকরের সাথে তার দেখা হলে সে তাঁকে পুরো ব্যাপার সম্পর্কে অবহিত করে। আবু বকর তাকে অনুরোধ করেন যাতে করে সে তাঁকে সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমনের শুভ সংবাদ মহানবীর কাছে বয়ে নিয়ে যাবার অনুমতি দেয়। অবশেষে হযরত আবু বকর মহানবীকে সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমন সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, কতিপয় শর্তসাপেক্ষে এবং (মহানবীর পক্ষ থেকে) একটি প্রতিশ্রুতিপত্র প্রদানের ভিত্তিতে তারা ইসলাম গ্রহণে প্রস্তুত।

মহানবী (সা.) মসজিদে নববীর কাছে সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের থাকা ও আপ্যায়নের জন্য একটি তাঁবু স্থাপন করে খালিদ ইবনে সাঈদ এবং মুগীরাকে এ প্রতিনিধি দলের আপ্যায়ন ও দেখাশোনার নির্দেশ দেন।

প্রতিনিধি দল মহানবীর নিকট উপস্থিত হয়। যদিও মুগীরাহ্ ইবনে শুবাহ্ তাদেরকে বলেছিল যে, তারা যেন জাহিলীয়াতের যুগের অভিবাদন পদ্ধতি পরিহার করে মুসলমানদের ন্যায় সালাম দেয়, কিন্তু অহংকার তাদের অস্থি-মজ্জার সাথে মিশে গিয়েছিল বিধায় তারা জাহিলী যুগের পদ্ধতিতেই মহানবীকে সালাম জানাল এবং তাঁকে ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত সাকীফ গোত্রের বার্তা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করল। অতঃপর তারা আরো বলল : ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের কতিপয় শর্ত আছে, যেগুলো আমরা পরবর্তী বৈঠকে আপনার কাছে পেশ করব।” সাকীফ গোত্র প্রতিনিধি দলের সংলাপ কয়েক দিন ধরে চলতে থাকে। আর মহানবী (সা.) খালিদ ইবনে সাঈদের মাধ্যমে এসব সংলাপের সারবস্তু সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলেন।