চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79238
ডাউনলোড: 7054


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79238 / ডাউনলোড: 7054
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

2. গাদীরের মহা ঘটনা

হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। মুসলমানরা মহানবীর কাছ থেকে হজ্বের আমলসমূহ শিখে নেন। এ সময় মহানবী সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি পবিত্র মদীনার উদ্দেশে পবিত্র মক্কা ত্যাগ করবেন। মদীনা অভিমুখে যাত্রার নির্দেশ দেয়া হলো। কাফেলাসমূহ জুহ্ফার তিন মাইলের মধ্যে অবস্থিত রাবুঘ’ নামক স্থানে পৌঁছলে ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরীল আমীন (আ.) গাদীরে খুম’ নামক স্থানে অবতরণ এবং নিম্নোক্ত আয়াত দিয়ে মহানবী (সা.)-কে সম্বোধন করেন,

) بلّغ ما أُنزل إليك من ربّك و إن لم تفعل فما بلّغت رسالته(

“আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার করুন; আর যদি আপনি তা না করেন, তা হলে আপনি তাঁর রিসালতই (যেন) প্রচার করেন নি এবং মহান আল্লাহ্ আপনাকে জনগণের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন।” (সূরা মায়েদাহ্ : 67)

এ আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, মহান আল্লাহ্ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মহানবী (সা.)-এর যিম্মায় অর্পণ করেছেন। লক্ষ মানুষের চোখের সামনে মহানবী (সা.) কর্তৃক আলী (আ.)-কে খিলাফত ও উত্তরাধিকারীর পদে নিযুক্ত করার ঘটনার চেয়ে কোন্ বিষয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? এ দৃষ্টিকোণ থেকেই যাত্রা বিরতির নির্দেশ প্রদান করা হলো। যাঁরা কাফেলার সম্মুখভাগে ছিলেন, তাঁদের থামানো হলো এবং যাঁরা কাফেলার পেছনে ছিলেন, তাঁরা এসে তাঁদের সাথে মিলিত হলেন। সেদিন দুপুর বেলা তীব্র গরম পড়েছিল। জনতা তাদের বহিরাবরণের একটি অংশ মাথার উপর এবং আরেকটি অংশ পায়ের নিচে রেখেছিল। যে চাদর গাছের উপর ছুঁড়ে দেয়া হয়েছিল, তা দিয়ে মহানবী (সা.)-এর জন্য একটি শামিয়ানা তৈরি করা হলো। মহানবী জামাআতে যুহরের নামায আদায় করলেন। এরপর জনতা তাঁর চারপাশে সমবেত হলে তিনি একটি উঁচু জায়গার উপর গিয়ে দাঁড়ালেন যা উটের হাওদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে ভাষণ দিলেন।

গাদীরে খুমে মহানবী (সা.)-এর ভাষণ

মহান আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। তাঁর কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি এবং আমাদের যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে তাঁর কাছে আমরা আশ্রয় নিচ্ছি। তাঁর ওপর ভরসা করি। তিনি ছাড়া আর কোন পথপ্রদর্শক নেই। তিনি যাকে হিদায়েত করেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ (রাসূল)।

হে লোকসকল! অতি শীঘ্রই আমি মহান আল্লাহর আহবানে সাড়া দেব এবং তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেব। আমিও দায়িত্বশীল, তোমরাও দায়িত্বশীল (আমাকেও জবাবদিহি করতে হবে এবং তোমদেরও জবাবদিহি করতে হবে)। তোমরা আমার ব্যাপারে কী চিন্তা কর? এ সময় উপস্থিত জনতা সত্যায়ন করে সাড়া দিলেন এবং বললেন : আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চেষ্টা করেছেন। মহান আল্লাহ্ আপনাকে পুরস্কৃত করুন।”

মহানবী (সা.) বললেন : তোমরা কি সাক্ষ্য দেবে যে, বিশ্ব-জগতের মাবুদ এক-অদ্বিতীয় এবং মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল; পরকালে বেহেশত, দোযখ এবং চিরস্থায়ী জীবনের ব্যাপারে কোন দ্বিধা ও সন্দেহ নেই? তখন সবাই বললেন : এসব সত্য এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।”

অতঃপর তিনি বললেন : হে লোকসকল! আমি দু টি মূল্যবান জিনিস তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি। আমরা দেখব, তোমরা আমার রেখে যাওয়া এ দু টি স্মৃতিচিহ্নের সাথে কেমন আচরণ করছ? ঐ সময় একজন দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে বললেন : এ দুই মূল্যবান জিনিস কী? মহানবী বললেন : একটি মহান আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কুরআন), যার এক প্রান্ত মহান আল্লাহর হাতে এবং অপর প্রান্ত তোমাদের হাতে আছে এবং অপরটি আমার বংশধর (আহলে বাইত)। মহান আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন, এ দুই স্মৃতিচিহ্ন কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।

হে লোকসকল! পবিত্র কুরআন ও আমার বংশধর থেকে অগ্রগামী হয়ো না এবং কার্যত এতদুভয়ের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করো না; এর অন্যথা করলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।”

এ সময় মহানবী (সা.) আলী (আ.)-এর হাত ধরে এতটা উঁচু করলেন যে, তাঁদের উভয়ের বগলদেশ জনতার সামনে স্পষ্ট দেখা গেল এবং তিনি আলী (আ.)-কে উপস্থিত জনতার কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন : মুমিনদের চেয়ে তাদের নিজেদের ওপর কে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত? তখন সবাই বললেন : মহান আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।” মহানবী তখন বললেন : মহান আল্লাহ্ আমার মাওলা এবং আমি মুমিনদের মাওলা; আর আমি তাদের নিজেদের ওপর তাদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এবং সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন। সুতরাং হে লোকসকল! আমি যার মাওলা, এই আলীও তার মাওলা।522 হে আল্লাহ! যে তাকে সমর্থন করবে তাকে তুমিও সমর্থন কর; যে তার সাথে শত্রুতা করবে, তার সাথে তুমিও শত্রুতা কর; যে তাকে ভালোবাসবে, তাকে তুমিও ভালোবাস; যে তাকে ঘৃণা করবে, তাকে তুমিও ঘৃণা কর; যে তাকে সাহায্য করবে, তাকে তুমিও সাহায্য কর এবং যে তাকে সাহায্য থেকে বিরত থাকবে, তাকে তুমিও সাহায্য থেকে বিরত থাক এবং সে যেদিকে ঘোরে, সত্যকেও তার সাথে সেদিকে ঘুরিয়ে দাও।”

من كنت مولاه فهذا علىّ مولاه اللّهم وال من والاه و عاد من عاداه و أحبّ من أحبّه و أبغض من أبغضه و انصر من نصره و اخذل من خذله و أدر الحقّ معه حيث دار

গাদীরে খুমের মহা ঘটনার চিরস্থায়িত্ব

মহান আল্লাহর পরম বিজ্ঞ ইচ্ছা এটাই যে, গাদীরে খুমের ঐতিহাসিক এ মহাঘটনা সর্বকাল ও সর্বযুগে এক জীবন্ত ইতিহাস রূপে বিদ্যমান থাকবে যা সবসময় মানুষের হৃদয়কে আকৃষ্ট করতে থাকবে। মুসলিম লেখক ও গ্রন্থ রচয়িতাগণ সব যুগে ও সব সময় তাঁদের প্রণীত তাফসীর, ইতিহাস, হাদীস ও কালামবিদ্যার গ্রন্থসমূহে এ ব্যাপারে আলোচনা রাখবেন এবং একে ইমাম আলী (আ.)-এর অন্যতম অনস্বীকার্য ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব বলে গণ্য করবেন। কেবল বক্তারাই নন; বরং কবি, আবৃত্তিকার ও প্রশংসাগীতিকারীরাও এ মহা ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এ প্রসঙ্গে গভীর চিন্তা-ভাবনা করবেন এবং মহান ওয়ালী অর্থাৎ মাওলার প্রতি অধিক ভক্তি ও নিষ্ঠা পোষণ করার মাধ্যমে তাঁদের সাহিত্যিক প্রতিভা ও অভিরুচিকে বিকশিত করবেন এবং বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন আঙ্গিকে সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্ম রচনা করবেন।

এ কারণেই পৃথিবীতে গাদীরে খুমের এ মহাঘটনার সমপর্যায়ের খুব কম ঐতিহাসিক ঘটনাই মুহাদ্দিস, মুফাসসির, কালামবিদ, দার্শনিক, বক্তা, কবি, ঐতিহাসিক ও জীবনচরিত রচয়িতাগণের মতো বিভিন্ন শ্রেণীর মনীষীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এ ব্যাপারে এতটা আগ্রহ, মনোযোগ ও গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

এ মহা ঘটনার চিরস্থায়ী ও অবিস্মরণীয় হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ ঘটনা প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের দু খানা আয়াত523 অবতীর্ণ হওয়া। তাই যতদিন পবিত্র কুরআন থাকবে, সে পর্যন্ত এ ঐতিহাসিক ঘটনাও স্থায়ী থাকবে এবং মানুষের স্মৃতিপট থেকে তা কখনো  মুছে যাবে না।

যেহেতু প্রাচীন কালের মুসলিম সমাজ এবং এখনও শিয়া মুসলিম সমাজ এ ঘটনাকে অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হিসেবে গণ্য করে এবং যে অনুষ্ঠানমালা অন্যান্য ইসলামী উৎসবে পালন করা হয়, এ দিবসেও (গাদীরে খুম দিবস অর্থাৎ 18 যিলহজ্ব) সেসব পালন করা হয়, সেহেতু স্বভাবতই গাদীরে খুমের ঐতিহাসিক ঘটনা চিরস্থায়িত্ব লাভ করেছে এবং তা কখনোই মানুষের স্মৃতিপট থেকে মুছে যাবে না।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে খুব ভালোভাবে জানা যায়, 18 যিলহজ্ব মুসলমানদের মধ্যে ঈদে গাদীর (গাদীর উৎসব) দিবস’ নামে প্রসিদ্ধ ছিল। কারণ ইবনে খাল্লিকান আল মুস্তালী ইবনে আল মুস্তানসির সম্পর্কে বলেছেন : 487 সালে ঈদে গাদীরে খুম দিবসে অর্থাৎ যা হচ্ছে 18 যিলহজ্ব, সেই দিনে জনগণ তাঁর (আল মুস্তালীর) হাতে বাইয়াত করে।524

তিনি আল মুস্তানসির বিল্লাহ্ আল উবাইদী সম্পর্কে লিখেছেন : তিনি 487 হিজরীর যিলহজ্ব মাসের 12 রাত অবশিষ্ট থাকতেই মৃত্যুবরণ করেন। আর এ রাতই 18 যিলহজ্ব অর্থাৎ ঈদে গাদীরের রাত।525

আবু রাইহান আল বীরুনী আল আসার আল বাকীয়াহ্’ (চিরস্থায়ী নিদর্শনসমূহ) গ্রন্থে মুসলমানরা যে সব ঈদ উদযাপন করতেন ,ঈদে গাদীরকে সে সব ঈদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন।526

কেবল ইবনে খাল্লিকান ও আবু রাইহান আল বিরুনীই এ দিনকে (18 যিলহজ্ব) ঈদ’ বলে অভিহিত করেন নি বরং সায়ালেবীও এ রাতকে মুসলিম উম্মাহর মাঝে যে সব রজনী প্রসিদ্ধ, সেসবের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন।527

এই ইসলামী উৎসবের মূল আসলে গাদীর দিবসের মধ্যেই প্রোথিত রয়েছে। কারণ সেদিন মহানবী (সা.) সকল মুহাজির ও আনসার, এমনকি তাঁর স্ত্রীগণকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা যেন আলী (আ.)-এর কাছে গমন করে তাঁকে এ মহান মর্যাদার জন্য অভিনন্দন জানান।

যাইদ ইবনে আরকাম বলেন : মুহাজিরগণের মধ্য থেকে হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত তালহা এবং হযরত যুবাইর সর্বপ্রথম হযরত আলীর হাতে বাইয়াত করেন। আর অভিনন্দন এবং বাইয়াত অনুষ্ঠান সূর্যাস্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।”

এ মহা ঘটনার অবিস্মরণীয়তার অন্যান্য দলিল

এ ঐতিহাসিক ঘটনার গুরুত্ব তুলে ধরার ক্ষেত্রে এতটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, এ মহান ঐতিহাসিক ঘটনা মহানবী (সা.)-এর 110 জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। অবশ্য এ কথার অর্থ এটা নয় যে, অগণিত মানুষের মধ্য থেকে কেবল এ কয়েক ব্যক্তিত্ব এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বরং কেবল আহলে সুন্নাতের আলেমগণের গ্রন্থাদিতেই 110 জন রাবীর (বর্ণনাকারী) নাম পরিলক্ষিত হয়। এটা ঠিক, মহানবী (সা.) লক্ষ মানুষের সমাবেশস্থলে এ কথাসমূহ বলেছিলেন, তবে তাদের মধ্যেকার এক বিরাট অংশ হিজাযের দূরবর্তী এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর অধিবাসী ছিল, যাদের থেকে এ সংক্রান্ত কোন হাদীসই বর্ণিত হয় নি। তবে সেখানে উপস্থিত জনতার আরেকটি অংশ এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইতিহাসে তাঁদের সবার নাম লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয় নি। আর লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলেও তা হয় তো আমাদের হাতে পৌঁছায় নি।

হিজরী দ্বিতীয় শতকে অর্থাৎ তাবেয়ীগণের যুগেও 89 জন তাবেয়ী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী শতকসমূহে হাদীসে গাদীরের রাবীগণ সবাই আহলে সুন্নাতের আলেম। তাঁদের মধ্য থেকে 360 জন এ হাদীস তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে সংকলন ও উল্লেখ করেছেন এবং তাঁদের অনেকেই এ প্রসঙ্গে বর্ণিত অনেক হাদীসের বিশুদ্ধতা ও সঠিক (সহীহ) হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

হিজরী তৃতীয় শতকে 92 জন আলেম, চতুর্থ শতকে 43 জন, পঞ্চম শতকে 24 জন, ষষ্ঠ শতকে 20 জন, সপ্তম শতকে 21 জন, অষ্টম শতকে 18 জন, নবম শতকে 16 জন, দশম শতকে 14 জন, একাদশ শতকে 12 জন, দ্বাদশ শতকে 13 জন, ত্রয়োদশ শতকে 12 জন এবং চতুর্দশ শতকে 20 জন আলেম এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

একদল আলেম কেবল এ হাদীস বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হন নি; বরং এ হাদীসের সনদ এবং এর অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়েও স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।

প্রখ্যাত ইসলামী ঐতিহাসিক তাবারী আল ওয়ালায়াহ্ ফী তুরুকি হাদীসিল গাদীর’ নামে একখানা গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং এ হাদীস মহানবী (সা.) থেকে 72টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইবনে উকদাহ্ কুফী বেলায়েত’ নামক সন্দর্ভে এ হাদীস 105 জন রাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে উমর বাগদাদী (যিনি জামআনী’ নামে বিখ্যাত) এ হাদীস 25টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

হাদীসবিদ্যার দিকপালদের মধ্য থেকে-

আহমাদ ইবনে হাম্বাল শাইবানী এ হাদীস 40টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইবনে হাজার আসকালানী এ হাদীস 25টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

জাযারী শাফেঈ এ হাদীস 25টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

আবু সাঈদ সুজিস্তানী এ হাদীস 120টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

আমীর মুহাম্মদ ইয়েমেনী এ হাদীস 40টি সূত্রে বর্ণনা করছেন।

নাসাঈ এ হাদীস 250টি সনদ-সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

আবুল আলা হামাদানী এ হাদীস 100টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

আবুল ইরফান হিব্বান এ হাদীস 30টি সনদ-সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

যেসব ব্যক্তি এ মহান ঐতিহাসিক ঘটনার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্রান্ত বই-পুস্তক রচনা করেছেন, তাঁদের সংখ্যা 26 এবং সম্ভবত আরো অনেকেই আছেন, যাঁরা এ মহা ঘটনা সম্পর্কে প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাঁদের নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা হয় নি।528

শিয়া আলেমগণ, বিশেষ করে এ ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বেশ কিছুসংখ্যক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। এসব গ্রন্থের মধ্যে ঐতিহাসিক আল গাদীর’ গ্রন্থ সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ, যা বিখ্যাত ইসলামী লেখক আল্লামা মুজাহিদ মরহুম আয়াতুল্লাহ্ আমীনী রচিত।

তখন তিনি বললেন : হে লোকসকল! এখন ওহীর ফেরেশতা এ আয়াত নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন :

) اليوم أكملت لكم دينكم و أتممت عليكم نعمتِى و رضيت لكم الإسلام دينا(

-আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা : 3)

এ সময় মহানবীর তাকবীর-ধ্বনি উচ্চকিত হলো। অতঃপর তিনি বললেন : মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, তিনি তাঁর দ্বীনকে পূর্ণতা প্রদান করেছেন এবং তাঁর নেয়ামত চূড়ান্ত করেছেন এবং আমার পর আলীর ওয়াসায়াত এবং বেলায়েতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়েছেন।” এরপর মহানবী উঁচু স্থান থেকে নিচে নেমে এসে হযরত আলীকে একটি তাঁবুর নিচে বসার জন্য বললেন, যাতে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তাঁর সাথে মুসাফাহা করে তাঁকে অভিনন্দন জানান।

সবার আগে শাইখাইন (হযরত আবু বকর ও হযরত উমর) হযরত আলীকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এবং শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁকে তাঁদের মাওলা’ (নেতা) বলে অভিহিত করেন।

হাসসান ইবনে সাবিত এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মহানবীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে (তৎক্ষণাৎ) একটি কবিতা রচনা করেন এবং তা মহানবীর সামনে আবৃত্তি করেন। আমরা এখানে এ কবিতার মাত্র দু টি পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দিচ্ছি :

فقال له: قم يا علىّ، فإنّنِى

رضيتك من بعدى إماما و  هاديا

فمن كنت مولاه فهذا وليّه

فكونوا له أَتـبـاع صدق موالـيا

অতঃপর তিনি তাঁকে বললেন : হে আলী! উঠে দাঁড়াও।

কারণ আমি তোমাকে আমার পরে ইমাম (নেতা) ও পথপ্রদর্শক মনোনীত করেছি।

অতএব, আমি যার মাওলা (অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষ), সেও তার ওয়ালী।

তাই তোমরা সবাই তার সত্যিকার সমর্থক ও অনুসারী হয়ে যাও।

এ হাদীস সকল যুগে ও সবসময় মহানবী (সা.)-এর সকল সাহাবীর ওপর হযরত আলীর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার সবচেয়ে বড় দলিল। এমনকি আমীরুল মুমিনীন আলী দ্বিতীয় খলীফার ইন্তেকালের পর নতুন খলীফা নিযুক্তকারী পরামর্শ সভার অধিবেশনে, হযরত উসমানের খিলাফতকালে এবং তাঁর নিজের খিলাফতকালে এ হাদীসের দ্বারা খিলাফত সংক্রান্ত তাঁর দাবী উত্থাপন এবং এ সংক্রান্ত যুক্তি পেশ করেছিলেন। এছাড়াও বড় বড় মুসলিম মনীষী, হযরত আলীর রিরোধী ও খিলাফত সংক্রান্ত তাঁর অধিকার অস্বীকারকারীদের বিপক্ষে এ হাদীসের মাধ্যমে যুক্তি-প্রমাণ পেশ করেছেন।

তেষট্টিতম অধ্যায় : দশম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ

নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার এবং রোমানদের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা

গাদীরে খুমে উত্তরসূরি ও স্থলবর্তী নিযুক্ত করার অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবার পর শাম ও মিশরের যে সব অধিবাসী বিদায় হজ্বে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা সবাই জুহ্ফাহ্’ এলাকায় মহানবীর কাছ থেকে পৃথক হয়ে নিজ নিজ দেশের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।

যে সব লোক হাদ্রামাউত ও ইয়েমেন থেকে এসেছিল, তারাও এ অঞ্চল বা এ অঞ্চলের আগে একটি স্থানে মহানবীর হজ্ব কাফেলা থেকে বিদায় নিয়ে নিজ দেশের অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যায়। তবে মদীনা নগরী থেকে দশ হাজার লোকের যে দলটি মহানবীর সাথে এসেছিল, তাঁদের সবাই তাঁর সাথে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেন। হিজরতের দশম বর্ষ সমাপ্ত হবার আগেই তাঁরা পবিত্র মদীনা নগরীতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।

সমগ্র আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের প্রসার হওয়ায় এবং হিজাযের সকল অঞ্চল থেকে শিরক ও মূর্তিপূজার প্রভাব নিশ্চিহ্ণ করায় ইসলামের প্রভাব ও প্রসারের পথে বিদ্যমান সকল বাধা অপসারিত হয়েছিল এবং জনগণ তাওহীদী ধর্ম গ্রহণ করেছিল, সেহেতু মহানবী (সা.) ও মুসলমানগণ সন্তুষ্ট ও খুশী হয়েছিলেন।

তখনও যিলহজ্ব মাস শেষ হয়নি; সে সময় ইয়ামামা থেকে দু ব্যক্তি মদীনায় এসে মুসাইলিমার পক্ষ থেকে একটি পত্র মহানবী (সা.)-এর কাছে হস্তান্তর করে। উল্লেখ্য, এই মুসাইলিমা পরবর্তীকালে মিথ্যাবাদী’ মুসাইলিমা (مسيلمة الكذّاب ) নামে পরিচিতি লাভ করেছিল।

মহানবী (সা.)-এর একজন সচিব এ পত্র খুলে তা মহানবীকে পাঠ করে শুনান। পত্র পড়ে বোঝা গেল, ইয়ামামা অঞ্চলে মুসাইলিমা নামের এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করেছে এবং সে নিজেকে মহানবীর অংশীদার বলে গণ্য করে। আর এ পত্র প্রদানের মাধ্যমে সে তার অবস্থা ও নবুওয়াতের পদে তার অংশীদারিত্বের কথা মহানবীকে জানাতে চেয়েছে।

মুসাইলিমার পত্রের মূল পাঠ জীবনচরিত ও ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে রয়েছে। পত্রের বাক্য গঠন পদ্ধতি থেকে বোঝা যায়, এ পত্রের লেখক পবিত্র কুরআনের বাচনভঙ্গি ও পদ্ধতির অনুকরণ করতে চেয়েছে। তবে এ অনুকরণ প্রচেষ্টা তার পত্রকে এতটা অন্তঃসারশূন্য করেছে যে, এর চেয়ে তার সাধারণ বক্তৃতাগুলোও অনেক ভালো।

সে তার পত্রে মহানবী (সা.)-এর কাছে লিখেছিল529 :

أمّا بعد فإنّى قد أشركت فِى الأمر معك و أنّ لنا نصف الأرض و لقريش نصف الأرض و لكنّ قريشا قوم يعتدون

“অতঃপর নবুওয়াতের ব্যাপারে আমাকে তোমার শরীক করা হয়েছে। পৃথিবীর অর্ধেকাংশ আমাদের এবং বাকী অর্ধেকটা কুরাইশদের। তবে কুরাইশ গোত্র আসলেই সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় (অর্থাৎ তারা ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করে না)।

মহানবী (সা.) পত্রের বিষয়বস্তু অবগত হবার পর যারা ঐ পত্র এনেছিল, তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন : যদি তোমরা দূত না হতে, তা হলে তোমাদেরকে হত্যা করার আদেশ দিতাম। কারণ তোমরা অতীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলে এবং তাওহীদবাদ ও আমার রিসালত মেনে নিয়েছিলে। কেন এবং কোন্ যুক্তিতে তোমরা এ ধরনের বিচার-বুদ্ধিহীন ব্যক্তির অনুসরণ করে পবিত্র ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছ?

মহানবী (সা.) তাঁর সচিবকে ডেকে একটি ছোট অথচ তাৎপর্যমণ্ডিত ও কড়া পত্র মুসাইলিমার উদ্দেশে লিখান। পত্রের পাঠ :

بسم الله الرّحمان الرحيم من محمّد رسول الله إلى مسيلمة الكذّاب السّلام علي من اتّبع الهدي أمّا بعد فإنّ الأرض لله يورثها من يشاء من عباده و العاقبة للمتّقين

“পরম করুণাময় ও চিরদয়ালু আল্লাহর নামে। মহান আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে মিথ্যাবাদী মুসাইলিমার প্রতি। যারা হিদায়াতের পথ অনুসরণ করে, তাদের ওপর সালাম। অতঃপর (জেনে রাখ) সমগ্র পৃথিবী মহান আল্লাহর। তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে এ পৃথিবীর উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেন। আর খোদাভীরু বান্দাদের জন্য রয়েছে চূড়ান্ত পরিণতি।”530

মুসাইলিমার সংক্ষিপ্ত জীবনী

মুসাইলিমা ঐসব ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত, যারা হিজরতের দশম বর্ষে পবিত্র মদীনা নগরীতে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তবে সে তার জন্মভূমিতে ফিরে গিয়ে নবুওয়াতের দাবী করে এবং একদল সরলমনা এবং কখনো কখনো গোঁড়া সাম্প্রদায়িক লোকও তার আহবানে সাড়া দেয়। ইয়ামামা অঞ্চলে তার ব্যক্তিত্বের প্রভাব আসলে তার প্রকৃত ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক ছিল না। তবে একদল লোক তাকে মিথ্যাবাদী জেনেও তার চারপাশে সমবেত হয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল : হিজাযের সত্যবাদীর (রাসূলুল্লাহ্) চেয়ে ইয়ামামার মিথ্যাবাদীও (মুসাইলামা) উত্তম! এ কথাটা মুসাইলিমার একজন সমর্থক ঐ সময় বলেছিল, যখন সে মুসাইলিমাকে জিজ্ঞেস করেছিল : তোমার ওপর কি কোন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন? তখন সে বলেছিল : হ্যাঁ, রহমান’ নামের এক ফেরেশতা।” আবার সে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল : ঐ ফেরেশতা কি আলোতে থাকেন, না অন্ধকারে? সে জবাবে বলেছিল : তিনি অন্ধকারে থাকেন।” তখন ঐ লোকটি বলেছিল : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি মিথ্যাবাদী। তবে ইয়ামামার রবীয়াহ্ গোত্রের মিথ্যাবাদী হিজাযের মোযের গোত্রের সত্যবাদী (মহানবী) অপেক্ষা শ্রেয়।”

তবে যে বিষয়টি সন্দেহাতীত, তা হলো এ লোকটি নবুওয়াত দাবী এবং নিজের চারপাশে একটি গোষ্ঠীকে জড়ো করেছিল। তবে এ বিষয়টি কখনো প্রমাণিত হয় নি যে, সে পবিত্র কুরআনের মোকাবেলায় লিপ্ত হয়েছিল। আর যে সব বাক্য ও পঙ্ক্তি ইতিহাসের গ্রন্থাদিতে পবিত্র কুরআনের মোকাবেলা করার জন্য তার থেকে বর্ণিত হয়েছে, আসলে সেগুলো মুসাইলিমার মতো বাকপটু ও প্রাঞ্জলভাষী লোকের উক্তি হতে পারে না। কারণ তার স্বাভাবিক কথা, উক্তি ও বাক্যগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ের দৃঢ়তাসম্পন্ন ও বলিষ্ঠ। তাই বলা যায়, যা কিছু তার নামে বলা হয়েছে ও সম্পর্কিত করা হয়েছে, আসলে তা ঐসব উক্তির তুল্য, যেগুলো মুসাইলিমার সমসাময়িক আসওয়াদ ইবনে কা ব আল আনসীর531 সাথে সম্পর্কিত বলে প্রচার করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, মুসাইলিমা যখন নবুওয়াত দাবী করেছিল তখন আসওয়াদ ইবনে কা ব আল আনসীও ইয়েমেনে নবুওয়াত দাবী করেছিল। তাই অসম্ভব নয় যে, এ সব কিছু বাড়তি অলংকার ও সজ্জাসদৃশ যা বিভিন্ন কারণে তাদের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে।

কারণ পবিত্র কুরআনের মহত্ত্ব ও অনন্য অনুপম বাচনভঙ্গি ও বাক-অলংকার এতটাই যে, কোন ব্যক্তির পক্ষে তা মোকাবেলা করার সাহস হবে না। আর প্রত্যেক আরব খোদাপ্রদত্ত স্বভাব-প্রকৃতির (ফিতরাত) দ্বারা জানত যে, পবিত্র কুরআনের এ বর্ণনারীতি, এর চিত্তাকর্ষক প্রভাব এবং এ বাক্যসমূহের তাৎপর্যের মহত্ত্ব ও দৃঢ়তা মানুষের সামর্থ্যের বাইরে।

মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর আরবের মুরতাদদের (ধর্মত্যাগীদের) মোকাবেলা করা ছিল ইসলামী খিলাফতের প্রথম কর্মসূচী। এ কারণেই মুসাইলিমার প্রভাবাধীন এলাকা ইসলামী সেনাবাহিনীর দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যখন অবরোধ তীব্র করা হয় এবং এ মিথ্যাবাদীর অবশ্যম্ভাবী পরাজয় স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তখন কতিপয় সরলমনা ব্যক্তি তাকে বলেছিল : তুমি আমাদের যে গায়েবী সাহায্যের ব্যাপারে আশাবাদী করেছিলে, তার কী হলো? মুসাইলিমা জবাবে বলেছিল : গায়েবী সাহায্যের কোন খবর নেই এবং তা ছিল একটা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, যা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম। তবে তোমাদের উচিত তোমাদের বংশীয় কৌলিন্য ও মর্যাদা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা।”

তবে বংশীয় কৌলিন্য ও মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ কোন ফল দিল না। সে এবং তার কতিপয় সঙ্গী একটি উদ্যান প্রাঙ্গনে নিহত হয়। আর এভাবে তার মিথ্যা নবুওয়াতেরও যবনিকাপাত ঘটে।

সার সংক্ষেপে বলা যায়, সে আসলে বাকপটু, প্রাঞ্জলভাষী ও বাগ্মী ছিল। তাই সে কখনোই ঐসব শীতল ও অন্তঃসারশূন্য বাণীর রচয়িতা ছিল না, যেগুলো ইতিহাসে পবিত্র কুরআনের মোকাবেলা’- শিরোনামে তার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে এবং প্রচার করা হয়েছে।532