চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 79242
ডাউনলোড: 7054


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 79242 / ডাউনলোড: 7054
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

দোয়াত ও কলম নিয়ে এসো, যাতে আমি তোমাদের জন্য একটি পত্র লিখে দিতে পারি

খিলাফত কুক্ষিগত করার জন্য তাঁর ঘরের বাইরে যে সব তৎপরতা চলছিল, সে ব্যাপারে মহানবী (সা.) সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন। এ কারণে তিনি মতবিরোধের উদ্ভব ঠেকানো এবং তাঁর মূল ধারা থেকে বিচ্যুতি ঘটার আগেই তা রোধ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং তাঁর আহলে বাইতের খিলাফতের ভিত্তি লিখিত আকারে মজবুত করবেন এবং খিলাফত প্রসঙ্গে একখানা জীবন্ত দলিল রেখে যাবেন।

এ কারণেই যেদিন নেতৃত্বাস্থানীয় সাহাবীগণ তাঁকে দেখার জন্য আসেন, সেদিন তিনি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন : আমার জন্য কাগজ ও দোয়াত নিয়ে এসো, যাতে আমি তোমাদের জন্য কিছু বিষয় লিখে দিতে পারি যে, এরপর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।”549

ইবনে আব্বাস এ ঘটনা বর্ণনা করার পর বলেন : এটাই ছিল ইসলামের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ যে একদল সাহাবীর মত-পার্থক্য ও ঝগড়া-বিবাদ মহানবী (সা.)-এর কাঙ্ক্ষিত পত্র লেখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ালো।”550

বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, এর অর্থ ছিল তিনি পত্রের বিষয়বস্তু মুখে বলবেন এবং তাঁর একজন লেখক তা লিপিবদ্ধ করবেন। আর তা না হলে মহানবী (সা.) তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কখনো কলম হাতে নেন নি এবং এক লাইনও লিখেন নি। অধিক স্পষ্ট হওয়ার জন্য আমার প্রণীত দার মাকতাবে ওয়াহী’ গ্রন্থ অধ্যয়ন করুন।

এ ঐতিহাসিক ঘটনা একদল সুন্নী ও শিয়া হাদীসবিদ ও ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসবিদ্যার নীতিমালার দৃষ্টিকোণ থেকে তা নির্ভরযোগ্য ও সহীহ বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। একটি বিষয় আছে। আর তা হলো, আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিসগণ প্রধানত হযরত উমরের উক্তি অর্থগতভাবে উদ্ধৃত করেছেন অর্থাৎ তাঁরা তাঁর ধৃষ্টতামূলক উক্তির মূল পাঠ ব্যক্ত করেন নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, হযরত উমরের উক্তি উদ্ধৃত করা থেকে বিরত থাকা এজন্য নয় যে, ধৃষ্টতার কথা উল্লেখ করা আসলে মহানবী (সা.)-এর প্রতি এক ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন; বরং দ্বিতীয় খলীফার মর্যাদা রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তাঁর উক্তিতে হাত দেয়া হয়েছে এবং পরিবর্তন করা হয়েছে, পাছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁর অবমাননাকর উক্তি শুনে তাঁর ব্যাপারে হতাশ না হয় (এবং কুধারণা পোষণ না করে)।

এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আস সাকীফাহ্’ গ্রন্থের রচয়িতা আবু বকর জওহারী যখন তাঁর গ্রন্থে এ অধ্যায়ে উপনীত হন, তখন তিনি হযরত উমরের উক্তিটি এভাবে বর্ণনা করেন :

و قال عمر كلمة معناها أنّ الوجع قد غلب علي رسول الله

এবং হযরত উমর একটি কথা বলেন, যার অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহর ওপর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়েছে।”551

তবে আহলে সুন্নাতের হাদীসবেত্তাদের মধ্য থেকে যখন কেউ কেউ দ্বিতীয় খলীফার উক্তির মূল পাঠ হুবহু উদ্ধৃত করতে চান, তখন তাঁরা তাঁর সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ থেকে বিরত থাকেন এবং এতটুকু লিখেন :فقالوا هجر رسول الله অতঃপর তারা বলল : রাসূলুল্লাহ্ রোগের কারণে প্রলাপ বকেছেন।”552

নিশ্চিতভাবে এ ধরনের অশালীন ও জঘন্য উক্তি যে কোন ব্যক্তিরই হয়ে থাকুক না কেন, তা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয়। কারণ পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য অনুসারে মহানবী (সা.) সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি থেকে সংরক্ষিত এবং তিনি ওহী ছাড়া কোন কথা বলেন না।

নিষ্পাপ নবীর সান্নিধ্যে সাহাবীদের বিবাদ এতটা বিরক্তিকর ও মনোকষ্টের কারণ হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কয়েকজন স্ত্রী পর্দার অন্তরাল থেকে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন : কেন আপনারা মহানবীর নির্দেশ অমান্য করছেন? দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর তাঁদেরকে চুপ করানোর জন্য বলেছিলেন : আপনারা হযরত ইউসুফের সঙ্গীদের স্ত্রীদের সদৃশ। যখন মহানবী অসুস্থ হন, তখন আপনারা তাঁর জন্য নিজেদের নয়নগুলোয় চাপ দেন (অশ্রুপাত করেন) এবং যখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন, তখন আপনারা তাঁর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।”553

কতিপয় গোঁড়া ব্যক্তি বাহ্যত দ্বিতীয় খলীফার বিরুদ্ধাচরণের পক্ষে কিছু অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন।554 তবে যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আসলে তাঁরা তাঁকে এ কাজের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলেছেন এবংحسبنا كتاب الله (মহান আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ পবিত্র কুরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট)- তাঁর এ উক্তিকে তাঁরা অসার গণ্য করেছেন এবং সবাই স্বীকার করেছেন, ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর সুন্নাত এবং পবিত্র কুরআন কখনোই উম্মতকে মহানবীর হাদীস ও বাণীসমূহের ব্যাপারে অমুখাপেক্ষী করে নি।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মুহাম্মদের জীবনী’ গ্রন্থের রচয়িতা ড. হাসানাইন হাইকাল ইশারা-ইঙ্গিতে দ্বিতীয় খলীফার এ কাজ সমর্থন করে লিখেছেন : এ ঘটনার পর ইবনে আব্বাস বিশ্বাস করতেন, মহানবী (সা.) যে বিষয়টি লিখে দিতে চাচ্ছিলেন, তা লেখার ক্ষেত্রে বাধা দান করে মুসলমানরা আসলেই একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে হারিয়েছে। কিন্তু হযরত উমর তাঁর বিশ্বাসের ওপর বহাল থেকেছেন। কারণ মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন :

) ما فرّطنا فِى الكتاب من شىء(

আমরা পবিত্র কুরআনে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি (অর্থাৎ সবকিছু এ গ্রন্থে বর্ণনা করেছি)। 555

তিনি যদি এ আয়াতের আগের ও পরের অংশের দিকে দৃষ্টি দিতেন, তা হলে তিনি কখনোই এ আয়াতের এ রকম অপব্যাখ্যা করতেন না এবং নিষ্পাপ মহানবীর বিপরীতে হযরত উমরের এ কাজ সমর্থন করতেন না। কারণ আয়াতে উল্লিখিত কিতাব বা গ্রন্থের অর্থ বলতে গ্রন্থবৎ প্রকৃতিজগৎ এবং অস্তিত্বের পত্রসমূহকে বোঝানো হয়েছে। আর এ অস্তিত্বজগতের প্রতিটি সৃষ্টি আসলে সৃষ্টিগ্রন্থের এক একটি পৃষ্ঠা এবং সমগ্র সৃষ্টি এ সৃষ্টিগ্রন্থের সমুদয় পৃষ্ঠাতুল্য।

) و ما من دابّة فِى الأرض و لا طائر يطير بجناحيه الّا أمم أمثالكم ما فرّطنا فِى الكتاب من شىء ثمّ الى ربّهم يُحشرون(

“পৃথিবীতে (বিচরণকারী) প্রতিটি জীব-জন্তু এবং (আকাশে) স্বীয় ডানা মেলে উড্ডয়নকারী প্রতিটি বিহঙ্গ তোমাদের মতোই এক একটা প্রজাতি (أمم ), আমরা (সৃষ্টি) গ্রন্থে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি (অর্থাৎ আমরা এ সৃষ্টিলোকে যা যা সৃষ্টি করা সম্ভব, সেগুলো সবই সৃষ্টি করেছি) এবং সব কিছুই তাদের প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।” (সূরা আনআম : 38)

যেহেতু আমরা এ গ্রন্থের মধ্যে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি’- এ বাক্যের আগের বাক্য জীবকূল ও পক্ষীকূল’ সৃষ্টি করার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এর পরের বাক্য কিয়ামত দিবসে পুনরুজ্জীবিত করণ প্রক্রিয়া বা হাশরের সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু নিশ্চিত করে বলা যায়, আয়াতে উল্লিখিত গ্রন্থ’ যার মধ্যে কোন কিছুই উপেক্ষা করা হয় নি, তা বলতে গ্রন্থবৎ প্রকৃতিজগৎ (সৃষ্টিগ্রন্থ) এবং অস্তিত্বের পত্রকেই বোঝানো হয়েছে।

অধিকন্তু আমরা যদি মেনেও নিই যে, আয়াতের গ্রন্থ’ শব্দ আসলে পবিত্র কুরআন, তা হলে পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুসারে এ গ্রন্থ বোঝার জন্য মহানবী (সা.)-এর ব্যাখ্যা ও দিক-নির্দেশনা আবশ্যক।

) و أنزلنا إليك الذّكر لتبيّن للنّاس ما نزل إليهم(

“আর আমরা আপনার কাছে এ স্মরণ’ অর্থাৎ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি জনগণের কাছে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেন।” (সূরা নাহল : 44)

এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ্ এ আয়াতেلتقرأ অর্থাৎ যাতে আপনি পাঠ করেন’ বলেন নি, বরং তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেনلتبيّن অর্থাৎ যাতে আপনি ব্যাখ্যা করেন । সুতরাং মহান আল্লাহর গ্রন্থই যদি মুসলিম উম্মাহর জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে, তবুও মহানবী (সা.) প্রদত্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি এ গ্রন্থের তীব্র প্রয়োজন রয়েছে।556

উম্মত যদি এ ধরনের দিক-নির্দেশনা সম্বলিত পত্রের মুখাপেক্ষী না-ই হতো, তা হলে যখন ইসলাম ধর্মের প্রখ্যাত বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ইবনে আব্বাস (রা.)-এর গণ্ডদেশ বেয়ে মুক্তার মতো অশ্রুবিন্দু ঝরতে থাকত, তখন কেন তিনি বলতেন :

يوم الخميس و ما يوم الخميس ثمّ جعل تسيل دموعه حتّي رؤيت علي خدّيه كأنها نظام اللؤلؤ قال رسول الله : ايتونِى بالكتف و الدّواة أو اللوح و الدّواة اكتب لكم كتاباً لن تضلّوا بعده ابداً فقالوا...

“হায় বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! এরপর তাঁর অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল; আর তাঁর গণ্ডদেশদ্বয়ের উপর তা মুক্তার মতো দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন : মহানবী (সা.) বলেছেন : আমার কাছে তোমরা কাঁধের হাড় ও দোয়াত বা কাগজ ও দোয়াত নিয়ে এসো। তা হলে আমি তোমাদের জন্য এমন একটি পত্র (নির্দেশনামা) লিখে দেব যে, এরপর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। অতঃপর একদল লোক বলল : রাসূলুল্লাহ্ (সা.) 557 ...

এ ধরনের তীব্র শোক যা ইবনে আব্বাস প্রকাশ করেছেন, তা সত্বেও এবং মহানবী (সা.) নিজেই যে তাকীদ দিয়েছেন তার ভিত্তিতে কিভাবে এ কথা বলা সম্ভব যে, পবিত্র কুরআন মহানবী (সা.)-এর এ পত্রের প্রতি মুসলিম উম্মাহকে অমুখাপেক্ষী করেছে?

এখন যখন মহানবী (সা.) এ ধরনের একটি নির্দেশনামা লিপিবদ্ধ করাতে পারলেন না, তখন অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দলিলের ভিত্তিতে কি ধারণা করা সম্ভব যে, এ নির্দেশনা লেখানোর পেছনে মহানবীর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে?

এ পত্রের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য কী ছিল?

পবিত্র কুরআন তাফসীর করার ক্ষেত্রে নতুন অথচ দৃঢ় পদ্ধতি,- যা বর্তমানে সকল গবেষক ও আলেমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে,- হচ্ছে কোন একটি বিষয়ে অবতীর্ণ আয়াতের দ্ব্যর্থবোধকতা ও সংক্ষিপ্ততা ঐ একই বিষয়ে অবতীর্ণ অপর কোন আয়াতের মাধ্যমে দূর করা হয়, যা অর্থ নির্দেশের ক্ষেত্রে প্রথমটির চেয়ে অধিকতর স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর পারিভাষিক অর্থে আমরা এভাবে পবিত্র কুরআনের আয়াতকে অপর এক আয়াতের সাহায্যে তাফসীর (ব্যাখ্যা) করি।

এ পদ্ধতি পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ ব্যাখ্যার সাথেই একান্তভাবে শুধু সংশ্লিষ্ট নয়, বরং হাদীসসমূহের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। তাই এক হাদীসের সাহায্যে অনুরূপ আরেক হাদীসের সংক্ষিপ্ততা ও দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করা যায়। কারণ আমাদের মহান ইমামগণ সংবেদনশীল ও দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয়াদির ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপকারী ও পুনরাবৃত্তিমূলক অনেক বক্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যার সবই অর্থ ও লক্ষ্য নির্দেশের ক্ষেত্রে একই ধাঁচের ও একই পর্যায়ের নয়; কখনো কখনো সেসব অর্থ ও লক্ষ্য নির্দেশ করার ক্ষেত্রে পরিষ্কার; আবার কখনো কখনো পরিবেশ-পরিস্থতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অর্থ ও লক্ষ্য ইশারা-ইঙ্গিতে বর্ণনা করতে হয়েছে।

বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) রোগশয্যায় শায়িতাবস্থায় একটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য সাহাবীগণকে কাগজ-কলম আনার নির্দেশ দেন এবং তিনি তাঁদের স্মরণ করিয়েও দেন, এ নির্দেশনামার কারণে তারা কখনো পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতির মধ্যে পড়বে না।558 অতঃপর মহানবীর সান্নিধ্যে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তিনি ঐ চিঠি বা প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা সম্বলিত পত্র লেখানো থেকে বিরত থাকেন।

এ ক্ষেত্রে কেউ হয় তো প্রশ্ন করতে পারে, যে পত্র মহানবী (সা.) লেখাতে চেয়েছিলেন, তা কী প্রসঙ্গে ছিল। এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট। কারণ আলোচনার শুরুতে আমরা যে মূলনীতি উল্লেখ করেছি, তার আলোকে অবশ্যই বলা যায়, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর ওয়াসায়াত এবং খিলাফত দৃঢ়ীকরণ এবং তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার অপরিহার্যতা তুলে ধরা ছাড়া মহানবীর আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আর এ বিষয় হাদীসে সাকালাইন বিবেচনায় আনলে স্পষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ্য, হাদীসে সাকালাইনের ব্যাপারে শিয়া-সুন্নী সকল হাদীসবিশারদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। কারণ মহানবী (সা.) যে পত্র লিখাতে চেয়েছিলেন, সে ব্যাপারে বলেছেন : যাতে তোমরা আমার পরে পথভ্রষ্ট না হও, সেজন্য আমি এ পত্রটি লিখাচ্ছি।” আর হাদীসে সাকালাইনেও তিনি হুবহু এ বাক্যই (অর্থাৎ আমার পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না) বলেছেন এবং কিতাব ও তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার কারণ তিনি এটাই বিবেচনা করেছেন যে, এ দুই মূল্যবান ও ভারী বিষয়ের অনুসরণই হচ্ছে পথভ্রষ্ট না হবার কারণ।

انّى تارك فيكم الثّقلين ما ان تمسّكتم بِهما لن تضلّوا : كتاب الله و عترتى اهل بيتِى

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত এ দু টি তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুই অতি মূল্যবান জিনিস হচ্ছে : মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (ইতরাত)।”

এ দুই হাদীসের559 শব্দমালা এবং এদের মধ্যে বিদ্যমান সাদৃশ্য বিবেচনায় আনলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা সম্ভব নয় কি যে, কাগজ ও কলম চাওয়ার পেছনে মহানবীর উদ্দেশ্য ছিল হাদীসে সাকালাইনের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু বা এর অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তুর চেয়েও উন্নত কিছু লিপিবদ্ধ করা; আর তা ছিল মহানবীর প্রত্যক্ষ ওয়াসী ও উত্তরাধিকারীর বেলায়েত (নেতৃত্ব) এবং ওয়াসায়াত দৃঢ়ীকরণ যা 18 যিলহজ্ব ইরাক, মিশর ও হিজাযের হাজীগণের পৃথক হবার স্থান গাদীরে খুমের মহাসমাবেশে মৌখিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল?

এছাড়াও যে ব্যক্তি মহানবীর ওফাতের পরপর সাকীফায়ে বনী সায়েদায় খিলাফতের জন্য শূরা বা পরামর্শসভার আয়োজন করে নিজের পুরনো বন্ধুকে বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে খিলাফতের জন্য প্রার্থী করেছিলেন এবং তাঁর বন্ধু নিজের মৃত্যুকালে তাঁকে তাঁর সেবার নগদ পুরস্কারও দিয়েছিলেন এবং তাঁকে সকল মূলনীতির বিপরীতে খিলাফতের জন্য মনোনীত করেছিলেন, সেই ব্যক্তির দুর্দমনীয় বিরোধিতা এ বিষয়ের সাক্ষী যে, মহানবী (সা.)-এর কথাবার্তা এবং তাঁর কাছে সাহাবীগণের এ সমাবেশে এমন কিছু প্রমাণ বিদ্যমান ছিল, যা থেকে প্রতীয়মান হয়, মহানবী (সা.) খিলাফত ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্বভারের ব্যাপারে কিছু কথা লিখাতে চাচ্ছেন। এ কারণেই তিনি (হযরত উমর) কাগজ-কলম আনার ব্যাপারে বিরোধিতা করেন। আর তা না হলে এতটা জবরদস্তির কোন কারণ থাকত না।

মহানবী (সা.) কেন এ পত্র লেখার ব্যাপারে আর তাকীদ দিলেন না?

মহানবী (সা.) যিনি তাদের বিরোধিতা সত্বেও নিজ সচিবকে ডেকে এ পত্র লেখাতে পারতেন, তিনি কেন (ঐ পত্র লেখানোর ক্ষেত্রে) শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকলেন?

এ প্রশ্নের উত্তরও সুস্পষ্ট। কারণ মহানবী (সা.) যদি এ পত্র লেখার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করতেন, তা হলে যারা বলেছিলেন যে, রোগযন্ত্রণা মহানবীর ওপর প্রবল হয়েছে’, তারাই মহানবীর সাথে আরো বেয়াদবীর চরম স্পর্ধা প্রদর্শন করত এবং তাদের সমর্থকরাও জনগণের মধ্যে তা রটনা করে তাদের দাবী প্রমাণ করার চেষ্টা করত। এ অবস্থায় মহানবীর শানে বেয়াদবীপূর্ণ আচরণের মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পেত ও অব্যাহত থাকত, তেমনি মহানবীর পত্রের কার্যকারিতাও আর থাকত না। এ কারণেই কেউ কেউ যখন তাদের বেয়াদবী ও মন্দ আচরণ লাঘব করার জন্য মহানবীর কাছে বলেছিলেন : আপনি কি ইচ্ছা করেন যে, আমরা কাগজ-কলম নিয়ে আসি? তখন তাঁর চেহারা প্রচণ্ড উষ্মায় ফেটে পড়ছিল, তা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাদের বলেছিলেন : এতসব কথা-বার্তার পর তোমরা কাগজ-কলম আনতে চাচ্ছ? কেবল এতটুকু তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি যে, আমার বংশধরদের সাথে সদাচরণ করবে।” এ কথা বলে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং আলী, আব্বাস ও ফযল ব্যতীত তারা সবাই সেখান থেকে উঠে চলে যায়।560

অন্তিম পত্র লিখতে না পারার ক্ষতিপূরণ প্রচেষ্টা

কতিপয় সাহাবীর প্রকাশ্য বিরোধিতা যদিও মহানবীকে পত্র লেখার অভিপ্রায় পরিত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, তবুও তিনি ভিন্ন এক পদ্ধতিতে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন এবং ইতিহাসের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মহানবী (সা.) রোগযন্ত্রণায় প্রচণ্ড কষ্ট পাওয়া সত্বেও এক হাত আলীর কাঁধে এবং অন্য হাত মায়মুনার কাঁধের উপর রেখে মসজিদের দিকে গমন করেন এবং প্রাণশক্তি নিঃশেষকারী তীব্র কষ্ট সহ্য করেও তিনি মিম্বারে আরোহণ করেন। জনতার নয়ন অশ্রুজলে ভিজে গিয়েছিল এবং মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সুমসাম নীরবতা বিরাজ করছিল। জনতা তখন মহানবীর সর্বশেষ বাণী ও উপদেশাবলী শোনার অপেক্ষা করছিল। মহানবী (সা.) সভাস্থলের নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন : আমি তোমাদের মাঝে দু টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি।” ঐ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল : ঐ দুই মূল্যবান জিনিস কী? (উষ্মায়) মহানবীর মুখমণ্ডল প্রজ্বলিত হয়ে উঠল এবং তিনি বললেন : আমি নিজেই এর ব্যাখ্যা দেব; তাই প্রশ্ন করার কোন কারণ নেই।” অতঃপর তিনি বললেন : এক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং অন্যটি আমার বংশধর।”561

ইবনে হাজর আসকালানী ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আরেকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এ দু টি বর্ণনাই562 সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। তিনি লিখেছেন : মহানবী (সা.) যখন অসুস্থ তখন কোন একদিন যখন সাহাবীগণ তাঁর বিছানার চারপাশ ঘিরে রেখেছিলেন, তখন তিনি তাঁদের দিকে মুখ করে বলেছিলেন : হে লোকসকল! আমার অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে এবং খুব শীঘ্রই আমি তোমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেব। তোমরা জেনে রাখ, আমি তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধরদের রেখে যাচ্ছি। এরপর তিনি হযরত আলীর হাত ধরে তা উঁচুতে তুলে বললেন :

هذا علىّ مع القرآن و القرآن مع علىّ لا يفترقان

-এই আলী পবিত্র কুরআনের সাথে এবং পবিত্র কুরআন আলীর সাথে আছে। এরা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”563

মহানবী (সা.) যদিও তাঁর অসুস্থ হওয়ার আগে একাধিক উপলক্ষে564 হাদীসে সাকালাইন বিভিন্ন আঙ্গিক ও ভাষাগত অবয়বে বর্ণনা করেছিলেন এবং এ দুই অতি মূল্যবান বিষয়ের প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, তবু যেহেতু তিনি রোগশয্যায় শায়িত হয়ে আবারও পবিত্র কুরআন ও তাঁর বংশধরদের (ইতরাত) আঁকড়ে ধরে থাকার ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি তাঁর অন্তিম পত্র লেখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই উপস্থিতিতে তিনি পবিত্র কুরআন ও ইতরাতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সেহেতু ধারণা করা যায়, হাদীসে সাকালাইনের পুনরাবৃত্তিই ছিল ঐ অন্তিম পত্রের শূন্যতা পূরণ করা, যা তিনি লিখতে পারেন নি।

দীনার বণ্টন

‘বাইতুল মাল’ সংক্রান্ত মহানবী (সা.)-এর নীতি ও পদ্ধতি এই ছিল যে, উপযুক্ত সময় ও সুযোগে প্রথমেই তিনি বাইতুল মালের সম্পদ দুঃস্থ, অভাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন এবং বাইতুল মালে দীর্ঘদিন সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না। এ কারণেই রোগশয্যায় শায়িত অবস্থায় তাঁর এক স্ত্রীর কাছে কিছু দীনার গচ্ছিত থাকার কথা তাঁর স্মরণে আসামাত্রই তিনি তাঁর সামনে সেগুলো নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। দীনারগুলো তাঁর সামনে রাখা হলে তিনি সেগুলো হাতে নিয়ে বলেছিলেন :ما ظنّ محمّد بالله لو لقى الله و هذه عنده মহান আল্লাহ্ সম্পর্কে মুহাম্মদ কী ভাবছে, যখন সে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে, অথচ তার কাছে এগুলো এখনও রয়ে গেছে? এরপর তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কে ঐ দীনারগুলো দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।565

ঔষধ সেবন করানোর জন্য মহানবী (সা.)-এর তীব্র অসন্তোষ

আসমা বিনতে উমাইস মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী মাইমুনার একজন নিকটাত্মীয় ছিলেন। হাবাশায় (আবিসিনিয়া) অবস্থানকালে তিনি কয়েকটি উদ্ভিদের নির্যাস থেকে এক ধরনের ঔষধ প্রস্তুত করার পদ্ধতি শিখেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, মহানবীর অসুস্থতা ফুসফুস ও বক্ষগহ্বরের আবরক ঝিল্লীর প্রদাহ-ঘটিত ব্যাধি (অর্থাৎ তিনি প্লুরিসি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন) এবং হাবাশায় এ ধরনের রোগের জন্য এ ঔষধ ব্যবহার করা হতো। আসমা মহানবীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন দেখতে পান এবং মহানবী তীব্র বেদনায় অচেতন হয়ে পড়লে তিনি ঐ ঔষধ বা সিরাপের কিছু অংশ মহানবীর মুখে ঢেলে দেন। জ্ঞান ফেরার পর মহানবী (সা.) ব্যাপারটি বুঝতে পারেন এবং রাগান্বিত হয়ে বলেন : মহান আল্লাহ কখনোই তাঁর রাসূলকে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত করেন না।”566

সাহাবীগণের সাথে শেষ বিদায়

মহানবী (সা.) অসুস্থাবস্থায় কখনো কখনো মসজিদে যেতেন এবং মুসল্লীগণের সাথে নামায আদায় করতেন ও তাদেরকে কতিপয় বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতেন।

তাঁর অসুস্থতার কোন একদিন মাথায় একটি কাপড় দিয়ে পট্টি বাঁধা অবস্থায় আলী (আ.) ও ফযল ইবনে আব্বাস তাঁর বগলদ্বয়ের নিম্নদেশ ধরে রেখেছিলেন এবং তাঁর পদদ্বয় মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। ঐ অবস্থায় তিনি মসজিদে প্রবেশ করে মিম্বারে আরোহণ করেন এবং ভাষণ শুরু করেন : হে লোকসকল! তোমাদের মধ্য থেকে আমার যাবার সময় চলে এসেছে। আমি যদি কাউকে কোন অঙ্গীকার করে থাকি, তা হলে তা পালন করার ব্যাপারে আমি প্রস্তুত। আর আমার কাছে যদি কারো পাওনা থেকে থাকে, তা হলে সে যেন তা আমাকে বলে এবং আমি তা প্রদান করব।” ঐ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল : কিছু দিন আগে আপনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমি যদি বিয়ে করি, তা হলে আপনি আমাকে কিছু পরিমাণ অর্থ সাহায্য করবেন।” মহানবী (সা.) তৎক্ষণাৎ ফযলকে ঐ ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং মিম্বার থেকে নেমে ঘরে চলে গেলেন। এরপর মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে শুক্রবার মহানবী (সা.) মসজিদে এসে ভাষণ দিলেন। তিনি ভাষণের মাঝে বললেন : আমার ওপর যদি কারো কোন হক (অধিকার) থেকে থাকে, তা হলে সে দাঁড়িয়ে তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করুক। কারণ এ পৃথিবীতে কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণ আমার কাছে আখেরাতে কিসাস গ্রহণের চেয়ে অধিকতর প্রিয়

 )القصاص فِى دار الدّنيا احبّ الَىّ من القصاص فِى دار الآخرة “ (

এ সময় সাওয়াদাহ্ ইবনে কাইস দাঁড়িয়ে বলল : তায়েফের জিহাদ থেকে ফেরার পথে আপনি একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন। ঐ সময় আপনার হাতের চাবুক উটের উপর আঘাত করার জন্য উঠিয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করে আমার পেটে ঐ চাবুকের আঘাত লেগেছিল। আমি এখন আমার কিসাস নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।”

মহানবী (সা.)-এর আহবান নিছক ভদ্রতামূলক সৌজন্য ছিল না, বরং তিনি এমনকি এ ধরনের অধিকারগুলো, যা কখনো জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে না567 সেগুলো পর্যন্ত আদায় করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ইচ্ছা পোষণ করতেন। মহানবী (সা.) তাঁর পরণের জামা উঠালেন যাতে করে সাওয়াদাহ্ তার কিসাস গ্রহণ করে। মহানবীর সাহাবীগণ দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও অশ্রুসজল চোখে, কাঁধ প্রসারিত করে এবং প্রাণ বিদীর্ণকারী কান্না বিজড়িত কণ্ঠে প্রতীক্ষা করছিলেন, এ ঘটনা কোথায় গিয়ে সমাপ্ত হয়! আসলেই কি সাওয়াদাহ্ প্রতিশোধ (কিসাস) গ্রহণ করবে? হঠাৎ সবাই দেখতে পেল, সাওয়াদাহ্ অনিচ্ছাকৃতভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মহানবী (সা.)-এর পেট ও বক্ষদেশ চুম্বন করছে। এ সময় মহানবী (সা.) সাওয়াদার জন্য দুআ করে বললেন : হে আল্লাহ্! সাওয়াদাহ্ যেভাবে নবীকে ক্ষমা করে দিয়েছে সেভাবে তাকে আপনিও ক্ষমা করে দিন।”568

পঁয়ষট্টিতম অধ্যায় : একাদশ হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ