দ্বিতীয় ভাগ
:আবির্ভাবের ক্ষেত্র এবং তার আলামতসমূহ
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বিভিন্ন শর্ত ও আলামত রয়েছে
যাকে আবির্ভাবের আলামত ও ক্ষেত্রও বলা হয়ে থাকে। এই দু
’
টির মধ্যে
পার্থক্য হল
,ক্ষেত্র আবির্ভাবের ক্ষেত্রে সত্যিকার ভূমিকা রাখে অর্থাৎ ক্ষেত্র
প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব সম্ভব নয়। কিন্তু
আবির্ভাবের ক্ষেত্রে আলামতের কোন ভূমিকা নেই বরং তার মাধ্যমে
কেবলমাত্র আবির্ভাব ও তার নিকটবর্তী হওয়াকে বোঝা সম্ভব।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে
,শর্ত ও ক্ষেত্রের গুরুত্ব
আলামতের চেয়ে বেশী। সুতরাং আমাদের উচিৎ আলামতের চেয়ে ক্ষেত্রের
দিকে বেশী গুরুত্ব দেয়া এবং নিজেদের সাধ্যমত তা বাস্তবায়নের চেষ্টা
করা। একারণেই আমরা প্রথমে আবির্ভাবের ক্ষেত্র ও শর্ত সম্পর্কে
আলোচনা করব এবং পরিশেষে সংক্ষেপে কিছু আলামতকে তুলে ধরব।
1)- আবির্ভাবের ক্ষেত্র
পৃথিবীতে প্রতিটি জিনিসই ক্ষেত্র ও শর্ত প্রস্তুত হওয়ার মাধ্যমে
অস্তিত্বমান হয়ে থাকে এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত কোন জিনিসই
অস্তিত্বমান হতে পারে না। প্রতিটি ভুমিতেই ফসল ফলে না এবং সবধরণের
আবহাওয়াতে সকল প্রকার বৃক্ষ জন্মায় না। একজন কৃষক তখনই ভাল
ফসলের চিন্তা করতে পারে যখন সে ভাল ফসল ফলানোর সকল ব্যবস্থা
করে থাকে।
সুতরাং সকল বিপ্লব ও সামাজিক ঘটনাও তার ক্ষেত্র ও শর্তের উপর
নির্ভরশীল। ইরানের ইসলামী বিপ্লবও যেমন তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার
মাধ্যমে সফল হয়েছে। ইমাম মাহদী (আ.)-এর বিশ্বজনীন সংগ্রাম ও বিপ্লবও
যা বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সংগ্রাম এ নিয়মের বাইরে নয় এবং ক্ষেত্র ও প্রেক্ষাপট
প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত তা বাস্তবায়ীত হবে না।
একথা বলার কারণ হচ্ছে আমরা যেন মনে না করি যে
,ইমাম মাহ্দী
(আ
.)
-এর বিপ্লব পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে এবং ইমামের এ সংগ্রাম
মো
’
জেযার মাধ্যমে সংঘটিত হবে। বরং কোরআনের বাণী ও ইমামদের
আদর্শ অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয়েছে যে
,পৃথিবীর সকল কর্মকাণ্ড তার
স্বাভাবিক গতিতেই সংঘটিত হবে।
ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
আল্লাহপাক চান না যে
,পৃথিবীর কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে সংঘটিত
হোক।
একজন ইমাম বাকের (আ.)-কে বলল:
আমরা শুনেছি যে
,ইমাম মাহ্দী
(আ.)
-এর আবির্ভাব ঘটলে সব কিছু তার
ইচ্ছা অনুযায়ী চলবে।
ইমাম বললেন:
না
,এমনটি নয়। আল্লাহর শপথ করে বলছি যদি এমনটিই
হত যে
,কারো জন্য সব কিছু নিজে নিজেই হয়ে যাবে তাহলে রাসূল (সা.)-এর
বেলায়ও তাই ঘটত।
তবে উপরিউক্ত কথার অর্থ এই নয় যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মহান
আন্দলনে আল্লাহর কোন মদদ থাকবে না রবং উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐশী
সহযোগিতার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি প্রস্তুত থাকতে
হবে।
এ ভুমিকা থেকে বুঝতে পারলাম যে
,প্রথমে আবির্ভাবের পরিবেশ ও
পরিস্থিতিকে জানতে হবে অতঃপর তা বাস্তবায়ণ করার জন্য পদক্ষেপ
নিতে হবে।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন বিপ্লবের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস
রয়েছে যার প্রত্যেকটিকে পৃথকভাবে আলোচনা করব:
(
ক) কর্মসূচী:
এটা স্পষ্ট যে
,প্রতিটি সংগ্রামের জন্য দু
’
টি কর্মসূচীর
প্রয়োজন রয়েছে।
1। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সাথে সংগ্রামের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ ও সৈন্য
বিন্যাস করা।
2। সমাজের সকল প্রয়োজন মেটাতে এবং একটি রাষ্ট্রের ব্যক্তিগত ও
সামাজিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে এবং সমাজকে একটি আদর্শ ও
কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানোর সুব্যবস্থা করতে তেমন একটি পরিপূর্ণ ও
উপযুক্ত নীতিমালা প্রয়োজন।
পবিত্র কোরআনের শিক্ষা এবং পবিত্র মাসুম (আ.)-গণের পন্থাই হচ্ছে
সেই চিরন্তন ইসলাম এবং তা সর্বোত্তম নীতিমালা ও কর্মসূচী হিসাবে ইমাম
মাহ্দী (আ.)-এর কাছে রয়েছে। তিনি এই নীতিমালা অনুসারে আমল
করবেন।
যে আসমানী কিতাবের সকল আয়াত আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন
এবং তিনি মানুষের জীবনের সকল প্রকার পার্থিব ও আধ্যাত্মিক চাহিদা
সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সুতরাং তার বিশ্বজনীন বিপ্লব এক নজির বিহীন
সম্মতির অধিকারী এবং অন্য কোন বিপ্লব ও সংগ্রামের সাথে এর তুলনা
চলে না। এ দাবীটা হয়তবা এমন হতে পারে যে
,বর্তমান বিশ্ব পার্থিব
সকল প্রকার নীতিমালাকে পরীক্ষা করে তার দূর্বলতাকে মেনে নিয়েছে এবং
ধীরে ধীরে ঐশী নীতিমালাকে মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
আমেরিকার রাজনীতিবীদদের উপদেষ্টা
‘
আলভীন তাফলার
’
এই
সমস্যার সমাধান এবং বিশ্বসমাজকে সংষ্কারের জন্য
‘
তৃত্বীয় তরঙ্গ নামে
’
একটি থিউরী দিয়েছেন। তারপরও তিনি এ বিষয়ে অনেক কিছুই স্বীকার
করেছেন।
পশ্চিমা বিশ্ব যে সকল সমস্যায় জর্জরিত তা গুনে শেষ করা যাবে না।
উন্নত বিশ্বের অবনতি ও ফিতনা-ফ্যাসাদ দেখে আশ্চর্যবোধ হয় এবং
তাদের চারিত্রিক অবক্ষয় রুচিশীল মানুষের নাশিকাকে পীড়া দেয়।
ফলস্বরূপ অশান্তির তরঙ্গ পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে ফেলেছে। এই সমস্যার
সমাধানের জন্য হাজারও পরিকল্পনা ও কর্মসূচী উত্থাপিত হয়ে থাকে এবং
সকলেই বলে থাকেন যে
,তা মৌলিক এমনকি বৈপ্লবিক। কিন্তু বার বারই
এ পরিকল্পনাসমূহ ভেস্তে যায় এবং সমস্যার উপর সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং
এটা মানুষের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি করে এবং কোন সুফলদান করে না। এই
অনুভূতি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং তা বাগধারার
সেই সাদা অশ্বারোহীর প্রয়োজনীয়তাকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
(
খ) নেতৃত্ব:
প্রতিটি সংগ্রামের জন্যই একজন নেতার প্রয়োজন এবং
সংগ্রাম যত বেশী বড় ও গুরুত্বপূর্ণ হবে তেমন যোগ্য নেতার প্রয়োজনও
বেশী অনুভূত হবে।
বিশ্বব্যাপী জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং পৃথিবীতে ন্যায়বিচার ও
সাম্য গড়ে তুলতে একজন বিচক্ষণ
,যোগ্য এবং দয়ালু নেতার অতি
প্রয়োজন
।
কেননা
,তিনিই সঠিক ভাবে এ সংগ্রামকে পরিচালনা করতে
পারেন। ইমাম মাহ্দী (আ.) যেহেতু সকল নবী ও আওলীয়াদের নির্যাস তাই
তিনি এই মহান সংগ্রামের নেতা এবং তিনি জীবিত। তিনিই একমাত্র নেতা
যিনি আলামে গাইবের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে বিশ্বেও সকল কিছু
সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত এবং তার সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
জেনে রাখ মাহ্দী সকল জ্ঞানের উত্তরাধিকারী এবং সকল বিষয়ের উপর জ্ঞান
রাখে।
তিনিই একমাত্র নেতা যিনি সকল বাধ্যবাধকতার বাইরে এবং শুধুমাত্র
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যস্ত। সুতরাং বিশ্ব সংগ্রামের নেতা ও সর্বোত্তম
নেতা।
(
গ) সাহায্যকারীগণ:
আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট এবং শর্তের মধ্যে যোগ্য
সাহায্যকারীর প্রয়োজন রয়েছে। ঐশী নেতার জন্য তেমন যোগ্য
সাহায্যকারীর প্রয়োজন তো অতি স্বাভাবিক ব্যপার। এমনটি নয় যে
,যে
ব্যক্তিই দাবী করবে সে ব্যক্তিই সাহয্যকারীর মধ্যে পরিগণিত হবে।
মামুন রাকী বর্ণনা করেন
,
“
একদা ইমাম জা
’
ফর সাদিক
(
আ
.)-
এর সাথে
ছিলাম
,সাহল বিন হাসান খোরাসানী এসে সালাম করে বলল
,“
হে
রাসূল
(
সা
.)-
এর সন্তান
!
আপনি প্রকৃত ইমাম কারণ আপনি রহমত ও
অনুগ্রহ পরায়ণ বংশের সন্তান
,কেন আপনি আপনার এক লক্ষ সৈন্য যারা
শত্রুদের সাথে লড়তে প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও আপনার ন্যায্য অধিকার
আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছেন না
?”
ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বললেন:
“
হে খোরাসানী বস
,এখনই
তোমার সামনে সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবে। ইমাম (আ.)তার দাসীকে চুলা
জ্বালানোর নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চুলা আগুনে পরিপূর্ণ হয়ে
গেল।
”
ইমাম জা
’
ফর সাদিক
(
আ
.)
সাহলকে বললেন
:
“
হে খোরাসানী যাও ঐ
আগুনের মধ্যে গিয়ে বস!
”
খোরাসানী বলল:
“
হে রাসূল
(সা
.)
-এর সন্তান! আমাকে ক্ষমা করুন
আমাকে আগুনে পোড়াবেন না।
”
ইমাম (আ.) বললেন:
“
অস্থির হয়ো না
,তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি
।
”
এমন সময় হারুন মাক্কি জুতা খুলে হাতে নিয়ে খালি পায়ে ইমামের (আ.)
কাছে উপস্থিত হল এবং সালাম দিল। ইমাম (আ.) তার সালামের জবাব
দিয়ে বললেন:
“
জুতা রেখে
,যাও ঐ আগুনের মধ্যে গিয়ে বস!
”
হারুন জুতা রেখে তৎক্ষণাত আগুনের মধ্যে গিয়ে বসল।
ইমাম (আ.) খোরাসানীর সাথে খোরাসানের বাজার এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি
নিয়ে এমনভাবে আলোচনা করতে লাগলেন যে মনে হচ্ছিল তিনি
অনেকদিন যাবৎ সেখানে বসবাস করতেন। অতঃপর সাহলকে বললেন
যাও দেখে আস হারুন আগুনের মধ্যে কি করছে । আমি যেয়ে দেখলাম
হারুন আগুনের মধ্যে হাঁটু পেতে বসে আছে। আমাকে দেখে আগুনের মধ্য
থেকে বেরিয়ে এসে সালাম করল। ইমাম (আ.) সাহলকে বললেন:
“
খোরাসানে এ ধরনের ক
’
জন লোক পাওয়া যাবে।
”
সাহল বলল:
“
আলাহর শপথ! এ ধরনের একজন লোকও ওখানে
পাওয়া যাবে না।
”
ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বললেন:
“
আলাহর শপথ! এ ধরনের
একজন লোকও ওখানে পাওয়া যাবে না। যদি এ ধরনের পাঁচজন লোকও
পেতাম তাহলে সংগ্রাম করতাম। আমরাই ভাল জানি যে
,কখন
আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে।
”
সুতরাং আমাদেরকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাহয্যকারীদের বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে আমরা আমাদেরকে চিনতে পারব এবং
সমস্যা সমাধানের জন্য সচেষ্ট্য হব।
1
-
পরিচিতি এবং অনুসরণ
:
ইমাম মাহদী
(
আ
.)-
এর অনুসারীরা তাদের আল্লাহ এ
বং ইমামকে খুব ভালভাবে চেনে এবং পরিপূর্ণ পরিচিতির সাথে সত্যের ময়দানে উপস্থিত হয়।
ইমাম আলী
(
আ
.)
তাদের সম্পর্কে বলেছেন
:
তারা আল্লাকে সঠিকভাবে
চিনেছে
।
ইমাম পরিচিতিও তাদের অস্তিত্বকে পরিবেষ্টিত করেছে তবে এ
পরিচিতি নাম
,ঠিকানা এবং বংশ পরিচিতির অনেক ঊর্ধ্বে। তারা ইমামের
বেলায়াতকে চিনেছে এবং তারা জানে যে
,এ পৃথিবীতে ইমামের মর্যাদা কত
বেশী। এ পরিচিতির কারণেই তারা ইমামকে অধিক ভালবাসে এবং তার
নির্দেশ পালনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত। কেননা তারা জানে যে
,ইমামের
নির্দেশ আল্লাহরই নির্দেশ এবং তার অনুসরণ আল্লাহরই অনুসরণ।
রাসূল (সা.) তাদের সম্পর্কে বলেছেন:
তারা তাদের ইমামের নিদের্শ
পালন ও অনুসরণের জন্য সর্বদা চেষ্টা করবে।
2- ইবাদৎ এবং সালাবাত:
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অনুসারীরা ইবাদতের
ক্ষেত্রেও তাদের ইমামের কাছ থেকে আদর্শ নিয়েছেন। তারা দিবারাত্র
আল্লাহর যিকির করে অতিবাহিত করে। ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) তাদের
সম্পর্কে বলেছেন:
তারা ইবাদতের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করে এবং রোজার মাধ্যমে
দিন অতিবাহিত করে।
তিনি আরও বলেছেন:
তারা উটের পিঠেও আল্লাহর ইবাদত করেন।
এই আল্লাহর যিকরই তাদেরকে লৌহ মানবে রূপান্তরিত করেছে এবং
একারনেই কোন কিছুই তাদের দৃঢ়তাকে ছিনিয়ে নিতে পারে না। ইমাম
জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
তারা এমন মানুষ যে তাদের মনবল যেন লোহার মত কঠিন।
3- শাহাদত পিয়াশি এবং আত্মত্যাগী:
ইমাম মাহ্দীর অনুসরারীরা তাদের
ইমাম সম্পর্কে গভীর পরিচিতি রাখার কারণে তাদের অন্তরসমূহ ইমামের
মহব্বতে পরিপূর্ণ। সুতরাং যুদ্ধের ময়দানে তারা তাদের ইমামকে চতুর্দিক
থেকে ঘিরে রাখবে এবং মৃত্যুকে নিজেদের জীবন দিয়ে ক্রয় করে নিবে।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
ইমাম মাহদীর অনুসারীরা যুদ্ধের
ময়দানে তার চারপাশে বিচরণ করবে এবং জীবন দিয়ে স্বীয় ইমামের
হিফাজত করবে।
তিনি আরও বলেছেন:তারা ইচ্ছ পোষণ করেন যেন আল্লাহর রাস্থায়
শাহাদাত বরণ করতে পারেন
।
4
-
সাহসীকতা এবং বীরত্ব
:
ইমাম মাহদী
(
আ
.)-
এর সাহায্যকারীরা তাদের মাওলার ন্যায় সাহসী এবং শক্তিশালী বীরপুরুষ। ইমাম আলী
(
আ
.)
তাদের সম্পর্কে বলেছেন
:
তারা প্রত্যেকেই এমন সিংহ যারা খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং
তারা যদি ইচ্ছা করে তাহলে পাহাড়কেও স্থানান্তরিত করতে পারে।
5
-
ধৈর্য ও সবর
:
বিশ্বব্যাপী অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়তে এবং ন্যায়
-
নীতিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হবে আর ইমাম মাহ্দী
(
আ
.)-
এর সাহায্যকারীরা সকল সমস্যাকে জী
বন দিয়ে ক্রয় করবে। কিন্তু তারা এখলাস ও নমনীয়তার কারণে নিজেদের কাজকে অতি সামান্য মনে করে।
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: তারা এমন এক দল যরা আল্লাহর রাস্থায়
ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর উপর অধিকার দাবি করে না। তারা আল্লাহর
রাস্তায় জীবন দান করে বড়াই করে না এবং সেটাকে অনেক বড় কিছু মনে
করে না (সম্পূর্ণ এখলাসের সাথে তারা এ কাজ করে থাকে।)
6
-
ঐক্য এবং সহমর্মিতা
:
ইমাম আলী
(
আ
.)
ইমাম মাহ্দী
(
আ
.)-
এর সাহায্যকারীদের মধ্যে ঐক্য ও সহমর্মিতা সম্পর্কে বলেছেন
:
তারা প্রত্যেকেই ঐক্যবদ্ধ এবং আন্তরিক।
এই আন্তরিকতা এবং ঐক্যের কারণ হচ্ছে তাদের মধ্যে কোন
স্বার্থপরতা
,অহংকার এবং ব্যক্তিগত চাহিদা নেই। তারা সঠিক আক্বীদা
নিয়ে এক পতাকার নিচে একই উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে এবং এটাই শত্রুর
বিরুদ্ধে তাদের বিজয়ের কারণ।
7
-
যোহ্দ বা সাধারণ জীবন
-
যাপন
:
ইমাম আলী
(
আ
.)
ইমাম মাহ্দী
(
আ
.)-
এর সাহায্যকারীদের সম্পর্
কে বলেছেন
:
তিনি তার সাহায্যকারীদের কাছে বায়াত গ্রহণ করবেন যে
,তারা যেন সোনা
-
জহরত এবং চাল ও গম গচ্ছিত না করে।
তাদের অনেক বড় উদ্দেশ্য রয়েছে এবং তারা মহান উদ্দেশ্যের জন্য
প্রস্তুত হয়েছে
,দুনিয়া এবং পার্থিবতা যেন তাদেরকে মহান উদ্দেশ্য থেকে
বিরত না রাখে। সুতরাং দুনিয়ার চাকচিক্য দেখে যাদের চোখ বড় হয়ে যায়
এবং মন অস্তির হয়ে যায় ইমাম মহদী (আ.)-এর সাহায্যকারীদের মধ্যে
তাদের কোন স্থান নেই। এখানে ইমাম মহাদী (আ.)-এর সাহায্যকারীদের
সামান্য কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হল আর এ ধরনের উত্তম বৈশিষ্টের
অধিকারী হওয়ার কারণে বিভিন্ন হাদীসে তাদেরকে প্রশংসা করা হয়েছে।
তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন:
اولئکم هم خیار الامة
তারা আমার সর্বোত্তম উম্মত।
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:
আমার পিতা-মাতা সেই স্বল্প সংখ্যকদের জন্য উৎসর্গিত হোক যারা (আল্লাহর
অতি উত্তম বান্দা হওয়া সত্ত্বেও) পৃথিবীতে অপরিচিত রয়েছে।
তবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাহায্যকারীরা তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে
বিভিন্ন পর্যায়ে থাকবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ইমাম মাহ্দী (আ.) তার 313
জন বিশেষ সাহায্যকারী নিয়ে সংগ্রাম করবেন যারা এ সংগ্রামের প্রধান
ভূমিকা রাখবেন
,তারা ব্যতীত আরও দশ হাজার বিশেষ সৈন্য থাকবে এবং
আরও শত-সহস্র মু
’
মিনগণ ইমামের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন।
(
ঘ
)-
সর্বসাধারণের প্রস্তুতি
:
পবিত্র ইমামদের ইতিহাসে দেখা যায় যে
,তাদের উম্মতরা তাদের কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত ছিল না। তারা পবিত্র ইমামের উপস্থিতিকে মূল্যায়ণ করত না এবং তাদের হেদায়েত গ্রহণ করত না। আল্লাহ তা
’
আলা তার শেষ হুজ্জাতকে অদৃশ্যে রেখেছেন এবং যখন প্রত্যেকেই তাকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হবে আল্লাহর নির্দেশে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং প্রত্যেককেই তিনি ঐশী মা
’
রেফাতে পরিতৃপ্ত করবেন।
সুতরাং সেই মহান সংস্কারকের আবির্ভাবের জন্য প্রস্তুতি থাকার একান্ত
প্রয়োজন রয়েছে। কেননা
,প্রস্তুত থাকার মাধ্যমেই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর
সংস্কার আন্দলোন তার চুড়ান্ত সফলতায় উপণীত হবে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে বণী ইসরাঈলের এক দল অত্যাচারী
শাসক জালুতের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাদের নবীর (শামওয়ীল) কাছে
এসে বলল: আমাদের জন্য একজন নেতা নির্ধারণ করুন যার নেতৃত্বে
আমরা আল্লাহর পথে জালুতের সাথে যুদ্ধ করব।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ
قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِن كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا
قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِن دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا
فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ
وَاللَّـهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
“
তুমি কি মুসার পরবর্তী বণী ইসরাঈল প্রধানদেরকে দেখনি
?
তারা যখন
তাদের নবীকে বলেছিল
,
‘
আমাদের জন্য এক জন নেতা নিযুক্ত কর যাতে
আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি।
’
তিনি বললেন
,
‘
এটা তো হবে না
যে
,
তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হলে তখন আর তোমরা যুদ্ধ করবে
না
?
’
তারা বলল
,
‘
আমরা যখন স্ব স্ব আবাসভূমি ও স্বীয় সন্তান
-
সন্ততি হতে
বহিস্কৃত হয়েছি
,
তখন আল্লাহর পথে কেন যুদ্ধ করব না
?
’
অতঃপর যখন
তাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল তখন তাদের সল্প সংখ্যক ব্যতীত
সকলেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল এবং আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ
অবহিত।
যুদ্ধের জন্য নেতা চাওয়া প্রমাণ করে যে
,তরা প্রস্তুত ছিল যদিও তাদের
অধিকাংশই মাঝ পথে কেটে পড়েছিল এবং অতি স্বল্প সংখ্যক অবশিষ্ট
ছিল।
সুতরাং আবির্ভাব তখনই হবে যখন প্রত্যেকেই আন্তরিকভাবে সামাজিক
ন্যায়বিচার
,চারিত্রিক ও মানসিক নিরাপত্তা এবং আত্মিক উন্নতি ও সাফল্য
চাইবে
।
যখন মানুষ অন্যায় ও বৈষম্য থেকে অতিষ্ট হয়ে পড়বে এবং
দেখবে যে
,প্রকাশ্যে ধনিদের মাধ্যমে দূর্বলদের অধিকার পয়মল হচ্ছে।
পার্থিব সম্পদ একটি বিশেষ শ্রেণীর কাছে গচ্ছিত হচ্ছে
,যখন অনেকেই
শুধুমাত্র একবেলা খাওয়ার জন্য মানবেতর জীবন-যাপন করছে ঠিক তখনই
এক দল নিজেদের জন্য প্রাসাদ তৈরী করতে ব্যস্ত এবং বিশাল আয়োজন -
অনুষ্ঠান ও রংবেরংয়ের খাদ্য সামগ্রি নিয়ে উৎসবে মাতামাতি করছে। এমন
পরিস্থিতিতে সকলেই ন্যায়বিচারের জন্য আকুল হয়ে উঠবে।
যখন চারিত্রিক অবনতি বিভিন্নভাবে সমাজে প্রচলিত হবে এবং মানুষ
চরিত্র বহির্ভূত কাজে একেঅপরের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতির্ণ হবে
এমনকি তারা তাদের কুকর্ম নিয়ে গর্ববোধ করবে অথবা ইসলামী নীতিমালা
থেকে এতবেশী দূরে সরে যাবে যে
,অনেক ধরনের গর্হিত কাজকে
(পতিতা বৃত্তি
,সমকামিতা
,অশালিনতা...) আনইসংগত করে নিবে।
ফলশ্রুতিতে পারিবারিক শৃঙ্খলা পঙ্গু হয়ে পড়বে
,ইয়াতিম ও অনাথ সন্তানে
পৃথিবী ভরে যাবে। তখনই যে নেতার হুকুমত বিশ্বে চারিত্রিক নিরাপত্তা দান
করবে তার চাহিদা বেশী অনুভব হবে। যখন মানুষ পার্থিব সকল আরাম-
আয়েশকে উপভোগ করতে অথচ শান্তি অনুভব করবে না তখন তারাও
আধ্যাত্মিক বিশ্বের খোঁজ নিবে এবং ইমামের অপেক্ষায় থাকবে।
তখনই মানুষ ইমামের জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করবে যখন তারা
মানুষের সকল ধরনের শাসনব্যবস্থাকে দেখবে এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে
পৌঁছবে যে
,একমাত্র আল্লাহর প্রতিনিধি ইমাম মাহদী (আ.) আমাদেরকে
শান্তি দিতে পারেন। একমাত্র যে নীতিমালা পবিত্র ও সুনিপুন জীবন
মানুষের জন্যে বয়ে আনতে পারে তা হল ঐশী নীতিমালা। সুতরাং সমস্ত
অস্তিত্ব দিয়ে ইমামের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতে হবে
এবং সাথে সাথে ইমামের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট তৈরী করার জন্য চেষ্টা
করতে হবে এবং সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূর করতে হবে। তখনই কেবল
ইমামের আবির্ভাব জটবে।
রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন: এমন সময় আসবে যখন অন্যায়-
অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য মোমিনদের আর কোন আশ্রয় থাকবে না।
তখন আল্লাহ তা
’
আলা আমার বংশ থেকে একজনকে (ইমাম মাহ্দীকে)
প্রেরণ করবেন।