সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি 0%

সৃষ্টির পরশমনি লেখক:
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক: মুহাম্মদ মাহদী হায়েরীপুর,মাহদী ইউসুফিয়ান ও মুহাম্মদ আমীন বালাদাসতিয়ান
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 21999
ডাউনলোড: 4073

পাঠকের মতামত:

সৃষ্টির পরশমনি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 40 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 21999 / ডাউনলোড: 4073
সাইজ সাইজ সাইজ
সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক:
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বাংলা

2)- আবির্ভাবের নিদর্শন

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন বিপ্লবের বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। এ নিদর্শনসমূহ জানা থাকলে আমাদের অনেক উপকার হবে। এই নির্দশনসমূহ যেহেতু ইমমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের সংবাদ দেয় এবং তার এক একটি পরিদৃষ্ট হওয়ার সাথে সাথে প্রতীক্ষাকারীদের মনে আশার আলো জাগায় এবং দুশমনদের মনে ত্রাস সঞ্চার করে। কেননা ,এর মাধ্যমে তাদের অত্যাচারের পালা শেষ হবে এবং মু মিনদের জন্য পবিত্র ইমামের সাথে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার সুযোগ হবে। তাছাড়াও আমাদের যদি জানা থাকে যে ,ভবিষ্যতে কি ঘটবে তাহলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করতে পারব এবং বুঝতে পারবে যে ,তখন আমাদের কি করতে হবে। এটা আমাদেরকে ভণ্ড মাহ্দী দাবীকারীদেরকে চিনতে সাহায্য করবে। সুতরাং যদি কেউ মিথ্যা মাহ্দী দাবী করে এবং তার সংগ্রামে এসকল নিদর্শন না থাকে তাহলে অতি সহজেই বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে যে ,সে মিথ্যা দাবী করছে।

পবিত্র ইমামদের বাণীতে আবির্ভাবের অনেক নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে তার কিছু কিছু স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক এবং কিছু কিছু অস্বাভাবিক ও অলৌকিক। এ নিদর্শনসমূহের মধ্য থেকে প্রথমে আমরা নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ রেওয়ায়েতসমূহ বর্ণনা করব এবং শেষে সংক্ষেপে আরও কিছূ নিদর্শন বর্ণনা করব।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর সংগ্রামের পাঁচটি নিদর্শন রয়েছে , যা হচ্ছে: সুফিয়ানির আবির্ভাব , ইয়ামানির আবির্ভাব , আসমানী গায়েবী আওয়াজ , নাফসে যাকিয়ার হত্যা এবং খুসুফে বাইদা। 144

এখন উপরিউক্ত পাঁচটি নিদর্শনের ব্যাখ্যা দেওয়া হল যদিও এর সবকটিই হয়ত বস্তুনিষ্ঠ নয়।

(ক)- সুফিয়ানির আবির্ভাব:

সুফিয়ানির আবির্ভাব একটি নিদর্শন যা বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। সুফিয়ানি ,আবু সুফিয়ানের বংশধর যে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু দিন পূর্বে সিরিয়াতে সংগ্রাম করবে। সে এমন এক অত্যাচারি যে হত্যা করতে কোন পরওয়া করে না এবং তার শত্রুদের সাথে অতি ভয়ানক আচরণ করবে।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তার সম্পর্কে বলেছেন:

যদি সুফিয়ানিকে দেখ তাহলে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম লোককে দেখলে। 145

সে রজব মাসে তার সংগ্রাম শুরু করবে। সে সমগ্র সিরিয়াকে তার আয়ত্বে আনার পর ইরাকে হামলা করবে এবং বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাবে।

হাদীসের বর্ণনা মতে তার সংগ্রাম থেকে হত্যা হওয়া পর্যন্ত পনের মাস সময় লাগবে। 146

(খ)- খুসুফে বাইদা :

খুসুফ অর্থাৎ তলিয়ে যাওয়া এবং বাইদা হচ্ছে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থান। খুসুফে বাইদার ঘটনাটি হচ্ছে যে ,সুফিয়ানি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধের জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করবে। তার সৈন্যরা যখন বাইদায় পৌঁছাবে অলৌকিকভাবে তারা মাটির নিচে তলিয়ে যাবে।

ইমাম বাকের (আ.) এসম্পর্কে বলেছেন:

সুফিয়ানির সেনা প্রধান জানতে পারবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) মক্কার দিকে রওনা হয়েছেন। অতঃপর সৈন্য বাহিনীকে তার দিকে প্রেরণ করবে কিন্তু তাকে দেখতে পাবে না। যখন তার সেনাবাহিনী বাইদায় পৌঁছবে গায়েবী আওয়াজ আসবে হে বাইদা তাদেরকে ধ্বংস কর অতঃপর সেই স্থান তাদেরকে তলিয়ে নিবে । 147

(গ)- ইয়ামানির আবির্ভাব:

ইয়ামান থেকে এক নেতার সংগ্রাম একটি নিদর্শন যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু পূর্বে ঘটবে। তিনি একজন মু মিন ও মোখলেস বান্দা। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। তবে সে সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত কিছু জানা নেই।

ইমাম বাকের (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে যতগুলো সংগ্রাম হবে তার মধ্যে ইয়ামানির সংগ্রামের পতাকা হেদায়েতপূর্ণ। তার পতাকাই হচ্ছে হেদায়েতের পতাকা। কেননা ,সে তোমাদেরকে তোমাদের ইমামের দিকে আহবান করে। 148

(ঘ)- আসমানি আওয়াজ:

আর্বিভাবের পূর্বে অপর যে নিদর্শনটি দেখা যাবে তা হল আসমানী আওয়াজ । এই আসমানী আওয়াজ হাদীসের ভাষ্যমতে হযরত জীব্রাইলের আওয়াজ এবং তা রমযান মাসে শুনতে পাওয়া যাবে। 149 ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সংগ্রাম যেহেতু বিশ্বজনীন এবং প্রত্যেকেই তার অপেক্ষায় রয়েছে সুতরাং এ আওয়াজের মাধ্যমেই প্রত্যেকে খবর পাবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হয়েছেন।

ইমাম বাকের (আ.) এসম্পর্কে বলেছেন:

আসমানী গায়েবী আওয়াজ না আসা পর্যন্ত আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন না , যে আওয়াজ পূর্ব ও পশ্চিমের সকলেই শুনতে পাবে। 150

এই আওয়াজ মু মিনদের জন্য যেমন আনন্দদায়ক অসৎকর্মশীলদের জন্য তেমন কঠিন। কেননা ,তাদেরকে অন্যায় ত্যাগ করে সৎকর্মশীল হতে হবে।

এই আওয়াজ সম্পর্কে ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন: আহবানকারী ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তার পিতার নাম ধরে আহবান করবেন। 151

(ঙ)- নাফসে যাকিয়ার হত্যা :

নাফসে যাকিয়ার অর্থ হচ্ছে যে ব্যক্তি পূর্ণতায় পৌঁছেছে অথবা পবিত্র ও নিষ্পাপ ব্যক্তি যে কোন হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয় নি বা অন্যায় করে নি। ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু পূর্বে একজন নিষ্পাপ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তি তার বিরোধীদের হাতে নিহত হবেন।

হাদীসের ভাষ্যমতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের 15 দিন পূর্বে এ ঘটনাটি ঘটবে। ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব এবং নাফসে যাকিয়ার নিহত হওয়ার মধ্যে মাত্র 15টি রাতের ব্যবধান। 152

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের আরও অনেক নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে হচ্ছে: দজ্জালের আগমন (একটি ভণ্ড ও নিকৃষ্ট চরিত্র যে অনেক মানুষকে গোমরাহ করবে) রমযান মাসে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ। ফিতনাসমূহ প্রকাশ পাবে এবং খোরাসান থেকে এক ব্যক্তি সংগ্রাম করবে।

তৃতীয় ভাগ :আবির্ভাব

আবির্ভাবের কথা আসলেই মানুষের মনে মনরম অনুভূতি জাগে। মনে হয় সবুজ উদ্দ্যানে ঝর্ণার পাশে বসে আছে এবং বুলবুলির কণ্ঠে মধুর গান শুনছে। হ্যাঁ সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ প্রতীক্ষাকারীদের মনে-প্রাণে সজিবতা দান করে এবং আশাবাদীদের নয়নে আনন্দের চমক সৃষ্টি করে।  

এইঅধ্যায়ে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব এবং তার উপস্থিতিতে যা ঘটবে সে সম্পর্কে আলোচনা করব অতঃপর তার নজিরবিহীন চেহারাকে যিয়ারত করব।

1) - আবির্ভাবের সময়

যে প্রশ্নটি সবার মনে জাগে তা হল ইমাম মাহ্দী (আ.) কখন আবির্ভূত হবেন ,আবির্ভাবের কোন নিদৃষ্ট সময় আছে কি ?

উত্তর হচ্ছে ইমামদের কথা থেকে বোঝা যায় যে ,আবির্ভাবের সময় আমাদের কাছে গোপন রয়েছে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

আমরা পূর্বেও আবির্ভাবের সময়কে নির্ধারণ করি নি এবং ভবিষ্যতেও নির্ধারণ করব না। 153

সুতরাং যারা আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করে তারা প্রতারক ও মিথ্যাবাদী এবং হাদীসের ভাষ্য থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি।

ইমাম বাকের (আ.)-এর একজন সাহাবা আবির্ভাবের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন:

যারা সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যাবাদী , যারা সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যাবাদী , যারা সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যাবাদী। 154

এ ধরনের রেওয়ায়েত থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে ,সর্বদা এমন ধরনের মানুষ ছিল যারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করত এবং এ ধরনের মানুষ ভবিষ্যতেও থাকবে। এ কারণেই পবিত্র ইমামগণ তাদের অনুসারীদেরকে এ ধরনের ব্যাপারে নিরব না থেকে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে বলেছেন।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে তার এক সাহাবাকে বলেছেন:

যারা আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে দ্বিধা কর না কেননা , আমরা কারো জন্য সময় নির্ধারণ করি নি। 155

2) - ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় গোপন থাকার রহস্য

যেমনটি পূর্বেই বলা হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছাতেই আবির্ভাবের সময় আমাদের জন্য গোপন রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে হেকমতের কারণেই তা আমাদের জন্য গোপন রয়েছে। কয়েকটি হেকমতকে আমরা এখানে বর্ণনা করছি।

ক)- আশার বিরাজমানতা:   আবির্ভাবের সময় গোপন থাকার কারণে সর্বকালের প্রতীক্ষাকারীদের অন্তরে আশার আলো বিদ্যমান থাকবে। এ আশা চিরস্থায়ী আর এর মাধ্যমেই অদৃশ্যকালীন সময়ের সকল কষ্ট ও চাপের মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ করা সম্ভব। পূর্বের শতাব্দিসমূহে যে সকল শিয়ারা বসবাস করতেন তাদেরকে যদি বলা হত যে ,আপনাদের সময়ে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভব ঘটবে না বরং সুদুর ভবিষ্যতে তা ঘটবে তখন সকল ফিতনা ও সমস্যার মোকাবেলা করা তাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে দাড়াত এবং অদৃশ্যের ঐ সময়টি তাদের জন্য অজ্ঞতার যুগ হিসাবে পরিগণিত হত।

খ)- ক্ষেত্র প্রস্তুত:নিঃসন্দেহে গঠনমূলক প্রতীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম কেবলমাত্র আবির্ভাবের সময় গোপন থকার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হতে পারে । কেননা ,আবির্ভাবের সময় জানা থাকলে তারা বুঝবে যে ,আমরা আবির্ভাবের সময়ে থাকব না তাদের মধ্যে আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মত কোন স্পৃহা থাকবে না।

কিন্তু আবির্ভাবের সময় গোপন ও থাকার কারণে সর্বকালের মানুষ আবির্ভাবের আশায় তা ত্বরান্বিত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তারা চাইবে যে ,আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মাধ্যমে তারা তাদের সমাজকে একটি আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণ সমাজে রূপান্তরীত করতে পারবে।

তাছাড়াও আবির্ভাবের সময় নির্ধারিত থাকলে যদি কারণ বসত তা পিছিয়ে যায় তাহলে অনেকেই ইমাম মাহ্দীর প্রতি বিশ্বাস হারাবে ফলে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে।

ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:

যারা সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যাবাদী (এ কথাকে তিনি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেন) হযরত মুসা (আ.) যখন আল্লাহর নির্দেশে ত্রিশ দিনের জন্য তার গোত্রের কাছে থেকে দূরে ছিলেন এবং আল্লাহ সেই ত্রিশ দিনের সাথে আরও দশ দিন বৃদ্ধি করে দিলেন হযরত মুসার গোত্রের লোকেরা বলল: মুসা তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে ফলে তারা যা না করার তাই করল (অর্থাৎ দ্বীন চ্যুত হয়ে গরুর বাছুরকে পুজা করল।) 156

3) - সংগ্রামের ঘটনা

সকলেই জানতে চান যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন সংগ্রামে কি কি ঘটবে । ইমামের সংগ্রাম কোথা থেকে এবং কিভাবে শুরু হবে। বিরোধীদের সাথে তিনি কেমন আচরণ করবেন। তিনি কিভাবে সারা বিশ্বের উপর কর্তৃত্ব পাবেন এবং সমগ্র বিশ্ব তার আয়ত্বে আসবে। এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্ন রয়েছে যা প্রতীক্ষাকারীদের মনকে মশগুল করে রেখেছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ঘটার পর কি ঘটবে সে সম্পর্কে কথা বলা খুবই কঠিন কাজ। কেননা ,ভবিষ্যতে কি ঘটবে সে সম্পর্কে বলা সহজ নয় এবং সঠিক করে কিছু বলাও সম্ভব নয়।

সুতরাং এখানে যা বর্ণনা করব তা হচ্ছে বিভিন্ন হাদীসে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পর কি ঘটবে সে সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তারই বর্ণনা মাত্র।

4) - কিভাবে সংগ্রাম হবে

যখন পৃথিবী অন্যায়-অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং অত্যাচারিরা পৃথিবীকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করবে তখন বিশ্বের মজলুম জনতা আকাশে সাহায্যের হাত তুলে দোয়া করবে ;তখন হঠাৎ করে আসমান থেকে গায়েবী আওয়াজ এসে রাতের অন্ধকার দূর করে আল্লাহর মাসে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দান করবে। 157 অন্তরে কাঁপন উঠবে ,চোখ থিরিয়ে যাবে! ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতীক্ষাকারীরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর খোঁজ নিবে এবং তাকে দেখার জন্য ও তার পক্ষে শত্রুর সাথে সংগ্রাম করার জন্য অধির হয়ে থাকবে।

তখন সুফিয়ানি যার ক্ষমতা সিরয়িা ,জর্ডান ও ফিলিস্থিনের ব্যাপক এলাকা জুড়ে থাকবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধের জন্য সৈন্য প্রেরণ করবে। সুফিয়ানির সৈন্যরা মক্কার পথে বাইদা নামক স্থানে মাটিতে তলিয়ে যাবে। 158

নাফসে যাকিয়ার শাহাদতের কিছু দিন পর ইমাম মাহ্দী (আ.) মক্কা শরীফে আবির্ভাব করবেন এবং তার গায়ে রাসূল (সা.)-এর পবিত্র জুব্বা ও হাতে রাসূল (সা.)-এর পতাকা থাকবে। তিনি কা বার গায়ে হেলান দিয়ে আবির্ভাবের গান গাইবেন ও আল্লাহর প্রশংসা করবেন এবং রাসূল (সা.) ও তার পবিত্র বংশধরের উপর দরুদ পাঠ করে বলবেন: হে লোক সকল আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছি এবং পৃথিবীর যারা আমাদের ডাকে সাড়া দিবে তাদের কাছেও সাহায্য চাচ্ছি। তখন তিনি নিজের ও বংশের পরিচয় দিবে বলবেন:

فا لله الله فینا لا تخذلونا و ناصرونا ینصر کم الله تعالی

আমাদের অধিকারের ব্যপারে আল্লাহকে দৃষ্টিতে রেখ। আমাদেরকে ( ন্যাবিচারের ময়দানে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ) একা রেখে না আমাদেরকে সাহায্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।

ইমামের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসমান ও জমিন থেকে পাল্লা দিয়ে এসে ইমামের সাথে বাইয়াত করে তার দলে যোগদান করবে এমনকি তাদের সাথে সাথে ওহীর বাহক হযরত জীব্রাইল (আ.) ও ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর হাতে বাইয়াত করবেন। তখন 313 জন সিদ্ধপুরুষ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ইমামকে সাহায্য করার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ হবেন। এভাবে চলতে থাকবে এবং দশ হাজার সৈন্য রাসূলের সন্তান ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর হাতে বাইয়াত করবে। 159

ইমাম মাহ্দী (আ.) তার সৈন্যদেরকে নিয়ে খুব শিঘ্রই মক্কা ও তার আসে পাশে শক্তিধর হয়ে উঠবেন এবং রাসূল (সা.)-এর জন্মভূমি মক্কাকে পাপিষ্টদের কবল থেকে মুক্ত করবে। অতঃপর মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং সেখানে তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন ও অসৎকর্মশীলদেরকে উতখাৎ করবেন। তারপর ইরাকের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং কুফা নগরিকে ইসলামি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে নির্ধারণ করনে। তিনি সেখান থেকেই সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং ইসলাম ও কোরআনের আইন অনুসারে চলার জন্য বিশ্ববাসীকে দাওয়াত করবেন।

ইমাম মাহ্দী (আ.) পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোকে একের পর এক জয় করবেন। কেননা ,তিনি বিশ্বস্ত ও ঈমানদার সাহায্যকারীদের পাশাপাশি আল্লাহর ফেরেশ্তাগণের দ্বারাও সাহায্য প্রাপ্ত হবেন। তিনি রাসূল (সা.)-এর মত ভয়ের সৈন্যদেরকে কাজে লাগাবেন এবং আল্লাহপাক শত্রুদের মনে ইমাম মাহ্দী ও তার সৈন্যদের ব্যাপারে এমন ভয় ঢুকিয়ে দিবেন যে ,কোন শক্তিই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধ করার সাহস পাবে না।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

আমরা আমাদের কায়েমকে তার শত্রুদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে সাহায্য করব। 160

বলাবাহুল্য যে ,পৃথিবীর একটি স্থান যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সৈন্যদের মাধ্যমে বিজয় হবে তা হচ্ছে বাইতুল মুকাদ্দাস। 161 তারপর আর একটি পবিত্র ঘটনা ঘটবে এবং সে ঘটনা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিল্পবকে শক্তিশালী করবে তা হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.)-এর আগমন। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ.) জীবিত আছেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আসমানে আছেন। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পর তিনিও আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে আসবেন এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ইমামতিতে নামাজ পড়বেন। আর এভাবে হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রাধান্য সবার জন্য স্পষ্ট হয়ে যাবে।

রাসূল (সা.) বলেছেন:

সেই আল্লাহর শপথ যিনি আমাকে মানুষের হেদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন। যদি মহাপ্রলয়ের এক দিনও অবশিষ্ট থাকে আল্লাহপাক সে দিনকে এত বেশী দীর্ঘায়ীত করবেন যে , আমার সন্তান মাহ্দী সংগ্রাম করবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম আসবেন এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পিছনে নামাজ আদায় করবেন। 162

হযরত ঈসা (আ.)-এর এ কাজ দেখে খ্রীষ্টানরা ইসলামধর্ম গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর শেষ গচ্ছিত সম্পদ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি ঈমান আনবে। আল্লাহ তা আলা হয়ত হযরত ঈসা (আ.)-কে এ কারণেই হেফাজত করে রেখেছিলেন যে তিনি সত্য পিয়াসীদের জন্য হেদায়াতের প্রদ্বীপ হিসাবে কাজ করবেন।

যদিও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মাধ্যমে মো জেযার বহিঃপ্রকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সংগ্রামের একটি কর্মসূচী যা মানুষের হেদায়াতের জন্য পথ খুলে দিবে।

এ কারণেই ইমাম মাহ্দী (আ.) অবিকৃত তওরাতের ফলককে (ইহুদীদের পবিত্র কিতাব) আবিস্কার করবে 163 এবং ইহুদীরা তাতে ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর আলামত দেখে ইমামের প্রতি ঈমান আনবে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এমন পরিবর্তন দেখে এবং সত্যের বাণী শুনে ও মো জেযা দেখে দলে দলে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর দলে যোগদান করবে । এভাবেই আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়ীত হবে এবং সমগ্র বিশ্ব ইসলামের পতাকাতলে একত্রিত হবে।

) هُوَ الَّذِي أَرْ‌سَلَ رَ‌سُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَ‌هُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِ‌هَ الْمُشْرِ‌كُونَ (

তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তার রাসূল প্রেরণ করেছেন অপর সমস্থ দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য যদিও মুশরিকরা তা অপ্রিতিকর মনে করে । 164

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে ,একমাত্র জালিম এবং অত্যাচারীরা সত্যের কাছে মাথা নত করবে না এবং তারা মু মিনদের মোকাবেলায় কিছু করতেও পারবে না। অবশেষে তারা ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর ন্যায়বিচারের তলোয়ারে দিখণ্ডিত হবে এবং পৃথিবী চিরতরে তাদের অন্যায় থেকে মুক্তি পাবে।

পঞ্চম অধ্যায় : ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমত

মেঘ ও কালো পর্দা সরে যাওয়ার পর বিশ্বের সূর্য তার চেহারা উম্মোচন করবেন এবং গোটা বিশ্বকে তার জ্যোতিতে আলোকিত করবেন।

হ্যাঁ ,অন্যায় ও ফ্যাসাদের সাথে সংগ্রাম করার পর ন্যায়বিচারের হুকুমতের পালা আসবে। তখন ন্যায়বিচার হুকুমতের আসনে উপবিষ্ট হবেন এবং প্রতিটি জিনিসকে তার উপযুক্ত স্থানে স্থান দান করবেন ও প্রত্যেকের অধিকারকে ন্যায়ের ভিত্তিতে বন্টন করবেন। মোটকথা পৃথিবী ও তার অধিবাসীরা সত্য ও ন্যায়পরায়ণ হুকুমত দেখতে পাবে এবং সেখানে কারো প্রতি সামান্যতম জুলুম করা হবে না। সে হুকুমতে থাকবে ঐশী সৌন্দর্য এবং তার ছায়াতলে মানুষ তার সকল অধিকার খুঁজে পাবে। এ অধ্যায়ে আমরা চারটি প্রসঙ্গে আলোচনা করব:

1- ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন হুকুমতের উদ্দেশ্যসমূহ।

2- বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের কার্যক্রমসমূহ।

3- ঐশী ন্যায়পরায়ণ হুকুমতের সাফল্য ও অবদানসমূহ।

4- ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের বৈশিষ্ট্যসমূহ।