সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি 0%

সৃষ্টির পরশমনি লেখক:
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক: মুহাম্মদ মাহদী হায়েরীপুর,মাহদী ইউসুফিয়ান ও মুহাম্মদ আমীন বালাদাসতিয়ান
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 22024
ডাউনলোড: 4075

পাঠকের মতামত:

সৃষ্টির পরশমনি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 40 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 22024 / ডাউনলোড: 4075
সাইজ সাইজ সাইজ
সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক:
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বাংলা

প্রথম ভাগ :ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন হুকুমতের উদ্দেশ্যসমূহ

সমগ্র সৃষ্টির উদ্দেশ্য যেহেতু পূর্ণতায় পৌছানো এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভ আর এ মাহান উদ্দেশ্যে পৌছানোর জন্য প্রয়োজন তার সরঞ্জাম প্রস্তুত করা। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন হুকুমতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্যলাভ এবং তাতে উপণীত হতে সকল প্রতিকুলতাকে অপসারণ করা।

মানুষ যেহেতু শরীর ও আত্মা দিয়ে তৈরী কাজেই তার প্রয়োজনও ,পার্থিব ও আধ্যাত্মিক দুই ভাগে বিভক্ত। সুতরাং পূর্ণতায় পৌছানোর জন্য দু দিকেই সমানভাবে অগ্রসর হতে হবে। ন্যায়পরায়ণতা যেহেতু ঐশী হুকুমতের মূলমন্ত্র কাজেই তা মানুষের দু দিকেই উন্নত করার জামানত দিতে পারে ।

সুতরাং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন হুকুমতের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি ,ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও তার প্রসার।

ক) - আধ্যাত্মিক উন্নতি

উপরিউক্ত উদ্দেশ্যসমূহের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে উপলব্ধি করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই তাগুতি হুকুমতসমূহের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।

মানুষের জীবনে ঐশী হুকুমত ব্যতীত ,আধ্যাত্মিকতা এবং আধ্যাত্মিক মর্যাদা কোন অবস্থানে ছিল ?এমনটাই নয় কি যে ,মানবতা লোপ পেয়েছিল ,সর্বদা মানুষ আসৎ পথে চলত ,নফসের তাড়নায় এবং শয়তানের প্ররচনায় জীবনের সকল মর্যাদাকে ভুলে গিয়ে মানুষ তাদের সকল ইতিবাচক গুনকে নিজের হাতে কামনা-বাসনার গোরস্থানে দাফন করে রেখেছিল ?পবিত্রতা ,শালিনতা ,সত্যবাদিতা ,সৎকর্ম ,সাহয্য- সহযোগিতা ,ত্যাগ-তিতিক্ষা ,দানশীলতা ও বদান্যতার স্থানে ছিল নফসের তাড়না ,কামনা-বাসনা ,মিথ্যাচার ,স্বার্থপরতা ও সুযোগসন্ধান ,খিয়ানত ,পাপাচার এবং উচ্চাভিলাস। মোটকথা তাগুতি হুকুমতকালীন সময়ে মানুষের জীবনে আধ্যাত্মিকতা তার শেষ প্ররহর গুনছিল এবং এমনকি কিছু কিছু স্থানে ও কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তার (আধ্যাত্মিকতার) কোন অস্থিত্বই ছিল না।

ইমাম মাহদী (আ.)-এর বিশ্বজনীন হুকুমতে মানুষের জীবনের এ অধ্যায়কে জীবিত এবং তাতে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য চেষ্টা করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত জীবনের মিষ্টি স্বাদ মানুষকে আস্বাদন করাবেন এবং সকলকে স্মরণ করিয়ে দিবেন যে ,প্রথম থেকেই তাদেরকে এমন পবিত্রতাকে অনুভব করার কথা ছিল।

) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّـهِ وَلِلرَّ‌سُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ (

হে মু মিনগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে ,তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দিবে। 165

মানুষের আত্মিক দিকটা যেহেতু তাদেরকে অন্যান্য পশুদের থেকে পৃথক করে সুতরাং তা মানুষের বৃহদাংশ তথা প্রধান অংশকে গঠন করে। কেননা ,মানুষ আত্মার অধিকারী হওয়ার কারণেই মানুষ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে এবং এদিকটাই তাকে আল্লাহর নৈকট্যলাভে সাহায্য করে থাকে।

এ কারণেই আল্লাহর ওয়ালীর হুকুমতে মানুষের অস্তিত্বের এ দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং আত্মিক মর্যাদা ও মানবীয় গুনাবলী জীবনের প্রতিটি দিকে প্রাধান্য পাবে। আন্তরিকতা ,আত্মত্যাগ ,সত্যবাদিতা এবং সকল উত্তম গুনাবলী সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।

তবে এ উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি গঠনমূলক কর্মসূচীর প্রয়োজন রয়েছে যা পরবর্তীতে বর্ণিত হবে।

খ) - ন্যায়পরায়ণতার প্রসার

যুগ যুগ ধরে মানুষের উপর যে বড় ধরনের অপরাধটি সংঘটিত হচ্ছে তা হল জুলুম ও অত্যাচার। মানুষ সর্বদা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং মানুষের পার্থিব ও আত্মিক অধিকার কখনোই ন্যায়ের ভিত্তিতে বণ্টিত হয় নি। সর্বদা ভরাপেটদের পাশাপাশি খালিপেটদেরকে (ক্ষুধার্তদেরকে) দেখা গেছে এবং বড় বড় প্রাসাদ ও অট্টালিকার পাশাপাশি শত-সহস্র মানুষকে পথে-ঘাটে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। শক্তিশালী ও বিত্তশালীরা দূর্বলদেরকে দাস হিসাবে ব্যবহার করেছে। কৃষ্ণাঙ্গরা শেতাঙ্গদের কাছে অত্যাচারিত হয়েছে । মোটকথা সর্বদা ও সর্বত্র দূর্বলদের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে এবং জালেমরা তাদের অসাধু চাহিদাকে চরিতার্থ করেছে। মানুষ সর্বদা ন্যায়পরায়ণতা ও সাম্যের জন্য প্রহর গুনেছে এবং ন্যায়বিচার সম্পন্ন হুকুমতের জন্য অধির আগ্রহে প্রতীক্ষা করেছে।

এই প্রতীক্ষার শেষ হচ্ছে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ শাসনব্যাবস্থা। তিনি মহান ন্যায়পরায়ণ নেতা হিসাবে সারা বিশ্বে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। বিভিন্ন রেওয়ায়েতও সে সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছেন: যদি মহাপ্রলয়ের মাত্র একটি দিনও অবশিষ্ট থাকে আল্লাহ তা আলা সে দিনকে এত বেশী দীর্ঘায়ীত করবেন যে ,আমার বংশ থেকে একজন আবির্ভূত হবে এবং পৃথিবী যেমন অন্যায়- অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল তেমনিভাবে ন্যায়নীতিতে ভরে তুলবেন। রাসূল (সা.)-এর কাছে আমি এমনটি শুনেছি। 166

এ ধরনের আরও বহু রেওয়ায়েত রয়েছে যেখানে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ছায়াতলে বিশ্বজনীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও অত্যাচারকে নির্মূল করার সংবাদ দেওয়া হয়েছে।

এটা জানা প্রয়োজন যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণতার বৈশিষ্ট্যটি এত বেশী স্পষ্ট যে ,কিছু কিছু দোয়াতেও তাকে ওই উপাধিতে ভুষিত করা হয়েছে:

اللهم و صلی علی ولی امرک القائم المومل و العدل المنتظر

হে আল্লাহ আপনার ওয়ালী আমরের উপর শান্তি বর্ষিত করুন যিনি আদর্শ সংগ্রাম করবেন এবং সবার প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচার। 167

হ্যাঁ তিনি ন্যায়বিচারকে তার বিপ্লবের মূলমন্ত্র করেছেন। কেননা ,ন্যায়বিচার হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রাণ এবং ন্যায়পরায়ণতা ব্যতীত পৃথিবী ও তার অধিবাসীরা প্রাণহীন মানুষ যাদেরকে কেবল জীবিত মনে করা হয়ে থাকে। ইমাম কাযিম (আ.) নিম্নলিখিত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বলেছেন:

( اعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ يُحْيِي الْأَرْ‌ضَ بَعْدَ مَوْتِهَا قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ )

এ আয়াতের অর্থ এই নয় যে ,আল্লাহ জমিনকে পানি দিয়ে জীবিত করেন বরং তিনি এমন ধরনের মহাপুরুষদেরকে 168 প্রেরণ করেন যারা ন্যায়পরায়ণতাকে জীবিত করেন। অতঃপর (সমাজে) ন্যায়বিচার জীবিত হওয়ার মাধ্যমে জমিন জীবিত হয়।

জমিন জীবিত হওয়া বলতে বোঝানো হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর ন্যায়বিচার হচ্ছে সর্বজনীন ন্যায়বিচার যা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।