সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি 0%

সৃষ্টির পরশমনি লেখক:
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক: মুহাম্মদ মাহদী হায়েরীপুর,মাহদী ইউসুফিয়ান ও মুহাম্মদ আমীন বালাদাসতিয়ান
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 21990
ডাউনলোড: 4073

পাঠকের মতামত:

সৃষ্টির পরশমনি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 40 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 21990 / ডাউনলোড: 4073
সাইজ সাইজ সাইজ
সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক:
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বাংলা

দ্বিতীয় ভাগ :বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের কার্যক্রমসমূহ

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সংগ্রামী উদ্দেশ্যের সাথে পরিচিত হওয়ার পর এই উদ্দেশ্যে উপণীত হওয়ার জন্য তার কার্যক্রমসমূহ নিয়ে আলোচনার পালা আসে। আর এর মাধ্যমেই আবির্ভাবের মুহুর্তের কর্মসূচীর পরিচিতি পেলেই আবির্ভাবের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কি করা প্রয়োজন তার আর্দশ গ্রহণ করা সম্ভব। এভাবে যারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতীক্ষায় রয়েছে তারা তার প্রশাসনিক কর্মসূচীর সাথে পরিচিত হতে পারবে এবং নিজেদেরকে ও সমাজকে সে পথে অগ্রসরীত হতে প্রস্তুত করবে।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমত সম্পর্কে যে সকল রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে ,তার হুকুমতের প্রধান তিনটি কর্মসূচী রয়েছে এবং তা হচ্ছে: সাংস্কৃতিক কর্মসূচী ,সামাজিক কর্মসূচী এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচী।

অন্য কথায় বলতে গেলে মনুষ্য সমাজ যেহেতু কোরআন ও আহলে বাইতের আদর্শ থেকে পিছিয়ে পড়েছে সুতরাং একটি বড় ধরনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ কোরআন ও ইতরাতের কোলে ফিরে আসবে।

অনুরূপভাবে একটি পরিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচী এ জন্য প্রয়োজন যে ,সমাজে এমন একটি সঠিক সমাজ ব্যবস্থার দরকার যার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি মানুষ তার নিজেস্ব অধিকার প্রাপ্ত হবে। কেননা ,এত দিন ধরে যে অন্যায় ও অবিচার চলে আসছে অর্থাৎ ঐশী অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এবং জালেমী পদ্ধতি সমাজকে নিষ্ঠুর পর্যায়ে নিয়ে গেছে একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাই তা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।

একটি আদর্শ সভ্য সমাজ গড়ে তোলার জন্য একটি সুষ্ট অর্থনৈতিক কর্মসূচীরও প্রয়োজন রয়েছে। যার মাধ্যমে পার্থিব সকল সুযোগ-সুবিধা সমভাবে সাবর মধ্যে বণ্টিত হবে। অন্য কথায় এমন একটি গঠনমূলক অর্থ ব্যবস্থার প্রয়োজন যার মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত পার্থিব সকল সুযোগ-সুবিধা সমভাবে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বণ্টিত হবে।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমাজিক কর্মসূচীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনার পর পবিত্র ইমাম (আ.)-গণের রেওয়ায়েত অনুসারে তার ব্যাখ্যা দান করা হল:

(ক)- সাংস্কৃতিক কর্মসূচী :

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন শাসন ব্যাবস্থায় সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মানুষের জ্ঞান ও আমল বৃদ্ধির পথে অনুষ্ঠিত হবে এবং মুর্খতার সাথে সার্বিকভাবে মোকাবেলা করা হবে।

ইমাম মাহ্দী (আ.) -এর ন্যায়নিষ্ঠ শাসনব্যাবস্থার প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক কর্মসূচী হচ্ছে:

1- কোরআন ও সুন্নত জীবন্তকরণ: যুগ যুগ ধরে যখন কোরআন বঞ্চিত ও একাকি হয়ে পড়েছে এবং জীবন পাতার এক কোণে ফেলে রেখেছিল এবং সকলেই তাকে ভুলে গিয়েছিল ;আল্লাহর শেষ হুজ্জাতের হুকুমতের সময়ে কোরআনের শিক্ষা মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রবেশ করবে। সুন্নত যা হচ্ছে মাসুমদের বাণী ,কার্যকলাপ এবং তাকরির ,তা সর্বত্র উত্তম আদর্শ হিসাবে মানুষের জীবনে স্থান পাবে এবং সবার আচরণও কোরাআন ও হাদীসের আলোকে পরিমাপ করা হবে।

ইমাম আলী (আ.) ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কোরআনী হুকুমতকে স্পষ্ট ভাষায় এভাবে বর্ণনা করেছেন: যখন মানুষের নফস হুকুমত করবে তখন (ইমাম মাহ্দী আবির্ভূত হবেন) এবং হেদায়াত ও সাফল্যকে নফসের স্থলাভিষিক্ত করবেন। যেখানে ব্যক্তির মতকে কোরআনের উপর প্রাধান্য দেওয়া হত তা পরিবর্তন হয়ে কোরআনকে সমাজের উপর হাকেম করা হবে। 169

তিনি অন্যত্র আরো বলেছেন: আমি আমার শিয়াদেরকে দেখতে পাচ্ছি যে ,কুফার মসজিদে তাবু বানিয়ে কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল সেভাবে জনগণকে শিক্ষা দিচ্ছে। 170

কোরআন শেখা এবং শিক্ষা দেওয়া কোরআনের সাংস্কৃতির প্রসার ও সমাজের সর্বস্তরে কোরআনের কর্তৃত্বের পরিচায়ক।

2 - মারেফাত ও আখলাকের প্রসার : পবিত্র কোরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষাতে মানুষের চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা ,মানুষের উদ্দেশ্যের পথে অগ্রগতি ও উন্নতির মূলমন্ত্র হচ্ছে তার উত্তম চরিত্র। রাসূল (সা.) নিজেও তার নবুয়্যতের উদ্দেশ্যকে চারিত্রিক গুনাবলীকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানো বুঝিয়েছেন। 171 পবিত্র কোরআনও রাসূল (সা.)-কে সবার জন্য উত্তম আদর্শ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। 172 কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে ,মানুষ কোরআন ও আহলে বাইত থেকে দূরে সরে গিয়ে নষ্টামির নোংরা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর এই চারিত্রিক অবক্ষয়ই ব্যক্তি ও সমাজের পতনের মূল।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শাসনব্যাবস্থায় যা কিনা ঐশী ও আদর্শ হুকুমত সেখানে চারিত্রিক গুনাবলীর প্রসার সবকিছুর উপর প্রাধান্য পাবে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন তখন তার পবিত্র হাতকে মানুষের মাথায় বুলাবেন এবং তাদের বিবেককে একত্রিত করবেন ও তাদের চরিত্রকে পরিপূর্ণ করবেন। 173

এই সুন্দর উপমা থেকে বোঝা যায় যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের মাধ্যমে যা কিনা চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক হুকুমত সেখানে মানুষের বিবেক ও চরিত্রের পূর্ণতার ব্যাবস্থা থাকবে। কেননা ,যেহেতু মানুষের খারাপ চরিত্র তার খারাপ ও ভণ্ড মানষিকতার ফল ,অনুরূপভাবে মানুষের সুন্দর ও আদর্শ চরিত্রও তার সুস্থ মস্তিষ্কের ফল।

অন্যদিকে কোরআনের হেদায়েতপূর্ণ ঐশী পরিবেশ মানুষকে সৎকর্মের দিকে পরিচালিত করে। সুতরাং মানুষকে ভিতর ও বাহির থেকে শুধু সৌন্দর্যের দিকে পরিচালিত করে আর এভাবেই গোটা বিশ্ব ,মানবিক ও ঐশী গুনাবলীতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।

3- জ্ঞানের প্রসার: ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের অপর সাংস্কৃতিক কর্মসূচী হচ্ছে জ্ঞানের বিপ্লব। ইমাম মাহ্দী (আ.) তার যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম। 174 তার সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

রাসূল (সা.) ইমাম মাহ্দী (আ.) -এর আগমনের সুসংবাদ দেওয়ার সাথে সাথে এটাও বলেছেন:

ইমাম হুসাইন ( আ .)- এর ঔরসের নবম সন্তান হচ্ছেন ইমাম মাহ্দী। সমগ্র বিশ্ব অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার পর আল্লাহ তা আলা তার মাধ্যমে পূনরায় সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করবেন। অন্যায় - অত্যাচারে পূর্ণ হওয়ার পর তিনি তা ন্যায়নীতিতে পূর্ণ করবেন। অনুরূপভাবে সমগ্র বিশ্ব অজ্ঞতায় পূর্ণ হওয়ার পর তিনি তাকে জ্ঞানের আলোতে আলোকিত করবেন। 175

এই জ্ঞানের বিপ্লব সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য ,সেখানে নারী- পুরুষের কোন ভেদাভেদ থাকবে না। বরং নারীরাও দ্বীনি শিক্ষার চরম শিখরে পৌঁছবে।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী ( আ .)- এর হুকুমতের সময়ে তোমাদেরকে জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হবে এবং এমনকি নারীরা ঘরে বসে কিতাব ও সুন্নত অনুসারে বিচার করবে। 176

এটা থেকে প্রমাণ হয় যে ,সে সময়ে তারা কোরআনের আয়াত ও আহলে বাইতের রেওয়ায়েত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করবে। কেননা ,বিচার করা একটি অতি কঠিন কাজ।

4-বিদয়া তের সাথে সংগ্রাম: বিদয়া ত হচ্ছে সুন্নতের বিপরীত যার অর্থ দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু প্রবেশ করানো। অনুরূপভাবে ব্যক্তিগত চিন্তা- চেতনাকে দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করানো।

ইমাম আলী (আ.) বিদয়া তকারীদের সম্পর্কে বলেছেন: বিদয়া তকারী তারা যারা আল্লাহ ও তার কিতাবের নির্দেশ অমান্য করে এবং তার রাসূল (সা.)-এর বিরোধিতা করে। তারা নিজেদের নফসের তাড়নায় চলে যদিও তাদের সংখ্যা অধিক হোক না কেন। 177

সুতরাং বিদয়া ত হচ্ছে আল্লাহ ,কোরআন ও রাসূলের বিরোধিতা করা এবং নফসের তাড়নায় ব্যক্তি কেন্দ্রিকভাবে চলা। তবে কোরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে নতুন কিছু বের করার সাথে বিদয়া তের অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিদয়া ত আল্লাহর বিধান ও রাসূলের সুন্নতকে ধ্বংস করে এবং কোন কিছুই বিদয়া তের ন্যায় ইসলামকে ক্ষতি করে না।

হযরত আলী (আ.) বলেছেন:

ما هدم الدین مثل البدع

কোন কিছুই বিদয়াতের ন্যায় দ্বীনকে ধ্বংস করে না। 178

এ কারণেই দ্বীনদারদেরকে বিদয়া তকারীদের সাথে লড়তে হবে এবং তাদের ধোকার পর্দা উম্মোচন করতে হবে। তাদের অসৎ পথকে মানুষকে দেখিয়ে দিতে হবে এবং এভাবেই জনগণকে গোমরাহি থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।

রাসূল (সা.) বলেছেন: যখন উম্মতের মধ্যে বিদয়া ত প্রকাশ পাবে তখন আলেমদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানো। যদি কেউ এমনটি না করে তাহলে তার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে। 179

পরিতাপের সাথে বলতে হয় যে ,রাসূল (সা.)-এর পর তার সুম্পষ্ট পথ থাকার পরও কতধরনের বিদয়া ত যে দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! এভাবে তারা দ্বীনের সঠিক চেহারাকে পাল্টে দিয়েছে ,ইসলামের উজ্জল চেহারাকে নফসের কালো কাপড়ে ঢেকে ফেলেছে। যদিও পবিত্র ইমামরা ও পরবর্তীতে আলেমরা অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার পরও বিদয়া ত থেকে গেছে এবং তা অদৃশ্যকালীন সময়ে আরও বেশী বেড়ে গেছে।

বর্তমানে বিশ্ব অপেক্ষায় আছে যে ,বিশ্বমানবের মুক্তিদাতা তথা প্রতিশ্রুত মাহ্দী আসবেন ও তার হুকুমতের ছায়তলে সুন্নতসমূহ জীবিত হবে এবং বিদয়া তসমূহ বিতাড়িত হবে। নিঃসন্দেহে ইমাম মাহদী (আ.) বিদয়া ত ও সকল গোমরাহির সাথে সংগ্রাম করবেন এবং হেদায়াতের পথকে সবার জন্য প্রস্তুত করবেন।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

তিনি সকল বিদয়া তকে উৎখাত করবেন এবং সকল সুন্নতকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। 180

(খ )- অর্থনৈতিক কর্মসূচী :

একটি সুস্থ সমাজের পরিচয় হচ্ছে তার সুস্থ অর্থব্যবস্থা। যদি দেশের সকল সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং তা একটি বিশেষ গোষ্ঠির হাতে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং সরকার দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের উপর দৃষ্টি রাখে ও সবার জন্য সম্পদের এ উৎস থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেয় তাহলে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে যেখানে আধ্যাত্মিক উন্নতির সুযোগও বেশী হবে। পবিত্র কোরআন ও মাসুমগণের হাদীসেও অর্থনৈতিক দিক ও মানুষের জীবনের উন্নতির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে । সুতরাং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কোরআনী হুকুমতে বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থা ও মানুষের জন্য গঠনমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রথমত: উৎপাদন খাত পরিপূর্ণতা পাবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার হবে। দ্বিতীয়ত: অর্জিত অর্থ ও সম্পদ সবার মধ্যে শ্রেণী নির্বিশেষে সমভাবে বণ্টিত হবে।

এখানে আমরা রেওয়ায়াতের আলোকে ইমাম মাহ্দী (আ.) -এর হুকুমতের অর্থনীতিকে জানার চেষ্টা করব:

1 - প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার : অর্থনৈতিক একটি সমস্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করা। না মাটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না পানিকে মাটির উর্বরতার জন্য সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের বরকতে আকাশ উদারভাবে বৃষ্টি দিবে এবং মাটিও উদারভাবে ফসল দান করবে।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:

আমাদের কায়েম যখন কিয়াম করবে তখন আকাশ উদারভাবে বৃষ্টি দিবে এবং মাটিও উদারভাবে ফসল দান করবে । 181

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের সকল সম্পদ ইমামের হাতে থাকবে এবং তিনি তা দিয়ে একটি সুষ্ট অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলবেন।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

ভূমি পেচিয়ে উঠবে এবং তার মধ্যে লুকাইত সকল সম্পদ প্রকাশিত হবে। 182

2 - সম্পদের সঠিক বণ্টন : পুজবাদি অর্থ ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে একটি বিশেষ গোষ্ঠির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হওয়া। সর্বদাই এমনটি ছিল যে ,সমাজের এক দল প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জনসাধারণের সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করত। ইমাম মাহ্দী (আ.) তাদের সাথে সংগ্রাম করবেন এবং জনসাধারণের সম্পদকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। এভাবে তিনি হযরত আলী (আ.)-এর ন্যায়বিচারকে সবার কাছে প্রমাণ করবেন।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের কায়েম যখন কিয়াম করবেন সম্পদের সঠিক বণ্টন করবেন এবং সবার সাথে ন্যায়ভিত্তিক আচরণ করবেন। 183

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে সাম্য ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকলেই তাদের ঐশী ও মানবিক অধিকার প্রাপ্ত হবে।

রাসূল (সা.) বলেছেন:

আমি তোমাদেরকে মাহ্দীর সুসংবাদ দান করছি। আমার ইম্মতে তার আগমন ঘটবে ,সে সম্পদের সঠিক বণ্টন করবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করল: তার অর্থ কি ?রাসূল (সা.) বললেন: অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। 184

এই সাম্যের ফলাফল হচ্ছে সমাজ থেকে দারিদ্রতা দুরিভূত হবে এবং শ্রেণী বৈষম্য দূর হয়ে যাবে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.) সবার সাথে সমান আচরণ করবেন যার ফলে সমাজে আর কোন যাকাত প্রাপ্ত লোকের সন্ধান পাওয়া যাবে না। 185

3 - উন্নয়ন প্রকল্প : সাধারণ হুকুমতসমূহে সমাজের একটি অংশ উন্নত হয়ে থাকে। এ উন্নতি কেবলমাত্র সরকার ও তার আসে-পাশের লোকজনদের জন্য হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে যাদের সম্পদ এবং ক্ষমতার জোর আছে কেবলমাত্র তারাই এ উন্নতির ভাগিদার হয়ে থাকে এবং অন্য সকল শ্রেণীর লোকরা তা থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে উৎপাদন ও বণ্টন সমতার সাথে হবে এবং গোটা বিশ্ব উন্নতির মুখ দেখবে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

পৃথিবীর কোথাও অনুন্নত কিছুই থাকবে না , সারা বিশ্ব উন্নতিতে ভরে যাবে। 186

(গ )- সামাজিক কর্মসূচী :

সমাজের উচ্ছৃঙ্খল ও দুস্কৃতিকারীদের সাথে আচরণের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ হুকুমতে সুশিল সমাজ গঠনের জন্য কোরআন ও আহলে বাইতের নির্দেশ মোতাবেক কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। আর তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনপ্রণালী আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রস্তুত হবে । যে বিশ্ব ঐশী হুকুমতের আয়ত্বে থাকবে সেখানে সৎকর্মের বিকাশ ঘটবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবহার করা হবে। সেখানে সবার অধিকারকে সমানভাবে প্রদান করা হবে এবং সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা প্রকৃতার্থে বাস্তবায়িত হবে। এখন এ বিষয়টিকে আমরা রেওয়ায়াতের আলোকে পর্যবেক্ষণ করব:

1- ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধের প্রসার: ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতে ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ বিশেষভাবে প্রসার লাভ করবে। এ ওয়াজিব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে:

) كُنتُمْ خَيْرَ‌ أُمَّةٍ أُخْرِ‌جَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُ‌ونَ بِالْمَعْرُ‌وفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ‌ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ (

তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত ;মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর ,অসৎকার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহকে বিশ্বাস কর। 187

এর মাধ্যমে আল্লাহর সকল ওয়াজিব প্রতিষ্ঠিত হবে 188 এবং ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ না করার কারণে পৃথিবীতে এত বেশী অন্যায় ও অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সর্বোত্তম ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে যে ,বাষ্ট্র প্রধানরা এ কাজ করবে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

মাহ্দী ও তার সাহায্যকারীরা ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করবেন। 189

2 - ফ্যাসাদ ও চারিত্রিক অবনতীর সাথে সংগ্রাম : ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর সময়ে অন্যায় কাজের নিষেধ কেবলমাত্র মুখেই করা হবে না বরং কার্যত অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যার ফলে সমাজে আর কোন ফ্যাসাদ ও চারিত্রিক অবনতী দেখতে পাওয়া যাবে না এবং এবং সমাজ সকল প্রকার পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র হয়ে যাবে। দোয়া নুদবাতে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে:

این قاطع حبائل الکذب و الافتراء این طامس آثار الزیغ و الاهواء

তিনি কোথায় যিনি মিথ্যা ও অপবাদকে নির্মূল করবেন ?তিনি কোথায় যিনি সকল অধপতন এবং অবৈধ কামনা-বাসনাকে ধ্বংস করবেন। 190

3 - আল্লাহর বিধানের প্রয়োগ : সমাজের উচ্ছৃঙ্খল ও দুস্কৃতিকারীদের সাথে আচরণের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ হুকুমতে সুশিল সমাজ গঠনের জন্য কোরআন ও আহলে বাইতের নিদের্শ মোতাবেক কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। অনুরূপভাবে মানুষের সকল চাহিদা মেটানো ও সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যত সকল অন্যায়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এর পরও যদি কেউ অন্যায়ে লিপ্ত হয় ,অন্যের অধিকার নষ্ট করে এবং আল্লাহর বিধি লঙ্ঘন করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন: সে আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করবে। 191

4- বিচার বিভাগীয় ন্যায়পরায়ণতা : ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের প্রধান কর্মসূচী হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি পৃথিবীকে অন্যায়-অত্যাচারে পূর্ণ হওয়ার পর ন্যায়নীতিতে পূর্ণ করবেন। ন্যায়পরায়ণতার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হচ্ছে বিচার বিভাগ। কেননা ,এ বিভাগে অনেককেই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ কেড়ে নেওয়া ,রক্তপাত ঘটানো এবং নির্দোষিদের সম্মান নষ্ট করা হয়েছে! দুনিয়ার বিচারে দূর্বলদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং সর্বদা শক্তিশালী ও জালেমদের পক্ষে রায় গোষণা করা হয়েছে। এভাবে তারা অনেক মানুষের জান ও মালের ক্ষতি সাধন করেছে। অনেক বিচারকরাও তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অন্যায় বিচার করেছে। অনেক নির্দোষিদেরকে ফাসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে এবং অনেক দোষিদেরকে বেকুসুর খালাস করা হয়েছে।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়নিষ্ঠ হুকুমতে সকল অন্যায়-অত্যাচারের অবসান ঘটবে। তিনি যেহেতু আল্লাহর ন্যায়বিচারের বাস্তব চিত্র তাই ন্যায়পরায়ণ বিচারালয় গড়ে তুলবেন এবং সেখানে ন্যায়নিষ্ঠ ,সৎকর্মশীল ও খোদাভীরু বিচারকদেরকে নিয়োগ করবেন। পৃথিবীর কোথাও কারো প্রতি সমান্যতম জুলুম হবে না।

ইমাম রেযা (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

তিনি যখন কিয়াম করবেন পৃথিবী আল্লাহর নুরে আলোকিত হয়ে যাবে। তিনি ন্যায়ের মানদণ্ডকে এমনভাবে স্থাপন করবেন যে কেউ কারো প্রতি সামান্যতম জুলুম করতে পারবে না 192

এ রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়বিচার এত বেশী ব্যাপক যে অত্যাচারীদের অত্যাচারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে অন্যায়ের পথ সম্পূর্ণরূপে রুদ্ধ হয়ে যাবে।